অরুনিমা এবং তানিয়া ম্যাডামের মহারাণীর জীবনযাপন (ফেমডম -মিস্ট্রেস গল্প) 18+ - অধ্যায় ২১

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-16936-post-1234410.html#pid1234410

🕰️ Posted on December 14, 2019 by ✍️ pagi chele 69 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 2301 words / 10 min read

Parent
পর্ব 21 কলকাতার গলফগ্রীন, ধনী এবং বড়লোকি এলাকাটিতে কিছুদিন হলো একটা ভিখারি এসে জুটেছে. ছেঁড়াফাটা শতছিন্ন জামাপ্যান্ট, মাথায় একটি পুরনো টুপি এবং বড় কালো রংয়ের ছেঁড়া ওভারকোট পরা ভিখারিটা রাস্তার ফুটপাতে বসে ভিক্ষা করে. আশেপাশে সব বড়লোকদের বড় বড় বাংলো বাড়ি, প্রতিটি বাড়ির সামনে দামি দামি গাড়ি, সামনে আকাশছোঁয়া বড় বড় ফ্লাট বাড়ি. পাশেই একটি বিশাল বড় শপিংমল, শপিংমলে সারাদিনে কত বড় লোকের আনাগোনা-দামি দামি দেশী-বিদেশী জামাকাপড় পরা স্বামী-স্ত্রী, অল্পবয়সী ছেলেমেয়ে সবাই আসে- দামি দামি জিনিসপত্র কিনে নিয়ে যায় শপিংমল থেকে. বড়লোকদের কাছ থেকে ভিক্ষা পাবার আশায় শপিংমলের কাছে জনবহুল মোড়ের ফুটপাতে বসে থাকে ভিখারিটা; আর গাড়ি থেকে বড়লোক সুন্দরী মহিলা বউ মেয়ে পুরুষ বা ছেলেরা নামলেই তাদের পা জড়িয়ে ধরে ভিক্ষা চায়. কেউ পাত্তা দেয় না, কেউ বা পায় ঘেন্না. বিশাল বড় বড় ঝাঁকড়া চুল ভিখারিটার, কাঁধ পর্যন্ত লম্বা; দাড়ি গোঁফও অনেকদিন ধরে না কাটা, বড় বড়. সাজপোশাক দেখলেই বোঝা যায় বেশ কয়েকদিন ধরে চান করে নি লোকটা, সারা গায়ে নোংরা কাদামাখা. যদিও সবাই কিন্তু একই রকম নয়, অনেকেই লোকটাকে ভিক্ষা দেয়- পাঁচটাকা দশটাকা- যে যেমন পারে. সারাদিন ভিক্ষা শেষে লোকটা 200-300 টাকা রোজগার করে, পাশেই মোড়ের কাছে একটা ফাঁকা জমিতে ঝুপড়ি হোটেল-সেখানেই ভিক্ষার টাকা দিয়ে কোনদিন ডাল ভাত বা কোনদিন ডিম ভাত খায় লোকটা. কিন্তু কিছুদিন হলো বৃষ্টি আরম্ভ হওয়াতে লোকটার কষ্ট আরো বেড়েছে. রাস্তাঘাটে লোকজন কম; ভিক্ষা করে তেমন টাকা উপার্জন করতে পারছে না ভিখারিটা, তার উপর প্রচন্ড বৃষ্টিতে ফুটপাতের ধারে জল জমে যাওয়ায় রাতে ঘুমাবার জন্য একটা প্লাস্টিকের মত তাবু তৈরি করে তার নিচে কোনরকমে ঘুমাচ্ছে ভিখারিটা. দুদিন আগে বৃষ্টির জন্যে সারাদিন ধরে লোকটার কোন টাকা উপার্জন হয়নি; সন্ধ্যাবেলা মরিয়া হয়ে শপিংমলের সামনে দামি বিদেশী গাড়ি থেকে নামা এক সুন্দরী মহিলার পা জড়িয়ে ধরে ভিখারিটা, “ মেমসাহেব, সারাদিন ধরে কিছু খাইনি. কিছু টাকা দিন না”. উরু পর্যন্ত লম্বা একটি দামি ছোট্ট আঁটোসাঁটো বিদেশি পোশাক পড়েছিল মেয়েটা; ঘেন্নায় ছি ছি করে ওঠে, “ চল, যা.. যা.. পা ছাড় আমার! নোংরা ভিখারি একটা রাস্তার! বিদায় হ!”