নতুন জীবন - অধ্যায় ২

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-40501-post-3646594.html#pid3646594

🕰️ Posted on August 29, 2021 by ✍️ ambrox33 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 931 words / 4 min read

Parent
বাবা মারা গেছে শনিবার। আজ সোমবার তাই সন্ধ্যার দিকে বড় জেঠা আমার দুই ফুফুকে নিয়ে আমাদের ঘরে বসছে পাচঁ দিনের দিন কিছু খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করবে এই নিয়ে আম্মুর সাথে কথা বলবে বলে। জেঠা আর দুই ফুফু সোফায় আম্মু খাটের উপর  নির্বাক বসে আছে।  আমি আম্মুর পাশেই দাঁড়িয়ে আছি দেখে ছোট ফুফু আম্মুর পাশে বসার জন্য আমাকে ইশারা করল,  আমি ফুফুর ইশারা পেয়ে আম্মুর বাম দিকে খাটের উপর নিশ্চুপ হয়ে বসলাম। আম্মু আর আমার মুখে কোন কথা নেই নিশ্চুপ হয়ে বসে আছি। বুকে পাথর চাপা কষ্ট আর ছলছল নয়ন মা ছেলে দুজনের। বাবার জন্য আমার প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে বুকের ভিতরটা ফেঁটে যাচ্ছে, ইচ্ছে করছে হাউমাউ করে কাঁদি  কিন্তু  পারছিনা ।  কারন আমাকে কাঁদতে দেখলে আম্মু নিজেকে আটকে রাখতে পারবে না। আমার সাথে সাথে আম্মু ও কান্না শুরু করবে। তাই প্রচণ্ড কষ্ট নিয়েই বসে রইলাম।  প্রিয়জনের মৃত্যুতে মানুষ কতটা ভেংগে পড়ে এ মূর্হতে আম্মুকে দেখে বুঝা যাচ্ছিল, আসলে আপনজনের প্রস্থানে কিংবা অকালপ্রয়াণে হৃদয়ে আঘাতে ক্রন্দনসিক্ত হয়। স্বামীর প্রতি স্ত্রীর টান , এ চিরায়ত শাশ্বত। তাই তো প্রতিটা স্ত্রী কান্নায় ভেংগে পড়ে স্বামী হারানো শোকে। যেদিন বাবা মারা গেছে সেদিন থেকে দেখেছি আমাদের বাড়িতে শোকের মাতম, আম্মুর আহাজারি আর গগনবিদারী আর্তচিৎকার। এই কয়েকদিন কেঁদে আম্মু একেবারে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে। বাবার জন্য আমার না যতটা কষ্ট হচ্ছে তার চেয়ে দ্বিগুণ কষ্ট আম্মুর বুকে চেপে রাখছে যে কষ্টের জল রাতে হলে গড়িয়ে পড়ে। আম্মুর ফোলা চোখ দেখে বড় বড় ফুফু আম্মুকে লক্ষ করে বলল, মৃত্যুর কড়াল গ্রাস একদিন সবাইকে গ্রাস করবে তাতে কোন সন্দেহ নেই  এ থেকে বাচার কোন উপায় ও নেই। অনুর অকাল অপ্রত্যাশিত মৃত্যুতে তোমার কষ্ট হচ্ছে সে বুঝি তাই বলে ভেংগে পড়লে তো চলবে না।  আমার কি কম কষ্ট হয় ভাইটা আমার এভাবে এত তাড়াতাড়ি চলে যাবে সেটা ভাবতেই বুক ফেঁটে আসছে। যে যাওয়ার সেতো চলে গেছে এবার তোমাকে ছোট্র ভাই পুত্রের দিকে চেয়ে সবকিছু সহ্য করতে হবে। বড় ফুফুর কথার সাথে ছোট ফুফুও সায় দিয়ে আম্মুকে শান্তনা দিতে লাগল। শরীরে থাকা উড়নাটা দিয়ে ভেজা চোখ দুটো মুছে আম্মু আমার দিকে তাকিয়ে বলল, হু বুবু আমাকে শক্ত হতে হবে. এরপর জেঠা বলল, শোন যে কারনে তোমার কাছে আসছি পাচঁ দিনের খাওয়া ব্যাপারে কিছু কথা ছিলো  পাশ থেকে ছোট ফুফু,  ভাইয়া বলতে চাচ্ছে  পাচঁ দিনের খানাটা এত বড় করে করতে গেলে অনেক জায় ঝামেলায় পড়ে যেতে হবে । তাই চাচ্ছিলাম ছোট করে শেষ করে চল্লিশ দিনের দিন না হয় কয়েকটা গরু জবেহ করে গ্রামের সবাই কে দাওয়াত করে খাওয়াতে . তাই তোমার মতামত জানতে চাচ্ছিলাম। ভেজা ভেজা কন্ঠে আম্মুর বলল, আপনাদের যেভাবে ভালো মনে হয় সেভাবে করেন এতে আমার কোন দ্বিমত নেই।  