SON LIFE- ছেলের জীবন - অধ্যায় ৩
THREE
°
°
মামুন মাকে বিছানায় বসিয়ে দিলো। মায়ের সামনে দাড়িয়ে মাকে বলল,
- তুমি কিভাবে কথাটা নেবে জানিনা.. কিন্তু আমার আর সহ্য হচ্ছেনা।
মমতা ছেলেকে আশ্বাস দিয়ে বলে,
- বল সমস্যা না..
মামুন এক নিঃশ্বাসে বলে,
- আমি জেরিন কে বিয়ে করতে চাই।
মমতা অবাক হলোনা, মামুনের মা হয় মমতা। মায়ের চোখ এড়িয়ে যাওয়া এত সোজা নাকি...?
স্বাভাবিক কন্ঠে ছেলেকে বলে,
- এই জন্যই বাড়িতে আর টাকা পয়সা দিচ্ছিস না..?
- মা কথা ঘুরাচ্ছো কেনো..?
মমতা উঠে ছেলের মুখোমুখি হয়ে বলে,
- আমি কথা ঘুরাচ্ছি তাই না..? তোর লজ্জা করলো না। এখনো দুই মাস ও হয়নি তোর বাপ টা মরছে, ভাইটা এখনো বিছানায় কাতরাচ্ছে। আর তোর শরীরে বিয়ের চুলাকানি উঠেছে। বিবেক কি ভাতে দিয়ে খেয়ে ফেলেছিস..? এমনকি আগুনকে ডাক্তার দেখাবো সেই টাকা ও তুই দিচ্ছিস না।
মমতা কিড়মিড়িয়ে বলে উঠলো কথা গুলো।
এই মাসে বাড়ি একটা টাকা ও দেয়নি ছেলে। মমতা টাকার কথা বললে কথা ঘুরিয়ে নেয়। বলে আগে দেনা পাওনা শোধ করে তারপর বাড়ি টাকা পাঠাবে। এদিকে আগুনের পিছনে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা লাগছে। সেদিকে কোনো মনযোগ নেই মামুনের। স্বামিটা মারা যাওয়ায় সবাই পর হয়ে যাচ্ছে। এমন কি নিজের পেটের ছেলে ও।
মামুনের মায়ের রাগ দেখে কিছুই মনে করলোনা, ওর ভবিষ্যৎ আছে। সব টাকা যদি ভাইয়ের পিছনে খরচা করে, তাহলে ওর কি লাভ..?
মামুন মাকে শান্ত করতে বলে,
- মা তুমি শান্ত হও..
- শান্ত..? আর আমি..? আপন ছেলে আমাকে পথে নামিয়ে দিচ্ছে.. আর আমাকে বলছিস শান্ত হতে..?
- মা প্লিজ, আমি তোমাকে বুঝিয়ে বলছি সব।
মামুন মায়ের নরম কোমড় ধরে টেনে নিলো নিজের বুকে,
মাথাটা বুকে চেপে বলে,
- আমার কথাই মত দাও সব ঠিক হয়ে যাবে..
- কোন কথা..?
- তুমি কাকিদের বলে, আমার জেরিনের বিয়ের ব্যাবস্তা করে দাও। যদি পারো তাহলে আমি মাসে মাসে টাকা পাঠাবো!
মমতা ছেলের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে তাচ্ছিল্যে কন্ঠে বলে,
- আর যদি না পারি..?
মামুন মাথা নিচু করে বলে,
- মা আমার ও একটা ভবিষ্যৎ আছে। বিয়ের বয়স হয়েছে,অথচ যা পুঁজি ছিলো তোমাকে দিয়ে দিয়েছি। এখনো যদি আবার সব টাকা তোমার ছোট্ট ছেলের পিছনে খরচ করি। তাহলে আমার কি হবে।
মমতা হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে বলে,
- আমরা কি তোর পর..? তোর মা আর তোরই ভাই। আগুন সুস্থ হয়ে গেলে। পড়াশোনা শেষ করে ভালো চাকরি করবে,তখন কি তোকে কিছু দিবে না..?
- যদি না দেয়। আমার অবদান অস্বীকার করে..?
- আমি কথা দিচ্ছি.. আগুন না দিলে আমি দিয়ে দিবো তোকে সব টাকা..!
