মায়ের সাথে মাছ ধরা - অধ্যায় ১৩
আমি- কেন আমার পুষ্টিকর খাদ্য ছোট বেলা যা খেয়ে বড় হয়েছি।
মা- দুষ্ট ছোট বেলা কি জালান জালিয়েছিস আমাকে একটু পর পর কান্না মুখে না দিলে থামতিনা।
আমি- মা কি বলো আমার লজ্জা করে শুনতে সত্যি আমি এমন ছিলাম।
মা- আমি কি মিথ্যে বলছি, তবে তোর দিদি তোকে খুব ভালবাসত, সব সময় তোকে কোলে নিত, পারতনা নাদিস নাদুস ছিলি তো সব সময় ভাই ভাই করত।
আমি- দিদি তো আমাকে এখনো কত ভালবাসে, জামাইবাবুটা কেমন আমাদের সইতে পারেনা, চাকরি করে বুরো একটা, কেন ওর কাছে দিদিকে বিয়ে দিলে।দিদিকে কতদিন দেখিনা, তুমি দেখেছ দিদিকে।
মা- নারে এমনি ভালো তোর বাবার জন্য আসেনা, তার একটা সম্মান আছে না, শ্বশুর মাতাল পরিচয় দিতে লজ্জা বোধ করে। কিন্তু তোর দিদিকে ভালই রেখেছে, এখন দেখতে আমার মতন হয়ে গেছে এখন আর আগের মতন নেই বেশ মোটা হয়ে গেছে, হবেনা কাজ করেনা বসে বসে খায় আর মেয়ে নিয়ে থাকে, জামাইটা অফিস যায় ফেরে অনেক রাতে।
আমি- মা আমি চাকরিটা পাই দেখবে তখন কি করে। জামাইবাবুর বয়স অনেক দিদির ডবল বল।
মা- হ্যা এই ৪২/ ৪৩ হবে।
আমি- প্রায় তোমার সম বয়সী হবে।
মা- সে হোক একটু বয়স বেশী হলে বউকে বেশী ভালবাসে বুঝলি।
আমি- সে বুঝলাম বাবাও তো তোমাকে অনেক ভালবাসে কিন্তু তাও দেখি তোমাদের মধ্যে মিল নেই।
মা- তোর বাবা ভালবাসে না ছাই, জামাই তোর দিদিকে প্রতি কালীপূজায় কিছু না কিছু সোনার জিনিস কিনে দেয় তোর বাবা তো উলটো আমার কাছে চায়। এটাই তোর বাবা আর আমার জামাইয়ের মধ্যে পার্থক্য, জামাই তার বউর খোঁজ রাখে যত্ন করে তোর বাবা আমাকে শুধু খাটায়, পারে না কিছুই। আমার সব আশা ভরসা তুই।
আমি- মায়ের হাত ধরে মা আমাকে নিয়ে তোমার ভয় হয় নাকি।
মা- সে না কিন্তু তুই তো তোর বাবার ঔরসে জন্মেছিস সেই যা ভয়। বংশের একটা ধারা থাকে।
আমি- মা তুমি কোনদিন ওইসব চিন্তা করবেনা, আমি তোমার জন্য সব করব, যদি মানুষ খুন করতে বল তাও করব কিন্তু আমাকে বাবার সাথে তুলনা করবে না, আমি তো তোমারও ছেলে।
মা- বালাইষাট কেন মানুষ খুন করবি, আমরা সুখে থাকবো সেই ব্যবস্থা করবি।আমি তোর মুখের দিকে তাকিয়ে অনেক সুখের আশায় বেঁচে আছি সোনা অমন কথা একবারের জন্য মুখে আনবি না, তুই কাছে মা থাকলে আমি কি নিয়ে থাকব, তুই আমার সব, বলে চোখের জল ফেলল।
আমি- মায়ের চোখ মুছিয়ে দিয়ে বললাম তুমি কি ভাবছ আমি তো কথার কথা বললাম। আমার পাগলি মা নাকি তুমি।
মা- হ্যা সোনা আমি যে পাগল হয়ে গেছি, গত দুই দিন ধরে আমার মনের মধ্যে অনেক চিন্তা, কি করে কি করবি তুই আমার কাছে থাকবি তো সেই সব চিন্তা, তুই কাছে থাকলে আমার কত ভালো লাগে, তোকে বলে বোঝাতে পারবনা বাবা, আমাকে ছেরে জাবিনা তো।
