জামাই আদর By Lekhak - অধ্যায় ১
জামাই আদর
কাহিনী- লেখক
সুনীলের সঙ্গে মনীষার আলাপ হয় একটা জন্মদিনের পার্টিতে। সুনীলের বাবার ব্যাবসায়িক পার্টনার মিষ্টার প্রশান্ত চৌধুরীর একমাত্র কন্যা রিমঝিম। তারই জন্মদিনের পার্টিতে সুনীলকে উপস্থিত থাকতে হবে। এসব আর কিছুই নয়। সোসাল বাইন্ডিংস। সুনীলের যাবার ইচ্ছা একদমই ছিল না। বাবা জোড় করেছে, সুতরাং ওকে যেতে হবে। ব্যাবসার কাজে বাবা তখন থাকবে কলকাতা থেকে অনেক দূরে, সেই লন্ডনে। মিষ্টার প্রশান্ত চৌধুরী অনেক করে সুনীলের বাবাকে বলেছেন, আপনি না থাকলেও ছেলেকে অন্তত পাঠিয়ে দেবেন। তাহলেই আমার ভাল লাগবে।
বাবার জোড়াজুড়িতে শেষ পর্যন্ত ওকে আসতে হল। পার্টিটা তখন বেশ ভালই জমেছে। চারিদিকে হৈ হট্টগোল। এরমধ্যেই প্রশান্ত চৌধুরী সুনীলকে বুকে জড়িয়ে একবার থ্যাঙ্কস্ জানিয়ে গেলেন। উনি প্রচন্ড খুশি,বাবার জায়গায় সুনীল এই কর্তব্যটি পালন করেছে বলে। রিমঝিমও এসে গালটা একবার টিপে দিয়ে গেল সুনীলের। -এসেছ তুমি? আমার কি ভাল লাগছে।
সবাই আনন্দে মশগুল। সুনীল বড় হল ঘরের এক কোণে দাঁড়িয়ে তখন থেকে লক্ষ্য করে যাচ্ছিল পার্টিতে আসা বেশ সুন্দরী মেয়েটিকে। ঠোঁটে মৃদু হাসি নিয়ে ভদ্রতা দেখিয়ে রিমঝিমের মতন অতিথিদের বিনীত ভাবে অভ্যর্থনা করছে।
সুনীল ওকে লক্ষ্য করে যাচ্ছিল অনেক্ষণ ধরে। আসব না আসব না করেও রিমঝিমের জন্মদিনে আসাটা যেন সার্থক হয়েছে। কি সুন্দর সেজেছে মেয়েটা। অপরূপ দেহ সৌষ্ঠব। সুনীল একেবারে মুগ্ধ। যার জন্মদিন, সেই রিমঝিমও অনেক সেজেছে। কিন্তু ওকেও যেন ফিকে লাগছে ঐ সুন্দরী মেয়েটির কাছে।
রিমঝিমের সাথে সাথেই ঘুরছিল মেয়েটি। একেবারে ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মতন। সুনীলের তাই মনে হল। শুধু একবার রিমঝিম যদি ওর সাথে আলাপটাও একবার করিয়ে দেয়। কেক কাটার সময়ও সুনীল দেখল মেয়েটি রিমঝিমের পাশে দাঁড়িয়ে। সবার সাথে গলা মিলিয়ে ও যখন রিমঝিমকে হ্যাপি বার্থডে উইশ করছিল, তখনও সুনীল ওকে দেখছিল একদৃষ্টে।
কেক কাটার পর রিমঝিম সুনীলের কাছে এল। ওকে বললো, একা একা এখানে দাঁড়িয়ে রয়েছ কেন শুনি? পার্টি ভাল লাগছে না বুঝি? বোর লাগছে?
