গৃহবধূ : বাড়ির রক্ষাকর্ত্রী - অধ্যায় ৪
পর্ব ৯
রাত প্রায় আড়াইটা বাজে। বাসার চারপাশ নিস্তব্ধ। মাঝে মাঝে দূরে কোনো কুকুরের ডাক শোনা যাচ্ছে। রিয়া হালকা নড়েচড়ে উঠে দেখে রাতুল গভীর ঘুমে। তার বুকের ওপর এক হাত ছড়িয়ে রেখেছে। রিয়ার শ্বাস কিছুটা ভারী লাগছিল, গরমে যেন ঘরে বাতাস কম।
সে ধীরে ধীরে রাতুলের হাত সরিয়ে উঠে বসে। চাদরটা কাঁধ থেকে সরিয়ে পা মেঝেতে রাখে। পায়ের পাতায় ঠান্ডা টাইলসের ছোঁয়া লাগতেই কেমন শিহরণ জাগে। সে আলতো পায়ে দরজা ঠেলে বারান্দায় চলে আসে।
বারান্দায় পা রাখতেই একটা ঠান্ডা হাওয়া মুখে এসে লাগে। সে একটু গভীর শ্বাস নিল। চারপাশে আধো অন্ধকার, রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের আলো কেবল সামনের গলিটা ছুঁয়ে যাচ্ছে।
হঠাৎ নিচতলার গেটের পাশে দুইটা অবয়ব চোখে পড়ে। রিয়া খানিকটা ঝুঁকে দেখে—
একজন হরিশ, আরেকজন অচেনা লোক। ওই অপরিচিত লোকটার মাথায় টুপি, গায়ের ওপর গাঢ় রঙের জ্যাকেট। তারা নিচু স্বরে কথা বলছে।
রিয়া মনোযোগ দিয়ে শোনার চেষ্টা করলেও স্পষ্ট শুনতে পেল না, কেবল কিছু শব্দ—
"আজ ধরা পরতে পরতে বেঁচে গেছি... সাবধানে কাজ করতে হবে..."
দেখে সে অবাক হয়ে গেল—হরিশ একটা ছোট কাপড়ের পোটলা সেই লোকটার হাতে দিল। লোকটা দ্রুত সেটা জ্যাকেটের ভেতর ঢুকিয়ে নিল।
রিয়ার মনে কেমন অস্বস্তি হলো। "এতো রাতে গোপনে কেন? আর এই পোটলায় কী থাকতে পারে?"—মনে মনে ভাবল সে।
লোকটা দ্রুত চলে গেল, হরিশ চারপাশে তাকিয়ে গেটের তালা লাগিয়ে ভিতরে ঢুকে পড়ল। রিয়া বারান্দা থেকে সরে এসে ভেতরে চলে যায়, যেন কিছুই দেখেনি। কিন্তু ঘুম আর আসে না।
পরদিন সকালে, বাসার ভেতর চেনা ব্যস্ততা। নাজমা বেগম সোফায় বসে আছেন সেলাই করছেন, রঙিন কাপড়ের কাজ করছেন।
লতা রান্নাঘর থেকে এসে বসার ঘরে ঢোকে।
লতা: "বৌমা, এই চায়ের কাপটা শাশুড়ি মায়ের কাছে দিয়ে আসেন তো, আমি আলু ভাজি দেখি।"
রিয়া: "ঠিক আছে, দিচ্ছি।"
রিয়া চা দিয়ে বসে গেল শাশুড়ির পাশে।
নাজমা বেগম: "রাতুলের শার্টগুলো কাল ইস্ত্রি হয়ে গেছিল তো?"
রিয়া: "হ্যাঁ মা, হয়ে গেছে।"
এ সময় লতা বসে আলতো করে কথা শুরু করল।
লতা: "এই বেগম, কাল রাতে আবার বাতাস কেমন ঠান্ডা ছিল না? জানালা দিয়ে ঢুকছিল..."
