কমিউনিটি সার্ভিস - অধ্যায় ৩৯

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-37308-post-4811001.html#pid4811001

🕰️ Posted on May 20, 2022 by ✍️ riddle (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 2588 words / 12 min read

Parent
2.5.8 বিকেল থেকে শাতিরা বেগম পুত্রবধূর চালচলন খেয়াল করছেন। দুপুরের ঘটনার পর কোনরুপ পরিবর্তন আসে কিনা লক্ষ্য রাখছেন।  রাত পর্যন্তও তেমন কিছু মনে হলনা। স্বাভাবিকের মতই চলাফেরা। আছর, মাগরিব, এশা সবই পড়েছে। রাতের রান্নাবান্নাও করেছে। হাসুর মাকে বলে দিয়েছেন বৌকে যেন না খোচায়। তিনিও কিছু বলেন নি। সে নিজে নিজে মানসিকভাবে মানিয়ে নিতে পারলেই ভাল।  জয়নাল ফেরার পর খেতে বসেছে সবাই। আসার সময় তোষক কিনে এনেছে ছেলে। মামার কাছে খবর পেয়েছে নিশ্চই। - শুধু শুধু টাকা খরচ করতে গেলি কেন? তোষক কাল ধুয়ে দিবে হাসুর মা। রোদ আছে, দিনে দিনে শুকাইয়া যাবে। বলেন শাতিরা বেগম। - থাক, বাড়তি থাকলে লাগেনা?  জয়নাল বলে। স্বামীর পাশে বসে সেতু চুপচাপ খাচ্ছে। - সেতু, আমি সকাল সকাল বেরোব। দু-তিন সেট কাপড় ছোট ব্যাগে দিয়ে দিও।  - কই যাবি হঠাৎ কইরা?  জিজ্ঞেস করে মা।  - রংপুর যাওয়া লাগবে। মামা আর আমি যাচ্ছি। ভাল মাল আছে, কুইক গিয়ে ধরতে হবে। বড় একটা সুযোগ।  উত্তেজিত গলায় বলে জয়নাল।  - আহা, হঠাৎ করে.. জাহিনও যাবে?  - হুম। আজ শিপমেন্ট এল যে বিকেলে, ওদের কাছেই খবর পেলাম।  - রংপুর গেলে.. দিনে দিনে তো ফিরতে পারবিনা?  - চার-পাচদিন লাগতে পারে। কয়েক জায়গা থেকে মাল যোগার করে ট্রাক ভাড়া করে একেবারে ফিরব। কারো হাতে ছেড়ে দিলে কোয়ালিটি ভাল পড়বেনা, খরচও বেশি। এখন যত টাকা বাচানো যায় তত ভাল।  - চার-পাচদিন.. কই থাকবি, কি খাবি?  - থাকব হোটেলে, ভেবোনা তো।  - জাহিন চইলা আসবে না থাকবে?  - একসঙ্গেই ফিরব।  শাতিরা বেগমের কপালে ভাঁজ পড়ে। জাহিন সাহেব এমন সময়ে অনুপস্থিত থাকলে তো প্ল্যান বদলাতে হবে। - বৌয়ের পাতে মাছটা দে তো, খাইতেছেনা।  ছেলেকে বলেন শাতিরা বেগম। জয়নাল মাছের বড় পিস তুলে দেয় স্ত্রীর পাতে।  - পরিশ্রমটা কি হইতেছে, খাওয়া লাগবনা?  সেতু চুচচাপ মাছের কাঁটা বাছতে শুরু করে।  - তুই তো থাকবিনা, বাজার করা লাগবে। তেলওয়ালা গরুর মাংস আনাইতে হবে। কয়দিন ওজনটা বাড়ুক।  সেতু প্লেটের দিকে চোখ রেখেই বলে, - আর খেলে মোটা হয়ে যাব তো।  - হইলে কি অইল? পুরুষ মাইনষের শরীল থাকবে পিটা। বিয়ার পরে মেয়েলোকের শরীল বাড়া ভাল। চোখের টান আছেনা একটা? পেটটা আরেকটু ফুলবো। খাবলা দিয়া এনে-হেনে ধরলে যানি হাতে তেলতেলা লাগে! শ্বাশুড়ি বলে। চুপসে যায় সেতু। বিয়ের আগে শরীর ফিট ছিল তার। বিয়ের পর শরীর ভারী হয়েছে। আরো বাড়লে দেখতে খারাপ লাগবে।  - জাহিন যে থাকবনা, এখন কি করা?  ছেলেকে জিজ্ঞেস করেন।  - এসব তো তোমার কাজ, আমি কি বলব। বাজার কি কি লাগবে বলো। দোকানে বলে যাব, পুরো সপ্তার বাজার করে দিয়ে যাবে কেউ।  এড়িয়ে যায় জয়নাল।  - মারুফও যাবে তোদের সঙ্গে?  - বলতে পারিনা।  খাওয়াদাওয়ার পর নতুন তোষক পেতে চাদর বিছিয়ে দেয় সেতু। বিছানায় উঠতে উঠতে জয়নাল বলে, - সাদা পলি এনেছি, দেখেছ?  - হ্যাঁ, সঙ্গে ছিল।  তোষকের সঙ্গে চাদরের সাইজের সাদা টেবিল ক্লথ গোছের পলিথিন নিয়ে এসেছে। সেটার কথাই বলছে বোধহয়। - কেউ আসলে ওটা বিছিয়ে নিও, তাহলে আর নষ্ট হবেনা।  সেতু আরেক দফা লজ্জ্বায় পড়ে। মামা এই কথা বলতে গেল কেন? রাগ লাগে।  - আজকে পানি বেশি খেয়ে ফেলেছিলাম তো, ভয়ভয়ও করতেছিল.. এমন তো হয়না।  সাফাই দেয়ার মত বলে।  - হোক-নাহোক বিছিয়ে নিবা!  ধমকের সুরে বলে জয়নাল। বাধ্যের মত "আচ্ছা" বলে সেতু। জয়নাল খুব একটা রাগেটাগে না। তবে গলা চড়ালে নিচু হয় সেতু। স্বামীর সঙ্গে তর্ক করা পুরোপুরি মানা। - এখন বিছাবো?  এক মুহুর্ত ভাবে জয়নাল। মাথা নেড়ে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে। স্ত্রীর গা ছোঁয়নি দুসপ্তা হয়ে যাচ্ছে। দুশ্চিন্তা আর ক্লান্তিতে ওসবের আগ্রহ থাকেনা।  - কাল মারুফ আসতে পারে। আমাদের সঙ্গে যদি না যায় তবে আসবে।  - কে? দোকানের লোক?  জিজ্ঞেস করে সেতু। কাল আবার একদম অচেনা কারো সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে হবে - ভাল লাগেনা ব্যাপারটি। সে লোক কেমন হয় কে জানে।  - জাহিন মামার বড়ছেলে। এলে শোকেজ-আলমারি তালা দিয়ে রেখো। ওর হাত খারাপ!  - চোর নাকি?  অবাক হয় সেতু।  - অভ্যাস খারাপ একটু। বয়স কম, তুমি করে ডাকবা। ও কিন্ত ওর মত আবোল-তাবোল বলবে। তুমি নিজের প্রয়োজন মত কাজ করাবে। বলবে, ভাবী আসেন সিনেমা দেখে আসি - ওসব পাত্তা দিওনা।  