কথা মালা - বড় গল্প, বড়দের গল্প - অধ্যায় ৬
~~~~~~*****সোচকার্ট বুটিক *****~~~~~~
------------------------------------------------------------
চৈত্রের প্রখর রোদ আকাশকে সাদা আগুনের চাদরে মুড়ে দিয়েছে। কলেজ ক্যাম্পাসের আমগাছগুলো পাতাহীন, শুষ্ক কঙ্কালের মতো দাঁড়িয়ে—তাদের ছায়াগুলোও যেন গরমে গলে মাটির সাথে মিশে একাকার হয়ে গেছে। ক্লাসরুমের ভেতর পুরনো পাখাগুলো অলসভাবে ঘুরছে, গুমোট হাওয়াকে ঠেলে পাঠাচ্ছে, যেন উনানের মুখ থেকে উগড়ে দেওয়া লু। ছাত্রছাত্রীদের চোখে ঘুমের ঘোর, মুখে বিরক্তির ছাপ। অধ্যাপকদের গলার স্বরও গরমে তেতে উঠেছে, যেন কড়াইয়ে ঝালঝালি করা মরিচের মতো কর্কশ।
স্টাফ রুমে ঢুকতেই গায়ে লাগে এয়ার কন্ডিশনারের শীতল পরশ, যেন তপ্ত মরুভূমির মাঝে হিমেল পার্বত্য বাতাস। সুমিত্রাদি, ঋতুদি, মিসেস সোহিনী আগরওয়াল, মিসেস মুনমুন সেন—সবাই টেবিল ঘিরে বসেছেন। সামনে খুলে রাখা টিফিন বাক্স থেকে ভাতের গরম ভাপ, আলুর দমের মসলার ঘ্রাণ, মাছের ঝালের তীব্রতা আর পাপড়ের খসখসে গন্ধে পুরো ঘর ম-ম করছে।
"এই গরমে তো প্রাণ ওড়ে!" ঋতুদি কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বললেন, তাঁর নীল রঙের ব্লাউজের আস্তিন ঘেমে গাঢ় হয়ে উঠেছে। "কাল রাতে তো পাখার নিচেও ঘুম হলো না! বন্ধ করলে দম বন্ধ, চালালে গরম হাওয়া!"
সুমিত্রাদি ঠাণ্ডা জলের গ্লাসে ঠোঁট রেখে চুমুক দিলেন, তাঁর গলার হারটা হালকা করে টলমল করল। "আমি তো ছাদে জল ঢালতে ঢালতে হাঁপিয়ে গেছি। এই বয়সে এত গরম সইতে পারি না!"
মুনমুন সেন গালে হাত রেখে বসে আছেন। তাঁর ফর্সা গায়ে গরমের লালচে ভাব, গায়ে লেগে থাকা হালকা চন্দনের সুগন্ধি আর ঘামের মিশেলে এক অদ্ভুত নারীত্ব ছড়াচ্ছে। "বাড়ি ফিরে ঠাণ্ডা জলে স্নান না করলে তো বাঁচা যায় না!" তিনি হাসলেন, তাঁর ঠোঁটের কোণে জমে থাকা লাল লিপস্টিকের আভা যেন আরও গাঢ় হয়ে উঠল।
মিসেস সোহিনী পাপড় ভেঙে ভেঙে খাচ্ছিলেন, তাঁর নখের লাল পলিশ রোদে ঝলমল করছে। "আমার শ্বশুরবাড়িতে তো দুপুরে স্নান নিষেধ! বলে, গরম জলেই স্নান করতে হবে! এত গরমে গরম জল? ভাগ্যিস আমি চাকরি করি!"
হাসির ফোয়ারা ছুটে গেল সবার মুখে। মুনমুন সেনের গলা থেকে গমগমে হাসি বেরিয়ে এল, তাঁর ভারী বুক কাঁপতে লাগল। "ওমা, সত্যি বলছ? এ যুগেও এমন নিয়ম?"
