সীমন্তিনী BY SS_SEXY - অধ্যায় ২৩

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-22390-post-1649679.html#pid1649679

🕰️ Posted on February 24, 2020 by ✍️ riank55 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 2775 words / 13 min read

Parent
(Update No. 49) বিভাদেবী আর রচনা মিলে রান্না প্রায় শেষ করে ফেলেছে। এমন সময় বিধুবাবু বাইরের ঘরের বারান্দা থেকে প্রায় চিৎকার করে উঠলেন, “ওরে রচু। এই দেখ কে এসেছে”?  রচনা আর বিভাদেবী হাতের কাজ ফেলে রেখেই রান্নাঘরের বারান্দায় এসে উঠোনের দিকে চেয়েই খুশীতে চেঁচিয়ে উঠল। সীমন্তিনী আর সতীশ দু’জনেই হাতে অনেকগুলো প্যাকেট নিয়ে উঠোনে এসে দাঁড়িয়েছে। রচনা বারান্দা থেকে লাফ দিয়ে নেমে “দিদিভাই” বলে ছুটে এসে সীমন্তিনীকে জড়িয়ে ধরল। সীমন্তিনীও রচনাকে বুকে জড়িয়ে ধরল।  বিভাদেবী বারান্দা থেকেই বলে উঠলেন, “রচু তোর হাতের মশলা মন্তির কাপড়ে লেগে যাবে দেখিস”। সীমন্তিনী রচনাকে একটু আদর করে ছেড়ে দিয়ে বলল, “দাঁড়া আগে মাসি মেসোকে প্রণাম করতে দে” বলে সতীশের দিকে চেয়ে বলল, “আয় ভাই। এই দেখ আমার আরেকটা ভাই” বলে কিংশুকের গাল টিপে দিল। বারান্দায় প্যাকেটগুলো রেখে সীমন্তিনী আর সতীশ বিধুবাবু আর বিভাদেবীকে প্রণাম করে বলল, “মাসি মেসো, ও আমার ভাই সতু। তোমাদের বলেছিলাম না আমরা দু’জন জলপাইগুড়িতে একসাথে থেকে পড়াশোনা করছি”।  বিভাদেবী আর বিধুবাবু দু’জনকে আশীর্বাদ করে বসতে বললেন। সতীশকে নিয়ে নিজেদের বারান্দায় উঠে  বিধুবাবু একটা চেয়ার এগিয়ে দিয়ে বললেন, “তোমরা আসাতে আজ আমরা খুব খুশী হয়েছি বাবা, বোসো এখানে”। সীমন্তিনী রচনাকে জিজ্ঞেস করল, “তুই কি রান্না করছিস নাকি”? রচনা হেসে বলল, “মাকে একটু সাহায্য করছিলাম শুধু”। সীমন্তিনী রচনার হাত ধরে বলল, “একটু আয় এদিকে” বলে সতীশের কাছাকাছি নিয়ে বলল, “ভাই দেখ। এটাই আমার রচু সোনা। আমার বোন, আমার বান্ধবী সব”।  রচনা অভিমানী গলায় বলল, “ইশ দিদিভাই। একটু দাঁড়াও না। হাতটা ধুয়ে আসতে দাও। সেদিন দাদাকে উল্টোপাল্টা কত কিছু বলে দুঃখ দিয়েছি। আজ একটু প্রণাম করে আগে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে দাও আমাকে” বলে সতীশের দিকে চেয়ে মিষ্টি করে হেসে বলল, “একটু বস দাদা। আমি হাতটা ধুয়ে আসছি”।  সতীশও হেসে বলল, “হাত ধুয়ে আসবে, সে ঠিক আছে। কিন্তু প্রণাম টনাম করতে হবে না তোমাকে। আর যেটুকু অভিমান আমার সেদিন হয়েছিল, সেটুকুও এখন আর নেই। তাই ক্ষমাও চাইতে হবে না তোমাকে”।  