সত্তা - অধ্যায় ৩

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-29132-post-2220806.html#pid2220806

🕰️ Posted on July 26, 2020 by ✍️ Nefertiti (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 966 words / 4 min read

Parent
টিফিনের সময় অধিকাংশ ছাত্রছাত্র ক্যানটিনে গিয়ে ভীড় করে। কয়েকজন মেয়ে অবশ্য টিফিন আনে, তারা রুম থেকে বের হয়না। কবির ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে স্কুলের পেছনের দিকে পুকুরপাড়ের দিকে যায়। সেখানে বড় আমগাছটির শিকড়ের উপর বসে পুকুরের পানিতে ঢিল ছুঁড়তে থাকে সে। আগে পুকুরপাড়ে ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের ভীড় থাকতো। গতবছর পুকুরে পড়ে গিয়ে ক্লাস ফোরের একটা ছেলে মারা যাওয়ার পর থেকে পুকুরপাড়ে আসা একেবারে নিষিদ্ধ। তারপরও মাঝে মাঝে নাইন টেনের কপোত কপোতিদের দেখা যায় পুকুরপাড়ে বসে গল্প করতে। আজ অবশ্য কেউ নেই। হঠাত কারো পায়ের শব্দে কবির উঠে দাড়ায়। তার সামনে সেই নতুন মেয়েটি দাড়িয়ে। "তোমার নাম কবির?" কবির কিছু না বলে হ্যাঁ বোধক ভাবে মাথা নাড়ল। "তুমি আগে ঢাকায় থাকতে? মিরপুর ১ এ?" কবির অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে "ত.. তুমি কিভাবে জান?" "আরে গাধা, আমি স্নিগ্ধা। চিনতে পারছিস না? " হঠাত কবিরের চোখে ভেসে ওঠে নাদুস নুদুস একটি বাচ্চা মেয়ের ছবি। সেই মোটাকাটা কিউট পিচ্চির সাথে এই সুন্দরী কিশোরীকে মেলানোর কোন উপায় নেই। কবিরের জন্ম হয়েছিল ঢাকায়, সাভারে। কবিরের বাবা যখন মিরপুরে ফ্ল্যাটটা ভাড়া নেন তখন কবিরের বয়স চার বছর। একই ফ্লোরে পাশের ফ্ল্যাটে থাকতেন আমিনুজ্জামান সাহেব তার স্ত্রী শিরিন ও পিচ্চি স্নিগ্ধা। পাশাপাশি দুই ফ্ল্যাটে দীর্ঘদিন থাকার ফলে দুই পরিবারের মধ্যে দৃঢ় বন্ধুত্বের সৃষ্টি হয়েছিল। তবে কবির আর স্নিগ্ধার ভেতর ঠিক কখন বন্ধুত্ব আর শত্রুতা চলে তা বলা মুশকিল ছিল। এই দেখা যায় দুজন মিলে মিশে খেলা করছে, পরক্ষনেই দেখা যেত একে অপরের চুল ছিঁড়ছে নয়তে নাকে মুখে খামছা খামছি, ঘুষোঘুষি শুরু করে দিয়েছে। তবে দুইজন সারাদিন একই সাথে লেগে থাকতো। কখনো দেখা যেত দুইজনই একই সাথে খেয়ে দেয়ে খেলতে খেলতে স্নিগ্ধাদের বাড়িতে ঘুমিয়ে যেত, কোনদিন কবিরদের বাড়িতে। বেশিভাগ দিনই তারা একই বিছানায় শুতো। তাদেরকে ভর্তি করিয়েও দেয়া হয়েছিল একই স্কুলে, একই ক্লাসে। যখন কবিরের বাবা খুলনায় বদলি হয়ে যায় তখন কবির ও স্নিগ্ধার বয়স নয় বছর। যেদিন কবিররা