সত্তা - অধ্যায় ৬

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-29132-post-2220812.html#pid2220812

🕰️ Posted on July 26, 2020 by ✍️ Nefertiti (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 1339 words / 6 min read

Parent
সজল মনে মনে বেশ উচ্ছসিত। স্নিগ্ধার সাথে অনেকদিন পর দেখা করবে সে। কিন্তু উচ্ছাসের মুল কারণ সেটা নয়, সে বুয়েটে চান্স পেয়েছে। গতকাল রাতেই রেজাল্ট পেয়েছে সে, তখনই রওনা দিয়েছে সে। বগুড়া থেকে তাকে আবার কুষ্টিয়ায় যেতে হবে। তার বাড়ি কুষ্টিয়ায়। সজল সকালের নাস্তা সেড়ে আবার হাত ঘড়ির দিক তাকায়, নয়টা পনের বাজে। "এতোক্ষনে নিশ্চয় স্কুলের জন্য রওনা দিয়েছে স্নিগ্ধা" মনে মনে ভাবে সজল। তারপর মোবাইল বের করে আবারও কল দেয় স্নিগ্ধাকে। "হ্যালো, জান কোথায় তুমি?" "এখন রিক্সায়, স্কুলে যাচ্ছি। কি ব্যাপার বলতো, বার বার কল দিচ্ছ যে?" "বলছি বলছি, তোমাদের স্কুলের সামনে যে একটা ক্যাফে আছে সেখানে চলে আস।" "কি! তুমি এসেছ?" "তোমাকে খুব দেখতে খুব ইচ্ছা করছিল জান, আর একদিন না দেখলে মনে হয় মরেই যাব।" "যাও তোমাকে আর গুল দিতে হবে না। আমি আসছি।" বলে কেটে দেয় স্নিগ্ধা। প্রায় পাঁচ মিনিট পর স্নিগ্ধা ক্যাফেটিতে প্রবেশ করে, তার সাথে স্কুলড্রেস পরা একটি ছেলে। স্নিগ্ধা ছেলেটির হাত ধরে আছে দেখে সজলের ভ্রু মৃদু কুঞ্চিত হয়। সজলকে দেখে স্নিগ্ধা এগিয়ে আসে, স্নিগ্ধার পিছে পিছে সেই ছেলেটিও। সজল মুখে হাসি ফুটিয়ে দুজনকে বসতে বলে। স্নিগ্ধা পরিচয় করিয়ে দেয় "ও হচ্ছে সজল। আর ও হচ্ছে কবির, আমার বাল্যবন্ধু। তোমাকে না বলেছিলাম ওর সম্পর্কে।" সজলের মনে পড়ে যে স্নিগ্ধা বলেছিল ওর এক ছোটবেলার বন্ধুকে হঠাত খুঁজে পেয়েছে। সজল ভেবেছিল মেয়ে বন্ধু হবে। কবির এরকম পরিস্থিতিতে পড়তে চায়নি, স্নিগ্ধা ওকে হাত ধরে প্রায় টেনে এনেছে ওর বয়ফ্রেন্ডের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে বলে। "তোমরা কি খাবে? বার্গার অর্ডার দেই? কিংবা স্যান্ডুইচ?" সজল জিজ্ঞাসা করে। "আমি বাসা থেকে খেয়েই এসেছি।" বলে কবিরকে জিজ্ঞাসা করে "তুই কিছু খাবি?" "নাহ" কবির উত্তর দেয়। "তাহলে চা, কফি কিংবা কোক?" "কিছুই খাব না। এখন বল কখন এসেছ, আর কিভাবে?" স্নিগ্ধা জিজ্ঞাসা করে। "গতকাল রাতে এসেছি। রাতে এক বন্ধুর বাসায় ছিলাম। তোমাকে একটি খবর দিতে এসেছি।" "কি খবর?" স্নিগ্ধা জিজ্ঞাসা করে। "আমি বুয়েটে চান্স পেয়েছি" সজল বলে। "কি বললে! সত্যি!" স্নিগ্ধা উচ্ছসিত কন্ঠে বলে। একটু থেমে জিজ্ঞাসা করে "কোন সাবজেক্ট পেয়েছ?" "সিভিল" একটু থেমে সজল যোগ করে "কাল সন্ধ্যায় রেজাল্ট পাবলিশ হয়েছে।" "আমাগে আগে জানাও নি কেন?" স্নিগ্ধা জিজ্ঞাস করে। "আগে বললে কি এখন তোমার এমন মধুর হাসি দেখতে পেতাম?" সজল বলে। "আর তাছাড়া আমার পাওনা নিতে এসেছি। মনে নেই তুমি কথা দিয়েছিলে আমি বুয়েটে চান্স পেলে একটা জিনিস উপহার দিবে?" সজলের কথা শুনে স্নিগ্ধার ফর্সা মুখটি লজ্জায় লাল হয়ে যায়। সে কিছু বলতে পারে না। স্নিগ্ধার লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া মুখটাকে দেখতে দেখতে মৃদু হেসে বলে- "আজ থাক। তোমাদের স্কুলের সময় হয়ে গেছে।" কবির তখন উঠে দাঁড়িয়ে স্নিগ্ধাকে বলে "চল, দেরি হয়ে যাচ্ছে।" এতোক্ষন সজলের ন্যাকা ন্যাকা কথায় কবিরের গা জ্বালা করছিল। "কেন যে মেয়েরা এসব ন্যাকা ন্যাকা কথা এত পছন্দ করে!" কবির মনে মনে বলে। যেতে যেতে সে ভাবতে থাকে কি উপহার দিতে চেয়েছিল স্নিগ্ধা, তার কথা শুনে স্নিগ্ধা এত লজ্জা পেলই বা কেন! কবিরের পিছে পিছে স্নিগ্ধা ক্যাফে থেকে বেরিয়ে আসে। সজল পেছন থেকে স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে থাকে। তার দৃষ্টি ওর নিতম্বের দিকে, বেশি বড় নয় তবে ওর ছিপছিপে দেহের সাথে সামঞ্জস্যশীল নিতম্বজোড়া। সজল মনে মনে ভাবে স্নিগ্ধা যে কতো সুন্দর তা ও নিজেই জানেনা। জানলে নিশ্চয়ই অহংকারে মাটিতে পা পড়তো না, আর সজলের মতো ছেলেদের পাত্তা দিতনা। স্নিগ্ধার মাঝে রুপের অহংকার বিন্দুমাত্র নেই। এরকম একটি মেয়েকেই সজল খুঁজেছে বহুদিন ধরে, তাকো সে হারাতে চায়না। সাথের ছেলেটাকে যদিও হাবাগোবা ও নিরিহ মনে হল, কিন্তু স্নিগ্ধা ছেলেটির সাথে নিয়মিত মিশছে। সজল মনে মনে ভাবে স্নিগ্ধার ব্যাপারে তাকে আরো সাবধান থাকতে হবে। সজলের বেশ কিছু বন্ধু এই শহরে থাকে, তাদেরকে যদি স্নিগ্ধার দিকে নজর রাখতে বলে তবে কেমন হয়। পরক্ষনেই সজল চিন্তাটা মাথা থেকে সরিয়ে ফেলে। তার বন্ধুরা সবগুলোই একেকটা হারামী আর মাগিবাজ, তাদেরকে বলার মানে শিয়ালের কাছে মুরগি বাগী রাখা। তার চেয়ে বরং সে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিবে এবং মাসে একদিন স্নিগ্ধার সাথে দেখা করবে বলে ঠিক করে। স্নিগ্ধার সাথে দেখা করে ফেরার পরপরই সজল তার সাইড ব্যাগটি কাঁধে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল। তার বন্ধু রাসেলের মা দুপুরে খেয়ে যেতে বলল কিন্তু সজল দেরি করল না। সজল চৌরাস্তা বাস টার্মিনালে এসে একটি পাবনার বাসে উঠে পড়ে। এই রুটে সরাসরি কুষ্টিয়া যাওয়ার বাস পাওয়া যায়না। সজল