কথা মালা - বড় গল্প, বড়দের গল্প - অধ্যায় ১

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-69531-post-5983700.html#pid5983700

🕰️ Posted on July 13, 2025 by ✍️ rajusen25 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 3266 words / 15 min read

Parent
রিকশাওয়ালা ========== জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রচণ্ড দাবদাহে গোটা শহরটাই যেন এক উত্তপ্ত চুল্লিতে পরিণত হয়েছে। রাস্তাগুলো তপ্ত লোহার চাদরের মতো গরম হয়ে উঠেছে, যেখানে পা রাখলেই পায়ের তলায় জ্বলন্ত আগুনের অনুভূতি হয়। সূর্যের তীব্র কিরণ এতটাই প্রখর যে রাস্তার ধুলিকণাগুলো পর্যন্ত যেন অগ্নিস্পর্শে তাতিয়ে উঠেছে। গরম বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে এক ধরনের অদৃশ্য উত্তাপ, যা শ্বাস নেওয়াকে দুর্বিষহ করে তোলে। মনে হচ্ছিল যেন গোটা শহরটাই বিশাল কোনো উনুনের উপর বসে আছে, আর তার তাপে জীবনের সমস্ত শক্তি যেন বাষ্প হয়ে উড়ে যাচ্ছে। দুপুরের সূর্য যখন মাথার ঠিক উপরেই এসে দাঁড়ায়, তখন তার কিরণগুলো তপ্ত বর্শার মতো বিদ্ধ করে রিকশাচালক শামসুল হকের কুঁচকে যাওয়া, রুক্ষ ত্বক। তার সমস্ত শরীরজুড়ে লবণাক্ত ঘামের স্ফটিক জমে গিয়েছিল, যা তার কষ্টকে আরও বাড়িয়ে তুলছিল। প্রতিটি নিঃশ্বাসের সাথে তার বুকে যেন গরম ইট চেপে ধরা হচ্ছিল, শ্বাস নেওয়া দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছিল। সকাল থেকেই সে রিকশা নিয়ে রাস্তায় বেরিয়েছিল, ক্লান্তি আর তাপের মধ্যে দিয়ে একের পর এক যাত্রী বহন করে চলেছিল। কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে, তার ক্লান্তি ততই বেড়েছে, আর উপার্জন তেমন হয়নি। বিকেল হয়ে গেলেও সে মাত্র ১২০ টাকা ভাড়া উপার্জন করতে পেরেছে, যার মধ্যে থেকে ৪০ টাকা তো রিকশার মালিককে দিতে হবে। আজ তার মনটা খুবই খারাপ লাগছে, বারবার ভাবছে যে আর কাজ না করে বাড়ি ফিরে যাবে। কিন্তু তারপরই মনে পড়ে যে বাড়িটা তো সেই টিনের ছোট্ট ঘর, যেখানে গরম আরও বেশি অসহ্য। সেখানে প্রবেশ করলেই মনে হয় যেন একটা উত্তপ্ত কড়াইয়ের ভেতরে ঢুকে পড়েছে। আর সেই ঘরের নিঃসঙ্গতা তাকে গ্রাস করে ফেলে, একাকিত্বের ভার তার ক্লান্ত মনকে আরও অবসাদগ্রস্ত করে তোলে। তাই সে দ্বিধায় পড়ে যায়—রিকশা চালিয়ে এই গরম সহ্য করবে, নাকি ফিরে গিয়ে আরও বেশি গরম ও একাকিত্বের মধ্যে ডুবে যাবে। বাড়ি ফিরে এসে শামসুল হক রাস্তার ধারের ছোট্ট চায়ের দোকানে ঢুকে গেল। গরমে ও ক্লান্তিতে তার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিল, শরীরের সমস্ত রস যেন ঘাম হয়ে বেরিয়ে গেছে। দোকানের ভেতরে ঢুকেই সে চায়ের দোকানের ছোকড়া ওয়েটারটাকে ডাক দিল—"একটা চা দে তো, আর ওই নোনতা বিস্কুট একটা!" গরমে অতিষ্ঠ হয়ে সে তার লুঙ্গি ছোট করে কোমরে বেঁধে নিল, তারপর বেঞ্চের ওপর এক পা হাঁটু মুড়ে অদ্ভুত আরামের ভঙ্গিতে বসল। গলায় ঝোলানো পুরনো গামছাটা খুলে নিল, আর সেই গামছা দিয়ে মুখের ঘাম, চোখের কোণের