SON LIFE- ছেলের জীবন - অধ্যায় ২
TWO..
মমতার চিৎকার শুনে আশে পাশের প্রতিবেশি সব জড়ো হয়ে গেলো বাড়ির সামনে।
সবার মনে উৎসুক চিন্তা, কি হলো সকালেও তো সব ঠিক ছিলো..!!
মমতার ছোট জা এসে মমতা তুললো। পানি খাইয়ে দিলো। মমতা এবার ঝরঝরিয়ে কান্না করে দিলো। কান্না করতে করতে সব খুলে বললো।
সবার মুখে আহাজারি ফুটে উঠেছে। আহারেহহ! কি সুখি পরিবার হঠাৎ একি হয়ে গেলো।
মমতার ছোট জা তাড়াতাড়ি মাঠে কাজ করা স্বামিকে খবর পাঠালো। এখনি রওনা দিতে হবে। কয়েক মিনিটেই হাজির হলো মমতার ছোট দেবর।
মমতাকে নিয়ে ওর ছোট দেবর কায়নাল বের হয়ে পড়লো যশোরের উদ্দেশ্য। ততক্ষণে বাড়ির বড় ছেলে মামুন কে খবর দেওয়া হয়েছে।
হাসপাতালে পৌছাতে ওদের ঘন্টা দেড়েক লাগলো।
কায়নাল রিসিপশনে গিয়ে রুম নম্বর জেনে নিলো।
মমতা টলতে টলতে দেবরের পিছে পিছে যাচ্ছে। কিভাবে আছে, ওর স্বামী সন্তান।
.
এক রুমে দুটো বেড, মরা লাশের মতো পড়ে আছে দুটো মানুষ। কেবিনে শব্দ করা নিষেধ বলে মমতা জোরে কান্নাটা আটকালো। চোখের পানি বাধ মানছে না!!
কায়নালের স্ত্রি শিল্পি এসে মমতা কে ধরে সামলালো। ওর চোখ দিয়েও টপটপ করে পানি পড়ছে। ইস! সকাল বেলায়ও হাসতে হাসতে দুটো মানুষ বাড়ি থেকে বের হলো। কয়েক ঘন্টার ব্যবধান এখন তারা মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।
কায়নাল ভাই ভাইপোর এমন নিষ্ঠুরতম পরিস্থিতি দেখতে পারলো না। বের হয়ে আসলো,ওর দম আটকে যাচ্ছে। ছোট বেলায় বাবা সমতুল্য বড় ভাইয়ের কাছে ও বেড়ে উঠেছে। ওদের বাপ মা ও একটা এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছিলো। তখন ওর বয়স দশ বছর ছিলো। ভাই ওকে নিজ হাতে মানুষ করছে।
সেই ভাইয়ের এমন করুন পরিনতি মেনে পারছে না।
পুরুষ মানুষ বলে শব্দ করে কান্না করতে পারছে না। ওর ভিতরটা ডুকরে উঠছে, কলিজায় রক্তক্ষরণ হচ্ছে।
কায়নাল ভাঙা মনে ডাক্তার সাথে সাক্ষাৎ করতে গেলো,
.
- আমরা আপনার ভাইপোর নিশ্চয়তা দিতে পারলেও, আপনার বড় ভাইয়ের কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছিনা। আমাদের ক্ষমা করবেন।
কায়নালের চোখ দিয়ে টুপ করে একফোঁটা পানি মেঝেতে পড়ে,
ফ্যাসফেসে গলায় বলে,
- কেনো..?
