সুমনের পরবর্তী জীবন - দ্বিতীয় অধ্যায়। - অধ্যায় ৬১
সুমনের পরবর্তী জীবন - দ্বিতীয় অধ্যায়-পর্ব-৬০
সেখান থেকে গেলাম ওদের দুজনের পছন্দ মতো জামা কাপড় নিলাম সাথে একটা বড় সুটকেস সেটাও দুই বোন পছন্দ করল। কমলিকে বললাম -আমাকে একবার মনে করাবি তোদের ঘরটা ঠিক করতে হবে। জিজ্ঞেস করলাম - ওই জমিটা কি তোদের নিজেদের ? কমলি বলল - হ্যা গো বাবুজি ওটা আমাদের তবে বাবা নাকি কিছু টাকা একজনের কাছে ধার নিয়েছিল তাই সে এসে আমাদের বের করে দিতে চাইছে। জিজ্ঞেস করলাম - সে থাকে কোথায় রে ? বলল - আমাদের ঘরের পাশেই থাকে খুব খারাপ লোক আমাদের বলেছে তোরা তিনজনেই ব্যাশ্যাগিরি কর এই লাইনে অনেক টাকা। বললাম - ঠিক আছে চল আগে দেখছি সে কেমন লোক। ঝুমা শুনে বলল - না গো বাবুজি ও খুব খারাপ অনেক খুন করেছে তোমাকে যদি কিছু করে। বললাম - আগে তো চল তোদের ঘরে তার আগে একবার এখানকার থানাতে যেতে হবে কোন দিকে থানা ? কমলি বলল সোজা গিয়ে বাঁয়ে মুড়লেই থানা এসে যাবে। আমি থানার সামনে গাড়ি দাঁড় করিয়ে ওদের বললাম তোরা গাড়িতেই থাকে আমি এখুনি আসছি।
ভিতরে গিয়ে বড়বাবুর সাথে আমার পরিচয় দিয়ে বললাম সব ঘটনা। শুনে উনি বললেন - আপনি চলুন আমি আসছি। আমি বেরিয়ে কমলির ঘরের সামনে এসে নামলাম -ওরা দুই বোন মালপত্র নিয়ে ঘরে গিয়ে ঢুকলো। পিছনের ডিগ্গিতে তিনটে ফোল্ডিং খাট তোষক লেপ রেখেছিলাম। কমলি নেমে ডিগ্গি থেকে সব নিয়ে ঘরে রেখে বেরিয়ে এলো। ওকে বললাম - এবার ডাক তাকে দেখি ওর কত ক্ষমতা হয়েছে।
কমলি ওকে ডাকলো চাচা একবার বাইরে আসুন। ঘরের ভিতর থেকে একটা কালো মুশকো মতো একটা লোক বেরিয়ে এলো। কমলিকে ডেকে জিজ্ঞেস করল - কাকে নিয়ে এসেছি আর কি দরকার বল আমাকে এখুনি বেরোতে হবে। এবার আমি বললাম - তোমার কাছ থেকে কত টাকা নিয়েছিল এর বাবা ? বলল - দশ হাজার সেটা এখন সুদ বেড়ে ডবল হয়ে গেছে। জিজ্ঞেস করলাম - কিছু লেখা আছে ? শুনে বলল - না কিছু লেখা নেই। বললাম - তাহলে তো মিটেই গেলো প্রমান ছাড়া আমি তো টাকা দেবোনা। কেননা আমি এই ঘরটা কিনতে এসেছি। শুনেই লোকটা টেলি বেগুনে জ্বলে উঠলো বলল - কিনে দেখুন না একবার আমাকে চেনেন না আপনি শেষ করে দেব। আমি ওর কাছে গিয়ে ওর ঘেটি ধরে একটা ঝাকানি দিতেই মিইয়ে গেলো বলতে লাগলো ছেড়ে দিন আমার খুব লাগছে। এর মধ্যে থানা থেকে বড়বাবু এসে হাজির তাকে দেখেই আমার হাত ছাড়িয়ে পালাতে চাইছিলো কিন্তু ওর ঘর মাই যে ভাবে ধরে ছিলাম তাতে পালানো ওর পক্ষে