জমে থাকা লবণাক্ত জল, গলা আর বগলের ভিজে ভিজে ঘাম মুছতে লাগল। চায়ের কাপ আর বিস্কুটের প্লেট আসার আগেই সে যেন এক ফোঁটা ঠাণ্ডা নিশ্বাস নিতে চাইছিল, কিন্তু চারপাশের বাতাসই যেন আগুন ছাড়ছে। চা এসে পড়তেই সে এক চুমুকে অর্ধেক গরম চা গিলে ফেলল, জিভ পুড়ে যাওয়ার ভয়ও তার নেই। নোনতা বিস্কুটের এক টুকরো মুখে দিয়ে আবার চা পান করল, যেন এই সামান্য স্বাদই তার সমস্ত ক্লান্তি একটু প্রশমিত করতে পারে। চায়ের দোকানের পাশ দিয়ে যাওয়া লোকজনের দিকে তাকিয়ে সে ভাবল—"এই গরমেও সবাই কোথায় যাচ্ছে? কে কী এত কাজ করে?" কিন্তু তার নিজের মতো রিকশাওয়ালার কাছে কাজ মানেই টাকার জন্য লড়াই, আর এই দাবদাহে সেই লড়াই আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। চায়ের দোকানের ছোকড়াটা হঠাৎই কথা শুরু করল, এক হাতে তার লুঙ্গির কাঁচের ভাঁজে আটকে যাওয়া ঘামাচি চুলকাতে চুলকাতে। "চাচা, আজকে মোল্লা সাহেবের বাড়িতে রুটি-মাংসের দাওয়াত চলছে। গিয়ে নিয়ে আসো না? আমি তো সকালেই গিয়ে এনে খেয়েছি—রাতে খাবো!" শামসুলের মুখে চুমুক দেওয়া চায়ের কাপ একটু নিচে নামল। গরমে তার জিভ শুকিয়ে গিয়েছিল, কিন্তু এই কথায় যেন তার গলার ভেতরটা একটু নরম হয়ে এল। রুটি-মাংস! কতদিন সে ভালো করে ঝোলওয়ালা মাংস খায়নি? সঙ্গে সঙ্গেই উৎসুক হয়ে জানতে চাইলো—"মোল্লা সাহেবের বাড়ি? ওই যে নতুন মসজিদের পাশের বাড়ি?" ছেলেটা মাথা নাড়ল, "হ্যাঁ চাচা, আজ ওখানে মিলাদ পড়ানো হয়েছে। সবাইকে দাওয়াত দিচ্ছে। তুমি গেলে এখনই দেবে।" শামসুল উৎসুক হয়ে জানতে চাইলো—"এত গরমে দাওয়াত, তা কি খুশি তে দাওয়াত দিচ্ছেন মোল্লা সাহেব?" ছোকড়াটা গলার স্বর একটু নামিয়ে বলল, "না চাচা, আসলে মোল্লা সাহেবের ছোট বেটার জ্বর-ঠান্ডা সারেনি তিন দিন ধরে। ওঝা ডাকতে গিয়েছিলেন, ওঝা বলেছে 'কুল খাওয়াতে হবে'। তাই আজ গরিব-দুঃখীকে খাওয়ানো হচ্ছে।" শামসুলের মুখে একটু বিষণ্ণ ভাব ফুটে উঠল। সে গামছা দিয়ে মুখের ঘাম মুছতে মুছতে বলল, "আল্লাহ মাফ করুক... বাচ্চাটার অসুখ সারুক।" তারপর একটু ভেবে যোগ করল, "তা হলে তো সদকার নিয়তেই দাওয়াত। খেলে বরকত হবে।" ছেলেটা তাড়াতাড়ি বলে উঠল, "হ্যাঁ চাচা, মোল্লা সাহেব তো বলেই দিয়েছেন - যত লোক আসবে, সবারই জন্য যথেষ্ট আছে। আপনি যান না, গরমে এতক্ষণ রিকশা চালিয়ে শরীর একদম ঝিমিয়ে গেছে। রুটি-মাংস খেয়ে একটু জোর পাবেন।" শামসুল এবার নিশ্চিতভাবে উঠে দাঁড়াল। বলল, "তুই ঠিকই বললি বাবা। আজকের এই দাওয়াত আল্লাহর রহমত। চলি তাহলে।" হাতের শেষ চুমুক চা গিলে ফেলে সে রিকশার দিকে তাকাল। বিকেলের রোদ এখনও প্রখর। কিন্তু মোল্লা সাহেবের বাড়ির পথে হাঁটতে হাঁটতে তার মনে হচ্ছিল, আজকের এই দাওয়াত শুধু পেট ভরানো নয়, এ যেন তার ক্লান্ত জীবনের একটুখানি সান্ত্বনা। শামসুল মোল্লা সাহেবের বাড়ি পৌঁছতেই দেখল সেখানে গরিব-দুঃখীদের ভিড়। বাড়ির আঙিনায় বড় হাঁড়িতে গরম গরম মাংসের ঝোল ফুটছে, পাশে সদ্য তাওয়া থেকে নামানো গোল গোল রুটি সাজানো। মোল্লা সাহেব নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সবাইকে পরিবেশন করছেন। শামসুলকে দেখেই তিনি হাসিমুখে বললেন, "আসুন ভাই, আসুন। আল্লাহর রহমত থেকে নিন।" একটা প্লেটে করে শামসুলের হাতে তুলে দেওয়া হলো বড় দু'খণ্ড গোশত, একগাদা রুটি আর ঘন ঝোল। মাংসের গন্ধে তার নাক ফুলে উঠল, জিভে পানি চলে এল। সে একটু সংকোচ নিয়ে বলল, "এত বেশি দিচ্ছেন কেন হুজুর?" মোল্লা সাহেব মাথা নাড়লেন, "নিন ভাই, বাড়িতেও নিয়ে যান। আজ আমাদের সন্তানের জন্য দোয়া চাই।" বাড়ি ফেরার পথে শামসুল ভাবছিল, বেগম যদি আজ বেঁচে থাকতো, তাহলে এই মাংস দেখে কী বলত? হয়তো বলত, "এত রাত করে খাবি না, বুড়ো বয়সে হজম হবে না," আর বলে নিজের থালা থেকে এক টুকরো মাংস তুলে তার প্লেটে দিয়ে দিত। ঘরের সামনে এসে সে রিকশা পার্ক করল। পাশের বাসার ছোট মেয়ে নুসরাত তাকে দেখে ডাক দিল, "চাচা, আজকে এত দেরি?" শামসুল হাসি দিয়ে উত্তর দিল, "মোল্লা সাহেবের দাওয়াত ছিল মা।" নুসরাতের মা বারান্দা থেকে বললেন, "একা একা খাবে নাকি? আমাদের বাড়ি থেকে একটু ডাল-ভাত নিয়ে নেবে?" শামসুল মাথা নাড়ল, "না বৌমা, আজ তো মাংস-রুটি আছে।" ঘরে ঢুকে সে প্লেটটা টিনের টেবিলে রাখল। দেয়ালে টাঙানো বেগমের ছবিটা দেখে মনে পড়ে গেল, সে কীভাবে অসুস্থ শরীরে শেষ দিন পর্যন্ত সংসার সামলেছে। হাত পাখাটা হাতে নিয়ে সে আস্তে আস্তে খেতে শুরু করল। মাংসের প্রতিটি টুকরো যেন তার জিভে মিশে যাচ্ছিল, কিন্তু হৃদয়ে জমা হওয়া বেদনাকে দূর করতে পারছিল না। বাইরে জ্যৈষ্ঠের রাতের গরম হাওয়া জানালা দিয়ে ভেসে আসছিল। শামসুলের মনে হচ্ছিল, এই গরমে বেগম যদি বেঁচে থাকতো, তাহলে হয়তো তার জন্য এক গ্লাস ঠাণ্ডা লেবুর পানি বানিয়ে দিত। সে আঙুল দিয়ে চোখের কোণ জুড়ে আসা জল মুছে ফেলল। খাওয়া শেষে সে দুই হাত তুলে দোয়া করল, "হে আল্লাহ, তুমি তো সব জানো। এই বুড়ো বয়সে একাকিত্বের চেয়ে বড় অভাব আর কী আছে?" তারপর সে ধীরে ধীরে বিছানায় শুয়ে পড়ল। আজকের এই মাংস-রুটির দাওয়াত যেন তার জন্য শুধু পেট ভরানোই নয়, এক ধরনের আত্মিক তৃপ্তিও এনে দিয়েছিল। চোখ বন্ধ করতে বন্ধ করতে সে ভাবছিল, আল্লাহর রহমত তো আসে নানা রূপে - কখনো এক প্লেট মাংস হয়ে, কখনো পাশের বাড়ির মানুষের একটুখানি স্নেহ হয়ে। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই শামসুল হকের ঘুম ভেঙে গেল। কাল রাতে পেট ভরে খাওয়ার পর অনেকদিন পর ভালো ঘুম হয়েছিল, কিন্তু গরমে সারা শরীর ঘামে ভিজে একাকার। বাইরে ভ্যাপসা গরম, মনে হচ্ছিল আজকের গরম যেন আরও বেশি অসহ্য হবে। হঠাৎই তার পেটে মোচড় দিলে সে তড়িঘড়ি উঠে পড়ল। শামসুল তড়িঘড়ি মগটা হাতে তুলে নিল, কিন্তু হাতের তালু ভিজে গেল - মগের তলায় ফুটো দিয়ে ঠিকরে পড়া জলে। "এই বুড়ো মগটারও শেষ সময় আসন্ন," সে মৃদু বিরক্তিতে ভাবল। তবুও যা আছে তাই নিয়ে কাজ সারতে হবে। ফুটো মগটা হাতে নিয়ে সে দ্রুত রেললাইনের ধারের ওই জায়গাটায় গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসল। মগের বাকি জল দিয়ে হাত ভেজালো, কিন্তু