সীমন্তিনী সতীশকে বলল, “ভাই তুই একটু মেসো আর ভাইয়ের সাথে কথা বল। আমি মাসির সাথে একটু কথা বলে আসছি” বলে কলতলার দিকে চলে গেল। হাত পা ধুয়ে রান্নাঘরের দরজা দিয়ে উঁকি মেরে দেখল মা আর মেয়েতে মিলে দুটো উনোনে রান্না করছে। রচনা তাকে দেখে বলল, “এসো দিদিভাই। আর একটু সময় দাও আমাকে। আমার রান্নাটা শেষ হয়ে এসেছে। এখনই হয়ে যাবে। আর মা-র রান্নাও শেষ হয়ে গেছে” বলে বিভাদেবীকে বলল, “মা তুমি নাহয় দিদিভাইকে নিয়ে ঘরে যাও। আমি রসাটা নামিয়েই আসছি”। বিভাদেবী সীমন্তিনীর চিবুকে আলতো করে হাত ছুঁইয়ে বললেন, “তুই আজ এসে খুব ভাল করেছিস মা। তোর কথা খুব মনে পড়ছিল আজ। চল ও ঘরে চল” বলে নিজেদের ঘরের দিকে যেতে যেতে বললেন,  “তোরা তো এলি। কিন্তু রতীশের ভাই আর বোন কখন আসবে কে জানে”।  সীমন্তিনী বলল, “ভেব না মাসি। ওরাও এসে পরবে। আমরা তো ভোরের ট্রেন ধরে এসেছি। আচ্ছা মাসি আমি একটু আমার ছোট ভাইটার সাথে একটু কথা বলে নিই। নইলে ওর অভিমান হবে আবার” বলে কিংশুকের কাছে গিয়ে বলল, “ভাই, তোমার খবর কি? পড়াশোনা ঠিকঠাক চলছে তো”?  কিংশুক খুশী হয়ে বলল, “হ্যা দিদিভাই। পড়াশোনা ঠিকমতই করছি। মাত্র আধঘন্টা আগে আমি পড়া  ছেড়ে উঠেছি। তাই তোমার দেওয়া ভিডিও গেম খেলছিলাম বসে বসে। এই দ্যাখ” বলে ভডিও গেমটা দেখাল। সীমন্তিনী কিংশুককে আদর করে বলল, “খুব ভাল। কিন্তু আমার কথাটা মনে আছে তো ভাই”? কিংশুক হেসে বলল, “মনে আছে দিদিভাই। আর মনে প্রাণে সেটা মেনেও চলছি। তোমাকে দেওয়া কথা আমি ভুলে যেতে পারি? এবারেও দেখো, আমিই ফার্স্ট হব”।  সীমন্তিনী কিংশুকের কপালে আদর করে চুমু খেয়ে বলল, “এই না হলে আমার ভাই? কিন্তু শুধু এ বারের কথা বললে হবে না ভাই। তোমাকে কিন্তু সব সময় সব পরীক্ষায় প্রথম হতে হবে। নইলে আমি কিন্তু খুব দুঃখ পাব। তুমি আমার মনে দুঃখ দিতে পারবে”?  কিংশুক মাথা নিচু করে বলল, “দিদিভাই, তোমাদের চেয়ে বয়সে আমি অনেক ছোট। অনেক কিছুই হয়ত ভালভাবে বুঝতে পারি না। কিন্তু গত কয়েকটা দিনে তুমি আমাদের জন্যে যা যা করেছ, এমনটা কেউ কখনও আমাদের জন্যে করে নি। এটুকু অন্ততঃ বুঝেছি আমি। তাই তুমি আমার কাছে ভগবানের মত হয়ে গেছ। আর নিজেকে দেওয়া কথাও হয়ত কেউ অমান্য করতে পারে। কিন্তু ভগবানকে দেওয়া কথা কি কেউ ফেলতে পারে? তোমাকে আমি আজ কথা দিচ্ছি দিদিভাই। তুমি যা চাইছ সেটা করতে আমি আপ্রাণ চেষ্টা করে যাব। এরপর কী হবে সেটা ভবিষ্যতে দেখতে পাবে তুমি”।  