সবশেষে চল্লিশতম দিন বড় করে আয়োজন করা হবে বলে পাচঁ দিনের খানাটা ছোট্র করে পরিসরে সারা হবে বলে ডিসিশন নেওয়া হয়। এরপর বুধবার পাচঁ দিনের খানা খাওয়ানো হয় গ্রামের মুরুব্বি আর কিছু গরীব লোকদের। এর মধ্যে চল্লিশা ও শেষ হয় তিনটা গরু জবেহ মাধ্যমে . গ্রামের ছোট বড় সবাইকে দাওয়াত করা হয়েছিল সে খানায়।  এদিকে মাস ছয়েকের মধ্যে আম্মু ধীরেধীরে বাবার শোক কাটিয়ে উঠল লাগল। তবে মাঝ্যে মধ্যে রাতের বেলায় আম্মু কেঁদে চোখ ভেজায় সেটা আমি জানি। কারন চাইলেও তো আর একেবারে ভুলে থাকায় যায় না এত বছরের ভালোবাসা।  মানুষের যখন বিপদ আসে  তখন নাকি চার দিক দিয়ে আসে আমাদের বেলায় তাই হচ্ছিল। বছর ও পার হলো বাবা মারা গেছে এর মধ্যে আমাদের কাছের মানুষ গুলো আস্তে আস্তে বদলে যেতে শুরু করলো। বাবার মৃত্যুর পর যেই জেঠা ফুফুরা ছিলো আমাদের অভিভাবক সময়ের ব্যবধানে আজ তারা আমাদের থেকে দূরে সরে যেতে লাগল। স্বার্থের প্রয়োজনে মানুষ এত দ্রুত বদলে যেতে পারে তাদের না দেখলে বুঝতে পারতাম না। এই সবকিছুর নাটের গ্রুরু হলো ফুফুর স্বামী হাজী আবুল।  বাবা প্রথম যখন বিদেশ যায় বিদেশ থাকা কালীন আমার বড় ফুফুর স্বামীকে টাকা দিয়ে ছিলো আমাদের বাড়ির পাশেই জমি কেনার জন্য। ফুফা জমি কিনে ছিলো ঠিকই কিন্তু সেটার দলিল করেছে তার নামে । বাবা জীবিত থাকা অবস্থায় এই জাগায় আমাদের দখলেই ছিলো,  কিন্তু বাবা মারা যাওয়ার এত দিন পর বড় ফুফু দাবি করে এই জমি নাকি তাদের , তার স্বামী কিনেছে। আম্মু যখন বলল,  আপনার স্বামী কিনেছে তা ঠিক আছে এর টাকা তো আপনার ভাই দিয়েছে আমাদের নামে কিনার জন্য,  তখন ফুফু আর তার স্বামী সব কিছু অস্বীকার করলো বাবা নাকি কোন টাকায় দেয়নি আর টাকা দিয়েছি তার প্রমাণ কি. আম্মু যখনি বলল, বড় ভাই তো সব কিছুই জানে  আমার প্রিয় জেঠা কয় সে নাকি এসবের কিছুই জানে না।  এ জাগাাা নাকি ফুফাই তার টাকা দিয়ে কিনেছে।  এসব নিয়ে প্রায় দিন ফুফু আর জেঠা আমাদের সাথে ঝগড়া করতে শুরু  করলো। একদিন বাড়ি ছিলাম না ফুফু ফুফাতো ভাইয়েরা আম্মুকে মারতে আসছিল ফুফু নাকি আম্মুর গায়ে হাত তুলে ছিলো। আজেবাজে অকথ্য ভাষা গালাগালি করল এত কিছুর পর ও আম্মু নাকি তাদের ভদ্র ভাবে ব্যবহার করছিল কিন্তু তাদের ব্যবহার ছিলো চরম নোংরা যা আমার আম্মু ছাড়া অন্য কেউ হলে চরম পর্যায়ে চলে যেতো। গ্রামের কিছু লোক তো বলাবলি শুরু করলো সুকিয়া আর তার ছেলেরা আজ যা ব্যবহার করল অনুর বউয়ের সাথে এগুলো যদি আমাদের সাথে হতো যত বড়ই জমিদার আর বড় লোক হোক না সুকিয়ার মুন্ডিটা রেখে দিতাম। শুধু অনুর বউ শিক্ষিত মাদ্রসায় পড়ুয়া মেয়ে বলে এতটা সহনশীল ছিলো। আমাদের বাড়ির মেয়ে ছেলে হলে দেখা যেতো আজ। আম্মু শুধু রুপে নয় গ্রামে শিক্ষিত ভদ্র একজন মহিলা বলে পরিচিত ছিলো। অথচ আজ এমন ভদ্র শিক্ষিত একজন নারীর নামে কুৎসা রটাতে একটু ও দ্বিধাবোধ করল না মানুষ রুপী এই অমানুষ গুলো। স্বার্থের জন্য আপন জেঠারাওও ফুফু ফুফার পক্ষে কথা বলতে লাগল। ফুফা ছিলে দুই চার পাচ গ্রামের মধ্যে বিত্তশালী তাই ওনি অন্যায় করলে ও কেউ তার বিরুদ্ধ যেতো না। থানা পুলিশও তার কথা চলত. এভাবে কিছুদিন চলার পর একদিন ফুফা আমাদের সেই কিনা জাগা দখল নিয়ে সে জাগায় দেওয়াল দিয়ে দেয় আমাদের বাড়ির সামনটাতে.. যাতে করে আমরা বাড়ি থেকে বের হলে বাড়ি পেছন দিয়ে বের হতে হয়. ফুফা ফুফুদের এসব অত্যাচার আর বাড়ির সামনে দেওয়াল করে দেখে আম্মু অনেকটা ভেংগে পড়ে. চলবে............
Parent