গরীব মা ছেলের সংসার - অধ্যায় ২
একদিন বড় মামা আমার দোকানে এল, এই এবার কিছু টাকা লাগবে। তোর ভাইয়ের একটা চাকরির কথা হয়েছে তোর মা আমাকে পাঠালো। লাখ পাঁচেক টাকার দরকার দিতে পারবি তো।
আমি কই মা বাঃ ভাই আমাকে তো বলেনি একবারের জন্য। আর আমি এত টাকা কোথায় পাবো। জানোইতো এই দোকনা কত আর হয় আর জমি নিলাম তুমি তো জানো সবার খাওয়া দাওয়া দোকান ভাড়া কিছু থাকে। আমি কোথায় পাবো টাকা মামা, তোমরা দাও আমি শোধ করে দেব মাশে মাসে দিয়ে।
মামা ঠিক আছে আমি যাচ্ছি তোদের বাড়ি কখন আসবি বাড়ি।
আমি ওইত আড়াইটা বাজবে তুমি যাও। এক কাজ কর তবে বাজার দিচ্ছি নিয়ে যাও। বলে বাজার করে দিলাম মামা নিয়ে চলে গেল। আমি আমার সময় মতন দোকান বন্ধ করে গেলাম। গিয়ে স্নান করে আসতেই মা খেতে দিল। কত বাজার করেছি মা আমাকে এক টুকরা মাছের লেজ দিল যা আমি কোনদিন খাই না আর কেউ না জানলেও মা জানে আমি লেজের মাছে কাঁটা বলে খাইনা।
মামা বলল কিরে মাছ খাচ্ছিস না কেন।
আমি মামা আমি লেজ খেতে পারিনা মা তুলে রাখ তুমি এ আমি খেতে পারবোনা।
মায়ের উত্তর নবাবের বাচ্চা নবাব খেতে পারবেনা। আর কিছু নেই খেয়ে নাও। দাদা জিজ্ঞেস কর কখন টাকা দেবে। যদি টাকা না দিতে পারে বাড়ি বেচে দেবো।
আমি থালায় জল দিয়ে উঠে পড়লাম। আর খাওয়া হলনা যদিও এমন অনেকদিন হয়েছে আমার কপালে।
মামা কি হল খেলিনা।
আমি না মামা পেট ভরে গেছে আর খাওয়া লাগবেনা।
মামা তবে কখন টাকা দিবি।
আমি টাকা কই পাবো যে দেবো। অত টাকা আমি চোখে দেখেছি কোনদিন।
মা টাকা দিবিনা মানে তোকে দিতে হবে কোথা থেকে দিবি জানিনা আমার স্বামিকে তুই খেয়েছিস তোকে দিতে হবে, না হলে এই বাড়ি বেচে দেবো। সই করে দিবি। এই বাড়িতে তোর কোন অধিকার নেই।
আমি শুধু বললাম বাবার ইন্সুরেন্সের টাকা তো পেয়েছ তা দিয়ে দিয়ে দাও।
মা সে টাকা আছে নাকি তুমি বাজার ছাড়া কি কর সব খরচা হয়ে গেছে ওর লাগেনা বুঝি।
আমি বললাম ওর কলেজের ফি টিউশন ফি সব তো আমি দিয়েছি তারপর অত টাকা শেষ হয়ে গেছে।
মা হ্যা নেই আমদের কাছে কোন টাকা নেই। ৫ লাখ টাকা তুই দিবি না হলে বাড়ি ছেরে দে তুই। তোর জন্য আমার স্বামী মারা গেছে।