. মেয়েটার বয়ফ্রেন্ডটা ততক্ষণে গাড়ি থেকে নেমে পড়েছে, দৌড়ে ভিখারিটাকে লাথি মারে মুখে, “এই শয়তান! আমার গার্লফ্রেন্ডকে ছাড়. কাজ করে খেতে পারিস না. ভিক্ষা করে খাস, শয়তান!” ভিখারিটাকে আরো মারতে উদ্যত হয় ছেলেটা. অনিন্দিতার কাছেই বাড়ি; 22 বছর বয়সী সুন্দরী অনিন্দিতা কলেজস্ট্রিটের একটি কলেজে স্নাতকোত্তর জীববিদ্যা নিয়ে মাস্টার ডিগ্রীর জন্য পড়ছিল. বড়লোকের একমাত্র সুন্দরী মেয়ে অনিন্দিতা দেখতে যেমন পরীর মত সুন্দরী মনটাও তেমনি ফুলের মত সুন্দর- সহজে বাইরে এবং মনে একসাথে সুন্দরী মেয়ে পাওয়া যায় না; এই মেয়েটি ছিল সেই দুর্লভ মেয়েদের মধ্যে একজন. কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার সময় তার নজরে আসে ঘটনাটা- কয়েকদিন ধরেই সে দেখেছে ভিখারিটিকে তাদের বাড়ির সামনে ফুটপাতে বসে ভিক্ষা করতে; খুবই মন খারাপ হয়েছে তার দৃশ্যটা দেখে, বেশ কয়েকবার নিজের হাতখরচার টাকা থেকেও টাকা দিয়েছে লোকটাকে, কিন্তু আজ একটা জোয়ান ছেলে অসহায় ভিখারিটাকে মারছে দেখে ছুটে যায় অনিন্দিতা. “কাপুরুষ”, জোরে ধাক্কা দিয়ে পিছিয়ে দেয় ছেলেটাকে, “একটা ভিখারির গায়ে হাত তুলছিস, লজ্জা করে না!” “ শয়তানটার ভিক্ষা করে খেতে লজ্জা করে না, কাজ করে খেতে পারে না! অলস!” এগিয়ে আসে রাগের মাথায় ছেলেটা অনিন্দিতার দিকে. “ দাঁড়া, এখনি পুলিশ ডাকবো. রাস্তায় অসহায় ভিখারিকে মারছিস. তোকে আজ জেলে দেব.” অনিন্দিতা রেগে গিয়ে ছেলেটাকে বলে. ছেলেটা রাগের মাথায় এগিয়ে আসছিল; কিন্তু তার গার্লফ্রেন্ড টেনে ধরে পেছন থেকে, “এই, চলো এখান থেকে. মাথা গরম করো না. এত ঝামেলা বাড়াচ্ছ কেন? চলো চলো” গার্লফ্রেন্ডটা টেনে নিয়ে যায় তার বড়লোক সহজেই উত্তেজিত বয়ফ্রেন্ডকে. “তোমার কোথাও লাগে নি তো?” জিন্সটপ পরা অনিন্দিতা হাটুগেড়ে রাস্তায় পড়ে থাকা ভিখারিটার দিকে তাকায়. মুখে লাথি খেয়ে ভিখারিটার নাক দিয়ে তখন রক্ত ঝরছে, “ ইস, তোমার তো মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে. এখনই হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে.” “ না.. না.. দিদিভাই. বেশি ব্যথা লাগেনি, একটু নাক দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে. হাসপাতালে যেতে হবে না.” ভিখারিটা রাস্তা থেকে উঠে গিয়ে অনিন্দিতার বাড়ির কাছে  ফুটপাতে গিয়ে বসে. “ না না, রক্ত বেরোচ্ছে. ঔষধ লাগবে. দাড়াও” মেয়েটা দৌড়ে বাড়ির ভেতর চলে যায়, কিছুক্ষণ বাদে বেশ কিছু খাবার দাবার এবং ওষুধ নিয়ে আসে. ভিখারিটার মুখ চুলদাড়ি