- আপনার ভাইপোর হাত এবং পা ভেঙেছে তাও দুতিন জায়গায়। আর একটু শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছিলে গেছে। সব ঠিক হতে মিনামাম ছয় মাস লাগবে।
কিন্ত আপনার ভাইয়ের আঘাত গুলো ক্রিটিকাল জায়গায়, মাথায় বেশ জোরে আঘাত লাগার কারনে রক্তক্ষরণ হয়েছে।
এমনকি গলার হাড় পর্যন্ত ভেঙে গেছে। পায়ের উপর দিয়ে ট্রাকের চাকা চলে গিয়েছে। তার জন্য দুপা কেটে বাদ দিতে হয়েছে আমাদের।
সব কিছু মিলিয়ে বলা যায়। আপনার ভাই যদিও ওপর ওয়ালার ইচ্ছায় বেঁচে ফেরে, তিনি মরার মতো বেঁচে থাকবেন।
চব্বিশ ঘন্টায় জ্ঞান ফিরলে আমরা চেষ্টা করবো। আর যদি না ফেরে আমরা দুঃখিত..
কায়নাল টলতে টলতে বের হয়ে আসলো, চারিপাশ অন্ধকার, কোথাও আলো নেই। বাবা মার মতো ভাইটাও ওকে ছেড়ে চলে যেতে চাচ্ছে তাহলে। কিসের শাস্তি পাচ্ছে ওরা সবাই..? কেনো এক্সিডেন্ট ওদের পিছু ছাড়ছে না..?
কার অভিশাপ লাগলো ওদের পরিবারে।
চোখ মুছে ভাইয়ের কেবিনের বাইরে বসে পড়ে। ভাবিকে কিভাবে বলবে কথা গুলো। কিভাবে..?
.
মমতা সাদা চাদরে ঢাকা স্বামির দিকে এক পলকে তাকিয়ে আছে । শুধু চোখ দুটো দেখা যাচ্ছে আর সব কিছু ব্যান্ডেজে মোড়ানো। মাথাটায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিলো। ওর স্বামিটা, কি হয়ে গেলো..!
মমতা হালকা ঝুকে ফিসফিস করে বলে,
- এখন কে আমাকে ভালোবাসবে..? কে তোমার মতো সব কিছুর খেয়াল রাখবে। কার জন্য রাতে ভাত না খেয়ে বসে থাকবো..?
নাহ! স্বামির কোনো সাড়া পেলোনা.. আরো কিছুক্ষণ স্বামিকে দেখলো।
মমতা এবার ছেলের বেডের কাছে গেলো। সাদা ফর্সা মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। চোখ মুখে ব্যাথার ছাপ, ইসস! মমতা ছেলের ব্যাথাটা নিজের শরীরে নিয়ে আসতে চাইলো।
শিল্পি মমতা কে একটা টুল এগিয়ে দিলো।
মমতা ছেলের মাথায় হাত রেখে টুলে বসে পড়ে।
.
.
.
.
কেটে গেছে এক সপ্তাহ, দুনিয়া থেকে হারিয়ে গেছে অনেককিছু আবার দুনিয়া তে এসেছে অনেক কিছু।
কিন্তু মমতা যা হারিয়েছে সেটা বোধায় একটু বেশিই ভারী,
পাশাপাশি দুটো বেড কিন্ত একটা খালি। কেনো...?
কারন এটা না যে সে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে। কারন হলো এটা যে সে একেবারে না ফেরার দেশে চলে গেছে।
জয়নাল পরের দিন সকালেই দুনিয়া ত্যাগ করে। মৃত্যুর খবরে মমতা তিনবার অজ্ঞান হয়েছিলো। কিন্ত বাস্তবতা মেনে নিতেই হবে।
আগুন কে ঘুমের ডোজ দেওয়াতে কিছুই টের পাইনি।
আগুন কে রেখে ওরা জয়নাল কে নিয়ে চলে আসছিলো বাড়ি। জয়নালের শেষ ঠিকানায় পৌছে দিতে।
গ্রামের প্রতিটা মানুষের চোখে পানি এনেছিলো জয়নালের মৃত্যুর খবরে।
একটা সুখি পরিবারের এমন অকাল ঝড়ে পড়া দেখে আপসোসের শেষ ছিলনা গ্রামের মানুষের।
জয়নালকে কবরে রেখে আবার হাসপাতালে ফিরতে হয়ে ছিলো, মমতা ও মামুন কে। কারন তাদের আরেকটা প্রান তখনো হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।
এই একদিনের ভিতরে হাসপাতালের বিল হয়েছে, দুই লাখের ও বেশি।
জয়নালের সার্জারী ছিলো বড় অঙ্কের। সেটা পেমেন্ট করেই জয়নাল কে বাড়ি নিতে পেরেছে। ভাগ্য ভালো জয়নাল কিছু পুঁজি করে রেখেছিলো। আর বাদ বাকি বড় ছেলে মামুন শোধ করেছে।
এতটাকা গেলেও স্বামিকে এক রাতের বেশি বাঁচাতে পারলো না ভেবেই অন্তর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসলো মমতার।
না জানি ওর ছোট ছেলেটার ভাগ্য কি আছে..?
