SON LIFE- ছেলের জীবন - অধ্যায় ৭
SEVEN
°
°
এভাবেই কেটে গেলো এক সপ্তাহ। কিন্ত মামুন মায়ের মনে এক বিন্দুমাত্র জায়গা করে নিতে পারেনি। মা ওর সাথে খাওয়া ছাড়া আর কোনো বিষয়ে আলাপ করেনা। অথচ আগুনের সাথে কি মাখোমাখো রস রঙ্গ মায়ের। মায়ের পাছা পেট সব কিছু হাতাই ওর সামনে।তাহলে আড়ালে কি করে..? আজকে মা আর আগুন সেজে গুজে সকালে বেরিয়ে গেছে। মামুনের অনেক মন চাচ্ছিলো মা যেনো ওকে নেয় সাথে করে। কিন্তু মা ওর দিকে ফিরেই তাকায়নি..
মামুনের এখন চব্বিশ ঘন্টায় মন খারাপ থাকে। নিজের জীবনে মহা মুল্যবান মাকে হারিয়ে ওর পাগল পাগল লাগে নিজেকে। কিন্তু ও অসহায়, মাকে দেয়া কষ্ট কি মা জীবনেও ভুলবে না..? এখন ওর কাকা কাকির সাথে একটু আকটু কথা হয়। কাকি আগের মতো রাগ করে কথা না বললেও একদম যে আপন ভাবে কথা বলে তাওনা। সব সময় মামুনের থেকে দূরত্ব রেখে, থমথমে মুখে কথা বলে।
জেরিন নাকি কোন আত্মীয় বাড়ি গেছে কিন্তু এখনো আসার নাম নেই। কই সেই ডাইনি যার লোভে পড়ে নিজের মমতাময়ী মাকে হারালো।
°
মামুন দুপুরে কলপাড়ে গোসল করছিলো, হঠাৎ বাইরে থেকে মোটরসাইকেলের হর্নের আওয়াজ পেলো। মামুন ভাবলো কে না কে এসেছে ওর ভেবে লাভ নেই। তাই একমনে গোসল করতে শুরু করে।
হঠাৎ কাকির জোরালো একটা চিৎকার শুনতে পেলো।
- ওয়াও..... আমাদের আগুন সোনাকে তো বাইকে বসে হলিউড হিরো লাগছে ভাবি..!!
- তা ঠিক.. জানো শিল্পি রাস্তা দিয়ে যখন আসছিলাম সব মেয়েরা আমার আব্বার দিকে চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে ছিলো..
আমি শুধু দেখছিলাম আর হাসছিলাম..!!
তারপর মা কাকির একাসাথে জোরালো হাসি শব্দ পাওয়া গেলো।
- ওহহ! তোমরা থামবে.. হিরো না ছাই..!!
আগুনের লাজুক কন্ঠ শুনে আবারও মা কাকির হাসির রোল পড়লো।
মামুন তাড়াতাড়ি গোসল শেষ করে একটা লুঙ্গি পরে বের হল,
গোসলখানার দরজা খুলতেই সবার চোখ ওর দিকে পড়লো।
মামুন অবাক হয়ে দেখলো। আগুন এটা কালো ZIXXER 250 NAKET VIRSION বাইকে বসে আছে। চোখে কালো কালারের সানগ্লাস হাতে সিলবার কালারের ঘড়ি। সাদা চেক শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত গুটানো। কালো পান্টের সাথে পায়ে সাদা দামি
স্নিকার। আসলেই নায়কই লাগছে।
মা কাকি বাইকের সামনে দাড়িয়ে আছে। হঠাৎ মায়ের আওয়াজে ওর ধ্যান ভাঙলো,
- বাইকটা কিনলাম তোর ছোট্ট ভাইয়ের জন্য কেমন হয়েছে দেখতো..
