সত্তা - অধ্যায় ১৮

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-29132-post-3401535.html#pid3401535

🕰️ Posted on June 16, 2021 by ✍️ Nefertiti (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 923 words / 4 min read

Parent
স্নিগ্ধা সজলের মায়ের কাছে থেকে বিদায় নিয়ে যখন বেরিয়েছে ততোক্ষনে দুপুর পেরিয়ে বিকেল হয়ে গেছে। "কেমন লাগল শাশুড়িকে?" লিফ্টে ঢুকে সজল জিজ্ঞাসা করে। "শাশুড়ি না, মা। খুব ভাল" স্নিগ্ধা বলে। "ডাক্তার বলেছেন বাইপাসটা যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব করে নিতে।" "কতো খরচ হতে পারে?" "সব মিলিয়ে পাঁচ ছয় লাখ টাকা তো লাগবেই।" "এতো টাকা কিভাবে যোগাড় করবে?" স্নিগ্ধা জিজ্ঞাসা করে। "গ্রামের বাড়িটা বেচে দিচ্ছি। ক্রেতাও পাওয়া গেছে, সামনের সপ্তাহেই দলিল হবে।" সজল বলে। ততোক্ষনে লিফ্ট নিচে নেমে গেছে। "তাই বলে বাড়ীটা বিক্রি করে দেবে? অন্য কোনভাবে টাকাটা যোগাড় করা যায়না?" "কি উপায় আছে বলো?" বলে বাইক স্টার্ট দেয় সজল। "শুনেছি অনেক কোম্পানি কর্মচারীদের এরকম ইমার্জেন্সি পরিস্থিতিতে লোন কিংবা এডভান্স স্যালারী দেয়।" বাইকের পেছনে উঠতে উঠতে স্নিগ্ধা বলে। "সেটা পুরনো বিশ্বস্ত কর্মচারীদের ক্ষেত্রে, আমি তো সবে জয়েন করলাম।" বাইক চালিয়ে মেইন রোডে উঠতে উঠতে বলে সজল। "অতো চিন্তা করছো কেন স্নিগ্ধা? একদিন দেখো, এই ঢাকা শহরেই আমাদের বাড়ি হবে। এই শহরের সব থেকে ধনী ব্যক্তির নাম হবে সজল, সজল হাসান। তুমি শুধু আমার পাশে থেকো।" একটু থেমে আবার প্রশ্ন করে "থাকবে তো পাশে?" "আমার অতো উচ্চাশা নেই গো। আমার একটি ছোট সাজানো গোছানো সংসার হলেই যথেষ্ট।" স্নিগ্ধা বলে। "জীবন তো মাত্র একটাই। এই জীবনে সামর্থের সবটুকু দিয়ে অর্জন করতে চাই আমি।" "অর্জন করো ততোটুকু যতোটুকু উপভোগ করা যায়। খুব বেশী অর্জনের নেশায় মানুষ জীবনে সুখ হারিয়ে ফেলে।" "তুমি কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর দিলে না। থাকবে কি পাশে?" "ভেবে বলব। এখন তুমি বাইক চালানোর দিকে মনোযোগ দাও, বাইক চালাতে চালাতে এত কথা বলতে হয়না।" রাস্তায় জ্যাম ছিল প্রচুর, বনানি থেকে মিরপুর পৌঁছাতে ওদের প্রায় দেড় ঘন্টা লেগে যায়। যখন ওরা মিরপুর ৬ এ পৌঁছায় ততক্ষনে সন্ধা ঘনিয়ে এসেছে। সজল বাইকটা স্নিগ্ধার মেসের সামনে দাঁড় করায়। স্নিগ্ধা যেতে যেতে একবার পেছন