গ্রামের অসহ্য বুড়া মেহমান রতন - অধ্যায় ১৩
পর্ব ২৩
সকালবেলা ঘরজুড়ে এক ধরনের উৎসবমুখর পরিবেশ। সবাই ভোরেই উঠে রেডি হয়ে গেছে। আয়েশার মুখে আনন্দের ঝিলিক—আজ সে প্রথমবার সিয়ামের সাথে দূরে কোথাও যাবে।নতুন জায়গা, নতুন অভিজ্ঞতা—ভাবতেই বুকের ভেতরটা নেচে উঠছে।
যদি সে জানত সে সিয়ামের গ্রামের বাড়ি যাবে, যেখানে রতন উপস্থিত, সে কখনো যেতোই না বা একটা গুলি নিয়ে যেত রতন কে মারার জন্য।
গাড়ি আসবে বলে আগেই বুক করা হয়েছিল উবারে। সময়মতোই মোবাইলে নোটিফিকেশন এল—ড্রাইভার এসে পৌঁছে গেছে নিচে।
সিয়াম: (ঘড়ির দিকে তাকিয়ে) ঠিক আছে, সবাই রেডি তো? দেরি না করে নামি। সকালে যাত্রা না শুরু করলে ট্রাফিকের ভিড়ে আটকে পড়ব।
তারা সবাই দরজা তালা দিয়ে নেমে এল নিচে। সাদা রঙের একটি পাঁচ সিটের গাড়ি দাঁড়িয়ে। ড্রাইভার নেমে ভদ্রভাবে দরজা খুলে দিল।
সামনের সিটে ড্রাইভারের পাশে বসল সিয়াম।
দ্বিতীয় সারির বাম দিকে বসল আয়েশা, আর পাশে রেহানা (সিয়ামের মা)।
গাড়ির পিছনে কিছু লাগেজ রাখা হলো।
আয়েশা চারপাশে তাকিয়ে হাসিমুখে বলল—
আয়েশা: (চোখ মেলে) আহ! আজকে আমি কত খুশি। অবশেষে বের হতে পারছি।
রেহানা মায়ের মমতায় ভরা দৃষ্টি ফেলে তার দিকে তাকালেন।
রেহানা: (স্নেহভরা হাসি) কি মা, আজ তোকে দেখছি খুব খুশি মনে হচ্ছে।
আয়েশা উচ্ছ্বাসে চিৎকার করে উঠল—
আয়েশা: হ্যাঁ মা, আজ আমি ভীষণ খুশি!
রেহানা কান চেপে ধরে মজা করে বললেন—
রেহানা: আরে বাবা! আমার কানের পর্দাই ছিঁড়ে যাবে এমন জোরে বলছিস কেন?
সবাই হেসে উঠল গাড়ির ভেতর।
আয়েশা: আচ্ছা আম্মা, আমরা আসলে কোথায় যাচ্ছি? গ্রামের কেমন দৃশ্য দেখতে পাবো?
রেহানা ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি এনে উত্তর দিলেন—
রেহানা: তা সব তোকে নিজ চোখে দেখতে হবে। শুধু বলব, এমন কোনো জায়গা যে অঞ্চল্টা স্বর্গের মতো। সবুজ ধানক্ষেত, পুকুর, গাছগাছালি—দেখে তুই অবাক হয়ে যাবি।
গাড়ি তখন মসৃণভাবে রাস্তা পেরিয়ে যাচ্ছিল। জানালার কাঁচে সকালের আলো খেলা করছে। আয়েশা জানালার বাইরে তাকিয়ে শহরের ভিড় ঠাসা রাস্তা আর দ্রুত চলা মানুষের দিকে তাকিয়ে ভাবছিল—“শহরের এই কোলাহল থেকে মুক্তি পেয়ে শান্ত গ্রামের মাটিতে হাঁটব, কেমন লাগবে তা কল্পনা করতেই বুক ধড়ফড় করছে।”
ঠিক তখনই সিয়ামের মোবাইল বেজে উঠল। অপরিচিত নাম্বার নয়, তার অফিসের বসের কল। সিয়াম ফোন ধরল।
সিয়াম: (মনোযোগ দিয়ে শোনে, তারপর গম্ভীর স্বরে) আচ্ছা, আমি আসছি। আপনি চিন্তা করবেন না।
কল শেষ হতেই সে ড্রাইভারকে বলল—
সিয়াম: ভাই, গাড়িটা একটু সাইডে দেন।
গাড়ি থামতেই সিয়াম পেছনে ফিরে তাকাল।
সিয়াম: মা, আয়েশা—তোমরা দুজন একা গ্রামে চলে যাও। হঠাৎ খবর পেলাম, আমার বস অসুস্থ হয়ে গেছেন। আজ তার গুরুত্বপূর্ণ মিটিং ছিল, কিন্তু তিনি যেতে পারবেন না। আমাকে তার হয়ে যেতে হবে।
রেহানার মুখ গম্ভীর হয়ে গেল।
রেহানা: (কষ্ট মেশানো কণ্ঠে) তুই ছাড়া আমরা যাবো কিভাবে?