মামুন রোবটের মতো মায়ের কথার উত্তর দিলো,
- ভালো.. অনেক ভালো।
তারপর কোনো দিকে না তাকিয়ে চুপচাপ নিজের রুমে চলে গেলো। ও কি এতটাই পর। এমন একটা কাজে ওকে না নিয়ে মা কিভাবে যেতে পারলো। ওর থেকে এখন দেখছে একটা কুত্তার ও দাম আছে।
পেটে খুদা কিন্ত পাত্তা দিলো না।
রাগে গজগজ করতে করতে শুইয়ে থাকলো বিছানায়।
°
মমতা বড় ছেলের যাওয়ার দিকে একবার ফিরেও দেখলো না উল্টো নিজের ছোট ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বলে,
- আব্বা যা.. তোর কাকিকে নিয়ে একটু বাইকে ঘুরিয়ে নিয়ে আয়।
আগুন হাসি মুখে কাকিকে বলে,
- আসো কাকি।
শিল্পির ছেলে এখন ঘুমানো তাই আর না করলোনা, চুপচাপ নিজের বড় জার ছোট্ট ছেলের কাধ ধরে বসে পড়ল বাইকে পেছনে।
মমতা ছেলেকে বলে,
- আব্বা আমি তাহলে রান্না সেড়ে নিই।
- ঠিক আছে..
বলে আগুন বাইক ঘুরিয়ে রাস্তার দিকে চলে গেলো।
°
মমতা ছেলেকে মন জুড়িয়ে দেখলো। হাজার খানি দোয়া করলো ওর বাবাটার জন্য। এই ছেলেটা না থাকলে স্বামি হারা মমতার কি হতো..? ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস বের হলো। মমতা নতুন কাপড়চোপড় ছেড়ে হাত মুখ ধুইয়ে ফ্রেশ হলো।
ফ্রিজ থেকে আজকে মাছ বের করলো। পানিতে ভিজিয়ে রেখে আলু নিলো কয়েকটা , আজকে আলু ভাজি আর মাছ দিয়ে চালিয়ে নিবে।
বাইক কিনার জন্য মাঠের একটা জমি বন্ধক রেখেছে। যদিও দোকানে ভালোই পুঁজি আছে কিন্ত দেখলো জমির ভাগের টাকা বেশি পায়না ওরা। তাই জমিটাই বন্ধক রেখে দিলো। টাকা বাড়লে আবার ছাড়িয়ে নেওয়া যাবে। এদিকে ছেলে দুরের কলেজে যাবে বাইক ছাড়া নিয়মিত যাওয়া সম্ভব না।
আগুন কাকিকে বাজার থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসলো, সাথে দুই কেজি মিষ্টি। এক কেজি কাকির হাতে দিলো আর এক কেজি নিজে নিয়ে মাকে ডাকতে ডাকতে রান্না ঘরে গেলো।
মা দাড়িয়ে আলু কুচি কুচি করছে। আগুন মিষ্টির প্যাকেট এক পাশে রেখে মাকে কষে জড়িয়ে ধরলো পিছন থেকে। হাত দুটো চলে গেলো মায়ের আঁচলের তলে। খামচে ধরলো মায়ের তলপেটে সামান্য মেদ জমা সমতল পেটটা.. মুখটা গুজে দিলো মায়ের চুলের খোঁপায়।
- ইসসস! আমার আব্বাটা... আস্তে ধর সোনা..!
আগুন মিনমিনে কন্ঠে মাকে বলে,
- ধন্যবাদ আমার কলিজা আম্মু.. আমার না বলা সব শখ পূরণ করার জন্য । আমি জানিনা কিভাবে বুঝে ফেলো আমার মন কি চাই..
সব কিছুর জন্য আমি তোমার কাছে হাজার বছর ধরে ঋণী থাকবো।
পরিশেষে বলতে চাই...
আমি তোমাকে নিজের জিবনের থেকে ভালোবাসি আম্মু.. তুমি আমার জীবন তুমি আমার মরন..!! তুমি ছাড়া আমার জীবন অন্ধকার..!! আই লাভ ইউ সো মাচ.. আম্মু.. আমার সোনা আম্মু আমার লক্ষি আম্মু..!!
