কমিউনিটি সার্ভিস - অধ্যায় ৩২

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-37308-post-4796972.html#pid4796972

🕰️ Posted on May 11, 2022 by ✍️ riddle (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 2184 words / 10 min read

Parent
2.5.1 শাতিরা বেগমের বিয়ে হয়েছিল পাকিস্তান আমলে ঢাকার বনেদি ব্যবসায়ি-আড়ৎদার পারিবারে। যুদ্ধের সময় পরিবারের কেউ কেউ রাজাকারে যোগ দিয়েছিল। সেই রেশে ব্যবসা-বাণিজ্য, বাড়িঘর ছেড়ে একরকম লুকোচুরি খেলে এদিক-ওদিক ভাড়া বাসায় থাকতে হয়েছে তাদের কয়েক বছর।  পঁচাত্তরে শেখ সাহেবের মৃত্যুর পর পরিস্থিতি আবার অনুকূলে চলে আসে। তবু ব্যবসাপাতি ফিরে পাওয়া, পুরনো জৌলুস উদ্ধার করা সম্ভব হয়না। সে অবস্থানগুলো অন্যকেউ দখল করে নিয়েছে।  শাতিরা বেগম স্বামীর সঙ্গে ভাড়া বাসা বদলেছেন বারবার টানাটানি করে। এরমধ্যেই এক জায়গায় থিতু হয়েছেন। জমি কিনে বাসা করেছেন পৈতৃকসূত্রে পাওয়া কিছু অর্থে।  ঢাকায় টিনশেড একতলা বাসা সত্তরের দশকে খারাপ ছিলনা। তাছাড়া সামনে ঘেসো উঠান, ভবিষ্যতে বাড়িঘর তোলা যাবে।  দেশের পরিস্থিতি কখনোই পুরোপুরি ধর্মীয় রাজনীতির জন্যে খুব একটা অনুকূল ছিলনা। বিশেষ করে যুদ্ধের পর তো নয়ই। মানুষ দাড়িটুপি দেখলে সেলাম দেয়, কিন্ত ভোট দেয়না।  শাতিরা বেগমের স্বামী হাকিম চৌধুরি ছিলেন পরিশ্রমী সৎ লোক। সেইসঙ্গে বেজায় ধার্মিক। সাধারণ মোল্লাকুলের হিপোক্রেসি দেখতে পারতেন না। স্বপ্ন দেখতেন আন্দোলনের। পাকিস্তানের পাকাপোক্তভাবে ইসলামি প্রজাতন্ত্র হওয়ার খবরে আফসোস করতেন। কিন্ত এদেশে সে আর হবার কই?  সমমনা সঙ্গী খুজতে খুজতে একটা ছোটখাট দল হয়ে যায়। নিজেরা নিজেদের 'সংগঠন' বলতেন। কোন রাজনৈতিক এক্টিভিটি ছিলনা, ছোট গ্রুপ। তারা বিশ্বাস করতেন সমকালীন রাজনৈতিক পরিবেশে ভাল কিছু সম্ভব না। পরিস্থিতি নিজেদেরই বদলাতে হবে। সেজন্যে সময় লাগবে, ধৈর্য্য ধরতে হবে।  সমমনা হলেও তারা একত্রে এক সমাজে থাকতে পারতেন না, তেমন জায়গা ছিলনা। একই বা আশেপাশের এলাকায় ভাড়া বাসা, নিজ বাড়ি এভাবেই ছিলেন। একটা নিবিড় কলোনির স্বপ্ন অধরা রয়ে যায় আরো অনেক বছর।  শাতিরা বেগম বড় ছেলের জন্যে বৌ দেখার সময় শিক্ষিত মেয়ে খুঁজছিলেন। স্বামী গত হওয়ায় সেদিক থেকে বাধা না আসলেও, ফ্যামিলির ভেতর-বাইরে এর বিরোধিতা ছিল।  