বাংলা চটির ভান্ডার - অধ্যায় ৭

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-65379-post-5778595.html#pid5778595

🕰️ Posted on October 16, 2024 by ✍️ Pagol premi (Profile)

🏷️ Tags:
📖 2960 words / 13 min read

Parent
আমরা দুজনে স্টেশন থেকে বেরিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম। বাইরে অসম্ভব ঠাণ্ডা সারা শরীর দিয়ে সেই ঠাণ্ডা অনুভব করতে পারছি। সোয়েটার ভেদ করে সেই ঠাণ্ডা চামড়া আর মাংসকে আক্রমণ করছে যেন। হাড় পর্যন্ত কেঁপে উঠছে সেই ঠাণ্ডায়। হাত দুটো মুহুর্তের মধ্যেই ঠাণ্ডা হয়ে গেল। প্যান্টের পকেটের মধ্যে হাত দুটোকে ঢুকিয়ে নিলাম। তাতে যে খুব বেশী সুবিধা হল, তা বলতে পারি না। তবে সামান্য হলেও আরাম লাগতে শুরু করল। স্টেশন থেকে বেরিয়েই স্বাতী দেখলাম শালটাকে গায়ে ভালো করে জড়িয়ে নিল। আমাদের দুজনের কারোর কাছেই টর্চ ছিল না। তবে রাস্তা চলতে খুব একটা অসুবিধা হচ্ছিল না। কারণ দিন কয়েক আগেই পূর্ণিমা গেছে। আকাশে চাঁদের যথেষ্টই আলো আছে। সেই আলোতেই আমরা পথ চিনে হাঁটছিলাম একটু একটু করে। দেখতে দেখতে আমাদের চারপাশে ঘন কুয়াশা জড়ো হতে শুরু করে দিল। একটু পর এত কুয়াশা জড়ো হল যে, একহাত দূরের রাস্তাও দেখা মুশকিল হতে লাগল। স্বাতীর কথা শুনে ভালোই করেছি। তা নাহলে এই ঠাণ্ডা ট্রেনের খোলা কামরায় রাত কাটানোটা অসম্ভব হয়ে যেত। মনে মনে ওকে একটা ধন্যবাদ জানালাম। স্বাতী শালের তলায় নিজের হাতদুটোকে ঢুকিয়ে রেখেছিল। প্রথমে আমরা দুজনে কেউই কোনো কথা বলিনি। চুপচাপ নিজের মত হাঁটছিলাম। এরপর প্রথম কথা বলল স্বাতীই, “তাপসদা, কি ঠাণ্ডা গো! এবার তো জমে যাবো মনে হচ্ছে!” আমি হাঁটতে হাঁটতেই জবাব দিলাম, “হ্যাঁ আজকে ঠাণ্ডাটা একটু বেশীই মনে হচ্ছে ট্রেনে থাকতে বুঝতে পারিনি।” তারপর একটু থেমে বললাম, “তবে আমরা অনেকটাই চলে এসেছি। আর মনে হয় বেশী হাঁটতে হবে না।” স্বাতী এই কথার কোনো জবাব দিল না। আগের মতই চুপচাপ হাঁটতে লাগল। আমিও অগত্যা হাঁটায় মন দিলাম। আবার কিছুক্ষণ সব নিঃস্তব্ধ। কিছুক্ষণ পরে আবার কথা বলল স্বাতী, “আচ্ছা তাপসদা, তুমি কখনো ভেবেছিলে আমরা দুজনে এভাবে কোনোদিন আটকে পড়ব একসাথে?” আমি হাঁটতে হাঁটতেই জবাব দিলাম, “না।” স্বাতী একবার আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, “আচ্ছা ধরো, বেলাদি যদি জানতে পারে যে আমরা দুজনে এভাবে…” কথাটা শেষ না করেই আগের মত হাঁটতে লাগল ও। ওর কথাটা আমার ঠিক ভালো লাগল না। কেমন যেন একটা ইঙ্গিত রয়েছে তার মধ্যে। আমি হাঁটা থামিয়ে দিয়ে, দাঁড়িয়ে পড়ে বললাম, “আমরা দুজনে এভাবে, কি?” আমি দাঁড়িয়ে পড়েছি দেখে স্বাতীও হাঁটা থামিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। তারপর পিছন