সুমনের পরবর্তী জীবন - দ্বিতীয় অধ্যায়। - অধ্যায় ১৫৮
সোমু বসুকে বলল - দুঃখ করোনা দেখবে হয়ে যাবে। আমি কলকাতা থেকে ফিরে আসি তারপর কথা বলবো তোমার সাথে। আর শোনো আমি সবাইকে বলে যাচ্ছি যে আমার বিয়েতে তোমাদের সকলকে আসতে হবে। বাসু শুনে বলল - আমি যাবো কি করে মৌমিতাকে ছেড়ে আমার পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয় ; তোমরা তো এখানেই আসবে তখন দেখা হবে। বাসু এবারে গাড়ি চালাতে লাগল এখান টি বেশ কিছুটা দূরে এয়ারপোর্ট। তবে বাসু খুব তাড়াতাড়ি পৌঁছে দিলো সোমুকে। দিলীপদা এয়ারপোর্টে সোমুর জন্য দাঁড়িয়ে ছিলো। ওকে দেখে এগিয়ে এসে বলল - তুমি সাবধানে যেও আর একটা কথা তোমাকে আমার বলার ছিল ভাবছি এখোন বলব না তুমি ফায়ার এলে বলব। সোমু বলল - দাদা যা বলার এখনি বলে দাও তানাহলে আমার টেনশন থেকে যাবে। দিলীপ এবার একটু গম্ভীর হয়ে বলল - আমার দ্বারা পিয়া কনসিভ করেছে শুনে আমার একটু সন্দেহ হয়েছিল ; জানো তারপর আমি স্পার্ম টেস্ট করিয়েছি আর তাতে জানতে পেরেছি যে আমার সন্তান উদ্পাদনের ক্ষমতা এখন নেই তাই বুঝতেই পারছো যে তোমার বৌদির সন্তান ধারণের কথা শুনে আমার প্রথমে বেশ রাগ হয়েছিল যে কার না কার বাচ্ছা আমার ঘাড়ে এলো। পিয়াকে কে জিজ্ঞেস করতে ও সত্যি কথাই বলল আর জানতে পারলাম যে এই বাচ্ছার কারিগর তুমি। সোমু হাত জোর করে বলল - দাদা আমাকে তুমি ক্ষমা করো আমি এসবের ভিতরে থাকতে চাইনি কিন্তু বৌদির জোরাজোরিতে আমাকে বাধ্য হয়ে করতে হয়েছে। দিলীপ সোমুর হাত দুটো ধরে বলল - না না তোমার ওপরে আমার কোনো রাগ নেই যখন পিয়া তোমার নাম বলেছে তখন থেকেই আমার আর কোনো রাগ নেই ভাই। তুমি নিশ্চিন্তে যাও বিয়ে করে বৌ নিয়ে ফিরে এসো দেখবে তোমার দাদা এরকমই থাকবে। আর আমার সৌভাগ্য যে তোমার মতো ভাইয়ের কাছ থেকে আমার বংশধর পেলাম। সোমুর বুকের ভিতরে যে চিন্তা ছিল সেটা দূর হলো বলল - আমার বিয়েতে তোমাকে আসতেই হবে দাদা আমি কোনো কথা শুনতে চাইনা। দিলীপ একটু ছুঁ করে থেকে বলল - ঠিক আছে আমি আসবো তবে পিয়াকে নিয়ে যেতে পারবোনা আমি একাই যাবো। সোমু শুনে বলল - বৌদিও আসতে পারবে না আমাকে বলেছে তবে তোমাকে বৌদি যে ভাবেই হোক আমার বিয়েতে পাঠাবে। যেন দাদা আমি নিজেই তোমাকে ওই বাচ্ছার ব্যাপারে জানতাম তবে বিয়ে করে এসে। দিলীপ ওকে বলল - এখন ওসব কথা বাদ দাও আর ভালো মনে যাও বিয়েতে আমি থাকছি , আমি কলকাতা যাবোনা সোজা মুম্বাইতে যাবো সেখান থেকে তোমার সাথেই