গৃহবধূ : বাড়ির রক্ষাকর্ত্রী - অধ্যায় ৯
[Page Break]
পর্ব ১৯ (দৃশ্য)
সকালবেলা। জানালা দিয়ে রোদ এসে পড়েছে রিয়ার ঘরে। ঘুম থেকে উঠে আলতো করে চোখ মুছে রিয়া। শরীর ভারী লাগছে, তবুও উঠেই ওড়না টেনে ড্রয়িং রুমে আসল।
ড্রয়িং রুমে ঢুকতেই থমকে দাঁড়াল।
সেখানে দাঁড়িয়ে আছে—হরিশ।
হরিশ সাদা শার্ট আর প্যান্ট পরে আছে, হাতে এক ব্যাগ। মুখে গাম্ভীর্য, কিন্তু চোখে এক ধরনের চাপা কৌতুক লুকানো।
রিয়ার বাবা জয়নাল সাহেব তখন আরামকেদারায় বসা, হাতে চায়ের কাপ। হরিশ হঠাৎই ঝুঁকে গিয়ে তার পায়ে হাত দিল।
হরিশ: "সালাম নেন বাবা…"
জয়নাল সাহেব একটু অবাক হলেও খুশি হয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।
জয়নাল: "আরে, এত ভদ্রতা? ওঠো, ওঠো… বসো।"
তারপর হরিশ এগিয়ে গিয়ে রুবি আক্তারের পায়ে হাত দিল।
রুবি প্রথমে আঁতকে উঠলেন—
রুবি: "এই যে, তুমি আমারে সালাম নাও কেন? আমি তো তোমার চেয়ে ছোট বয়সে!"
হরিশ মাথা নিচু করে বলল—
হরিশ: "আপনি রিয়ার মা…রিয়ার বাপের বাড়ির মানুষেরে সালাম না নিলে কি চলে?"
হরিশ আসলে নিজেকে জামাই মনে করছিল ঘরের।
তখনই রুবি খানিকটা লজ্জা পেয়ে হেসে ফেললেন।
রুবি: "বাহ, বড় ঘরের চাকর হলেও ভদ্রতা আছে দ্যাখো!"
ঠিক তখনই রিয়া এসে দাঁড়ালো। তার চোখে বিস্ময়, বুকের ভেতর কেমন করে উঠল।
রুবি আক্তার তাড়াতাড়ি বললেন—
রুবি: "রিয়া, দ্যাখ, কে এসেছে! তোর শ্বশুর-শাশুড়ি পাঠাইছে—তোর দেখভাল করবে।"
রিয়ার বুকে হটাৎ জোরে হার্টবিট চলে। ধীরে ধীরে হরিশের চোখের দিকে তাকাল। সেই চোখে অদ্ভুত এক ঝিলিক, যা কেবল সে-ই বুঝতে পারছে।
হরিশ (হালকা মাথা নিচু করে): "মেমসাব, কেমন আছেন?"
রিয়ার ঠোঁট কাঁপল, কিন্তু কোনো শব্দ বের হলো না।
জয়নাল সাহেব গলা ভরে বললেন—
জয়নাল: "দ্যাখো, আমরা তো একটু চিন্তায় ছিলাম। তোর মা-বাবার পক্ষে সব সামলানো কঠিন। হরিশ তো পুরনো লোক, ভরসা করা যায়। পনেরো দিন থাকবে তোর পাশে।"
রুবি উচ্ছ্বাসভরে বললেন—
রুবি: "হ্যাঁ রে রিয়া, খোদা কত ভালো ব্যবস্থা করে দিল! গাড়ি লাগলে যাবে, বাজার করবে, আবার তোর খবরও রাখবে।"
রিয়া জোর করে একটুখানি হাসল। কিন্তু ভেতরে ভেতরে তার কান গরম হয়ে উঠছে। হরিশ যেন ঠিকই বুঝে ফেলল।
সে চুপচাপ এক কোণায় বসে পড়ল। কিন্তু বসার ভঙ্গিটাই এমন, যেন তার চোখ সবসময় রিয়ার দিকেই।
রিয়া মাথা নিচু করে ধীরে ধীরে সোফায় বসল, বুকের ভেতর ধকধক করছে—
"খোদা, এ মানুষটাকে আবারো আমার সামনে আনলেন কেন?"