সীমন্তিনী কিংশুকের কথা শুনে হতভম্ব হয়ে অনেকক্ষণ তার মুখের দিকে হাঁ করে চেয়ে রইল। তারপর তার দু’গালে হাত রেখে তার মুখটাকে উঁচু করে ধরে তার কপালে একটা স্নেহের চুম্বন এঁকে দিয়ে বলল, “না ভাই। আমাকে ভগবানের সাথে তুলনা কোর না। আমি ভগবানও নই, আর খুব ভাল মানুষও নই। আমি, আমি খুব খারাপ একটা মেয়ে। কিন্তু তোমাকে ভাল হতে হবে ভাই। মনে রেখ, তোমাকে বড় হয়ে নিজের সাথে সাথে তোমার মা বাবার ভবিষ্যতটাও সুন্দর করে তুলতে হবে। আজ তারা তোমার দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে রেখেছেন। ভবিষ্যতে তুমি বড় হয়ে তাদের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেবে। আর সে দায়িত্ব ভালভাবে পালন করতে হলে তোমাকে ভবিষ্যতে নিজের পায়ের তলার মাটিটাকে অনেক অনেক শক্ত করে তুলতে হবে। তাই এখন থেকেই তোমাকে সে লক্ষ্যস্থির রেখে এগোতে হবে ভাই। তাই মন দিয়ে লেখাপড়া করাটা খুবই দরকার। তাই না”?  কিংশুক সীমন্তিনীর হাত দুটো নিজের হাতে মুঠো করে ধরে বলল, “তোমার কথা আমার মনে থাকবে দিদিভাই। আর সে চেষ্টাই করব”।  সীমন্তিনী মিষ্টি করে হেসে বলল, “লক্ষ্মী ভাই আমার। এবার খেলা ছেড়ে আমার সাথে একটু ও ঘরে চল তো। আর এ প্যাকেটগুলো নিতে আমাকে একটু সাহায্য কর”।  দু’জনে মিলে প্যাকেটগুলো হাতে নিয়ে বিধুবাবুর ঘরে এসে ঢুকল। রচনা তখন সতীশ আর বিধুবাবুর হাতে চায়ের কাপ উঠিয়ে দিচ্ছিল। সীমন্তিনী ঘরে ঢুকতেই রচনা তার হাতেও চায়ের কাপ তুলে দিয়ে বলল, “ভাইকে আদর করা হল তোমার দিদিভাই? নাও চা নাও”।  বিভাদেবী বিধুবাবুও সতীশের পাশে বসেছিলেন। বিভাদেবী একটু উদবিঘ্ন গলায় স্বামীকে বললেন, “কি গো, বেলা তো এগারটা বেজে গেল। ওদের তো দেখা নেই এখনও। আমি তোমাকে আগেই বলেছিলাম, ষ্টেশনে গিয়ে অপেক্ষা করতে। ওরা প্রথমবার আসছে। বাড়ি খুঁজে পেতে হয়ত অসুবিধে হচ্ছে”।  বিধুবাবু বললেন, “সত্যি গো। তাদের তো এতক্ষণে পৌঁছে যাওয়া উচিৎ ছিল। হ্যারে মা রচু। আজ কি রাজগঞ্জ থেকে কেউ ফোন করেছিল? ওরা রওনা হয়েছে কি না কিছু বলেছে”?  রচনা একটা টুলে বসতে বসতে বলল, “না বাবা, আজ তো কেউ ফোন করেনি”। বিভাদেবী আবার বললেন “আমার সত্যি চিন্তা হচ্ছে গো এখন”। সীমন্তিনী সতীশের দিকে ঈশারা করতে সে বলল, “মাসিমা। আপনারা অযথা চিন্তা করবেন না। আসলে আমরা আপনাদের কাছে একটা সত্য গোপন করে যাচ্ছি। সেজন্যে আগে থেকেই আপনাদের সকলের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি আমরা। যদি আপনারা অভয় দেন, তাহলে আমি এবার সত্যি কথাটা খুলে বলি”। সীমন্তিনী আর সতীশ বাদে ঘরের সকলেই এ কথা শুনে অবাক হল। বিধুবাবু কৌতুহল চেপে রাখতে না পেরে বললেন, “আমি তো তোমার কথা ঠিক বুঝতে পারছি না বাবা। কোন সত্য গোপন করবার কথা বলছ তুমি, বল তো”। সতীশ কিছু বলার আগেই রচনা বলে উঠল, “আমি বলছি বাবা শোন। রাজগঞ্জ থেকে যাদের আসবার কথা ছিল আজ, তারা অনেক আগেই আমাদের বাড়ি পৌঁছে গেছেন”।  