ছেলের এমন আবেগ মাখা ভালোবাসার কথা শুনে মমতা গলে গেলো বরফের মতো। আলু কুচি করা বন্ধ রেখে। ছেলেকে ছাড়িয়ে মুখোমুখি হলো। তারপর একমুহূর্ত দেরি না করে। ঝাঁপিয়ে পড়লো ছেলের বুকে। ঢুকে যেতে চাইলো ছেলের শক্ত বুকটাই। ছেলের গা পারফিউমের কড়া ঘ্রান পাচ্ছে৷ নাক দিয়ে সেই ঘ্রানটা নিজের ভিতর ঢুকিয়ে নিতে নিতে বলে,
- আমি কিছু বলবো না তোকে আব্বু কিন্তু একটা কথা মনে রাখিস আমার জিবন টা তোর ভিতরে বন্ধি।
তুই না থাকলে হয়ত এতদিন আমি পাগল হয়ে যেতাম। আমার বেচে থাকার মুল কারন তুই। তোকে ছাড়া আমার নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হয়। তোর জন্য আমি দুনিয়ার সবার বিরুদ্ধে দাড়াতে পারি। এমনকি তোর হাতে আমি হাসতে হাসতে নিজের জিবনটাও দিয়ে দিবো। আই লাভ ইউ টু মাই আব্বুজান..!!
আগুনের হাতের বাধন শক্ত হলো। ওর মাকে এই জীবনে কোনোদিন কষ্ট পেতে দিবেনা। নিজে নিজেই শপথ গ্রহণ করলো আগুন।
°
মামুন ঘুমিয়ে পড়েছিলো। মায়ের ডাকে ওর ঘুম ভাঙলো।
- কিরে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লি কেনো। ওঠ খাবার এনেছি বাইরে আয়।
মা আজকে সেজেছিলো তার ছাপ এখনো মায়ের চেহারা তে দেখা যাচ্ছে। মুখে হালকা মেকাপ, মায়ের পরিষ্কার মুখটার উজ্জ্বলতা হাজার গুন বাড়িয়ে দিয়েছে। কানে দুটো সোনার দুল চকচক করছে, গলায় হার, হাতে সোনার চুরি, ঠোটে হালকা লিপিস্টিক। শাড়ি পাল্টে ফেললেও মায়ের ব্লাউজ এখনো বদলায়নি। লাল ব্লাউজ মায়ের নরম শরীরের সাথে মিশে গেছে একদম।
মা এখন ওর মাথার বরাবর দাড়িয়ে, মামুন এক দৃষ্টিতে মায়ের মোহনীয় রুপ সুধা পান করতে থাকলো।
- এই উঠিস না কেনো..? ওঠ..
মামুন নিজের ধ্যান ভেঙে বলে,
- আসছি..
মমতা বাইরে চলে এলো। ওর খাওয়া শেষ ছেলের সাথে বসে এক প্লেটে খেয়েছে।
মামুন বাইরে এসে দেখলো আজকে মা খাটের সামনে একটা চেয়ার নিয়ে বসে আছে। বিছানায় খাবার সাজানো।
মামুন উপরে উঠে বসলো,
- নে আগে মিষ্টি খা..
মা একটা মিষ্টির বাটি এগিয়ে বলল,
মামুন আগে জিজ্ঞেস করলো,
- কিসের মিষ্টি..
মমতা হাসি মুখে বলে,
- তোর ছোট্ট ভাই বাইক কিনেছে সেই উপলক্ষে.. নে খা।
- ও কিনেছে মানে..? ওর টাকায় কেনা বাইক..?
মমতা মুখে হাসি রেখেই বলে,
- হ্যা ওরই টাকা..
মামুন চমকালো আগুন এত টাকা কোথায় পেলো,
- কিন্ত আগুন এত টাকা কোথায় পেল..? ও তো কোনো কাজ করেনা।
- আমি দিয়েছি..
- তাহলে ওর টাকা হয় কিভাবে।
মমতা এবার স্বাভাবিক ভাবে বলে,
- আমার সব তো ওর.. আমার টাকা মানে আগুনের আগুনের টাকা মানে আমার। আমরা দুজন দুজনার পরিপূরক বলতে পারিস..!!