মামুর তবুও মাথা তুললো না,একই ভাবে বলে।
- তোমার কোনো কষ্ট করতে হবেনা। তুমি শুধু জেরিন কে আমার সাথে বিয়ে করিয়ে দাও। তাহলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
মমতা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখলো, দুই মাসের ব্যাবধানে নিজের আপন ছেলে ও নিজের রুপ বদলিয়ে ফেলেছে। নিজেও কি কখনো কল্পনা করেছিলো, ছেলের কাছে ভিক্ষা চাওয়ার মতো করে হাত পাততে হবে..?
মামুনের চরিত্রের দোষ সবাই জানে এমনকি নিজের কাকিমা কেও ছাড়েনি কুপ্রস্তাব দিতে। ভাগ্য ভালো লোক জানাজানি হয়নি, শিল্পি শুধু ওর কাছে নালিশ করেছিলো।
এবার মাকে ছেড়ে মেয়ের দিকে নজর গেছে মামুনের। শিল্পী কি জীবনেও রাজি হবে মামুনের কাছে মেয়ে দিতে,
মমতা নিজের কষ্টটা দেখালোনা ছেলেকে,
স্বাভাবিক কন্ঠে ছেলেকে বলে,
- জানিনা তোকে ঠিক ভাবে মানুষ করতে পেরেছি কিনা। তবে একটা কথা শুনে রাখ, আমি মরে গেলেও কায়নালের কাছে তোর জন্য জেরিন কে চাইবোনা।
তাই যা করার করিস..?
আর তোর নাকি.. আন্টি দের বেশি ভালো লাগে। তাহলে এখন কেনো নিষ্পাপ মেয়েটার দিকে কুনজর দিচ্ছিস।
মামুন এবার মাথা তুললো, চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে রাগে। মায়ের এখন এসব কথা বলার মানে কি..?
- তুমি কি বলছো ভেবে বলছো তো..?
মমতা হেসে উঠে,কিন্ত হাসিটা কি সুখের নাকি দুঃখের..?
- আমার ভাবনা এখন কাজ করছে না বুঝলি..? আগে জানা ছিলোনা, যে মহিলাদের স্বামি না থাকলে কোনো দাম থাকেনা। এখন বুঝলাম যার স্বামি নেই তার কোনো দামও নেই।
মামুন আবার মায়ের কাঁধ ধরলো,কিন্ত এবার শক্ত করে,
- তুমি জানলে কিভাবে আমার আন্টি পছন্দ..?
মমতা ছেলের হাত ঝাড়ি দিয়ে সড়ালো,
- সররর! আমাকে ছুবি না। আমার সাথেও নিজের লুচ্চামি দেখাচ্ছিস নাকি। না বাহানায় ছুতে চাইছিস..?
মামুন কেনো গ্রামের সবাই জানে মমতা রুপ লাবণ্য সম্পর্কে। কিন্তু ছেলে হয়ে মায়ের দিকে কুনজর ভাবতেও পারেনা মামুন,
- মা প্লিজ.. তুমি কি পাগল হয়ে গেছো..? এসব কি রকম কথা বলছো। তুমি আমার জন্মদাত্রী ভূলে গেছো নাকি..?
মমতা উম্মাদের মতো বলে,
- না.. আমি ভূলিনি কিন্ত তুই ভুলে গেছিস। আমি তোর মা। (এবার ফুপিয়ে কান্না করে দিলো) নাহলে আমার এমন দিন দেখতে হয়। নিজের পেটের ছেলে আমাকে পথে নামিয়ে দিচ্ছে।
মামুন আর কিছু বললনা মাকে রাগে গজগজ করতে করতে বিছানায় শুইয়ে পড়লো।
মমতা আরো কিছু সময় দাড়িয়ে কান্না করলো। তবুও পাষাণ ছেলের মন গললো না মায়ের অসহায়ত্বের প্রতি।
মমতা একবার ছেলের দিকে তাকালো, ওর দিকে পিঠ দিয়ে কাত হয়ে শুইয়ে আছে।
আর দাড়ালো না ওখানে দুই হাতে চোখ মুছতে মুছতে বের হয়ে আসলো লাইটটা অফ করে।
.
ছোট ছেলের রুমে গিয়ে দেখে এখনো লাইট জ্বালানো। কিন্ত ছেলে ঘুমিয়ে আছে।
আগুনের একপাশের হাত পা ভেঙেছে অন্য পাশ ঠিক ঠাক। মমতা সব সময় ভালো পাশে গিয়ে ঘুমায়। এই দুই মাসে দুএক দিন বাদে সব কদিন ছেলের সাথে ঘুমিয়েছে মমতা। কারন রাতে প্রসাব পায়খানা যেতে হয় আগুনের। যেটা বেডে বসেই করে।
আলো না নিবিয়ে ছেলের পাশে আস্তে করে গা এলিয়ে দিলো। মনটা আজ ভেঙে খন্ড খন্ড হয়ে গেছে,বড় ছেলের জন্য। এই ছিলো ওর কপালে..?