বিভাদেবী জিজ্ঞেস করলেন, “তার মানে”?  রচনা সতীশ আর সীমন্তিনীর মুখের দিকে চেয়ে মুচকি মুচকি হাসতে হাসতে বলল, “এখনও বুঝতে পাচ্ছ না মা? আমাদের এ গরীবখানায় এই মূহুর্তে যে দু’জন বসে আছেন আমাদের সামনে, এনারাই তারা। শ্রীমান সতীশ ভট্টাচার্যি আর শ্রীমতী সীমন্তিনী ভট্টাচার্যি”। সতীশ চা খেতে খেতে বিষম খেল। আর সীমন্তিনীও চোখ বিস্ফারিত করে রচনার দিকে চাইল। বিধুবাবু, বিভাদেবী আর কিংশুকও রচনার কথা শুনে বিস্ময়ে হতবাক।  কিংশুক ছুটে রচনার কাছে গিয়ে তার হাতে ঝাঁকি দিয়ে জিজ্ঞেস করল। “তুই ঠিক বলছিস ছোড়দি? আমার এ দিদিভাইই আমার নতুন জামাইবাবুর বোন? মানে তুই বিয়ের পর দিদিভাইদের সংসারের একজন হয়ে উঠবি”? রচনা সীমন্তিনীর দিকে চেয়ে আগের মতই মুচকি মুচকি হাসতে হাসতে জবাব দিল, “ভাই, সেটা তোর দিদিভাইকেই জিজ্ঞেস কর না”।  কিংশুক ছুটে সীমন্তিনীর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, “ও দিদিভাই, বল না গো। ছোড়দি কি ঠিক বলছে”? সীমন্তিনী নিজের হাতের কাপটা নামিয়ে রেখে কিংশুকের হাত ধরে বলল, “হ্যা ভাই, তোমার ছোড়দি একেবারে ঠিক কথা বলেছে”। তারপর সীমন্তিনী বিধুবাবুর কাছে গিয়ে তার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে বলল, “হ্যা মেসো। আমিই তোমার হবু জামাইয়ের ছোট বোন সীমন্তিনী। আর তোমাদের জামাইই আমার আদরের দাদাভাই। আর এতদিন যে সতুকে তোমরা শুধু আমার ভাই বলে জানতে, ও আসলে তোমার জামাইয়ের ছোট ভাই সতীশ। তোমাদের কাছে নিজের আসল পরিচয়টা গোপন রেখেছিলাম বলে আমাকে ক্ষমা কর তোমরা সবাই। কিন্তু দয়া করে এমনটা ভেবনা, যে এর পেছনে আমার মনে কোন দুরভিসন্ধি ছিল বা আমি কোন মিথ্যে কথা বলে তোমাদের ঠকাতে চাইছিলাম”।  বিভাদেবী এবার নিজের মুখ খুলে বললেন, “তার মানে রচু ঠিক বলছে? তোমরাই রতীশের ভাই বোন”? বিধুবাবুও নিজের নিস্তব্ধতা ভেঙে সীমন্তিনীকে জিজ্ঞেস করলেন, “কিন্তু এভাবে মিথ্যে পরিচয় দিয়ে মিথ্যে কথা বলে আমাদের ঠকালে কেন মা তুমি”?  