কমিউনিটি সার্ভিস - অধ্যায় ৫

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-37308-post-3305319.html#pid3305319

🕰️ Posted on May 17, 2021 by ✍️ riddle (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 1496 words / 7 min read

Parent
১.২ সোহানীর কথায় বুকে ধাক্কা খেয়ে হাঁপিয়েছি কিছু্ক্ষণ। মনে হচ্ছিল এই বুঝি হার্ট এট্যাক করব।  চোখেমুখে পানি দিয়ে দাঁত মাজতে মাজতে শুনলাম ঘটনা। বাবুল ভাইয়ের বৌ চাদনী ভাবী নাকি একটু আগে ফোন দিয়েছিল। শেষরাতে পুলিশ মাদ্রাসা থেকে মওলানা সাহেবকে ধরে নিয়ে গেছে। দানিয়েল ভাই, বাবুল ভাই সহ আরো কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করার প্ল্যান আছে পুলিশের। তারা তখনই একসঙ্গে পালিয়ে কোনদিকে গেছে। ভাবী বলেছে আপাতত কোন খোজ খবর নেই। ফোন ট্যাপ করা হতে পারে, তাই ওনারা বন্ধ করে বসে আছে, কাওকে কল করছেনা।  খুব বেশি তথ্য পাওয়া গেলনা। কেন পুলিশ লাগল তাদের পেছনে সেটা জানা নেই ভাবীর।  সোহানী প্রথমে খুব আতঙ্কিত হয়ে গিয়েছিল। আমি বুঝিয়ে সুঝিয়ে চুপ করিয়েছি। সে বুদ্ধিমান মেয়ে, নিজেই বুঝতে পারছে মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে।  যতই ভাবছি আমার নিজের হাত-পা শীতল হয়ে আসছে। ঘটনা যা-ই হোক সঙ্গেদোষে লোহা ভাসে। তারওপর পটেনশিয়াল ক্রিমিনালের বৌ আছে আামার সঙ্গে।  আমি যতটুকু বুঝি, ওদের না পাওয়া গেলে পুলিশ বৌদের থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। সোহানীকে খুঁজতে খুঁজতে এখানে চলে এলে পাবে আমাকে। দানিয়েলের বৌ আমার সঙ্গে কেন, ব্যাখ্যা করা মুশকিল হবে।  খবরটা শুনেছি মিনিট বিশেক, দরজায় বেল বাজল। আমার দরজায় সাধারণত বেল বাজেনা।  "সোহানী, তুমি ইয়ে, লুকাও।" লুকনাোর কথা শুনে মেয়েটা আবার ভড়কে গেল।  "বাথরুমে ঢুকে বসে থাকো আপাতত।" বলে দরজার কাছে গেলাম। ও বাথরুমে ঢোকার পর খুললাম দরজা।  - কি অবস্থা, কিসব হইতেছে শুনলাম..  বাড়ির কেয়ারটেকার জামি কাকা হাতে একটা ট্রে নিয়ে ঢুকেছে ঘরে।  - নাস্তা, দুইজনের। কই রাখব? দুইজনের নাস্তা শুনে আমার পড়ে যাবার যোগার। শুধু কাকার হাস্যোজ্বল মুখ আর বত্রিশপাটি দাঁতের হাসি না থাকলে লাফঝাঁপ মেরে পালাতাম এখুনি। আমি নাস্তা বাসায় এনে খাইনা। কাকাকে দিয়ে তো কখনোই আনাইনি। ট্রে রাখার জায়গা বলতে তো বিছানাই। কাকা বিছানার সামনে এসে জায়গা খুঁজছে। মনে মনে বলি, শিট!  সোহানীর অন্তর্বাসগুলো বিছানায় দলা পাকিয়ে পড়ে আছে। মাঝখানে ভাঁজ করে রাখা তোয়ালেটা সরিয়ে দিলাম। বিছানার ওপর ট্রে রাখল জামি কাকা। ডালভাজি আর পরটার গন্ধে রুম ভরে উঠল। পেট গুড়গুড় শুরু হয়েছে। সকালে এমন সময় আমার নাস্তা করার কথা। আজ খিদে ভুলে বসে আছি।  