সিয়াম: চিন্তা করো না মা। আমি ওখানে ফোন দিয়ে আগেই খবর পাঠিয়ে রাখব। গ্রামে পৌঁছালে তারা গাড়ি থেকে নামতে সাহায্য করবে, লাগেজ ঠিক করবে। আমি সন্ধ্যা বা রাতের ভেতরেই চলে আসব।
আয়েশার চোখে জল ভরে উঠল।
আয়েশা: (কণ্ঠ ভারী) না সিয়াম, তুমি না গেলে, আমার কী মজা হবে? আমি তো চেয়েছিলাম তুমি আমার সঙ্গে প্রতিটি জায়গায় ঘুরে দেখাবে।
সিয়াম আয়েশার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল—
সিয়াম: (আবেগ নিয়ে) তুমি কি জানো, তোমার হাসিই আমার সব থেকে বড় প্রাপ্তি? তুমি খুশি থাকলেই আমি শান্তি পাই। তাই দয়া করে আমার জন্য মন খারাপ করো না। আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মিটিং শেষ করে তোমাদের কাছে ছুটে আসব। তুমি শুধু মাকে সঙ্গ দাও,
মায়ের দিকে ফিরে সিয়াম- আমার পিচ্চি বউ টার খেয়াল রেখ মা।
রেহানা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন—
রেহানা: আচ্ছা বাবা, যদি তুই এতটা জোর দিচ্ছিস, তবে আমরা যাব। তবে দ্রুত যেন চলে আসিস। অপরিচিত যাত্রা তোর ছাড়া অপূর্ণ থেকে যাবে। আর এরকম জায়গা মেয়ে মানুষের জন্য ভয়ংকর বটে।
সিয়াম মাথা নেড়ে সম্মতি দিল।
সিয়াম: অবশ্যই মা। আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, তোমরা পৌঁছানোর আগেই আমি রওনা হবো।
সিয়াম নেমে যায়, আয়েশা চেয়ে থাকে তার প্রান প্রিয় স্বামীর দিকে।
গাড়ি আবার চলতে শুরু করল, কিন্তু ভেতরে অদ্ভুত এক আবেগ খেলে গেল। একদিকে আনন্দ, অন্যদিকে সিয়ামকে রেখে যেতে হবে বলে খানিকটা দুঃখ। তবে প্রত্যেকের মনে একটা বিশ্বাস রয়ে গেল—শেষ পর্যন্ত এই যাত্রা সবার জন্য স্মরণীয় হয়ে উঠবেই।
পর্ব ২৪
বিকেলের নরম আলো তখন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। গ্রামীণ বাতাসে ধানক্ষেতের গন্ধ, দূরে কোথাও মেঘ জমে আছে। উবার গাড়িটি ধীরে ধীরে নির্ধারিত ঠিকানায় এসে দাঁড়াল। ড্রাইভার ব্যাগগুলো নামিয়ে দিয়ে ভদ্রভাবে মাথা নত করে বিদায় নিল। যেহেতু সিয়াম আগেই ভাড়া পরিশোধ করে রেখেছিল, তাই আর কোনো ঝামেলা রইল না।
রেহানা মোবাইল বের করে ছেলের নাম্বারে কল করলেন।
রেহানা: (চিন্তিত কন্ঠে) বাবা, আমরা পৌঁছে গেছি। চিন্তা করিস না।
অপর প্রান্ত থেকে সিয়ামের কণ্ঠ শোনা গেল, কিছুটা ব্যস্ত গলায়—
সিয়াম: হ্যাঁ মা, আমি তো ফোন দিয়েছি। ও চলে আসবে তোমাদের নিতে। তবে শুনলাম ক্ষেতে আজ সার দেওয়া হয়েছে, তাই সামান্য দেরি হতে পারে। তোমরা একটু অপেক্ষা করো। চিন্তা করো না, সব ঠিক আছে।
ফোন রেখে রেহানা হালকা নিঃশ্বাস ফেললেন। তখনই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আয়েশা অস্থির স্বরে বলল—
