কাকলির শয়তানের পুজো - অধ্যায় ৭
ঘরে ঢুকতে একটু ইতস্তত করছিল কাকলি। কিন্তু নিজেকে বুঝিয়ে ঘরের মেঝেতে পা দিলো। দেখলো সামনে বসে আছে সাগর। একটু ঝুকে কিছু কাজ করছে। খালি গা। উজ্জ্বল কালচে শরীর। পেশী বহুল শরীরে হালকা ঘাম জমেছে। শরীরের প্রতি খাঁজে আছে এক মোহময় আবেশ। অনেকখন তাকিয়ে থেকে কাকলির খেয়াল হলো সে কেন এলো এখানেই? স্বামী ছেলে সংসার সবই তো আছে। অথচ তার কেন শুধু এই লোকটার প্রতিই এত টান? সে কি কোনোদিন ভেবেছিল এভাবে এক পরকীয়া আকর্ষণ তার মধ্যে জন্ম নেবে? ভালোবাসার এত ক্ষমতা কেন?
মিনিট খানেক পর খুব জড়তা নিয়ে কিছুটা ভয় আর অনেকটা আবেগ নিয়ে সাগরকে ডাকলো কাকলি। সাগর একবার মুচকি হেসে ফিরে দেখলো তার দিকে।
সাগর: একি আপনি এখানে?
কাকলি কোনো উত্তর দিলো না তাই সাগর বলে চললো, ভাব দেখালো যেন সে খুব অবাক।
সাগর: কিছু হয়েছে নাকি? আর এখানে কেন? আপনি আমার ঠিকানা কি করে জানলেন?
কাকলি এত প্রশ্নে থতমত খেয়ে গেছিলো। একবার ঢোক গিললো। তারপর বললো
কাকলি: আমি আসলে... মানে তোমাকে কিছু কথা বলতে, মানে আমার ...
কথা শেষ করতে পারে না।
সাগর: কি বলছেন কি? আমাকে কিছু বলতে মানে? দেখুন সেই সময় যা হয়েছিল সেগুলো একটা দুর্ঘটনা ভেবে আমি এগিয়ে গেছি, আপনি কি চান?
কাকলি কাছে উত্তর নেই। কাকলি ডুগরে কেঁদে ওঠে। কাঁদতে কাঁদতে বলে
কাকলি: আমি কিছু জানি না। আজ সকালে একজন সাধুবাবা এসে বললো তোমার খুব বিপদ। (একবার নাক টেনে) আমি জানি না কিছু কেন এখানে এলাম, কেন তোমার জন্য চিন্তা হয়। কিন্তু হয় তো। কি করবো আমি?
এসব বলে কান্নার বেগ বেড়ে যায়। সাগর এবার একটু এগিয়ে আসে। কাকলিকে ধরে বসিয়ে দেয় চৌকিতে। পাশের জলের বোতল একটা এগিয়ে দেয় কাকলির দিকে। জল খেয়ে কাকলি একটু শান্ত হয়। সাগর এবার খুব হিসাব করে আপনি থেকে তুমিতে নামিয়ে আনে তার সম্বোধন। বলে
সাগর: আমি বুঝেছি। আমি তো তোমাকে কিছু বলি নি। চুপ কর। শোনো তুমি কি চাইছো তুমি জানো?
কাকলি সাগরের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে, ওভাবেই মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলে। তারপর সাগর আবার কিছু বলতে যেতেই কাকলি বলে ওঠে,
কাকলি: আসলে এমনটা করা আমার উচিত হয় নি। ছোট থেকেই কারো কাছে একটু ভালো ব্যবহার পাই নি। বুড়ি মায়ের কাছে আমি ছিলাম বোঝা, স্বামীর কাছে কাজ করার মেশিন। আর ছেলের কাছে ওই কাজের লোক। তোমার ব্যবহার, আমাকে দেওয়া সম্মান সবটা মিলে একটু ভালোবাসা জন্মেছে। তুমি রাগ করেছ, ঘৃনা করেছ আমাকে অথচ সেটা কাউকে দেখতে দাউ নি। এখনো কত ভালো করে কথা বললে, এটাই চাই। এটা যদি ভালোবাসা হয় তো আমি তোমাকে ভালোবাসি। খুব ভালোবাসি। আর তাই সাধুবাবার কথাই তোমাকে আগলে রাখার জন্য আসতে বাধ্য হয়েছি।
এতটা কথা বলে কাকলি অনুভব করে আর তার কোনো ভয় নেই। কাকলি তাকিয়ে দেখে সাগর এত কথা শুনে অবাক। ফিক করে হেসে ফেলে ও। সাগরও হেসে ফেলে।
সাগর: সত্যি ভালোবাসো?