জয়নাল ঘুরিয়ে পড়ল দ্রুত। সেতুর মন বিষন্ন। কি একটা দিন গেল, বাসায় এসে জিজ্ঞেসও করলনা, বৌ কেমন আছে। ওদিকে বলল অভিজ্ঞ বাপ থেকে খামখেয়ালি চোর ছেলেমানুষে অবনতি হচ্ছে। তবু স্বামীকে অযত্নশীল বলবেনা সেতু। তার তো সংসার চালানোর ভার নিতে হয়েছে। সে নিজেই ব্যাপক দুঃশ্চিন্তাগ্রস্থ।  ভাবতে ভাবতে শুয়ে পড়ে। ক'দিন ধরে ঘুমন্ত জয়নালের পাশে ঘন্টা-আধাঘন্টা জেগে থেকে তবে ঘুম ধরেছে, আজ পিঠ রাখতেই চোখ লেগে আসছে। শুধু ক্লান্তি নয়, শরীর জুড়ে প্রশান্তি। জয়নাল ফজরের সময় বেরিয়ে যায় ছোট্ট ব্যাগ হাতে নিয়ে। শাতিরা বেগম ভাবছিলেন বাজার করার কথা মনে থাকবে কিনা ছেলের। এত সকালে তো বাজার করে কারো কাছে দিতেও পারবেনা। সকালে বাসায় নাস্তা করে বসার পর দরজায় টোকা পড়ল। সেতু দরজা খুলে দেখল বাজারের ব্যাগ হাতে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে।  - স্লামআলাইকুম,ভাবি।  ছেলেটা দাঁত ভাসিয়ে হাসে।  - ওয়ালাইকুম সালাম, ভাল আছ?  - জ্বে, আপনে?  - ভাল।  - আসো, ভেতরে আসো।  মাথায় কাপড় দিয়ে ব্যাগটা নেয় সেতু। ছেলেটিকে দেখে অবাক হয়েছে। জয়নাল বলেছে বয়সে ছোট, তাই বলে এত ছোট? রাস্তাঘাটে দেখা হলে ওর সামনে মাথায় কাপড় দেয়ারও প্রয়োজন মনে করবেনা কেউ।  - পোলা আসছে?  বাজারের ব্যাগ নিয়ে রান্নাঘরে ঢুকতে শাতিরা বেগম জিজ্ঞেস করেন।  - হ্যাঁ, আসছে। কিন্ত.. বয়স অনেক কম মনে হয় যে?  - হইলো.. রাখ, ব্যাগ রাইখা পোলার সাথে আলাপ করো গিয়া। শরবত কইরা দেও, গরমের দিন। কি পাঠাইছে.. পটল, ডেঙ্গা.. আমি ডেঙ্গাগুলা ছিলি।  মোড়ায় বসা শাতিরা বেগম ব্যাগটা টেনে নেন। সেতু লেবু কেটে শরবত করতে লেগে পড়ে। শ্বাশুড়িকে ব্যস্ত হতে দেখে বলে, - আম্মা, আঙ্গুল ব্যাথ্যা করবে আপনার। আমি আসতেছি, রাখেন।  - তুমি যাও, ওরে ঘরে নিয়া যাও। আজকে কামের চিন্তা নিওনা।  - আপনি একা রান্না করবেন?  ভ্রু কুঁচকে বলে সেতু। মাথায় কাপড় দিয়ে শরবতের গ্লাস হাতে নিয়ে বেরোচ্ছে।  - হাসুর মা আইসা পড়বে এখনি। যাও তুমি, আল্লার নাম নিয়া। ফর্সা ছেলেটা গেঞ্জি-প্যান্ট পড়া। চেহারা কাঁচা, গোঁফের হালকা রেখা দেখা যায়। উচ্চতায় সেতুর কাঁধের নিচে।  - নাও, শরবতটা খেয়ে নাও।  ঢকঢক করে গ্লাস খালি করে ফেলে তৃষ্ণার্ত কিশোর।  - ভাবী, বাজার কেমন অইছে? আমি করছি বাজার। ভাইয়ে ভোর সকালে উঠাইয়া কইয়া গেছে এডি এডি কিনবি, সব ঠিক আছে?  - হ্যাঁ, ঠিক আছে।  