আয়েশা: মা, আর কতক্ষণ অপেক্ষা করব? আমি তো ভেবেছিলাম নামার পরই আমাদের নিতে আসবে।
রেহানা: (শান্তভাবে) এই তো মা, আসবেই। গ্রামে সময় শহরের মতো চলে না, একটু দেরি হতেই পারে।
আয়েশা তখন চোখ ঘুরিয়ে হঠাৎ সামনে তাকাল। সামান্য উঁচুতে—প্রায় বিশটা সিঁড়ি উঠে—একটি বিশাল বৃক্ষ দাঁড়িয়ে আছে। তার চারপাশে ভিড়, মানুষজন পুজো দিচ্ছে। গাছের ডালে ডালে অসংখ্য কাপড়ের ফিতা, সুতা, আর ছোট ছোট কাগজ ঝুলছে। যেন অদৃশ্য স্বপ্নগুলো বাতাসে দুলছে।
আয়েশার চোখ চকচক করে উঠল।
আয়েশা: (উচ্ছ্বাসভরে) মা, দেখেন না! কত সুন্দর গাছ! সবাই কীভাবে সুতা বেঁধে স্বপ্ন লিখছে। চলুন না উপরে গিয়ে একটু দেখে আসি।
রেহানা একটু ভ্রু কুঁচকালেন।
রেহানা: (সতর্ক সুরে) না রে মা, থাক। মানুষ কি করছে কে জানে। এসবের পেছনে না যাওয়াই ভালো।
কিন্তু আয়েশা যে সহজে হাল ছাড়ার মেয়ে নয়। শৈশব থেকে তার স্বভাবই এমন—কিছু দেখলে জানতেই হবে, ছুঁয়েই আসতে হবে। মুখে একরকম জিদ নিয়ে বলল—
আয়েশা: (ঠোঁট ফুলিয়ে) আরে মা, একবার গেলে ক্ষতি কী? আমি একটু কাছে থেকে দেখতে চাই।
রেহানা মাথা নেড়ে নিরুপায় ভঙ্গিতে তাকালেন।
রেহানা: তুই না জেদি মেয়ে! আচ্ছা, তবে চল। ব্যাগগুলো এক পাশে রেখে দিই।
দুজনেই ব্যাগ সাইডে রাখল, তারপর ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগল। প্রতিটি ধাপে এক অজানা কৌতূহল, এক অচেনা আকর্ষণ টেনে নিচ্ছিল তাদের।
উপরে গিয়ে গাছের নিচে দাঁড়াতেই আয়েশার চোখ বিস্ময়ে বড় হয়ে গেল। বাতাসে ডালে দুলছে হাজারো রঙিন ফিতা আর সুতোর টুকরো। পাখিরা চেঁচামেচি করছে, কারও লেখা নাম, কারও স্বপ্ন, কারও অদৃশ্য প্রার্থনা সব মিশে এক অদ্ভুত দৃশ্য। যেন প্রকৃতি নিজেই মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষা আঁকড়ে ধরে রেখেছে।
আয়েশা: (মুগ্ধ হয়ে) মা, আমি কি একটা সুতা বাঁধতে পারি?
রেহানা: (অবাক হয়ে) সুতা? কিসের সুতা?
আয়েশা: এই যে মা, সবাই তো এখানে সুতা বেঁধেছে। হয়তো এটা কোনো বিশ্বাস।
রেহানা: না রে মা, কি জানি কি এগুলো, যদি ক্ষতি হয় কোনো।
আয়েশা:কেউ হয়তো স্বপ্ন পূরণের জন্য করেছে। আমি শুধু মজার ছলে একটা বেঁধে দেব।
আয়েশার জেদের কাছে হার ত মানেই রেহানা।
রেহানা: আচ্ছা দে তুই।
গাছটার কাছে ভিড় ক্রমশ বাড়ছে। মন্দিরের সিঁড়ির কোণে বসে আছেন এক বৃদ্ধ। সামনে ছোট একটা বাক্স, তার ভেতরে রাখা তিন রঙের সুতা—লাল, নীল আর সবুজ। মানুষজন আসছে, কিনছে, আবার গাছে বেঁধে যাচ্ছে।
আয়েশার চোখ পড়তেই কৌতূহল জাগল।
আয়েশা: (হেসে) এই যে দাদু, আমাকে একটা সুতা দেবেন?