"হ্যাঁ গো, হ্যাঁ!" সোহিনী চোখ ঘুরিয়ে বললেন, "আমার ননদ তো বলে, ঠাণ্ডা জলে স্নান করলে নাকি সর্দি লাগে! বললাম, তুই আগে এক বালতি গরম জল মাথায় ঢাল, তারপর কথা বল!"
আবার হাসি। মুনমুন সেন টিফিন বাক্স থেকে মাছের টুকরো তুলে মুখে দিলেন, ঠোঁটে তেলের চিকচিকে আভা। "এই গরমে তো দই-চিঁড়ে-লেবু জল ছাড়া গতি নেই!"
"আর রাতে আমসত্ত্বের পায়েস হলে তো কথাই নেই!" ঋতুদি চোখ বড় করে বললেন।
মুনমুন সেনের ঠোঁটে চাপা হাসি, "বয়স বাড়লে রান্নার ধৈর্য্য বাড়ে, ঋতুদি। স্বামী যদি খুশি হয়, তো ঝামেলা কিসের?"
সোহিনী ঠাট্টা করে কেটে দিলেন, "বয়সকালে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক হয় আম-আমড়ার মতো—টক-মিষ্টি!"
মুনমুন সেন গর্জে উঠলেন, "আমড়া কোথায়? আমার স্বামী তো এখনও আমই!"
হঠাৎ দরজা খুলে ঢুকলেন নুসরাত—কলেজের নতুন অধ্যাপিকা। তাঁর গোলাপি সালোয়ার-কামিজে চৈত্রের রোদের ছোঁয়া লেগেছে, কপালে ঘামের বিন্দু। চেয়ার টেনে বসতেই হাত থেকে রঙিন লিফলেট টেবিলে ছড়িয়ে পড়ল।
"এই গরমে শপিং করলে মন্দ হয় না!" নুসরাত হাসল, তাঁর চোখে চঞ্চলতা। "'সোচকার্ট বুটিক' থেকে কাল একটা অ্যানার্কালি কিনেছি—৩৫০০ টাকা, কিন্তু কোয়ালিটি একদম জবর!"
"৩৫০০ টাকা!" সুমিত্রাদি চমকে উঠলেন, "আমার সময়ে তো এক মাসের বাজেটে এত টাকা খরচ হতো না!"
"আমার বিয়ের শাড়ি কিনেছিলাম ৫০০ টাকায়!" ঋতুদি হেসে বললেন।
নুসরাত লিফলেট বাড়িয়ে দিল, "অর্ডার করতে চাইলে আমি লিঙ্ক শেয়ার করি। হোম ডেলিভারিও আছে!"
"দেখো তো মেয়েটার মার্কেটিং সেন্স!" সোহিনী হাসলেন, "একদম শাহরুখ খানের মতো বলছে!"
মুনমুন সেন লিফলেটে ব্লাউজের ছবি দেখে বললেন, "১লা বৈশাখের জন্য একটা ট্রাডিশনাল ব্লাউজ করাব। লালে সাদা কাজ—কেমন হবে সোহিনী?"
সোহিনী চোখ টিপে বললেন, "তোমার হস্তিনী মাংসল শরীরের তো সবই সাজবে! কলেজের ছেলেরা তোর মাংসল ধবধবে ফর্সা শরীর, বগল দেখে কত যে হ্যান্ডেল মারে কে জানে!"
মুনমুন সেন গভীর একটা নিশ্বাস নিলেন, তাঁর স্তনের বোঁটাগুলো শাড়ির নিচে শক্ত হয়ে উঠল। "আজকে তুই বড়ই দুষ্টুমি করছিস সোহিনী," সে ফিসফিস করে বলল, "রাতে স্বামীর কাছে গিয়ে এই সব কথা ভেবে ভেবে..."