.
.
.
মমতা আগুনের পাশে বসে ভাত খাওয়াচ্ছে, আর টুকটাক কথা বলছে।
- আর দিবো ভাত..?
আগুন বালিশে হেলান দিয়ে বসে খাচ্ছিলো,
- না! আর খাবো না..
- ডক্টর কিন্তু বেশি করে খেতে বলেছে।
আগুন অসহায় কন্ঠে মাকে বলে,
- মাহ... আর কত খাবো.. অলরেডি দুই প্লেট খাওয়ালে..
মমতা আর জোর করেনা ছেলেকে বাকি এঁটো ভাত টুকু নিজে খেয়ে নিলো..!!
আগুন উসখুস করতে করতে বলে,
- মা.. আমি গোসল করবো..!! গা দিয়ে কেমন একটা বাজে গন্ধ বের হচ্ছে..!!
মমতা এঁটো প্লেট ধুয়ে রেখে দিয়ে বলে,
- এখন না.. তোকে বাড়ি গিয়ে গোসল করাবো..!!
- বাড়ি.. কবে যাবো ঠিক আছে.. ততদিনে আমি গন্ধে মরেই যাবো..
মমতা ঝাড়ি দিলো ছেলেকে,
- একবারো যেনো মরার কথা না শুনি..
আগুনের মাথা নিচু হয়ে গেলো। ওর বাবা মরে গেছে এক সপ্তাহ হয়নি। আর ওর মুখ দিয়ে এমন কথা বের হয়ে গেলো..?
মমতা ছেলেকে বলে,
- চুপচাপ বস, আমি বালতিতে পানি এনে গা মুছিয়ে দিচ্ছি.. দেখবি ভালো লাগবে..!!
মমতা বাথরুমে চলে গেলো।
এরপর একটা বালতি তে পানি এনে বেডের নিচে রাখলো। গামছা ভিজিয়ে ছেলের মুখ গলা ভালো করে মুছিয়ে দিলো,
ছেলের গা থেকে হাসপাতালের দেওয়া পোশাকটা খুলে রাখলো,
তারপর সারা গা ডলে ডলে মুছিয়ে দিলো।
একটা পা সম্পুর্ন ব্যান্ডেজে মোড়ানো, অন্য টা খালি সে পা টাও হাটু সমান মুছিয়ে দিলো।
তার বালতি রেখে আসলো।
- এখন কেমন লাগছে..?
- হুমম ভালো..!
মমতা ছেলের পাশে বসে এবার ঔষধ বের করলো,
- খাওয়া শুরু কর..
ছেলের ঔষধ খাওয়ার নমুনা মমতা ভালোই জানে। আগুন ছোট বেলা থেকে সিরাপ ছাড়া খেতে পারেনা। কিন্ত এখন বড়ি খেতে হচ্ছে, যেটা খাওয়ার সময় গলা টেনে একেবারে বিচ্ছিরি করে ফেলে আগুন।
আগুনের অসহায় রুপ দেখে ধমকে বলে,
- কি হলো.. কথা কানে যায়নি..?