পরিষ্কার করার মতো যথেষ্ট পানি নেই। তাড়াতাড়ি করে কোন রকমে অল্প জল দিয়ে ছুঁচে নিলে। "আরেকটু পানি থাকলে ভালো হতো," সে মনে মনে আফসোস করল। অগত্যা আশেপাশের ঘাসের ডগা দিয়ে কোনোরকম কাজ সারল। হঠাৎ দূর থেকে ট্রেনের হুইসেল বেজে উঠল। শামসুল তড়িঘড়ি উঠে দাঁড়াল। মগটা থেকে শেষ বিন্দু জল পড়ে মাটি ভিজিয়ে দিল। সে মগটা উল্টে দেখল - ফুটোটা এখন আরো বড় হয়েছে। "কালই বাজারে নতুন একটা প্লাস্টিকের মগ কিনে আনতে হবে," সে নিজেকে স্মরণ করিয়ে দিল। ফেরার পথে তার পায়ে পড়লো অন্য কারো করে রাখা গুয়ে। "আজকে সকালটা যেন সব কিছুর সঙ্গেই যুদ্ধ করে কাটাতে হচ্ছে," সে ক্লান্তিতে ভাবল। ঘাসের ডগা দিয়ে পা ঘষে ঘষে পরিষ্কার করতে লাগল, কিন্তু গুয়ের দাগ পুরোপুরি যাচ্ছে না। শামসুল ঘরের দিকে ফিরতেই চোখে পড়ল কলপাড়ে নুসরাতের মাকে। সে তখন গামছা কাঁধে নিয়ে ব্যস্ত গোসল সেরে নিচ্ছে। এক পলক দেখেই শামসুল তড়িঘড়ি মাথা ঘুরিয়ে নিল। "অভ্যাসবশতই কলতলার দিকে চলে এসেছিলাম," সে নিজেকেই ধিক্কার দিল, "এখন তো আর বেগম নেই যে গোসল সেরে নেবে।" ঘরে ঢুকে সে ভাবল, আজ আর গোসল না করাই ভালো। ইতিমধ্যে সূর্য উঠে গেছে, কলেজ-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা রাস্তায় বের হয়েছে। "এই সময়ে যদি দুই-একটা ভাড়া জুটে যায়," এই ভেবে সে রিকশাটা বাইরে টানল। রিকশায় বসে সে লক্ষ করল, নুসরাতের মা তাকে দেখে ফেলেছে। দুজনের চোখাচোখি হওয়ায় শামসুল অস্বস্তিবোধ করল। নুসরাতের মা ডাক দিল, "চাচা, আজকে গোসল করলেন না?" শামসুল হাত নেড়ে বলল, "না বৌমা, আজ একটু তাড়া আছে।" রিকশা চালু করে দিতে দিতে তার মনে পড়ে গেল, আগে বেগম থাকতে সে কখনো গোসল বাদ দিত না। বেগম বলত, "পুরুষ মানুষ গোসল না করে বেরুলে গায়ে দুর্গন্ধ হয়।" আজ সেই কথাগুলো কানে বাজছিল। কিন্তু এখন কে আর বলবে? কে আর খেয়াল রাখবে? কলেজগেটের সামনে দাঁড়াতেই দুজন কলেজছাত্রী রিকশা ভাড়া করল। শামসুলের মুখে স্বস্তির হাসি ফুটল। "কোথায় যাবা মা?" জিজ্ঞেস করতেই মেয়েগুলো বলল, "স্টেশন রোড চাচা।" রিকশা চালাতে চালাতে শামসুল ভাবল, আজকের দিনটা হয়তো ভালোই যাবে। স্টেশন রোডের সামনে কলেজের গেটে ছাত্রীটিকে নামিয়ে ভাড়া পেলো বিশ টাকা, আবার ছুটলো আরও ভাড়ার সন্ধানে। কিছুটা পথ যেতেই তার চোখে পড়ল এক মহিলাকে, হাতে একটি ছোট ছেলে, সম্ভবত মাদ্রাসায় যাবে। শামসুল আশায় রিকশা থামালো, "আপা, রিকশা লাগবে নাকি?" মহিলা তাকে উপরে নিচে একবার দেখে নিল, তারপর ঠোঁট উল্টে বলল, "মাদ্রাসায় দিয়ে আসতে পারবেন? কত নিবেন?" শামসুল গামছা দিয়ে অসভ্যের মত বগলের ঘাম মুছতে মুছতে বলল, "চল্লিশ টাকা লাগবে আপা।" মহিলার মুখখানা বিকৃত হয়ে গেল, "বাঃ! পয়সা কি বলদের পুটকি থেকে পড়ে নাকি? ত্রিশ টাকার বেশি দেব না!"