এবার সতীশ বিধুবাবুর হাত ধরে মিনতি ভরা গলায় বলল, “না মেসোমশাই, এমন কথা বলবেন না প্লীজ। আপনাদের কোনভাবে ঠকানোর ইচ্ছে আমাদের ছিল না। আর সেটা দিদি বা আমি করিও নি কখনও। বিয়ে শাদি তো আর ছেলেখেলা নয়। আর এটা শুধুমাত্র একটা ছেলে আরেকটা মেয়ের জীবনের ব্যাপার নয়। দুটো গোটা পরিবার নতুন আত্মীয়তার সূত্রে বাঁধা পড়ে যায় এতে। আর আত্মীয়তা কথাটা আত্মার সঙ্গে জুড়ে থাকে। আর মিথ্যের ওপর আত্মীয়তার ভিত গড়লে সে আত্মীয়তা কখনও মজবুত হতে পারে না। আপনি আমার অপরাধে নেবেন না মেসোমশাই। কিন্তু কথাটা না বলেও পারছি না। আপনার বড় মেয়ের কথা তো আমরা শুনেছি। আপনি নিজেই তো সেটা বুঝতে পেরেছেন যে মিথ্যের ওপর সরল মনে বিশ্বাস করে বড় মেয়ের বিয়ে আপনারা ঠিকই দিয়েছেন। কিন্তু তাতে কি ভাল কিছু হয়েছে? হয়নি। না আপনার মেয়ে সেখানে ভাল আছে, না সে পরিবারের সাথে আপনাদের কোন আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। আর আমার বড়দা আমাদের বাড়ির এ জেনারেশনের মধ্যে সবচেয়ে বড়। আপনার ছোটমেয়ে আমাদের বাড়ির বড়বৌ হতে চলেছে। আর একটা একান্নবর্তী পরিবারে বড়বৌয়ের হাতে অনেক দায়িত্ব থাকে। আমাদের বাড়ির গুরুজনদের কথা না হয় ছেড়েই দিলুম, কিন্তু আমাদের ছ’ ভাইবোনকে নিজের ভাইবোনদের মত ভালবাসতে হবে তাকে। তাই আপনার ছোটমেয়ের মতই এমন মিষ্টি স্বভাবের একটা মেয়ে আমরা সবাই খুঁজছিলাম। কিন্তু জানেন তো, এমনিতে হয়ত অনেক ভাল ছেলে মেয়ের সাথেই দেখা হয়ে থাকে। কিন্তু ঘরের বৌ বা ঘরের জামাই করবার সময় পছন্দসই মেয়ে বা ছেলে দুটোই খুঁজে পাওয়া খুব দুষ্কর। আর আমাদের পরিবারের মধ্যে আমার দিদি আমার দাদাকে যতটা ভালবাসে, ততটা ভাল আর কেউ বাসে না। আর দাদাও দিদির সম্মতি ছাড়া কোন কাজ করে না। আপনার ছোট মেয়েকে সেদিন ডিস্ট্রিক্ট অডিটোরিয়ামে প্রথমবার দেখেই আমি, দাদা আর দিদি আপনার মেয়েকে পছন্দ করেছিলাম। আর আমাদের বাড়ি থেকে দিদির ওপরেই ভার দেওয়া হয়েছিল দাদার জন্যে একটা উপযুক্ত মেয়ে খুঁজে বের করবার। আপনাদের মেয়েকে ভাল লাগলেও আমাদের মনে কিছুটা সংশয় ছিল। অপরাধ নেবেন না মেসো মশাই। আজকাল দেশের পরিস্থিতি যা হয়েছে, তাতে এ যুগের ছেলে হয়েও আমার স্বীকার করতে বাঁধা নেই যে একটা ভাল মেয়েকে উঠতি বয়সের ছেলেরা নানারকম প্রলোভন দেখিয়ে তাদের নিজেদের ভালবাসার জালে জড়িয়ে ফেলে। আর বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই মেয়ের অভিভাবকেরা এ ব্যাপারে অজ্ঞ থেকে যান। তারা মেয়ের মনের ভেতরের কথা না জেনেই অন্য কোন ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে দেন। কখনও কখনও এমনও হয়ে থাকে যে তারা তাদের মেয়ের ভালবাসাকে মেনে না নিয়ে জোর করেই তারা অন্য ছেলের সাথে তাদের মেয়েদের বিয়ে