উঠে জানালার পাশে একটি সিট নেয়। তার দশ মিনিট পর বাস ছেড়ে দেয়। সজলের মাঝে এখন আর উচ্ছসিত ভাবটা নেই। সে জানে এত অল্পতে উচ্ছসিত হলে চলেনা, তাকে অনেক উপরে উঠতে হবে। এ তো কেবল সে তার সাফল্যের প্রথম সিঁড়িটায় পা দিয়েছে মাত্র। তবে এ পর্যন্ত আসাও সজলের জন্য সহজ ছিল না। সজলের বাবা ছিলেন একজন গরীব কৃষক। তার তিন বিঘা জমিতে সবজির চাষ করে কোন ভাবে চলতেন। সজলরা তিন ভাইবোন। বড় দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে অনেক আগে। সজল ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছাত্র ছিল। ক্লাস ফাইভ আর এইটে বৃত্তি পেয়েছিল। বাবা ফয়জুল হক নিজে নিরক্ষর হলেও ছেলেকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন তার। তাকে অনেকদুর লেখাপড়া করাতে চাইতেন। তার স্বপ্ন ছিল ছেলে বড় ইঞ্জিনিয়ার হবে। সজলের জীবনে প্রথম ধাক্কা এল যখন সে ক্লাস নাইনে পড়ে। তার বাবা হঠাত করে স্টোক করে মারা গেলেন। তার কিছুদিন পর সজলের আপন চাচা জহরুল তাদের সব জমি দখল করে নেয়। একটি দলিল বের করে দাবি করে যে মৃত্যুর আগে নাকি তার কাছে সব জমি বিক্রি করে গেছে। উড়ো কথা শোনা যায় যে জহরুল নাকি তার মৃত ভাইয়ের হাত ধরে সাদা স্ট্যাম্পে টিপ সই নিয়েছিল, তা দিয়ে পরে দলিল বানায় সে। কেউ কেউ নাকি টিপ সই নিতে নিজে চোখে দেখেছে। গ্রামে সালিশ ডেকে কোন কাজ হয়নি। কোর্টে কেস পড়ে আছে চার বছর হল। স্বামীর মৃত্যুর শোকের পর আপনজনের বেইমানি ও জমিজমা হারানো, এতোগুলো ধাক্কায় সজলের মা জাহিদা বেগম একেবারে ভেঙে পড়েন। তবে সজল এতো সহজে হার মেনে নেয়নি। আগে থেকেই সে কয়েকটা টিউশনি করাতো, বাবার মৃত্যুর পর টিউশনির সংখ্যা আরো বাড়িয়ে দিল। দিন রাত সে টিউশনি করে সেই টাকা দিয়ে সংসার ও পড়াশোনা চালাত। মাঝে মাঝে তো তাকে অন্যের ক্ষেতে কামলা খাটতেও হয়েছে। এস এস সি পরীক্ষার এক সপ্তাহ আগে সে অন্যের জমিতে আলু তুলেছে। তিনদিন সকাল সন্ধা পরিশ্রম করে সে নয়শ টাকা রোজগার করেছিল। চারশ টাকা দিয়ে সে একটি সেকেন্ড হ্যান্ড সাইনটিফিক ক্যালকুলেটর কিনেছিল। বাকি টাকা রেখে দিয়েছিল পরীক্ষার হাত খরচ হিসাবে। এসএসসি পরীক্ষাতে সজল এ প্লাস পেয়েছিল। তারপর সোহরাব ভাইয়ের পরামর্শে ঢাকায় চলে আসে। সোহরাব সেই গ্রামেরই ছেলে, ঢাকা কমার্স কলেজে মার্কেটিংয়ে অনার্স করছে। সে তিতুমীর কলেজে ভর্তি হয়ে যায়। সোহরাব ভাই তাকে তিনটা টিউশনি ঠিক করে দিয়েছিল। গ্রামে পাঁচ ছয়টা টিউশনি করিয়েও যেখানে সে মাসে পনেরশ ষোলশ টাকার বেশি ইনকাম করতে পারত না