সত্তা - অধ্যায় ২৪

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-29132-post-3401571.html#pid3401571

🕰️ Posted on June 16, 2021 by ✍️ Nefertiti (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 1080 words / 5 min read

Parent
কবির যখন সুজাবাদের প্রান্তরে চলে এল তখন স্নিগ্ধা খালের ধারে সবুজ ঘাসে বসে আনমনে ঢিল ছুঁড়ছে পানিতে। কবির ওর পাশে বসে পড়ে। "একাই চলে এলি? আমার জন্য অপেক্ষা করতে পারলি না?" কবির বলে। স্নিগ্ধা কোন জবাব দেয়না আনমনে ঢিল ছুঁড়তে থাকে খালে। কয়েক মুহুর্ত কেটে যায় নিরবে। "কিছু বলছিস না যে?" কবির আবার প্রশ্ন করে। "কি বলব, বুঝতে পারছি না। জানিস আমি সারারাত ঘুমাতে পারিনি, টেনশনে।" "তোর এতো টেনশন কিসের?" অবাক হওয়ার ভান করে বলে কবির। "জেনেও না জানার ভান করবি না। একে তো আমি নিজের টেনশনে বাঁচি না তার মধ্যে তুই আরেক টেনশন যোগ করে দিলি।" অভিযোগের সুরে বলে স্নিগ্ধা। "আমাকে নিয়ে তোর টেনশন করতে হবেনা। যে টেনশন ঢাকা থেকে ছুটে আসছে তার ব্যাপারে কি করবি সেটা আগে ঠিক করে নে।" কবির বলে। "আমি ঠিক করে রেখেছিই, না করে দিব। এই মুহুর্তে আমি বিয়ের জন্য একেবারেই প্রস্তুত না।" স্নিগ্ধা বলে। ঠিক সেই সময় রিংটোন বেজে ওঠে স্নিগ্ধার মোবাইলে। সজলের ফোন, স্নিগ্ধা রিসিভ করে। "হ্যালো স্নিগ্ধা, আমি বগুড়া পৌঁছে গেছি।" "তোমাকে না আমি আসতে মানা করেছি?" স্নিগ্ধা বলে। "আমি তোমাকে সবকিছু খুলে বলছি, এখনি দেখা করতে চাই। আমি তোমাদের বাড়িতে আসছি।" "আমি বাড়িতে নেই, একটু বাইরে আছি।" স্নিগ্ধা বলে। "তাহলে আমার সাথে দেখা করো কিংবা তুমি কোথায় আছ আমাকে বল আমি চলে আসছি।" সজল বলে। কয়েক সেকেন্ড পর জবাব আসে "ঠিক আছ এসো।" তারপর স্নিগ্ধা ঠিকানা দিয়ে দেয়। "এখানে আসতে বললি? অন্য কোথাও আসতে বলতে পারতি।" স্নিগ্ধাকে ফোন কেটে দিতে দেখে কবির বলে। "কেন? এখানে দেখা করলে সমস্যা কি?" "কিছু না" কবির বলে। সজলের আসতে আরো প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট লেগে যায়। সজল ওদের থেকে কয়েক মিটার দুরে দাড়িয়ে থাকে। "যা গিয়ে কথা বল", স্নিগ্ধার উদ্দেশ্যে বলে কবির। স্নিগ্ধা উঠে সজলের সামনে গিয়ে বলে "কি বলতে চাও বল।" "কিছু দিন আগে তোমাকে বলেছিলাম না যে আম্মার শরীর একটু খারাপ? আসলে আম্মার হার্ট এটাক হয়েছিল। সোহরাব ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে আম্মা খুব কষ্ট পেয়েছেন। সম্ভবত সে কারনেই" সজল বলে। "কি বলছ তুমি? আমাকে বলনি কেন?" "তোমার তখন পরীক্ষা চলছিল। আম্মা নিজেই মানা করেছিল, এখন অবশ্য কিছুটা সুস্থ্য। তবে ডাক্তার বলেছেন পনেরো বিশ দিনের ভেতর অপারেশন না করতে পারলে রিস্ক হয়ে