সম্ভব হলোনা। বড় বাবু এগিয়ে ওকে বলল - তোকে অনেকদিন থেকেই খুজছিলাম আজকে পেয়েছি চল থানায় গিয়ে ডান্ডা দিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। এরমধ্যে এক মহিলা বেরিয়ে এসে বড়োবাবুকে বলল - ওকে নিয়ে যান রোজ মদ খেয়ে এসে আমাকে পেটায় আর এদের বাবা কোনো টাকা ধার নেয়নি শুধু শুধু দশ চাপাচ্ছে এদের ঘরে। ওর মতলব এই জমি টুকুও ওদের থেকে কেড়ে নেবার। এবার বড়বাবু বেশ করে রাস্তায় ফেলে পেটাতে লাগলো। আমি বাধা দিয়ে বললাম - যা করার থানায় নিয়ে করুন। বড়বাবু আমাকে বললেন - দেখুন স্যার এখানে কোনো অসুবিধা হলে আমাকে জানাবেন আমি সব সামলে নেবো। ততক্ষন বেশ ভিড় জমে গেছিলো। একে একে ভিড় পাতলা হতে একটা ৩০-৩৫ বছরের ছেলে এগিয়ে এসে বলল - স্যার এর আগে আমি এদের ঘরে সারাই করতে চেয়েছিলাম কিন্তু ওই ব্যাটা আমাকে করতে দেয়নি বলেছে আগে আমাকে কুড়ি হাজার টাকা দে তারপর যা করার করবি। ওকে জিজ্ঞেস করলাম - তুমি ভাই কেন এদের উপকার করতে চেয়েছিলে তোমার উদ্দেশ্য কি ? শুনে একটু চুপ করে থেকে বলল - আমি সত্যি কোথাই বলবো আপনাকে আমার কোমলীকে খুব পছন্দ ওকে আমি বিয়ে করতে চাই। আমি ওকে এই প্রস্তাব দিতে ও বলেছিলো ও আমাকে বিয়ে করতে পারে তবে ওদের ঘর ঠিক করে দিতে হবে। ওর কথা শুনে কমলিকে জিজ্ঞেস করলাম - কিরে কথাটা কি ঠিক ? কমলি বলল - হ্যা বাবুজি। ওকে আবার জিজ্ঞেস করলাম - তোর কি ওকে পছন্দ ? কমলি একবার ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে হ্যা বলল। কমলির কথা শুনে ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করলাম - তা তুমি কি করো ? ছেলেটি বলল - আমার কস্ট্রাকশনের ব্যবসা এখনো আমার তিনটে প্রজেক্ট চলছে। তোমার নাম কি আর বাড়িতে কে কে আছেন? বলল - আমার নাম সুহাস , বাড়িতে আমার মা-বাবা আছেন আমি একই ছেলে। ভেবে দেখলাম - ছেলেটা বেশ ভদ্র আর লেখাপড়া জানে কমলিকে বিয়ে করলে বাকিদের দেখভাল করতে পারবে। তাই সুহাসকে জিজ্ঞেস করলাম - তোমার বাড়ি এখন থেকে কত দূরে ? বলল - এইতো বস্তিটা শেষ হলেই বড় রাস্তা আর সেখানেই আমাদের বাড়ি। বাবা রেখে চাকরি করতেন , বাবাই বাড়ি করেছিলেন আমি শুধু দোতালা করেছি। বললাম চলো তোমার বাবা-মায়ের সাথে কথা বলে আসি। ছেলেটা আমার কথা শুনে একটু অবাক হয়েই জিজ্ঞেস করল - কেন আমার বাবা মার সাথে কেন কথা বলবেন ? বললাম - বিয়ের পাকা কথা কি রাস্তায় দাঁড়িয়ে তোমার সাথেই বলব? এবার সুহাস একটু