হাসে সেতু। সবজি-মাংস-মাছ সব কিনেছে। ছেলেটার উজ্জ্বল চোখমুখে সরলতা। জয়নাল যেমন বলেছিল তেমন চোরাই স্বভাব তো মনে হচ্ছেনা। কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করার পর বলে, - ওইযে, বাথরুম, হাতমুখ ধুয়ে আসো।  ছেলেটা ওদিকে তাকায়। হেসে বলে, - এহন কিছু খামুনা ভাবী। সকালে নাস্তা করছি।  সেতু হেসে ফেলে। ছেলেটা ভারী সরল-সোজা।  - নাস্তা করেছ তো কি হয়েছে? এখন তো ভাবীর সঙ্গে...  বলতে গিয়ে কি মনে হতে থামে সেতু, খাটকা লাগছে। সন্দিহানভাবে জিজ্ঞেস করে, - তোমার নাম কি মারুফ?  - না, মারুফ ভাইয়ে তো গেছেগা জয়নাল ভাইয়ের লগে। আমি হাসমত। ক্যান হ্যায় মনে করছেন আমারে?  ছেলেটা দাঁত বের করে হাসে। সামলে নিয়ে সেতু বলে, - আ.. না.. হাহাহহ.. তাহলে নাস্তা করবেনা এখন আর?  - না, ভাবী। দোকানে কাম আছে।  - অ.. আচ্ছা, একটু বসো। দৌড়ে রান্নাঘরে গিয়ে শ্বাশুড়িকে জানায়, তার ভাস্তে আসেনি, এ অন্য ছেলে।  - কেডায়? দোকানের পোলা?  - জ্বি।  শাতিরা বেগমের চেহারায় বিরক্তি। উঠে একবার উঁকি দিলেন। বলেন, - হ.. থাক, ওয় আইছে যখন, থাকুক।  - আম্মা, কত ছোট দেখেছেন?  সেতু আঙুল তুলে দেখায় পর্দার আড়াল থেকে। মুচকি হাসে শ্বাশুড়ি। মাথায় কাপড় দিয়ে বলেন, - সই সই আছে। দোকানের পোলাপান পাইক্কা গেলে বিখাউজ হয়!  শাতিরা বেগমে ঢুকতে দেখে চট করে দাঁড়ায় ছেলেটি। সালাম দেয় সোজা হয়ে।  - কিরে, কেমন আছে তর বাপ-মায়?  - জ্বি চাচী, ভালা।  দোকানে সাধারণত আশেপাশের পরিচিত নিম্ন আয়ের পরিবারের ছেলেপেলেদেরই নিয়োগ দেয়া হয়। এই ছেলেটিও তেমনি। শাতিরা বেগম চেনেন।  - বয়, তুই বয়.. তোর ভাইয়ে কিছু কইছে?  শাতিরা বেগম পাশের সোফায় বসেন। - বাজারের কথা? আনা অইছে সব?  ছেলেটা ভাবছে বাজারে ত্রুটি হয়েছে।  - বাজার তো করছসই..  ছেলেটা বোকার মত চেয়ে থাকে শাতিরা বেগমের দিকে। কিছু ভুলে গেল কিনা? কি বিপদ!  শ্বাশুড়ির কথামত অযু করে নিচ্ছে সেতু। শ্বাশুড়ির নাছোড়বান্দা ভাবসাবে বিরক্ত। ছেলেটা তো সহজ কথাবার্তাই বোঝেনা, বড়দের বিষয় কি বুঝবে? সময় নিয়ে হাতে-মুখে পানি দিচ্ছে, এরমধ্যে ছেলেটা বিদেয় হবে ধারণা। রোগাপটকা একটা ছেলে, মুখ পরিষ্কার। আরে বাবা, দাঁড়ি না হলে খোকা বড়দের কাজ করবে কেমন করে? ভাবে সেতু।  - বৌমা, হইছে?  ডাক শুনে হাত চালায় সেতু।  - আসি!  পা মাসেহ করে বেরোয় দরজা খুলে। ঠিক দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে ছেলেটি। সেতু সরে দাঁড়ালে ঢোকে বাথরুমে।  - আম্মা, যাব রুমে?  শাতিরা বেগমকে বিরক্ত দেখাচ্ছে। ফুলহাতা ব্লাউজের বাঁ হাতাটা কোন কারণে তুলেছিলেন, নামাচ্ছেন। হাতের দিকে একবার তাকিয়ে ডাইনিং টেবিল থেকে জগ নিয়ে দরজার সামনে গিয়ে হাত ধুয়ে নিলেন। আঁচল দিয়ে হাত মুছে বললেন, - ডরে ধরছে, সময় লাগব।  সেতু ধারণা করার চেষ্টা করে শ্বাশুড়ির উত্তেজনা উবে যাওয়ার কারণ কি? কিশোর বেরিয়ে এসেছে।  - যা তাইলে এহন। খবর পাডাইলে আবি কিন্তু।  ছেলেটা মাথা নিচু করে বেরিয়ে যাচ্ছে দ্রুতপায়ে।  - জ্বে চাচী।  বলে বেরোল। শাতিরা বেগম কিচেনে ঢুকে গেলেন। ছেলেটার হাসিখুশি মুখ থেকে এমন জড়োসড়ো প্রস্থান দেখে সেতুর খারাপ লাগে। পেছন পেছন বেরোয়।  - হাসমত? আবার এসো, কেমন?  কিশোর গেট দিয়ে বেরোবার আগে ঘুরে তাকায়। হাসার চেষ্টা করে। সেতুকে ভালই লেগেছে তার। - চাচী কইছে রাইত আওয়া লাগতে পারে। ছেলেটির গলায় কৌতূহল।  - আমি জানিনা, তোমার চাচীই বলতে পারবে।  ছেলেটি দুপা পিছিয়ে কাছে আসে।  - চাচীরে ডর লাগে, হেইতে গুলাইয়া গেছে। আপনের লগে পারুম!  প্রথমে লজ্জ্বা, তারপর আগ্রহ আর কনফিডেন্স শোনা গেল। "আচ্ছা, আম্মা তবে ওর পরীক্ষা নিচ্ছিল!" বুঝতে পারে সেতু। হেসে চোখ নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে, - বড়দের কাজ, পারো তুমি?  - পারুম তো। খালি আপনে, চাচী থাকলে পারুমনা! মাথা নাড়ে হাসমত। ছেলেটা আসলেই কিউট, ভাবে সেতু। বয়সন্ধির পর অতি উৎসাহী বালকের মতই। লাজুক ছেলেটি মুখ ফুটে খায়েশগুলো বলতে পারছেনা। - গিয়ে বলো তাহলে চাচীকে।  - এহন না.. পরে।  চাচীর কথা শুনে পিছিয়ে যায় হাসমত। সেতুর মুখের দিকে কসেকেন্ড তাকিয়ে থেকে বেরিয়ে যায়।  সেতু লম্বা করে দম ছাড়ে। চোরটোরের চেয়ে তো ভালই ছিল, কিন্ত এত ভোলাভালা হলে চলবেনা। শাতিরা বেগমের বিরক্তিভরা চেহারার কথা ভেবে হাসি আসে। আম্মা যে কি ভাবেন...  দুপুরের রান্না শেষ করে ড্রইংরুমে বসে শাতিরা বেগম তজবি হাতে চিন্তামগ্ন। পাশে বসা পুত্রবধূর সঙ্গে শলাপরামর্শ করছেন। জুতমতো সমাধান হচ্ছেনা।  - অত পেশার লওনের কি আছে? মাদ্দেসার পোলাপাইন কাওরে কইলেই তো আহে।  হাসুর মা গতকালের তোষক হালকাভাবে ধুয়ে দিয়েছিল। কড়া রোদে শুকিয়ে গেছে। ওটা বেঁধে বসেছে একটু জিরোতে।  - তোমার মাথায় খালি আজাইরা বুদ্ধি। বাইরে জানলে হইব?  শাতিরা বেগম বিরক্তি দেখান।  - দরকারের সময় পোলাপান কোনটারে পাওয়া যায়না।  গজগজ করছেন। ছোট ছেলে সাদেকও হোস্টেলে গিয়ে পড়ে আছে। বাসায়ই থাকতে পারে, তাও বেশিরভাগ সময় হোস্টেলে থাকে। তাহলে নাকি পড়ালেখা ভাল হয়। দুদিন ছিল বাসায়, গতকাল সন্ধ্যায় আবার গেছে।  - কাওরে ডাকোনের আগে ভাবীরে জিগান, সমস্যা আছে নাকি? নাকি কাইলকার মত অইব? হাসুর মা বলে।  - আরেহ হা..  সেতু জবাব দেয়।  - চাচীর পয়লা দিন কিবা অইছিল? সমস্যা অইছে কিছু?  হাসুর মায়ের প্রশ্নে হাসেন, নড়েচড়ে বসেন গৃহকর্ত্রী। সিলেটি হুজুরের সঙ্গীদুজনকে খাইয়ে-দাইয়ে গোছগাছ করে মানসিক প্রস্ততির সুযোগ হয়নি সেরাতে। হাকিম সাহেবও অত রীতিনীতি জানেন না। যতটুকু জেনেছেন, সে মোতাবেক স্ত্রী ফলের ট্রে নিয়ে মেহমানদের ঘরে গেছে।  - বিছানায় দুইটা দামড়া ব্যাটা, পায়জামা পড়ে শুয়ে আছে। আমি ঢুকতেই একজন উইঠা আসল, হাত বাড়াইল ট্রে নিতে। আমি ভাবছি আমারে ধরবে। হাত-পা কাঁপাকাঁপি শুরু।  হেসে বলেন। - দুইজন কেন আম্মা?  সেতু জিজ্ঞেস করে। ওকে খেদমতে কাফেলার বইটা দেয়া হয়নি, জানার কথা না।  - দুইজনে দুই হাত ধরে বিছানায় নিয়ে গেছে, সুন্দর করে শোয়ায়ে দিয়েছে। খুব ভদ্রলোক ছিল ওনারা। দুই হাত ধরে নেয়ার কথা শুনে বইটির প্রচ্ছদের কথা মনে পড়ে সেতুর।  বলতে বলতে শাতিরা বেগমের ঠোঁট চওড়া হয়। তবে আর বেশি কিছু বলেন না। বর্তমানের চিন্তায় মগ্ন হন। পাশের বাসার মেয়েটির নতুন বিয়ে হয়েছে। জামাই নিয়ে বেড়াতে এসেছে। ছেলেটা দেখতে ভালই। জাহিনের বাবা আর ওবাড়ির মেয়ের বাবা বন্ধু ছিলেন। তাই একসঙ্গে জমি-বাড়ি করা। তবে গৃহকর্তার প্রয়াণের পর সংগঠনে ওদের কার্যক্রম কমে গেছে।  বাড়ির মেয়েরা পর্দাটর্দা করেনা। শাতিরা বেগম ওদিকে খুব একটা যান না। অসৎ সঙ্গ তার পছন্দ নয়।  সংগঠনে অতটা জড়িত না থাকলেও কুসংস্কারচ্ছন্ন লম্ফঝম্ফে আছে। মেয়ের বিয়ের সময় সাউন্ডবক্স বাজিয়ে ক'দিন খুব বিরক্ত করেছে। এই এক নতুন ঝামেলা যুক্ত হয়েছে। কলোনিতে এ জিনিস বাজানো নিষেধ। এরা বাইরে বলে নিষেধ মানেনা।  