গরীব মা ছেলের সংসার - অধ্যায় ৬
মামা হ্যা তাই দেখিস তুই ওর কিছু করতে আর পারবিনা নিজের পায়ে নিজে কুড়ল মারলি তুই। কি ভুগবি সে আমি দেখবো, চল বড় আমারা যাই বলে দুজনে চলে এলাম। মামা বলল ভাগ্নে কি বলব সত্যি আমার বোন ভালোনা আপন ছেলের সামনে এমন কথা বলতে পারে না আমি ভাবতেই পারছিনা।
আমি মামা আমার মা উনি সব জানি আমি এখন আর কিছু মনে করিনা। আসলে এক কান দিয়ে শুনি অন্য কান দিয়ে বের করে মা তো যা বলে বলুক। তুই যাও মামা ওরা শান্তিতে থক্লে আমিও শান্তিতে থাকবো।
পরের দিন মামা সব ঠিক করে নিয়ে এল, আমি ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলে মামাকে দিলাম। আর বললাম তুমি যাও আমি পড়ে আসছি।
আমি বাড়ি গেলে কিরে আমি টাকা দিলাম তোর মা আর ভাইকে এই নে সই করে দে, টাকা ফেরত না দিলে এক বছর পড়ে এই বাড়ি বিক্রি করে আমি আমার টাকা নিয়ে নেবো। আমি আচ্ছা দাও বলে সই করেদিলাম।
ভাই বলল মাধ্যমিক পাশ তার আবার সই বলে অট্ট হাসি হাসল সাথে মাও।
ওরা টাকা পেয়ে খুবখুশি তবে আজকে দুটো খেতে পেলাম এবং আর দেরী করলাম না মামার সাথেই চলে এলাম। আসতে আসতে মামা বলল তুই ভুল করলি, আমার ছোট ভাগ্নে মানুষ না তোর মাকে বশ করে ফেলেছে বুঝলি।
আমি মনে মনে বললাম মামা আমি জানি আমার ভাইনা আমার মা সব করছে। আমি করে করুক। ওরা ভালো থাকতে পারলেই হল আর কেউ সাথে না থাকলেও আমার বাবা আমার সাথে আছে না হলে এই বয়সে ওদের ৫ লাখ দিতে পারতাম না।
মামা যাক রাতে বাড়ি জাস আবার দোকানে থাকিস না যেন।
আমি আচ্ছা বলে দোকান দারী করে বাড়ি গেলাম গিয়ে সাইকেলের বেল বাজাতে মা দরজা খুলে দিল। আমি এই ৭ বছর মাকে মা বলে ডাকিনা কারন মা বারন করেছে হয়ত ভুলে কোনদিন বলে ফেলেছি তারজন্য আমাকে কথা শুনতে হয়েছে। কিন্তু আজকে যে ছোটর কোন সারা পাচ্ছিনা। হাতমুখ ধুতে মা খাবার দিয়ে চলে গেল। প্রতিদিনের মতন। যেটুকু দেবে সেটুকুই। আর আমার অভ্যেস হয়েও গেছে চলে যাচ্ছে।
রাত পার করে আবার সকালে দোকানে আসার সময় টাকা রেখে এলাম বাজার করার জন্য। আবার দুপুরে বাড়ি গেলাম কিন্তু ছোটকে দেখতে পাচ্ছিনা। খাবার কপালে জোটে এখন। এইভাবে তিনদিন পার হলো। রাতে মা বলল তিনদিন হয়ে গেল টাকা নিয়ে গেছে আর আসেনি একটু ফোন করতে পারবে।
আমি মায়ের সামনে বসে ফোন করলাম সুইচ অফ।
মা বলল আমি একটু দাদার সাথে কথা বলব।
আমি মামাকে ফোন করে দিলাম মায়ের হাতে, আমার ছোট মোবাইল খুব সাউন্ড সব শোনা যায়।
মামা বলল বলিস কি তিনদিন হয়ে গেল এখনও আসেনি আগে বলিস্নি কেন।তবে কি বিয়ে করে নিয়েছে।
মা না কি জানি একবারের জন্য আসেওনি আর ফোন করেনি।
মামা ঠিক আছে কালকে দেখছি বলে রেখে দিল।
আমি শুতে গিয়ে একটু হাসলাম তবে আর ভাবনা নেই। সাইকেলে মামা এসে সব খবর নিয়ে খোঁজে গেল। আমি দোকানে চলে এলাম কারন আমাকে কিছুই বলেনি। মামা ছুটতে ছুটতে এসে আমাকে বলল চল বাড়ি চল খুব খারাপ খবর। আমি আচ্ছা বলে মামার সাথে বাড়ি গেলাম। মামা গিয়ে মাকে বলল তুই কিছু জানিস না তোর ছেলে জুয়া খেলে এই পর্যন্ত ১১ লাখ টাকা উড়িয়েছে, ওইযে রিমার বাবা আর ও পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে দুটোকেই। এখন থানায় আছে হাতে নাতে ধরেছে ১৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ তারপর কোর্ট।
মা শুনেই হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলল আমার ছেলে এই না হতে পারেনা দাদা কোন একটা ভুল হচ্ছে দাদা। কি হবে দাদা।