নাজমা বেগম: "হুম, গরমে ভালোই লাগছিল।"
রিয়া: (হালকা হাসি দিয়ে) "আমিও রাতে বারান্দায় গিয়েছিলাম।"
লতা একটু থেমে রিয়ার দিকে তাকাল, কিন্তু কিছু বলল না।
টিভি অন ছিল, কিন্তু কারো খেয়াল নেই। হঠাৎ খবরের ভলিউম বাড়িয়ে দেওয়া হলো।
সংবাদ পাঠক:
"গতকাল গভীর রাতে রাজধানীতে এক সন্ত্রাসী ড্রাগ সাপ্লাই করেছে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ তার একটি আংটি উদ্ধার করেছে। আংটিতে বিশেষ নকশা থাকলেও এটি দিয়ে তাকে শনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব বলে জানিয়েছে তদন্ত দল।"
রিয়ার মনে ধাক্কা লাগল। তার চোখের সামনে ভেসে উঠল হরিশের কালো, লম্বা আঙুলে পরা পুরনো রূপার আংটি—ঠিক একই নকশার।
তার বুক ধড়ফড় করতে লাগল। "এটা কি কাকতালীয়? নাকি... কাল রাতের সেই লোকটাই খবরের ড্রাগ সাপ্লায়ার?"
সে চুপচাপ কাপটা হাতে নিয়ে বসে রইল। নাজমা বেগম সেলাইয়ে মন দিলেন, লতা আবার রান্নাঘরে চলে গেল। কিন্তু রিয়ার মন থেকে রাতের সেই দৃশ্য আর আংটির মিলের ছবি কিছুতেই মুছল না।
পর্ব ১০
রাতে রাতুল ও তার বাবা মো. আজিম বাইরে থেকে ফিরেছেন। নাজমা বেগম টেবিলে ডিনার আয়োজন করে রেখেছেন—ভাত, মাছ, মাংস ও ডাল।
নাজমা বেগম: "এই বাবা, হাত মুখ ধুয়ে আসো, ডিনার ঠান্ডা হয়ে যাবে।"
রাতুল: "জি মা।"
সবাই টেবিলে বসে খেতে শুরু করল। রিয়া মাঝেমাঝে পানি ঢালছে, সবার প্লেটে খাবার তুলে দিচ্ছে। খাওয়া শেষে সবাই প্রশান্তভাবে বসে রইল কিছুক্ষণ, তারপর ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ল।
রান্নাঘরে এখন শুধু রিয়া আর লতা। থালাবাসনের ঠকঠক শব্দ, সঙ্গে কলের পানি পড়ার শব্দ মিলে রান্নাঘর ভরে আছে।
লতা হাতে একটা ঢাকনাওয়ালা প্লেট নিয়ে দাঁড়াল।
লতা: "এই বৌমা, আমি হরিশের খাবার দিয়ে আসি নিচে।"
রিয়া: "আপা, এই প্লেটগুলো ধুয়ে দেন না। আমি খাবারটা দিয়ে আসব।"
লতা খানিকটা অবাক হয়ে তাকাল।
লতা: "তুমি যাবে?"
রিয়া: (হালকা হেসে) "হ্যাঁ, তো কী হয়েছে?"
লতা ঠোঁট কুঁচকে বলল—
লতা: "দাও, আমি যাই।
রিয়া বলল,“আমি গেলে কি মহাভারত অশুদ্ধ হবে?"
এরপর আর কথা না বাড়িয়ে, তার মনে কাল রাতের বারান্দার সেই দৃশ্য আর আংটির ছবি ঘুরপাক খাচ্ছে তার তদন্ত করতে রওনা হয়।
"আজ যদি সুযোগ পাই, হরিশের কাছ থেকে কিছু জানতে হবে..."