ফিরে তাকায়, তারপর গেট খুলে ঢুকে যায়। ঠিক তখনই কারো হাত পড়ে সজলের কাঁধে। "কিরে সজল, কি খবর?" "আরে সোহরাব ভাই যে!" বলে সজল করমর্দন করে সোহরাবের সাথে। "কিরে কি খবর? শুনলাম চাচীর শরীর খারাপ?" সোহরাব বলে। "হ্যাঁ, হার্টের প্রবলেম বেড়েছে।" "ভাল করে চিকিৎসা করা।" "হুম, ঢাকায় নিয়ে এসেছি, এপোলোয় চিকিৎসা করাচ্ছি।" সজল বলে। "তো এখানে কি? গার্লফ্রেন্ড?" "সেরকমই।" "আমি কালকে একবার তোর ফ্ল্যাটে যাব। চাচীর সাথে দেখা হয়না অনেকদিন। এখন যাই।" "ঠিক আছে, আইসো কিন্তু।" বলে সজল বাইক স্টার্ট দেয়। সোহরাব তার মেসে ফিরে আসে। তপু, ফাহিম আর রাকিব একসাথে ল্যাপটপে হিন্দি মুভি দেখছে, কবির সেখানে নেই। সোহরাব শার্ট প্যান্ট ছেড়ে লুঙ্গি আর গেঞ্জি গায়ে দিয়ে ছাদে চলে আসে। সেখানে বেশ সুন্দর জোৎনা, পুর্নিমা না হলেও বড়সর একফালি চাঁদ, সাথে ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে। কবির বেঞ্চের উপর বসে চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে। সোহরাব পাশে বসলেও কবির বুঝতে পারেনা। "কবির" বলে ডাকতেই চমকে পাশে তাকায়। "আরে সোহরাব ভাই, কখন এলেন?" "এই মাত্র। কি ব্যাপার কবির, আজকাল এত উদাস উদাস ভাব কেন?" "কই নাতো।" "কিছুক্ষন আগে স্নিগ্ধাকে দেখলাম একটি ছেলের সাথে।" "সম্ভবত ওর বয়ফ্রেন্ড।" কবির বলে। "আমি তো ভেবেছিলাম তোমাদের মাঝে রিলেশন চলে।" "ভুল ভেবেছেন। স্নিগ্ধা আর আমি শুধুই বন্ধু।" দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে কবির। "আমি নিজে কখনো প্রেমপ্রীতির ভেতর যাইনি বলে মনে কোরোনা যে আমি এর কিছু বুঝিনা। তোমার এই উদাস উদাস ভাবে আকাশের তারা গোনার মানে কি তা আমি বুঝিনা ভেবেছো?" সোহরাব বলে। "যার বোঝা উচিত, সে তো কিছু বোঝে না।" কবির বলে। "স্নিগ্ধাকে মুখ ফুটে কিছু বলেছ?" "না।" "তোমার কি দেবদাস হওয়ার সখ হয়েছে? সোজাসুজি সবকিছু খুলে বলতে পারোনা?" সোহরাব বলে। "ভয় করে সোহরাব ভাই। ও আমাকে শুধু বন্ধু মনে করে, যদি সেই সম্পর্কটাও নষ্ট হয়ে যায়। তাছাড়া ও তো আরেকজনকে ভালবাসে।" "আমি ছেলেটাকে চিনি, খুব ভাল করেই চিনি। ওদের আর আমাদের বাড়ি পাশাপাশি।" একটু থেমে আবার বলে সোহরাব, "স্নিগ্ধার নাম্বারটা দাও তো।" "ওর নাম্বার দিয়ে কি করবেন?" "কি আবার করব? প্রেম করব। বউকে আর ভাল লাগছে না। তুমি যখন প্রপোজ করবেই না তখন আমি ট্রাই করে দেখিই না।" কৌতুকের সুরে বলে