সত্তা - অধ্যায় ৫

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-29132-post-2220810.html#pid2220810

🕰️ Posted on July 26, 2020 by ✍️ Nefertiti (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 1073 words / 5 min read

Parent
তারা যখন স্কুলে পৌঁছায় তখন স্কুলের সামনে ছাত্রছাত্রীদের জটলা দেখতে পায়। কাছে এসে কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পায় যে স্কুলের প্রাক্তন প্রিন্সিপাল গত রাতে স্টোক করে মারা গেছেন। তার শোকে আজকে স্কুল বন্ধ, টিচাররা ও কিছু ছাত্র জানাজায় অংশগ্রহন করতে যাচ্ছে। "স্কুল তো আজ ছুটি। এখন বাসায় না গিয়ে চল না কোথাও থেকে ঘুরে আসি" স্নিগ্ধা বলে। "স্কুলড্রেস পরে শহরের ভেতরে ঘুরতে বেরনো বুদ্ধিমানের কাজ হবেনা। অন্য কোনদিন ঘুরতে যাব।" "তা অবশ্য ভুল বলিসনি।" স্নিগ্ধা ও কবির স্কুলের রাস্তাটি দিয়ে পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে কথা বলছিল। মোড়ে পৌঁছেই কবির একটি রিকশা ডাক দেয়, তারপর স্নিগ্ধাকে বলে "তুই বাড়ি যা, আমি একটু পর যাবে।" "কেন? তুই কি জানাজায় যাবি?" "নাহ।" "তাহলে?" "আমার একটা কাজ আছে, তোকে পরে বলব।" বলে কবির স্কুলের দিকে হাঁটতে থাকে। স্নিগ্ধাও কবিরের পিছু পিছু হাঁটতে থাকে। স্নিগ্ধাকে পিছে পিছে আসতে দেখে রেগে বলে "আমার পিছে আসছিস কেন? তোকে না বললাম বাড়ি যেতে।" "তুই আমার সাথে এভাবে কথা বলছিস কেন" স্নিগ্ধা আহত স্বরে বলে। "আমি স্যরি" কবির নরম স্বরে বলে। "আমার সাথে যাবি?" কবির জিজ্ঞাসা করে। "কোথায়?" "সুজাবাদ। খুব সুন্দর যায়গা, কিন্তু অনেক দুর। পুরো রাস্তা হেঁটে যেতে হবে। পারবি?" "তুই পারলে আমিও পারব" মিষ্টি করে হেসে বলে স্নিগ্ধা। দুজন পাশাপাশি হাঁটতে থাকে। স্কুলের পেছনের পুকুরের ধার দিয়ে চলে যাওয়া রাস্তা ধরে গ্রামের ভেতর দিয়ে হাঁটতে থাকে। গ্রামটি পার হয়েই তারা একটি বিস্তৃত প্রান্তরে পৌঁছে তারা। প্রান্তর জুড়ে শুধু ধান আর আখ খেত। সেই প্রান্তরের মাঝ দিয়ে একটি মেঠো পথ চলে গিয়েছে। তারা সেই পথে হাঁটতে থাকে, কিছুদুর যাওয়ার পর পথটি ছেড়ে তারা জমির আইল দিয়ে হাঁটতে থাকে। প্রায় তিন কিলোমিটার হেঁটে কবির ও স্নিগ্ধা একটি খালের ধারে এসে পৌঁছায়। খালের ধারে সবুজ ঘাসে পা ছড়িয়ে দিয়ে বসে স্নিগ্ধা বলে "আমি আর হাঁটতে পারব না।" "এসেই তো গেছি, শুধু এই খালটা পার হতে হবে।" "কিভাবে পার হবি? " "এই সাঁকো দিয়ে।" স্নিগ্ধা দেখে কাছেই একটি বাঁশের সাঁকো। মাত্র দুটি বাঁশের সাঁকো, দেখে ভীষণ নড়বড়ে মনে হয়। "আমি আগে পার হচ্ছি। তারপর তুই ধিরে ধিরে সাবধানে পার হবি।" বলে কবির সাবধানে পার হয়ে যায়। স্নিগ্ধাও সাবধানে ধিরে ধিরে পার