মিলন - অধ্যায় ১২

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-29239-post-3216017.html#pid3216017

🕰️ Posted on April 25, 2021 by ✍️ Sonabondhu69 (Profile)

🏷️ Tags:
📖 1548 words / 7 min read

Parent
আমি বিস্মিত হয়ে গিয়েছিলাম রঘু কাকার থেকে খবরটা শুনে। বাড়ি যখন পৌছালাম তখন দেখি গ্রামের চেনা অচেনা অনেকেই উপস্থিত বাড়ির মধ্যে। আমাকে রঘুকাকা দিদির ঘরে নিয়ে গিয়ে বসালো। দিদিকে দেখে খুশি হবো নাকি বাবার দ্বিতীয় বিয়ে শুনে কাঁদবো সেটাই ভেবে পাচ্ছিলাম না। দিদি আমাকে দেখে দিদি:- আয় বোস, আসতে কোনো অসুবিধা হয়নি তো? আমি মাথা নাড়িয়ে না জানাই। দিদি আমার দিকে তাকিয়ে প্রশ্নের ছাপ দেখে বলে "আমিও জানিনা, আমার হোস্টেলে ফোন করেছিলো রঘু কাকা।" তারপর কিছুক্ষণ নিশ্চুপ বসে থাকি দুজনে পাশাপাশি দিদির বিছানায় পা ঝুলিয়ে। তখন বাবা ঘরে ঢোকে। আমরা দুজনেই তাকিয়ে থাকি বাবার মুখের দিকে। বাবা একটা চেয়ার আমাদের কাছে এগিয়ে নিয়ে এসে দুজনের মুখোমুখি বসে বলেন বাবা:- "জানি তোমাদের মনে অনেক প্রশ্ন" আবার একটু থেমে "অনেকটা পথ এসেছো একটু কিছু খাও তারপর কথা বলবো"। বাবার কথা শেষ হওয়ার আগেই এক মহিলা কিছু খাবার একটা প্লেটে করে নিয়ে ঘরে ঢোকে। আমি তার দিকে তাকিয়ে দেখি লতিকা বৌদি। পিছনে রঘু কাকাও এসেছে তার হাতেও কিছু খাবারের প্লেট। এখনো বাবার বিয়ে করা আমাদের নতুন মাকে দেখছি না। তবে বৌদিকে আজ বেশ দেখতে সুন্দর লাগছে। মনে হয় নতুন শাড়ি গা ভর্তি নতুন গয়নার জন্য আলাদা একটা চমক দেখছি। কিন্তু তাতেও বোঝা যায় বৌদির মুখ যেনো বেশ শুকনো। বৌদিকে দেখে আমার বেশ খুশি খুশি লাগে। কিন্তু বৌদি ঘরে ঢুকে কারোর দিকেই তাকায় না। বাবা বৌদিকে উদ্দেশ্য করে বলে "টেবিলে খাবারটা রাখো" একটা জিনিস বুঝি না, যে বৌদি বাবার সামনে আসতোই না একেবারে বলতে গেলে সে আজ খাবার নিয়ে এসেছে তাও বাবার সামনে, আমাদের তো রঘু কাকা ছিলই এসবের জন্য। বৌদি খাবার রেখে সেখানেই দাড়িয়ে থাকে, না একবারও কারো সাথে কথা বলে, না কারো দিকে তাকায়। আমরা দুভাইবোন বৌদির মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি। বাবা বলেন "নাও খেয়ে নাও"। বৌদি আমাদের হাতে খাবারের প্লেট তুলে দেয় কিন্তু একটিবার তাকায় না কারো দিকে। অথচ আমরা দুজন তাকিয়ে আছি বৌদির দিকে। হটাত বাবার কাছ থেকে এমন কথা শুনবো কোনোদিন আশা করিনি। "ওই তোমাদের দ্বিতীয় মা।" দিদি তীব্র প্রতিবাদে চেঁচিয়ে ওঠে। "কি বলছো বাবা তুমি???" তৎক্ষণাৎ বৌদির সাথে আমার এক পলকের চোখাচোখি হয়। আমার মনে হয় এই বুঝি বিছানা থেকে পড়ে যাবো। এমন হতচকিত ব্যাপার যে বুঝতে পারিনা বাবাকে কোন প্রশ্নটা আগে করা উচিত, কি, কেনো, কিভাবে......! দুভাইবোনেরই মনে যে অনেক প্রশ্ন সেটা বাবা বুঝতে পেরে বলেন "তোমরা স্থির হয়ে বসো আমি সব বলছি।" স্থির হয়ে বসার মতো অবস্থায় কেউই ছিলাম না। একটা ব্যাপার কিছুতেই বুঝতে