কলকাতা যাবো। এবার সিকিউরিটি চেকিংয়ের জন্য যেতে হবে , দিলীপের কাছে থেকে বিদায় নিয়ে সিকিউরিটি চেকিং করিয়ে ভিতরে গেলো। বাড়িতে একটা ফোন করে বলে দিলো। রিঙ্কিকেও জানিয়ে দিলো। নাহলে ওরা সবাই খুব চিন্তা করতো। রাত নটা নাগাদ কলকাতা এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে একটা ক্যাব নিয়ে বাড়ি বলে এলো। বাড়িতে ঢুকতে শিবানী ওকে জড়িয়ে ধরে আদর করে বলল কতদিন বাদে তোকে দেখলাম খোকা। যা আগে ফ্রেশ হয়ে আয় তোকে খেতে দিচ্ছি। খাওয়া হতে আশু এসে বলল - খোকাকে জিনিস গুলো দেখাও এবার। শিবানী বিয়ের সব জিনিস এক এক করে দেখতে লাগলো। রিঙ্কির জন্য বেনারসি ব্লাউজ (আগেই বালুজের মাপ নিয়ে নিয়েছিল )ব্রা প্যান্টি। আর তারপরে এলো ওর সোনার গয়না। সোমু দেখলো সব কিছুই একদম সেরা জিনিস কিনেছে ওর মা। ওর শশুড়বাড়ির সবার জন্যেও জামা কাপড় কেনা হয়েছে। ওদিকে মুম্বাইতে দীনেশ আর দিশা দুজনে বিয়ের জিনিস কিনে রেখেছে অনেক আগেই। শিবানীর জন্য একটা সুন্দর হার ছ গাছা করে হাতের চুরি। আশুর জন্য একটা দামি ঘড়ি স্যুট সাথে নতুন জুতো। সোহিনী ওর জিজুর সব কিছু ও নিজের কাছে একটা সুটকেসে ঢুকিয়ে রেখেছে কাউকে হাত দিতে দেয় না কাউকে দেখাতেও দেয় না। কেউ দেখতে চাইলে বলে আগে জিজু আসুক তারপর দেখবে। বিয়ে ২৩সে জানুয়ারী দীনেশ একটা হোটেল ভাড়া নিয়েছে আর সেখানে ওর মেয়ের শশুর বাড়ির লোকেদের ২০ তারিখে আসতে বলেছে। তিরিশ জনের একটা বড় দলের জন্য টিকিট কাটার জন্য ওদের এজেন্টকে বলতে বলল - সকালের ফ্লাইটে জায়গা হবে না দুপুরের ফ্লাইটের টিকিট করে দিতে পারি। কথাটা সোমুকে জানাতে সোমু বলল - ড্যাড তুমি চিন্তা করোনা আমরা সকালের ফ্লাইটেই যাবো আর আমি টিকিটের জন্য অলরেডি বলে দিয়েছি। আজকেই টিকিট হাতে পেয়ে যাবো। দীনেশ শুনেই বলল - তুমি এটা কিন্তু ঠিক করলে না আমাকে সুযোগ না দিয়েই নিজেই টিকিট করে নিলে। সোমু শুনে বলল - ড্যাড তুমি শুধু শুধু রাগ করছো তোমার টাকা আর আমার টাকা কি আলাদা আর তাছাড়া আমি টিকিট করলে যতটা ডিস্কাউন্ট পাচ্ছি সেটা তুমি পেতে না। আমি তো রিঙ্কিকে বলেই রেখেছিলাম ও তোমাকে কিছু বলেনি। রিঙ্কি কাছেই দাঁড়িয়ে ছিল রিঙ্কি ভাবলো যে এবারে ড্যাড ওকে বকবে তাই তার আগেই দু হাতে কান ধরে করুন মুখে দীনেশের দিকে তাকালো। দীনেশ ওকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে সোমুকে বলল - তোমার হবু বৌ ভুলে গেছে আমাকে বলতে আর এখন তাই