অপবিত্র ভালোবাসা - অধ্যায় ৯

যে হল টি ভাড়া করা হয়েছে অভি আর তুশির বিয়ে + রিসেপশনের জন্য সেটা হিউজ । দুই পরিবার মিলে একদিনেই বিয়ের অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে । অভির পরিবার চায়নি জায়ান আর তুশির মায়ের উপর বাড়তি চাপ পরুক । তবে ওদের মা নিজের সামর্থ্য মত কন্ট্রিবিউট করেছে । প্রায় ১২০০ লোক দাওয়াত করা হয়েছে , এর মাঝে জ্যায়ানদের পরবার থেকে দুশো ও হবে না । সুধু মাত্র নিকট আত্মীয়দের দাওয়াত করেছে ওরা । সম্পূর্ণ হল ঘর টি জমকালো ভাবে সাজানো হয়েছে । তবে বিশেষ করে হল ঘরের এক পাশে বিশাল করে স্টেজ করা হয়েছে ,যেখানে এখন অভি বর সেজে বসে আছে । অন্য পাশে পর্দা ঘেরা ছোট একটি বসার যায়গা যেখানে তুশি বউ সেজে এসে বসবে । তুশি এখনো এসে পৌঁছায়নি । তুশি আর অভির এর আগে অসংখ্য বার দেখা হয়েছে , কথা হয়েছে , ছোঁয়া ছুয়ি হয়েছে । কিন্তু বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার জন্য বর বউ কে বিয়ে হওয়ার আগ পর্যন্ত আলাদা বসার ব্যাবস্থা করা হয়েছে । তুশি কে বউ সাজতে যাওয়ার জন্য অভি একটি গাড়ি দিয়ে দিয়েছিলো । সেটায় করে তুশি নিজের বান্ধবিদের নিয়ে সাজতে গেছে। এখন সন্ধ্যা সাতটা বাজে , কিছুক্ষনের মাঝেই হয়তো ওরা চলে আসবে । ঠিক এমন সময় জায়ানের মোবাইলে কল আসে, জায়ান মোবাইল পকেট থেকে বের করে দেখে তুশির নাম্বার । অবাক হয় জায়ান এই সময় তুশি কেনো ওকে কল করবে। রিসিভ করতেই অপাশ থেকে তুশির কাঁদো কাঁদো কণ্ঠ ভেশে আসে । তুশি যা বলে তার সারমর্ম হচ্ছে , যে লোকটা ওর সাজের জন্য ফুল দিয়ে গিয়েছে সে ফুল সব গুলো বাসি , পাপড়ি নষ্ট হয়ে গেছে , এখন ফুল দরকার । জায়ানের হেল্প লাগবে এই ব্যাপারে , কারন অভি কে বললে ও খুব রাগ করবে । জায়ান ভাবে এই সময় কি ভালো কোন ফুলের দোকান খোলা থাকবে । কিন্তু তুশি বার বার রিকোয়েস্ট করছে ওকে । শেষে জায়ান বাইক নিয়ে বেরোয় , খুব খুজে খুজে কিছু ফুল আনতে সমর্থ হয় । সেটা নিয়ে তুশি যে পার্লারে আছে সেখানে পৌঁছে দেয়। তুশি ওয়েটিং রুমে বসে ছিলো , ওর সাজ শেষ সুধু খোঁপায় ফুল লাগানো বাকি । জায়ান ফুল গুলো নিয়ে ঢুকতেই থমকে দাড়ায় । সামনে তুশি কে বউ সাজে দেখে ওর পা দুটো যেন কেউ সিমেন্ট দিয়ে মেঝের সাথে গেঁথে দিয়েছে । “ ওহ মাই সেইভিওর” তুশি উঠে আসে , হাগ করে জায়ান কে । কিন্তু জায়ান নড়াচড়ার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে । সুধু মাত্র তুশির দিকে অপলক তাকিয়ে আছে । হাগ শেষে তুশি ঘুরে ঘুরে জায়ান কে ওর সাজ দেখায় , একটা লাল রঙের লেহাঙ্গা পড়েছে তুশি , অসম্ভব সুন্দর লাগছে ওকে। “ কেমন লাগছে আমাকে” তুশি হেসে জায়ান কে জিজ্ঞাস করে , “ অন্য সময় হলে সত্যি বলতাম না , কিন্তু আজকের ব্যাপার আলাদা , সত্যি ইউ লুকিং ফ্যাবুলাস” জায়ান আরো কিছু বলতে চাইছিলো , কিন্তু বলতে পারলো না । সেই না বলা কথা গুলো জমে থাকলো ওর বুকে , আর হঠাত বুকটা ভারি ভারি লাগতে লাগলো । “ আও , থাঙ্কস ব্রো “ বলে তুশি জায়ানের গালে একটা চুমু খায় তারপর যে ওকে সাজাবে তার সাথে ভেতরে চলে যায় । আর জায়ান বেড়িয়ে যায় , হ্যালমেট পরে বাইক স্টার্ট দেয় । দ্রুত গতিতে বাইক হাঁকায় জায়ান । হ্যালমেটের ভেতর বার বার ওর চোখ ঝাপসা হয়ে আসে , কিন্তু জায়ান সেটা পাত্তা দেয় না । ওর মনে হয় বাইকের গতির সাথে তাল মিলিয়ে যদি চিৎকার করতে পারতো তাহলে কিছুটা ভালো লাগতো । মনে মনে আরো ভাবে , ও কেনো এমন হলো , আর দশটা স্বাভাবিক মানুষের মত কেনো হলো না । ক্লোজ বয়সের কত ভাই বোন দুনিয়ায় আছে , এমন কি জমজ ভাই বোন ও আছে । তাদের তো এই সমস্যা হয় না , ওর কেনো হলো । কেনো নিজের আপন বোন কে অন্য কারো জন্য বউ সাজতে দেখে ওর পৃথিবী ওলট পালট হয়ে যাচ্ছে । তুশির সাথে তো ওর রক্তের সম্পর্ক , এই রক্ত ডিঙিয়ে ও যা চায় সেটা কি কোন দিন ও হওয়া সম্ভব ছিলো । <><><>