। এই গরমে, এই পরিশ্রমে, ত্রিশ টাকা? সে মাথা নাড়ল, "না আপা, ত্রিশে পারব না। গ্যাস-তেল সব বেড়ে গেছে।" মহিলা রাগে ফুলে ফেঁপে উঠল, "তোমাদের মতো রিকশাওয়ালা সব বাটপার! কালই তো আমার ভাই পনেরো টাকায় গিয়েছিল!" বলে সে রাগে রিকশার হ্যান্ডেলে একটা লাথি মারল এবং অন্য একটা রিকশার দিকে এগিয়ে গেল। শামসুলের রক্ত তখন ফুটছে। সে রিকশা সামনে নিয়ে গেলেও মনে মনে ফুটে ফুটে বলছিল, "এইসব চুদিনি মাগী, খানকি মাগিরা আমাদের রক্ত চুষে খায়! পনেরো টাকায় যাবে? তাহলে তোর ভাইয়ের লেওড়ায় বসে যা!" গামছার এক কোণ কামড়ে ধরে সে রাগ চেপে রিকশা চালিয়ে যেতে লাগল। কিছুদূর এগুতেই দেখে একজন মধ্যবয়সী লোক ধুতি পাঞ্জাবী পরে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে ডাকছে। শামসুল রিকশা থামাতেই লোকটা বলল, "ভাই, হাসপাতালে যাব। কত নিবা?" শামসুল এবার সতর্ক হয়ে গলার স্বর একটু নরম করে বলল, "বাবু , পঞ্চাশ টাকা লাগবে। গরমে একটু দূরত্ব তো।" লোকটি একটু ভেবে বলল, "আচ্ছা চলো। কিন্তু একটু তাড়াতাড়ি চালাও, ভিসিটিং আওয়ার্স শুরু হয়ে যাবে।" শামসুল তাকে রিকশায় বসাল। পেছন থেকে লোকটির গলার স্বর শুনে মনে হলো কেউ অসুস্থ। রিকশা চালাতে চালাতে লোকটি নিজে থেকে বলতে লাগল, "আমার স্ত্রী অসুস্থ। গতকাল থেকে জ্বর, আজ সকালে জ্ঞান হারিয়েছে।" শামসুলের রাগ এক লহমায় উবে গেল। সে জোরে রিকশা চালাতে শুরু করল। গরমে তার শিরায় শিরায় যেন নতুন শক্তি সঞ্চারিত হলো। হাসপাতালের গেটে পৌঁছে লোকটি পঞ্চাশ টাকার বদলে একশ টাকা গুঁজে দিল শামসুলের হাতে। বলল, "ভাই, তুমি ভালো মানুষ। প্রার্থনা করো আমার স্ত্রী যেন তাড়াতাড়ি সেরে উঠুক।" শামসুল টাকা নিতে নিতে বলল, "শুকরিয়া বাবু, আল্লাহ মালকিনকে শীঘ্রই সুস্থ করুক।" হাসপাতালের গেট থেকে ফেরার পথে শামসুল হক একটা বিঁড়ি মুখে ধরিয়ে রিকশার প্যাডেলে জোরে চাপ দিতে দিতে শামসুল হক বাজারের রিকশা স্ট্যান্ডের দিকে চললো। বাজারের রিকশা স্ট্যান্ডের দিকে এগোতে এগোতে শামসুলের মনে হচ্ছিল যেন আজকের দিনটা একটু একটু করে বদলাচ্ছে। বিঁড়ির ধোঁয়া তার মুখ থেকে বেরিয়ে গরম বাতাসে মিলিয়ে যাচ্ছিল। রাস্তার পাশে দোকানদাররা বিক্রির জন্য ফল-সবজি সাজিয়ে রেখেছে, একজন কাঁচা লেবুর রস বিক্রি করছে - "এক গ্লাস দশ টাকা, ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা লেবুর রস!" স্ট্যান্ডে পৌঁছে সে দেখল তার রিকশাওয়ালা বন্ধু করিম মিয়া বসে বসে গল্প করছে। করিম তাকে দেখেই ডাক দিল, "ওই শামসুল! আজকে কেমন চলছে? মুখে হাসি দেখছি!" শামসুল রিকশা পাশে রাখতে রাখতে বলল, "আল্লাহর রহমতে করিম ভাই, আজ একটু ভালোই।" বলে সে একশ টাকার নোটটা বের করে দেখাল। করিম অবাক হয়ে বলল, "বাঃ! আজকে তো বড় লটারি লেগেছে!" শামসুল গল্পটা বলতে শুরু করল - কিভাবে সেই কর্কশ মহিলা তাকে অপমান করল, আর তারপরেই কিভাবে হাসপাতালের সেই যাত্রী তাকে একশ টাকা দিল। গল্প শুনে করিম মাথা নাড়ল, "দেখছো ভাই, আল্লাহ কাউকে দিয়ে অপমান করান, আবার কাউকে দিয়ে পুষিয়ে দেন।" শামসুল বিঁড়িটা ফেলে দিয়ে বলল, "করিম ভাই, আমি একটু মুতে আসি।" - বলে রিকশা স্ট্যান্ডের পেছনে যেখানে সবাই পেচ্ছাব করে ওখানে গিয়ে বসে পড়লো লুঙ্গি তুলে। শামসুল হক লক্ষ্য করল তার প্রস্রাবের