পর্ব ২০
সেদিন রাতে হরিশ কে গ্যারেজের পাশে এক রুম দেয়, সেটা খুবই ছোট, ফ্যান চলে কিন্তু বাতাস নেই। কিন্তু সে খুশি তার বাচ্চার মা এসির রুমে শুয়ে আছে।
হরিশ পরিবেশকে উপলব্ধি করে আর ভাবতে থাকে
রাত গভীর। চারদিকে অন্ধকার। শহরের বাতিগুলোও যেন দূরের মফস্বলের জোনাকির মতো ক্ষীণ হয়ে আসছে। বিছানায় শুয়ে আছে হরিশ, চোখ খোলা। ঘুম আসছে না। মন ছুটে যাচ্ছে বহু দূরের এক গ্রামে—সেই মাটির গন্ধমাখা, ধূলিধূসর, অশান্ত গ্রামে, যেখানে তার জন্ম হয়েছিল।
হরিশের জন্ম হয়েছিল এক অতিনিম্নবিত্ত * পরিবারে। বাবা ছিল মাটির কাজ করা কারিগর, গাঁয়ের মাটির হাঁড়ি-পাতিল বানাতো, আর মা সারাদিন কৃষকের জমিতে কাজ করত, ধান কাটা আর ধানের গাদার নিচে লুকানো সাপের ভয়ে শিউরে উঠতেও অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল। দরিদ্রতা তাদের শরীরে লেগেছিল ধুলোবালির মতো, আর দুঃখ তাদের চোখে গাঢ় রেখা এঁকে দিয়েছিল।
ছোটবেলা থেকেই হরিশ ছিল ভিন্ন ধরণের। কালো রঙ, লম্বা শরীর, কাঁচা বয়সেই চোখে এক ধরনের আগ্রাসী দীপ্তি। গ্রামে তাকে ডাকত “চ্যাংরা হরিশ”—কারণ তার মধ্যে ছিল অস্থিরতা, উচ্ছৃঙ্খলতা আর এক অদম্য জেদ।
১৬ বছরের শ্যামা ছিল তার সমবয়সী সঙ্গিনী। গায়ের রঙ কালো হলেও শরীর ছিল পূর্ণ, দৃঢ়, আর বড় স্তনের কারণে গ্রামে অনেকের দৃষ্টি টেনেছিল। শ্যামা পছন্দ করত হরিশকে, তার রুক্ষ চেহারায়, চোখেমুখে থাকা গুন্ডামির গন্ধে। হরিশ পছন্দ করত শ্যামার নারীসুলভ আকৃতি আর তার দুর্বার আকর্ষণ।
তাদের সম্পর্কের শুরুটা ছিল নিষিদ্ধ আগুনের মতো। জঙ্গলের ভেতরে, নদীর ধার ঘেঁষে, কচি বয়সের লোভে একে অপরকে গ্রাস করতে চাইত। কিন্তু সেই গোপন মুহূর্তই একদিন সর্বনাশ ডেকে আনে।
শ্যামার যোনিতে হরিশের বিশাল সোনা ঢোকানোর সময় হঠাৎই তাদের ধরে ফেলে হরিশের চিরশত্রু বপন। তখন বয়স মাত্র ১৯, কিন্তু শক্তি ও রাগে সে ছিল অগ্নিময়। সেদিন বপন হরিশকে পেটাল চরমভাবে, শ্যামার লজ্জা ছিন্নবস্ত্রের মতো ছড়িয়ে পড়ল। এর পরদিন গ্রামের পুরোহিত সামাজিক চাপে তাদের বিয়ে দিয়ে দিল।
হরিশের বয়স তখন ১৮, শ্যামার ১৬। বিয়ের পাঁচ মাসের মাথায় শ্যামা জন্ম দিল একটি কন্যা সন্তান—ভাগ্যবতী। নামটা দেওয়া হয়েছিল আশা থেকে, কিন্তু ভাগ্যের মতোই কালো, অনিশ্চিত, ঝঞ্ঝাটময় হয়ে উঠল তাদের সংসার। ভাগ্যবতীর পর আরও তিনটি মেয়ে জন্মাল। কিন্তু হরিশের ভেতরের অদম্য তৃষ্ণা, “এক ছেলে সন্তানের বাবা হওয়ার স্বপ্ন”—কখনোই পূর্ণ হলো না।
বছর ঘুরতে ঘুরতে সংসার ভরল অসন্তোষ, হিংসা, আর অশান্তিতে। মেয়েরা বড় হলো, বাবার মতোই চঞ্চল, মায়ের মতোই অবাধ। গ্রামে গুঞ্জন ছড়াল, হরিশের মেয়ের সাথে . পল্লির এক ছেলের প্রেম হয়েছে। হরিশ তা সহ্য করতে পারল না। একদিন সে ছেলেটাকে ধরে নিয়ে মারল নির্মমভাবে।