রিমঝিমের পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে ঐ মেয়েটি। সুনীল কিছু বলার আগেই রিমঝিম বলল, নাও আমার এই বন্ধুটির সাথে আলাপ করো। এর নাম মনীষা। আমার সবথেকে বেষ্ট ফ্রেন্ড। ওর সাথে কথা বললেই তোমার বোরনেশ কেটে যাবে।
মনীষা হাসছিল রিমঝিমের কথা শুনে। সুনীলের সাথে ওর আলাপ করিয়ে দিয়েই রিমঝিম আবার চলে গেল অন্য গেষ্টদের অ্যাটেন্ড করতে।
মেয়েটি সুনীলকে বলল, আপনি কিছু খাচ্ছেন না? কি খাবেন বলুন আমি এনে দিচ্ছি।
সুনীল বেশ লাজুক হয়ে পড়েছে মেয়েটা কাছে এসে পড়ায়। একটু ইতস্তত হয়েই ও বলল, না না আপনি ব্যস্ত হবেন না। আমি ঠিক আছি।
-কিন্তু আপনি যে কিছুই নিচ্ছেন না। ড্রিংকসও না।
-আমি ড্রিংকস করি না।
-ওমা তাই? আমি আপনার কথা রিমঝিমের মুখে শুনেছি। আপনি মিষ্টার সুনীল তো?
-হ্যাঁ কি শুনেছেন?
-ও বাবা। অনেক বড় বিজনেস ম্যানের ছেলে আপনি। রিমঝিমের বাবা, মানে মেসোমশাই আর আপনার বাবা তো একই বিজনেস এর পার্টনার।
কি সুন্দর করে কথা বলছে মেয়েটি। সুনীলের আড়ষ্টতা এবার একটু কেটে গেল। ও বলল-হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন। বাবা এখন এখানে নেই। উনি লন্ডনে। আমি একাই এসেছি পার্টিতে। আর আপনি?
-আমি?আমি মনীষা।রিমঝিমের আদরের বন্ধু। আমার বাবাও রিমঝিমের বাবার বিশেষ পরিচিত। অনেকদিনের আলাপ। বন্ধুই বলতে পারেন। বাবা মা এখানে কেউ নেই। আমি একাই এসেছি।
-আপনার বাবা মা এখন কোথায়?
-বাবা মা তো শিলিগুড়িতে। ওনারা ওখানেই রয়েছেন।
-আপনি শিলিগুড়ি থেকে একা এসেছেন?
-না না আমি কলকাতাতেই থাকি। আমাদের এখানেও একটা বাড়ী আছে। কলকাতায় থেকে পড়াশোনা করি। বাবা মা, মাসে একবার আমার কাছে আসেন। আমিও যাই বছরে দুবার।
শিলিগুড়ির মেয়ে কলকাতায় এসে রয়েছে? সুনীলের বেশ ভাল লাগছিল মেয়েটির সাথে কথা বলতে। কাছে দাঁড়িয়ে আয়ত চোখ মেলে সুনীলের সাথে কথা বলছে। মেয়েটি বেশ সহজ। প্রথম আলাপেই সুনীলকে বেশ অবাক করে দিয়েছে।
একে অপরূর সাজ। তার ওপর সুনীলকে আরও ধন্য করে দিয়ে মেয়েটি বলল, চলুন না আমরা ঐ সোফাটায় গিয়ে বসি।
হলঘরে তখন একটা সিডি চলছে পপুলার হিন্দী গানের। সবাই ওয়াইনের গ্লাস হাতে ধরে নাচে পা মেলাচ্ছে। মনীষা বললো, আপনি নাচবেন না?
-না না আমি নাচব না। সুনীলের নাচার থেকে এখন গল্প করতেই ভাল লাগছে বেশি।
জন্মদিনের কেক কাটা একটা টুকরো সুনীলের জন্য হঠাৎই নিয়ে এসে মনীষা বললো, নিন এই কেকটা অন্তত খান। আপনি তো কিছুই খাচ্ছেন না?
হাত বাড়িয়ে কেকটা নিয়ে সুনীল বললো, আপনি দেখছি আমাকে না খাইয়ে ছাড়বেন না।
মনীষা তখনও হাসছিল। সোফায় সুনীলের পাশে বসে পড়ে ও আবার কথা বলতে লাগল। খুব জানতে ইচ্ছে করছে সুনীলের। কলকাতায় ও কোথায় থাকে?
