রং ( ভূল) - অধ্যায় ৫

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-67653-post-5962010.html#pid5962010

🕰️ Posted on June 10, 2025 by ✍️ Boti babu (Profile)

🏷️ Tags:
📖 3921 words / 18 min read

Parent
#রং( Wrong-ভুল) #পর্বঃ৫+৬ ভিডিও অন করে ইরফাদ সিনহা, শত শত মানুষের ভিড়! ক‍্যামেরা!মাইক্রোফোন! সাংবাদিক! তারমাঝে হাতকড়া পড়ে দাঁড়িয়ে আছে অল্প সিনথিয়া। উৎসুকজনতার উপচে পড়া ভীর।কারণ একটাই! কি করে মেয়ে হয়ে একটি পুরুষকে গুম করে দিলো? এই প্রশ্নে পুরো শহর যেনো তোলপাড়। রাতের অন্ধকার রাস্তায় ক‍্যামেরার ফোকাসে চারদিক আলোয় আলোকিত। হাজার হাজার প্রশ্ন, কি করে করলো? রায়হান রাফি এখন কোথায়?সে বেঁচে আছে কি না? সেই প্রশ্নের সম্মুখে মেয়েটি শুকনো মুখে,দূর্বল শরীরে, নিস্তব্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে। যেনো পৃথিবীতে সে আর নেই। সবাইকে ঠেলেঠুলে সরু রাস্তা বের করে দিচ্ছে কর্মরত পুলিশ সদশ‍্য। মানুষের ফাঁকফোকর মেয়েটিকে বাহু ধরে বের করে আনছে মহীলা পুলিশ। আর সিনথিয়া তাদের সাথে তালমিলিয়ে এলোমেলোভাবে হাঁটছে।চোখ দুটো রক্তলাল, টকটকে রক্তজবার ন‍্যায় লাল হয়ে আছে নাকের ডগা।শরীরের রক্তকণা যেনো নোনতা জল আকারে চোখ ফেটে নদীর ধারার মতো পড়ছে তার।  এরকম অপ্রত‍্যাশিত, অকল্পনীয়, অসম্ভাব‍্য, ঘটনার বাস্তব চিত্র নিজের স্বচক্ষে দেখে সমুদ্রের উচ্ছাসের মতো অসংখ‍্য প্রশ্ন তীব্র গতিতে মাথায় এসে বাড়ি খেলো ইরফাদ সিনহার। মেয়েটির চোখদুটির রক্তক্ষরণ যেনো পৌষমাসের হাড়কাঁপানো হীমশীতল বাতাসের ন‍্যায় তাকে একবার কাঁপিয়ে তুললো। পরোক্ষণেই আবার লার্ভার আগুনের ন‍্যায় শরীর গরম হয়ে উঠলো। কান দিয়ে অনবরত ধোঁয়া উঠতে থাকলো। ---------------- হেডকোয়ার্টারের কেবিনে গম্ভীর হয়ে বসে আছে ইরফাদ। সাথে আছেন ডিআইজি প্রভাতরঞ্জন সরকার , থানার কয়েকজন এসআই সহ রিজভী শিকদার। ইরফাদ কাজের বাইরে কথা খুব কম বলে। তবে আজ তাকে আরেকটু অন‍্যরকম লাগায় প্রভাতরঞ্জন সরকার বলে,-- "হোয়াট হ‍্যাপেন্ড মাই ডিয়ার! গতকালের নিউজ দেখেছো তো?" এরপরও ইরফাদের কোনো নড়চর নেই। মুখে কোনো কথাও নেই। প্রভাতরঞ্জন সরকার আবার বললেন, -- "কেস' টা তো এক ধাপ এগিয়ে গেলো! তুমি খুশি হও নি?" টেবিলে হাতের উপর ভর করে রাখা কপালটুকু থেকে হাত সরিয়ে নিলো ইরফাদ।চোখ দু'টি বন্ধ করে শরীর এলিয়ে দিলো চেয়ারে। চেয়ারটা হালকা দুলিয়ে ক্ষীণ শ্বাস ছেড়ে শীতল গলায় বললো, -- "কেস" এর দায়িত্ব কার উপর ছিলো? --অফ কোর্স! আই গেভ ইট টু ইউ "মাই ডিয়ার"। প্রভাতরঞ্জন সরকারের "সুস্পষ্ট" গলা। ইরফাদ সিনহার গলা আবারো হীমশীতল। ইরফাদ চোখ বন্ধ করেই ডিআইজি'কে বললো, -- তাহলে আমাকে না জানিয়ে - মেয়েটিকে গ্রেফতার কেনো করা হলো?  -- এছাড়া তো ও'য়ে ছিলো না ইরফাদ! সব কিছু উপর থেকেই নির্ধারণ করা হয়েছে।   --স‍্যাটিসফাইড আপনি! -- কি বলতে চাচ্ছো! -- মেয়েটিকে তুলে এনে,লকাপে ভরে সবাই স‍্যাটিসফাইড কি না! -- হোয়াই নট! আসামী গ্রেফতার। ভিক্টিম'কে যত তাড়াতাড়ি উদ্ধার করতে পারবো আমাদের জন‍্যে ততো ভালো। --আপনি কি করে সিউর হচ্ছেন স‍্যার! মেয়েটিই আসামী? -- "প্রুফ হয়নি হয়ে যাবে!রায়হান রাফির চাচা ম‍্যাজিস্ট্রেট আশিক চোধুরী ভিক্টিম এর সাথে আসামী সিনথিয়ার প্রেমের বিষয়টি সিউর করেছেন।তিনি জানিয়েছেন, পারিবারিক ভাবে জানার পর- চৌধুরী বাড়ির বউ হিসেবে সিনথিয়া'কে রিজেক্ট করা হয়। এবং রায়হান রাফি'কে অন‍্যত্র বিয়ে করানো হলে- এই মেয়েটি তা সহ‍্য করতে পারে না।