গৃহকর্ত্রী নিজে শিক্ষিত হয়ে চৌধুরি বাড়িতে আসেননি। পরে সাক্ষর হয়েছেন নিজ ইচ্ছায়। সঙ্গি হয়েছেনে স্বামীর সাংগঠনিক কর্মকান্ডে। তার সবসময় মনে হয়েছে, সংগঠনটাকে সত্যিকারের অগ্রগতি পেতে হলে নারীদের অংশগ্রহণ দরকার। সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে দরকার শিক্ষিত মস্তিষ্ক। সামিতুন্নেছা সেতু ইডেন কলেজে বাংলা বিষয়ে বি.এ. ফাইনাল পরীক্ষা দেবার পরপর বিয়েটা হয়। বাপের বাড়িতে কিন্ত সবাই মাস্টার-উকিল, শিক্ষিতমনষ্ক ফ্যামিলি। ওপরঅলার ইচ্ছা, 'সংগ্রামী' ফ্যামিলিতে বিয়ে হলো।  শাতিরা বেগম নিজে বৌ চয়েজ করেছেন। উচা-লম্বা, ফর্সা চেহারা, ফিট গড়ন আর সুন্দর হাসি - বুঝেছেন ছেলের সঙ্গে মানাবে ভাল। বয়সের ব্যবধানটাও মডারেট।  প্রথম বৌয়ের সঙ্গে বয়সের ব্যবধান কম হলে ভাল বলে ধারণা শাতিরা বেগমের। হাকিম সাহেব যদিও কখনো তার আঁচলছাড়া হননি, ছেলের যে আরো কাওকে মনে ধরবেনা তার নিশ্চয়তা নেই। যেহেতু শরীয়তে আছে, পুরুষের জন্যে চারটে হালাল। ক'বছর যাক, নাতি-নাতকর হলে বড় বৌয়ের শরীরে ভাঙন ধরবে, মুটিয়ে যাবে। ছেলেও চল্লিশের কোঠায় পড়বে। ও বয়সে ভীমরতি হয় অনেকের।  তেমন হলে আর বেঁচে থাকলে শাতিরা বেগম নিজে ষোড়শী পছন্দ করে আনবেন। তাহলে অন্তত এক-দেড় দশক নিশ্চিন্তে কাটবে। ষাটের দিকে যদি আবার ইচ্ছে হয়, তবে বড় বৌ-ই কোন বিধবা মেয়েলোক জোগাড় করে দেবে। বৌ স্কুল-কলেজ পড়েছে তো কি হয়েছে, গড়ে তুলবেন শাতিরা বেগম নিজ হাতে। বিয়ের পর সেতু আবিষ্কার করে, শ্বাশুড়ি টাফ মহিলা। তখন দেশের মেয়েরা বোরকা-হিজাব করতোনা বললেই চলে। কলেজপড়ুয়া শহুরে মেয়েরা তো নয়-ই। শাতিরা বেগম বৌকে বোরকা-নেকাব শেখালেন। প্রথম প্রথম বাইরে যেতে হলে এমন বেশে নিজেকে আয়নায় দেখলে ভুত-টুত মনে হত। বান্ধবীদের সঙ্গে দেখা করতে পারেনা, বাপের বাড়ি যেতেও লজ্জ্বা লাগে। গরম লাগে বলে অভিযোগ করত।  ধীরে ধীরে মানিয়ে নিতে সমস্যা হয়নি। শাতিরা বেগমও অনুগত বৌ পেয়ে খুশি। বিয়ের আগে জয়নাল চৌধুরির ব্যবসা ভালই চলছিল। রানিং বিজনেস, হঠাৎ টানা লোকসান শুরু হল। নতুন বিয়ে, বৌ নিয়ে মাতোয়ারা হয়ে রইবে, তা-না। বাড়িতে যতক্ষণ থাকে ছেলে শুধু ব্যবসার সমস্যার কথাই বলে। শাতিরা বেগম ব্যাবসা বোঝেননা, কিন্ত পরহেজগার মানুষ, সমস্যা-সমাধান দিতে পারেন। নব্বইয়ের মাঝামাঝি ডেমরায় সংগঠনের প্রথম কলোনি উঠেছে, ছোট্ট কলোনি। নিজেদের বাড়ি থাকায় কলোনিতে ওঠেনি চৌধুরি পরিবার। তবে শাতিরা বেগম নিয়মিত কলোনিতে যাতায়াত করেন। খুব সম্মান ওখানে তার। মেয়ে-বৌদের নসীহত করা তো আছেই, সংগঠনের নানা সিদ্ধান্তেও তার মতামত নেয়া হয় অনেকসময়। যদিওবা ওসব পুরুষদের আয়ত্বে বলে ধরা হয়।  