সত্তা - অধ্যায় ২৫

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-29132-post-3401598.html#pid3401598

🕰️ Posted on June 16, 2021 by ✍️ Nefertiti (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 1291 words / 6 min read

Parent
"তাহলে তো বেশ ভাল কোম্পানি। কিন্তু তুমি তো সরকারি চাকরিতে ট্রাই করতে পারতে।" "আসলে আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই সরকারি চাকরীর প্রতি।" জামান আরো কিছু জিজ্ঞাসা করছিলেন সজলকে কিন্তু সে পর্যায়ে কবির উঠে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে। শিরিন আন্টিকে খুঁজে পায় রান্নাঘরে, শিরিন তখন ব্লেন্ডারে কমলার জুস করছিল। কবিরকে আসতে দেখে ওর দিকে না তাকিয়েই জিজ্ঞাসা করে "ছেলেটাকে তুমি চেন কবির?" "হ্যাঁ, মানে স্নিগ্ধা আগেই পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। তবে তেমন একটা পরিচয় নেই।" কবির বলে। "কত আগে?" "পাঁচ বছর আগে।" "এতোদিন ধরে ছেলেটার সাথে মেলামেশা করছে স্নিগ্ধা আর তুমি তা আমাকে কখনো জানালে না?" "আমি বলে দিলে ও কষ্ট পেত। আমি চাইনা ও আমার জন্য কষ্ট পাক।" কবির বলে। "কি মনে হয়? তোমার আঙ্কেলের ছেলেটিকে পছন্দ হয়েছে?" শিরিন প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে বলে। কবির হ্যাঁবোধকভাবে মাথা নাড়ায়। "বাবা মেয়ে একইরকম, মানুষের উপরের চাকচিক্য দেখে গলে যায়। ভেতরের রুপটাকে বোঝার চেষ্টা করে না।" "কেন আন্টি?" "কিছু না কবির।" "স্নিগ্ধা কোথায় আন্টি?" কবির জিজ্ঞাসা করে। "সম্ভবত ও ওর নিজের রুমে গিয়েছে।" কবির রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে স্নিগ্ধার রুমের সামনে চলে আসে, ঢুকতে গিয়ে থেমে যায় কবির। স্নিগ্ধাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় সে। স্নিগ্ধা কবিরের বাড়ির দরজার সামনে দাড়িয়ে কলিংবেল টেপে। কিন্তু কয়েক মিনিট পরও দরজা খোলে না। আবার কলিংবেল চাপে, দুই তিনবার কলিংবেল চাপার পরও কেউ দরজা খোলে না। সকাল সাড়ে দশটা বাজে, এখনো কি ঘুমিয়ে আছে কবির। আলতো করে ছুঁতেই দরজাটা খুলে যায়, দরজাটা খোলাই ছিল। "কি দায়িত্বজ্ঞানহীন ছেলে, দরজাটাও লাগায় নি!" মনে মনে বলে স্নিগ্ধা। স্নিগ্ধা ভেতরে ঢুকে কবিরের বেডরুমে যায়, কিন্তু সেখানে কবির নেই। অন্য রুমগুলো খুঁজে দেখে কিন্তু কোথাও কবিরকে পায় না। ভীষন টেনশন হয় স্নিগ্ধার। ঘর দরজা খোলা রেখে কোথায় চলে গেল কবির। রাত থেকে ওর মোবাইল বন্ধ পেয়েছে স্নিগ্ধা। স্নিগ্ধা কবিরের বাড়ির