এবং টুপিতে প্রায় ঢাকা; হাটু গেড়ে রক্ত বের হওয়া নাকে লাল ওষুধ লাগাতে লাগাতে কাছে থাকবার জন্য লোকটার মুখ দেখতে পারে মেয়েটা-দেখে ছেলেটা একটা ভদ্র পরিবারের, জিজ্ঞাসা করে অনিন্দিতা, “ তুমি ভিক্ষা করছ কেন? কাজ করে খাচ্ছো না কেন?” ভিখারিটা জানায় সর্বস্ব খুইয়ে কলকাতায় এসেছে সে; তারা ভদ্র পরিবারের ছিল, কিন্তু বাবার কিডনি ফেইলিওর এর চিকিৎসা করাতে গিয়ে সর্বস্ব বিক্রি করতে হয়. বাবা তো থাকেই না, টাকাও যায়. মা এই দুঃখ সহ্য করতে না পেরে মারা যায় আর সে চলে আসে কলকাতায়. কিন্তু তার অল্প বয়সে শরীরে আর্থাইটিস ধরা পড়ায় কাজ করে খাবার সামর্থ্য থাকে না-সারা শরীরে ব্যথা. ফলে এভাবে রাস্তায় ভিক্ষা করতে হচ্ছে কোনরকমে. যদিও কাজের চেষ্টা সে চালিয়ে যাচ্ছে, একটা সরকারি চাকরির পরীক্ষা দিয়েছে, যদি চাকরিটা পায় তবেই একমাত্র তার অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে. অনিন্দিতার ছেলেটার কথা শুনে খুব দুঃখ লাগে, সে মনে মনে প্রার্থনা করে ছেলেটার যেন চাকরিটা হয়ে যায়. ওষুধ লাগিয়ে লোকটাকে খাবারগুলো দিয়ে হাতে গুঁজে দেয় 500 টাকার একটা নোট; অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে ভিখারিটা. মন খারাপ নিয়ে নিজের দামি বাংলো বাড়িটিতে ফিরে আসে অনিন্দিতা; এত কষ্ট লোকটার! রাস্তার ফুটপাতে বৃষ্টির মধ্যে শুয়ে থাকে! রাতে শুতে যাওয়ার আগে আরো একবার বাইরে বেরিয়ে লোকটাকে জিজ্ঞাসা করে, “তুমি আমাদের বাড়ির বারান্দাতে থাকতে পারো. এভাবে বৃষ্টিতে কিভাবে থাকবে?”. ভিখারিটা ধন্যবাদ জানিয়ে না করে দেয়; বলে, “তোমার বাবা-মা তাহলে বিরক্ত হবে. দরকার নেই. আমি ঠিক চালিয়ে নেব”. মন খারাপে অনিন্দিতার অনেক রাত পর্যন্ত ঘুম হয় না. সেই রাতে বৃষ্টির জন্য ভিখারিটার প্রচন্ড অসুবিধা হয় প্লাস্টিকের তাবুর মত ছোট্ট জায়গাটিতে ঘুমাতে; বৃষ্টির জল ছিটকে তাঁবুর ভেতরে এসে পড়ে ভিজিয়ে দেয় তার সারা শরীর. রাত 11টার দিকে রাস্তার বিপরীত দিকের সুবিশাল আবাসনের সামনে দামি গাড়ি থেকে নামে স্বল্পবসনা অল্পবয়সী এক মহিলা- আঁটোসাঁটো উরু পর্যন্ত লম্বা তার দামি ওয়েস্টার্ন পোশাক- আবাসনের সামনে এটিএম থেকে কিছু টাকা তোলে মেয়েটা; ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে এটিএম এর বাইরে বেরিয়ে এসে টাকাগুলি গুনে নিজের ব্যাগে ঢোকাবার সময় দু-তিনটি নোট পড়ে যায় ফুটপাতে. হাঁটু গেড়ে ফুটপাতে বসে টাকাগুলি তুলে নেয় মেয়েটা; মেয়েটার পোশাক এতটাই ছোট ছিল যে হাটুগেড়ে বসবার সময় ভিখারিটা দেখতে পায় তার হলুদ রঙের প্যান্টি. মেয়েটি তাড়াতাড়ি গাড়ির ভেতরে