মমতা ছেলের দিকে কাত হয়ে শুলো। ওর রাজপুত্রের মতো ছেলেটা আজ দুটো মাস এই বিছানা ছেড়ে উঠতে পারেনা। সব কাজ ওকে করে দিতে হয়। কত কষ্ট করে টাকা জোগার করছে। শুধু ওই জানে। জমি জমা কিছু আছে বলে কষ্ট হলেও চলে যাচ্ছে ওদের। কিন্ত এভাবে আর কতদিন। বড় ছেলে ওদের দেখবেনা, আগুনের ইনকামের পথ বের করতে এখনো পাঁচ ছয় বছর তো লাগবেই। এতদিন কিভাবে চলবে ওরা মা ছেলে। ছেলের পড়ার খরচ, বাজার করা নিজেদের অন্য অন্য চাহিদা কিভাবে মিটবে এসব।
ভেবেই মাথা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মমতার।
ছেলের বুকের উপর একহাত রেখে, ক্লান্ত মনে ঘুমিয়ে পড়লো মমতা।
.
.
পরের দিন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই। আগুন কে ঝাড়লো মমতা। নোংরা খবিশ গরু ছাগল যা মনে এলো তাই বলল ছেলেকে। কারন হলো কালকের রাতে মামুন ঘৃনায় আগুনের সাথে ঘুমাইনি তাই।
আগুন বোকার মতো বসে বসে মায়ের বকা শুনছে,
- আমি কি করলাম তোমাকে..?
মমতা ঝামটা মেরে ছেলেকে বলে,
- আজকে যদি গোসল না করিস তোকে আমি গাঙে ভাসিয়ে দিয়ে আসবো..!!
মায়ের কঠিন রাগ দেখে বলে,
- আচ্ছা ঠিক আছে আজকে গোসল করবো আমি.. এবার তো শান্ত হও।
মমতা তাও শান্ত হলোনা,বকতে বকতে রান্না ঘরে চলে গেলো।
মামুন উঠলো সকাল দশটায়, উঠেই আগে কাকার বাড়ি গেলো,
- কাকি কাকা বাড়িতে আছে..?
শিল্পি রান্না ঘর থেকে জবাব দিলো,
- না বাড়িতে নেই, মাঠে গেলো একটু আগে।
মামুন কাকিদের রান্না ঘরে ঢুকে পড়ে। শিল্পি চুলার সামনে উবু হয়ে বসে রান্না করছিলো। হঠাৎ মামুন কে দেখে আঁচল ভালো জড়িয়ে নিলো গায়ে।
- কাকি তুমি মায়ের সাথে কি বলেছো..?
- কি বলবো আমি..? আমার তো কিছু মনে পড়ছেনা..
মামুন দাড়ানো থেকে বসে পড়লো কাকির সামনে,
- তোমাকে ভুল করে নাহয় একটা কথা বলেছিলাম তাই বল তুমি মাকে বলে দিবে..?
শিল্পি এবার মনে পড়লো মামুন কি বলতে চায় ও শক্ত কন্ঠে বলে,
- দেখো মামুন, ভুল করে কেউ কাকিকে ওমন নোংরা কথা বলেনা। আর যেটা সত্যি সেটাই বলেছি..!!
মামুন এবার রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
- শুধু বলেছিলাম.. করেনি তো.. করেছি..? নাহ.. তাহলে কেনো আমার মায়ের কাছে বললে।
শিল্পির এবার প্রচন্ড রাগ হলো, একি বেয়াদব ছেলে মামুন।
- আগে তো শুধু তোমার মাকে বলেছিলাম, এবার কিন্ত পুরো গ্রাম জানিয়ে দিবো।
বের হও আমার সামনে থেকে.. বেয়াদব নোংরা ছেলে কোথাকার। নিজের কাকির দিকে নজর না দিয়ে তোমার মায়ের দিকে দাও গিয়ে।
মামুন চুপচাপ মাথা নিচু করে বেরিয়ে এলো, ওর এখন মনে হচ্ছে কাকিকে রান্না ঘরে ফেলে চুদে নিজের রাগ কমাতে। শেষে আবার বড় কথা বলল, মাকে..? আচ্ছা মাকে কেউ করে..?
.
.
.
.
to be continue