পরদিন খবর এল—ছেলেটা মারা গেছে। ক্রোধে ফুঁসে উঠল . পল্লির মানুষ। তারা দল বেঁধে হরিশকে মারতে এলো। আশ্চর্যের ব্যাপার, * পল্লির লোকেরাও তাদের সাথে যোগ দিল। কারণ হরিশকে কেউ ভালোবাসত না। তার অহংকার, তার হিংস্রতা, তার লালসা—সব মিলিয়ে তাকে গ্রামচ্যুত করার ক্ষণ গড়াচ্ছিল বহুদিন ধরেই।
সেদিন হরিশের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হলো। আগুনের আলোয় পুড়ে গেল তার শৈশব, তার সংসার, তার শিকড়। স্ত্রী শ্যামা বাকি তিন মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে গেল মামার বাড়ি। ভাগ্যবতীও স্বামীর সাথে গ্রাম ছাড়ল ভয়ে। একা পড়ে গেল হরিশ।
ঢাকায় এসে সে নতুন জীবন শুরু করল—কিন্তু সেই জীবনও ছিল অপরাধের। বস্তির এক ওস্তাদের কাছে গাড়ি চালানো শিখল দ্রুত, জড়িয়ে পড়ল মাদক ব্যবসা, কিডন্যাপিং, চুরি, ছিনতাই—সব কিছুর সাথে। পুলিশ একদিন ধরে জেলে দিল, এরপর সেখানে তার সবচেয়ে কষ্ট হয় কোনো মেয়ের স্পর্শ না পেয়ে, ৪ বছর পর আবার বের হল।
ঠিক সেই সময় তার সাথে পরিচয় হলো লতার। গ্রামের পুরনো পরিচিত, এখন শহরে কাজের বুয়া। লতাই তাকে এনে দিল আজিম সাহেবের বাড়িতে ড্রাইভারের কাজ।
প্রথম দিন থেকেই হরিশের চোখ আটকে গেল এক নারীর ওপর—রিয়া। বড় ঘরের বউ, শিক্ষিতা, সুন্দরী, আর যুবতী। হরিশের মনে অদ্ভুত এক লোভ জন্ম নিল। তার ভেতরের পুরোনো শূন্যতা, সেই অপূর্ণ ইচ্ছা—“এক ছেলে সন্তানের বাবা হওয়া”—সেটি যেন নতুন করে মাথা তুলল।
হরিশ বিছানায় চোখ বন্ধ করে নিজের মনে ফিসফিস করে—
“শ্যামা পারল না… আমার সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারল না। কিন্তু রিয়া… ও পারবে। আমি ওকেই বেছে নেব। এবার আমার ছেলে হবে… আমার নামের উত্তরাধিকার।”
অন্ধকার ঘরে তার কালো চোখে জ্বলে উঠল এক ভয়ংকর দীপ্তি।
পর্ব ২১(দুপুরের দৃশ্য)
দুপুরে খাওয়ার সময় ঘনিয়ে আসছে। টেবিল সাজিয়ে রুবি আক্তার হাঁক দিলেন—
রুবি:
—"রিয়া, আয় মা! খাবার রেডি।"
ড্রয়িং রুমে বসা হরিশ তখনই উঠে দাঁড়াল।
হরিশ:
—"আচ্ছা, আমি যাই ডেকে আনি।"
রুবি একটু হেসে তাকালেন।
রুবি:
—"হুঁ, যাও। মেমসাবকে ডাকো।"
রিয়ার ঘরে
রিয়া নিজের রুমে চুপচাপ বসে বই পড়ছিল। দুপুরের হালকা রোদ জানালা দিয়ে এসে পড়ছে বইয়ের পাতায়। চোখ বইয়ের উপর থাকলেও মন তার অশান্ত।
হঠাৎ দরজার হ্যান্ডেল ঘুরল। কোনো অনুমতি ছাড়াই হরিশ ভেতরে ঢুকে পড়ল।
রিয়া বইটা বন্ধ করে চমকে উঠে তাকাল। চোখ লাল হয়ে উঠল রাগে।
রিয়া (কঠিন গলায়):
—"এই! তোমার সাহস কত? আমার রুমে ঢুকতে অনুমতি লাগে না নাকি?"