"ওমা! স্বামী তো ভাগ্যবান!" ঋতুদি বললেন, "এই শরীরের প্রতিটি ইঞ্চি যে এখনও টানটান, ভেতরে রসে ভরা!"
মুনমুন সেনের ঠোঁটে জমে থাকা লাল লিপস্টিক যেন আরও গাঢ় হয়ে উঠল। সে আস্তে আস্তে নিজের শাড়ির প্লেট টেনে নিচ্ছিল, "এই গরমে তো সত্যিই সব কাপড় ছেড়ে দিতে ইচ্ছে করছে..."
নুসরাত লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে নিল, কিন্তু কৌতূহল সামলাতে পারল না, "ম্যাডাম, সত্যি আপনার ফিগারটা..."
"দেখো! নতুন মেম্বারও নোটিশ করেছে!" সোহিনী চিৎকার করে বললেন।
স্টাফ রুমের বাতাস কেঁপে উঠল হাসির রোলারে। মুনমুন সেন মাথা নেড়ে বললেন, "আচ্ছা, বাস! এবার থামো। নাহলে আমি আর ১লা বৈশাখের শপিংয়ে যাব না!"
"ওই যে বলে না," সুমিত্রাদি মিষ্টি সুরে বললেন, "যৌবন গেলে যে জানে, তার কাছেই যৌবনের মূল্য!"
"তা ঠিক!" সোহিনী চোখ টিপে দিলেন, "আমাদের মুনমুন তো এখনও পুরোদমে জানে!"
মুনমুন সেন টেবিলে হাত থাপড়ে বললেন, "এবার থামো সত্যি! নাহলে আমি এখনই চলে যাব!" কিন্তু তাঁর চোখেমুখে লুকানো হাসি যেন বলছিল, এই বয়সেও নারীর সৌন্দর্য নিয়ে গর্ববোধ করাটা মন্দ কি?
"আজ তো কলেজ ছুটি হয়ে গেল তাড়াতাড়ি, ওই এখন গেলে কেমন হয়?" ঋতুদি বললেন উৎসাহ নিয়ে।
"তা তো ঠিক বলেছ ঋতুদি!" সুমিত্রাদি হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, "এখনই গেলে তো ওদের দোকানে ভিড় কম থাকবে। আর মুনমুনের সেই 'হস্তিনী ফিগার' দেখে সেলসগার্লরা তো ফিটিং দিতে দিতেই হাবুডুবু খাবে!"
মুনমুন সেন নাক উঁচু করে বললেন, "আর যদি তোমার ওই সব কথা শুনে দর্জি বাবু সেলাই করতে করতে হাত কাঁপিয়ে ফেলেন, তাহলে কিন্তু দোষ দেবো তোমাকেই!"
সুমিত্রাদি টিফিন বাক্স গুছিয়ে বললেন, "চলো তাহলে, এখনই রওনা দিই। নুসরাত, তুমি যাবে তো আমাদের সঙ্গে?"
নুসরাত তড়িঘড়ি বললেন, "না গো দিদি, আমি আসলে আমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে একটু বেরোবো।"
"ওমা! নুসরাতের তো 'স্পেশাল অ্যাপয়েন্টমেন্ট' আছে!" মুনমুন সেন চোখ টিপে হাসলেন, "এখন থেকে আমাদের পুরোনো খুঁটিনাটি নিয়ে মাতামাতি করতে হবে, তা কোথায় যাচ্ছ—OYO বুক করেছ নাকি?"
নুসরাত লজ্জায় গলাটা নামিয়ে ফেলল, "আমি তো শুধু কফি শপে যাচ্ছি... ইস, আপনি কি যে বলেন..."
মুনমুন সেন নাটকীয়ভাবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, "আহা, আমি ভাবলাম..."
নুসরাত তড়িঘড়ি ব্যাগ গুছিয়ে বলল, "আরে না দিদি, সে তো আমাদের কলেজেরই প্রাক্তন ছাত্র। এখন ব্যাংকে চাকরি করে। খুব ভালো ছেলে!"
