সমাহার by নীললোহিত - অধ্যায় ১৩

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-38509-post-3416674.html#pid3416674

🕰️ Posted on June 21, 2021 by ✍️ ddey333 (Profile)

🏷️ Tags:
📖 534 words / 2 min read

Parent
দেড়বছরের মাথায় মালতি মা হয়। জন্ম হয় ওদের সন্তানের। ওদের মেয়ের। দেখতে দেখতে তারই বয়স হয়ে গেল সাড়ে তিনবছর। মায়ের খুব ন্যাওটা। পাশের বাড়ির দিদির কাছে রেখে যখন কাজে বের হয় তখন মেয়েটা খুব কাঁদে। মনটা মালতিরও খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু কোনো উপায় নেই। কাজে যে ওকে বেরোতেই হবে। নাহলে মেয়ের মুখে খাবার জোগাবে কি করে। জীবন সবসময় এক লয়ে বয় না। মাসছয়েক আগে হঠাৎ করে গ্যারাজে অজ্ঞান হয়ে যায় রতন। গ্যারাজের লোকেরাই ওকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরীক্ষার পর জানা যায় ছোটবেলা থেকেই রতনের হার্টটা খুবই দূর্বল। একটা ভাল্ভ বন্ধ। আগে কোনো অসুবিধা না হলেও এখন যত বয়স বাড়ছে, ততই কমজোরী হয়ে পড়ছে রতনের হৃৎপিণ্ড। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অপারেশন করাতেই হবে। নাহলে আরোও নিস্তেজ হয়ে যাবে রতন এবং ওর হৃৎপিণ্ড। কিন্তু টাকার অঙ্কটা তো কম নয়। দেড় লক্ষ টাকা এই ছ’মাসেও জোগাড় করে উঠতে পারেনি মালতি। চোখের সামনে একটু একটু করে দূর্বল হয়ে পড়ে রতন। মাস খানেক থেকে তো একপ্রকার শয্যাশায়ী সে। সংসারের জোয়াল পুরোপুরি ভাবেই মালতির ঘাড়ে। দাঁতে দাঁত চেপে লড়াইটা চালিয়ে যাচ্ছে ও। কিন্তু ইদানিং মনে মনে হচ্ছে হেরে যাচ্ছে ও। পাঁচটা বাড়ির কাজ করেও ও অতগুলো টাকা জমা করতে পারেনি। নিজের ভালবাসাকে একটু একটু করে মৃত্যুর কাছে চলে যেতে দেখছে। ডাক্তার আর মাত্র একমাস সময় দিয়েছে। তারমধ্যে অপারেশন হয়ে গেলে রতন আবার আগের মত সুস্থ, স্বাভাবিক হয়ে উঠবে। আর তা না হলে..... ভাবতে গেলেও শিউড়ে ওঠে মালতি। রতনকে ছেড়ে, নিজের ভালবাসাকে ছাড়া ও বাঁচবে না। বাঁচতে পারেনা। কখন যে বৌদি ওর কাছে এসে দাঁড়িয়েছে ও বুঝতেই পারেনা। কাঁধে বৌদির হাতের স্পর্শ টের পেয়ে ঘুরে তাকায় ও। ভিজে আসা চোখের কোলদুটোকে মুছে নিয়ে বলে, “এই তো হয়ে গেছে, বৌদি। আর দুটো আছে। তাহলেই হয়ে যাবে।” “তুই আবার উল্টোপাল্টা কিছু ভাবছিলিস? একদম ভাবিস না। কিছু না কিছু উপায় একটা হয়ে যাবে।” উপায় যে একটা হয়ে গেছে সেটা বলতে গিয়েও বলতে পারেনা মালতি। চুপ করে থাকে। বৌদি বলে, “প্লেটগুলো ধুয়ে দিয়ে তুই চলে যা। অনেক রাত হয়ে গেল। মেয়েটা আবার কাঁদবে। আর শোন্, তোদের জন্য কিছু খাবার দিয়ে দেব, নিয়ে যাস। রাতে গিয়ে আর রান্না করতে হবেনা।” নমিতা বৌদিদের বাড়ি থেকে যখন বের হল তখন রাত আটটা বাজে। হাতে আর মাত্র ঘন্টা দুয়েক বাকি। তারপরেই.... রতনের অসুখটা ধরা পড়ার পর প্রায় পাগলের মত হয়ে পড়ে মালতি। হেন লোক থাকেনি, যার কাছে ও হাত পাতেনি। প্রত্যেকেই যে যার সাধ্যমত সাহায্য করেছে। ঠিক দিন পনেরো আগে রত্নাদি নতুন একটা কাজের সন্ধান আনে। পাকড়াশি বলে একজনের বাড়িতে কাজ করতে হবে। না বলেনি ও। ওর যে এখন অনেক, অনেক টাকার দরকার। পাকড়াশি খুব বড়লোক। বড় গাড়ি করে প্রতিদিন অফিস যায়। কিন্তু ওর বউ নেই। মারা গেছে অনেকদিন। তাই এমন একজনকে খুঁজছে যে রান্নাবান্না করে দেবে। মাইনে পত্র ভাল। মালতি কাজে বহাল হয়ে যায়। মানুষটা বেশ ভাল। নরম করে কথা বলে ওর সঙ্গে। হঠাৎ হপ্তা খানেক আগে ও রান্না করছে এমন সময় পাকড়াশি অফিস থেকে ফিরে ওকে ডাকল। পাকড়াশি চা খায়না। কফি খায়। কফি তৈরি করে ওকে দেয় মালতি। কফির কাপে চুমুক দিয়ে বলে, “তোমার সঙ্গে একটা কথা আছে।” ভয় পেয়ে যায় মালতি। ওকে ছাড়িয়ে দেবে নাতো? ও কি কিছু ভুল করেছে? কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, “বলুন।” “কাজে ঢোকার সময় বলছিলে না, যে তোমার স্বামীর কি হয়েছে। অপারেশন করাতে হবে। অনেক টাকার দরকার। আমি একটা ব্যবস্থা করতে পারি।” এইপর্যন্ত বলে কফির কাপে চুমুক দেয় পাকড়াশি। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মালতি তখন মনে মনে ঠাকুর ডাকছে। একটা যেন ব্যবস্থা হয়ে যায়।
Parent