ছাদে উঠে আসে, সেখানে কবিরকে দেখে আঁতকে ওঠে স্নিগ্ধা। কবির ছাদের মেঝেতে চিত হয়ে শুয়ে আছে। স্নিগ্ধা ছুটে এসে কবিরের মাথাটা নিজের কোলে তুলে নিয়ে কবিরকে ডাকতে থাকে। কবিরের ঘুম ভেঙে যায়, চোখ খুলে স্নিগ্ধার দিকে চেয়ে থাকে। "তুই এখানে শুয়ে আছিস কেন?" স্নিগ্ধা উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলে। "এখানে শুয়ে শুয়ে আকাশের তারা দেখছিলাম। কাল রাতে পরিস্কার আকাশে লক্ষ লক্ষ তারা আর একফালি চাঁদ, শুয়ে শুয়ে দেখতে দারুন লাগছিল। কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম বুঝতে পারিনি।" উদাস কন্ঠে বলে কবির। "ও তাই বল, আমি ভেবেছিলাম..." বলতে গিয়ে থেমে যায় স্নিগ্ধা। "কি ভেবেছিলি? আমি মরে গেছি?" কবির বলে। "ওঠ এবার, চল নিচে যাই।" স্নিগ্ধা বলে। "তোর কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে থাকতে দারুন লাগছে। আরেকটু থাকি না, আর হয়তো কখনো এ সুযোগ পাবনা।" আবদার করে বলে কবির। "শখ কতো! ওঠ" বলে ঠেলে বসিয়ে দেয় কবিরকে। কবির উঠে দাড়ায়। "তোর মোবাইল বন্ধ কেন? রাত থেকে এ পর্যন্ত কতোবার কল করেছি জানিস? আম্মু কতো টেনশন করছে জানিস?", অভিযোগের সুরে বলে স্নিগ্ধা। কবির পকেট থেকে মোবাইল বের করে বলে "ওহ, খেয়াল করিনি, মোবাইল বন্ধ হয়ে আছে। সম্ভবত চার্জ শেষ।" স্নিগ্ধা ও কবির নিচে নেমে আসে। "কালকে তুই কাউকে কিছু না বলে হুট করে চলে এলি কেন?" ড্রইং রুমে বসে স্নিগ্ধা জিজ্ঞাসা করে। কবির উত্তর দেয়না, একমনে দাঁত ব্রাশ করতে থাকে। কিছুক্ষন পর মুখ ধুয়ে ফিরে আসে কবির। "কিরে, জবাব দিলি না?" স্নিগ্ধা বলে। "জবাব দেইনি কারন তার প্রয়োজন নেই, তুই খুব ভাল করেই জানিস যে আমি কেন চলে এসেছি।" কবির বলে। "আমি হয়তো জানি। কিন্তু তুই আম্মুকে বলে আসতে পারতি।" "আন্টিকে আমি কল করে বলেছিই তো। ঐ প্রসঙ্গ বাদ দে। আচ্ছা বল ঐদিকের পরিস্থিতি কেমন? তোর বিয়ের ডেট কি ফিক্স হয়েছে?" কবির বলে। প্রশ্নটি শুনে স্নিগ্ধার মুখে দুঃখের ছাপ পড়ে যায়। "সামনের সপ্তাহে বুধবার সজলের মায়ের অপারেশন। সজল চাইছে এই শুক্রবার কিংবা শনিবার বিয়ে রেজিস্ট্রি হোক।" স্নিগ্ধা বলে। "আঙ্কেল আন্টি রাজি?" কবির প্রশ্ন করে। "আব্বু আম্মু বিয়ের ব্যাপারে এতো তড়িঘড়ি পছন্দ করছেন না, আবার সজলের পরিস্থিতি বিবেচনা করে না-ও করে দিতে পারছেন না। আব্বু চারদিন সময় নিয়েছে, এর মধ্যে সিদ্ধান্ত জানাবে। কালকে আব্বু কুষ্টিয়া যাবে খোঁজ নিতে, তারপরের দিন ঢাকায়।" স্নিগ্ধা বলে। "আঙ্কেল আন্টি তোর সম্মতি জানতে