বৃদ্ধ তার দিকে তাকালেন, চোখে বয়সের ভাঁজ, কিন্তু কণ্ঠ দৃঢ়।
বৃদ্ধ: কোন রঙের সুতা নেবেন আপনি? লাল, নীল না সবুজ?
আয়েশা কয়েক মুহূর্ত ভেবে বলল—
আয়েশা: লালটা সুন্দর লাগছে, আমাকে লাল সুতাটাই দিন।
বৃদ্ধ ধীরে সুতা বাড়িয়ে দিলেন।
বৃদ্ধ: এই নিন মা।
আয়েশা যেন আনন্দে ছোট বাচ্চার মতো উজ্জ্বল হয়ে উঠল। হাতে লাল সুতা পেয়ে তার মুখে খুশির ঝিলিক ছড়িয়ে পড়ল।
রেহানা: (মৃদু হাসি দিয়ে) কত টাকা আংকেল?
বৃদ্ধ: (শান্ত কণ্ঠে) মাত্র দশ টাকা।
রেহানা টাকাটা দিয়ে দিলেন। তারপর আয়েশার দিকে তাকিয়ে মজা করে বললেন—
রেহানা: এবার খুশি তো তুমি?
আয়েশা উচ্ছ্বাসে শাশুড়ির গালে একটা চুমু খেলো।
আয়েশা: হ্যাঁ মা, ভীষণ খুশি।
রেহানা লজ্জায় চারপাশে তাকিয়ে এক হালকা আদরের চাপড় দিলেন—
রেহানা: পাগল মেয়ে! সবাই দেখছে।
আয়েশা হেসে উঠল, খুনসুটি ভরা গলায় বলল—
আয়েশা: দেখলে কী হয়েছে? আমি কি আমার শাশুড়িকে চুমু দিতে পারব না? ওই যে সিনেমায় বলে না—"তুমি আমার মাল।"
রেহানা কপাল চাপড়ালেন।
রেহানা: ধুর! তুই কি এখনো বাচ্চা? তুই ঘরের বউ, এসব আর মানায় নাকি?
কিন্তু আয়েশা কারও কথা শোনার পাত্রী নয়। লাল সুতাটা হাতে নিয়ে সে যেন নাচতে নাচতে গাছের কাছে গেল। হাওয়ায় তার ওড়না দুলছে, চোখে অদ্ভুত এক উচ্ছ্বাস। গাছের এক ডালে সুতা বেঁধে সে নিঃশব্দে মনে মনে প্রার্থনা করল—
আয়েশা (নিয়ত করে): হে A****h, আমার স্বামীর দীর্ঘায়ু দাও, তার সফলতা এনে দাও।
ঠিক সেই মুহূর্তে ভিড়ের ভেতর থেকে এক পুরোহিত বেরিয়ে এলেন। গায়ে গেরুয়া পোশাক, হাতে ধূপদানি। তিনি তীব্র ভঙ্গিতে আগুন জ্বলা ধূপ মাথার চারপাশে ঘোরাতে ঘোরাতে সামনে এসে দাঁড়ালেন।
রেহানা খানিকটা আঁতকে উঠলেন।
রেহানা: (মনে মনে) এ কী হলো?
পুরোহিত গম্ভীর গলায় বললেন—
পুরোহিত: (কড়াভাবে) কন্যা, আপনার হবু স্বামীকে ডাকুন।
আয়েশা হকচকিয়ে গেল।
আয়েশা: (বিস্ময়ে) হবু স্বামী? আমি কিছুই বুঝলাম না।
পুরোহিত চোখ লাল করে গর্জে উঠলেন—
পুরোহিত: বুঝলেন না মানে? আপনি তো সবে লাল সুতা গাছে বেঁধেছেন। এই মন্দিরে লাল সুতা বাঁধা মানে একটাই—এখানে বিয়ের অঙ্গীকার করা।
আয়েশা ভয়ের চোখে পুরোহিতের দিকে তাকাল।
আয়েশা: (ভয়ার্ত কণ্ঠে) আমি তো জানতামই না আমি শুধু মজার ছলে করলাম।
রেহানার মাথায় হাত, একি করল তার ছেলের বৌ!