"উফ্ফ!" সুমিত্রাদি নাটকীয়ভাবে কপালে হাত ঠেকালেন, "যখনই কোনো মেয়ে বলে 'খুব ভালো ছেলে', তখনই আমার গা শিউরে ওঠে!"
সবাই হাসতে হাসতে স্টাফ রুম থেকে বেরিয়ে এল। করিডোরে হাঁটতে হাঁটতে ঋতুদি বললেন, "আমাদের সময়ে যদি এমন হত! আমার তো বিয়ের আগে স্বামীকে ঠিকঠাক দেখাই হয়নি!"
"আমার তো বিয়ের রাতে প্রথম দেখ!" সумিত্রাদি হাসলেন, "ভেবেছিলাম যদি কালো হয়? কিন্তু ভাগ্যিস ফর্সা ছিল!"
মুনমুন সেনের ঠোঁটে শয়তানি হাসি লেগে থাকল। সে আঙুল দিয়ে ছোট্ট একটা ইশারা করল, যেন বাতাসে লজ্জার একটা রেখা টেনে দিল। সুমিত্রাদির দিকে চোখ টিটকারি দিয়ে বলল, "ফর্সা বলছো তুমি গায়ের রং, নাকি... ওই 'বিশেষ জায়গাটার' রং?"
স্টাফ রুমের বাতাস যেন এক সেকেন্ডের জন্য জমে গেল। ঋতুদি হাত দিয়ে মুখ ঢাকলেন, সোহিনীর চোখ গোল হয়ে উঠল। নুসরাত তো একেবারে লাল টমাটো হয়ে গেল, কফির কাপে নাক গুঁজে দিল।
সুমিত্রাদি কিন্তু একটুও লজ্জা পেলেন না। উল্টো গলা উঁচু করে হাসলেন, "ওইটা আবার কী? বলো না স্পষ্ট করে— 'ধোন' নাকি?"
"হ্যাঁ গো, হ্যাঁ!" মুনমুন সেনের কণ্ঠে খিলখিলানি, "তোমার বরের 'ধোন' কি ফর্সা ছিল নাকি?"
সুমিত্রাদি এবার একটু ঝুঁকে পড়লেন, চোখে চাপা দুষ্টুমি, "ধোন তো কালই ভালো, মুনমুন! কালো হলে শক্ত দেখায়... আর..."—কণ্ঠটা নামিয়ে ফিসফিস করে বললেন— "রাতে আলো নিভিয়ে দিলে তো আর রং চোখে পড়ে না, গরমটা টের পাওয়া যায়!"
"আরে বাবা!" ঋতুদি হাততালি দিয়ে উঠলেন, "একেবারে সায়েন্সের ব্যাখ্যা দিয়ে দিলে!"
সোহিনী তো একেবারে হেসে অস্থির, "সুমিত্রাদি, আজকে তোমার জিভে কি মধু মাখানো ছিল নাকি? এতকাল পর স্বামীর গুণগান শুনছি!"
মুনমুন সেন এবার নাটকীয়ভাবে নিশ্বাস ফেলে বললেন, "আমার স্বামীরটা তো একদম দুধের মতো সাদা... কিন্তু কালোই ভালো, তা ঠিক বলেছ। কালো জিনিসে রস বেশি, যেমন— ডালিম, আঙুর..."
"ওমা! এখানে এখন ফলের হাট বসেছে নাকি?" নুসরাত মুখ লাল করে চিৎকার করে উঠল।
সুমিত্রাদি হাসতে হাসতে বললেন, "যাও নুসরাত, তুমি এখনো বাচ্চা, এ সব কথার মানে বুঝবে না!"