যাবে।" "তো অপারেশন করাও। টাকা যোগাড় করতে পারোনি?" "টাকাটা সমস্যা না। বাড়ি বিক্রি করেছি, হাতে পঁচিশ লাখ টাকা আছে। কিন্তু আম্মা কিছুতেই রাজি হচ্ছে না। উনি জিদ করছেন যে আমাদের বিয়ে না দেখে উনি অপারেশন করাবেন না।" "তুমি ওনাকে বোঝাও। আমি অনার্স কম্প্লিটের আগে বিয়ে করতে চাই না।" স্নিগ্ধা বলে। "আম্মাকে আমি বোঝানোর চেষ্টা করেছি, কিন্তু উনি জিদ ধরে আছেন। ডাক্তার বলেছেন আম্মার অবস্থা ক্রিটিক্যাল, ওনার প্রতি যেন কোন রকম মানসিক চাপ বা আঘাত না দেয়া হয়।" "আমি বিয়ে করব যখন আমার ইচ্ছা হবে, কোন কিছুতে বাধ্য হয়ে আমি বিয়ে করতে চাই না। আর তাছাড়া..." বলতে গিয়ে থেমে যায় স্নিগ্ধা। "তাছাড়া কি?" সজল জিজ্ঞাসা করে। "তোমাকে বিয়ে করা উচিত হবে কিনা সে বিষয়ে আমাকে আরো ভেবে দেখতে হবে।" স্নিগ্ধা বলে। "তাহলে এটাই আসল সমস্যা। আমাকে তুমি বিয়ে করতেই চাও না?" "হ্যাঁ সেটাই।" স্নিগ্ধা ঝট করে বলে ফেলে। "কারনটা জানতে পারি?" "তুমি তা খুব ভাল করেই জান।" "না আমি জানি না, তুমি কি শুধু আমার অতীত জীবনের জন্য আমাকে বিয়ে করতে চাওনা নাকি এখন অন্য কাউকে মনে ধরেছে।" "তুমি যা খুশি ভেবে নিতে পার, আমার তাতে কিছু যায় আসে না।" হাল ছেড়ে দেবার ভঙ্গিতে বলে স্নিগ্ধা। "আমার কোন কিছুতেই তোমার কিছু যায় আসেনা তাই না? আমার মা মারা গেল না বেঁচে থাকল, আমি মরে গেলাম নাকি বেঁচে থাকলাম। তুমি কখনো আমাকে ভালবাসোনি, চিরদিন শুধু ছলনা করে গেছ।" অভিযোগের সুরে বলে সজল। তারপর বুক পকেট থেকে ব্লেড বের কর বা হাতের কব্জিতে ফ্যাঁস দেয় সজল, সাথে সাথে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে। সজল বিধ্বস্তভাবে মাটিতে বসে পড়ে। "এ কি করলে তুমি?" আঁতকে ওঠে স্নিগ্ধা! "আমি যখন বলতাম তোমার জন্য আমি জীবন দিয়ে দিতে পারি, তখন তোমার মনে হতো আমি ফ্লার্ট করছি?" সজল বলে। স্নিগ্ধা ছুটে এসে নিজের ওড়না দিয়ে সজলের হাতটি পেঁচিয়ে নিতে চায়। কিন্তু সজল ঝটকা দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নেয়। ততক্ষনে কবিরও চলে এসেছে। "এ কি করলেন সজল ভাই? প্লিজ হাসপাতালে চলুন" বলে কবির সজলকে তুলতে চেষ্টা করে। "তোমরা ছাড় আমাকে। এখান থেকে চলে যাও তোমরা, কাল সকালে এসো লাশ নিতে। মাই লাইফ এন্ডস হেয়ার।" বলে ঝটকা দিয়ে সরিয়ে নেয় নিজেকে। "কি পাগলামী করছো সজল? তোমার কিছু হলে তোমার মা'র কি হবে।" প্রায় কাঁদোকাঁদো হয়ে বলে স্নিগ্ধা। "শুধু আমার মৃত্যুর খবর দিও, তারপর মাকে নিয়ে আর চিন্তা করতে হবেনা। আর তাছাড়া আমার কিংবা আমার মার কি হল না হল তাতে তো তোমার কিছু যায় আসে না।" সজল বলে "প্লিজ সজল, হসপিটালে চল। তুমি যা বলো তাই হবে।" কাঁদোকাঁদো হয়ে বলে স্নিগ্ধা। "তাহলে