কাকার ভাবসাব বন্ধুবৎসল মনে হচ্ছে। কিন্ত ঘটনা না শোনা পর্যন্ত মনের খুঁতখুঁত থামছেনা। কাকা ট্রে রেখে বেরিয়ে যেতে গিয়ে থামল দরজার সামনে। আমি কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই বলতে শুরু করল, - মওলানা সাব ফোন দিছে আমারে শেষ রাইতে। আমি তো প্রথমে কই কোন বাটপার জানি। ঘুমাইয়া ঘুমাইয়া দিছি একটা গাইল! তওবা, তওবা..   লজ্জ্বিত হয়ে পান খাওয়া লাল জিভ কাটে কাকা।  - কথা বইলা বুঝলাম আসলেই মওলানা সাহেব। কইল, একটু কষ্ট করা লাগবো। মওলানা সাবের কাছের লোকের জন্য কষ্ট আবার কি, দোয়া পাইলেই চলবে আমার।  হাসি আরো চওড়া হয় জামি কাকার। জিজ্ঞেস করি, - আর কি বলল মওলানা সাহেব? কখন ফোন দিয়েছিল? - তিনটা-চাইরটার দিকে কল দিছে মনে হয়। মনে হইতেছিল খুব তাড়াহুড়া। আমি সকালে আর কল দিয়া পাইনাই। তেমন কিছু বলেনাই। বলছে, আপনেদের যা লাগবে আমারে জানাইতে। আমারে মিসকল দিয়েন, নাইলে নিচে গিয়া ডাক দিবেন। মনে হচ্ছে কোন সূত্রে মওলানা সাহেবও আগে থেকে পুলিশ আসার খবর পেয়েছিলেন, কিন্ত ধরা দিয়েছেন।  - সকাল বেলা ফোন দিছিলাম, ফোন বন্ধ। আমারে অবইশ্য বলছে যখন দরকার হবে উনিই ফোন দিবে।  কাকা এর বেশি কিছু বলতে পারলনা। আমি মওলানা সাহেবের গ্রেপ্তার হবার খবর চেপে গেলাম। আমার মত সে-ও ভয় পেয়ে গেলে সমস্যা হবে। নির্ঘাৎ বের করে দেবে আমাদের।  কাকা চলে যাবার পর সোহানী ভয়ে ভয়ে বেরিয়ে এল। কাকার কাছ থেকে পাওয়া তথ্য শুনে ওর দুশ্চিন্তা একটু কমল। চুকচুক করে বলল, - ইশ, লোকটা নিজের বিপদের মধ্যেও আমাদের জন্য কষ্ট করছে।  দুজনেরই বেশ খিদে পেয়েছে। ডালভাজি আর পরটা সাবাড় করতে খুব বেশি সময় লাগলনা।  সোহানী রাতে ঘুমায়নি বললেই চলে। ওর চোখ লাল হয়ে আছে গাঁজাখোরের মত। রাজি করালাম একটু ঘুমিয়ে নিতে।  আমার বাইরে যাওয়া উচিত কিনা তা বুঝতে পারছিনা। কারো সঙ্গে কোনরকম যোগাযোগ করতে পারলে ভাল হত। বিশেষ করে কমিউনিটির কারো সঙ্গে।  এগারোটার দিকে আসল বৌ ফোন দিল। ব্যাকগ্রাউন্ডে ওর ছবি ভেসে উঠতে নিমিষে অপরাধবোধ চাড়া দিয়ে উঠল। ঘুমন্ত সোহানীকে রেখে বেরোলাম রুম থেকে, তালা দিয়ে বাইরে গিয়ে ধরলাম কল। বৌ প্রায়ই ভিডিও কল দিয়ে বসে।  - হ্যালো মুনিরা? কথা বলা শুরু করতে টের পেলাম বুক প্রচন্ড ধুকধুক করছে। এলাকার এক ঘটক আপার মাধ্যমে ওর সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। প্রথমবার ফোন দিয়ে কথা বলার সময় হয়েছিল এমন। সেদিন লাজুকতায়, আজ অন্যায়বোধে।  কি খাইছেন, কি করেন, প্রাইভেট পড়াইতে যাবেন কখন - এসব গৎবাঁধা প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে নিচে নেমে গেলাম। কেয়ারটেকার আঙ্কেলকে দেখা যাচ্ছেনা।  কেচিগেটের সামনে দাঁড়িয়ে দিনের আলোয় নিজেকে নিরাপদ মনে হল গুমোট ঘরের তুলনায়। মনে পড়ল ফ্যানের ক্যাপাসিটর পাল্টানো দরকার। মাঝেমাঝে ক্যাপাসির যায় ফ্যানটার। বদলালে ঠিকমত চলে বেশকিছুদিন। একটা ছাত্র পড়ানোর কথা। বেরিয়েছি যখন, পড়াতে চলে গেলাম। খুব একটা মনযোগ দিতে পারলাম না। লবণের সন্ধি বিচ্ছেদ কেন নো-অন হয়, সে জবাব ক্লাস ফাইভ পড়ুয়া ছাত্রকে দিতে গিয়ে আমতা আমতা করেছি। আমি যে উত্তর জানি, তা না। তবু তো একটা হাবিজাবি বলে বুঝ দিতে পারার কথা।  