ফিরে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “তুমি আবার দাঁড়িয়ে পড়লে কেন? চলো।” আমি এগিয়ে ওর পাশে এসে দাঁড়ালাম। তারপর আবার দুজনে একসাথে হাঁটতে শুরু করলাম। চলতে চলতে স্বাতী আবার বলল, “না মানে, বলছিলাম, বেলাদি যদি জানতে পারে যে আমরা দুজনে এভাবে একলা সারারাত একই হোটেলে থেকেছি, তখন?” কথাটা শুনে আমি স্বাতীর মুখের দিকে তাকালাম। দেখলাম ওর মুখে জুড়ে একটা কৌতুকপূ্র্ণ হাসি খেলা করছে। বুঝতে পারলাম স্বাতী আমার সাথে মজা করার চেষ্টা করছে, তবে আমার ভালো লাগল। স্বাতী আমাদের পাড়ার বউ ঠিকই কথা। আমার মুখ চেনাও বটে কথাও আগে বলেছি। কিন্তু এভাবে এতটা সময় ওর সাথে আগে কখনোই কাটাইনি। বুঝতে পারলাম শরীরের মত ওর মনটাও খুবই সুন্দর। মিশুকে ব্যবহার আছে মেয়েটার মধ্যে। তা নাহলে এতরাতে একজন অন্য পুরুষের সাথে এভাবে রাত্রিযাপনের চিন্তায় মজা করতে পারত না। আমিও সে সুযোগ ছাড়ি কেন? আমিও ওর সাথে মজা করার চেষ্টা করলাম। আমি চুপ করে আছি দেখে স্বাতী বলল, “কি গো, কিছু বলো। চুপ করে আছো যে। বেলাদিকে কি জবাব দেবে?” আমিও ওর মুখের দিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে মুচকি হেসে বললাম, “তুমি শুধু বেলার কথাই বলছো কেন? সে হিসাবে তো নীলাদ্রিও আমাদের কথা জানতে পারে। তখন তুমি কি করবে? কি বলবে ওকে?” স্বাতী ঠোঁট টিপে একবার হাসি চেপে রেখে বলল, “আমি তো বাবা ওর কাছে কোনো কথাই চেপে রাখতে পারি না। ওকে সব সত্যি কথা বলে দেবো।” আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “কি সত্যি কথা?” স্বাতী বলল, “কেন? এই যে আমরা দুজনে সারারাত ধরে, একসাথে…” আবার কথাটা অসম্পূর্ণ রেখে চলতে লাগল স্বাতী। আমি এবার ওর কথা শুনে বেশ খানিকটা ঘাবড়ে গেলাম। এবার আর ওর মুখ দেখে মনে হল না, ও মজা করছে। আমি বললাম, “একসাথে কি?” স্বাতী একবার গম্ভীর হয়ে আমার মুখের দিকে তাকালো। তারপর মুখটা সামনের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে আগের মতোই চলতে লাগল। তারপর গম্ভীর স্বরে বলল, “একসাথে…” বলে একবার আমার দিকে আড়চোখে তাকালো। “…গল্প করে কাটিয়ে দিয়েছি।” কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে ও খিলখিল করে হেসে উঠল। ওর হাসি দেখে আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম একটা। তারপর আমিও না হেসে পারলাম না। দুজনেই বেশ জোরে জোরে হাসতে শুরু করলাম। স্বাতী একইভাবে হাসতে হাসতে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “তুমি এত ভীতু কেন গো, তাপসদা? তোমার মুখটা কেমন যেন একটা হয়ে গেছিল। আমার তো দেখেই হাসি পাচ্ছিল। কোনোরকমে হাসি চেপে রেখেছিলাম। তারপর আর থাকতে পারলাম না। উফ্! তোমার মত ভীতু মানুষ আমি জীবনে আর দুটো দেখিনি।” আমি কিছু বললাম