হচ্ছিল। স্নিগ্ধা যখন সাঁকোর ঠিক মাঝখানে তখন হঠাত দমকা হাওয়ায় সাঁকোটা ভয়ংকরভাবে দুলে ওঠে, স্নিগ্ধা তাল সামলাতে না পেরে খালের পানিতে পড়ে যায়। স্নিগ্ধাকে পড়ে যেতে দেখেই কবির পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। স্নিগ্ধা সাঁতার জানেনা, হাত পা ছুঁড়ে ভেসে থাকার চেষ্টা করছিল। কবির সাঁতরে স্নিগ্ধার কাছে যেতেই কবিরকে জাপটে ধরে ভেসে ওঠার চেষ্টা করে। এতে দুজনই তলিয়ে যেতে থাকে। কবির খালের তলায় পৌঁছে দুই পা দিয়ে মাটিতে জোরে আঘাত করে ওপরে লাফিয়ে ওঠে, তখনো স্নিগ্ধা কবিরকে পেছন দিক থেকে জাপটে ছিল। সেই অবস্থাতেই কবির নিজের সর্বশক্তি দিয়ে সাঁতরে খালের তীরে চলে এল। খাল থেকে উঠে দুজনই খক খক করে কাশতে কাশতে সবুজ ঘাসে শুয়ে পড়ল। "এজন্যই তোকে আনতে চাইনি!" "মনে হচ্ছিল মরে যাচ্ছি, জীবনের সব স্মৃতি একে একে চোখের সামনে ভেসে উঠছিল" স্নিগ্ধা আপন মনেই বলে। একটুর জন্য বেঁচে গেছে তারা, কি হতে পারতো তা চিন্তা করে কবিরের রক্ত হীম হয়ে আসে। কবির চিন্তাটা মাথা থেকে সরিয়ে নেয়। ওর পাশে শুয়ে থাকা স্নিগ্ধার দিকে তাকায় সে। ভেজা নীল রংয়ের ফ্রকটা ওর গায়ে একেবারে লেপ্টে আছে, যার ফলে ওর দেহের প্রতিটি বাঁক স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ওর বুকের মাঝারী আকারের স্তনদুটির আকৃতিও তাতে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, ওর ঘন নিশ্বাসের সাথে সাথে সেগুলো ওঠানামা করছে। কিচুক্ষন আগেও ওগুলো কবিরের পিঠে লেপ্টে ছিল, কি অপুর্ব নরম সেই স্পর্শ। সেই স্পর্শের কথা মনে করতেই কবিরের দেহে আশ্চর্য রকমের এক শিহরণ বয়ে গেল। এই শিহরণের সাথে কবিরের পরিচয় ছিলনা। পরক্ষনেই কবির নিজেকে সামলে নেয়, স্নিগ্ধা ওর ছোটবেলার বন্ধু, ওর দিকে এভাবে তাকানো উচিত না। "তোকে কি বলে যে ধন্যবাদ দিব! তুই না থাকলে আজ মরেই যেতাম।" "ধন্যবাদ দিতে হবেনা। আমি না থাকলে তো তুই এখানে আসতিও না।" "তুই তো খুব ভালই সাঁতার পারিস। কিভাবে শিখলি?" স্নিগ্ধা উঠে বসে জিজ্ঞাসা করে। "আব্বু শিখিয়েছেন। বাড়ির সামনেই পুকুর, আগে ছুটির দিনে সাঁতার শেখাতেন। তখন থেকে যখন তখন ঝাঁপাঝাপি করতাম, তার জন্য মার কাছে কম বকা খাইনি।" "আমাকে শেখাবি?" "আমি পারবনা।" কবির মাথা ঝাঁকিয়ে বলে। "তুই কি ছোট খুকি নাকি যে ধরে ধরে সাঁতার শেখাব। আর তাছাড়া শিখবি কোথায়? বাসার সামনের পুকুরটা এখন খুব নোংরা, চারটা ড্রেনের লাইন মিশেছে ওটাতে। ওটাতে এখন আর গোসল করা যায়না।" "তাহলে এই খালেই?" "এখানে কি প্রতিদিন আসা যায়?" কবির উঠে বসতে বসতে বলে। "প্রতিদিন না হলেও সপ্তাহে একদিন আসব।" "আচ্ছা সে পরে দেখা যাবে।" কবির উঠে দাড়িয়ে বলে "চল ঐ গাছের ছায়ায় গিয়ে বসি।" কাছেই