পারছিনা বৌদি তো বিবাহিত তাহলে কীকরে..? আমার জিজ্ঞেস করার আগেই দিদি বাবাকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্নটা করে। ততক্ষনে রঘু কাকা চলে গেছে, অবশ্য আগেই গেছে। বাবা একটা বড় নিশ্বাস নিয়ে যেটা বলে সেটার সারমর্ম এই...... গতমাসে বৌদির বর মানে সমরকে সাপে কাটে তার বাড়ির সামনে ঝড় জলের আগের মুহূর্তে ঠিক সন্ধ্যার সময়। তাই তাকে কোথাও নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়না। সেইসময় বাবাই তার চিকিৎসা করার চেষ্টা করে কিন্তু মারা যায় সমর। ঝড় জল থেমে যাওয়ার পর মুখে মুখে গোটা গ্রাম খবর হয়ে যায়। কিছু লোকের ধারণা বাবা ইচ্ছা করে মেরে ফেলেছে। সেটা তারা বলে প্রতিবাদ করার চেষ্টা করে। কিন্তু তাতে কিছু করার থাকে না, যে যাবার সে তো গেছেই। তার পর থেকে বৌদির সংসারের যাবতীয় কিছুর ভার বাবা নিয়েছিল। যেহেতু বৌদির আর কোথাও যাওয়ার ছিলনা তাছাড়া বৌদিও তার স্বামীর ভিটে ছেড়ে কোথাও যেতে চায়নি। এরকমই গতকাল রাতে বৌদির জ্বরের খবর রঘু কাকার কাছ থেকে শুনে বাবা বৌদিকে দেখার জন্য যায়। আর তারপরই কিছু লোক মিলে দুজনকে টেনে বাইরে নিয়ে আসে আর পঞ্চায়েত বসে তখনই। যে লোকটা অন্যের সংসারের ঝামেলা মিটিয়ে দিত। তার জন্যই ওইদিন রাতে সালিশি সভা বসে। সেই সভায় ঠিক হয় লতিকা বৌদিকে বাবা যদি বিয়ে করে তাহলে তারা আর কিছু বলবেনা নাহলে অন্য ব্যবস্থা করবে। সামনে কোনো উপায় না পেয়ে বাবাও বাধ্য হয়ে রাজী হয়। এই ঘটনা শোনার পর দুঃখ, রাগ, হতাশা, কষ্ট মিলিত সনমিশ্রণে আমার বুক যেনো ভেঙে যেতে থাকে। দিদি বৌদি দুজনের চোখেই জল, আমিও যে কাঁদছি তখন। বাবা:- তোমরা বসো আমি একটু আসছি এই বলে বাবা বেরিয়ে যেতে বাবার পিসি ঘরে ঢুকে বৌদিকে..... না না মাকে, মানে বাবার বিয়ে করা বউ মানে তো তাই বোঝায়..... মাকে বলে বাইরে যেতে তাই সেও চলে যায়। পিসিঠাকুমা আমাদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করে কিন্তু আমাদের থেকে কোনো প্রতিউত্তর না পেয়ে তিনিও চলে যান। বসে থাকি দুভাইবোন। দিদি বালিশে মুখ গুজে কাঁদতে থাকে। কিন্তু আমি কার বুকে মাথা রেখে কাঁদবো। যে বৌদি ছিলো আমার প্রথম ভালোলাগার মানুষ সে আজ কাছের সম্পর্কের হয়েও পর। আমি দিদিকে শান্ত করার চেষ্টা করি। দিদি বলে "ভাই কি থেকে কি হয়ে গেলো?" আবার কাঁদতে কাঁদতে বলে "আমি চলে যাবো"। আমি:- কোথায় যাবি দিদি? দিদি:- এখনই হোস্টেলে চলে যাবো। আমি:- বাইরে অনেক রাত হয়ে গেছে তুই যাবি কীকরে? কাল তোর সাথে আমিও যাবো। দিদি কিছু পরে কান্না থামিয়ে আমাকে বলে "তোর খুব কষ্ট হচ্ছে না রে ভাই??" আমি:- কষ্ট তো হচ্ছে, কিন্তু তুই কেনো জানতে চাইছিস? দিদি:- কারণ তুই মনে হয় বৌদিকে মানে আমাদের ছোটমাকে পছন্দ করতিস। আমি বলার ভাষা হারিয়ে ফেলি, দিদি জানলো কীকরে..... দিদি:- বেশি ভাবিস না আমাকে ছোটমা সব বলতো, আমরা বান্ধুবি ছিলাম। কিন্তু এখন সে আমাদের ছোটমা। জানিস