চাননি?" কবির জিজ্ঞাসা করে। "চেয়েছেন।" "তুই হ্যাঁ বলেছিস?" স্নিগ্ধা হ্যাঁবোধক ভাবে মাথা নাড়ে। "তাহলে আর চিন্তা নেই। আঙ্কেল, আন্টি তোর ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাবেন না কখনোই।" বলতে বলতে কবিরের চোখে পানি চলে আসে। চোখ কচলাতে কচলাতে বলে "এই রে চোখে পোকা পড়ে গেল।" তারপর উঠে এসে ডাইনিং স্পেসের বেসিনে গিয়ে চোখ মুখে পানির ঝাপটা দেয় কবির। ঠিক তখন ওর পিঠে উষ্ণ নরম স্পর্শ অনুভব করে, স্নিগ্ধা ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে নিয়েছে। "আমি জানি তোর চোখে পোকা পড়েনি, তুই কাঁদছিস। আমার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে বলে তুই কষ্ট পাচ্ছিস। কিন্তু তুই কি জানিস, তোর যতোটা কষ্ট হচ্ছে আমারও ততোটাই কষ্ট হচ্ছে। তুই আমার পরিস্থিতি বুঝিস?" কবিরকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে স্নিগ্ধা। "আমি জানি এবং বুঝি।" স্নিগ্ধার উষ্ণ ও নরম স্পর্শ মন ভরে অনুভব করতে করতে বলে কবির। "জানিস, তুই আমার প্রাণের বন্ধু। তুই আমার সবচেয়ে কাছের মানুষ, কাউকে কখনোই আমার এতো কাছে আসতে দেইনি যতোটা কাছে তুই এসেছিস। আমি তোকে ভীষন ভালোবাসি, এতোটা আমি সজলকেও ভালোবাসি না এমনকি আম্মু আব্বুকেও না। কিন্তু তুই জানিস তো আমার পরিস্থিতি?" স্নিগ্ধা বলে। কবির নিজেকে স্নিগ্ধার বাহুডোর থেকে মুক্ত করে নেয়। তারপর স্নিগ্ধার চোখে চোখ রেখে বলে "হ্যাঁ আমি জানি এবং বুঝি।" "কথা দে, আমার বিয়ে হয়ে গেলেও কিন্তু তুই সুইসাইডের কথা ভুলেও ভাববি না। তোর কিছু হয়ে গেলে আমিও বাঁচব না।" বলতে বলতে স্নিগ্ধার চোখে পানি চলে আসে। কবিরের হাত ধরে আবারও বলতে শুরু করে "কথা দে, তুই কখনো নেশা জাতীয় দ্রব্যের ধারে কাছেও যাবিনা। আর আমার সাথে যোগাযোগ রাখবি, আগের মতোই।" "কথা দিচ্ছি, তোকে ছাড়া বেঁচে থাকা যতো কষ্টেরই হোক না কেন আমি কখনো নিজে জীবন শেষ করার চেষ্টা করব না কিংবা নেশার মাঝে সেই কষ্টের উপশম খোঁজার চেষ্টা করব না। কিন্তু তোর একটি অনুরোধ রাখা আমার পক্ষে সম্ভব না। বিয়ের পর তোর সাথে যোগাযোগ রাখা উচিত হবে না।" কবির বলে। "কিন্তু কেন?" "কোন স্বামীই এটা সহ্য করবে না যে তার স্ত্রী অন্য পুরুষকে তার চেয়েও বেশী ভালবাসে। আমার সাথে যোগাযোগ রাখলে তা তোর সংসারে অশান্তির কারণ হয়ে দাড়াতে পারে। আমি তোর সংসারে অশান্তির কারন হতে চাই না।" বলে স্নিগ্ধার অশ্রু মুছে দেয়। তারপর ওর কপালে ও গালে আলতো চুমু দেয়। তারপর স্নিগ্ধাকে জড়িয়ে ধরে