কাকলি: হু
সাগর: বরকে?
কাকলি: না।
সাগর: একি?
কাকলি: এত দিন ওই লোকটার অনেক সেবা যত্ন করেছি, আমি কি পেয়েছি? অপমান, লাঞ্ছনা, আর কষ্ট ছাড়া। তিন হাজার টাকা দিয়ে বের করে দিয়েছে ঘর থেকে।
আবার কাঁদো কাঁদো হয়ে ওঠে কাকলি। এবার সাগর জড়িয়ে ধরে কাকলিকে। কাকলি ও জড়িয়ে ধরে সাগরকে। সাগর বোঝে এই মহিলা সত্যিই নিষ্পাপ। ভালোবাসা খুঁজছে শুধু তার কাছে, হয়তো একটু বয়সে বড়ই কিন্তু মনটা একদম কচি। কাকলিকে সে আঘাত করবে না। কিন্ত এই খেলা ওকে খেলে যেতেই হবে।
কাকলিকে এবার খাটে বসিয়ে বলে
সাগর: ধরা দিলাম তোমার ভালোবাসায়। শান্তি?
কাকলি হাস্য মুখে লাজুক হাসে। তার উথাল পাথাল অনুভূতি গুলো যেন শান্ত হয়। কিন্তু অনেক স্বপ্ন অনেক আশা সঙ্গে সঙ্গে ভিড় করে এসে জড়ো হয় তার সামনে। যুবতীর প্রথম যৌবনের মতো টগবগ করে ফুটতে থাকে তার মনের ভাবনাগুলো। কাকলি মুখ নিচু করে।
সাগর এবার নিজেই কাকলির হাতটা জড়িয়ে ধরে। তারপর বলে,
সাগর: আমি সবসময় তোমার পাশে থাকব। তুমিও থেকো। রিয়া বলে আমার এক প্রেমিকা ছিল। সে আর নেই। ছাই হয়ে গেছে, ওর জায়গাটা কাউকে দিতে চাই নি। কিন্তু তোমার নিষ্পাপ ভালোবাসায় দিতে বাধ্য হলাম। কথা দাউ ছেড়ে চলে যাবে না।
কাকলি: (ক্ষীণ গলায় বলে) বেশ (তারপর একবার গলা খাকরানি দেয়)
সাগর : নাও জল খাও।
কাকলি: (এবার অনেক আবদার আর অনেক আশা নিয়ে ) খিদে পেয়েছে।
সাগর: কি খাবে বলো? ঘরে তো চানাচুর আর বিস্কুট আছে। এই দেখ
কাকলি: ভাত খাবো। আমি সকাল থেকে কিচ্ছু খাই নি।
সাগর: তোমাকে ওই জন্য শুকনো শুকনো লাগছে, চলো বাইরে কোথাও খেয়ে আসি।
কাকলি: এই ডবকা শরীরেও শুকনো লাগছে তোমার।
কথাটা বলে ফেলে কাকলি বোঝে এটা বলা ঠিক হলো না।
সাগর তাকিয়ে দেখে কাকলির শরীরে। চোখের দৃষ্টিতেই তাকে স্পর্শ করে। মিনিট খানেক তাকে নিরীক্ষণ করে সাগর বলে, সত্যি ডবকাই বটে। কাকলি আর সাগর একে অপরকে দুস্টু দৃষ্টিতে দেখে। নিজেদের মাঝে সব বোঝাপড়া হয়ে যায় এই দৃষ্টিতেই। এটাই তো শুভদৃষ্টি।
ওরা বেরিয়ে যায় বাইরে। খাবার খেতে। বাইরের গজল তখন বদলে গেছে। হেঁটে চলে আসে ওদের রেস্টুরেন্টে। কাকলিকে বসিয়ে নিজের হাতে ব্যবস্থা করে নেই সব কিছু। বাড়ির ভাত এখানে পাওয়া যায় না ঠিকই কিন্তু ফ্রায়েড রাইস, ফিস কাটলেট, চিকেন হান্ডি আর কি সব নিয়ে আসে। টেবিলে বসে নিজেই খাবার বেড়ে দেয় কাকলির প্লেটে।