একদিন তালিম করে ফিরে আসার পর জানালেন, কলোনির মাদ্রাসায় ভাটির দেশের একজন নামকরা পীরসাহেব আসবেন। মাদ্রাসা নতুন, ভাড়া বাসায় চলছে। পীরালিতে বিশ্বাসী নয় সংগঠন, প্রচুর ভন্ডামি-বেদাতি আছে ওতে। কিন্ত এই পীর বিশেষ লোক, পরীক্ষিত।  শাতিরা বেগম রাতে খাবার টেবিলে বসে ঘোষণা করলেন, বৌমাকে খেদমতে পাঠানো হবে। তার কথার ওপর বাসায় কেউ আওয়াজ করেনা। হাকিম সাহেবও স্ত্রীর সিদ্ধান্তে আস্থা রাখতেন। আজও এর ব্যত্যয় হয়না। খাবার টেবিলে বসে না বুঝেই মাঝা ঝাঁকিয়েছে সেতু। শ্বশুরবাড়িতে এসে ধর্মককর্ম শিখলেও অনেক কিছুই অজানা তার। মনে পড়ল সেদিন এক ভাবী এসে আলাপ করছিল। খেদমত নিয়ে শাতিরা বেগমের কাছে টিপস চাইছিল। মনযোগ দিয়ে শোনেনি সেতু।  খবার পর প্লেট-গ্লাস ধুয়ে বিছানায় যাবার আগে শাতিরা বেগম বৌকে নিয়ে বসেন। খেদমত বলতে আদতে কি বোঝায়, তা ভেঙে বলেন। শুনতে শুনতে কান লাল হয়ে ওঠে নববধূর, অবিশ্বাস্য ঠেকে। ভয়ে শুধু হুঁ হুঁ করে যায়।  শোবার সময় স্বামীকে জিজ্ঞেস করে, সে-ও একই কথা বলে।  - পীরসাহেব হুজুর কামেল লোক। আম্মা ঠিক করেছে যেহেতু, ভালই হবে। বিজনেস দিনকে দিন ডাউন হচ্ছে, কিচ্ছু মাথায় ধরছেনা।  বলে ক্লান্ত জয়নাল চৌধুরি অন্য কাৎ হয়ে শুয়ে পড়ে।  মায়ের ওপর অগাধ বিশ্বাস জয়নালের। স্বামীর কাছে সাপোর্ট না পেয়ে দিশেহারা লাগে সেতুর। মুখে কিছু না বললেও পরদিন জরুরি দরকারে বাপের বাড়ি যাবার কথা বলে সেখানে গিয়ে বসে রইল, ফিরবেনা।  কি ঘটনা, তা তো বাসায়ও বলা যায়না। বিবাহিতা মেয়ে বাপের বাড়িতে অকারণে বেশিদিন থাকলে সমস্যা। তাই বাবা-মাও ফেরার জন্য চাপ দিচ্ছে।  শাতিরা বেগম ঠিকই বুঝেছেন বৌ কেন বাপের বাড়ি গেছে। রেগে না গিয়ে ক'দিন সময় দিলেন। সপ্তাখানেক পর নিজে যান বৌ নিয়ে আসতে। খুব একটা চেষ্টা করতে হয়নি। এমনি বাপ-মা চাপ দিচ্ছিল, তারওপর শ্বাশুড়ি বলেছে প্রয়োজনে বাসায় ভেঙে বলবে সমস্যার কথা।  তাতেই লজ্জ্বা পেয়ে ব্যাগ গুছিয়ে নেয় সেতু। ভয় হয় বাসায় ফিরে শ্বাশুড়ি বকাবকি করবেন। না, তেমন কিছু হলোনা।  বাসায় ফেরার পর শ্বাশুড়ি একটা পাতলা বই পড়তে দেয়। কাগজে ছাপা কাভার। সাদার ওপর লাল প্রিন্টে নাম লিখা, "নারীশিক্ষাঃ মুসাফিরের খেদমত"। কলোনি স্থাপনের পর দু-তিনজন মিলে প্রথমেই একটা প্রেস দিয়েছেন। সংগঠনের বইপত্র সব বাইরে ছাপানো যায়না। সবাই সংগঠনের মতের প্রতি সহনশীল নয়।  