মেয়েটি এতো সাংঘাতিক যে,মিসেস রাফি'কেও প্রতি রাতে কল দিয়ে হেনোস্তা করেন এবং বিভিন্ন হুমকিও দিয়েছেন। মিসেস রাফি'র কল লিস্ট এর কপি পাঠানো হয়েছে। এবং তিনি স্বশরীরে সাক্ষী দিয়েছেন। অনিমা চোধুরীর ভাষ‍্যমতে, তাকে বিবাহের পর সিনথিয়া বিরক্ত করতেন, নানা ভাবে ব্ল‍্যাকমেইল করতেন।যেহেতু বিবাহ সম্পন্ন হয়েই গেছে সেহেতু আর কিছুই করার নেই। এই বিষয়টি সুন্দরভাবে বিষয়টি বুঝিয়ে বলতে রায়হান রাফি সেদিন আসামী সিনথিয়ার সাথে দেখা করার জন‍্যে বের হয়েছিলেন।এটার ই সুযোগ নিয়েছেন আসামি।কললিস্ট সহ আরও কিছু প্রুফ দেয়া হয়েছে।" ইরফাদ সিনহা চোখ মুখ খিঁচে সিনেমাটিক গল্পটি গিলে নিলেন। ডিআইজি প্রভাতরঞ্জন সরকারের মুখে আবারো "আসামী সিনথিয়া" শুনে চোটে গেলেন। গমগমে গলায় স্পষ্ট উত্তর দিলেন, --আগে প্রমাণ হোক!তারপর আসামী বলবেন। যে মেয়ে হুমকি দিচ্ছে এটা জেনে কেউ দেখা করতে যাবে? এই সিনেমাটিক গল্প শুনে কি প্রমাণ হয়ে যায়! মেয়েটি আসামী? -- মেয়েটি'কে রিমান্ডে নিলেই তো হয়ে গেলো। বাকি'টা গড়গড় করে বেরিয়ে আসবে...  --যা খুশি করুন... -- তুমি কি বলতে চাচ্ছো মেয়েটি নির্দোষ! -- নো স‍্যার! তবে সত‍্য মিথ‍্যার যাচাই না করে গ্রেফতার করার পক্ষপাতিত্ব নই। -- কিন্তু রাফির পরিবার থেকে কেস করা হয়েছে। এবং ম‍্যাজিস্ট্রেট দ্বারা ইমারজেন্সি ওয়ারেন্ট পাঠানো হয়েছে। কিছু করার ছিলো না! -- "রাফি ও সিনথিয়ার" প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে চুল পরিমাণ ও তাদের দুই পরিবার জানতো না। তাহলে, এই তথ‍্য তাদের কাছে কি করে গেলো স‍্যার! -- তুমি কি বলতে চাচ্ছো? -- আপনি যেটা ভাবছেন ঐ টাই।  --কিন্তু থানা থেকে এসব কে বলবে? -- "ঐ প্রুভ যদি থাকতো। তাহলে ইরফাদ কি এখনো বসে আছে?" ইরফাদ সিনহার গলায় কি যেনো একটা ছিলো। কিসের আভাস দিলেন তিনি! এমন কথায়,রিজভী শিকদার নড়েচড়ে বসলেন। ইরফাদ সিনহার সুস্পষ্ট গলা, -- এ‍্যাগাইন,স‍্যরি ! কেসটা আমি আর নিতে পারছি না। ইরফাদের এমন সিদ্ধান্তে রিজভী শিকদার যেনো এবার খুশীই হলেন। এটাই কি চেয়েছিলেন তিনি?অন্ধের চোখে শেষ পট্টি খুলে তিনি তো এটাই দেখাতে চান পুরো ট্রিটমেন্ট তার হাতেই হয়েছে। তবে প্রভাতরঞ্জন সরকারের নাকোজ করা গলা, -- ইমপসিবল! তুমি না করলে কে করবে? -- আমার অনুপস্থিতিতে যে কাজ এগিয়ে রেখেছেন। তিনি ভালো পারবেন আশা করি। প্রভাতরঞ্জন সরকার ইরফাদকে ভালো ভাবেই চেনেন। সে য‍দি একবার বেঁকে বসে,তাহলে সে কাজ তাকে দিয়ে কেউ করাতে পারবে না। প্রয়োজনে সে জব ছেড়ে দিবে। ঘটনার জটিল মোর দেখে তিনি বললেন, -- না করছো কেনো? -- যে সম্মান আমি ফিরিয়ে দিতে পারবো না, সে কাজ হাতে কেনো নেবো? -- মেয়েটি নির্দোষ হলে অবশ‍্যেই সেটি জানানো হবে।  -- পরিষ্কার একগ্লাস স্বচ্ছ জলকে নর্দমার জলে মিসিয়ে যখন ভাববেন কাজ টা ঠিক হয়নি। তখন কি ঐ জল আবার গ্লাসে আগের ন‍্যায় তুলে এনে পান করবেন? -- কিসের সাথে কি তুলনা করছো? -- এটাই আমাদের সমাজ ব‍্যবস্থা স‍‍্যার! জেল খাটিয়ে আপনি যখন ঐ মেয়েকে নির্দোষ বলে ছেড়ে দিবেন। সবাই হয়তো সামনে "আহারে" বলবে। কিন্তু মন থেকে তাকে কেউ কাছে টানবে না।  -- এই আধুনিক যুগে তুমি এই সব নিয়ে ভাবো? --হোয়াই নট?  ধরে নিন,বিশাল জনসভায় আপনি স্টেজে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দিচ্ছেন। আপনার একটি সুন্দর সাবলিল কথায় সকলে একজোটে উপহাসের হাসি দিলো। আর হাসতেই থাকলো। আপনি হান্ড্রেড পার্সেন্ট কনফিডেন্ট,"আপনি ভুল বলেননি" কিন্তু সকলের একজোটে হাসি দেখে, আপনার কনফিডেন্ট লেভেল জিরো তে নেমে আসবে স‍্যার। অ‍্যাম আই রাইট? কথার মাঝে পজ দিলেন ইরফাদ সিনহা। তারপর বললেন, -- যদি পাবলিক একজোট হয়ে আপনার মতো ডিআইজি'র "কনফিডেন্স" জিরো তে নিয়ে আসতে পারে। তাহলে সাধারণ এই মেয়েটি এবং মেয়েটির পরিবারের কি হতে পারে? -- সমালোচনায় কান দেয়া উচিত নয় ইরফাদ। -- সমালোচনা বলতে ইতিবাচক ও নেতিবাচক আলোচনাকে বুঝায়। কিন্তু মেয়েটির সাথে যেটা হবে তা হলো শুধুই নেতিবাচক আলোচনা। কিছু মানুষকে এভোয়েড করা যায়, পুরো দেশের মানুষকে না। আমরা সবাই জানি, দশের লাঠি একের বোঝা।  -- যা হবার তো হয়ে গেছে।এখন কি করবো বলো? --যে সম্মান আমি ফিরিয়ে দিতে পারবো না। সেই কাজ আমি করবোনা। ব‍্যাস! আমি যাচ্ছি..... -- কিন্তু ইরফাদ! বাবা! শোনো!  কাজটা ঠিকঠাক করতে না পারলে পুরো ডিপার্টমেন্টের নাম খারাপ হবে! -- তো আমার কি? পুলিশ কি আমি একা? পুরো দেশে আর কেউ নাই? -- কাম ডাউন মাই সান! কাম ডাউন! রাগের মাথায় কোনো ডিসিশন নিও না। টেইক ইউর টাইম। -- আপনার কি মনে হয়- না ভেবেই ডিসিশন নিয়েছি? এই কেসের কোনো ক্লু নেই। কিডন‍্যাপ নাকি অন‍্য কিছু? রায়হান রাফি কোথায়? বেঁচে আছে কি না? এসব কেবল প্রশ্ন। এর কোনোটির উত্তর আমাদের কাছে নেই। "সিনথিয়া" শুধু মাত্র মাধ্যম। রাফির সম্পর্কে সত‍‍্য তথ‍্য শুধু তার মাধ‍্যেমেই আসতে পারে।ঐজন‍্য তাকে হাতে রাখা।মেয়েটি অনেক আতঙ্ক হয়েছিলো!আপনি জানেন? তাকে নর্মালাইজ করার জন‍্যে আমার নিজের ফর্মের বাইরে যেতে হয়েছে।কতশত কথা খরচ করতে হয়েছে! যাতে রাফির সম্পর্কে আরও গভীরের তথ‍্য জানতে পারি। আপনারা কি মনে করেন। রিমান্ডে নিলাম দুটো লাঠির বারি দিলাম আর সত‍্য বেরিয়ে আসলো? কিছু সময় মানুষের আবেগের সাথে মিশে তার ভেতরের কথাগুলো বের করতে হয় স‍্যার! তবেই না সমস‍্যার দোরগোড়ায় পৌঁছানো যায়। -- ঐজন‍্যেই তো তোমাকে কাজ দিয়ে আমি নিশ্চিন্ত থাকি। আমি জানি তুমিই পারবে.. -- সরি স‍্যার! আমি আসছি... বলেই চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো ইরফাদ। আগুনে ঝলসানো চোখে রিজভী শিকদারের দিকে তাকালো। যেনো চোখ দিয়েই ভস্মীভূত করে দিবে তাকে। তার চোখেই যেনো মনের কথাটা প্রকাশ পেলো , "আই'ল কিল ইউ, রিজভী শিকদার! একবার শুধু প্রমাণ হোক ।" তারপর লম্বা লম্বা পা ফেলে বাইরে চলে গেলো। রিজভী শিকদার তখনও ভাবছে কি ছিলো ইরফাদ সিনহার ঐ অগ্নীশীখা চোখে? _____________ বস্তিতে পাওয়া লাশের আপডেট এসেছে। ছেলেটিকে বিষ খাইয়ে মারা হয়েছে। এবং মুখ ভারী কিছু দিয়ে থেতলে দেয়া হয়েছে। যাতে কেউ না চেনে। নিঁখোজ সকল ব‍্যাক্তিদের পরিবারকে ডিএনএ টেস্ট করার জন‍্য ডাকা হয়েছে। লাশটা নিঁখোজ কয়েক জনের মধ‍্যে কারো হতে পারে।  এরমধ‍্যে ইরফাদ সিনহার এ‍্যসিস্ট‍্যান্ট জানালেন।"একজন তার সাথে গতকাল থেকে দেখা করতে চাইছেন।" তিনি দেখা করবেন কি না? ইরফাদ সিনহা তাকে ভিতরে নিয়ে আসতে বললেন। মিনিট দু'য়েক পর একজন বয়স্ক লোক ভিতরে প্রবেশ করলেন।বসলেন মুখোমুখি। ইরফাদ সিনহা খুব স্বাভাবিক সুমিষ্ট গলায় বললেন, -- "আসসালামু আলাইকুম চাচা! বৃদ্ধ লোকটি উত্তর নিলেন। তবে তাকে অপ্রস্তুত হতে দেখে, ইরফাদ সিনহা আরেকটু নরম গলায় বললেন, -- ভয় নেই চাচা! নির্ভয়ে বলুন। -- আসলে বাবা!  -- হুম.... -- বসতিতে যে লাশডা পাইছেন? ঐডা আমার পোলার! -- আপনার ছেলে কি নিঁখোজ? থানায় ডায়েরি করেছিলেন? -- "না বাবা! আমিই ওরে খু/ন করছি!" বৃদ্ধের কথায় ইরফাদের কপালে কিঞ্চিত ভাজ পড়লো।মনে মনে ভাবলো "কি বলে!পাগল নাকি?" কিন্তু মুখে কোনো কথা বললো না। বৃদ্ধ লোকটি আবার তড়িঘড়ি করে বললেন, --"সব কমু বাবা!শুধু আমার একটা আবদার আছে! ঐটুকু রাখবেন দয়া করে।" ইরফাদ কিছু বলে ওঠার আগেই,বৃদ্ধ কাঁপা কাঁপা হাতে - ইরফাদের বলিষ্ঠ হাত তার মুঠোয় পুড়ে ফেলেন।  ---------  অনিমা এসেছে কারাগারে সিনথিয়ার সাথে দেখা করতে। দু'জন মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। মাঝখানে লোহার গারদ অনিমার টলমল চোখের প্রথম কথা, -- "তুই এমন করতে পারলি সিনু?"  