কথা দাও, আমাকে ছেড়ে যাবে না। আমাকে বিয়ে করবে।" "কথা দিলাম।" নিজের বুকের ওড়না সজলের হাতে চেপে ধরে বলে স্নিগ্ধা। সজলকে ওরা ধরাধরি করে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সজলের রক্ত অনেকটা বেরিয়ে যাওয়ায় এক ব্যাগ রক্ত দেয়ার প্রয়োজন পড়ে। কবিরের সাথে সজলের রক্তের গ্রুপ মিলে যাওয়ায় রক্তটা কবিরই দেয়। প্রাথমিক চিকিৎসা ও ব্যান্ডেজ করে দিয়ে রাতেই রিলিজ করে দেয়া হয় সজলকে। সজলকে তার বন্ধু রাসেলের বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে কবির ও স্নিগ্ধা যখন বাসায় ফিরে আসে ততোক্ষনে রাত এগারোটা বেজে গেছে। আগে কল করে বাসায় বলে দিয়েছে যে ওরা ওদের এক স্কুল ফ্রেন্ডের জন্মদিনের পার্টিতে গিয়েছে। "এত রাত হল কেন?" রাগত কন্ঠে বলে শিরিন। "আসলে অনেক পুরনো বন্ধু তো, সহজে ছাড়তে চাইল না।" কবির জবাব দেয়। "ছাড়তে না চাইলেও জোর করে আসতে হবে। দিনকাল ভাল না, কত টেনশন হচ্ছিল জানো?" "সরি আন্টি।" "তোমরা খেয়ে এসেছ?" "হ্যাঁ আন্টি।" আবারও কবির জবাব দেয়। "তাহলে হাতমুখ ধুয়ে ঘুমোতে যাও" শিরিন বলে। কবির ও স্নিগ্ধা ঘুমোতে যায়, কিন্তু দুজনার কারো ঘুম আসে না সহজে। পরেরদিন যখন কবিরের ঘুম ভেঙে যায় তখন প্রায় দুপুর হয়ে এসেছে, ঘড়িতে তখন সাড়ে এগারোটা বাজে। কবির দাঁত ব্রাশ করে হাতমুখ ধুয়ে বেরিয়ে এসে ড্রয়িংরুমে সজলকে দেখতে পায়। সেখানে স্নিগ্ধা ও জামান আঙ্কেলও আছে। সজল ও জামান কথা বলছিল, স্নিগ্ধা ওর বাবার পাশে বসে ছিল। ওকে কেন যেন মনমরা দেখাচ্ছিল। "আরে কবির, ওখানে দাড়িয়ে কেন? ভেতরে এসো, বসো।" কবিরকে উদ্দেশ্য করে জামান বলে। কবির এসে সোফায় বসে। "তোমরা একে অপরকে চেনো?" কবির ও সজলের উদ্দেশ্যে বলে জামান। "স্নিগ্ধার বেস্ট ফ্রেন্ডকে আমি চিনব না সে কি হয়? স্নিগ্ধা আমাকে ওর সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে অনেক আগেই।" সজল জবাব দেয়। "তোমরা গল্প করো, আমি একটু আসি।" বলে স্নিগ্ধা উঠে যায় সেখান থেকে। "সজল, তোমার হাতে কি হয়েছে?" বাঁ হাতের ব্যান্ডেজের উদ্দেশ্য করে বলে জামান। "বাইক থেকে পড়ে গিয়ে সামান্য ছিলে গেছে।" সজল বলে। "খুব সাবধানে চালাবে বাইক। আমার মতে বাইক ছেড়েই দাও, তারচেয়ে বরং বাসে যাতায়াত করাই ভাল।" জামান বলে। "জি, চেষ্টা করব।" সজল জবাব দেয়। "তুমি তো বুয়েট থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেছ, তাই না?" "জি।" "কোন সাবজেক্ট যেন?" "সিভিল।" "ভেরি গুড। এখন কি করছো?" "চাকরি করছি। রোয়ান রিয়েল এস্টেটে এসিসট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে।" সজল জবাব দেয়। "এটি কি রোয়ান গ্রুপের একটি সেক্টর?" "জি।"
Parent