মামা যা শুনলাম ৯০ দিনের আগে বেল হবেনা, দাও আরো টাকা দাও চাকরি এই চাকরি করেছে তোর ছেলে। যাও এবার গিয়ে ছারিয়ে নিয়ে এস। জুয়ারী বানিয়েছিস তুই ছেলেকে। তুই একটা শয়তান মা, যেটা ভালো ছেলে সেটাকে না দেখে অপবাদ দিয়ে খারাপটাকে নিয়ে থেকেছিস দেখ অন্যায় করলে কি হয়। ছেলে চাকরি করবে তাইনা এখন জেলে গিয়ে কাজ করবে।
আমি মামা উত্তেজিত হবেনা একটা কিছু তো ব্যবস্থা করবে।
মামা আমি কথা বলে এসেছি উকিলের সাথে কোর্টে না তলা পর্যন্ত দেখাও করতে দেবেনা জেলে দিলে দেখা করা যাবে তবে না সব জানা যাবে। এই কেস ফাইল আমি তুলে নিয়ে এসেছি দেখে নাও তোমরা, তুই দেখ তোর ছেলের কীর্তি। না আমি যাই আমি আর কিছু করতে পারবোনা জার ছেলে সে দেখুক। কতদিন তোকে বলেছি সাবধান হতে শুনিস নি এবার কে ভুগবে নিজেই ভুগবে।
মা আমি তোমার সাথে যাবো দাদা আমাকে ওর সাথে দেখা করতে হবে।
মামা এখন আর সে পজিশনে নেই ধোলাই হচ্ছে ওদের পার্টে পার্টে কোর্টে উঠুক উকিল ধরেছি আমাকে জানাবে, এখন ভগবানকে ডাকো আর কিছু করার নেই, শেষ জীবন শেষ আর চাকরি হবেনা। কালো দাগ লেগে গেল। এমনি গেলে আমার বাড়ি যেতে পারিস।
মা আমি গেলে ও খাবে কি করে।
মামা কবে ওকে খেতে দিয়েছিস ভালো করে ওর খাবার ও করে নিতে পারবে তোর ওকে নিয়ে ভাবতে হবেনা গেলে চল।
আমি বললাম হ্যা যাও ওখানে গেলে কথা বলতে পারবে এখানে তো কেউ নেই।
মামা দেখ একে বলে ছেলে এত জ্বালা যন্ত্রণা দিয়েছিস এখনও তোর ভালো চায়। আর তুই হিরা ছেরে কাচ নিয়ে পরেছিলি কি বলব তোকে। চল যাই বলে ওরা চলে গেল আমি কিছুখন পড়ে ঘর বন্ধ করে দোকানে গেলাম।
এতদিন পড়ে আমার মনে একটু হাসি এল মা তার সাজা পাচ্ছে তাই ভেবে। কিন্তু মামাকে ফোন করলেও মায়ের সাথে কোন কথা বলিনা। ফাকে মামাকে টাকা দিয়েছি ভাইয়ের বেল করানোর জন্য। আর কিছুনা। দিন চারেক পড়ে মামা একদিন ফোন করল এই এসে তোর মাকে নিয়ে যা এখানে আর থাকতে চাইছেনা।
আমি মামা আমাকে তো মা ডাক্তেই বারন করেছে। দেখনা আমি কিছু বলিনা।
মামা বাবা দেখ আগেও তোকে বলেছি সময় হলে বুঝবে এখন তোর মা হারে হারে টের পাচ্ছে, নিয়ে গেছিলাম দেখা করানর জন্য হাতপা ভেঙ্গে দিয়েছে সোজা হয়ে দাড়াতে পারেনা এখন। এবার তো মা বুঝেছে বুঝলি আয় আসলেই বুঝতে পারবি নিয়ে যা দেখ ভালই হবে। এখন সব সময় বলছে আমার বড় ছেলেই ভালো। দাদা আমি ভুল করেছি দাদা ওকে বলে আমাকে মাপ করতে বলো। আয় ভাগ্নে তুই আয় এসে দেখ তোর মাকে নিয়ে যা।
আমি আচ্ছা মামা দোকান বন্ধ করে আসবো আমি।
মামা আচ্ছা ঠিক আছে আয় তুই তোর মামী রান্না করবে কোথাও খেতে হবেনা। চলে আসবি।
আমি দোকান বন্ধ করে মামা বাড়ি গেলাম গিয়ে স্নান করলাম। মামার পাকা বাড়ি, আমাদের বাড়ি হলেও সেই যত্ন নেই সব নোংরা হয়ে আছে তবে মামার বাড়ি চমৎকার। স্নান করে আসতেই বললাম মাআম তোমাদের খাওয়া হয়ে গেছে।
মামা হ্যা আমরা এত দেরী করে খাইনা রে তুই বস খাবার দিচ্ছে।
আমি টেবিলে বসতেই দেখি মা নিজের হাতে খাবার নিয়ে আসছে থালা ভর্তি ভাত হাতে বাটিতে করে মাছ নিয়ে এসেছে।
মা বলল বস বাবা বস আমি দিচ্ছি বলে আমার সামনে ভাতের থালা দিল। এবং পাশে একটা চেয়ার নিয়ে বসে পড়ল আর বলল নে খা নিজেই আমার থালায় মাছ দিল আর বলল এই দিয়ে অল্প অল্প খা খাসীর মাংস এনেছে তোর মামা।
আমি খাবো কি কান্না থামাতে পারলাম না। চোখ দিয়ে অঝরে জল পড়তে শুরু করল।
মামা শুধু বলল এই।