উল্টে মনীষাই ওকে জিঞ্জাসা করলো-আপনাদের বাড়ীটা কোথায়?
-গল্ফগ্রীণ।
-গল্ফগ্রীণ? ও মা তাহলে তো কাছেই।
-কাছেই?
-হ্যাঁ আমাদের বাড়ীটাতো টালীগঞ্জে।
-টালীগঞ্জ?
-হ্যাঁ আপনাকে বললাম না। আমাদের কলকাতাতেও একটা বাড়ী আছে। টালীগঞ্জের ঐ বাড়ীতে থেকেই আমি পড়াশুনা করি।
-আপনি একাই থাকেন?
-হ্যাঁ। চাকর আছে অবশ্য একটা। বাবা মাসে ঐ একবার আসেন। এছাড়া রিমঝিম রোজই আমার ওখানে যাতায়াত করে। আমার পড়াশুনা আর গল্প করে সময় কেটে যায়।
এই প্রথম সুনীলের মনে হল, টালীগঞ্জের ঐ বাড়ীতে ও যদি মাঝে মধ্যে যেতে পারত?
ওকে অবাক করে মনীষা বললো, আসুন না আমার ওখানে একদিন ভাল লাগবে।
একী? এতো আমি যা মনে মনে চাইছি, তাই তো দেখি মিলে যাচ্ছে। সবই তো ঐ বলে দিচ্ছে।
-সুনীলকে আরও অবাক করে মনীষা বলল, আপনি বিয়ে করেন নি এখনও?
-বিয়ে? না করিনি এখনও।
-সেকি এখনও করেন নি? ওমা কেন?
-সেরকম মেয়ে এখনও পছন্দ হয় নি তাই।
বিয়ের আগে প্রেমটা না হলে বিয়েটা যেন ঠিক জমে না। মনীষা তুমি কত সুন্দর। আচ্ছা তুমিও বোধহয় বিয়ে করনি মনীষা। তাহলে প্রেমটা নয় আমার সাথে?-কি পছন্দ নয়? একবার ভেবে দেখতে পারো মনীষা। যদি তোমার সাথে আমার আজ থেকেই প্রেম শুরু হয়ে যায়? তোমার দিকে ঠোঁটটা বাড়িয়ে দিই, চুমু খাওয়ার জন্য। তারপর তোমার উষ্ন বুকে মাথা রেখে একটু ঘন সান্নিধ্য- কি মনীষা তুমি কি রাজী? আমার সাথে প্রেম করতে?
সুনীল মদ না খেয়েও মাতাল হয়ে যাচ্ছিল মনীষাকে দেখতে দেখতে। ওর মুখে কথা নেই। শুধু মনের মধ্যে মনীষার সাথে প্রেম করার একটা অদম্য ইচ্ছা জাগছে। কিন্তু মুখে কিছু বলতে পারছে না। শুধুই নিজের মনের সাথে কথা বলে যাচ্ছে।
একটু পরে রিমঝিম আবার ফিরে এলো। মনীষাকে বললো-এই মনীষা। তুই যে দেখছি একেবারে জমেই গেলি এখানে। এবার একটু আয় আমার সঙ্গে। আমার বয় ফ্রেন্ড এসেছে। তোর সাথে ওকেও আলাপ করিয়ে দেব।
-যাঃ। যাও বা সুন্দর সুন্দর কথা হচ্ছিল মনীষার সাথে, রিমঝিম এসে ওকে সাথে করে নিয়ে গেল। সুনীলকে আবার একা ফেলে দিল। আবার কখন মনীষা ওর কাছে এসে গল্প করবে কে জানে? সারাক্ষণ একটা আশা নিয়ে সুনীল একা একা বসে রইল পার্টিতে।
মনীষা আর কাছে এলো না। একটু রাগ হচ্ছিল রিমঝিমের ওপর। কি যে করলো প্রশান্ত চৌধুরীর মেয়েটা। আলাপটা যখন জমে উঠেছিল, তখনই ওকে নিয়ে চলে গেল? আর কি এমন সুযোগ পাবে আবার? বোধহয় না।