বক্স বাজানো নিয়ে একটু কথা কাটাকাটি হয়েছিল, তবে বিয়েতে গিয়েছিলেন শাতিরা বেগম। আজ হাসুর মাকে পাঠিয়েছেন প্রয়োজন বলে। মেয়েটা নাকি মুখ বেঁকিয়ে বলেছে, - আমার জামাই যাবে কেন? ওদের বৌকে পাঠান। আমাদের বাসায় গেস্ট আছে। দেবর-ভাসুর-ভাই.. পাঠালে পাঠান। ভুল হয়েছে, এখন এরা আবার কাকে কি বলে, লোকে জানবে। কেউ তাবিজ-টাবিজ করে থাকলে সতর্ক হয়ে যাবে। - ছেড়ি ওইটা আস্তা বিয়াদব!  হাসুর মা গরগর করে।  - ইমাম সাব হুজুরে লাংছেঁচা করতে আইছিলনা? ছেড়ি নাকি কয়, দুপুর বেলা হইছে, আপনের করা লাগনা। আস্তা বিয়াদব! বাপে যা পয়সাঘড়ি রাইখা গেছে, পোলায় উড়াইতেছে। ছেলের ফ্যামিলি বৌভাতে খেদমত করাবে, তা যথেষ্ট নয় মেয়ের মায়ের। এ বাড়িতেও তো হওয়া দরকার। কি করা যায়, নতুন ট্রেন্ড, তাতে গা ভাসাতে হবে তো। বৌ তুলে নেয়ার আগে হবেনা, ছেলের ফ্যামিলি মানবেনা। বিয়ের পরদিন যখন বৌভাত শেষে মেয়ে-জামাই ফিরেছে তখন করিয়েছেন।  কিছুক্ষণ নীরবতা, তারপর বলে, - চাচী, আমি একটা কথা কই, কমু?  - বলবা?  - জ্বি। ভালা না লাগলে মন কালা কইরেন না। অন্য কেউ অইলে কইতাম না, আপনেগোরে কই।  - হুম, বলো। সমস্যা নাই। তোমার বুদ্ধিও শুনি।  - যদি কাউরে ভাউ করবার না পারেন, হাসুর বাপে আইতে পারে কইলে।  - হাসুর বাপ?  চোখ তুলে তাকান শাতিরা বেগম। মোটা ফ্রেমের চশমার ওপাশ থেকে ভ্রুকুঞ্চন দেখা যায়।  - আমরা চাচী যার নুন খাই হের গুন গাই। আর এই কথা পেডে থাকব, মুখে আইবোনা। নিচ্চিন্ত থাকবার পারেন।  শাতিরা বেগম ভাবছেন ঠোঁট চিপে।  - হাসুর বাপ পারবে?  - পারবোনা ক্যান? কি যে কন চাচী.. হেহহেহহ..  - না, বুইঝো কিন্ত। এইটা খালি ধরলাম-মারলাম করলে হবেনা। নিয়ম কানুন আছে।  - হ, একটু কইয়া দিলেই হ্যায় হেই মতোন কাম করব।  - জাহিন কালকে সব বুঝিয়ে দিছে? মনে আছে কি-কি কেমনে-কেমনে?  বৌকে জিজ্ঞেস করেন।  - আগে যা যা বলেছে মনে আছে। সমস্যাটা হওয়ার পরে আর কিছু করেনি। কি কি যেন করবে বলেছিল।  সেতু মনে করার চেষ্টা করে।  - হ্যায় এগুলা বুঝে। ভাবীসাব খালি একটু ধরাইয়া দিলেই দেখবেন পারব।  শাতিরা বেগম তাকান সেতুর দিকে, - কি বল বৌ? - আম্মা যা ভাল মনে করেন।  সেতু মাথা ঝাঁকায়। কোন উৎসাহ নেই। - ভাবীসাবরে কইয়া দেই, আমার জামাই কিন্ত রিশকা বায়। দুফুরবেলা আইয়া খাইয়া ঘুমাইয়া আবার বাইর অইব বিকালে। রাইতে দশটা বাজে গ্যারেজে রিশকা থুইয়া হেরপরে আইব।  - আজকে তাড়াতাড়ি আসতে বলো। সোজা বাসায় চলে আসবে, খাওয়াদাওয়া করবে।  - ডাইরেক কেমন আইব? শইল্লে ধুলা-কালি না? গোছল দিয়া হের পরে না আইব। আগে গ্যারেজে থুইলেও হেই দশটাই বাজব ধরেন। - এইখানে করবে গোসল। জয়নালের লুঙ্গি-গামছা আছেনা?  - আইচ্ছা, তাইলে কইয়া দিমুনে।  কিচেনের দিকে চলে যায় হাসুর মা। - কিছু বলবা বৌ?  নতুন দিশা পাবার পর থেকে সেতুর মুখে চিন্তা। বুঝতে পেরে জিজ্ঞেস করে শ্বাশুড়ি। - আম্মা, ওই লোক রিকশা চালায়?  শাতিরা বেগম পুত্রবধূর বলার ধরণে অবজ্ঞার ছাপ পাচ্ছেন। ঠোঁটে মুচকি হাসি টেনে চোখে চোখ রেখে বলেন, - শোন বৌ, কামের জন্য কাওকে নিচা ভাবতে নাই।  - না না আম্মা, আমি ওরকম বলিনি..  সেতু পিঠ খাড়া করে পটপট বলতে শুরু করে। আম্মা যে এভাবে নেবে ভাবেনি।  - মানে, ওরা কেমন নোংরা, তারপর দেখেন না সুযোগ পেলেই ভাড়া নেবে বাড়িয়ে। তারপর মেয়েমানুষ দেখলেই কেমন করে..  - কেমন করে?  - কিভাবে তাকায়, ডাকে, বাজে কথা বলে পাশ দিয়ে যাবার সময়।  - কবে করছে? এই বাড়ি আসার পর থেকে যতদিন গেছ বাইরে, এমন হইছে?  মনে করার চেষ্টা করে সেতু। না, তেমনটা হয়নি। তবে কলেজে পড়ার সময় এমন অনেক সহ্য করেছে।  - না..  - এইটাই পর্দার গুণ। চেহারা-শরীর দেখাইয়া চলবা, ওদের দোষ কি? একটু দেখাইলা, একটু দেখাইলানা - ওদের মনে চায়না দেখতে? দেখলে মনে চায়না টেস্ট করতে? পুরুষ মানুষ তো আল্লা এমন কইরাই বানাইছে। আমি যে বাইর হই, রিকশাঅলারা সালাম দেয়, বলে খালা কেমন আছেন? আবার আরেক বেটী কোমর ঢুলাইয়া যায়, পর্দা-পুশিদা নাই। এক রিকশাঅলা আরেকটারে বলে, আয় বাজি ধরি বুনি কয় কেজি! আয় ধইরা পিছা মারি! শ্বাশুড়ির বলার ধরণে হেসে ফেলে সেতু।  - জ্বি আম্মা। - তাই বলি, কাজ কইরা ইনকাম করে এমন কাওরে নিচা ভাবার দরকার নাই। লুঙ্গি খুললে দেখবা উকিল-মোল্লার যা আছে রিকশাঅলারও তাই। বরং যারা খাটনি করে ওরা সুখ দিতে পারে বেশি।  সেতু বাধ্য মেয়ের মত হুঁ হাঁ করে জানায় বুঝতে পারছে।  - রিকশা চালায় না কি চালায় সেইটা কথা না, তুমি দেখবা তোমারে কেমন চালাইতে পারল।  - জ্বি।  - মাদ্রাসা থেকে মুফতি ডাইকা আনতে পারব, আসবে। কিন্ত লাভ কি, শুকুর নাই। সপ্তায় সপ্তায় দাওয়াত। এই লোক সারাদিন রিকশা টাইনা এসে যখন শরীর ঠান্ডা করে দিবা, দোয়া করবে। মুখে দোয়া করা লাগেনা, মন থেকেই আসে।  - তাহলে কিভাবে নিয়্যত করব, সাদকার নাকি খেদমতের?  - সদকার নিয়্যত কর, ছওয়াব বেশি।  শাতিরা বেগম তজবি জপায় মন দেন। সেতু মনে মনে নিয়্যত করে ফেলে। 
Parent