সোহরাব। শুনে কবির হেসে ফেলে। "দাড়ান আজকেই ভাবিকে কল করে বলব যে ভাইয়ের ভীমরতি ধরেছে।" কবির কৌতুকের সুরে বলে। "সে তুমি যা ইচ্ছা বলো। আগে নাম্বারটা তো দাও।" একটু থেমে আবার বলে- "তুমি কি ভেবেছো, তুমি দিতে না চাইলে আমি স্নিগ্ধার নাম্বার পাবনা?" বলে কবিরের প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে মোবাইলটা বের করে আনে সোহরাব। তারপর স্নিগ্ধার নাম্বার বের করে নিজের মোবাইলে সেভ করে নেয়। "চল খেয়ে নেই, খিদে পেয়েছে।" সোহরাব বলে। "আপনি খেয়ে নিন, আমি পরে খাব।" "পরে কেন? এখনই চল। নিয়ম মাফিক খাবে, নাহলে স্বাস্থ্য হবে কিভাবে? এরকম হাড়জিরজিরে ছেলেদের মেয়েরা পছন্দ করেনা। সজলকে দেখেছ? নিয়মিত জিম করতো আগে। জিম করে করে মাসেল ফুলিয়ে তুলেছে মেয়েদের ইমপ্রেস করার জন্য।" "বুঝেছি বুঝেছি ভাই, আর লেকচার দিতে হবে না। চলেন খেতে যাই।" শুক্রবার বিকেল চারটে, সোহরাব লা এরিস্টন রেস্টুরেন্টে বসে স্নিগ্ধার জন্য অপেক্ষা করছে। গতকাল রাতেই সে ফোনে স্নিগ্ধার সাথে কথা বলেছে, চারটার সময় স্নিগ্ধার আসার কথা। স্নিগ্ধার সাথে সোহরাবের পরিচয় কবিরের মাধ্যমেই, এর আগে দুই একবার দেখা হয়েছে শুধু। স্নিগ্ধার পৌঁছাতে পৌঁছাতে সাড়ে চারটা বেজে গেল। "সরি দেরী হয়ে গেল।" স্নিগ্ধা বলে। "ইটস ওকে, প্লিজ বসো" সোহরাব বলে। "কি খাবে বল? চা নাকি কফি?" সোহরাব বলে। "কফি" স্নিগ্ধা বলে। দুটো কফির অর্ডার দিয়ে দেয় সোহরাব। "তুমি আমার ছোট বোনের মতো, যদি আমাকে বড় ভাই মনে করতে আপত্তি না থাকে তো তোমাকে কিছু পার্সোনাল প্রশ্ন করতে পারি?" সোহরাব বলে। "অবশ্যই" চিন্তিতভাবে বলে স্নিগ্ধা। "তুমি কি সজল নামের কাউকে চেনো? সজল হাসান, বুয়েট থেকে গ্র্যাজুয়েট, রোয়ান রিয়েল এস্টেটে চাকুরী করে।" হঠাত সজলের প্রসঙ্গ ওঠায় কিছুটা ভড়কে যায় স্নিগ্ধা, নিজেকে সামলে নিয়ে আস্তে করে হ্যাঁ বলে। "সে কি তোমার বয়ফ্রেন্ড?" "হ্যাঁ।" "সজলকে আমি খুব ভালভাবেই চিনি। ও আর আমি একই গ্রামের ছেলে। ওর আর আমার বাড়ী পাশাপাশি।" "আপনিই কি সেই সোহরাব ভাই, যে ওকে ঢাকায় এনেছে, আশ্রয় দিয়েছে ও টিউশনির ব্যাবস্থা করে দিয়েছে?" "হ্যাঁ।" "আপনার প্রতি সজল ভীষন কৃতজ্ঞ।" "ও হয়তো আমার ব্যাপারে অনেক কিছুই বলেছে আবার অনেক কিছুই বলেনি। আচ্ছা আমি বলছি শোন।" ততোক্ষনে কফি চলে এসেছে। কফিতে চুমুক দিতে দিতে সোহরাব ভাই গল্প আকারে বলতে থাকে।
Parent