মামুন এবার একটু নিরাশ হলো। মা কেনো সব সময় আগুনকে এতটা প্রায়োরিটি দেয়..? মা কি বুঝেনা ওর কলিজা পুড়ে য়ায়। মামুন একটা হতাশার নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
- ওহহ!
বলে অনিচ্ছা সত্বেও একটা মিষ্টি খেলো। মায়ের মন রাখতে।
মা আর ওকে জোর করেনি কিন্তু মা আজকে ওকে ভাত বেড়ে দিচ্ছে দেখে মামুনের মনটা খুশি তে ভরে গেলো।
মমতা প্রথমে ছেলেকে ভাত দিয়ে। আলু ভাজি তুলে দিলো।
মামুন খুশি মনে খাওয়া শুরু করলো। আজকে খেয়ে অনেক তৃপ্তি পাচ্ছে যা গত দুবছর ওর জীবনে ছিলোনা। আহহ! মা সামনে থাকলে সব কিছু অমৃত লাগে।
আলু ভাজি শেষ হতেই মমতা মাছের তরকারি দিলো। দুটো মাছের টুকরা। মামুন আজকে মন ভরে ভাত খেলো। পুরোটা সময় মা আজকে ওর সামনে বসে ছিলো। খাওয়া শেষ করে হাত ধুতেধুতে বলে,
- আগুন কোথায় মা..
- ঘুমাচ্ছে..!
- ওহ! তুমি আজকে দোকানে যাবা না..?
- না আজকে অনেক ক্লান্ত লাগছে। এখন ঘুমাবো, সন্ধ্যার পর যাবো কিনা তাও বলতে পারছিনা..
মমতা ছেলের এঁটো থালাবাটি নিয়ে রান্না ঘরের উদ্দেশ্য হাটা দিলো, একটু পর সব গোছগাছ রেখে রান্না ঘর থেকে বের হলো। এখন প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে ওর, ওর আব্বাটাকে জড়িয়ে একটা জমপেশ ঘুম দিতে হবে। বারান্দায় এখনো মামুন বসানো।
- আমি ঘুমাতে যাচ্ছি.....
মমতা ছেলের কথার অপেক্ষা না করে আগুনের রুমে ঢুকে পড়লো। দরজাটা লাগালোনা,হালকা ভিজিয়ে রাখলো।
মামুন প্রতিদিনকার মতো এবার ও অসহায় চোখে মাকে আগুনের গুহায় ঢুকতে দেখলো।
মামুন চুপচাপ আর কিছু সময় একই ভাবে বসে থাকলো।
°
সন্ধ্যায় সময় মাকে বাইকে করে বাজারে দিয়ে আসলো আগুন। এসে পড়তে বসে গেলো, বেশি দিন বাকি নেই অ্যাডমিশন পরিক্ষার। তাই মন দিয়ে পড়তে শুরু করলো।
আধাঘন্টা যেতে না যেতেই দরজায় টোকা পড়লো।
- কে....
- আমি.. তোর ভাই..!
- কি চাই..
- তোর সাথে কিছু কথা আছে..
- এখন সময় নেই পড়তেছি...
- বেশি সময় নিবোনা..
- তাহলে বাইরে থেকে বলে চলে যান..
- জোরে বলা যাবেনা.. গোপন কথা..!!
আগুন ফোঁস ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেললো কয়েকটা,তারপর উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলো।
আবার নিজের চেয়ারে গিয়ে বসে পড়লো..
- এবার বলুন.. কিন্তু তাড়াতাড়ি বলবেন বেশি সময় নেই হাতে..
মামুন আস্তে করে গিয়ে আগুনের বিছানায় বসলো,
- তোর বাইক কত নিয়েছে..!!
- গুগুলে দেওয়া আছে.. একটু কষ্ট করে দেখে নিবেন..!!
- কেনো মুখে বলতে কি কষ্ট হচ্ছে তোর..?
- আমার সময় নষ্ট হচ্ছে, দরকারি কথা থাকলে সেগুলো বলেন..
মামুন এবার আগুনের দিকে এগিয়ে গেলো বিছানা ছেড়ে, ছোট্ট ভাইয়ের চেয়ারের পাশে দাড়িয়ে বলে,
- তুই সব সময় মায়ের সাথে লেগে থাকিস কেনো..?
