গৃহবধূ : বাড়ির রক্ষাকর্ত্রী - অধ্যায় ৮
পর্ব ১৭
ডাক্তারের কাছ থেকে ফিরে আসার পর রিয়ার মা আর দেরি করলেন না। ফোন তুলে দিলেন রাতুলের বাড়িতে খবর দিতে।
নাজমা বেগম খবর শুনে একেবারে খুশিতে আত্মহারা। ফোনে বললেন—
—"আলহামদুলিল্লাহ! আমার নাতি আসতেছে। রিয়া তো আমাদের চোখের মণি।"
আজিম সাহেবও খুশিতে গলা ভারী করে বললেন—
—"আমাদের পরিবারে নতুন আলো আসতেছে। রাতুল রে খবর দাও, সে তো খুশিতে পাগল হইয়া যাবে।"
সন্ধ্যার পর রাতুল ফোন দিল। রিয়া বিছানায় আধশোয়া হয়ে ফোনটা কানে তুলতেই ওর স্বামীর উচ্ছ্বসিত কণ্ঠ শোনা গেল—
রাতুল: "রিয়া! তুমি খবরটা সত্যি করে বলছ তো? আমি বাবা হইতেছি, তাই না?"
রিয়া (আধগলায়): "হ্যাঁ…"
রাতুল: "ও মাই গড, আমি বিশ্বাসই করতে পারতেছি না। মনে হইতেছে আজই তোমার কাছে চলে আসি।"
রিয়া: "তুমি তো কাজের চাপে আছো।"
রাতুল: "কাজের চাপ থাক, আমি সব ভুলে গেছি। তুমি আমাকে এই দুনিয়ার সবচেয়ে বড়ো সুখের খবর দিছো"
রিয়া নীরব হয়ে যায়। বুকের ভেতর অদ্ভুত কাঁপন। রাতুলের কণ্ঠে সত্যিকারের ভালোবাসা, উচ্ছ্বাস, একরাশ স্বপ্ন।
রাতুল: "শুনো, তুমি এখন থেকে বেশি সাবধানে থাকবা। ভারি কিছু তুলবা না, নিয়ম করে খাইবা। আমি আসলে তোর পাশে সারাক্ষণ থাকবো।"
রিয়া: "হুম…"
রাতুল: "ডাক্তার কী বলছে? কেমন আছে বাচ্চাটা?"
রিয়া: "দুই মাস চলছে… ডাক্তার বলল সাবধানে থাকতে।"
রাতুল: "আমার রিয়া মা হইতেছে… ভাবতেই বুকটা কেমন হইতেছে জানিস? তুমি যখন হাঁটবা, তখন আমার মনে হইতেছে তোমার পেটে আমার স্বপ্ন নাচতেছে।"
রিয়ার গলা আটকে আসে। চোখ বেয়ে জল নেমে আসে চুপচাপ। কিন্তু ফোনের ওপাশে রাতুল কিছু টের পায় না।
রাতুল (হাসতে হাসতে): "শোন, আমি তোমাকে কাল নতুন শাড়ি কিনে পাঠাইতেছি। মা কইতেছে, তোমার খাওয়াদাওয়া আরামে করতে হবে। তুমি শুধু হাসি খুশি থাকবা, আমি সব ব্যবস্থা করে দিব।"
রিয়া: "তুমি অনেক খুশি?"