মায়ের ধমক খেয়ে আগুন হা করলো, মমতা ছেলের মুখে একটা বড়ি ছুড়ে মেরে পানি দিলো। সব ঠিক থাকলেও ঢোক গিলতে পারলোনা আগুন.. গলা টানতে শুরু করে। মমতা আবার পানি দিলো ছেলেকে.. দুতিন বার করার পর পেটে গেলো ঔষধ টা..!!
- পাঁচ বছরের বাচ্চাও তোর থেকে ভালো করে ঔষধ খায়..!!
মমতা ছেলের পিঠে হাত বুলিয়ে শান্তনা দিলো।
এতদিন ঔষধ খাওয়া লাগেনি কারন তিন বেলা ইনজেকশন ছিলো। কিন্ত আজকে থেকে ঔষধ শুরু হলো।
এরকম কষ্ট করে ঔষধ খাইয়ে কি পারা যায়..?
.
.
.
পুরো তিন সপ্তাহ পর আগুনকে রিলিজ দিলো.. কিন্তু হাটা তো দুরে থাক আগুন কে বেড থেকে নামানোই নিষেধাজ্ঞা জরি করলো ডাক্তার।
ছোট্ট ভাইয়ের রিলিজের দিন মামুন ঢাকা থেকে আসলো, মা ভাইকে একটা এম্বুলেন্সে তুলে দিয়ে, বিদায় নিয়ে আবার চলে গেলো নিজের চাকরিতে।
.
মমতা ছেলেকে নিয়ে বাড়ি পৌছালে আবারও কান্নার ঢল পড়লো বাড়িটায়। দুটো মানুষ একই দিনে একই সময়ে জ্ঞান হারালো কিন্তু একজন প্রায় সুস্থ অন্য জন গহীন কবরে শায়িত..!!
কায়নাল ভাইপোকে কোলে করে আগুনের রুমে দিয়ে আসলো।
.
.
.
দুই মাস পর!
আগুন এখন প্রায় সুস্থ কিন্ত হাটতে পারেনা.. সব সময় বিছানায় পড়ে থাকতে হয়। ওর পা বিভিন্ন জায়গায় ভাঙার কারনে, জোড়া লাগতে সময় লাগছে।
এই দুটো মাস ও মায়ের কাছে একেবারে দুধের শিশুর মতো জীবন যাপন করেছে।
ওর নিজের কাছে মনে হয়েছে ও একটা বাচ্চা ওকে মা দুধ না দিলে। অনাহারে মরে যাবে !!
আসলেই তো তাই। গোসল পায়খানা খাওয়ানো ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া সব মায়ের কাজ।
বাড়িতে আর শোকের ছায়া নেই বললেই চলে। মা আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে গেছে। এখন মন খুলে হাসে আগের মতো গম্ভীর হয়ে থাকেনা..!!
.
মমতা ছেলের জন্য ভাত নিয়ে আসলো,
- খাওয়া শুরু কর, আমি চুলা থেকে পাতিল টা নামিয়ে দিয়ে আসি।
মমতা চলে গেলো। পুড়ে না যায় আবার তরকারি..?
তাড়াতাড়ি গিয়ে পাতিলটা নামিয়ে, সব কিছু গোছগাছ করে ছেলের রুমে গিয়ে অবাক হলো।আগুন আগের মতোই বসে আছে, ভাতে হাত ও লাগায়নি।
- কি হলো খাসনি কেনো..?
- তুমি না খাইয়ে চলে গেলে কেনো..
মমতা ধপ করে ছেলের পাশে বসে পড়ে, নাহহ! এই ছেলেকে নিয়ে আর পারা যাচ্ছেনা। দিন দিন বাচ্চামো বাড়ছে আগুনের।
ভাত মাখিয়ে ছেলের মুখে লোকমা তুলে বলে,
- (মুখ ভেঙিয়ে)
এই যে আমার খোকাবাবু নেন.. এবার খেয়ে আমাকে উদ্ধার করুন..!!