হরিশ দরজাটা লাগিয়ে রেখে ভেতরে এগিয়ে এলো। মুখে হালকা গ্রাম্য হাসি।
হরিশ (গম্ভীর গলায়, গ্রাম্য টানে):
—"অনুমতি? নিজের সন্তানের মায়ের ঘরে আবার কিসের অনুমতি, রিয়া?"
রিয়ার বুক ধক করে উঠল। সে দাঁড়িয়ে গেল, ভ্রু কুঁচকে বলল—
রিয়া:
—"চুপ করো! প্লিজ, একটাও কথা বলবা না।"
কিন্তু হরিশ থামল না। ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে এসে ফিসফিস করে বলল—
হরিশ:
—"কেন চুপ করমু? আজ যেই ফল তোর পেটে আছে, ওইটা হইল দুই মাস আগের কিসের কারণে… মনে নাই?"
রিয়ার গলা শুকিয়ে গেল। ঠোঁট কাঁপতে লাগল। চোখে পানি এসে পড়ল।
রিয়া (কাঁপা গলায়):
—"না… না… এ সন্তান রাতুলের। তোমার না।"
হরিশ হেসে ফেলল, তীক্ষ্ণ ব্যঙ্গ ভরা হাসি।
হরিশ
—"হাহ! রিয়া, মিথ্যা কইস না। দুই মাস ধইরা তোর স্বামী তো তোরে ছুঁইতে পারে নাই। তুই জানস—আমি জানি—এই বাচ্চা কার।এছাড়াও….."
রিয়া- কি, এছাড়া কি?
হরিশ- তোর স্বামী স্পর্শ অনেক দিন করে না। যখন আমি আমার বাড়া ঢুকাইছিলাম, বুঝছি অনেক দিন ধরেই ঢুকে না কিছু। তাই ত ব্যাথা পাইছিলি প্রথমে।
রিয়া কান ঢেকে ফেলল দুই হাতে।
রিয়া (চিৎকারের মতো):
—"চুপ করো! আমি এসব শুনতে চাই না।"
হরিশ আরও কাছে এসে দাঁড়াল। তার কণ্ঠ গাঢ়, কিন্তু গ্রাম্য সুরে হাড় কাঁপানো সত্যি উগরে দিল—
হরিশ:
—"চাইলেই কি হইবো, রিয়া? সত্যি বদলাইতে পারে? বজ্রপাতের রাতের আগুন আজও নিভে নাই। তোর শরীরেই তো সেই আগুনের দাগ আছে।"
রিয়ার চোখ দিয়ে টপ টপ করে অশ্রু পড়ছে। বুক ধড়ফড় করছে, কণ্ঠরোধ হয়ে আসছে।
রিয়া (আকুতি করে):
—"আমি চাই না তুমি আমার সামনে আসো। দয়া করে, আমার থেকে দূরে থাকো…"
হরিশ একদম কাছে এসে নিচু গলায় বলল—
হরিশ:
—"দূরে থাকমু কেমনে? দূরে যাইবার জাগাই তো নাই। তোর শ্বশুর-শাশুড়ি নিজে আমারে পাঠাইছে তোরে দেখার জন্য। এখন তোর বুকের ভিতরেই আমার নিশান লুকানো… তুই কেমনে পালাবি?"