বসে গাড়ি নিয়ে ঢুকে যায় বহুতল আবাসনটিতে; আবাসন এই থাকে মহিলাটি. ভিখারিটি হয়ত ভাবছিল এদের কত আরাম সুখ; মাথার উপর ছাদ আছে, জীবিকা আছে টাকা উপার্জনের জন্য. দুদিন বাদে আজ রাতে রাস্তার ফুটপাতে শুয়ে ঘুমাবার চেষ্টা করছিল ভিখারিটা; আজ বৃষ্টিটা একটু ধরলেও প্রচন্ড জোরে ঠান্ডা হাওয়া বইছে-ঠান্ডায় কোনরকমে গুটিশুটি মেরে শুয়ে থাকে ভিখারিটা. ঠান্ডায় লোকশূন্য হওয়ার জন্য সারাদিনে কিছুই তেমন রোজগার করতে পারেনি- খাওয়াও জোটেনি সারাদিন- পাশের বাড়ির সুন্দরী মেয়েটা এসেছিল টাকা দিতে এবং বলতে যে এভাবে কষ্ট না করে তাদের বাড়ির বারান্দাতে থাকতে; কিন্তু, ভিখারিটা না করে দেয়- এভাবে একজনের কাছে রোজ রোজ ভিক্ষা নিতে তারও বিবেকে বাধে. রাত নটার দিকে জনশূন্য রাস্তায় দিয়ে কোটপ্যান্ট পরা একটা লোক রাস্তার বিপরীত দিকের এটিএম থেকে বেশ কিছু টাকা তোলে; টাকা তুলে বাইরে বেরিয়ে এসে টাকাগুলো গুনছিল লোকটা-ভিখারিটা লক্ষ্য করে বেশ অনেক টাকাই তুলেছে লোকটা. টাকাগুলো নিজের মানিব্যাগে ভরে লোকটা লক্ষ করে তার জুতোর ফিতে খুলে গেছে; হাঁটু গেড়ে বসে জুতোর ফিতেটা বাঁধে লোকটা. অনেক টাকা তুলেছে, হয়তো চাইলে আমাকেও কিছু দেবে; এই ভেবেই হয়তো ভিখারিটা রাস্তা অতিক্রম করে চলে আসে কোটপ্যান্ট পরা লোকটার কাছে. পা ধরে বলে, “বাবু, সারাদিন কিছু খাইনি. কিছু টাকা দেন না! আজ সারাদিন ভিক্ষা করে কিছুই পাইনি”. কোটপ্যান্ট পরা লোকটা প্রচন্ড বিরক্ত হয়, “যা.. যা.. টাকা নেই আমার কাছে”. “ কিন্তু বাবু এইতো এখনই টাকা তুললেন” জিজ্ঞাসা করে ভিখারিটা. “বড় বড় নোট তোকে দেব নাকি” খেকিয়ে উঠে লোকটা; পেছন ফিরে হাঁটতে থাকে, কিন্তু ভিখারিটাও নাছোড়বান্দা. পিছন পিছন “ দিন না বাবু, দিন না বাবু” বলে আসতে থাকে. বাধ্য হয়ে লোকটা 10 টাকার একটা নোট বার করে দেয়. এটিএম থেকে এতগুলো টাকা তুলল আর মোটে 10 টাকা দিল; ভিখারিটার যেন পছন্দ হয় না, বলে “ বাবু, আরো কিছু দিন. এটা দিয়ে তো রাতের খাবার হবে না”. “ চল, এটুকুই যথেষ্ট. আমি একা সব টাকা দেবো নাকি?” বলে লোকটা হাঁটতে থাকে; পথের গতিপথ দেখে আন্দাজ করা যায় লোকটা কাছের রেলস্টেশনে যাচ্ছে. রাস্তার ফুটপাথ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কোটপ্যান্ট পরা লোকটা স্টেশনের কাছে চলে আসে, ডানদিকের একটা ছোট গলি দিয়ে শর্টকাট নেয়- রাস্তাটা অন্ধকার এবং চারদিক জঙ্গলআগাছা পরিপূর্ণ. পেছন থেকে পায়ের শব্দ পেয়ে ঘুরে দাঁড়ায় লোকটা, দেখে কিছু হাত দূরে ভিখারিটা তার পিছু পিছু আসছে “কিরে বদমাশটা! তুই এখনো আমার পিছু ছাড়িস নি? কি চাস তুই? তোর তো অন্য কোনো মতলব