বাড়ী ছেড়ে যায় সেদিন স্নিগ্ধা বালিশ মুখ লুকিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিল। কবিরও বাসের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে নিরবে অশ্রু ফেলতে ফেলতে গিয়েছে। তারপর ছয়টি বছর কেটে গেছে। পুর্নবয়স্ক মানুষদের জন্য ছয় বছর হয়তো কিছুই নয়। কিন্তু শিশু কিশোরদের জন্য তা বিশাল সময়। "কিরে এখনো আমায় চিনতে পারছিস না?" স্নিগ্ধার কথায় স্মৃতির গহ্বর থেকে বেরিয়ে আসে কবির। "চিনব না কেন! আসলে তোর সাথে এভাবে দেখা হবে তা আমি কখনো ভাবতেই পারিনি।" কবির একটু থেমে কৌতুকের সুরে বলে "তাছাড়া তুই যেরকম পাকা টমেটো থেকে শুকিয়ে যে পাট কাঠিতে পরিনত হয়েছিস তাতে চিনতে পারাটাই মুশকিল।" "কি বললি?" স্নিগ্ধা কৃত্রিম রাগ দেখিয়ে বলে। "আরে কিছু না। একটু মজা করলাম। তুই আগের চেয়ে অনেক বেশী সুন্দর হয়েছিস।" "তোকে দেখে শান্ত শিষ্ট মনে হয়, কিন্তু আগের মতোই পাজি আছিস।" "আমি পাজি ছিলাম?" "ছিলি না? আমার বার্বিডলের মাথাটা কে ছিঁড়েছিল?" "তুইও তো আমার অপটিমাস প্রাইম রোবটটা ভেঙেছিলি?" " আমি কি ইচ্ছা করে ভেঙেছি নাকি? হাত থেকে পড়ে গিয়েছিল।" কবির এর জবাবে কিছু বলতে যাচ্ছিল স্নিগ্ধা তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে "ও নিয়ে ঝগড়া পরেও করা যাবে। এখন চল ক্যানটিন থেকে কিছু খেয়ে নেই, খিদে পেয়েছে।" দুজন পাশাপাশি ক্যানটিনের দিকে হাঁটতে থাকে। ক্যানটিনে এখন ভীড় অনেকটাই কম। একটি খালি টেবিল পেয়ে তারা বসে যায় এবং দুটি প্যাটিস ও কোক অর্ডার দেয়। খাওয়া শেষেও তারা ক্যানটিনেই বসে গল্প করে যতক্ষন না ক্লাসের ঘন্টা পড়ে। "কেমন আছিস? আর এখানে কেমন লাগছে?" কবির জিজ্ঞাসা করে। "ভাল ছিলাম না, কিন্তু এখন ভালই আছি।" মিষ্টি করে হেসে জবাব দেয় স্নিগ্ধা। "তোর কি খবর বল?" স্নিগ্ধা জিজ্ঞেস করে। "এই তো, ভালই।" "আর আংকেল আন্টি?" প্রশ্নটা শুনে কবিরের মুখ একটু গম্ভীর হয়ে যায়, সে দীর্ঘশ্বাসকে লুকিয়ে বলে "ভালই আছেন হয়তো।" "মানে?" "কিছু না!" ঠিক সেই মুহুর্তে ঘন্টা দিয়ে দিল। দুজন তখন ক্লাসরুমের দিকে রওনা দিল। স্কুলের গেট থেকে বেরিয়ে কবির আর স্নিগ্ধা সরু পথটি ধরে পাশাপাশি হাঁটতে থাকে। এইমাত্র তাদের ছুটি হয়েছে। আসে পাশে আরো ছেলে মেয়েদের ভীড়। তাদের ক্লাসের কয়েকজন ছেলে তাদের দিকে কিছুটা কৌতুহল ও কিছুটা হিংসার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কবির সেসব দৃষ্টি উপেক্ষা করে স্নিগ্ধার সাথে কথা বলতে বলতে হাঁটতে থাকে। "আচ্ছা