আগুন মায়ের মুখের দিকে চেয়ে হেসে ফেলে তারপর খেতে শুরু করে, মায়ের মুখটায় ফোঁটা ফোঁটা ঘাম জমে আছে। সেগুলো মুক্তার দানার মতো দেখাচ্ছে।
মমতা ছেলেকে খাওয়ানো শেষ করে বলে,
- আজকে গোসল করাবো কোনো তালবাহানা চাইনা।
বলেই চলে গেলো। একটু পর ফিরে এলো ঔষধ নিয়ে।
আগুনের এখন ঔষধ খেতে সমস্যা হয়না,অভ্যাস হয়ে গেছে। চুপচাপ ভদ্র ছেলের মতো খেয়ে শুইয়ে পড়ে..!!
ওর হাত টা বেশি নড়চড় করা যায়না, সোজা করে রাখতে হয়।
এই জন্য বেশির ভাগ সময়-ই চিৎ হয়ে ঘুমিয়ে থাকে।
.
পরেরদিন সকাল বেলা..
মামুন দুই মাস পড়ে আজকে বাড়ি আসলো।
মমতা বড় ছেলেকে দেখে অনেক খুশি হলো।
ছুটে গিয়ে বুকে জড়িয়ে নিলো।
- কেমন আছিস বাবা..?
মামুন মায়ের কপালে চুমু দিয়ে বলে,
- ভালো তুমি কেমন আছো..?
- আমি ভালো আছি.. তোর দয়ায়
- ছোটু কোথায়..?
- চল ভিতরে আছে..!!
মমতা বড় ছেলেকে নিয়ে আগুনের রুমে গেলো,
আগুন বসে বসে ফোন টিপছিলো, হঠাৎ মায়ের সাথে বড় ভাইকে আসতে দেখে খুশি তে লাফিয়ে উঠে,
- ভাইয়া তুমি..?
মামুন ছোট ভাইকে খুশি হতে দেখে ও খুশি হলো,
- আরে থাম লাফাস না.. হাতে পায়ে ব্যাথা লাগতে পারে..!!
বলে আলতো করে জড়িয়ে নিলো নিজের সাথে।
- এখন কি অবস্থা তোর..
আগুন হাসি মুখে বলে,
- ভালো.. কিন্তু রুমে আটকে থেকে বোর হচ্ছি..
মামুন ভাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
- আর কয়টা দিন.. তার পর আবার আগের মতো হেটে চলে বেড়াতে পারবি..
মমতা ছেলেদের রেখে রান্না ঘরে চলে গেলো। মামুন না বলে এসেছে। দুরের পথ নিশ্চয় অনেক ক্ষিদা লেগেছে। তাই এখন কার মতো হালকা নাস্তা বানাতে শুরু করে।
মামুন ও ভাইয়ের সাথে আরো কিছু গল্প করে, কাকাদের সাথে দেখা করতে বের হয়ে আসলো।
ওর কাকার দুই মেয়ে। একটা দুধের শিশু অন্য টা এবার মাধ্যমিক দিবে.. বড় টার নাম জেরিন! মামুন জেরিন খুব পছন্দ করে। পরির মতো দেখতে মেয়েটা।
কাকাদের বাড়ি গিয়ে জোরে ডাকদিলো কাকি বলে,
শিল্পি তখন রুমের ভিতের মেয়েকে দুধ খাওয়াচ্ছিলো, এই জন্য ডাকের উত্তর দিলোনা। কিন্তু মামুনের ডাকে জেরিন বের হয়ে আসলো।
জেরিন ছুটে এসে চাচাতো ভাইয়ের সামনে দাড়ালো।
- ওহহহ! ভাইয়া তোমাকে কত দিন পর দেখলাম.. কেমন আছো..?
মামুনের ইচ্ছা হলো জেরিন কে বুকে জড়িয়ে নিতে, ইসস! এর মেয়ের কাছে পরি ও ফেল মারবে।
- আমি ভালো আছি.. তোরা কেমন আছিস.. আর কাকা কাকি কই..?
জেরিন চঞ্জল উত্তর দিলো,
- আমরা সবাই ভালো আছি.. আর বাবা মাঠে গেছে। মা রুমে আছে.. আসো ভিতরে আসো..