"বুঝব না? আমি তো সব বুঝি!" নুসরাত জিদ ধরে বলল, "আমার বয়ফ্রেন্ডেরটা..."—কথা শেষ না করেই হঠাৎ থেমে গেল, মুখে হাত চাপা দিল।
স্টাফ রুম গর্জে উঠল হাসিতে। মুনমুন সেন নুসরাতের গালে চিমটি কেটে বললেন, "আহা, আমাদের ছোট্ট মেয়েটা এখন থেকে সব টেস্ট করে দেখবে!"
সুমিত্রাদি মাথা নেড়ে বললেন, "তা দেখে নিস নুসরাত, কালো না সাদা— রস থাকলেই হলো!" আবার চোখ টিপে "খাৎনা করা তো রে? নাকি টুপিওয়ালা!!"
স্টাফ রুমের হাসি যেন একসঙ্গে থেমে গেল। নুসরাতের মুখটা একেবারে আগুনের মতো লাল হয়ে উঠল, চোখ দুটো গোলগাল। ঋতুদি হঠাৎ কাশতে শুরু করলেন, যেন গলায় জলের গ্লাস আটকে গেছে। সোহিনী তো একেবারে চেয়ারেই ঠক করে বসে পড়লেন, "ওমা! এ আবার কী প্রশ্ন!"
মুনমুন সেন এবার নাটকীয়ভাবে নাক উঁচু করে বললেন, "সুমিত্রা, তুমি আজকে একেবারে 'এডাল্ট শপ' খুলে বসেছো নাকি?"
সুমিত্রাদি কিন্তু একটুও লজ্জা পেলেন না। উল্টো আরেকটু ঝুঁকে পড়ে নুসরাতের দিকে চোখ টিপলেন, "কী রে, বল লজ্জার কি আছে..."
নুসরাতের অবস্থা খারাপ। মুখে কথা ফুটছে না, ঠোঁট কাঁপছে, "আ...আমি কি করে জানব ম্যাডাম! আমরা তো এখনও...এখনও..." একটু থেকে লজ্জায় হাত দিয়ে মুখ ঢেকে "টুপিওয়ালা.."
"টুপিওয়ালা!" - নুসরাতের মুখ থেকে এই শব্দটি বেরুতেই যেন পুরো স্টাফ রুমে বিদ্যুৎ খেলে গেল।
মুনমুন সেনের চোখ দুইটা আনন্দে গোল হয়ে উঠল, "আহা! আমাদের ছোট্ট মেয়েটা তো সব জেনেশুনেই রাখে!" বলতে বলতে তিনি নুসরাতের গালে একটি আদুরে চিমটি কাটলেন।
সুমিত্রাদি এবার পুরোপুরি ঝুঁকে পড়লেন নুসরাতের দিকে, তাঁর চোখে দুষ্টুমির চমক, "তাই নাকি! টুপিওয়ালা! তা সে টুপিটা কি কখনও খুলেও দেখেছিস?"
নুসরাতের অবস্থা দেখে কে! মুখটা একেবারে লাল টমেটো, দুই হাতে মুখ ঢেকে ফেলেছে, কিন্তু আঙুলের ফাঁক দিয়ে চোখ দুটো লুকোচুরি খেলছে। "ম্যাডাম! আপনারা কি বলেন!"
"ওরে বাবা!" সোহিনী হাততালি দিয়ে উঠলেন, "এখন তো আমাদের নুসরাত 'ফিল্ড রিসার্চ'-এ পিএইচডি করে ফেলেছে!"
ঋতুদি হাসতে হাসতে পেটে হাত দিলেন, "আমার সময়ে তো শুধু বিবাহিত মহিলারাই এ সব কথা বলত। এখন তো অবিবাহিত মেয়েরা আমাদেরকেই শিক্ষা দিচ্ছে!"