সেখানে ঢাকায় একেকটি টিউশনি করিয়েই দুই তিন হাজার টাকা ইনকাম করে সে। নিজের খরচ চালিয়ে বাড়িতে টাকা পাঠাতে কোন সমস্যা হয়নি তার। সজল যখন পাবনায় পৌঁছায় তখন একটা বাজে। বাস স্ট্যান্ডের কাছে একটা রেস্টুরেন্টে খেয়ে নিয়ে কুষ্টিয়ার একটি লোকাল বাসে উঠে পড়ে। কুস্টিয়া পৌঁছাতে সজলের আরো দুই ঘন্টা লাগে। অবশেষে সে যখন তার গ্রামে পৌঁছে তখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল পড়েছে। সে গ্রামের মেঠোপথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে গ্রামের মাঝামাঝিতে একটি রংচংয়ে পাকা বাড়ি দেখতে পায়, যেখানে আগে তার জহুরুল চাচার বেড়ার বাড়ি ছিল। "বাড়ি পাকা করেছে শুওরটা" মনে মনে গালি দেয় সজল। আরেকটু সামনে এগোতেই রাবেয়ার সাথে দেখা হয়ে যায়। রাবেয়া জহুরুলের মেঝ মেয়ে। সে বাড়ির পাশে মাচার উপর বসে আখ চিবুচ্ছিল। সজলকে দেখে হাসিমুখে বলে "আরে সজল ভাই না! কতোদিন পর দেখতাছি! ঢাকা থেকে আইলেন?" "হ। শুনলাম তোমার নাকি বিয়া হইছে, বাচ্চাও হইছে। তা বাপের বাড়ি কত দিনের জন্যে আইছ?" ভাষায় আঞ্চলিক টান এনে বলে সজল। "সারা জীবনের জইন্যে", দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে রাবেয়া। "মানে?" "ডিভোর্স হইছে। বেটাগো বেশি লোভ, বিয়ার সময় আড়াই লাখ টাকার মোটর সাইকেল নিছিল। এখন আবার দুই বিঘা জমি লিখ্যা দিতে কয়।" "ও। কিন্তু তোমার বাচ্চা?" "আমার কাছেই আছে। ছয় মাস হইল বয়স। বেশিভাগ সময় অর নানির কাছেই থাকে।" রাবেয়া একটু থেমে জিজ্ঞাসা করে "আমার কথা বাদ দাও, তোমার কি খবর বলো? শুনলাম তুমি নাকি ইন্টারেও গোল্ডন এ প্লাস পাইছ?" "হুম।" "তো এখন কি করো?" "বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা দিলাম। চান্স পাইছি।" "সত্যি! মিষ্টি কই? মিষ্টি খাওয়াইবা না?" উচ্ছসিত কন্ঠে বলে রাবেয়া। "মিষ্টি তো খাওয়ামুই, রাইতে বাড়ির পেছনে বাঁশঝাড়ের কাছে আইস, শুধু মিষ্টি না আরো অনেক কিছু খাওয়ামু" বলে চোখ টিপে দেয় সজল। "তুমি আস্ত একটা ফাজিল" বলে আধাখাওয়া আখের দন্ড দিয়ে সজলকে বাড়ি দেয়ার ভঙ্গি করে। সজল ওর হাতটি ধরে নিয়ে বলে "আমাকে ফাজিল কে বানিয়েছে?" তারপর হ্যাঁচকা টান দিয়ে কাছে টেনে এনে বাঁ হাত দিয়ে রাবেয়ার ডান স্তনটি মুচড়ে ধরে কানের কাছে ঠোঁট এনে ফিস ফিস করে বলে "রাত এগারোটায় বাঁশ ঝাড়ের কাছে আইস, অপেক্ষা করমু।" তারপর একবার চারিদিক তাকিয়ে নিশ্চিত হয় যে কেউ দেখেনি। তারপর হন হন করে হেঁটে যায় সজল। রাবেয়ার হতভম্ব ভাব কাটতে আরো সময় লাগে।
Parent