নিচে গিয়ে রিয়া দেখল হরিশের ঘরের দরজাটা ভেতর থেকে লাগানো। সে আলতো করে দরজায় কড়া নাড়ল।
রিয়া: "গেইট খুলুন, খাবার এনেছি।"
পর্ব ১১
রিয়া আলতো করে হরিশের ঘরের দরজায় কড়া নাড়ল।
রিয়া: "গেইট খুলুন, খাবার এনেছি।"
দরজা খুলল হরিশ। রিয়া ভেতরে ঢুকল এবং প্লেটটা টেবিলে রাখল। সে পিছনের দিকে একটু সরে দাঁড়াল। এরপর জলদি রিয়া দ্রুত গেট বন্ধ করে দিল। ঘরের ভেতরে হালকা অন্ধকার, বাতি তে ভালো আলো নেই। জানালার কাঁচে বর্ষার ফোঁটা টপটপ করছে।
রিয়া তার নিজের নিঃশ্বাস শান্ত করতে চেষ্টা করল।
রিয়া: "আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে।"
হরিশ ধীরে ধীরে তার কাছে এগোল। রিয়ার পিঠ দেয়ালের সাথে লাগল। বৃষ্টির শব্দ বাইরে ভেতরের নিস্তব্ধতাকে আরও ঘনীভূত করছে।
রিয়া: "দূরে যান, আমার থেকে।"
হরিশ হালকা হেসে বলল,
হরিশ: "আমার কাছে তুমি এসেছো, আর তুমি দূরে যেতে বলছো?"
রিয়া চোখ গরম করে বলল,
রিয়া: "দূরে সরতে বলেছি আমি।"
ঠিক সেই মুহূর্তে, বাইরে একটি বিশাল বিদ্যুৎ চমক! রিয়া ভয় পেয়ে হরিশকে আঁকড়ে ধরল। হরিশ হালকা থমকে দাঁড়াল, কিন্তু সে তার হাত গরম করে রিয়ার কোমর জড়িয়ে ধরল। রিয়ার চোখে কৌতূহল আর ভয়ের মিলিত আবেগ ভেসে উঠল। তার রাগও উঠল সে একটা বড় ঘরের বউ, আর সামান্য বুড়ো ড্রাইভারের সাথে একই রুমে, জড়িয়ে ধরে আছে। রিয়া হরিশকে ছেড়ে দেয়।
রিয়া রাগে বলে,“আমাকে ছেড়ে দেন”
বৃষ্টি এখন আরও জোরে পড়ছে, জানালার কাঁচে ফোঁটাগুলো লাফাচ্ছে। দুজন একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে। রিয়ার হৃদস্পন্দন তীব্র, বাতাসে বৃষ্টির গন্ধ, বিদ্যুতের চমক আর ঘরের নিস্তব্ধতা—সবই মুহূর্তটিকে আরও তীব্র করে তুলেছে।
ঠিক যখন হরিশ ভাবছে সে কিছুটা ছাড়বে, তখন আরেকবার বিদ্যুতের দমকা আলো! রিয়া আঁকড়ে ধরে, হরিশও আরও শক্ত করে ধরেছে।
রিয়ার মুখে সামান্য চিৎকার—হরিশ হাত দিয়ে তার মুখ নীরব করে দেয়।
হরিশ কেবল হেসে বলল, "ভয় পেলি? এখন আর ছাড়ব না।"
রিয়ার দুধ তেমন বড় না হলেও মাঝারি সাইজের হবেই, একটু বড় হতে পারে। হরিশ সে তার সিনার একটু নিচে ভালোই অনুভব করছে।
বৃষ্টি, বিদ্যুৎ, এবং তাদের শ্বাস-প্রশ্বাস—সব মিলিয়ে ঘরটি যেন একটি আলাদা জগত হয়ে উঠেছে। দুজন একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে থেকে সময়টা টেনে নিয়ে যাচ্ছে, যেন বাইরে পৃথিবীর সব কিছু থেমে গেছে।