দুপুরের ফাঁকা রেস্টুরেন্টে অনেক গল্প করে ওরা। দুজনের ভালোলাগা খারাপ লাগা, পছন্দ অপছন্দ, রাগ, অভিমান, ইচ্ছা সব নিয়েই একটু আধটু কথা হয়। খাওয়ার শেষ করে বেরিয়ে আসে ওরা। কাকলির একবার ফোন আসে। ওই বুড়োবুড়ির ফোন। আজ তরকারি একদম মুখে তোলা যাচ্ছে না। কাকলি আমতা আমতা করে। রাত্রে মাংস কিনে খাওয়াতে হবে বলে।
ওখান থেকে বেরিয়ে সাগরের মোটরসাইকেলে চেপে বাড়ি ফিরে আসে কাকলি। কাকলি চলে যেতে গেলে সাগর ওর হাতটা চেপে ধরে। তারপর নিজের দিকে টেনে ঠোঁটে ঠোঁট লাগিয়ে দেয়। কাকলি নিজেকে উজাড় করে চুমু খায়। আবার যখন দুজন হুশ ফিরে দেখে দুজনের দিকে তখন দুজনেই লজ্জা পায়। কাকলির গোটা শরীরে বিদ্যুৎ খেলে যায়। সে দৌড়ে ঘরে ঢুকে যায়। দরজার ফাক দিয়ে মিষ্টি হেসে সাগরকে বলে টাটা। তারপর দরজা লাগিয়ে দেয়। সাগর ফিরে যাই। কাকলি আনন্দে একটু নেচে নেই।
রাত্রে আর কি কি করেছিল সে বিষয়ে যাচ্ছি না। তবে সে রাতে ঘুমাই নি। মানুষের অতি কষ্টেও ঘুম আসে না, আবার অতি আনন্দেও ঘুম আসে না। ভোরের দিকে ঘুমটা আসে। এত কিছুর মাঝেও একবার ধনঞ্জয় আর রোহানের কথা মনে পড়ে, সে দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে বুঝায় যেটা হচ্ছে সেটা দরকার । ওর ভালো থাকার অধিকার আছে। সাগরের কথা আবার ভাবতেই তার বেশি ভালোলাগে । হটাৎ বাইরে দরজায় কারো আওয়াজে ঘুম ভাঙে, এখন ও তো সকালের আলো ফোটে নি। বাইরে বেরিয়ে দেখে সাগর।
কাকলি: সাগর এত সকালে?
সাগর: তোমার জন্য। ফোন যে করবো নাম্বার তো নেওয়া হয় নি। তাই চলে এলাম।
কাকলি: উদ্ধার করেছ আমাকে। এসো।
সাগর: না তুমি জলদি রেডি হয়ে এসো। আমরা যাবো একটা জায়গায়।
কাকলি: কোথায় যাবো? আমার রান্নার কাজে যেতে হবেই।
সাগর: আমরা 9 টার মধ্যে চলে আসব। তুমি চলই না।
কাকলি: যা ঘুম পাচ্ছে, দাঁড়াও একটু রেডি হয়।
মিনিট 15 পরে সাদা চুড়িদার, গায়ে একটা লাল চাদর দিয়ে আসে কাকলি।
সাগর: উফফ যা লাগছে না তোমাকে পুরো নতুন বউ।
কাকলি: কোথায় যাবো?
সাগর: সিংহবাহিনী মায়ের মন্দিরে। আমাদের গ্রামের পাশে। সকাল সকাল যাচ্ছি যাতে লোকজন না থাকে বা থাকলেও কম।
কাকলি এবার বাইকে চেপে বসে। ওরা চলে যায় । রাস্তায় দুস্টুমি মজা করে, বিভিন্ন কথা হয়। নতুন প্রেমে কি আর কথার শেষ থাকে?