অনিমার বলা অবিশ্বাসের প্রথম তীরটি বুকে এসে বিদ্ধ হলো সিনথিয়ার। দিয়াশলাইয়ের কাঠির ঘর্ষনে জ্বলে ওঠা আগুনের মতো বুকটা ধক করে জ্বলে উঠলো।সে তো ভেবেছিলো তার প্রাণপ্রিয় বন্ধু তাকে অন্তত সত‍্যি/মিথ‍্যা জিজ্ঞেস করবে।কিন্তু তা না করে সোজাসুজি অপরাধীর কাঠগড়ায় তাকে দাড় করালো। -- "এতো হিংসা তোর মনে ছিলো?" এমন কথায় সিনথিয়া কামানের গুলি খাওয়ার মতো টাল সামলাতে না পেরে দু'পা পিছিয়ে গেলো। এমন দিন কেনো আসলো তার জীবনে!এমন ভাবনার মাঝে অনিমা বললো, -- "মেরে ফেলেছিস?" এইবার সিনথিয়া নিজের শরীরের ভার আর টানতে পারলো না।সিনথিয়া এক পা দু' পা করে দেয়ালে ঠেকে গেলো। এসব প্রশ্নের উত্তর তার কাছে নেই। নিজের শরীরের ভার পায়ের উপর না রাখতে পেরে সে হাঁটু ভাজ করে বসে পড়লো। অনিমার বলা এক এক'টা কথা যেনো এক এক'টা বুলেট! ------- ইরফাদ সিনহা কৌতুহল নিয়েই জিজ্ঞেস করলেন, --বলুন! কি আবদার! -- আমারে ফাঁসি দেওনের আগে আমার পোলার দাফন করার সুযোগ কইরা দিবেন। পোলাডা বাঁইচা থাকতি ম‍্যালা জ্বালাইছে স‍্যার।তাই ভাতের সাথে বিষ খাওয়াইয়া মাইরা ফালাইছি। তারপর কেউ জানি চিনবার না পারে তাই ইট দিয়া মুখ ছেইচ্চা দিছি। তারপর ময়লার স্তুপে ফালাই আইছিলাম। ভাবছিলাম মাইরা ফালাইলেই বাইচ্চা যামু। কিন্তু পোলায় ময়লার মধ‍্যে ঘুমাইতাছে,আমি ঘুমাইতাছি আরামের বিছানায়।বাপ হইয়া তো আমি মাইনা নিবার পারতাছি না স‍্যার।  ইরফাদ এমন অদ্ভুত ঘটনা শুনে পজ দিলেন। খানিকটা সময় পর বললেন, --এসব কেনো করলেন? -- আমার পোলা জুয়া খেলতো স‍্যার।ট‍্যাকা দিয়ে নেশা-পাতি করতো। জুয়া খেইল‍্যা ঋণ হইতো। তখন নেশার করবার পারতো না। তখন চুরিও করতো।পাড়ার লোক আমারে খবর দিতো। তর পোলা চুরি কইর‍্যা ধরা পরছে ওমকের বাড়িত। মারতাছে! ছাড়ায়া লইয়‍্যায়। এই রকম দুঃখের চেয়ে বড় দুঃখ দুনিয়ায় আছে? আগে আগে সহ‍্য করবার না পাইরা, মাইনষের হাতে পায়ে ধইরা পোলারে ছাড়াই নিয়া আইছি। পোলাক বুঝাইছি। কিন্তু পোলা তো বাপের দুঃখু বোজে নাই। এগুলা ছাড়বার পারে নাই। যখন শুনতাম আমার পোলারে ধইরা মাইনষে বাইন্ধ‍া রাখছে, মারতাছে! বিশ্বাস করেন! মনে হইতো বলি, "ওরে ছাইরা দিয়া আমারে মারেন!" বাপের চোখের সামনে পোলারে মাইনষে বাইন্ধা রাইখা মারে!এর থাইক‍্যা কষ্ট পৃথিবীতে মনে হয় দুইটা নাই। ঐজন‍্যে আমার পোলা আমিই মাইরা ফালাইছি! আর তো কেউ মারবার পারবো না!" এই হৃদয়বিদারক কথা শোনার পর! এই বাবা নামক জীবন্ত লাশকে কত "ধারায়" শাস্তির আওতায় আনবে!? কোন শাস্তি তার প্রাপ‍্য? ভাবছে ইরফাদ। বৃদ্ধের চোখ দুটো শুকিয়ে যাওয়া নদীর ন‍্যায়। লোকটি থেমে গিয়ে আবার বললেন, -- একসময় অতিষ্ঠ হইয়া রাগে, দুঃখে মাইরা ফালাইছি! লাশ ফালা দিয়া আইছিলাম ময়লার ভিতরে। ভাবছিলাম কেউ জানবো না। আমি এল‍্যা শান্তির ঘুম ঘুমামু। কিন্তু আমি আর ঘুমাইবার পারি নাই। পরে অনেক বার ঐহানে গেছি। ভাবছি তুইলা আইনা ঘরের মধ‍্যে কবর দিয়া বাপ-ব‍্যাটা একলগে ঘুমামু। পরে শুনলাম লাশ পুলিশ লইয়া গেছে। পরে খুঁজতে খুঁজতে এইহানে আইছি। আমি আমার দোষ স্বীকার করছি স‍্যার! আমারে ফাঁসি দ‍্যান!খালি তার আগে পোলাডারে শান্তি মতো ঘুমাইবার ব‍্যবস্থা করেন স‍্যার। দাফনের ব‍্যবস্থা করেন!ও কোনো দিন শান্তি পায় নাই স‍্যার! শেষের কথাগুলো যেনো কিছু একটা মেশানো ছিলো। এক বাবার করুণ আহাজারি যেনো হৃদয়কে নাড়া দিয়ে তুললো ইরফাদ সিনহার। _________________ পর্বঃ৬ বিকেলের শেষ ভাগে ইরফাদ একটু ফ্রি হলো। অফিসের জন‍্য ব‍্যবহৃত ফোনটা সব সময় সচল থাকে।আর তার পারসোনাল ফোনের নাম্বার সকল রিলেটিভস কে দেয়া। সেখানে অসংখ্য ফোন আসে, অসংখ‍্য মেসেজ আসে।