নারীশিক্ষা সিরিজের বেশকিছু বই আছে সংগঠন থেকে বের করা। দুয়েকটা শ্বাশুড়ি পড়তেও দিয়েছেন। ওগুলো পর্দা, সংসার, স্বামী-সন্তান নিয়ে চলাফেরা ইত্যাদি দৈনন্দিন প্রয়োজন নিয়ে লিখা। এই বইটি একটু অন্যরকম। সংগঠনের বইয়ে কখনো প্রাণীর ছবি থাকেনা, থাকে ক্যালিগ্রাফি। এই পুস্তিকায় এর ব্যত্যয় ঘটেছে। কাভার পেইজে আউটলাইন ড্রইংয়ে বোরকা পরিহিতা নারীর ছবি, ছড়ানো ঠোঁটে, গোলগোল চোখ হাস্যোজ্জ্বল। দুপাশে পাঞ্জাবি পড়নে দাড়ি-পাগড়ি পড়া দুজন পুরুষ। দুজনে মহিলাটির এক এক হাত ধরে দাঁড়িয়ে। কাভারের এক কোণে বাবলের ভেতর লিখা "সচিত্র"। "কে কে? বাবা-ভাই? বাবা-হাজবেন্ড?" ভ্রু কুচকে মনে মনে ভেবে পড়তে শুরু করে সেতু।  পুস্তিকার শুরু মুসাফিরের সঙ্গা দিয়ে। কে কতটুকু দূরত্ব কতদিনে পড়া দিয়ে কোথায় কয়দিন থাকলে "মুসাফির" বলে গণ্য হবে, এসব। ছবিতে দেখা যাচ্ছে একজন লোক মরুভূমির ওপর পোটলা মাথায় নিয়ে হাঁটছে।  সেতু পাতা উল্টে দেখল, প্রতিটিতে ছবি রয়েছে। রঙিন নয়, কালো আউটলাইন করে আঁকা। যে এঁকেছে তার হাত ভাল, বেশ বর্ণনা আছে ছবিতে।  দ্বিতীয় পেজে দেখা যাচ্ছে, জোব্বা পড়া লোকটি ক্লান্তভাবে কারো ঘরে বসে আছে, গৃহকর্তার সঙ্গে গল্প করছে হাতে পানির পেয়ালা নিয়ে। একজন মহিলা ভেতর ঘরের দরজায় উঁকি দিয়ে দেখছে।  তৃতীয় ছবিতে পরিবারের বাচ্চাকাচ্চারা সহ মুসাফির গোল হয়ে খেতে বসেছে। মহিলাটি মাথার ওড়না দিয়ে মুখ প্যাচিয়ে পর্দা রক্ষা করে খাবার বেড়ে দিচ্ছে। বর্ণনায়ও অতিথি আপ্যায়নের ফযিলত ও গুরুত্বের কথা রেফারেন্সসহ উল্লেখ করা হয়েছে।  চতুর্থ পাতায় গিয়ে মনযোগ বাড়ায় সেতু। মুসাফির ভেতরের কক্ষে খাটে বসে সেই মহিলাটিকে পাশে নিয়ে গল্প করছে। একটু আগে যার সঙ্গে মুখ ঢেকে পর্দা করছিল, এখন তার গা ঘেঁষে বসা। মাথায় ওড়নাও নেই, কালো চুল ছেড়ে রাখা। বর্ণনায় সাধু ভাষায় লিখাঃ "মুসাফিরের নিকট পৌঁছাইয়া খেদমতকারিনী তাহার অভিপ্রায় ব্যক্ত করিয়া নিয়্যত করিবেন। ইহা মুসাফিরের কর্ণগোচর হওয়ামাত্র উভয়ের মধ্যকার পর্দার বিধান উঠিয়া যাইবে।" পরের দু'পাতায় মুসাফিরের সঙ্গে গৃহিণীর ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। তারপরের পাতায় এসে চোখ বড়বড় হয় সেতুর, শুকনো ঠোঁট চেটে ঢোক গেলে।  মুফাসির খালি গায়ে বিছানায় শুয়ে আছে। পাশে দাঁড়ানো গৃহিণীর গায়ে জামা নেই, উবু হয়ে পাজামা ছাড়ছে! তারপর? তারপর মহিলাটি মুসাফিরের পাজামা খুলে দিচ্ছে।  "ওটা কি? ইছহ.. দাঁড়িয়ে আছে! ওটা হাতে নিয়ে.." মনে মনে আঁতকে ওঠে সেতু। কি হচ্ছে বুঝতে "খেদমতের বিধান" সেকশন থেকে পড়তে শুরু করে সেতু। দ্রুত পাতা উল্টে সামনে যেতে যেতে দেখা গেল ছবিগুলো রগরগে হচ্ছে। "আল্লাহ! কি করছে?" অস্ফুটে বলে ওঠে সেতু কাঁপা হাতে পাতা ওল্টাতে গিয়ে।  বিবসনা হয়ে মহিলাটিকে নিচে রেখে পুরুষটি কি করছে তা বেশ ভালমতই ফুটিয়ে তুলেছে শিল্পী। আঁকিয়ের নামও প্রচ্ছদের ভেতর দেয়া আছে - লাজমুন্নেছা। "নামের সঙ্গে কাজের মিল নেই!" ভাবে সেতু। ছবির নিচের বর্ণনাগুলো পড়ে কান ঝাঁঝাঁ করে গৃহবধূর। কলেজে থাকতে এক ইঁচড়েপাকা বান্ধবী একবার একটা বাজে বই এনে দিয়েছিল। সেটা পড়তে গিয়ে এমন লেগেছিল। তবে ওটায় এত ছবি ছিলনা, আর বাজে ভাষায় লিখা। এখানে ভাষা খুবই মার্জিত। ছবিগুলোও একদিক দিয়ে রুচিশীল।  "ওমা, কোলে কেন মহিলা?" ছবি দেখে অবাক হয়ে বর্ণনা খোঁজে সেতু।  প্রাসঙ্গিক কিছু বলা নেই। বলা আছেঃ "প্রশান্তি দিবার জন্য খেদমতকারিনী সর্বোত প্রচেষ্টা করিবেন। ক্লান্ত মুসাফিরের উপরি রতিপরিশ্রমের গ্লানি ভুলাইতে আলাপচারিতায় মশগুল থাকিবেন। মুসাফিরের সঙ্গে গোমড়ামুখ করিবেন না, হাসিয়া কথা বলিবেন। বাড়ির খোঁজখবর লইতে পারেন, সফরের বিত্তান্ত জানিতে পারেন। কড়া গলায় কথা বলিবেন না। মুসাফির ভিন্নভাষী হইলে ইশারা করিবেন। শরীরের নানা স্থানে হস্ত রাখিয়া যোগাযোগ করিতে পারেন।  মুসাফির আপত্তিকর কোন ভঙ্গিমায় ঘনিষ্ঠ হইতে চাইলে রাগিবেন না। বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্নরুপে মিলিত হওয়ার রেয়াজ রইয়াছে। যেমন - কোন কোন অঞ্চলে শিশ্ম প্রবেশ করাইবার পূর্বে "আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রজিম" পড়িয়া স্ত্রীঅঙ্গে তিনবার থুথু মারিয়া শয়তান তাড়াইবার রেয়াজ দেখা যায়। শরীয়ি তাগিদ না থাকিলেও ইহাতে দোষের কিছু নাই।  ক্লান্ত মুসাফিরের লিঙ্গোত্থান হইতে সময় লাগিলে, রতিকার্যের মধ্যে নেতাইয়া পড়িলে বা বীজস্থলন হইতে দীর্ঘকাল লাগিলে বিরক্ত হইবেন না। হস্ত প্রয়োগ করিয়া সহায়তা করুন। মেহমানের বিশেষ অঙ্গ ছোট বলিয়া তাচ্ছিল্য করিবেন না, তাহাতে পুরুষের মনোকষ্ট হয়। অনুরুপভাবে শিশ্ম অতিকায় হইলে গ্রহণ করিতে আপত্তি করিবেন না। আপনি সদিচ্ছা রাখিয়া জঙ্ঘা প্রসারিত করিলে খোদাতালা আপনার যোনি প্রসারিত করিয়া দিবেন বলিয়া বিশ্বাস রাখিবেন। তদুপরি রতিকার্যে বেদনা হইলে মিষ্টভাবে জানাইবেন। উঠিয়া গিয়া বা ক্রন্দন করিয়া মেহমানকে বিব্রত করিবেন না। বীজস্থলন পর্যন্ত যেকোন মূল্যে মিলন চালাইয়া যাইতে দিবেন এবং সঙ্গীকে উৎসাহিত করিবেন।" "অনেএএক নিয়ম.." একটানে পুরোটা পড়ে দম