আমি- না মা তুমি আমার সব, তুমি আমার জগত, আমার সত্যিকারে সঙ্গী আমি সব সময় তোমার সঙ্গ পছন্দ করি মা। বাড়ি আসার পর থেকে মানে মাছ ধরতে যাওয়ার পরে আমি বুঝতে পেরেছি, তুমি কত কষ্ট করে আমাকে এই জায়গায় নিয়ে এসেছো, কি করেছ আমার জন্য, এবার যে তোমার পাওয়ার পালা মা, অনেক দিয়েছ আমাকে এবার আমি দেব তোমাকে। চাকরি করে তোমাকে অনেক সুখে রাখব মা।
মা- চাকরি পাস না পাস সে নিয়ে আমার আখেপ নেই, তুই যা কামাই করছিস আরো কর কিন্তু আমাকে তোর সাথে রাখবি তো। সেই কথা দে আমাকে।
আমি- মা কি যে বল তোমাকে আমি আমার বুকের ভেতর রাখতে চাই, মানে আমার সাথে খুব কাছে রাখতে চাই মা বললাম না তুমি আমার জগত, তুমি না থাকলে আমার জগত অন্ধকার মা।
মা- হ্যা সোনা আমি তোর কাছে থাকবো, খুব কাছে তোর কাছে থাকাই আমার উদ্দেশ্য, অন্য কিছু না সোনা। তোর মাকে একটু ভালবাসিস তাতেই হবে।
আমি- মা আমি তোমাকে কত ভালবাসি কি করে বোঝাবো, তুমি বুঝতে পারছ কেন তোমার কাছে থাকি পাশে থাকি, তোমার বোঝা উচিত।
মা- বুঝি সোনা কিন্তু তবুও মন মানেনা, দেখিস তো তোর বাবা কেমন মানুষ আমার একদম খোঁজ রাখেনা, এভাবে বাচা যায় তুই বল।
আমি- মা বাবাকে ভুলে যাও আমি আছি আমার কাছে থাকবে, তোমার কোন অভাব রাখব না। আমি তো সব বুঝিনা তুমি আমাকে বলবে কি লাগবে, একবার মন খুলে বলবে দ্যাখ আমি পারি কিনা, আমি তোমার সব আশা পুরন করব এই কথা দিলাম এই খোলা আকাশের নীচে বসে, কখনো আমাকে বলতে ইতস্ত করবে না, আমি সব করব মা, অসম্ভব কে সম্ভব করব।যদি কোন নিষিদ্ধ কাজ করতে হয় তাও করব কিন্তু তোমাকে অসুখী থাকতে দেব না মা।
মা- ঠিক আছে সোনা জানি তুই পারবি সে নিয়ে আমার কোন চিন্তা নেই, রাত অনেক হলনা এবার যাবি। কটা খেতে হবে তো বেশ গরম পরছে আকাশের অবস্থাও ভালো না।
আমি- মা এখানে বসে কথা বলতে ভালই লাগছিল, যাবে তবে চল হ্যা রাত বেশ হয়েছে চল তাহলে বলে মায়ের হাত ধরে রওয়ানা দিলাম।
মা- কতদিন পরে এভাবে নিরিবিলি বসে কথা বললাম।
আমি- মা এর আগে কবে এভাবে বসে কথা বলেছে আর কার সাথে বসে কথা বলেছ।
মা- মনে নেই তবে আজ মনটা অনেক ভাল লেগেছে তোর সাথে কথা বলে এভাবে তো কথা কারো সাথে বলা হয়না, বাড়িতে একাই থাকতাম তোর বাবা তো নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত, আমি কি করি সে খেয়াল কোনদিন রাখত না। তোরা যখন ছোট ছিলি তখন কাজে ব্যাস্ত থাকতাম কিন্তু তোর দিদির বিয়ে হওয়ার পরে তুই কলকাতা চলে যেতে একদম একা হয়ে গেছিলাম। কতবছর পর আজ আমার ভালো লাগছে।
আমি- মা বলেছিনা এখন থেকে তোমাকে অনেক সময় দেব আমি, এই একমাস তো সব সময় তোমার কাছে থাকবো। আচ্ছা মা একটা কথা বলবে তুমি কি কারো সাথে প্রেম করেছ।
মা- কি বলছিস তুই
আমি- দ্যাখ মা আমাকে বন্ধু ভাবতে পার, আর আমাকে বলতে পার তুমি আমার মা, আমাকে প্রান খুলে বলতে পার আমি কিছু মনে করব না। বিয়ের আগে হতেই পারে।
মা- তার আগে বল তোর কেউ আছে কি। যে আমার বৌমা হবে।