না। কেবল হাসতে লাগলাম। তারপর হাসি থামিয়ে বললাম, “কিন্তু আমি একটা অন্য কথা ভাবছি।” স্বাতীও হাসি থামিয়ে আমার মুখের দিকে আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে বলল, “কি কথা?” “গেস্টহাউসে তো আমাদের দুজনকে স্বামী-স্ত্রী হিসাবেই পরিচয় দিতে হবে। অন্য পরিচয় দিলে, হয় বিশ্বাস করবে না, আর নয়তো সন্দেহ করবে।” “তাতে কি হয়েছে? তুমি আমাদের দুজনকে স্বামী-স্ত্রী হিসাবেই পরিচয় দেবে।” স্বাভাবিক স্বরে কথাগুলো বলে স্বাতী আমার দিকে আরো একবার আড়চোখে তাকালো। তারপর বলল, “কেন, আমাকে তোমার বউ হিসাবে মানাবে না বলছো?” আমি কেন জানি না, প্রায় সাথে সাথেই বললাম, “না, না। তা নয়। তবে…” “তবে কি?” আমাকে একপ্রকার জোর করে থামিয়ে দিয়ে স্বাতী জিজ্ঞাসা করল। “যদি আমরা নিজেদেরকে স্বামী-স্ত্রী হিসাবে পরিচিয় দিই, তাহলে আমাদের একটা রুমেই রাত কাটাতে হবে।” আমি গলাটা অকারণেই নামিয়ে বললাম যেন এটাও আমার একটা দোষ। “হ্যাঁ। সে তো থাকতে হবেই। নাহলে ওরা সন্দেহ করবে। স্বামী-স্ত্রী হয়েও আলাদা রুমে থাকছে কেন? তোমার কি আমার সাথে এক রুমে থাকতে অসুবিধা আছে?” স্বাতী আবার আমার মুখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্নটা করল। আমি এবার ওর মুখের দিকে সোজাসুজি তাকিয়ে বললাম, “একেবারেই না।” “তাহলে তো কথাই ফুরিয়ে গেল। আমার কোনো অসুবিধা নেই তোমারও নেই। আমরা আজকের রাতটা একটা রুমেই থাকবো। তারপর সারারাত এভাবেই গল্প করে কাটিয়ে দেবো। ঠিক আছে?” স্বাতীর প্রশ্নের উত্তরে কিছুটা আনমনা হয়েই জবাব দিলাম, “হুঁম।” আবার কিছুক্ষণ চুপচাপ হাঁটতে থাকি। আমি মনে মনে ভাবছি স্বাতীর কথা। মেয়েটা এত যে ইয়ার্কি মারতে পারে, তা আমার জানা ছিল না। কি ফাজিল মেয়ে রে বাবা! যখন যা মুখে আসছে, সপাটে বলে দিচ্ছে। কোথাও এতটুকুও আটকাচ্ছে না। তবে ওর ওই সপ্রতিভ খোলামেলা ব্যবহার, হাসিঠাট্টা সবই ভালো লাগছে। সেই মুহুর্তে আমাদের দেখে মনে হবে, আমরা যেন নববিবাহিত দম্পতি। মনে পড়ে গেল বিয়ের পর বেলাও এইভাবে আমার সাথে কত ঠাট্টা ইয়ার্কি করেছে। কত রাত আমরা একসাথে খুনসুটি করে কাটিয়েছি। কিন্তু তারপর থেকে একটু একটু করে সময় বদলে গেছে।সংসারের চাপ আমাদের দুজনেই ঘাড়েই এসে পড়েছে কতকটা জোর করেই। সংসার সামলে, দুই ছেলেমেয়ের ঝক্কি সামলে আমার সাথে খুনসুটি করার ইচ্ছা বা সময় দুটোরই অভাব বোধ করে বেলা। এখন আমাদের মধ্যে ভালোবাসাটাও যেন আমাদের শারীরিক সম্পর্কটার মতই একটা কর্তব্যে পরিণত হয়েছে কেবল। করার জন্যই কেবল করা। ভালোবাসা যখন নিয়মে পরিণত হয়, তখন তার বাঁধন ততই আলগা হয়ে আসে। এই সোজা কথাটা বেলা এখন আর বুঝতে চায় না। আমিও তাকে বোঝানোর চেষ্টা করিনা। আমরা দুজনেই এখন দুজনের কাছেই কেবল একটা বাধ্যবাধকতা। নিজের