মনে হচ্ছে! চুরি করার ধান্দায় আছিস, তাই না?” কোটপ্যান্ট পরা লোকটা ঘুসি বাগিয়ে ছুটে আসে আঘাত করবার জন্য ভিখারিটাকে. অত্যন্ত দ্রুততার সাথে ভিখারিটা সরে যায় লোকটার আঘাতের সামনে থাকে, নিচু হয়ে লোকটাকে কাঁধে তুলে আছড়ে ফেলে মাটিতে. সাথে সাথে যেন কিছু একটা বুঝতে পারে কোটপ্যান্ট পরা লোকটা; কোর্টের ভেতর থেকে বার করে তার ফোল্ডিং ছুরি, ছুরিটা দিয়ে আঘাত করবার চেষ্টা করে ভিখারিটাকে. ভিখারিটা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে ধরে ফেলে লোকটার হাতের কলাই; এক চাপে হাতের হাড় ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়, ছুরিটা খসে পড়ে লোকটার হাত থেকে. দ্রুততার সাথে ঘুরে গিয়ে ভিখারিটা আঘাত করে লোকটার হাঁটুর পিছনে পা দিয়ে; মুহুর্তের মধ্যে পা ভেঙে যায় লোকটার. ব্যাথায় চিৎকার করে ওঠার আগেই পেছন থেকে মুখ জাপ্টে ধরে সারা শরীর দিয়ে পেচিয়ে ধরে ভিখারিটা; জোরে মাথাটা ঘুরিয়ে ঘাড়টা ভেঙে দেয়-সাথে সাথেই মৃত্যু হয় লোকটার. দ্রুত মৃত লোকটার সারা শরীর তন্নতন্ন করে খোঁজে; পকেট থেকে মানিব্যাগ বার করে-পেটমোটা টাকাভর্তি মানিব্যাগ, সাথে আরও বিভিন্ন কাগজপত্র এবং পরিচয়পত্র- সবকিছু তাড়াতাড়ি নিজের পকেটে ঢোকায়. খুলে নেয় লোকটার হাতের দামি ঘড়ি, পকেটের সোনার সিগারেট কেস. শরীরের সবকিছু ভালভাবে খুঁজে মাটিতে পড়া ছুরিটা তুলে নিয়ে মৃতদেহটা ঘাড়ে করে ভিখারিটা জঙ্গলের ভেতর দিয়ে চলে আসে রেলস্টেশনের কাছে. রেলস্টেশনের এদিকটা মালগাড়ির জন্য; ফাঁকা ফাঁকা রেললাইন এবং মালগাড়ির মাঝখান দিয়ে সে চলে আসে মালগুদাম এর সামনে. জায়গাটা ফাঁকা এবং অনেক খালি কাঠের এবং লোহারবাক্স পড়ে রয়েছে; সেখানে একটা কাঠের বাক্সের ভেতর মৃতদেহটা লুকিয়ে রাখে. কাঠের বাক্সটাকে সরিয়ে নিরাপদ একটা ঝোপের কাছে লুকিয়ে দিয়ে আবার নিজের ভিক্ষা করার জায়গায় ফিরে আসে; সারাদিন ধরে কিছু খাওয়া হয়নি, পাশের ঝুপড়ি হোটেলে গিয়ে আজ ভালোভাবে মাংস ভাত দিয়ে খেতে থাকে সে. সবে খাবার-দাবার খেয়ে দাম মিটিয়ে বেরিয়ে আসছে সে, তখনই দেখে আরো দুটো ভিখারি এসে জুটেছে “ এই শয়তান, এটা আমাদের এলাকা. এখানে আমরা ভিক্ষা করি. তুই কোথা থেকে এসে বসেছিস রে?”. নতুন ভিখারি দুটো মারতে উদ্যত হয়; সাথে সাথে দোকানের বিভিন্ন লোক এবং মালিক চিৎকার করে ওঠে, “এই এই, আমার দোকানে কোন মারামারি আমি চাই না. তোমরা এখান থেকে বের হও”. দোকান থেকে ভিখারিগুলোকে বাইরে বের করে দিয়ে হোটেলের মালিক দেখে ভিখারি দুটি অন্য ভিখারিকে কলার ধরে ঘাড় ধাক্কা দিতে দিতে ফুটপাত দিয়ে নিয়ে যায়; তার প্লাস্টিকের তাবু