গোধূলি আলো'র গল্পগুচ্ছ - অধ্যায় ৭৯

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-62343-post-5834877.html#pid5834877

🕰️ Posted on December 22, 2024 by ✍️ Godhuli Alo (Profile)

🏷️ Tags:
📖 461 words / 2 min read

Parent
বাবার মৃত্যুর শোক কাটতে বেশ সময় লাগলো। বিশেষ করে মা এই জন্য নিজেকে দায়ী ভেবে নাওয়া-খাওয়া ছাড়লেন। কারো সাথে বিশেষ করে আমার সাথে আর কথাই বললেন না। আমার নিজের ভেতর‌ও অনুশোচনা আসলো তাই আমিও একেবারে চুপ হয়ে গেলাম। ঘরের ভেতর টুকটাক কথাবার্তা যা হতো তা মিতি, তিথি আর রিদমের ভেতরেই। মিতির মাধ্যমে তিথিও জেনে গিয়েছিল বাবার মৃত্যুর কারণ। বোনদের চোখের দিকে তাকাতেও সংকোচ হতো। কিন্তু এভাবে তো আর চলতে পারে না। আমাদের তো সামনে আগাতে হবে। বাবার অবর্তমানে আমিই এখন বাড়ির কর্তা। সামনে কী কর্তব্য তাই নিয়ে আলাপ করতে একদিন মায়ের ঘরে গেলাম। আমাকে দেখেই তিনি মুখ গোমড়া করে বসে র‌ইলেন। আমি তার খাটের একপাশে বসে বললাম, এভাবে ভেঙে পড়লে চলবে? আমাদের তো সামনে আগাতে হবে। জবাবে মা বললেন না কিছুই। তেমনি চুপ করে র‌ইলেন। আমি এবার একটু উঁচু স্বরে বললাম, বললে না যে কিছু? মা এবার মুখ ঝামটা দিয়ে বললেন, জানি না আমি কিছু। আমি এবার স্নিগ্ধ কন্ঠে বললাম, যে চলে গেছে সে তো আর ফিরবে না। কিন্তু যারা আছে, যে আসছে তার কথা তো ভাবতে হবে। মা এবার উন্মাদের মতো বললেন, যে আসছে তার জন্মের সাথে সাথেই গলা টিপে মারবো আমি। আমি এবার হাল ছেড়ে বললাম, তুমি পাগল হয়ে গেছো। ঠিক হতে আরো সময় লাগবে। ততদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করবো আমি। মায়ের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাচ্ছিলাম না তাই আমিও নীরব র‌ইলাম। কিন্তু বাড়িওয়ালা যখন বাড়ি ভাড়ার জন্য তাগাদা দিয়ে গেলেন তখন মা সম্বিৎ ফিরে পেয়ে নিজেই এলেন আমার কাছে। মুখ নিচু করে বললেন, বাড়িওয়ালা এসে ভাড়া চেয়ে গেছে। তোমার বাবার সেভিংস থেকে টাকাটা তুলে দিয়ে এসো এক সময়।  আমি মৃদু হেসে বললাম, এই মাসে না হয় সেভিংস থেকে তুলে ভাড়া দিলাম। কিন্তু সামনের মাসগুলোতে কী এভাবেই চলবে? এভাবে কতো দিন চলা যাবে? মা বললেন, সেটা আমি ভেবে রেখেছি। সাভারে তোমার বাবার যে জমি আছে ওটা বিক্রি করে টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে উঠবো সবাই। আমি মৃদু হেসে বললাম, খুব সুন্দর চিন্তা। কিন্তু সেই অজ পাড়াগাঁয়ে কি মানিয়ে নিতে পারবো আমরা? মা বললেন, দুর্দিনে সব কিছুই পারতে হয়।  আমি বললাম, না। আমি অন্য কিছু ভেবে রেখেছি। মা এবার জিজ্ঞাসু নয়নে সরাসরি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, কী? আমি বললাম, জমি বিক্রি করে ফিক্সড ডিপোজিট করবো, ঠিক আছে। কিন্তু গ্রামের বাড়িতে যাবো না। কোনো মফস্বল শহরে গিয়ে উঠবো। আমি জবে ঢুকে যাবো। তাহলে চলতে আর সমস্যা হবে না।  মা অস্থির হয়ে বললেন, সে কী? পড়াশোনা আর করবে না? আমি নির্লিপ্ত গলায় বললাম, কি হবে এতো পড়াশোনা করে? সেই চাকরিই তো করতে হবে। সেটা আগেভাগেই শুরু করলে উন্নতিও তাড়াতাড়ি করা যাবে। মা কিছু সময় চুপ থেকে বললেন, আচ্ছা। যা ভালো বোঝো। আমি এবার বললাম, কিন্তু তোমার নিজেকে চেন্জ করতে হবে অনেকটাই। এভাবে মনমরা হয়ে বিধবার বেশ ধরে থাকলে চলবে না। কারণ নতুন জায়গায় আমাদের দুজনার পরিচয় হবে স্বামী-স্ত্রী। মিতি, তিথি, রিদম আমার ভাই-বোন আর যে আসছে সে আমাদের দুজনার সন্তান।  মা চরম বিস্ময়ে প্রায় আর্তনাদ করে বললেন, কী বলছ এসব?
Parent