কবির, তোর আব্বু তো খুলনায় বদলি হয়েছিলেন, কিন্তু তুই এখানে কেন?" "খুলনায় আমরা এক বছর ছিলাম। তার পর আব্বুর প্রমোশন হয়ে এখানে বদলি হয়ে আসেন। তারপর থেকে এখানেই আছি আমরা।" "তুই এখানে কিভাবে?" কবির জিজ্ঞাসা করে। "সেইম কেস। আব্বু হঠাত বদলি হয়ে গেল। তবে ভালই হল, তোর সাথে দেখা হয়ে গেল এতোদিন পর।" "তুই এখানে কোথায় আছিস?" কবির জিজ্ঞাসা করে। "এলাকার নাম মনে নেই, আমবাগান বললেই রিক্সাওয়ালারা চিনে যায়। বাড়ির কাছেই একটা আমবাগান ও নার্সারী আছে।" "তার মানে তুই আরাফনগরে আছিস। আমি থাকি সবুজদীঘি। তোর আর আমার বাড়ি তাহলে কাছাকাছি, এক কিলোর মতো দুরত্ব।" "তাহলে তো ভালই হয়, একসাথেই স্কুলে যাব আসব।" কথা বলতে বলতে কখন বাইপাস মোড়ে পৌঁছেছে কবির বুঝতেই পারেনি। সেখানে তারা একটি রিক্সা নিয়ে নেয়। রিক্সাতে উঠে তাদের কথা আবার শুরু হয়। "তোর ফোন নাম্বারটা দে তো।" "আমার মোবাইল ফোন নাই।" কবির জবাব দেয়। "তোর আব্বু কিংবা আম্মুর নাম্বার বল।" "মনে নাই।" "তাহলে অন্তত আমার নাম্বারটা লিখে নে।" কবির ব্যাগ থেকে একটি খাতা বের করে নাম্বার লিখে নেয়। "বাসায় গিয়ে কল দিস কিন্তু। আর কালকে তো শুক্রবার, বাসায় আসিস।" কবির এক মুহুর্ত ভাবে তারপর বলে "ঠিক আছে, বিকেলে যাব। তোর এড্রেসটা বল?" "আমবাগানের দক্ষিন পাশে, বাড়ির নাম নিকুঞ্জ নীড়, দোতলায় থাকি আমরা।" ততক্ষনে কবিরের বাড়ি এসে গেছে। কবির রিক্সা থামাতে বলে ও বাঁ দিকের সরু রাস্তাটা দেখিয়ে বলে "এই রাস্তাটা দিয়ে আরেকটু সামনেই একটি পুকুর দেখতে পাবি তার সামনেই অফ হোয়াইট একতলা বাড়িটা আমাদের।" কবির রিক্সা থেকে নেমে হেঁটে যেতে থাকে। তখন শুনতে পায় "আসিস কিন্তু, আমি অপেক্ষা করবো। না আসলে তোর খবর আছে।" কবির পিছে ফিরে তাকালো। তখন রিক্সা ছেড়ে দিয়েছে। পরের দিনটি কবিরের বেশ উত্তেজনার মাঝে কাটল। উত্তেজনা অনুভুতিটির সাথে কবিরের অনেকদিন ধরে পরিচয় নেই। তাই হঠাৎ করে উত্তেজনার এক চিমটি কারন সৃষ্টি হওয়াতেই তা যেন বিশাল আকার ধারন করে নিল। কবির অবাক হয়ে আবিষ্কার করল আনমনেই তার দৃষ্টি বারবার ঘড়ির দিকে যাচ্ছে। সেই রাতে কোন অপ্রাকৃতিক ঘটনা ঘটেনি। রাতের অর্ধেকটা কবির কাটিয়ে দেয় টিভি দেখে, বাকিটা ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিল। ভোর বেলা উঠে জামা কাপড় ধুয়ে দেয়। সুলতানা খালাকে বললেই ধুয়ে দিত, কিন্তু নিজের জামাকাপড় বিশেষ করে গেঞ্জি আন্ডারওয়ার অন্য কারো কাছে থেকে ধুয়ে নেয়াটা লজ্জার বিষয় বলে মনে হয় কবিরের কাছে।
Parent