দাদীর পরলোক গমন,আর আমার মাতৃভ্রমণ - অধ্যায় ১৪
২৯,৪,২০
বাবা,ফোন করেছিলেন আমায়,
বললেন, তোর মায়ের কি হয়েছে?
কাজের এতো চাপ তার উপর এমন করে কেনো?
আমি বললাম, সদ্য অসুখ থেকে উঠেছে তায় হয়তো!
অসুখ থেকে উঠেছে বলেকি মাথা কিনে নিয়েছে?
আমি কি সাধে এখানে পড়ে আছি নাকি?
সরকারের টাকা খাই তাই গোলামি করা লাগে ৷
বাবা কে আমি বোঝালাম,
বললাম, মায়ের সাথে কথা বলেনিতে,
কিন্তু বাবা বললেন, ইফতারের পর নাকি তিনি তাদের ইনচার্জের সাথে স্ট্রিং অপারেশনে থাকবেন, লোক যাতে লুকিয়ে শহরে প্রবেশ করতে না পারে,
অপারেশনের কেউই সাথে ফোন নিতে পারবেন না,সবার ফোন তার অফিস সহকারির কাছে রেখে যেতে হবে!
বাবা কথার এক পর্যাযে জিগাসা করলেন টাকা লাগবে কিনা ,আমি না বললাম,
কথার ইতিতে
বাবা ফোন কেটে দিলো!
বাড়ির গেটের ভেতরে ডুকতেই, দেখলাম মা ডালের বরা ভাজছেন,আর বেসন মেখে রেখেছেন বোগুনীর জন্যে,
আমি স্বভাব গত কদিনের মতো সুলভ ভাবেই হাত ধুয়ে মাকে সাহায্য করতে লাগলাম,
মায়ের পরনে আগেকার মতই সেলোয়ার আর গায়ে কামিজ তবে আগেকার হিজাবের রেখে মা ইদানিং উরনা পরছেন, তবে সেটা সালিন ভাবেই!
মা বললো,
কি দরকার, বেসনে হাত দেওয়ার
আজান দিয়ে দেবে আম্মু তাড়াতাড়ি হবে তোমারও কষ্ট কম হবে ৷
আমি হাত নেড়ে সরে যেতেই আমার হাত থেকে খানিক বেসন গিয়ে মায়ের গালের একপাশে লাগলো!
মা আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন,
কিন্তু আমি সাহসী ভঙ্গীতে হাত বাড়িয়ে মায়ের গাল মুছে দিলাম!
গলা থেকে গামছা দিয়ে আরেকবার মুখ মুছার সময় মা আর আমার মধ্যে যেনো একটা রহস্যময় চোখাচোখি হয়ে গেলো! মা ততখক্ষনাত নিজেকে সামলে নিলেন ৷
ইফতারের এবং মাগরিবের নামাজের পর,
কি মনে করে বাবাকে আবার ফোন দিতেই দেখি এক মহিলার গলা, হয়তো বাবার অফিসের কেউ, কিন্তু আমার মানের মধ্যে অন্য কিছু ছিলো,
আমি আরেকটা নাম্বার থেকে বাবাকে ফোন দিলাম,
হ্যালো,
—আচ্ছা কে আপনি
— আমি ফারহানা,তৌকির সাহেবের কলিগ?
—কলিগ মানে?
তৌকির সাহেব কি আরেকটা বিয়ে করলেন নাকি?
মেয়েটি অনেকটায় রেগে গেলো!
আমি ফোন কেটে দিলাম,
তারপর সোজা,
মায়ের রুমে গেলাম,
কি কিছু বলবি?
আম্মু আমায় দেখে বললেন ৷
হ্যা
আব্বু ফোন দিয়েছিলো!!
বলেছেন,মাগরিবের পর তাকে ফোন দিতে!
মা বললেন, তোর আব্বুর সাথে তুই কথা বল আমার দরকার নেই ৷
আম্মু এমন কেনো করেন?
কথা বললে কি হবে, আচ্ছা আমার ফোন থেকেই কল দিচ্ছি!
আমি কলদিয়ে স্পিকারে দিলাম,
ফোন রিসিভ করতেই,
মেয়েটি বলে উঠলো,
আরে কে আপনি, কত বার বলেছি আমি তৌকির সাহেবের স্ত্রী না!
" আমার যা দরকার ছিলো, একে বারে তাই বলছে মেয়েটা,
আম্মু আমার দিকে চেয়ে যেনো,স্তব্ধ হয়ে চেয়ে রইলেন!
তার পর আমার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নাম্বারটা দেখতেই ফোনটা তার হাত থেকে বিছানার উপর পড়ে গেলো!
আমি কিছু বলার আগেই আম্মু বলে উঠলো, দেখলি বাপের হয়ে সাফাই দিতে এসেছিলি,
আল্লাহ জানে আমার কপাল বুঝি পুড়লো, এ কপালে বুঝি সতীন এসে জুটলো,
আমি সুজোগটা নিলাম,
আম্মু মনে হয়না আব্বু এমটা করবেন, "আব্বু আপনাকে কতটা ভালোবাসে আপনি তো জানেনই "!
কথাটা একটু প্রহসনের মতো করে বলার পর আমি চলে আসলাম ৷
ভোর রাতে সেহেরীর জন্যে মা জাগাতে এসেছেন,
উঠার পর টেবিলে খেতে বসলে মা বলে বাবার সাথে তার কথা হয়েছে!
আমার তো তাতে অবস্থা খারাপ হয়ে গেলো,কিন্তু মা য়ের কুচুমুচু ভাব দেখে বুঝতে পারলাম বাবার কথায় মা মোটেও আসস্থ হয়নি ৷
তাই আমিই বলে উঠলাম,
নিশ্চই আমার আব্বু বলে দিয়েছে বিয়ে টিয়ে এসবি মিথ্যে ৷
আমি জানতাম, আব্বু সত্যিটাই বলবে,
চোর দের মতো অফিস কলিগ হেন তেন বলার মনুষ আমার বাবা নয়!
মায়ের মুখ শুকনো হয়ে গেলো,
ভাতের লোকমা যেনো গিলতে পারছেন না,
আমি বললাম কি হয়েছে আম্মু, তিনি বললেন,
তোর আব্বু বলেছেন মেয়েটি তার কলিগ ছিলো!
আমি অবাক হওয়ার ভান করে নিরবে ভাত গিলতে লাগলাম ৷