জেরিন মামুন কে সাথে নিয়ে বারান্দার চেয়ারে বসিয়ে মাকে ডাক দিলো,
- আম্মু... দেখো কে এসেছে..
বলে নিজেও একটা চেয়ার নিয়ে ভাইয়ের পাশে বসে পড়ে।
মামুন নিজের সাথে আনা প্যাকেট জেরিনের হাতে দিয়ে বলে,
- এটা তোর..
জেরিন খুশিতে চিৎকার দিয়ে উঠে,
- সত্যি ভাইয়া.. Thank you so much.. ভাইয়া!!
জেরেন খুশিতে মামুন কে জরিয়ে ধরে আলতো করে।
মামুনের পুরো শরীর শিরশির করে, আহহ! তাজা একে বারে তাজা.. ফল জেরিন..!!
তার পর রুম থেকে শিল্পি বের হলো। সেখানে অনেক গল্প হলো..
.
.
মমতা ছেলেদের জন্য নুডলস রান্না করে রুমে এসে দেখে মামুন নেই।
- তোর ভাই কোথায়..?
আগুন চোখ বন্ধ করে ছিলো,
- কাকাদের বাড়ি..!!
মমতা একটু খারাপ লাগলো, মায়ের সাথে ভালো করে আলাপও করলোনা অথচ কাকাদের বাড়িতে ঠিকই সময় কাটাচ্ছে।
নুডলস এর বাটি টা নিয়ে ছোট ছেলের পাশে বসল,
- উঠে বস..!!
আগুন বালিশে হেলান দিয়ে বসে।
মমতা ছেলেকে বাটির সব নুডলস খাইয়ে মুখ মুছিয়ে দিলো।
উঠে চলে যাচ্ছিলো,
তখনি ছেলের ডাকে পিছে তাকায়,
- মা.. আমার পায়ের ব্যান্ডেজ কবে খুলবে..?
মমতা বেরিয়ে যেতে যেতে বলে,
- দেখি ডাক্তারের সাথে কথা বলে.. কি বলে তারা..!!
আগুন বোকার মতো তাকিয়ে রইল মায়ের গমন পথের দিকে। মা ওকে পাত্তাই দিলো না..
.
.
রাতে মামুন বাজার থেকে বাড়ি ফিরলো,দুই কেজি মিষ্টি নিয়ে। মমতা অবাক হলো কিন্তু কিছুই বললনা।
তিন মা ছেলে মিলে একসাথে খাবার খেলো রাতে। মমতা আগুন কে ঔষধ খাইয়ে নিজের রুমে গেলো।
মামুন বারান্দা থেকে মায়ের পিছে পিছে নিজেও গেলো,
- মা আমি কোথায় ঘুমাবো..!!
মমতা এবার আশ্চর্য হলো,
- কেনো.. আগুনের সাথে..
- নাহহ! আমি ওর সাথে ঘুমাবো না...!!
- কেনো.. কি হয়েছে..?
মামুন ইতস্তত ভাবে বলে,
- ওর গা দিয়ে কেমন দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। আর বিছানাও কেমন নোংড়া..!!
মমতা হতবাক হয়ে গেলো।
- তোর ভাই হয়। ভুলে যাসনা।
মামুন মায়ের নরম হাত ধরে বলে,
- মা প্লিজ তুমি ভুল বুঝোনা... হঠাৎ ওরকম গুমোট পরিবেশে আমার ঘুম আসবেনা। তাই তোমাকে বললাম।
মমতা হাত ছাড়িয়ে বলে,
- আচ্ছা.. তাহলে তুই এই ঘরে ঘুমা.. আমি আগুনের সাথে ঘুমাচ্ছি।
মামুন এবার মায়ের চওড়া কাঁধ দুই হাতে ধরে বলে,
- ঘুমাচ্ছি.. কিন্তু তোমার সাথে একটা জরুরি কথা আছে..
.
to be continue