সময়ের অভাবে কখনো দেখা হয়ে ওঠে না অনেক সময় ব‍্যস্ততার কারণে ফোন ওপেনও করা হয় না। সেদিনের আসা কল সে ভুলেই গেছে। কতো মানুষ ই তো ফোন দেয়।সময়ের অভাবে কল ব‍্যাক করা হয়ে ওঠে না। তবে আজ ফোন অন করেই, একটি মেসেজ চোখে পড়লো তার।--" আমি মরে গেলাম ইরফাদ সাহেব।" এই কথার পড়ে প্রথমেই সকালে দেখা ঘটনাটা মনে পড়লো তার। কয় তারিখের মেসেজ তা দেখা হলো না। সে ভাবলো, "মেয়েটা কি ঐ সময়ে বাঁচার জন‍্যে তার কাছে আকুতি প্রকাশ করেছে?" কিন্তু সে তো মেসেজ ই দেখেনি! তার কি একবার যাওয়া উচিত? তার কি মেয়েটি'কে সাহায্য করা উচিত? দু'মিনিট বসে কারাগারের দিকে গেলো ইরফাদ। গারদের ওপারের শক্ত মেঝেতে হাঁটুতে মুখ গুঁজে আছে সিনথিয়া। লম্বা চুল গুলো বাঁধন মুক্ত হয়ে মেঝেতে ছড়িয়ে আছে। ইরফাদ হালকা করে গলা খাকারি দিলো।মেয়েটির কোনো নড়চড় হলো না।ইরফাদ শীতল কন্ঠে ডাকলো, -- সিনথিয়া... হীমশীতল মিষ্টি স্বরটি দেয়ালে এসে যেন বারি খেলো। তারপর প্রতিধ্বনিত হতে থাকলো।"সিনথিয়া..থিয়া..থিয়া.." সিনথিয়া মুখ তুলে তাকালো। গারদের ওপারে দাঁড়িয়ে থাকে মানুষটিকে চোখ মেলে দেখলো সিনথিয়া। টানা টানা মায়াবী চোখ দুটোতে বিস্মন্নতা আর অসহায়ত্ত্বের প্রতিচ্ছবি। একদৃষ্টিতে স্মৃতিহারা মানুষের ন‍্যায় তাকে স্মৃতিচারণ করতে না পেরে যেনো একদৃষ্টিতে চেয়ে আছে । সেটি বুঝতে পেরে ইরফাদ আরেকবার ডাকলো, -- এই!  সিনথিয়া!! শোনো... মেয়েটির চোখে ইরফাদ এর অস্তিত্ব যেন এইবার ধরা দিলো।মাঝ সমুদ্রে হাবুডুবু খেয়ে ঘন হয়ে আসা শ্বাস যখন খঁড়কুটোর সন্ধান পেয়ে স্বস্তিতে হাফ ছাড়ে। তারপর প্রাণপণে ছুটে এসে ঝাপটে ধরে সে খড়কুটোকে। সে রকম করেই যেনো ছুটে এলো সিনথিয়া। তারপর দুহাতে খামছে ধরলো লোহার গারদ। দুচোখে রক্ত ছলকে উঠলো। বাঁশির মতো সরু নাকের ডগা লাল হয়ে উঠছে ক্রমেই। ঘটে যাওয়া অসম্ভাব‍‍্য, অনিশ্চিত ঘটনার বাস্তবায়ন তার ভিতরে যে ব‍্যথার পাহাড় গড়েছে তা চোখ ফেটে রক্ত আকারে বের হতে চাইছে! এতো সময়ের জমিয়ে রাখা যন্ত্রণার চিহ্ন ফুটে উঠছে ছোট ছোট বিন্দু আকারে -থুতনির ভাজে ভাজে। দু'চোখের জল বাঁধ দিয়ে আটকে রাখতে গিয়ে কেঁপে কেঁপে উঠছে অধর যুগল। বাঁধ ভাঙা নদীর জলের ন‍্যায় চোখের স্বচ্ছ জল মূহুর্তেই গড়িয়ে পড়লো। মেয়েটি'কে গ্রেফতার এর পর স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। তখন তো এভাবে কাঁদেনি।তবে তার চোখ দু'টো অবলীলায় বলে দিচ্ছে, "এই একটা সুযোগের অপেক্ষায় ই ছিলো এতোক্ষণ"। ইরফাদ যেনো পুরো সিনথিয়াকে একচোটে পড়ে নিলো। মেয়েটি শেষ ভরসা হিসেবে তার প্রতীক্ষায় সময় গুণেছে।অথচ সে কি না! বলে এলো "এই কেস নিয়ে কাজ করবে না।" * * * চিন্তায় চিন্তায় পাগল হয়ে যাচ্ছে প্রভাতরঞ্জন সরকার। এই কাজ রিজভী শিকদারকে দিলে সমাধান যে হবে না- তা তিনি ভালো করেই জানেন। আর একবার না করে দিয়ে, ইরফাদ যে কখনোই এই কাজ করবে না - তা'ও সে ভালো মতোই জানেন। কি করবেন তিনি ভেবে পাচ্ছেন না। __________ অশ্রুসিক্ত নয়নে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সিনথিয়া। তার চোখের জলে ভিজে যাচ্ছে গলায় পেঁচানো ওড়নার উপরের অংশ। পলক ফেলার আগেই চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রুকণা। এ অবস্থা দেখে,দায়িত্ব রত মহীলা কে তালা খুলে দিতে বললো ইরফাদ।তারপর তার কেবিনে নিয়ে যেতে বললো। ফেরার সময় ডিআইজি'র ফোনে ফোন দিলো ইরফাদ, -- "কেসটা আমি দেখবো। তবে নেক্সট যেনো এর মধ‍্যে আগাছা না আসে।" ডিআইজি'র উত্তরের অপেক্ষা না করেই ফোনটা কেটে দিলো ইরফাদ। এমন অসম্ভাব‍্য কথা শুনে প্রভাতরঞ্জন নিজেই হতভম্ব হলেন!