রিয়া মাথা নিচু করে বসে পড়ল বিছানায়, বুক চাপড়ে কান্না করতে লাগল।
বাইরে তখন রুবি আক্তার ডাক দিচ্ছেন—
রুবি:
—"রিয়া, খেতে আয় মা, খাবার ঠাণ্ডা হয়ে যাবে!"
কিন্তু ভেতরে রিয়ার পৃথিবীটা আবারও দুলে উঠেছে।
পর্ব ২২(দুপুরের খাওয়ার দৃশ্য)
বাইরে বারবার ডাকাডাকি করছিল রুবি আক্তার—
রুবি:
—"রিয়া মা, আয় না, খেতে বসবি না?"
অবশেষে রুবি নিজেই এসে দাঁড়াল রিয়ার রুমের দরজায়। ভেতরে ঢুকতেই দেখল, রিয়া বিছানায় বসে আছে মাথা নিচু করে, আর হরিশ পাশে দাঁড়িয়ে।
রুবি (কপাল কুঁচকে):
—"কি রে রিয়া, যাবি না? তোর বাবা বসে আছে।"
রিয়া তড়িঘড়ি মাথা তুলে বলল—
রিয়া (আতঙ্ক মিশ্রিত গলায়):
—"আমি… আমি যাব না মা।"
রুবি (অবাক হয়ে):
—"যাবি না মানে? কেন রে? শরীর খারাপ নাকি?"
রিয়া ঠোঁট কামড়ে কিছুই বলল না। চোখ এড়িয়ে তাকাল বিছানার দিকে।
ঠিক তখনই হরিশ কথা বলল—
হরিশ (স্বাভাবিক ভঙ্গিতে):
—"আসলে আপার পায়ে ব্যাথা হইছে, খাড়াইতে পারতাসে না ঠিকমতো।"
রুবি আরও চিন্তিত হলেন।
রুবি:
—"আহারে! তবে কি উপায়? খাওয়ানো তো লাগবেই।"
হরিশ এক মুহূর্তও দেরি না করে গম্ভীর গলায় বলল—
হরিশ:
—"উপায় আছে না মা।"
কথা শেষ হওয়ার আগেই ঝট করে রিয়ার সামনে ঝুঁকে গেল, আর এক নিমিষে রিয়াকে কোলে তুলে নিল।
রুবি মুহূর্তেই অবাক হয়ে হাত দিয়ে মুখ চাপা দিলেন।
রুবি:
—"হায় আল্লাহ! এইটা কি করলেন হরিশ?"
রিয়া চোখ বড় বড় করে তাকাল, মুখ লাল হয়ে গেল লজ্জায়।
রিয়া (আতঙ্কিত ফিসফিসে গলায়):
—"তুমি কি করছো! আমারে নামাও, নামাও এখনই!"
কিন্তু হরিশ নির্বিকার ভঙ্গিতে হাঁটতে শুরু করল।
হরিশ (হাসি চেপে):
—"এইডাই তো উপায়, মা। পায়ে ব্যাথা হইলে কোলে নিয়াই নামাইতে হয়।"
রিয়া বারবার হাত-পা নেড়ে নামার চেষ্টা করছে, কিন্তু হরিশ শক্ত করে ধরে রেখেছে।
রুবি পাশ থেকে হেসে ফেললেন, ভেবেই নিলেন হরিশ ভদ্র আর দায়িত্বশীল।
রুবি (সন্তুষ্ট গলায়):- হরিশকে উদ্দেশ্য করে
—"আরে বাহ্, আপনার মতো ভরসার লোক আবার কই পাবো? চল, চল, ডাইনিংয়ে নিয়ে যা।"
রিয়া এবার একেবারে চোখ নামিয়ে ফেলল, বুক ধড়ফড় করছে। নিজের মায়ের সামনেই হরিশের কোলে—এ লজ্জা সে সহ্য করতে পারছে না।
হরিশ কিন্তু ঠোঁটে চাপা হাসি নিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল ডাইনিংয়ের দিকে, যেন পুরো ঘরটাই তার দখলে।
রুবিকে হরিশ- মা, আপনি আগে যান। আমি রিয়াকে নিয়ে আসি।
রুবি- আচ্ছা আসেন। সাবধানে আইসেন।
রুবি চলে গেলে
হরিশ- রিয়া ভালো মত ধর, মা চলে গেছে।
রিয়া – ভাব ধর তুমি? তুমি এ ঘরের জামাই নাকি?