দেন। কিন্তু এমন বিয়ের পরিণাম কখনও ভাল হয় না। পরিবারে পরিবারে অশান্তি তো হয়েই থাকে। এমনকি পরিবারের সদস্যদের অনেকের প্রাণ পর্যন্ত চলে যায়। আপনাদের মেয়েকে দেখে আমাদের ভাল লাগলেও আমরা সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আপনাদের কাছে আসতে চাইনি। আমরা চেয়েছিলাম কোন ভাবে আপনার মেয়ের মনের ভেতরের কথাটা জানতে। তাই আমাদের সবার সাথে পরামর্শ করে দিদি এখানে এসেছিল। দিদির ভেতর একটা অদ্ভুত শক্তি আছে। সে খুব সহজেই সকলের সাথে মিলে মিশে যেতে পারে। তাই দিদিকে আমরাই এখানে পাঠিয়েছিলুম, শুধু এটা জানতে যে আপনার মেয়ে কোন ছেলেকে ভালবাসে কি না। আর সে আমাদের ঘরের বড়বৌ হবার উপযুক্ত কিনা। আমাদের কারুর মনেই আর অন্য কোন অভিসন্ধি ছিল না”।  সবাই চুপচাপ সতীশের কথাগুলো শুনে যাচ্ছিল। সতীশ থামতেই সীমন্তিনী বলল, “হ্যা মেসো। ভাই যা বলছে তা সম্পূর্ণ ঠিক। তবে আমি জানি তোমাদের কাছে মিথ্যে পরিচয় দিয়ে মিথ্যে কথা বলেছি বলে তোমার মনে দুঃখ হয়েছে। আর এমনটা তো হবারই কথা। কিন্তু আমি মনে করি ভাল কিছু করবার জন্যে একটু আধটু মিথ্যে কথা বললে সেটা বড় কোন অপরাধ করা হয় না। আমি রচুর কথা ছেড়ে দিচ্ছি আপাততঃ। তুমি আর মাসি তো আমাকে মেয়ে বলে মেনেছ। কিংশুক প্রথম দিন থেকেই আমাকে তার দিদিভাই বানিয়ে নিয়েছে। তোমরা তো কেউ আমার সাথে মিথ্যাচার করনি। আমার নিজের বাবা মা আমাকে কতটা ভালবাসেন তা আমি এতদিন বুঝতেই পারিনি। কিন্তু তুমি আর মাসি আমাকে যতটা ভালবেসেছ এতটা ভালবাসা আমি আমার মা বাবার কাছ থেকে কখনও পাইনি। তাই মনে মনে আমিও নিজেকে তোমাদের আরেকটা মেয়ে বলে ভেবেছি। তাই তোমার দিব্যি করে বলছি, আমি যে ও বাড়িরই মেয়ে, এটা গোপন রাখতেই শুধু কিছু মিথ্যের আশ্রয় নিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের পরিবারের ব্যাপারে, আমার দাদাভাইয়ের ব্যাপারে একটা বর্ণও তোমাদের আমি মিথ্যে বলিনি। তোমরা নিজেরাও তো সেখানে গিয়ে দেখেছ। তোমাদের কি মনে হয়েছে আমি মিথ্যে কিছু বলেছি? এখনও যদি তোমাদের মনে কোন সংশয় থেকে থাকে, তাহলে তোমরা আরো খোঁজ খবর নিয়ে দেখ। একটা বছর সময় তো হাতে আছেই। আমার মনে হয় কোন ছেলের ব্যাপারে খোঁজ খবর নেবার পক্ষে একবছর সময়টা যথেষ্ট। কিন্তু দোহাই তোমার। তোমরা এ সম্পর্কটাকে নাকচ করে দিও না মেসো। আমাকে তোমরা যে শাস্তি দিতে চাও দাও। আমি তোমাদের সব শাস্তি মাথা পেতে নেব। তোমরা চাইলে মিথ্যে কথা বলার অপরাধে আমাকে মেরে ফেলতে পার। আমি কিচ্ছুটি বলব না। কিন্তু রচুকে আমার দাদাভাইয়ের হাতে তুলে দিতে আপত্তি কোর না” বলতে বলতে বিধুবাবুর পায়ে লুটিয়ে পড়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল।  