ক্যাপাসিটর কিনে প্যান্টের পকেটে পুরেছি আর জোহরের আযান হচ্ছে, একটা বেজে গেছে। মসজিদে হয়তো আজ আর যাওয়া উচিত না। কমিউনিটির কাওকে ধরতে হলে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা-সোর্স ওখানেই আগে বসে থাকবার কথা।  মসজিদে না গেলে যে কিছুই জানার উপায় আমার নেই, সেই তাড়নায় একটু আগে আগেই চলে গেলাম।  নামাজ শেষে বেরিয়ে যাবার সময় কেউ নাম ধরে হাঁক দিল। ইমাম সাহেব আমাকে হাতের ইশারায় ডাকছেন। মনে হচ্ছে কিছু জানা যাবে। যোহরের ওয়াক্তে কাওকে পাইনি কমিউনিটির। এমনিতেও সাধারণত থাকেনা ছুটির দিন ছাড়া। সবাই কাজেকর্মে থাকে। ইমাম সাহেব ইয়াং বয়সী। মওলানা সাহেবের মাদ্রাসায় পার্ট টাইম শিক্ষকতা করেন। আমার চাইতে খুব বেশি হবেনা বয়স। - হুজুর, কি হচ্ছে বলেন দেখি? আমি ফিসফিস করে বলি। যদিও আমাদের আশপাশে কেউ নেই। মুসল্লিরা বের হবার তোড়জোড় করছে, কেউ দাঁড়িয়ে নেই।  ইমাম একটু থমকাল আমার প্রশ্নে। বলল, - আগে বলেন কেমন আছেন, সব ভাল তো? আমার মনে হল ভুল করে ফেলেছি প্রথমেই জিজ্ঞেস করে। হয়তো উনি এমনি ডেকেছে কুশলাদি বিনিময়ের জন্য।  - হ্যাঁ, হ্যাঁ, আপনি?  - জ্বী।  স্মিত হাসে ইমাম। আমি আর কিছু বলার খুজে পাইনা। সে-ও চুপচাপ দাঁড়িয়ে। তবে কিছু তো বলবে বলেই মনে হচ্ছে।  - আল্লাহর রাস্তায় কাজ করতে গেলে অনেক জুলুম, নির্যাতনে পড়তে হয়।  আফসোসের সুরে বলেন। মনে হয় বলার আগে খুব ভেবে চিন্তে নিয়েছে। - মওলানা সাহেব কই আছে এখন?  মোটামোটি নিশ্চিত অন্তত মওলানার ব্যাপারে ইমাম ওয়াকিবহাল। আর সেই কথাই বলতে চাইছে। এখন আমার কাজে সে আসবে কিনা তা জানতে হবে।  - হুজুর আছেন থানায়ই। ভেতরের খবর শুনলাম, মামলার প্রস্তততি হচ্ছে। পুলিশ নাকি রিমান্ড চাইবে। আল্লাহ রহম করো!  - কি হল? মানে, ঘটনাটা কি?  - নোয়াখালির গ্যাঞ্জামে ফাঁসিয়ে দিচ্ছে হুজুরকে। বলেন দেখি, ওরা কই আর আমরা কই?  সকালে খবরে দেখেছি ওইদিকে নাকি গন্ডগোল বেড়েছে। এক জায়গায় ইউএনও 144 ধারা জারি করেছে। মাদ্রাসার ছেলেদের দিয়ে একটা বাস পোড়ানো হয়েছে।  - কমিউনিটির মানুষজন পালাচ্ছে কেন তাহলে? মওলানা সাহেবকে নাহয় ধরল।  দানিয়েল ভাইদের ধরতে আসার কারণ নাম উল্লেখ না করে জানতে চাইলাম।  - ধরতেছে যাদের সঙ্গে হুজুরের উঠাবসা ছিল। দুই-একজনের নামে নাকি সেইম অভিযোগ আছে।  শুনে ঢোক গিললাম। মাদ্রাসায় কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করলে দেখা যাবে আমার নাম বা বর্ণনা চলে এসেছে। গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে অনেকটা সময়ই তো মওলানা সাহেব আমায় বগলদাবা করে রেখেছিলেন। শুনলে পুলিশ ভাববে আমাদের মধ্যে বহুত মহব্বত। শঙ্কা হবার আরো বড় কারণ, যাদের পুলিশ ধরতে চাইছে তাদের মধ্যে চারজনই গতরাতে হালালার আনুষ্ঠানিকতায় উপস্থিত ছিল।  - হুজুরের সঙ্গে আর আলাপ হয়েছে আপনার? থানায় কেউ গেছে? - না, এখনও জিজ্ঞাসাবাদ করছে। মানে, টর্চার করছে। মামলা দিলে পরে জামিনের জন্য সংগঠন থেকে উকিল পাঠাবে।  সংগঠন বলতে কওমীদের এলায়্যান্সকে বোঝাচ্ছেন। এরাই লাগিয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের গ্যাঞ্জাম।  - হামিদুল ভাই, হুজুরের নির্দেশ আছে আপনার জন্য।  চোখে চোখ রেখে একপর্যায়ে বলে ইমাম। শুনে ভয় হয় আমার, কে জানে কি ঝামেলা করাতে চায় আমাকে দিয়ে।  - দানিয়েল ভাইয়ের ওয়াইফকে তালাক দিয়ে দিছেন? আমি ইমামের চকচকে চোখের দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে রইলাম। তারপর মাথা নেড়ে জানালম দিইনি। হাসি ফুটল তার মুখে।  - ওনাকে আপাতত আপনার জিম্মায় রাখতে হবে। হুজুর আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার টাইম পেলে আপডেট জানাবো।  - দানিয়েল ভাইয়ের সঙ্গে কন্টাক্ট করার সিস্টেম নাই? এমন সিচুয়েশনে ভাবীকে যদি তার ভাই এসে নিয়ে যেত, বা কমিউনিটিতে যদি...  জোরে মাথা ঝাঁকিয়ে থামিয়ে দিলেন ইমাম সাহেব।  - সম্ভব না। দানিয়েল ভাই সুযোগ বুঝে কাওকে ফোন দিবে। পুলিশ ভাবীকে পেলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ধরবে। খুঁজতেছেনা, তবে সামনে পেলে থানায় নিয়ে যাবে। আপাতত আপনার বাসায়ই নিরাপদ। এরপর আর তেমন কিছু জানা গেলনা। ইমাম বারবার আমাকে অভয় দেয়ার চেষ্টা করল। বলল মসজিদে এলে তার মুখেই সব আপডেট জানতে পারব। আমার ফোন নম্বর তাকে দেয়া হয়েছে। আর্জেন্ট হলে ফোন দেবে আমাকে।  মসজিদ থেকে বেরিয়ে নানা চিন্তায় জর্জরিত, ফোন বাজল। আজ ফোন বাজা নিয়ে খুব ভয় হচ্ছে। মনে হচ্ছে, হঠাৎ কেউ ফোন দিয়ে গম্ভীর গলায় বলেব, থানা থেকে অমুক বলছি। আপনি থানায় আসুন, নইলে বেঁধে নিয়ে আসব!  ফোন ধরতে গিয়ে পকেটে থাকা ক্যাপাসিটরে হাত পড়ল। পুলিশ বড় বদজাত, সার্চ করে এটা ধরে বলবে ককটেল পেয়েছে।  নাম্বার চেনা নেই বলে ধুকধুক বুকে হ্যালো বললাম। সোহানীর গলা, অনেকটা স্বাভাবিক মনে হল।  দুপুর বেলায় কাঁচাবাজারে ভাল জিনিস পাওয়া যায়না। তাও বাজারে আসতে হয়েছে সোহানীর কথায়। সে নাকি রান্না করবে। ঘরে তো কিছু নেই। আমি অল্প করে সবজি-টবজি কিনি, রেঁধে শেষ করে ফেলি।  মাছ পেলামনা ভাল, সবজি আর চাল নিয়ে ফিরতি পথ ধরলাম। চাল ঘরে আছে, কমদামী মোটা চাল। দানিয়েল ভাই সৌখিন মানুষ। বাজারে গিয়ে সবকিছু কেনে ফ্রেশ ফ্রেশ। আমার টিউশানির পয়সায় একা একা একসময় শখ করে পোষাত। এখন বৌকে কিছু টাকা পাঠাতে হয়, তাই আর শখ করা যাচ্ছেনা।  এমন নয় যে বৌ টাকা চাইছে, কিন্ত স্ত্রীকে খরচ দিতে না পারলে যে বিয়ে করার অধিকার নেই, এমনটা খুতবায় বারবার শুনে লজ্জ্বায়ই দিচ্ছি।  মোটা চালের ভাত সোহানীর গলা দিয়ে নামবে কিনা সেই এক্সপেরিমেন্টে না গিয়ে সরু চাল কিনে নিলাম। 
Parent