হরিশ(হেসে)- জামাই না হলেও এ ঘরের নাতি, রক্ত আমার মাল থিকাই আসব।
রিয়া- ছি: নোংরা লোক।
সিড়ি থেকে নামার সময় রিয়া হরিশকে ভালো মত ধরে যাতে না পরে যায়। রিয়া তার সন্তান নিয়ে খুবই সাবধান।
পর্ব ২২ (ডাইনিং টেবিলের দৃশ্য)
হরিশ যখন রিয়াকে কোলে নিয়ে ডাইনিং রুমে ঢুকল, সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। টেবিলের মাথায় বসা জয়নাল তৎক্ষণাৎ কপাল কুঁচকালেন।
জয়নাল (কঠিন গলায়):
—"এগুলো কি হচ্ছে হরিশ? কোলে করে আনলে কেন রিয়া মা কে?"
রুবি সঙ্গে সঙ্গে ব্যাখ্যা দিলেন, যেন হরিশকে বাঁচাতে চান।
রুবি:
—"আরে, রিয়ার পায়ে নাকি ব্যাথা। হাঁটতে পারছে না ঠিকমতো। তাই হরিশ কোলে নিয়ে এসেছে।"
জয়নাল মাথা নেড়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন, কিন্তু আর কিছু বললেন না।
রিয়াকে হরিশ চেয়ারেই বসিয়ে দিল। রুবি প্লেট সাজিয়ে নিজের হাতে মেয়েকে খাওয়াতে শুরু করলেন।
রুবি (স্নেহভরা গলায়):
—"আয় মা, মুখটা খোল। তোকে না খাইয়ে দিলে আমি শান্তি পাই না। এখন ত দুজন তোরা।"
রিয়া ন্যাকামি ভরা গলায় মুখ হাঁ করল।
রিয়া:
—"আহা মা, তুমি না হলে আমারে কেউ বোঝে না। আমারে এভাবে কে আর খাওয়াবে?"
রুবি মেয়ে আদরে হাসলেন।
রুবি:
—"তুই যতই বড় হ, আমার কাছে তো এখনো আগের মতোই ছোট্ট রিয়া।"
রিয়া বাবার দিকে তাকিয়ে আবার ন্যাকামি ভঙ্গিতে বলল—
রিয়া:
—"বাবা, তুমি জানো, আমি এখনো আগের মতোই তোমার আদরের মেয়ে।"
জয়নাল মৃদু হাসলেন।
জয়নাল:
—"হুঁ, জানি তো। তবে এখন কিন্তু তুই শুধু আমার মেয়ে নয়, একটা সংসারের বউ হিসেবেও মানাতে হবে।এখন ত আবার মা হবি।"
রিয়া নাক সিঁটকিয়ে মায়ের কোলে হেলান দিল।
এতক্ষণ চুপচাপ বসে থাকা হরিশ এবার বিরক্তি মাখা গলায় বলে উঠল—
হরিশ (খেকশে ভঙ্গিতে):
—"এত কথা কইলে খাবার গলায় বাজে।"
রিয়া হঠাৎই থমকে গেল, তারপর রাগে ফুঁসে উঠে হরিশের দিকে তাকাল।
রিয়া (চোখ রাঙিয়ে):
—"তোমার সাথে আমি কথা বলি না, তুমি আবার ভাব ধরে কথা বলছো কেন?"