রেহানা স্তব্ধ, কিছু বলতে পারছেন না।
পুরোহিতের কণ্ঠ আরও তীব্র হলো।
পুরোহিত: জানতেন না মানে? পবিত্র স্থান নিয়ে এভাবে মজা করা যায় নাকি? আপনি আমাদের দেবতার সঙ্গে উপহাস করেছেন!
এবার চারপাশের সব লোক থমকে তাকাতে লাগল। চোখে কৌতূহল, কারও চোখে রাগ। ফিসফিসানি শুরু হলো—
"কি করেছে ও মেয়ে?"
"এ যে বড় অন্যায়…"
আয়েশার বুক কেঁপে উঠল। তার চোখে জল এসে গেল।
আয়েশা: (কাঁপা গলায়) আমি সত্যি জানতাম না… আমি শুধু… আমি শুধু আমার স্বামীর জন্য প্রার্থনা করেছিলাম।
কিন্তু ভিড়ের চোখে তখন বিস্ময় আর সন্দেহ, যেন চারদিক থেকে আয়েশাকে অচেনা এক বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হলো।
আয়েশাকে চরম শাস্তি দেয়ার জন্য বলল সবাই।
অন্য এক পুরোহিত আসল এবং বলল- ওর চুল কেটে নেড়ে করে দাও, এটাই হবে ওর শাস্তি।
আয়েশা কান্না করে বলে- মাফ করুন, আমি জানতাম না। মা আমি কিছু বুঝছি না।
রেহানা- আরে ওকে মাফ করেন ছোট মানুষ।
হাতে খুড় নিয়ে আয়েশার চুলের মুঠি ধরবে পুরোহিত, এরই মধ্যে পুরোহিতে হাত ধরে ফেলল এক লোক।
লোক- আরে আমার হবু বৌ এর চুল ধরবেন। তা ধম্মে সইবে না।
রেহানা- লোকটার দিকে তাকালে দেখে এটা আর কেও না, এটা রতন।
আয়েশা ভয়ে চোখ বন্ধ করে কাঁদছিল।চোখ খুলে দেখে এটা রতন, সেই রতন যে তাকে জোর করে রেইপ করতে চেয়েছিল। এই সেই রতন যে কিনা তাকে জোর করে কিস করেছিল। এই সেই রতন যাকে পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে সে কিস করেছে। সেই রতন যাকে সে মারতে চায়, যদি আবার দেখা হয়।
রতন কে গ্রামের সবাই চিনে। সম্মানের চোখেই দেখে ভন্ড টাকে।
পুরোহিত- এ কি করছ রতন? তুমি আমার হাত কেন ধরেছ?
রতন- আমার হবু বৌ এর চুল কাটবেন, আর আমি দেখুম নাকি দাঁড়াই দাঁড়াই?
পুরোহিত- কিন্তু ও ত বলেছ….
পুরোহিতের কানে কানে রতন- আরে ওর ত একটু মাথায় সমস্যা আছে। খুব জলদি ভুলে যায়। এটাও ভুলে গেছে আমি যে ওর হবু বর।
পুরোহিত – কিন্তু ওর বয়স ত তোমার মেয়ের বয়সের চেয়েও কম। আর ও সুন্দর অনেক…
রতন(কানে কানে)- আরো বেজ্জতি করেন আমারে। ধম্মে কই আছে স্বামী স্ত্রীর বয়সের পার্থক্য বেশি থাকা যাবে না?
পুরোহিত- সত্যিই ত বলেছে। কিন্তু…
রতন পুরোহিতকে ৫০০ টাকা দিয়ে- আপনি বিয়ের ব্যবস্থা করেন এত কিন্তু কিন্তু কি?
এরপর রতন রেহানার দিকে তাকিয়ে- ভাবি এদিকে আসেন।
রেহানাকে একটু দূরে নিয়ে।
রেহানা( একটু ভয়ে কিন্তু রতন কে দেখে আশায়)- রতন, কি হলো রে ? বিপদ কি কেটে গেছে?
রতন- আরে না ভাবি? যে ভুল আয়েশা করছে তার শাস্তি গ্রাম বাসী কঠিন দিবে।
রেহানা(অবাক কন্ঠে)- তবে উপায়?
- উপায় একটা আছে।
- কি উপায় রতন?