এই প্রথম তিনি ইরফাদের মত পরিবর্তন হতে দেখলেন! তবে মনে মনে খুব খুশি হলেন। ----- ইরফাদ সিনথিয়াকে সামনের চেয়ারে বসতে বললো। তারপর বললো, -- রাফি সম্পর্কে যা জানো নিজে থেকেই বলবে। এতো প্রশ্ন যেনো না করতে হয়। সিনথিয়া মাথা নাড়ায়।কিন্তু মুখে কিছু বলে না। মাথা নিচু করে থাকে। তার দৃষ্টি আকর্ষণের জন‍্য ইরফাদ বলিষ্ট হাতে হালকা করে চাপড় দেয় টেবিলে। সিনথিয়া নড়েচড়ে বসে। তারপর ধীর গলায় বলে, --কি বলবো? -- আমি বলে দিবো? পিনপতন নিরবতা। ইরফাদ বুঝে নেয়,এই মেয়ের সাথে নিজে থেকে কথা না বললে দিন গড়িয়ে রাত হবে -তবুও কথা বের হবে না। তার কাছে এতো সময় নেই।উপায়ান্তর না দেখে নিজেই বললো, -- রাফি জবলেস ছিলো! জানো? -- হুম। -- "ইনভেস্টিগেশন এ জানা গেছে, ওর ব‍্যাংক লোন নেয়া আছে। ইটস অ‍্যা বিগ এ‍্যমাউন্ট। ইউ নোউ?" সিনথিয়া চুপ করে থাকে। উত্তর না পেয়ে ইরফাদ বলে, -- ইয়েস অর নো? --নো!  ইরফাদ জিজ্ঞেস করে, -- " বাজে কোনো নেশা ছিলো ?" সিনথিয়া চোখ নামিয়ে নেয় পূণরায় । ধীর গলায় উত্তর দেয়। -- শুনিনি কখনো।  -- নেশা বা অন‍্যকিছু? -- না,, --ওনার সাথে তোমার পরিচয়? -- একটা ফ্রেন্ডের মাধ‍্যমে। -- ডিটেইলস বলো! নিজে থেকে। --ও আমাদের কলেজে আসতো। ওর ছোট বোনকে কলেজ দিতে আসতো।ওখান থেকেই পরিচয়। তারপর ধীরে ধীরে... -- রায়হান রাফির কোনো ফ্রেন্ডের সাথে যোগাযোগ আছে?  -- না!পারসোনাল বিষয় শেয়ার ওর পছন্দ ছিলো না।  -- এমন কোনো কিছুই কি নেই!তাকে সন্দেহ করার মতো? -- না! তবে কয়েকদিন ধরে একটা কথা মনে হচ্ছে। একটা মেয়ে ছিলো! অনেক আগে ম‍্যাসেঞ্জারে নক করেছিলো। মেয়েটি বলেছিলো! আমার সাথে কথা আছে। কিন্তু আমার পাসওয়ার্ড রাফির কাছে ছিলো।তাই রাফি মেসেজ দেখেই- তাকে ব্লক করে দেয়। এবং আমাকে বলে, "মেয়েটি খারাপ।" অন‍্য আইডি থেকে নক দিলে-যেনো তাকে জানাই।এবং কথা না বলি।" -- তারপর? -- তারপর আর কথা বলিনি। -- মেয়েটির নাম? -- মনে নেই। তবে আইডি'তে ব্লকলিস্টে থাকতে পারে। -- "পাসওয়ার্ড!"ইরফাদের বলা পাসওয়ার্ড শব্দে খানিকটা অবাক হয় সিনথিয়া।এখন তাকে পাসওয়ার্ড ও দিতে হবে। প্রাইভেসি ব্রেক করতে হবে। ঐখানে আর কিছু না থাকুক। রাফির সাথে বলা কনভারসেশন তো আছে, কিছু ছবিও আছে।  ইরফাদ আবার বলে, -- "পাসওয়ার্ড!!"একই শব্দ পূনরায় জোড়ালো ভাবে উচ্চারিত হওয়ার সিনথিয়া মৃদু কেঁপে ওঠে।যে পাসওয়ার্ড দেয়া আছে,সেটিই বা মুখে কি করে বলবে। সিনথিয়া বলে, --লিখে দেই বা টাইপ করে দেই? -- "ও হ‍্যালো!এতো ভাবার কিছু নেই। কাজ শেষে লগআউট করে দিবো।" সিনথিয়া নড়েচড়ে বসলো। কি ছিলো ইরফাদ সিনহার কথার মধ‍্যে। এমন তো সে ভাবেনি! তার মতো তুচ্ছ সিনথিয়ার আইডিতে নজর দেয়ার সময়-একজন "এসপি"র আছে নাকি! সিনথিয়া একচোটে পাসওয়ার্ড বললো, -- "লাভ ইউ,রাফি" ল‍্যাপটপের স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে নেয় ইরফাদ। বাম হাতে হাফ ফোল্ড করে নেয় ল‍্যাপটপ।একপলক তাকায় সিনথিয়ার দিকে। নিজেকে চিড়িয়াখানায় বাদর মনে হয় সিনথিয়ার। ইরফাদে'র তাচ্ছিল্যের চাহুনিতে চোখ সরিয়ে নেয় সিনথিয়া। ইরফাদ তাচ্ছিল্যের স্বরে বলে, -- "শখ মেটেনি??" ইরফাদে'র এই কথা শুনে একঝাক মৌমাছি চাক ভেঙ্গে এসে যেনো সিনথিয়ার মাথায় একনাগাড়ে কামড়াতে থাকে। এমন লজ্জার মুখোমুখি তাকে হতে হলো? সিনথিয়া মাথা নুইয়ে ফেললো।এই জন‍্যেই বলতে চাচ্ছিলো না সে। লজ্জার থেকেও নিজেকে ছোট লাগছে এখন! কি ভাবছে মানুষটা? যার জন‍্যে জীবনের এতো অধঃপতন!আত্মসম্মান, মানসম্মান সব শেষ!সেই নাম দিয়ে পাসওয়ার্ড। ছি!ছি!ছি!ঐদিকে ইরফাদ ব্লকলিস্ট চেক করলো। সিনথিয়া তার মধ‍্যের কয়েকটা আইডি থেকে "বৃষ্টি ভেজা মন " আইডিটা দেখালো। ইরফাদ ব্লক ছাড়িয়ে একটা টেক্সট করলো, -- "এসপি সিনহা বলছি! মেসেজটি দেখা মাত্র'ই আপনি *** থানায় দেখা করবেন।"  