অজান্তেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম বোধহয়। সেটা শুনতে পেয়েই স্বাতী জিজ্ঞাসা করল, “কি হল?” ওর কথায় আমার চমক ভাঙ্গল। আমি বাস্তবে ফিরে এলাম এক ঝটকায়। পাল্টা জিজ্ঞাসা করলাম, “অ্যাঁ, কি বলছো?” স্বাতী একবার ভ্রু দুটো উপরে তুলে পরক্ষণেই নামিয়ে, ঠোঁটে ওর সেই পরিচিত মুচকি হাসিটা এনে জিজ্ঞাসা করল, “কি ভাবছো অত মন দিয়ে? নিশ্চয়ই বেলাদির কথা? আহারে, বউয়ের জন্য এরই মধ্যে মনকেমন করছে বুঝি? চিন্তা কোরো না, কাল সকালেই বাড়ি গিয়ে বউকে দেখতে পাবে” বলে আবার ঠোঁট টিপে হাসতে শুরু করল ও। আমি কোনো কথা বললাম না। কেবল হাসতে লাগলাম মৃদু মৃদু। একটু চুপ করে থাকার পরে স্বাতী বলল, “আচ্ছা, তাপসদা, আমার আর বেলাদির মধ্যে তোমার কাকে বেশী ভালো লাগে?” বলে আমার মুখের দিকে তাকালো। তারপর একইভাবে তাকিয়ে থাকতে থাকতে বলল, “সত্যি কথা বলবে কিন্তু। বউ বলে বেলাদিকে এক্সট্রা প্রফিট দিও না যেন।” ওর কথা শুনে আমি খানিকটা অবাকই হলাম। আমি আশ্চর্য হয়ে বললাম, “এ আবার কিরকম প্রশ্ন? তোমাদের দুজনকেই আমার সমান ভালো লাগে।” আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই ঘন ঘন মাথা নেড়ে নিজের অসম্মতি প্রকাশ করে স্বাতী বলল, “না, না এরকম ডিপ্লোমেটিক উত্তর দিলে হবে না। ঠিকঠাক উত্তর দিতে হবে বলো, আমাদের দুজনের মধ্যে তোমার কাকে বেশী ভালো লাগে?” আমি বুঝতে পারলাম স্বাতী আবার আমার সাথে মজা করতে শুরু করেছে। আমিও এবার আর ছাড়ার পাত্র নই। আমি নিজের মুখটাকে কিছুটা সিরিয়াস করে নিয়ে বললাম, “যদি বলি তোমাকে, তাহলে বিশ্বাস করবে?” আমার উত্তরটা ওর পছন্দ হল কিনা বুঝতে পারলাম না দেখলাম ও কিছুটা যেন অবাক হয়েই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। যেন বুঝে নিতে চাইছে, আমি সত্যিই সিরিয়াস, নাকি ওর সাথে মজা করছি? আমি প্রাণপণে হাসি চেপে রেখে মুখটাকে যতটা সম্ভব সিরিয়াস করে রাখা যায়, রাখলাম। কিছুক্ষণ সেই একই দৃষ্টি নিয়ে আমার মুখের দিকে অপলকভাবে তাকিয়ে থাকার পর, খুব ধীরে ধীরে নিজের মাথা নেড়ে স্বাতী বলল, “উঁহু। করবো না।” একটু থেমে গলাটাকে অকারণেই কিছুটা নামিয়ে এনে বলল, “আমি জানি তোমার বেলাদিকেই সবচেয়ে বেশী ভালো লাগে।” আমি বললাম, “সে তো, নীলাদ্রিরও তোমাকে বেশী ভালো লাগে।” স্বাতী এই কথার কোনো সরাসরি জবাব দিল না বরং কিছুটা অস্ফুট স্বরে বলল, “বেলাদি তোমাকে নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসে তাপসদা।” তারপর কতকটা বিড়বিড় করে বলল, “খুব ভালোবাসে।” আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, “কেন, তুমিও তো নীলাদ্রিকে ভালোবাসো বলো বাসো না?” স্বাতী এবার আর কোনো কথা বলল না। কেবল মাথাটা কিছুটা নীচের দিকে নামিয়ে রেখে চুপচাপ হাঁটতে লাগল আনমনে। হঠাৎ করে যে ওর কি হল বুঝতে পারলাম না। মনে হল নীলাদ্রির সাথে হয়তো ঝগড়া হয়েছে ওর কোনো কারণে। একবার ভাবলাম জিজ্ঞাসা করি। তারপর ভাবলাম, থাক। কি দরকার? ওদের দুজনের স্বামী-স্ত্রীর মাঝে আমার মত সম্পূ্র্ণ একজন তৃতীয় পুরুষের নাক গলানো ঠিক হবে না তাই আমিও চুপচাপ হাঁটতে লাগলাম। বাকীটা পথ আমরা কেউই আর কোনো কথা বললাম না। আরও অল্প কিছুক্ষণ হাঁটার পর আমরা গেস্টহাউসে পৌঁছে গেলাম। গেস্টহাউসে ঢুকে প্রথমে কাউকে দেখতে পেলাম না। তারপর এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখি এককোনে একজন মাঝবয়সী লোক টুলে বসে ঘুমাচ্ছে। তার সামনের টেবিলে একটা বড় জাবদা খাতা খোলা রয়েছে। পাশে একটা বড় ঘন্টি। আমি তার কাছে গিয়ে মৃদুস্বরে ডাকলাম, “দাদা।” লোকটার ঘুম ভাঙ্গলো না। আমি এবার আরেকটু জোরে ডাকলাম তাকে, “দাদা। শুনছেন?” লোকটার তাতেও কোনো হেলদোল নেই। সমানে ঘুমিয়ে যাচ্ছে। এতক্ষণ স্বাতী আমার পিছনে দাঁড়িয়ে আমার কর্মকাণ্ড দেখছিল। সে এবার এগিয়ে এসে আমার পাশে এসে দাঁড়াল। তারপর আমাকে বলল, “এভাবে হবে না দাঁড়াও আমি ওকে তুলছি” বলে টেবিলের উপরে রাখা ঘন্টিটার উপরে সজোরে চাপ দিল। ঘন্টিটা বিশ্রী শব্দ করে বেজে উঠল। স্বাতী এটুকু করেই থেমে থাকল না। বেশ খানিকটা গলা তুলেই তাকে ডাকল, “দাদা, ও দাদা শুনতে পাচ্ছেন?” এতেই কাজ হল। একে ঘন্টির ঐ বিশ্রী শব্দ। তার উপরে স্বাতীর ঐভাবে গলা ছেড়ে ডাক, লোকটা ঘুম ভেঙ্গে ধড়ফড় করে উঠে বসল। তারপর সামনে আমাদের দুজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। এরপর বাধ্য হয়েই ওনাকে আমাদের অবস্থা সবকিছুই খুলে বললাম। কেবল আমাদের সম্পর্কটা কি, সেটা যে এড়িয়ে গেলাম, তা বোধহয় বলাই বাহুল্য। একরাতের জন্য ঘর চাই শুনে লোকটা বারদুয়েক হাই তুলে, ঘুমজড়ানো গলায় বলল, “রুম একটাই খালি আছে। বাকী সব ভর্তি। আপনাদের মত অনেকেই একটু আগে থেকে আসতে শুরু করেছে স্টেশন থেকে।” তারপর আরো বারকয়েক উপর্যুপরি হাই তুলে বলল, “আপনারা আরেকটু দেরী করে এলে, হয়তো আর রুম পেতেন না তা যা বলছিলাম একটাই মাত্র রুম খালি আছে কিন্তু সেটা সিঙ্গল-বেড রুম। চলবে?” বলে সে এক এক করে আমার আর স্বাতীর মুখের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো। আমি কিছু বলবার আগেই স্বাতী বলল, “চলবে। আপনি রুমের চাবি দিন।” লোকটা আরো একবার আমাদের দুজনের মুখের উপরে চোখ বুলিয়ে নিয়ে বলল, “তার আগে, এই রেজিস্টার খাতায় আপনাদের নাম, বয়স, সম্পর্ক আর ঠিকানা লিখে দিন।” আমি আর কথা বাড়ালাম না। খাতাটা টেনে নিয়ে লিখতে শুরু করলাম। নাম- তাপস দে, বেলা দে। বয়স- ৩৮ ও ২৯। রিলেশন – স্বামী, স্ত্রী। ঠিকানা – কামারপুকুর, হুগলী। আমি ইচ্ছা করেই বেলার নাম লিখলাম। স্বাতী