ভেঙে ছিড়ে বের করে দেয় এলাকা থেকে এবং শাসিয়ে চিৎকার করে বলে, “আর কোনদিনও যদি দেখেছি আমাদের এলাকায়, তাহলে মেরে ভূত ভাগিয়ে দেব”. ক্লান্ত ভিখারিটি দক্ষিণ কলকাতা থেকে রাতের বেলায় হাঁটতে-হাঁটতে চলে আসে মধ্য কলকাতায়; এতটা রাস্তা হেঁটে অতিক্রম করে সে. পার্কস্ট্রিট; চারপাশের অভিজাত হোটেল রেস্তোরাঁ এবং দোকানগুলি তখন বন্ধ, রাস্তা ফাঁকা- ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ভিখারিটি এসে পৌঁছায় ব্রিটিশ কবরখানায়. ইংরেজ শাসনের সময় এই কবরখানাটি ছিল ব্রিটিশদের অভিজাত কবরখানা; সমস্ত ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের এখানেই কবর দেওয়া হয়েছে- কানাঘুষোয় কথা আছে, এটি কলকাতার সবচেয়ে ভৌতিক জায়গাগুলির মধ্যে একটি; সন্ধ্যার পর থেকেই এখানে কেউ আসে না. কবরখানায় প্রবেশ করে ভিখারিটা, ভাঙ্গাচোরা কংক্রিটের পথ দিয়ে এগিয়ে যায় ভেতরের দিকে. চারপাশে পরিতক্ত সমস্ত বড় বড় সমাধি, বেশ কিছু কালের প্রভাবে ভেঙে মাটিতে পড়ে আছে- বড় বড় বটগাছ এবং জঙ্গলে ভরা জায়গাটা সত্যি ভৌতিক. ভূতের ভয় কেউ না পেলেও সাপের ভয় তাকে পেতেই হবে. বিশাল বড় একটা পুরনো সমাধির পিছনে এসে দাঁড়ায় লোকটা, প্রাচীন জংধরা লোহার দরজা সমাধির পেছনে. চারপাশে কেউ নেই দেখে পকেট থেকে একটা চাবি বার করে পুরনো লোহার দরজাটা খোলে লোকটা-অন্ধকার একটা সিঁড়ি নিচের দিকে নেমে গেছে- ভেতরে প্রবেশ করে দরজাটা আবার বন্ধ করে দেয় লোকটা. দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে; আবার একটি লোহার বন্ধ গ্রিলের দরজা পড়ে, সেই দরজাটিও খুলে একটা মইয়ের মত লোহার সিঁড়ি বেয়ে নেমে পড়ে লোকটা পুরানো দিনের ড্রেনের সুড়ঙ্গে. চারপাশে ঘন কালো অন্ধকার, হাতড়ে আলো জ্বালার সুইচ বোর্ড খুঁজে আলো জ্বালে লোকটা- সুরঙ্গটিতে হলুদ রঙের আলো জ্বলতে থাকে. সুড়ঙ্গের ড্রেনের ধার দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ভিখারি লোকটা এগিয়ে চলে তার গন্তব্যের দিকে; অনেকটা পথ গোলকধাঁধার মত সুড়ঙ্গে অতিক্রম করে একটা বড় লোহার দরজার সামনে পৌঁছায় সে. দরজায় জোরে জোরে তিন বার আঘাত করে লোকটা. বড় দরজাটার মাঝখানে ছোট একটা জানলার মত জায়গা খুলে যায়; অপরদিক থেকে একটা লোকের শুধু চোখ দেখা যায়. “ কি চাই?” দরজার বিপরীত দিক থেকে প্রশ্ন আসে. “ চুল দাড়ি বড় হয়েছে, কাটবো.” “  তা সেলুনে যাও” “  এত রাতে বাকি সব সেলুন বন্ধ” দরজাটা খুলে দেয় বিপরীত দিকে থাকা লোকটা; ভেতরে প্রবেশ করে ভিখারিটা. ভেতরে একটি কম্পিউটার মেশিন, সামনে গিয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার এ হাত স্ক্যান করে ভিখারি লোকটা. জ্বলে ওঠে সবুজ আলো, তারপর ভিখারিটা নিজের মাথাটা রাখে যন্ত্রের সামনে- যন্ত্র থেকে বেরিয়ে আসে একটি আলো, স্ক্যান করে তার চোখের রেটিনা; আবার জ্বলে ওঠে সবুজ আলো. খুলে যায় কম্পিউটারের পিছনের একটি দরজা- দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে ভিখারি লোকটা, এগিয়ে চলে বিশাল বড় আধুনিক সার্ভার কম্পিউটাররুমের মধ্য দিয়ে. সার্ভার কম্পিউটার রুম পেরিয়ে লোকটা চলে আসে অফিসের মত দেখতে একটি ঘরে, ঘরে দু-তিনজন কাজ করছিল; তাকে দেখতে পেয়ে একজন এগিয়ে আসে, “কিরে, অভিষেক! কাজ হল” “ হ্যাঁ, উৎসব. মৃতদেহটা সরিয়ে নিয়েছিস স্টেশন থেকে?” ভিখারিটি প্রশ্ন করে. এতক্ষণে জানা যায় ভিখারি ছেলেটির নাম অভিষেক. “ হ্যাঁ, তোর খবর পাওয়া মাত্রই আমরা মৃতদেহটা সরিয়ে নিয়েছি. তা আমরা কি কাজে সফল হয়েছি?” উৎসব জিজ্ঞাসা করে. হেসে অভিষেক জানায়, “কাজে সফল আমরা. আমি যে কাজে গেছিলাম, ঠিকঠাক করে এসেছি. আচ্ছা, বস কি এখন বাড়িতে?” “না, এত রাতে তোর খবর পেয়ে অফিসে চলে এসেছে. তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে তুই বসের কেবিনে গিয়ে দেখা কর.” উৎসব জানায়. “তুই আমার চুল কাটতে পারবি?” অভিষেক প্রশ্ন করে. “ চল দেখি” বলে উৎসব অভিষেককে নিয়ে চলে আসে অভিষেকের পার্সোনাল অফিসরুমে. পার্সোনাল অফিসরুমের পাশেই বাথরুম এবং শোয়ার জায়গা ছিল, রুমগুলি বেশ আধুনিকতায় পরিপূর্ণ. কিছুক্ষণের মধ্যে বহুদিন বাদে ভালোভাবে পরিষ্কার করে চান করে অভিষেক, চুলদাড়ি কেটে ভালোভাবে স্নান করতেই বেরিয়ে আসে তার সুদর্শন শক্তিশালী চেহারা- শক্তিশালী চিবুক, বুদ্ধিদীপ্ত চোখ. কোট প্যান্ট পরে একটা সিগারেট ধরায় অভিষেক এবং কিছুক্ষণ আগে হত্যা করা লোকটার মানিব্যাগ এবং কাগজপত্র ভালোভাবে লক্ষ করতে থাকে. কিছুক্ষণের মধ্যেই তার ডাক পড়ে বসের অফিসে, সমস্ত প্রমানপত্র নিয়ে ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থার অন্যতম সেরা গুপ্তচর অভিষেক রাত তিনটার সময় প্রবেশ করে তার বসের ঘরে. কলকাতা শহরের নিচে গুপ্ত এই অফিসটি ছিল ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থার অন্যতম একটি হেডকোয়ার্টার; ব্রিটিশরা যখন প্রথম কলকাতা শহর তৈরীর জন্য নকশা তৈরি করেছিল তখন এই গোপন আন্ডারগ্রাউন্ড অফিসগুলি তৈরি করে শত্রু ভারতীয়দের হাত থেকে লুকিয়ে থাকবার জন্য এবং গোপনে কাজ করবার জন্য. বর্তমানে এই ঘরগুলি ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা ব্যবহার করে- কলকাতা শহর তৈরীর মূল নকশায় এই গুপ্ত জায়গাগুলির উল্লেখ রয়েছে.
Parent