কান ধরে ক্ষমা চাইছে। ওকে কি ক্ষমা করে দেবো ? সোমু বলল - না একদম না ওকে আজকে রাতে শাস্তি দাও বেশ করে দুদিকেই ঢুকিয়ে দিও। রিঙ্কি শুনতে পাচ্ছিলো ওদের কথা তাই চেঁচিয়ে বলল - না কক্ষনো না আমাকে তুমি ছাড়া এখন আর কেউই ছুঁতে পারবেনা আমি দেবোনা। সোমুও কথাটা শুনতে পেয়েছিলো তাই বলল - ড্যাড ছেড়ে দাও ক্ষমা করে দাও এখন তবে পরে এই শাস্তি পেতে হবে ওকে সেটা বলে দাও। দীনেশকে বলতে হলোনা রিঙ্কি সবটাই শুনেছে তাই ও চেঁচিয়ে বলল - ঠিক আছে বিয়ের পরে আমরা যখন আবার মুম্বাইতে আসবো তখন যা করার করবে। দীনেশ ফোন রেখে দিয়ে রিঙ্কিকে বুকে জড়িয়ে ধরে ওকে একটু আদর করে ছেড়ে দিয়ে বলল। ঠিক আছে এবার শুতে যা এই কদিন একদম নিয়ম করে খাওয়া-দাওয়া করবি আর বেশি করে ঘুমোবি। বিয়েতে অনেক ধকল হবে তার জন্য শরীর ঠিক রাখাটা খুব জরুরি। রিঙ্কি বলল - তুমি যে রকম বলবে।
এদিকে কুড়ি তারিখ সকাল ৬টায় ফ্লাইট তাই ওদের বাড়ি থেকে ঠিক চারটের সময় বেরোতে হবে তাই আগেরদিন সবাই ঠিক নটার মধ্যে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। সকালে এয়ারপোর্টে এসে দেখে ওর কলকাতা অফিসের বস মি:ঘোষ ওনার স্ত্রী দীপিকা মেয়ে নেহা আর কেকা। রিসেপসনিস্ট - রিকিতা আর ওর বোন সুনিতা। সোমুর বন্ধু বলতে ফার্নিচারের দোকানের বাবলুদা। মাসি মেসো আর তুতাই আরো অনেকে সবাই মা আর বাবার লোক। মুম্বাই পৌঁছলো এই সাড়ে নটা নাগাদ। বাইরে এসে দেখে দীনেশ চারটে বড় বড় গাড়ি নিয়ে হাজির। সবাই একেএকে গাড়িতে উঠতে গাড়ি চলতে লাগলো। জ্যাম জট কাটিয়ে হোটেলের সামনে গাড়ি দাঁড়ালো। সবাই নেমে একে একে নিজেদের ঘরে গিয়ে ঢুকলো। স্নান সেরে ডাইনিং হলে গিয়ে খেয়ে নিলো সবাই। সোমু বিছানায় শুয়েই ঘুমিয়ে পড়ল। বিকেলে ওর ঘুম ভাঙলো সোহিনীর আদোরে। সোমুকে চোখ খুলতে দেখে বলল - এই তো আমার সোনা জিজুর ঘুম ভেঙেছে দাড়াও তোমাকে চা দিতে বলছি। সোমু ওকে জিজ্ঞেস করল তুমি কি একাই এসেছো ? সোহিনী বলল - না না আমার ড্যাড আর মম দুজনেই এসেছে দিদি বাড়িতে একাই আছে তবে অনেক আত্মীয় এসেছে তাদের সাথে গল্প করছে। সোহিনী বলল - জিজু একবার যাবে বাড়িতে দিদির তোমাকে খুব দেখার ইচ্ছে তবে কাউকে বলবে না আমরা দুজনে চুপ করে বেরিয়ে যাবো। চা এলো সোমু চা খেয়ে প্যান্ট জামা গলিয়ে সোহিনীর সাথে বেরিয়ে পরল। শুধু ওর মা জিজ্ঞেস করল - খোকা কোথায় যাচ্ছিস ? সোমু বলল - এই কাছেই যাচ্ছি তাড়াতাড়ি চলে আসবো তুমি চিন্তা করোনা।