দেখি আড়চোখে একবার আমার মুখের দিকে তাকালো। কিন্তু মুখে কিছু বলল না। আমার লেখা শেষ হতে লোকটা আরো একবার আমার আর স্বাতীর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, “রুমটার সবই ভালো। কেবল খাটটা একটু ছোটো ম্যানেজ করে নেবেন একটু। অবশ্য শীতকালে কম্বলের তলায় একবার ঢুকে পড়লে ছোটো খাটের জন্য কোনো অসুবিধা হয় না।” আমরা কিছু না বলে লোকটার থেকে রুমের চাবিটা নিয়ে নিলাম। লোকটা আমাদের রুম দেখিয়ে দিয়ে বলল আগে থেকেই রুমে কম্বল, বিছানা ইত্যাদি রাখা আছে তা সত্ত্বেও যদি আরো কিছু লাগে, তাহলে আমরা যেন ওকে ডেকে নিই। আমরা আর ওর কাছে বেশিক্ষণ দাঁড়ালাম না। চাবি দিয়ে দরজা খুলে রুমে ঢুকে পড়লাম। রুমটা ছোটো হলেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন আর পরিপাটি করে সাজানো। এমনকি ঘরের এককোণে একটা ছোট্ট ড্রেসিংটেবিল আর একটা টুলও রাখা আছে দেখলাম। তবে লোকটা একটা কথা ঠিক বলেছিল। খাটটা আমাদের দুজনের শোয়ার পক্ষে সত্যিই খুব ছোটো। একজনের শোয়ার পক্ষে সেটা যথেষ্ট। কিন্তু দুজনকে পাশাপাশি শুতে গেলে, বেশ অনেকটাই কষ্ট আর সেই সাথে কসরত করতে হবে। যাই হোক, ভোর হতে তো আর মাত্র কয়েকটা ঘন্টা। যেমন করে হোক কষ্টেসৃষ্টে এই ক’টা ঘন্টা কাটিয়ে দেওয়া যাবে। আমি কাঁধের ব্যাগটা এককোনে রেখে দরজাটা ভিতর থেকে বন্ধ করে দিয়ে ঘুরে দেখি খাটে বসে স্বাতী কি যেন একমনে ভাবছে। আমি ওর দিকে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করল, “কি হল? কি ভাবছো? রুমটা পছন্দ হয়নি? চিন্তা কোরো না। কয়েক ঘন্টার তো ব্যাপার।” তারপর বললাম, “তুমি খাটে শুয়ে পড়ো।” স্বাতী এবার সামনের দিকে মুখ তুলে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করল, “আর তুমি?” আমি বললাম, “আমি নাহয় এই কয়েকটা ঘন্টা ওই টুলটায় বসে কাটিয়ে দেবো।” “যাঃ, তা আবার হয় নাকি তুমি সারারাত ওই টুলে বসে কাটাবে আর আমি বিছানায় শুয়ে ঘুমাবো?” “রাত আর কোথায়? এই তো মাত্র কয়েকটা ঘন্টা ও আমি বসে কাটিয়ে দেবো। তুমি বরং একটু ঘুমিয়ে নাও।” আমি ওকে বোঝাবার চেষ্টা করলাম। আমার কথা শুনে স্বাতী জোরে জোরে মাথা নেড়ে বলল, “না, না তা হয় না। তবে আমি সে কথা ভাবছিলাম না। অন্য একটা কথা চিন্তা করছিলাম। কথাটা আগে আমার মনে হয়নি। এখন মনে হচ্ছে।” আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “কি কথা?” স্বাতী বলল, “আসলে আজকেই বাড়ি ফিরে পড়বো বলে সঙ্গে পরার মতো আর কোনো কাপড় আনিনি। আর এই তাঁতের শাড়িটা পরে রাতে শুলে এমন লাট খেয়ে যাবে যে, কাল সকালে ওটা পরে বাইরে যাওয়া যাবেনা।” আমি ওর কথা শুনে এবার একটু চিন্তায় পরে গেলাম। কারন এই কথাটা আমিও তো ভেবে দেখিনি। আমার সঙ্গে ব্যাগ আছে, ঠিক কথা, কিন্তু তাতে কেবল