ওর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। আবেগঘন প্রগাঢ় একটি চুমু। "কি করছিস?" ঘন ঘন নিশ্বাস ফেলতে ফেলতে বলে স্নিগ্ধা। "সারা জীবনের বেঁচে থাকার রসদ নিয়ে নিলাম। এই মুহুর্তটির কথা মনে করে সুখ অনুভব করব সারা জীবনভর।" কবির বলে। সেদিন সন্ধ্যাবেলা কবির তার সাইডব্যাগটা কাঁধে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। একটি রিক্সা নিয়ে স্নিগ্ধাদের বাড়িতে পৌঁছায় কবির। কলিং বেল টিপতেই শিরিন দরজাটা খুলে দেয়। "কবির, ভেতরে এস। তোমার কাঁধে ব্যাগ কেন?" শিরিন বলে। "আন্টি, আমি ঢাকায় যাচ্ছি।" ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলে কবির। "এতো তাড়াতাড়ি চলে যাবে? আর কয়েকদিন থেকে যেতে পারতে।" শিরিন বলে। "আসলে ছাত্রদের পরীক্ষা সামনেই, এখন টিউশনি মিস দেয়া ঠিক হবে না।" কবির বলে। "তোমাকে না বললাম টিউশনি ছেড়ে দিতে? তুমি তো আমার কোন কথাই শুনছ না।" শিরিন বলে। "ওদের এসএসসি পরীক্ষা তো সামনেই, এখন টিউশনি ছেড়ে দেয়া ঠিক হবেনা। পরীক্ষার পর ছেড়ে দিব।" কবির বলে। "ঠিক আছে। কিন্তু পড়াশোনায় আরো মনোযোগ দাও, আর নিজের প্রতি যত্নবান হও।" শিরিন বলে। "ঠিক আছে, আন্টি। আঙ্কেল ফিরেছেন?" কবির জিজ্ঞাসা করে। "না, এখনো ফেরেনি।" শিরিন বলে। কবির তার সাইড ব্যাগ থেকে ওর আঙ্কেলের জন্য কেনা শার্ট ও প্যান্ট পিস বের করে শিরিনের হাতে দিয়ে বলে "এগুলো আঙ্কেলকে দিয়ে দিবেন।" তারপর জিজ্ঞাসা করে "স্নিগ্ধা কোথায়?" "সম্ভবত ওর ঘরে।" শিরিন বলে। কবির ব্যাগটা রেখে স্নিগ্ধার ঘরের দিকে যায়। দরজার সামনে দাড়িয়ে নক করে। এর আগে কখনোই স্নিগ্ধার রুমের ঢোকার আগে নক করেনি কবির। "কে?" স্নিগ্ধা বলে। "আমি, কবির।" কবির বলে। "ভেতরে আয়না।" স্নিগ্ধা বলে। কবির স্নিগ্ধার রুমে ঢোকে। স্নিগ্ধা ওর বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে ছিল, ওর হাতে রবীন্দ্রনাথের গল্পগুচ্ছ বই। "আয় বস। তুই এমন আলগা ভদ্রতা শুরু করলি কবে থেকে?" স্নিগ্ধা বলে। "আজকে থেকেই। আমি ঢাকায় চলে যাচ্ছি।" "এতো তাড়াতাড়ি। আর কয়েকদিন থেকে যেতে পারতি।" "কেন রে, তোর বিয়েতে থাকতে বলবি?" কবির বলে। "না, বলব না। তুই চলেই যা, কিন্তু আমার কথাগুলো মনে রাখবি। আর নিজের দিকে খেয়াল রাখিস।" স্নিগ্ধা বলে। "ঠিক আছে। তুই আমার জন্য টেনশন করবি না। নিজের আর স্বামীর প্রতি যত্ন নিবি। আর পড়াশোনা কিন্তু বন্ধ করবি না। আমি আসি।" বলে কবির উঠে বের হয়ে আসে দুচোখে টলমল করা অশ্রুকে মুছতে মুছতে। কবির ড্রয়িংরুমে এসে নিজের ব্যাগটা কাঁধে তুলে নেয়।
Parent