গতবার তুই চলে যাওয়ার পর আমি যখন এসেছিলাম তার কাছ থেকে সব শুনেছিলাম তোদের দুজনের কথাবার্তা। সেও তোকে আপনজন ভেবেছিল..... কিন্তু কোথা থেকে কি হয়ে গেলো....!! এমন সময় রঘু কাকা আমাদের রাতের খাবারের জন্য ডেকে যায়। কারণ আমাদের প্লেটের খাবার যেমন তেমনই ছিলো যে। বাইরে বেরিয়ে দেখি গ্রামের কিছু লোকের খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে ছোটো করে, তারা সেখানেই খাচ্ছে। আমাদের দুভাইবোনকে দোতলায় নিয়ে গেলো রঘু কাকা। আমরা দুজন সাথে বাবা খেতে বসলাম। ছোটমা আমাদের সব কিছু ধরে দিতে লাগলো, তবে কারো সাথেই কোনো কথা হলোনা। যদিও ছোটো বেলার অভ্যাস খাওয়ার সময় কথা না বলা। এটা বাবার কাছ থেকে শেখা। সেদিনের মতো কোনরকমে রাতটা পার করি না ঘুমিয়ে। পরদিন দিদির সাথে বেরিয়ে পড়ি হোস্টেলের উদ্দেশ্যে। বাবা যদিও অনেকবার বলেছিলেন আর একদিন থেকে যাওয়ার জন্য। কিন্তু দুজনেই পড়াশোনার কথা বলে বেরিয়ে পড়ি। বেরোনোর সময় ছোটমা দিদিকে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ ধরে কাঁদছিল। আমারও চোখ ছলছল করে এসেছিল তাই সেটা লোকাতে তাড়াতাড়ি বাইরে বেরিয়ে যাই ছোটমার সাথে কথা না বলেই। দিদি আমাকে হোস্টেলে পৌঁছে দিয়ে নিজের হোস্টেলে ফিরে যায়। সময় অতিবাহিত হতে থাকে। অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার পর বাড়ি ফিরতে মন চায়না। যদিও বাড়ি থেকে ফোন এসেছিল তবুও যাইনা, দিদিও যায়নি। দেখতে দেখতে দশম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়ে যাই। মাঝে একবার নবম শ্রেণীর পরীক্ষার শেষে বাড়ি ফিরলেও ছোটমার সাথে কোনো কথা হয়নি। তার দিক থেকেও কোনো চেষ্টা দেখিনি। দশম শ্রেণীতে আবার একবার ডাক পেলাম বাড়ি থেকে। এবার আমি একাই ফিরে গেলাম। বাড়ি গিয়ে জানলাম দিদিকে ছেলে পক্ষের লোক দেখতে আসবে তাই ডেকেছে। পরদিন ছেলের বাড়ির লোক দেখে গেলো দিদিকে। লোক বলতে বাবার বয়সী একজন সাথে পুরহিত মহাশয় ঘটকের পরিবেসে। সুন্দর করে সাজিয়ে দিদিকে তাদের সামনে বসানো হলো। জানলাম পুরোহিতের সাথে আসা লোকটি দিদির হবু শ্বশুরমশাই। হবু একারণেই বললাম কারন লোকটি জানালেন তার মেয়েকে পছন্দ হয়েছে। যাবার সময় বেশ কিছু নগদ দিদির হাতে দিয়ে গেলেন। আর বলে গেলেন অতি শীঘ্রই বিয়ের ব্যবস্থা করতে। কারণ ছেলে জাহাজে চাকরি করে নাম রবীন পাঠক, লোকটির নাম বিপিন পাঠক। পাঠক শুনে বইয়ে পড়া বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা গল্পের চরিত্র ভবানী পাঠকের কথা মনে পড়ে যায়। এরা তার বংশধর নয় তো আবার। এটা ভেবে মনে মনে এক চোট হেসে নিই। আদতে বিপিন বাবু মিলিটারি চাকরি করতেন যেটা তার স্বাস্থ্য দেখলেই বোঝা যায়। রিটায়ার করে আর কিছু কাজের প্রয়োজন মনে করেননি। পূর্বপুরুষদের অজস্র সম্পত্তি কিন্তু থাকার মধ্যে তিনি একাই, স্ত্রীও গত হয়েছেন কয়েকবছর আগে। আত্মীয় স্বজনও তেমন কেউ নেই। তাই অবসর