ঘরে সবাই চুপ করে থাকলেও কিংশুক ছুটে এসে পেছন থেকে সীমন্তিনীকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বলতে লাগল, “ও দিদিভাই। তুমি কেঁদো না গো”। কিংশুকের কথায় যেন সকলের সন্বিত ফিরল। রচনাও আরেকপাশ থেকে সীমন্তিনীকে ধরে ওঠাতে চেষ্টা করে বলল, “ওঠো দিদিভাই। তুমি এভাবে কাঁদছ কেন? ওঠো প্লীজ”। সীমন্তিনী তবু বিধুবাবুর পা জড়িয়ে ধরে পাগলের মত একনাগাড়ে বলে যাচ্ছে, “আমাকে শাস্তি দাও তুমি মেসো। কিন্তু এ বিয়েটা ভেঙে দিও না। দয়া কর আমাকে”।  সীমন্তিনীর অবস্থা দেখে সতীশের চোখেও জল এসে গেল। সে আর থাকতে না পেরে উঠে ঘরের বাইরে চলে যেতে উদ্যত হতেই বিভাদেবী তার হাত ধরে ধরা গলায় বললেন, “কোথায় যাচ্ছ বাবা তুমি? বস তুমি এখানে। আমি দেখছি” বলে তাকে আবার বিছানায় বসিয়ে দিয়ে রচনা আর কিংশুককে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে সীমন্তিনীকে পেছন থেকে জাপটে ধরে বললেন, “ওঠ মা। আর কাঁদতে হবে না। তুই না তোর মেসোর মা অন্নপূর্ণা। তোর মত একটা মেয়ে আমার ঘরে চোখের জল ফেললে আমার যে অমঙ্গল হবে রে”। সীমন্তিনী তাও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলল, “না না মাসি, মেসো আমাকে ক্ষমা না-ই করুন। আমি আর কখনও আমার এ মুখ নিয়ে তোমাদের কাছে আসব না, আমি কথা দিচ্ছি। কিন্তু মেসো যতক্ষণ না বলবেন যে তিনি এ বিয়েটা ভেঙে দেবেন না, ততক্ষণ আমি আমি এভাবেই তার পায়ে পড়ে থাকব”। বিভাদেবী তার স্বামীর মুখের দিকে চেয়ে বললেন, “ওগো তুমি কিছু বলছ না কেন? মেয়েটা এভাবে কেঁদে কেঁদে তোমার পায়ের ওপরেই মরে যাক, এটাই কি চাইছ তুমি”?  বিধুবাবু এবার সীমন্তিনীর মাথায় হাত দিয়ে বললেন, “ওঠো মা। মা অন্নপূর্ণা হয়ে তুমি এভাবে আমার পায়ের ওপর চোখের জল ফেলে আমাকে আর পাপী করে তুলো না মা। ওঠো। আর তুমি তো সত্যিই কোন অন্যায় করনি। তুমি যে তোমার দাদাভাইকে কতখানি ভালবাস, সেটা বুঝতে পারছি। আর আমাদের রচুকেও যে তুমি এমনি করে ভালবাসবে, তাও আমি বুঝেছি। আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি মা। রচুর বিয়ে তোমার দাদাভাইয়ের সাথেই দেব আমরা। এবার ওঠো লক্ষ্মী মা আমার”।  সীমন্তিনী সে কথা শুনে একেবারে শান্ত হয়ে গেল। বিভাদেবী জোর করে তাকে টেনে তুলতেই তার দেহটা বিভাদেবীর বুকের ওপর এলিয়ে পড়ল। সীমন্তিনীর বোজা চোখ দুটোর ভেতর থেকে জলের ধারা বেরিয়ে এসেছে। কিন্তু তার শরীরে একেবারে সাড় নেই। বিভাদেবী আঁতকে উঠে বললেন, “ওরে ও রচু, মেয়েটা বুঝি অজ্ঞান হয়ে গেছে রে। একটু জল নিয়ে আয় মা শিগিগীর”।  