আগুন চমকালো,
- সেটাই আপনার কি সমস্যা..? আমার মা, আমি তার লেগে থাকি বা ঝুলে থাকি সেটা আমার ব্যাপার.. আপনাকে কৈফিয়ত দিতে যাবো কোন দুঃখে..
আগুনের শক্ত কণ্ঠে শুনে মামুনের একটু রাগ হলো,কিন্ত কিছু বলার সাহস হলোনা। কারন গাঁয়ের শক্তিতে আগুনের সাথে পারা মামুনের জন্য বেশ কষ্ট কর..
মামুন ও এবার একটু জোর গলায় বলে,
- মা টা তোর একার না.. আমারো.. সেটা ভুলে যাসনা..
আগুন এবার চেয়ার ছেড়ে মামুনের মুখোমুখি দাড়ালো, মামুন ওর কাধ পর্যন্ত লম্বা।
মাথা নিচু করে বড় ভাইয়ের চোখে চোখ রেখে বলে,
- হ্যা.. আমি জানি..!! আপনারো মা, কিন্ত এখানে আমার কি করনীয়..?
মামুন একটু পিছিয়ে দাড়ালো, আগুনের সামনে ওকে চুনি পুঁটি দেখাচ্ছে।
- তুই মাকে আমার থেকে দূরে সড়িয়ে নিচ্ছিস.. যেটা আমি সহ্য করতে পারছিনা..!
আগুন এবার ঠোটের কোনে হাসি রেখে বলে,
- তাই নাকি..? আমি সড়িয়ে নিয়েছি নাকি আপনি দূরে সড়িয়ে দিয়েছেন..?
মামুন এবার চুপ মেরে গেলো, ওই মাকে দূরে সড়িয়ে দিয়েছে। এখন কি বলবে আগুন কে..তবুও নিজের মুখ বন্ধ রাখলো না।
- মা আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছে। কিন্ত তুই আমার কাছে মাকে আসতে দিচ্ছিস না..!!
আগুনের ঠোটের হাসি চওড়া হলো,
- কিভাবে..?
- তুই মাকে সব সময় চিপকে রাখিস... একমুহূর্তর জন্য মাকে একা হতে দিস না.. তাহলে কিভাবে আমার কাছে আসবে..?
আগুনের হাসি মুখ বন্ধ হয়ে গেলো, সেখানে ভর করলো গম্ভীরতা।
- দেখুন আপনি কিভাবে নেবেন জানিনা.. তবুও বলি, গত দুবছর আমার সাথে মায়ের এমন করেই দিন কাটছে। এখন আপনি দুই বছর পর উদয় হয়ে নিজের মর্জি খাটিয়ে সব কিছু চাইলে তো হবেনা..
আপনি বলছেন মা আপনাকে ক্ষমা করে দিয়েছে। ভালো কথা, কিন্ত সেই মাই যদি আপনাকে পাত্তা না দেয় তাহলে আমার কি দোষ..?
মামুন আগুনের একটু নরম কন্ঠে সাহস পেলো, ও এগিয়ে এসে আগুনের দুই হাতের মুঠো আকড়ে ধরে বলে,
- ভাই.. আমাকে ক্ষমা করে দে.. আমি তোদের ছেড়ে সুখি ছিলাম না.. তাইতো আবার তোদের মাঝে ফিরে এলাম। তোরা যেমন চাইবি আমি তেমনি ভাবে চলবো। আমি তোদের এমন অচেনা আচরণ মেনে নিতে পারছি না। তোর কাছে বড় ভাই হয়ে এই অনুরোধ টা করছি... এবারের মতো মাফ কর.. আর জিবনে কোনোদিন আমার দ্বারা তোদের কোনো কষ্ট আমি পেতে দিবো না..
আগুন আস্তে করে বড় ভাইয়ের হাত থেকে হাত ছাড়িয়ে নিলো, এখনো গম্ভীররতা মুখে বিরাজমান।
- আমি মায়ের কথার ওপর দিয়ে চলিনা.. মা যেহেতু ক্ষমা করে দিয়েছে, তাই আমিও দিয়েছিলাম। কিন্ত আপনার সাথে কোনো রকম ভাই ভাই খেলা আমার দ্বারা সম্ভবনা..