মামা থাম তুই অনেক কষ্ট দিয়েছিস ওই একটা অছিলায়, ছেলেটা কিছু বলেনা বলে, এতদিনে তোমরা মা ছেলে কি করেছ, তুমি তো কিছু কামাই করতে পারতে, ছেলে এনে দিয়েছে মা বেটা খেয়েছ আর ফুর্তি করেছ তাইনা। ওই টাকা সব নষ্ট করে ফেলেছ এখন নরম ছেলেটার উপরে গরম নিচ্ছ। তোমার ছেলের জোগ্যতা থাকলে নিজেই জোগার করে নিল ১৬ বছর বয়স থেকে খেটে তোমাদের খাওয়াছে, কত বাজার করে দিল আর ওকে দিলে কিনা এক টুকরা লেজের মাছ তোমার ছেলে না এটা, ও খেতে পারেনা তুমি জানোনা। ওড় কামাই খাচ্ছ আর ওকে তড়পাচ্ছ।এরফল একদিন তোকে ভোগ করতে হবেরে বিনা দোষে ছেলেটাকে অপবাদ দিয়ে যাচ্ছিস তুই আও কি ইচ্ছে করে তোর স্বামীর এক্সিডেন্ট করিয়েছে তোর তাই মনে হয় এতদিন কিছু বলি নাই অল্প বয়সে স্বামী হারা হয়েছিস মনে কষ্ট পাবি তাই। ওর কি বাবা ছিলনা লোকটা শুধু কি তোর স্বামী। এই ভাগ্নে আর কিছু এদের দিবিনা তুই অনেক করেছিস এখন এরা করে খাক। দোকান ভারায় আছিস না হয় আরেকটা বাড়ি ভাড়া করে থাকবি। দরকার নেই তোর মা ভাইয়ের, আমার বোন এত খারাপ। তোমার ছোট ছেলে সব আর বড় ছেলে ফেলনা, খাচ্ছ কার টাকায়, পরছ কার টাকায়, একবার বন্ধ করে দিক বুঝবে কেমন লাগে, ছেলেটাকে একবার ভর্তিও করালেনা। তোর ছোটর থেকে ভালো রেজাল্ট করেছিল আমার মনে আছে আমি ভুলিনাই, বাবা তোকে নষ্ট করেছে আর কেউ না, আমাদের কিছুই বলতে দেয়নি।
ভাই মামা তোমাকে ডাকলাম কিসের জন্য আর তুমি কি বলছ আমার যে টাকা লাগবে মামা না হলে তুমি দেবে, রিমার বাবা বলেছে এই চাকরিটা উনি দিচ্ছে আর হলেই তবে আমার সাথে রিমার বিয়ে দেবে। কিন্তু টাকা পাবো কই। ওমা কিছু বলছ না কেন।
মা একদম চুপ হয়ে গেল কিছুই বলল না।
মামা না তোদের কোন ঝামেলায় আমাকে আর ডাকবিনা আমি চললাম চল ভাগ্নে দোকানে জাবিনা। এ বাড়িতে তোর জন্য কিছু নেই রে। তুই আসলেই বড় অভাগা, যাকে নিজের মা দেখতে পারেনা। চল বেটা তোর মা না থাকলেও মামা আছে।
আমি আর কিছু না বলে সোজা চলে গেলাম দোকানে। মামাও এল আমার সাথে। মামা কিছু সময় বসে থেকে বলল অনেক করেছ মা আর ভাইয়ের জন্য এবার নিজের রাস্তা দেখ। তোমার মা হলেও আমার বোন তো, সারাদিন বাইরে থাকো কিছুই জানোনা মা ছেলে কি প্লান করেছে কে জানে। তবে আমাকে কিন্তু কিছুই বলেনি ওর বিয়ের ব্যাপারে মনে হয় তোমার মাও জানেনা, দেখলে শুনেই কেমন চুপসে গেল। তবে ভাগ্নে একটা কথা বলি চিরদিন কাহারো সমান নাহি যায়, তোমার মা তোমার সাথে যে ব্যবহার এতদিন করেছে এর ফল ওকে ভুগতে হবে। আজ তুই আমাদের বাড়ি আসিস যেতে হবেনা বাড়ি। কাল আমার ছুটি আছে বাকিটা কালকে দেখবো। এই চলি এখন এতদিন যখন কষ্ট করেছিস আরেকটু কর রাতে আয় কথা বলব।
আমি আচ্ছা দেখি কি করব ভেবে দেখি। তুমি যাও মামা।