সময় কাটাতে ব্যায়াম শেখান। মাঝে মাঝে ছেলে বাড়ি আসে। আটচল্লিশ বছর বয়সে নিজেকে প্রচন্ড একা অনুভব করেন তাই ছেলের তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে চান যাতে করে বাড়িতে কথা বলার লোক যেনো পান তিনি। যাবার সময় এটাও জানালেন দিদি বিয়ের পরও পড়াশোনা করতে পারে। দিদিকে রাতে যখন জিজ্ঞেস করলাম সে রাজী কিনা। সে জানালো "আমি তো ছেলেকেই দেখলাম না এখনো।" আমরা কথা বলছি দেখি ছোটমা এসে উপস্থিত। ছোটমা দিদিকে একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে যে দিদি রাজী কিনা। দিদি কিছু বলছেনা দেখে ছোটমা বললো "রাজী হয়ে যাও, ছেলে খুব সুন্দর দেখতে। আমি আর তোমার বাবা গিয়ে দেখে এসেছি। আর দেখছনা তোমার হবু শশুর এখনও বুড়ো হয়নি।" আমি ঘুমানোর বাহানা করে চলে আসতে চাইছিলাম। দিদি ডেকে বললো "ভাই তুই ছোটমার সাথে কথা বলেছিস?" আমি ছোটমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম "কেমন আছো ছোটমা?" ছোটমা আমার দিকে কেমন একটা দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়েছিল। বললো "তুমি চাইলে আমরা আবার বন্ধু হতে পারি আগের মতোই"। আমি:- "না তার প্রয়োজন নেই" বলে এক মুহুর্ত অপেক্ষা না করে চলে যাই নিজের ঘরে। আমি চাইনা কষ্টগুলো বুকের মধ্যে নিয়ে শেষ হয়ে যেতে। ছোটমা আমার বন্ধু হলেও সেই পুরোনো বন্ধুত্ত্ব ফিরে আসবে না। কারণ সে এখন বাবার বিবাহিতা। মানুষ কষ্ট থেকে দূরে সরতে চাইলেই কি কষ্ট থেকে দূরে যেতে পারে! কষ্ট ঠিক তার মধ্যে মানুষকে বন্দী করেই নেয়। তিন মাস পর দিদির বিয়ে ঠিক হয়। যথা সময়ে দিদির বিয়ে সম্পন্ন হয়। ছোটমা মায়ের ভূমিকাই পালন করে। খুব বেশি না হলেও ছোটমার সাথে একটু আধটু কথা বলি। দিদির বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর আমি বড়ো একলা হয়ে যাই। বাবা চেয়েছিলেন প্রথম বোর্ড পরীক্ষা দেওয়ার পর আমি বাড়ি থেকেই যেনো পড়াশোনা করি। আমি নিজে থেকেই বারণ করি। আমি চাইনি ছোটমার কাছাকাছি যেতে। দশম শ্রেণীর বোর্ড পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর কয়েকদিন বাড়িতে কাটানোর পর দিদির বাড়ি চলে যাই। দিদি খুব খুশি হয়। দিদির শ্বশুর বিপিন বাবু তো মহাখুশি। দিদির বর মানে জামাইবাবু কিছুদিন আগে এসেছিল চলে গেছে। বিপিনবাবু দিদিকে ডেকে বললেন "দেখো বৌমা তোমার ভাইয়ের যেনো ঠিকঠাক যত্ন নেওয়া হয়।" আমার লজ্জা লাগে এরকম আতিথেয়তা দেখে। তিনি আমাকে কাছছাড়া করতে চাননা। যতদিন ছিলাম তিনি তার সাথেই আমাকে রাখতেন সবসময়। জানিনা লোকটাকেও আমার কেনো যেনো খুব ভালো লাগতো। ঐখান থেকেই কলেজে ভর্তির জন্য আবেদন করি। বাবা চাননি আমি দিদির বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করি। তাই পুনরায় স্থান হয় হোস্টেলে তবে এবার নতুন হোস্টেল। নতুন ছেলেমেয়েদের সাথে পরিচয় বেশ ভালোই লাগে। একটা মেয়ের সাথে পরিচয় হয় নাম ফারজানা খাতুন।
Parent