এরপর ইরফাদ সিনথিয়ার আইডি'র পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করলো। তারপর সিনথিয়াকে বললো,  -- "এরপর ফাস্ট সেন্ট‍েন্স দিয়ে লগইন দিবে। শুধু রাফি ওয়ার্ড টা রিমুভ করা হয়েছে।" পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করার কথা শুনে- সিনথিয়া অবাক হয়ে চেয়ে রইলো। তার কাছে না শুনে পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করলো? ________ আইডি'র মালিক দু'ঘন্টার মধ‍্যেই থানায় হাজির হলো। এর পরের কথোপকথন, -- হু ইজ রায়হান রাফি?ডু ইউ নোউ মিস বৃষ্টি? -- ইয়াহ! আই নোউ এবাউট হিম। বাট হোয়াই? পুরো গল্পটা যথাসম্ভব সংক্ষেপে বললো ইরফাদ। সবশেষে রাফির সম্পর্কে বললো, -- তিনি বিয়ে করেছেন। বিষয়টি হাইড ও রেখেছেন। নিখোঁজের আগে সিনথিয়ার সাথে দেখাও করেছেন। এ কথা শুনে বৃষ্টি যেনো খানিকটা অবাক হলো, --ও বিয়ে করেছে!নাকি ফেঁসে গিয়েছে?ও করবে বিয়ে! ও তো মেয়েবাজ!রায়হান রাফির সাথে শুধু আমার সম্পর্ক ছিলো এমন নয়!অনেক মেয়ের সাথেই তার সম্পর্ক ছিলো। ও একটা ফ্রড। আগের গার্লফ্রেন্ডের সাথে ব্রেকআপ হওয়ার পর আমার সাথে রিলেশন হয়। আবার আমার সাথে ব্রেকআপ এর পর সিনথিয়ার সাথে সম্পর্ক হয়। এভাবেই চলে আসছে।অনেক মেয়ের জীবন সে নষ্ট করেছে।আমার সাথে ব্রেকআপ এর পরে সেগুলো জানতে পেরেছি। তখন আর কিছুই করার নেই। তবে সিনথিয়া মেয়েটার ব‍্যপারে আমি জানতে পেরেছিলাম।তাই ভেবেছিলাম বড় বোন হিসেবে এলার্ট করতে। রাফি অনেক জেদি। ও ছিনিয়ে আনা জিনিস খুব পছন্দ করে। তৃপ্তি পায়। আমার যখন এনগেইজমেন্ট হয়। তারপরে আমার সাথে ওর পরিচয়। আমি তো আগের এনগেইজমেন্ট ভেঙ্গে ওর সাথে জড়িয়ে পড়েছিলাম। ওর জন‍্যে নিজের ক‍্যারিয়ার, ফিউচার সব নষ্ট করেছি। প্রত‍্যেকটা মেয়ের জীবন ও এভাবেই নষ্ট করেছে। -- আপনি কোনো স্টেপ নেন নি? -- স‍্যার! ডোন্ট মাইন্ড! জোর করে ইন্টিমেট হলে তাকে রে/প বলা যায়। কিন্তু কেউ যদি ভালোবাসার জালে পা দিয়ে সেচ্ছায় ইন্টিমেট হয়। তাহলে কি তা রে/প হয়? আমরা প্রত‍্যেকটা মেয়েই এক'ই কাজ করেছি। তাই ওর বিরুদ্ধে কি স্টেপ নিবো? থানায় এসে কি বলবো? দোষ তো আর ওর একার না। আমারা'ও দোষী। মেয়েটি দীর্ঘশ্বাস ফেললো, তারপর আবার বললো, -- তবে একটা কথা কি! রাফি যদি কোনো মেয়ের দিকে নজর দেয়। তাহলে ছলেবলে কৌশলে শেষ অবধি বিছানায় আনে। তবে, সে জোড় করে কিছু করবে না-এটা সিউর। যা হবে দু'জনের সম্মতিতে! শেষের কথা গুলোতে ইরফাদের চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে। মুষ্টি হয়ে আসে বলিষ্ট হাতের আঙ্গুল, চোখের শিরাগুলো লাল হয়ে ওঠে। দাঁতে দাঁত পিষতে পিষতে অস্ফুট আওয়াজ করে বলে, -- "স্কাউনড্রেল!" * * * * বৃষ্টি চলে যাওয়ার পর। সিনথিয়াকে আবার কেবিনে ডাকা হয়। সিনথিয়া বসে সামনের চেয়ারে। ইরফাদের শরীর হীম করা গলা, -- "হ‍্যাভ ইউ গট ইনটিমেট উইথ রাফি?" আচমকা এমন একটা প্রশ্নে ভড়কে গেলো সিনথিয়া। এমন আপত্তিকর একটা প্রশ্নের সাথে সে পরিচয় নয়। অন‍্য পুরুষের সাথে এইসব আলোচনা তার কাছে তো ভিষন লজ্জার, আপত্তিকর।কেসের সাথে এসবের কি সম্পর্ক?সে যেন ভাষা হারিয়ে ফেললো। এরপর যদি তাকে প্রশ্ন করে, তার সাথে আর কি কি হয়েছে? কি উত্তর দিবে সে? ইরফাদের বরফের মতো ঠান্ডা গলা, -- আই সে,হ‍্যাভ ইউ গট ইনটিমেট উইদ হিম ? সিনথিয়া চুপচাপ মাথা নিচু করে রইলো। তার জীবনে আর কি কি দেখা বাকি আছে। আর কতো কিছুর সম্মুখীন হবে সে? আর কতো লজ্জা পেতে হবে? আর কতো সহ‍্য করতে হবে তাকে। তার তো আর সহ‍্য হয় না। আর কত খেসারত সে দিবে! মুখটা ছোট হয়ে আসে তার। কিভাবে কি বলবে সে? তবুও জড়িয়ে আসা গলাটা ছিড়ে ছিড়ে বলে, --"ও তো ভদ্র-সভ‍্য ছিলো।