বাড়ির জন্য কেনা টুকিটাকি জিনিসেই ভর্তি। এক্সট্রা কোনো জামা বা প্যান্ট আমার সাথেও নেই। আমি আবার রাতে জামা-প্যান্ট পরে শুতে পারি না। কেমন যেন অস্বস্তি লাগে। তবে আজ আমার কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। আমি তো আর আজ রাতে বিছানায় শোবো না। তাই জামাকাপড় খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা খুব একটা আমার নেই। তবুও আমি স্বাতীর দিকে তাকিয়ে বললাম, “ঠিক বলেছো তো এটা তো আমি ভাবিনি। আমিও রাতে প্যান্ট-শার্ট পরে শুই না আর আমার সঙ্গেও কোনো এক্সট্রা জামাকাপড়ও নেই। তাহলে কি করা যায়?” স্বাতী এবার একটু ভেবে নিয়ে বলল, “একটা উপায় আছে।” আমি বললাম ,“কি?” “তুমি আগে লাইটটা অফ করে দাও। তারপর তুমি জামা-প্যান্ট খুলে কেবল গেঞ্জি আর জাঙ্গিয়া পরে কম্বলের মধ্যে ঢুকে পড়ো। আর আমিও শাড়ি আর ব্লাউজটা খুলে কেবল সায়াটা পরে শুয়ে পড়বো তাহলেই হবে।” স্বাতী প্রায় একনিঃশ্বাসে আর এমন সহজভাবে কথাগুলো বলল, সেগুলো শুনলে মনেই হবে না, আমরা দুজনে মোটেও স্বামী-স্ত্রী নই নিছকই পরিচিত। একবার আমার মনে হল স্বাতী বুঝি আগের মতই আমার সাথে মজা করছে। কিন্তু ওর মুখ দেখে একবারও তা মনে হল না। বরং মনে হল স্বাতী মুখে যেটা বলছে, সেটাই করবে। ওর কথা শুনে আর মুখের ভাব দেখে আমার একটু লজ্জা লাগল। আমি বললাম, “যাঃ, তা আবার হয় নাকি! তা কি করে হবে! আমি তোমার সামনে জামা-প্যান্ট খুলে….না, না, ও আমি পারবো না।” স্বাতী এবার আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট টিপে মুচকি হেসে বলল, “যেটা আমার বলার কথা, সেটা তুমি বলছো।” তারপর গলায় জোর দিয়ে বলল, “আরে কিচ্ছু হবে না ঘরের আলো নেভানো থাকবে। আমরা একে অপরকে দেখতেই পাবো না। আর এঘরে আমরা ছাড়া আর তৃতীয় কেউ তো নেই যে আমাদের ঐ অবস্থায় দেখে ফেলবে। লজ্জা ছাড়ো, তাপসদা ঘরের আলোটা নিভিয়ে দাও তারপর জামাপ্যান্ট ছেড়ে কম্বলের তলায় ঢুকে পড়ো।” প্রথমে আমার স্বাতীর যুক্তি ভালো বলে মনে হল না। এ অসম্ভব আমি ওর সামনে কিভাবে জামা প্যান্ট ছেড়ে, শুধু গেঞ্জী আর জাঙ্গিয়া পরে রাতটা কাটাবো? তারপর একটু চিন্তা করে দেখলাম। স্বাতী কথাটা ঠিকই বলেছে। এখন তো এখানে কেউই নেই আমরা দুজন ছাড়া তাহলে আর লজ্জার কি আছে। ও যদি মেয়েমানুষ হয়ে একজন পরপুরুষের সামনে নিজের শাড়ি-ব্লাউজ খোলার কথা বলতে পারে, তাহলে আমিই বা এত কেন ভাববো? আর তাছাড়া ঘরের আলো তো নেভানোই থাকবে, তাই আমরা কেউ কাউকে দেখতে পাবো না। আমি এতসব ভাবছি হঠাৎ শরীরে স্বাতীর মৃদু ঠেলা অনুভব করলাম। স্বাতী আমার গায়ে ঠেলা দিয়ে বলল, “কি গো, তুমি সারারাত ভেবেই কাটাবে নাকি? তাহলে তাই করো। আমি তো বাবা শাড়ি-ব্লাউজ ছেড়ে চুল আঁচড়ে শুতে যাচ্ছি। তুমি বসে বসে ভেবে রাতটা