নেয় সেতু। "মানে হচ্ছে, যাই হোক, কমপ্লিট করতে হবে, হুমম.. ঠিকই তো, মাঝপথে উঠে পড়লে হবে? খারাপ দেখায়না?" নির্দেশগুলো যুক্তিপূর্ণ মনে হয় নববধূর। ছবিতে মনযোগ কম দিয়ে পড়তে পড়তে এগোয় সেতু। শেষদিকে এসে দেখা যায় গৃহিণী বিছানা থেকে নেমে কাপড় পরে নিচ্ছে। লোকটির ওই জায়গাটা নেমে আছে। মহিলা সবস্ত্র হয়ে ওড়না মাথায় দিয়েছে, আগের মত মুখও ঢেকেছে।  "বাবাহ, ঢঙ!" হেসে ফেলে সেতু। এই দ্বিচারিতা অদ্ভুত ঠেকে। নিচে সীসার ছাপ দেয়া হরফে ক্যাপশন দেখতে পায়ঃ "রতিকার্য সম্পন্ন হইবে বীজস্থলের মাধ্যমে। খেদমতকারিনী চেষ্টা করিবেন উহা পূর্ণরুপে দেহে ধারণ করিতে। মুসাফিরের বিশেষ অঙ্গ শিথিল হওয়া পর্যন্ত যুগল জোটবদ্ধ থাকিবে। আপনা হইতে অঙ্গ ছুটিয়া গেলে খেদমতকারিনী নিজেকে ছাড়াইয়া নিবেন। তাহাকে দ্রুত কাপড় পরিধান করিতে হইবে। কেননা এমতাবস্থায় পুনরায় মুসাফিরের সঙ্গে খেদমতকারিনীর পর্দার বিধান জারি হইয়া যায়।" ব্যাখ্যাটি পড়ে মাথা ঝাঁকায় সেতু। না বুঝেই সিরিয়াস বিষয় নিয়ে হাসাহাসি করায় জিভ কেটে নিজেকে তিরষ্কার করে। শেষ ছবিতে দেখা যাচ্ছে মুসাফির বেরিয়ে গেছে, গালভরা হাসি নিয়ে পেছন ফিরে হাত নাড়ছে। বাড়ির সকলে দোরে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে বিদায় দিচ্ছে। মহিলাটির মুখ আগের মত ওড়না প্যাচানো নেকাবে ঢাকা।  অবিশ্বাস, কৌতূহল, একমত-দ্বিমত মিলিয়ে ভারী মস্তিষ্ক নিয়ে বইটা রিভিশন করল কয়েকবার। বড় হুজুরের ফতোয়া, মাসআলা-হাদিস মিলিয়ে পুরো ব্যাপারটির গ্রহণযোগ্যতা অনুধাবন করে নিজেকে অপরাধী মনে হল। আর কিছু না হোক, একজন ওলী সেই কোন জেলা থেকে আসবেন, সারারাত ওয়াজ করে আবার সকালে ছুটবেন। ক্লান্তি প্রশমনের জন্যে এমন একজন লোকের কাছে সাদকা হিসেবে নিজেকে সঁপে দিতে পারলে গর্ববোধ হবার কথা। "এমন পরহেজগার ওলীকে খুশি করতে পারলে খোদাও নিশ্চই আমার নিয়্যতের দিকে তাকাবেন" মনে মনে ভাবে সেতু।  বইটা আবার খুলে শেষের দিকের একটা পাতা বের করে। হাত-পা ছড়িয়ে মুসাফির মুখে স্মিত হাসি নিয়ে শোয়া, উঠে বসে নিস্তেজ জননাঙ্গ মুছে দিচ্ছে বিবস্ত্র গৃহিণী। এই অবস্থায় পড়ার দোয়াঃ "মা'বুদ, আমি যেমন করিয়া আপনার বান্দার গ্লানি নিবারনের চেষ্টা করিলাম, আপনি তেমনি আমার নেক নিয়্যতগুলি পূরণ করিয়া দিন।" বিড়বিড় করে পড়ে সেতু। স্বামীর দুশ্চিন্তাঘন মুখটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে। গত এক সপ্তায় ব্যবসায়ের আরো ক্ষতি হয়েছে। দুদিন আগে এক কর্মচারী ক্যাশের পয়সা নিয়ে ভেগেছে। কিছুতেই কিছু হচ্ছেনা। কান্না চলে আসে। "খোদা, কেন তুমি আমাদের ওপর নারাজ? কেন?" ফিসফিস করে বলে নববধূ।  