সুমিত্রাদি "কি যে বলো ঋতুদি, ওরা আজকাল কার মেয়ে, আমাদের সময়ের সাথে তুলনা করে লাভ আছে...!" একটু থেকে কুটিল হাসি দিয়ে "তবে আমার টুপি ছাড়া একবার টেস্ট করার ইচ্ছে আছে!!"।
"আরে রাম!" ঋতুদি চমকে উঠলেন, "সুমিত্রা, তুমি আজকে একেবারে 'হ্যান্ডস-অন এক্সপেরিমেন্ট' করতে চাও নাকি?"
নুসরাতের মুখে এখন আর লাল রঙ ধরে না— গাল দুটো যেন পাকা আমের মতো টকটকে। সে আঙুল দিয়ে কান চেপে ধরে বলল, "আমি কিছু শুনছি না! কিছু শুনছি না!"
মুনমুন সেন গম্ভীর হয়ে বললেন, "সুমিত্রা, তোমার বয়সে নতুন 'স্যাম্পল টেস্টিং'-এর লোভ করা ঠিক না। স্বামীজি জানতে পারলে কী বলবেন?"
সুমিত্রাদি দুষ্টুমি করে চোখ টিপলেন, "ওই বুড়োটা তো এখন শুধু 'থিওরিটিক্যাল নলেজ' দেয়, 'প্র্যাকটিকাল' কিছুই মনে রাখে না!"
"হাঃ হাঃ!" সোহিনী হেসে উঠলেন, "তা নয়তো! আমাদের বয়সে স্বামীরা তো 'ল্যাব ম্যানুয়াল' ঘেঁটেই সময় কাটায়!"
নুসরাত এবার সত্যিই অস্বস্তিতে পড়ে গেল, "আমি... আমি এখন যাই..."
কিন্তু ঋতুদি তাকে ধরে রাখলেন, "যাওয়া কি সহজ! তুমি তো এখন আমাদের 'রিসার্চ অ্যাসিসটেন্ট'! বলো, টুপিওয়ালাদের 'পারফরম্যান্স রিভিউ' কেমন?"
নুসরাতের ঠোঁট কাঁপছে, "আমি কিছু জানি না— ওই যে, আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে—"
"ওমা!" মুনমুন সেন নাটকীয়ভাবে হাত উঁচু করে বললেন, "এবার ওকে ছেড়ে দাও। ওর বয়ফ্রেইন্ড বেচারা অপেক্ষা করছে.."
সুমিত্রাদি শেষ মুহূর্তেও নুসরাতের দিকে চোখ টিপে বললেন, "যাও বাছা, ডেট করো গিয়ে। তবে মনে রেখো— 'টুপি' হোক বা 'নন-টুপি', 'কালো খাঁড়া' হলেই 'রাইড' মজার!"
নুসরাত দৌড়ে পালাল, পিছনে ফেলে গেল একঝাঁক হাসির শব্দ। লিফটের দরজা বন্ধ হওয়ার আগেই সোহিনীর কণ্ঠ ভেসে এল, "দেখো, আমাদের নুসরাত তো একেবারে 'লাভ স্টোরি' লিখতে বসে গেছে!"
মুনমুন ঠোঁটে শয়তানি হাসি নিয়ে বললেন, "কী সোহিনী ম্যাডাম, আপনি কি আমাদের সঙ্গে আসছেন না?"
সোহিনী হেসে বললেন, "না গো, আজ পারব না। বাড়িতে রামু কাকা একলা..."
মুনমুন চোখ টিপে বললেন, "ওহো! মানে আজ রামু কাকা আর আমাদের মিসেস সোহিনী আগারওয়াল... উফফ! একসাথে 'বিশেষ সেশন' নাকি?"
সুমিত্রাদি বলে উঠলো "ওই দেখো, সোহিনীও রামু কাকা ধরে রেখেছে, আমি একটা খৎনা জোগাড় করতে পারলাম না...."
মুনমুন হাসতে হাসতে বললেন, "পাবে পাবে... এখন আর দেরি করো না, চলো! নইলে দোকান বন্ধ হয়ে যাবে!"
-- চলবে