আমি জানিনা আপনি আমাকে কত টাকা দিয়ে বাঁচিয়েছিলেন, আমি মায়ের কাছ থেকে শুনে নিবো সেটা কত টাকা। চিন্তা করবেননা আমি সেও টাকা আপনাকে দিয়ে দিবো।
মামুনের মনটা হাহাকার করে উঠলো। ছোট্ট ভাই তার এখনো পড়ালেখা শেষ করতে পারলোনা। অথচ তার প্রতি কতটা ক্ষোভ রেখে কথা বলছে। আসলেই তো সব দোষ ওর, ওর হিংসায় ওকে এই দুর্গম পথে এনে দাড় করিয়েছে। নিজের পথ নিজেই তৈরি এখন পস্তালে হবে..?
ভার ক্রান্ত মনে মাথা নিচু করে রাখলো..
আগুন আবার চেয়ারে বসে নিজের মতো পড়া শুরু করে গুনগুন করে...
°
মামুন আগুনের রুম বেরিয়ে বাজারের উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়লো। মায়ের দোকানের সামনে বসে মাকে দেখবে। ওর বর্তমানে মাকে দেখতে অনেক ভালো লাগে। শুধু তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা হয়, ওর সুন্দরী মা টা দিনদিন আরো সুন্দরী হচ্ছে।
মামুন বাজারে কোনো জায়্গায় দাড়ালো না সোজা মায়ের দোকানের সামনে একটা চায়ের দোকানে চা অর্ডার করে মায়ের দোকানের দিকে মুখ করে বসে পড়লো। মায়ের দোকানে এখন দুইটা কম বয়সি মেয়ে আর একটা মধ্যে বয়সি পুরুষ কেনা কাটা করছে।
মামুন এবার উপরে তাকালো,
মায়ের দোকানের সাইনবোর্ড দেখে সেদিন ওর মন কেঁদে উঠেছিলো। তারা দুই ভাই অথচ এক ভাইয়ের নামটা মায়ের দোকানে জ্বলজ্বল করছে। হয়ত তারও নাম থাকতো যদি সে বড় ভুলটা না করতো...
কিন্তু ও যদি ভুল না করতো তাহলে মায়ের মতো এমন ভদ্র ঘরের গৃহবধূকে ভরা বাজারে এসে দোকান নিয়ে বসতে হতো..? উত্তর হলো না...
মামুন মাকে আটটা পর্যন্ত চায়ের দোকানে বসে পরক্ষ করলো, তারপর যখন দেখলো কাস্টমার কমে এসেছে তখন আস্তে উঠে মায়ের দোকানে চলে গেলো।
মা এখন চুপচাপ ফোন টিপছে,
মামুন গিয়ে আস্তে করে ডাক দিলো,
- মা....
মমতা আগুন কে মেসেজিং করছিলো,হঠাৎ বড় ছেলের ডাকে সামনে তাকালো মামুন দাড়িয়ে আছে,
- কিরে কখন আসলি..
- অনেকক্ষণ..
মমতা হাসি মুখে বলে,
- দাড়িয়ে আছিস কেনো বয়..
মমতা দোকানে টুল গুলো ইশারা করে ছেলেকে বসতে বলল।
মামুন ভাবলো আচ্ছা এখানে যদি আগুন হতো তাহলে মা কি করতো.. ওকেও কি টুলে বসতে বলতো...?
মামুন বসে পড়লো মায়ের দিকে ফিরে..
মমতা আয়েশ করে বসে বলে,
- কি খাবি বল..?
মামুন আজকে অবাক হয়ে যাচ্ছে। ওর মা আজকে সারাদিন হেসে আগের মতো করে কথা বলা দেখে।
- তুমি কি খাবে বলো..?
- আরে বল সমস্যা না.. তোর মায়ের এখন যথেষ্ট আয় রোজগার আছে। দুই ছেলেকে খাওয়ানোর মতো। বলে ফেল মায়ের কাছে কিসের লজ্জা..