রং রকমের গাঢ় হলুদ। "এই গরমে পানি কম খাওয়া হয়েছে নাকি?" সে নিজেকেই ধিক্কার দিল। পেচ্ছাব শেষ করে শামসুল লুঙ্গির আঁচলটা ভালো করে ঝেড়ে নিয়ে রিকশায় উঠে বসল। গরমে তার গায়ে এখনও ঘাম জমে আছে। করিম তার দিকে তাকিয়ে বিঁড়ির প্যাকেট বাড়িয়ে দিল, "নাও ভাই, নতুন বিঁড়ি এনেছি আজ। তামাকও ভালো।" শামসুল হাত নাড়ল, "না ভাই, একটু আগেই একটা খেয়েছি। এই গরমে বেশি খাওয়া ঠিক হবে না।" বলে সে রিকশার নিচ থেকে ময়লা জলের বোতল বের করে এক ঢোক গেলাল। করিম চোখ কুঁচকে বলল, "এই তো বললে মুতের রং একদম হলুদ! তুমি তো পানিই খাও না!" শামসুল কাঁধ ঝাঁকাল, "কই ভাই, খাই তো! তবে এই গরমে যা ঘাম হয়, তা তো দেখতেই পাচ্চো!" "ওই পচা পানিতে কি হবে?" করিম তার নিজের বোতল থেকে জল ঢেলে দিল শামসুলের বোতলে, "এই নাও, ঠাণ্ডা পানি। আজকাল তো আর আমাদের বয়স কম নেই, শরীরের দিকে নজর দিতে হবে।" শামসুল করিমের বোতলের পানি খেয়ে বলল, "তুমি ঠিক বলেছ ভাই। কাল থেকে বেশি করে পানি খাব।" - বলে গামছা দিয়ে গলা আর বগল মুছে নিলো। দুজনে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইল। বাজারের শব্দ, গাড়ির হর্ন, মানুষের চেঁচামেচি - সব মিলিয়ে এক অদ্ভুত সঙ্গীত বাজছিল। হঠাৎ এক জন যাত্রী এসে করিমকে উদ্দেশ করে বলল, "এই ভাই, যাবেন নাকি সুলতান নগর?" করিম তাড়াতাড়ি বিঁড়িটা ফেলে দিয়ে উঠে দাঁড়াল, "হ্যাঁ হ্যাঁ ভাই, চলুন। ত্রিশ টাকা নিব।" যাত্রী একটু দরদাম করল, "বাইশ টাকায় পারবেন?" করিম মাথা নেড়ে বলল, "না ভাই, গরমে এত দূর যাবো, ত্রিশটাই লাগবে।" শামসুল চুপচাপ দেখতে লাগল। সে জানত এই গরমে রিকশা চালানো কতটা কষ্টকর। যাত্রী শেষমেশ ত্রিশ টাকায় রাজি হলো। করিম রিকশায় উঠে বসতেই শামসুল বলল, "সাবধানে যাও ভাই। এই গরমে শরীর খারাপ করতে পারো।" করিম হাসল, "তুমি আর পানি খাওয়ার কথা ভুলো না!" বলে রিকশা চালিয়ে দিল। শামসুল দেখতে থাকল কীভাবে করিমের রিকশা ধীরে ধীরে দূরে মিলিয়ে গেল। তারপর সে নিজের রিকশার দিকে তাকাল। আজকের দিনটা তার জন্য ভালোই কেটেছে - একশ টাকা আয় হয়েছে, ভালো খেয়েছে। শামসুল জলের বোতলটি উঁচু করে ঢোক গেলাল। গরমে শুকনো গলায় জলের স্পর্শ যেন মরুভূমিতে শীতল ঝর্ণার মতো লাগল। দুপুরের প্রখর রোদে তার শরীর থেকে ঝরঝর করে ঘাম ঝড়ছিল। গামছা দিয়ে বগলের ঘাম মুছতে মুছতে হঠাৎই নজরে পড়ল রিকশার পাশে এসে দাঁড়ানো এক তরুণ দম্পতিকে। মেয়েটির লাল রঙে রাঙানো নখ আর যুবকটির গলায় ঝোলানো হাই-এন্ড হেডফোন দেখেই বোঝা যাচ্ছিল তাদের অবস্থান। হাত ধরাধরি করলেও তাদের চোখেমুখে ফুটে উঠছিল অসহিষ্ণু বিরক্তি। "এই রিকশাটা কত পুরনো!" মেয়েটি নাক সিঁটকে বলল, "এতে চড়লে পিঠ ভেঙে যাবে নাকি?" যুবকটি সিগারেটের ধোঁয়া ছড়িয়ে বলল, "গরমে সব রিকশাই একই হাল। ট্যাক্সি ডাকি?" "আরো সময় নষ্ট করবা?" মেয়েটি চোখ রাঙিয়ে বলল, "এই ভ্যাপসা গরমে রাস্তায় পোড়া খাব?" শামসুল ভাঁজ পড়া হাতে রিকশার হ্যান্ডেল টেনে ধরে বলল, "বেটা-বেটি, ভয় পাইবেন না। আমার রিকশার বয়স