ও আমাকে ভালোবাসতো। এমন কিছু ও করবেনা যাতে আমার সম্মানহানি..." বাকিটা আর বলা হলো না। ইরফাদে'র ঝাঝালো গলা, -- ভালোবাসা'র এই নমুনা! আই সে ইউ!হ‍্যাভ ইউ গট ইন্টিমেট উইদ হিম? ইয়েস অর নো?" সিনথিয়া ইরফাদে'র দিকে তাকালো। ইরফাদে'র মুখাভঙ্গী বদলে গেছে। বদলে গেছে তার গলার স্বর। তার সাথে বলা ক্ষণিকের নরম গলা'টা কেবল এক মুখোশ। এই যে রাগী,ফুলে-ফেঁপে ওঠা গরম চোখের মানুষটা'ই যে আসল সে কেনো বারবার ভুলে যায়। "এসপি" কি রাফি'কে নিয়ে সাফাই শোনার জন‍্যে বসে আছে। রাফি তার চোখে কেমন? তা' কি সে জানতে চেয়েছে? তাহলে এই বিশ্বাসঘাতক মানুষটা'র সাফাই কেনো করছে সে? সিনথিয়া নিজের বেহায়া মনকে দু'চাপড় বসিয়ে উত্তর দিলো, -- না!এসব কোনো দিন হয়নি। ইরফাদে'র পাল্টা প্রশ্ন, -- ডিড হি টাচ ইউ?  এই ভয়টাই তো পেয়েছিলো সে! এই মূহুর্তে কি বলবে সে?যদি বলে "টাচ করেনি কখোনো।" কিন্তু সেইটা তো মিথ‍্যা হবে। আর যদি সত‍্যি বলে! তাহলে যদি প্রশ্ন করে, "কি কি করেছো?" তাহলে কি করে বলবে, "রাফি তাকে চুমু খেয়েছিলো"। এমন কথা বলার আগে সে মরে যাবে। তবুও বলতে পারবেনা। ইরফাদ সিনহা আবার বললো, -- "ইয়েস অর নো?" এবারের গলার স্বরটা যেনো কাচের মতো সোজা গিয়ে দেয়ালে লাগলো তারপর ভেঙে চুরচুর করে মেঝেতে পড়লো। গলার টোন শুনেই ভড়কে গেলো সিনথিয়া। দম টা যেনো ফাঁসির দড়িতে আটকে গেলো। মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। হঠাৎ এসব কেনো জিজ্ঞেস করছেন তিনি। এসব কি কেসের জন‍্যে খুব দরকার?ইরফাদ সিনহার আবারও সেই হীমশীতল গলা। যা সিনথিয়াকে বরফের মতো জমিয়ে দিচ্ছে, -- "ইটস অ‍্যা সিম্পল কোয়েচ্শেন সিনথি!এ‍্যানসার মি!ইয়েস অর নো!..." সিনথিয়া কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো, -- "ইয়েস.."  ইরফাদে'র দাঁতে দাঁত পিষে বের হওয়া চাপা স্বর , --গেট আউট ফ্রম হিয়ার! আউট.... সিনথিয়া চেয়ারে শরীরের ভার ছেড়ে দিয়ে, ভাবছে! ইরফাদ সিনহা "তার উপর কি রেগে গেলো?" এখন যদি উঠে না যেতে পারে! এসপি কি বেশীই রেগে যাবে?কিন্তু এক ধমকে যে তার পায়ের শক্তি যে শেষ।  ___________  অন্ধকারের ডুবে আছে গারদে'র চার দেয়াল। পাহাড় ধসের মতো নেমে আসা ক্লান্তিতে ঘুমের অতলে ডুবে গেছে সিনথিয়া।বহুদিন তার চোখে ঘুম নেই। তবে আজ শরীর তাকে ছুটি দিয়েছে। চোখ দুটো বন্ধ হয়ে গেছে তার থেকে অনুমতি না নিয়েই।নিস্তব্ধ, নিশব্দ, নিঝুম রাত পোঁছে গেছে শেষের ঠিকানায়। সিনথিয়া ঘুমে আছন্ন। গারদের লোহার দরজাটা হঠাৎ টুং করে উঠে।ঘুম হালকা হয়ে আসে। ভেসে আসে বহু সাবধানে ফেলা পায়ে'র মৃদু আওয়াজ।গভীর ঘুম বন‍্য হরীণের ন‍্যায় ছুটে পালিয়ে যায়।তার অনুভূতি নাড়া দিয়ে বলে- কেউ যেনো তার দিকে'ই গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে আসছে। তুষারপাতের ন‍্যায় হীমশীতল হয়ে আসে তার শ্বাস। ঘন হয়ে আসে বুকের মধ‍্যে। চোখ দু'টো ভয়ে কোটরে লুকাতে চায়।চোখ টেনে তাকানোর সাহস হয়ে ওঠে না। চোখ খুলে কাকে দেখবে সে? জীবনের টানাপোড়েনে আর কতো কি দেখবে সে? এই বদ্ধ চার দেয়ালের ঘরে অচেনা মানুষের অস্তিত্ব টের পেয়ে ভেতরে ভেতরে ভেঙ্গে পড়ে!সে ডাঙায়‍ উঠে আসা মাছের মতো ভেতরে ছটফট করে! মুখ দিয়ে কিছু বলতে পারে না!শ্বাস চেপে রাখে শব্দ হওয়ার ভয়ে। ঠিক তখনই তার খুব কাছে ঘন হওয়া বরফের ন‍্যায় শীতল শ্বাস তার চোখে মুখের উপর ঠিকড়ে পড়ে। অন্ধকার ঠেলে ভয় ভীতি ছুড়ে ফেলে লাফিয়ে ওঠে সিনথিয়া। তারপর কাঁপা কাঁপা গলায় বলে, -- কে!! চলবে.... কেউ বাজে মন্তব‍্য করবেন না প্লিজ। আর সবাই গঠন মূলক আলোচনা করবেন। কেমন হচ্ছে, কেমন লাগছ সবকিছুই জানাবেন।
Parent