সে বাড়িতে আসার পর পরই এই দুর্দশা শুরু হয়েছে। না, সেতু কুসংস্কারে বিশ্বাসী নয়। শ্বাশুড়িও কখনো বৌকে দায়ী করেনি। তবু তো সন্দেহ থেকে যায়। সেতুর মনে হয় এ বুঝি খোদারই ইশারা। বইয়ের শুরুর দিকে ফিরে যায় "খেদমতের ফযিলত" সেকশনে। একটা পয়েন্টে বলা হয়েছেঃ "বদনজরের অস্তিত্ব হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। ফসলের ফলন, সুখি সংসার, সুন্দর বিবির ওপর বদচক্ষু লোকের জানতে-অজান্তে নজর লাগিলে বিশদ ক্ষতি হইতে পারে। সঠিক নিয়্যতে নিয়ম মানিয়া খেদমত প্রদান করিলে নজর কাটিবার নজির রইয়াছে।" পড়ে চোখ সরু হয় সেতুর। হয়তো এমন কিছুই হয়েছে। ব্যবসায়ি পরিবারে বিয়ে হওয়ার সুবাদে কোন কোন বান্ধবী, আত্মীয়-স্বজনের কন্ঠে ঈর্ষা টের পেয়েছে। তখন আমালে নেয়নি। সেখান থেকেই কারো নজর পড়েনি তো? বদনজর সত্যি হলে তো বিপদ।  সেতুদের এলাকায় এক লোকের দুর্নাম আছে, চোখ খারাপ। সে একবার একজনের বাগান দেখে বলেছিল - সুন্দর পেঁপে হয়েছে। কদিনের মধ্যে বিশাল ফলন্ত বাগান রোগে ধরে বিলীন। বেচারা কি বিব্রতই না হয়েছে। তখন লোকটির ওপর দোষ দেয়া পছন্দ করেনি সেতু। কিন্ত এখন মনে হচ্ছে তেমন কিছু হতেও তো পারে, পারেনা?  বইটা বুকে জড়িয়ে ধরে চোখ বুজে বিড়বিড় করে নববধূঃ "আল্লাহ, আমি আপনার নেক বান্দার ক্লান্তি মুছে দেবার জন্য আপন শরীর সাদকা করিবার নিয়্যত করিলাম। আপনি আমার নিয়্যত কবুল করুন। আমীন।" বইটা ড্রইংরুমের টেবিলে রেখে উঠে দাঁড়ায় সেতু। না বলে বাপের বাড়িতে গিয়ে রাগ করে বসে থেকে স্বামী-শ্বাশুড়ির মনে কষ্ট দেয়ায় অনুশোচনা হয়।  সকালে বাসায় ফেরার পর শাতিরা বেগম বৌয়ের হাত ধরে বসে বুঝিয়েছেন অনেক্ষণ ধরে। এইযে রুপ যৌবন, আকর্ষণীয় দেহবল্লবী, এগুলো কার নেয়ামত? যিনি বানিয়েছেন তিনি কেন বানিয়েছেনে? সেতু স্বীকার করে পুরুষের জন্যেই দিয়েছে। তাই বলে কি যাকে তাকে রুপ-যৌবন দেয়া যাবে, সেই পুরুষ কি শুধুই স্বামী নয়? হ্যাঁ, তাই। শাতিরা বেগম বুঝিয়ে বলেছেন, স্বামীরও ধরণ আছে। জয়নাল হচ্ছে স্বামী। কাল হালালা যদি হয়, আরেকজন স্বামী হবে সাময়িকের জন্যে। খেদমতে গেলে আরেক স্বামী ক্ষণিকের। সব ধরণের স্বামীরই হক রয়েছে স্ত্রীর শরীরে। যখন যে স্বামীর প্রয়োজন, সে স্বামীর বাহুডোরেই রইতে হবে। মানসিক প্রস্ততি নিচ্ছিলই সেতু, বইটা পেয়ে নিয়্যত করতে সুবিধা হল।
Parent