আছে ঠিকই, কিন্তু হাড় এখনও মজবুত।" মেয়েটি সিটে আঙুল বুলিয়ে দেখে মুখ বিকৃত করল, "এই গন্ধ কি! শেষ কবে পরিষ্কার করা হয়েছে?" শামসুল তড়িঘড়ি গামছা দিয়ে সিট ঝাড়তে ঝাড়তে বলল, "গরমের দিন, মানুষের ঘামে সবকিছুই ভিজে থাকে। চলার পথে হাওয়ায় সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।" "স্টেশন রোড কত নিবা?" যুবকটি ফোনে ব্যস্ত থাকা অবস্থায় জিজ্ঞেস করল। "চল্লিশ টাকা বাবু," শামসুল বলল। যুবকটি ফোন নামিয়ে রাগিয়ে বলল, "এই ভ্যাপসা গরমে চল্লিশ টাকা? ত্রিশে নিবা না?" "বাবু, এই তাপে রিকশা ঠেলতে রক্ত জল হয়ে যায়," শামসুল ক্লান্ত কণ্ঠে বলল। "আরে ছাড় ছাড়, সময় নষ্ট কইরেন না, চলেন!" যুবকটির রুক্ষ কথার সাথে সাথেই দম্পতি রিকশায় ধপ করে উঠে বসল, যেন কোনো ঘৃণিত বস্তু স্পর্শ করছে। রিকশাটা নড়তে শুরু করতেই শামসুলের পা-দুটো যেন সিসার মতো ভারী লাগল। প্রতিটি প্যাডেল চাপতে তার শুকনো পেশীতে টান পড়ছিল, গরমে রক্ত যেন গাঢ় হয়ে গলায় উঠে আসছিল। ঘামে ভেজা গামছাটা কাঁধে লেগে থাকায় চামড়ায় জ্বালা ধরাচ্ছিল। "উফফ...এই গরমে..." - শামসুলের অস্ফুট গুঞ্জন কানে আসতেই মেয়েটি আগুন হয়ে গেল। "হায় আল্লাহ! এত ধীরে চালাচ্ছেন কেন?" মেয়েটির চিৎকারে পাশের চায়ের দোকানের কাচ পর্যন্ত কাঁপল, "জোরে চালান! আমরা কি মড়ার বাড়ি শোকযাত্রায় যাচ্ছি?" শামসুলের হাতের রিকশার হ্যান্ডেল শক্ত করে ধরে আঙ্গুলগুলো সাদা হয়ে গেল। তার মনে ভেসে উঠল কাল রাতের সেই মাংসের টুকরো - বারো বছরে প্রথম পেট ভরে খাওয়া। গলার ভেতর থেকে কথাগুলো গুমরে উঠল: "এই নচ্ছার মাগী, তোর বাপের টাকা দিয়া কিনা রিকশা? গাঁইড়ে জোর থাকলে নামিয়া চালা দেখি!" "আরে চাচা, একটু স্পিড ধরাও!" যুবকটি এবার গলা চড়িয়ে বলল, "তোমাদের মতো অক্ষম লোক রিকশায় বসে ট্রাফিক জ্যাম তৈরি করে!" শামসুলের শুকনো ঠোঁট কাঁপল। তার গলা দিয়ে বেরোল ভাঙা স্বর: "বাবু...এই বুড়ো হাড্ডিতে...গতকাল রাতের সেই এক থালা মাংসই তো..." কথাগুলো যেন রিকশার চাকার শব্দে হারিয়ে গেল। মেয়েটি হঠাৎ বিদ্যুৎ গতিতে সামনে ঝুঁকে পড়ল, তার লাল নখগুলো শামসুলের কাঁধের কাছ পর্যন্ত এসে থামল: "তাহলে রিকশা চালান কেন? আর গরু খাওয়া শরীরে জোর নেই কেন!?" তারপর বিষাক্ত মিষ্টি স্বরে যোগ করল, "নাকি মাংস খাইয়া এখনও হাইগ্গা সব শেষ!!" শামসুলের শুষ্ক গলায় শব্দগুলো আটকে গেল। "বেটি..রোজগারের তাগিদে..." তার কণ্ঠস্বর ভাঙা হারমোনিয়ামের মতো করুণ সুর তুলল, যে সুর শহরের প্রতিটি রিকশা স্ট্যান্ডে, প্রতিটি ফুটপাথে একই করুণ সুরে বাজে। মেয়েটি হাতের এক ঝটকায় তাকে থামিয়ে দিল। তার নখের লাল রঙ রোদে ঝলসে উঠল, যেন বিষাক্ত সাপের ফণার মতো উঁকি দিল, "থামেন! আপনাদের সবাই একই রেকর্ডেড মেসেজ। 