ঘরের মধ্যে মূহুর্তে শোরগোল পড়ে গেল। বিভাদেবী, বিধুবাবু আর কিংশুক সকলেই সীমন্তিনীর নাম ধরে ডাকতে শুরু করল। সতীশও কি করবে কি করবে না কিছু বুঝতে পারল না। চরম উৎকণ্ঠা বুকে চেপে সকলের পেছনে দাঁড়িয়ে সে দিদির মুখের দিকে চেয়ে রইল।  কয়েক সেকেণ্ড বাদেই রচনা একটা জলের মগ হাতে নিয়ে ঘরে ঢুকে সীমন্তিনীর পাশে বসে তার মাথাটাকে নিজের কোলের ওপর টেনে নিয়ে তার চোখে মুখে জলের ঝাঁপটা দিতে লাগল। একটু বাদেই সীমন্তিনী চোখ মেলে চাইতেই বিভাদেবী বলে উঠলেন, “এই তো, এই তো মা আমার চোখে মেলে চেয়েছে। রচু মা, আমি ওকে ধরছি। তুই এক কাপ দুধ নিয়ে আয় তো মা চট করে। একটু দুধ খেলেই ও ঠিক হয়ে যাবে। আর শোন দুধটা বোধ হয় ঠাণ্ডা হয়ে গেছে এতক্ষণে। একটু হাল্কা গরম করে আনিস”। রচনা আবার ছুটে রান্নাঘরে চলে গেল। কিংশুক সীমন্তিনীর মুখের ওপর ঝুঁকে বলল, “ও দিদিভাই। তুমি ঠিক আছ তো? বল না দিদিভাই। তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে? কষ্ট হচ্ছে তোমার”? সীমন্তিনী আলতো করে কিংশুকের একটা হাত ধরে একটু হাসবার চেষ্টা করে বলল, “না ভাই, কিচ্ছু হয়নি আমার। কোন কষ্ট হচ্ছে না আমার। এই তো দেখ না। আমি একদম ঠিক হয়ে গেছি এখন”।  বিধুবাবু আশ্বস্ত হয়ে বললেন, “ইশ। কী ভয়টাই না পাইয়ে দিয়েছিলে মা তুমি? এমন করে কাঁদবার কি হয়েছে বল তো? তুমি কি ভেবেছিলে আমি তোমাকে গালমন্দ করব? তাই কি কখনও হতে পারে মা? তুমি যে আমাদের মা অন্নপূর্ণা গো”।  সীমন্তিনী হাত বাড়িয়ে বিধুবাবুর পায়ে হাত দিয়ে বলল, “সত্যি বলছ মেসো? আমাকে তুমি ক্ষমা করে  দিয়েছ তো? আমার দাদাভাইয়ের সাথে রচুর বিয়ে দেবে তো”?  বিধুবাবু নিচু হয়ে সীমন্তিনীর হাত ধরে বললেন, “তোমার দাদাভাইয়ের সাথে আমি মেয়ের বিয়ে দেব না, এ’কথা কি একবারও বলেছি আমি? আর তোমাকে ক্ষমাই বা করার প্রশ্ন আসছে কোত্থেকে? তুমি তো যা কিছু করেছ তা কেবল তোমার দাদাভাইয়ের জন্যে করেছ। আর এতে তোমার ইচ্ছেপূর্তির সাথে সাথে আমরাও তো উপকৃত হয়েছি মা। আমার ছোট মেয়েটা যে এত কপাল করে এসেছিল সে তো আমি ভাবতেও পারিনি। চিরদিনের মত তোমার মত একটা দিদি পেয়ে গেল। এ কি ওর কম সৌভাগ্য? ওঠ মা, উঠে বস”।  সীমন্তিনী উঠে বিভাদেবীকেও একটা প্রণাম করে বলল, “তুমিও আমাকে ক্ষমা করে দিও মাসি”। ______________________________  
Parent