রাতুল: "খুশি? আমারে যদি জিজ্ঞেস কর, আমি এখন এই দুনিয়ার সবচেয়ে ভাগ্যবান মানুষ।"
রাতুল অনেকক্ষণ ধরে স্বপ্নের মতো কথা বলে গেল—
বাচ্চা হলে নাম কী হবে, কোথায় পড়াশোনা করাবে, ছোট্ট হাত ধরে হাঁটবে—সবই রঙিন কল্পনা। রিয়া ফোন হাতে চুপচাপ শুনে গেল।
রাতে
ফোন রেখে রিয়া আলো নিভিয়ে দিল। বিছানায় শুয়ে শুয়ে হাত রাখল নিজের পেটে। ঠাণ্ডা কাঁপুনি ভেতর থেকে আসছে।
হঠাৎ মনে পড়ল রাতুলের কথাগুলো—
"তুমি হাঁটলে, মনে হইবো আমার স্বপ্ন নাচতেছে…"
রিয়ার চোখ ভিজে উঠল। বুকের গভীরে সুখ জমে উঠছে, আবার একইসাথে তীব্র ভয় কামড়ে ধরছে।
সে নিঃশব্দে ফিসফিস করে বলল—
—"রাতুল… তুমি তো জানো না… এই স্বপ্নটা কার…"
তারপরও অদ্ভুত এক প্রশান্তি ছড়িয়ে পড়ল শরীরে। রাতুলের কণ্ঠের ভালোবাসা যেন সেই ভয়ের অন্ধকার কিছুটা ঢেকে রাখল।
পর্ব ১৮
(রাত, বসার ঘরে দু’জন বসে আছেন। আজিম সাহেব হাতে চা, নাজমা বেগম চিন্তিত মুখে বসে আছেন।)
আজিম: (দীর্ঘশ্বাস ফেলে) "নাজমা, কাল থেকে তো আমাকে রাতুলের সাথে থাকতে হবে, তাই ঢাকা ছাড়তে হবে। বিজনেস ফেয়ারে পনেরো দিন থাকব।"
নাজমা: "হুঁ, আমি জানি। কিন্তু রিয়ার কথা কেমনে হইবো? মেয়েটা এখন একা বাবার বাসায় আছে। পেটে বাচ্চা… যত্ন তো নিতে হবে।"
আজিম: (মাথা নেড়ে) "এইজন্যই তো চিন্তায় আছি। তুমি তো যাবে না, তুমি গেলে আবার ঘরের কাজকর্ম সব অগোছালো হইয়া যাবে।"
নাজমা: "তাহলে? কাকে পাঠাবো? মেয়েটাকে একা রাখলে চলবে না। এখনি তো শরীর নাজুক, হুট করে কিছু হলে?"
আজিম: (কিছুক্ষণ ভেবে) "আমি ভাবতেছি হরিশরে পাঠানো যায় কিনা।"
নাজমা: (চমকে উঠে) "হরিশ? ড্রাইভার হরিশ?"
আজিম: "হ্যাঁ। তুমি তো জানো, হরিশ কতো মাস ধরে আমাদের সাথে আছে। গ্রাম্য মানুষ, বিশ্বস্তও বটে। গাড়ি চালাইতে জানে, আবার বাজার-সদাই, ছোটখাটো কাজও সামলাইতে পারে। রিয়ার পাশে থাকলে অন্তত নিশ্চিন্ত থাকা যাবে।"
নাজমা: (সন্দিহান ভঙ্গিতে) "কিন্তু রিয়া যদি খুশি না হয়?"
আজিম: "সে যে খুশি না হোক, তার এখন নিরাপত্তা আর যত্ন দরকার। আমি না থাকলে, তুমি না থাকলে, আর কে আছে পাশে? হরিশ অন্তত ভরসার মানুষ।"
নাজমা: (চুপ করে কিছুক্ষণ ভেবে) "ঠিক বলছ। পুরুষ মানুষ থাকা দরকার পাশে। বাজার লাগবে, ডাক্তারের কাছে নিতে হবে, গাড়ি চাই… সব কিছুর জন্য কাউকে তো লাগবেই।"
আজিম: "তাহলেই ঠিক হলো। আমি কাল সকালে হরিশরে ডেকে বলি। পনেরো দিন ও রিয়ার বাসায় থাকবে। গাড়ি চালাবে, আবার খেয়াল রাখবে।"
নাজমা: (হালকা হাসি দিয়ে) "খোদা ভরসা, সবকিছু ভালোয় ভালোয় হোক।"
আজিম: (গম্ভীর গলায়) "হবে, তবে মনে রাইখো, রিয়ার এখন কোনো ধকল সহ্য করার মত অবস্থা নাই।"