পরিবেশ এক মুহূর্তের জন্য ভারী হয়ে উঠল। রুবি সঙ্গে সঙ্গে বকা দিলেন—
রুবি:
—"এইভাবে কথা বলে? বড়দের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হয়।"
রিয়া দাঁতে দাঁত চেপে বলল—
রিয়া:
—"ও আমার বড় না। ও ড্রাইভার, আমার শ্বশুরের চাকর।"
জয়নাল হঠাৎ টেবিলে হাত ঠুকলেন।
জয়নাল (কঠোর কণ্ঠে):
—"রিয়া! এইসব খারাপ অভ্যাস এখনই ছাড়তে হবে। মানুষকে ছোট করে কথা বলা পাপ। হরিশ যতই চাকর হোক, ও তোমার খেয়াল রাখছে। এখনি 'সরি' বল।"
রিয়া মুখ ফুলিয়ে এক দম রাগে বলল—
রিয়া:
—"সরি।"
টেবিলে অস্বস্তির নীরবতা নেমে এলো। সবাই খাবারে মন দিল।
রিয়া মনে মনে- এই প্রতিশোধ আমি নিবোই।
আসলে তাদের এই ঝগড়া দেখলে বুঝা যাবে না, রিয়ার পেটের বাচ্চা হরিশের। তারা যেন সাপে নেওলে সম্পর্ক।
কিন্তু হরিশ চুপ করে থাকল না। সে একটু পাশে ঘুরে রিয়ার দিকে তাকিয়ে ঠোঁটের কোণে জয়ের হাসি দিল।
তার চোখ যেন বলছে— “তুই যতই এড়াস, তোর আমার কথা মানতেই হবে।”
রিয়া মুখ ঘুরিয়ে নিল, কিন্তু বুকের ভেতর তার ধড়ফড়ানি থামল না।
পর্ব ২৩(রাতের দৃশ্য)
হরিশ শুয়ে আছে নিজের বিছানায়, সে তার ৫ম সন্তান নিয়ে খুব আগ্রহী,তার এ সন্তানের জন্য রিয়াকে তার অনেক খেয়াল রাখতে হবে। সে মনে করে তার এবার ছেলেই হবে, তার কপালের সেই অভিশাপ ঘুচে যাবে।
আসলে,
রিয়া শুয়ে আছে বিছানায়। চারিদিকে অন্ধকার, শুধু জানালার ফাঁক দিয়ে চাঁদের আলো ঢুকছে।
চোখ বন্ধ করলেই বারবার ভেসে উঠছে দুপুরের সেই টেবিলের দৃশ্য… হরিশের ঠোঁটের কোণে সেই জয়ের হাসি।
রিয়া নিজের মনে বলে উঠল—
রিয়া (মনে মনে):
—"ওর জন্য আজ বাব মা আমাকে প্রথমবার বকেছে। ওকে আমি ছাড়ব না"
হৃদস্পন্দন যেন বেড়েই চলেছে। কিছুক্ষণ পর তৃষ্ণায় পিপাসিত হয়ে উঠে দাঁড়াল।
গ্লাস হাতে নিল, কিন্তু রুমে পানি নেই। তাই ধীরে ধীরে বাইরে রান্নাঘরের দিকে হাঁটল। চারিদিক নিস্তব্ধ। শুধু ঘড়ির টিকটিক শব্দ শোনা যাচ্ছে।
রিয়া কল খুলে গ্লাসে পানি ভরল, ধীরে ধীরে ঠোঁটে নিল।
এক চুমুক, দু’চুমুক… গলা বেয়ে নেমে আসছে ঠান্ডা পানি।
হঠাৎ পিছনে একটা ভারী কণ্ঠস্বর—
হরিশ (মৃদু, কিন্তু দৃঢ় গলায়):
—"তুমি নিজে কেন পানি নিতে এসেছো?, আমাকে বললেই ত হতো…"
রিয়া স্তব্ধ হয়ে গেল। গ্লাস হাতে কেঁপে উঠল, পানি ছলকে মেঝেতে পড়ল।
ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াল। সামনে হরিশ—তার চোখে সেই বেপরোয়া দৃষ্টি।
রিয়ার ঠোঁট কাঁপছে, কিছু বলতে চাইছে কিন্তু গলা দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না।
রিয়ার কোমর ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসল হরিশ……