- আয়েশাকে বিয়ে করতে হবে আমার।
- কি বলিস এগুলো।
- হ্যাঁ ভাবি, না হিয় মাথা নেড়ে ওকে সারা গ্রামে নাক দিয়ে ক্ষত দেয়াবে।
রেহানা আয়েশার মত এরকম চটপটে ছেলের বৌ কে চোখের সামনে অপমান হতে দেখতে পারবে না, আয়েশাকে ত সে নিজের মেয়েই ভাবে।
রতন রেহানার চিন্তিত মুখ দেখে- আরে চিন্তা করেন কেন ভাবি, ও আমাদের সিয়ামের বউ। সিয়ামের বউ ই থাকবে। আমি শুধু সবাইকে দেখানোর জন্য বিয়ে করব।
নিরুপায় হয়ে রেহানা- তুই যা ভালো বুঝিস কর, কিন্তু সিয়াম জানে না যেন।
রতন- আরে না, জানবে না। আপনি আয়েশা কে মানান। আমি গিয়ে পুরোহিত দের বিয়ের আয়োজনে সাহায্য করি।
রতনের ত মনে মনে খুশির ঢেউ বইছে, যে অহংকারী মেয়ে তাকে অপমান করেছিল একদিন। সে আর কিছুক্ষণের মধ্যে বৌ হবে।
আয়েশাকে কাছে ডেকে রেহানা মাথায় হাত ঘুড়ায়। আর বলে- মা রে, যা হয়েছে ভুলে হয়েছে কিছু করার নাই মা।
আয়েশাও কাঁদতে থাকে। রেহানাকে জড়াই ধরে। রেহানা আয়েশা র মাথা ধরে আদর করে।
রেহানা- মা আমার একটা কথা রাখবি?
আয়েশা(ক্রন্দন আওয়াজে)- কি কথা মা?
- রতনকে বিয়ে কর আজ।
- কি বলেন মা, ছি:। এর চেয়ে ভালো আমি নেড়া হব।
- নারে মা। আমি তা দেখতে পারব না, এটা হলে আমি আত্মহত্যা করব।
জোরে করে রেহানাকে জড়িয়ে ধরে আয়েশা- না মা কি বলেন।
আয়েশা কে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে- এটা শুধুই অভিনয়। আর কিছুই না।
আয়েশা জানে রতন কি পরিমান মাদারফাকার। কিন্তু তার মায়ের মত শ্বাশুড়ি কে বাঁচাতে উপায় খুঁজে পায় না।
কিছু সময় পর….(সন্ধ্যা বেলা)
অগ্নি স্বাক্ষী রেখে সবার সামনে রেখে সাত পাকে ঘুরছে রতন আর আয়েশা। সবাই ফুল ছিটিয়ে দিচ্ছে। আয়েশা কাঁদছে আর হাটছে। সে অনেক চাপে আছে। সে না হাটলে গ্রামের মানুষ ছিড়ে খাবে তাকে। লাশটাও পাওয়া যাবে না। তাও নিজের জন্য না রেহানার জন্য এ বিয়ে করছে।
রেহানা এ বিয়ে দেখতে পারবে না, তাই সে সিড়িতে বসে কান্না করছে। তাকিয়ে থাকে রাস্তার দিকে। সবার কথা শুনে,রতনের কি সুন্দর বউ, রতন ত জিতে গেল। কিন্তু রেহানা জানে এটা ত তার ছেলের বউ, রতনের বউ না। ভাবে আর কান্না করে।
অবশেষে শেষ হয় সাত পাক। যে বন্ধন তৈরি হলো, রতন আর আয়েশার এটা সাত জন্মের।
পুরোহিত- শেষ হলো এ বিয়ে। রতন অগ্নিস্বাক্ষী করে বিয়ে করল রেহানার কন্যা আয়েশাকে।( পুরোহিতকে রতন বলেছে রেহানার মেয়ে আয়েশা, বাবা মৃত)
আয়েশার ঘৃণা আর লজ্জায় নিজের উপর রাগ লাগছে। আর সহ্য হয় না তার অপমান। রতনের সাথে বিয়ে তার জন্য যেন জঘন্য অপমান বাদে আর কিছু না। তার শরীর আর শক্তি পায় না। হটাৎ ই মাথা ঘুরে অজ্ঞান হয়ে যায় আয়েশা, জলদি করে রতন তাকে ধরে ফেলে।