কাটিয়ে দাও।” আমি তাড়াতাড়ি বললাম, “না, না তোমার কথাই ঠিক আমরা তাই করবো।” স্বাতী এবার তার স্বভাবসিদ্ধ ঠোঁটচাপা মুচকি হাসিটা হেসে বলল, “তাহলে তাড়াতাড়ি করো। অনেক রাত হয়ে গেছে।” আমি বললাম, “দাঁড়াও তার আগে একটা জিনিস চেক করে দেখে নিই” বলে ঘরের জানালাগুলোকে পরীক্ষা করে দেখতে লাগলাম, সেগুলো ঠিকঠাক বন্ধ আছে কিনা। হঠাৎ পিছন থেকে স্বাতীর খিলখিলে হাসি আমার কানে এল। পিছন ফিরে দেখি স্বাতী আমার দিকে তাকিয়ে খিলখিল করে হাসছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “কি হল ? হাসছো কেন?” স্বাতী একইরকমভাবে হাসতে হাসতে উত্তর দিল, “ওঃ তাপসদা, তুমি তো দেখছি মেয়েদের থেকেও বেশী লজ্জা পাও” বলে আবার হাসতে লাগল। ওর টিটকিরি শুনে আর হাসি দেখে আমি একইসাথে লজ্জিত আর অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম। কতকটা বোঝানোর সুরে বললাম, “না তা নয়। জানালা খোলা থাকলে কে জানি দেখে ফেলবে আমাদের।” স্বাতী এবার আরো জোরে হাসতে হাসতে বলল, “উফ, তুমি পারোও বটে। তুমি কি ভাবছো, এই শীতের রাতে আমাদের জানালার দিকে তাকিয়ে সবাই বসে রয়েছে?” তারপর বলল, “ঠিক আছে। তোমার যখন এতই লজ্জা, আমি তোমার দিকে পিছন ফিরে চোখ বুজে দাঁড়িয়ে রইলাম। তুমি তাড়াতাড়ি জামা-প্যান্টটা ছেড়ে বিছানায় কম্বলের তলায় ঢুকে যাও। আর একটু তাড়াতাড়ি করো, আমি বেশীক্ষণ এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবো না” বলে ও সত্যি সত্যিই আমার দিকে পিছন ফিরে ঘুরে দাঁড়াল। তারপর বলল, “চিন্তা কোরো না। আমি কিন্তু চোখ বুজে আছি। তোমাকে দেখতে পাচ্ছি না।” বলে আবার আগের মত খিলখিল করে হাসতে লাগল। আমি আর কিছু বললাম না তাড়াতাড়ি ঘরের আলোটা নিভিয়ে দিলাম। ভেবেছিলাম জানালা বন্ধ থাকলে ঘরটা অন্ধকার থাকবে। কিন্তু বাস্তবে তা হল না। ঘষা কাচের জানালা ভেদ করে বাইরের ম্লান আলো কিছুটা ঘরে ঢুকছিল। তাতে সবকিছু পরিষ্কার আর স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল না ঠিক কথা, কিন্তু আমাদের দুজনেরই একটা আবছা অবয়ব অবশ্যই দেখা এবং বোঝা যাচ্ছিল। হঠাৎ শুনি স্বাতী বলছে, “কি গো, তোমার হল? এবার চোখ খুলবো?” আমি তাড়াতাড়ি বললাম, “দাঁড়াও।” আমি আর বেশী কিছু চিন্তা না করে প্রথমে সোয়েটার, তারপর জামা-প্যান্ট দুটোই খুলে ফেললাম। সত্যি বলছি জামা-প্যান্টটা খুলতে আমার হাত বেশ কাঁপছিল। মনের মধ্যে একটা অস্বস্তিও হচ্ছিল। কিন্তু পরিস্থিতির কথা বিচার করে, আমি আর কিছু করতে পারতাম না সেই মুহুর্তে। কোনোরকমে কাঁপা কাঁপা হাতেই জামা, প্যান্ট আর গেঞ্জীটা খুলে ফেললাম। সেগুলোকে রুমের মেঝেতে এককোনে জড়ো করে রেখে, তাড়াতাড়ি বিছানায় উঠে কম্বলের তলায় ঢুকে পড়লাম তারপর বললাম, “হ্যাঁ, আমার হয়ে গেছে।”
Parent