মামা চলে গেল কোনমতে সন্ধ্যে চাপ সামলে আমি দোকান বন্ধ করে দিয়ে গিয়ে ষ্টেশনে বসলাম। সত্যি আজ যে আর কিছু ভালো লাগছেনা একা একা গত এই ৭ বছরের জীবন নিয়ে ভাবতে লাগলাম। এত কিছু করেও কি পেলাম আমি। মানসিক অত্যাচার ছাড়া আর কিছু না। ৯ টা বাজতেই মামা ফোন করল কিরে আসবি তো নাকি তোর মামী রান্না করেছে। বসে আছি দেখি ভাই ওপার দিয়ে বাইক নিয়ে উল্টো দিকে যাচ্ছে। ওই বাইকটা আমি কিনে দিয়েছি, সব তেল আমি ভরে দেই। কিন্তু কোনদিন ভাই আমাকে চালাতে বলেনি। আমি একটা ভাঙ্গা সাইকেল নিয়ে যাওয়া আসা করি। একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম এত তেল লাগে কত মাইলেজ দেয়। মা সাথে সাথে বলে উঠেছিল তা জেনে তোর কি হবে চালাতে পারবিনা কোনদিন। সব কথা গুলো মনে পড়তে লাগল। সাইকেলটা দোকানে রেখে এসেছি কোনদিকে যাবো বাড়ি না যেতে ইচ্ছে করছে বাড়ি গেলেই তো দুইজনে ধরবে আমাকে। এত বছরে কোনদিন এত তাড়াতাড়ি বাড়ি যাই নাই, না মামা বাড়ি চলে যাই অতদুর যাবো আবার সকালে আসবো কি করে না থাক দোকানে থেকে যাবো। এতসব ভাবতে ভাবতে ১০ শ টা বেজে গেল।
না বলে ঊঠে পড়লাম নিচে নেমে আসছি একজন বলল কিরে সাইকেল কই হেটে যাচ্ছিস যে। নে ওঠ আমার পেছনে। আমি উঠেও পড়লাম ওর পেছনে। বাড়ির সামনে রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে বলল কালকে দেখা হবে। দাড়িয়ে আছি কিছু সময় ১০ মিনিট লেগেছে আসতে। এখনো প্রায় এক ঘণ্টা দোকান্দারী করতাম। এত সকালে বাড়ি যাবো। এই ভেবে আস্তে আস্তে বাড়ির ভেতরে ঢুকতে যাবো এমন সময় উলটো দিক দেখলাম বাইক আসছে তাই রাস্তার পাশে আড়ালে দারলাম দেখি ভাই বাড়ির ভেতরে ঢুকল আমি বেশ কিছুখন দাড়িয়ে রইলাম এখানে তেমন লক জাতায়াত করেনা ১০ স টার পড়ে। কিছু সময় পড়ে মানে মিনিট ৫ হবে বেড়িয়ে বাড়ির দিকে তাকাতে দেখি সব অন্ধকার সামনের দরজা বন্ধ আলো জলছেনা। মিনিট পাঁচ আগেও যে লাইট জলছিল।তবে কি মা ভাই বাড়ি নেই একটু আগেই তো বাড়ির দিকে আসলো। প্রতিদিন এসে বেল বাজাই হয় মা না হয় ভাই দরজা খোলে আজকে তো সাইকেল আনি নাই। ডাক না দিয়ে আস্তে আস্তে ঘরের পেছনে দিকে গেলাম দেখি কি করছে। হ্যা পেছনের জানলা দিয়ে আলো আসছে পর্দা উরছে তাই। ওটা ছিল বাবা মায়ের ঘর। একটা আমার ঘর আরেকটা ভাইয়ের ঘর। আমার ঘর ভাইয়ের ঘরে আলো নেই আর ভাইয়ের ঘরেও আলো নেই। তবে মনে হয় ভাই আর মা মায়ের ঘরে আছে দেখি তো কি বলে ওদের কথা তো শুনতে পাইনা। গুটি গুটি পায়ে ওই জানলার দিকে গেলাম। পর্দা সরাবো ভয় লাগছে যদি দেখে ফেলে মা কি বলবে আবার। পাখার হওয়ায় শব্দ শোনা যাচ্ছে। মা আর ভাই কথা বলছে।