একটি বড় আম গাছ। তার ছায়ায় গিয়ে দুজন বসে। "যায়গাটা বেশ সুন্দর, কিন্তু এখানে কি এমনি বেড়াতেই এসেছিস?" "আসলে এই যায়গাটা আমাদের", বলে কবির হাতের ইশারায় সীমানা দেখিয়ে দেয়।। কয়েক ইঞ্চি ইঁটের প্রাচীর দিয়ে তিন দিকে সীমানা পৃথক করা, তার ভেতর ছোট ছোট মেহগনি চারা। "ঐ মেহগনি গাছগুলো আমরা লাগিয়েছি। আর এই আম গাছটা আগে থেকেই আছে। আমরা এখানে মাঝে মাঝেই বেড়াতে আসতাম।" যায়গাটার ঠিক মাঝখানে বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘেরা খানিকটা যায়গা। স্নিগ্ধা সেদিকে দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করে "ওটা কি?" "চল দেখাচ্ছি।" কবির একটি দির্ঘশ্বাস ছেড়ে উঠে দাড়ায় ও সেদিকে হাঁটতে থাকে। স্নিগ্ধাও কবিরের সাথে এগিয়ে যায়। কিছুটা কাছে এসে স্নিগ্ধা চমকে ওঠে, সেখানে তিনটি কবর। "বাঁ দিকে আব্বু, ডান দিকে মা, আর মাঝখানে আমার ছোট বোন তুলি। তুই দেখিসনি ওকে, ওর বয়স দুই বছর। ভীষন সুইট, কিন্তু খুবই দুষ্ট। কয়েক মিনিটের ভেতর পুরো বাড়ি লন্ডভন্ড করে ফেলত।" হঠাত কবির হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে, ওর কন্ঠ ভারী হয়ে আসে। "এক বছর আগে একটা কার এক্সিডেন্টে আমার পুরো পরিবারকে হারালাম, শুধু আমি বেঁচে গেছি। তুলি চলে গেল সেই রাতেই, বাবা খুব ভোরে, আর মা ঠিক এই সময় এই দিনে । আমি যেতে পারিনি, একা থেকে গেলাম।" স্নিগ্ধা কবিরের মাথাটা ওর বুকে জড়িয়ে নিয়ে হাত দিয়ে অশ্রু মুছে দিয়ে বলে "কে বলেছে তুই একা? আমি আছি না তোর সাথে?" সজল বেশ সকাল সকাল বেরিয়ে পড়ল তার বন্ধুর বাসা থেকে। গতকাল রাতে সে ঢাকা থেকে বগুড়ায় এসেছে । বাস থেকে নেমেছে রাত তিনটার দিকে, রাতে থেকেছে তার এক বন্ধুর বাসায়। সজল একটি রিক্সা নিয়ে চলে আসে স্নিগ্ধার স্কুলের সামনে। তার চোখদুটো এখনো জ্বালা করছে, রাতে অনিয়মিত ঘুমের কারনে। তবে সে আজ মনে মনে খুবই উচ্ছসিত। রিক্সা থেকে নেমে চারিদিক একবার ঘুরে দেখে। বাইপাস রোড থেকে একটি সরু হাঁটার রাস্তা স্কুল পর্যন্ত গেছে, বাইপাস রোডের অন্যপাসে বেশ কিছু দোকান। সেখানে একটি ক্যাফেতে সজল ঢুকে পড়ে, ফাঁকা টেবিল পেয়ে বসে পড়ে। হাতের ঘড়িটা দেখে সে, পৌনে নয়টা বাজে। সজল একটা স্যান্ডুইচ আর এক কাপ চা অর্ডার দেয়। তারপর মোবাইল বের করে স্নিগ্ধাকে কল দেয়। কয়েকবার রিং হওয়ার পর স্নিগ্ধা রিসিভ করে। "হ্যালো, স্নিগ্ধা কেমন আছ?" "এইতো ভালই আছি। তা তুমি এতো সকাল সকাল ফোন দিলে যে?" "এমনিই ফোন দিলাম, কেন সকাল বেলা ফোন দেয়া নিষেধ নাকি?" "আসলে আমি স্কুলের জন্য রেডি হচ্ছি, তোমার সাথে পরে কথা বলি জান?" অনুনয়ের সুরে বলে স্নিগ্ধা। "ঠিক আছে জানু" বলেই সজল কল কেটে দেয়।
Parent