ইস! মামুনের কি ভালো লাগলো মায়ের কথা শুনে। আহহ! মনটা আনন্দ নেচে উঠলো ওর।
মামুন মিষ্টি করে হেসে বলে,
- তুমি যা খাবে আমি ও তাই খাবো..
- সত্যি..?
- হুমম..
মমতা ক্যাশ থেকে টাকা বের মামুনের সামনে রেখে বলে,
- যাহহ! তাহলে বড় দুটো আইসক্রিমের বাটি নিয়ে আয়। আজকে আমার আইসক্রিম খেতে মন চাচ্ছে।
মামুন উঠে টাকা নিয়ে হাসি মুখে চলে গেলো। টাকাটা অনেক যত্নের সহীত পকেটে ঢোকালো। এই টাকা ওর মা ওকে দিয়েছে। এটা জিবনেও খরচ করবেনা মামুন। আইসক্রিমের দোকানে গিয়ে দুটো বড় বাটি আইসক্রিম কিনলো। কিন্তু টাকা দিলো নিজের মানিব্যাগ থেকে।
আবার মায়ের দোকানে গিয়ে মায়ের সামনে রাখলো এক বাটি।
মমতা বাটি হাতে নিয়ে,
- নে খা শুরু কর..
মামুন এবার বলে,
- মা এতো বড় বাটির আইসক্রিম আমি একা খেতে পারবো না। তুমি তোমার টা থেকে অর্ধেক খেয়ে আমাকে দাও।
- তাহলে তোরটা তে খাবে..?
- কেনো এটাও তুমি খাবে।
- না, আমি ওতো বেশি খেতে পারবো না। তুই এক কাজ করিস যা থেকে যাবে। কলা চাচিকে দিয়ে দিবি দেখবি অনেক খুশি হবে।
মা সামনের কলা বেচা চাচিকে দেখিয়ে বলে,
মামুন হতাশ মনে বসে আস্তে খাওয়া শুরু করে। ও মনে করেছিলো আজকে মায়ের এঁটো খাওয়ার সুযোগ পাবে কিন্তু সে আশায় গুড়েঁ বালি।
°
আইসক্রিম তখন মা ছেলের অর্ধেক ও শেষ হয়নি। দোকানের সামনে এসে দাড়ালো নতুন চকচকে একটা বাইক। এখনো নতুন স্টিকার তোলা হয়নি বিভিন্ন জায়গায়। দুটো হর্ন দিয়ে বুঝিয়ে দিলো সে এসেছে। মমতা ছোট্ট ছেলেকে দেখে উঠে দাড়ালো। ইসস! ওর আব্বাটাকে বাইকে যা লাগছেনা..
আগুন বাইকটা মায়ের দোকানের সামনের ছাওনিতে ঢুকিয়ে রাখলো। তার পর নেমে বড় ভাইকে দেখে ওর রাগ না হলেও বিশেষ ভালো লাগলোনা। আগুন সোজা মামুনের সামনে দিয়ে, ঘুরে মায়ের চেয়ারে বসে পড়লো।
- উফফ! তুই সব সময় আমার মনের কথা ধরে ফেলিস। দেখ এখন আমি আইসক্রিম টা খাওয়ার সময় শুধু তোর কথা ভাবছিলাম। সাথে সাথেই তুই হাজির..
নে হা কর আমার আব্বাজান..
মমতা চামচ ছেলের মুখের সামনে ধরলো। আগুন ও বিনা বাক্য খেয়ে নিলো।
.