'ভাত নেই, বাচ্চার জ্বর, বউ অসুস্থ'—এইসব কান্নাকাটি করে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের ফন্দি!" তার ঠোঁট কুঞ্চিত হয়ে গেল তিক্ততার ভঙ্গিতে, "আমরা কি এতই বোকা যে এইসব গল্পে বিশ্বাস করব?" যুবকটি অস্বস্তিতে মেয়েটির হাত টেনে বলল, "এভাবে কথা বলছো কেন? উনি তো তোমার আব্বার বয়সী!" তার চোখে ছিল অপরাধবোধের ছায়া। কিন্তু মেয়েটি বিস্ফোরিত হলো, "বয়স? বয়স দিয়ে কী হয়?" তার কণ্ঠ এখন ধারালো কাঁচের মতো, "অক্ষমতা ভদ্রতা দাবি করতে পারে না! কাজ করতে অক্ষম হলে রিকশায় ওঠাই উচিত ছিল না!" মেয়েটির আঙুল শামসুলের দিকে তাক করল যেন বন্দুকের নল। "আমার আব্বু মাদ্রাসার মৌলভী," তার কণ্ঠে বিষাদৃপ্ত গর্ব, "ওনার মতো রাস্তার রিকশাওয়ালা নন!" নাকের ডগা উঁচু করে সে যেন অদৃশ্য কোনো উচ্চবর্ণের সীমানা টেনে দিল। হঠাৎই মেয়েটির পুরো শরীর থরথর করে কাঁপতে শুরু করল। "তুমি এখন উনাকে ডিফেন্ড করছ?" তার চোখ দুটো জ্বলছিল রাগের আগুনে, "আমাদের প্রায় আধঘণ্টা নষ্ট করলেন, আর তুমি উনার পক্ষ নিচ্ছ?" নাক সিঁটকে সে আরও যোগ করল, "এই দেখো না, গামছা দিয়ে বগলের জঙ্গল মুছছেন! কি জঘন্য!" "এখানেই থামান!" মেয়েটির চিৎকারে আশপাশের পথচারীরা ফিরে তাকাল। সে ঝটপট রিকশা থেকে নেমে পড়ল, স্যান্ডেলের হিল রাস্তার ধুলোয় আঘাত করল এক বিদ্রোহী ঠকঠক শব্দে। শামসুলের শুষ্ক ঠোঁট কাঁপল। তিনি ধীরে ধীরে বললেন, "বাবু... যতটুকু পথ গেছি... তার..."। যুবকটি মুখ বিকৃত করে বলল, "ভাড়া? আপনি তো আমাদের গন্তব্যেই পৌঁছালেন না!" তার কণ্ঠে ছিল তীক্ষ্ণ বিরক্তি, কিন্তু চোখের কোণে যে জল জমেছিল, তা যেন অন্য গল্প বলছিল। মেয়েটি পিছন থেকে চিৎকার করল, "চলো আসো রুবেল! ওসব ফাঁদে পা দেবে না!" যুবকটি এক মুহূর্ত দ্বিধায় পড়ল। তার হাত অটোমেটিকভাবে পকেটে গেল, কিন্তু মেয়েটির তীক্ষ্ণ দৃষ্টির সামনে থেমে গেল। শেষবারের মতো শামসুলের দিকে তাকিয়ে - সেই দৃষ্টিতে ছিল এক অদ্ভুত সংমিশ্রণ: লজ্জা, অনুতাপ, আর অসহায়ত্ব। তারপর সে তড়িঘড়ি মেয়েটির পিছু নিল, কখনও পিছন ফিরে তাকাল না।  শামসুলের রিকশা সেখানে দাঁড়িয়ে রইল। তার সামনে দিয়ে যাত্রী ভর্তি আরেকটি রিকশা দ্রুত বেগে চলে গেল। কপালের ঘাম মুছতে মুছতে ভাবলেন, "হায় আল্লাহ," তিনি ফিসফিস করে বললেন, "আজও কিছু জুটল না... ওই নচ্ছার মাগীর জন্য ভাড়াটাই হারালাম।" তীব্র রোদে তার গলার স্বর যেন শুকিয়ে গিয়েছিল। যখন তিনি রিকশার হ্যান্ডেলে আঁকড়ে ধরেছেন, ঠিক তখনই... "ও রিকশাওয়ালা! মুখার্জী পাড়া যাবেন?" একটি মধুর, কর্তৃত্বপূর্ণ কিন্তু রসে ভরা কণ্ঠ শুনে শামসুল মাথা ঘুরাতেই দেখলেন—রিকশার পাশে দাঁড়িয়ে এক বাঙালি রমণী, যেন স্বয়ং জান্নাতি হুর! তার সামনে রাস্তার ধুলো-ধোঁয়া পর্যন্ত যেন লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে নিল। প্রায় ছয় ফুট লম্বা এই রমণীর দেহ যেন আল্লাহ সমস্ত রস ঢেলে সৃষ্টি করেছে—ধবধবে ফর্সা গায়ের রঙ। তার পরনে সাদা শাড়ি, লাল পাড় যেন আগুনের লকলকে জিভ। বুকের দুটি ভারী পাহাড়ের মতো দুধ দুটি দুলছিল প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাসে, শাড়ির কাঁচুলি যেন টানটান উত্তেজনায় কাঁপছে। বলিষ্ঠ মোটা বাহু, পাছাটি ভারী, মাংসল, গোল—প্রতিটি পায়ের ছন্দে যেন ঢেউ খেলে যায়।
Parent