মামুনের খাওয়া থেমে গিয়েছে। ওর চোখ দুটো নিবদ্ধ মা ভাইয়ের দিকে। মায়ের মুখটা এখন দেখা যাচ্ছেনা ওর দিকে পেছন ফেরা বলে। কিন্তু আগুনের মুখের অর্ধেক দেখা যাচ্ছে। মায়ের ভালোবাসায় আগুনের মুখটা আরো উজ্জ্বল দেখাচ্ছে। ও এবার নিজের আইসক্রিমের বাটির দিকে তাকালো,এখনো অর্ধেক ও শেষ করেনি। তার আগেই রুচি চলে গেলো। আগুনের আগমনে মামুনের সব কিছু বিষাদ ময় মনে হচ্ছে।
মামুন না খেয়ে মা ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকলো,অপেক্ষা শুধু ওদের খওয়া কখন শেষ হবে। তারপর নিজের বাটি চাচির কাছে দিয়ে আসবে। এখন উঠে যেতে পারছেনা লজ্জায়।
পিছন থেকে মায়ের শরীরে চওড়া ভাবটা বোঝা গেলেও। বাকানো বা ফোলা অঙ্গ গুলো বোঝা যাচ্ছে না। মা সব সময় ঢিলা বো*রকা পড়ে এজন্য..
হঠাৎ একজোরা হাত মায়ের কোমড়ের দুই পাশ চেপে ধরলো। বো*রকাটা চেপে গিয়ে চিকন কোমড়ের সাথে লেগে যাওয়ার কারনে মায়ের বিশালকার পোদের সাইজ বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু সামনের র্যাকের কারনে পাছার অর্ধেক দেখা গেলেও বাকি অর্ধেক দেখা যাচ্ছেনা।
মা তখনও একমনে খাওয়াচ্ছে আগুনকে অথচ আগুন হাত দুটো কোমড়ে নড়াচড়া শুরু করেছে। মামুন ঘোলা চোখে সেদিকে তাকিয়ে রইল। মা কেনো আগুনের হাত সড়িয়ে দিচ্ছেনা..?
.
মমতা পরম তৃপ্তির সাথে ছেলেকে সাথে নিয়ে আইসক্রিমের বাটি শেষ করলো। হুমম! খুব মজা।
- কেমন লাগলো আব্বা..?
আগুন মায়ের ঠোটের দিকে তাকিয়ে আছে, মায়ের ঠোট দুটোর আশে পাশে হালকা আইসক্রিম লেগে আছে। ওর চোখ জোড়া সেদিকে নিবদ্ধ।
- তুমি আমাকে যা খাওয়াও তাই আমার কাছে অমৃত লাগে। কিন্ত আম্মু তোমার ঠোটের চারি পাশে লেগে গেছে..
মমতা একটা টিস্যু হাতে কেবল মুছতে যাবে তখনি আগুন হাত ধরে থামিয়ে দিলো,
- আমি আর একটু স্বাদ নিতে চাই মুছে নষ্ট করোনা..চলো..
- ইসস! এখানে কিভাবে..
মা ছেলের কথা শুনে মনে হচ্ছে এখানে ওরা ছাড়া তৃতীয় কোনো ব্যাক্তির উপস্থিতি নেই। অথচ টুলে বসে তাদেরই পরিবারের বড় ছেলে। যে এখন অসহায় চোখে তাকিয়ে ওদের কথা শুনছে।
- চলো, ট্রায়াল রুমে চলো..
মমতার দোকানে ছোট্ট একটা ট্রায়াল রুম আছে। যেটা শুধু কাপড় দিয়ে বানানো। সামনে একটা বড় আয়না ফিট করা। যাদের সাইজ নিয়ে সমস্যা তারা ইচ্ছা করলে নির্ভয়ে ট্রায়াল রুম থেকে ঠিক করে নিতে পারে।
মমতা ছোট্ট ছেলের আবদার কখনো ফেলেনা, এখন যে ওর বড় ছেলে এখানে আছে সেটা একবারো মনে করার চেষ্টা করলোনা। আস্তে ছেলের সাথে ট্টায়াল রুমে ঢুকে পড়ে। গত দশ মিনিট ও ছেলের বাহুডোরে বন্ধি থাকবে জানে ও।
আগুন মাকে মামুনের সামনে দিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় ওর ঠোটে লেগেছিলো একটা মুচকি হাসি। যে হাসি কেবল মামুন কে দেখানোর জন্য। দেখ কেমন লাগে, ওর মাকে নিয়ে ওর সাথে কাড়াকাড়ি। মামুন কে এখন থেকে প্রতি পদে পদে বুঝিয়ে দিবে যে মা শুধু আগুনের...!
.
.
to be continue