লজ্জ্যা পেয়ে বলল - সরি স্যার চলুন আমার বাইক আছে আমি এগোচ্ছি। আমি এবার কমলিকে জিজ্ঞেস করলাম তোর বিয়ে কথা বলতে যাচ্ছি পরে যেন আবার বেঁকে বসিস না। ওকে বিয়ে করতে না চাইলে আগেই সেটা আমাকে বলে দে। কমলি শুনে কেঁদে ফেলল - কিন্তু তোমাদের কে দেখবে বিয়ে হলে তো ওদের বাড়িতেই আমাকে থাকতে হবে। বললাম -কেনোরে তোর বোন ঝুমা করবে। আর তোদের সবকতার বিয়ে দিয়ে দিলে আবার কাউকে না কাউকে জোগাড় করে নেবো।
কমলি আর কিছু বললো না। আমিও গাড়িতে উঠে সুহাসকে ফল করতে লাগলাম। বিট্টুও ওদের সাথেই থেকে গেছে। আমি একাই সুহাসদের বাড়িতে ঢুকলাম। সুহাস ভিতরে গিয়ে ওর বাবা-মাকে ডেকে নিয়ে এলো। আমাকে দেখে ওর বাবা জিজ্ঞেস করলেন - বাবা তুমি মেয়ের কে হও ? বললাম - আপাতত আমিই ওদের গার্জিয়ান কমলি আমার বাড়িতে থাকে বাড়ির মেয়ের মতো আর ও আমাদের সবাইকে খুব ভালো বাসে। সুহাসের বাবা বললেন - দেখো বাবা এই আমার একমাত্র ছেলে ওর পছন্দ যখন তখন আমার আর অমত করি কি করে আমাদের ছেলের সুখেই আমাদের সুখ। কবে নাগাদ বিয়ে দিতে পারবে আমাকে জানালে আমি সেই মতো সব কিছু জোগাড় করতে পারি। শুনে বললাম - আমায় তো সব সময় রেডি আপনি চাইলে কালকেই বিয়ে হতে পারে। শুনে হেসে বললেন - না না কালকে নয় একটা দিন দেখে আমাকে জানাও। বললাম - ঠিক আছে আমি একটা দিন দেখে আপনাকে জানাবো। আমাকে চা আর মিষ্টি দিতে বললাম -এখন আমি কিছুই খেতে পারবোনা শুধু চা খাচ্ছি। সুহাস অনেক রিকোয়েস্ট করতে একটা মিষ্টি মুখে দিলাম। সুহাস আমার সাথে গাড়ি পর্যন্ত এলো আমি শুধু ওকে বললাম -দেখো ও আমার মেয়ের মতো যদি কোনোদিন শুনি যে ওকে তুমি কষ্ট দিয়েছো তো আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। সুহাস আমার হাত ধরে বলল - আপনি কোনো চিন্তা করবেন না ও আমাদের বাড়িতে সুখেই থাকবে।
সুহাস এবার আমাকে জিজ্ঞেস করল - কমলি কি এমআপনার সাথে আপনার বাড়িতে যাবে ? বললাম - হ্যা বিয়ের আগে আর তুমি কমলিকে দেখতে পাবে না আর একান্তই দেখতে চাইলে আমার বাড়িতে তোমাকে যেতে হবে। আমি ওকে আমার একটা কার্ড দিলাম। সেটাতে চোখ বুলিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল - আপনি এতো বড় একটা চাকরি করেন আর এতো সহজ সরল একজন মানুষ আমি ভাবতেই পারছিনা। বললাম - দেখো আমিও তোমার মতো ঘর থেকেই উঠে এসেছি যদিও আমাদের সংসারে কোনো অভাব ছিল না তবুও গরিবের কষ্টে আমার কষ্ট হয় আর চেষ্টা করি যতটুকু তাদের সাহায্য করতে পারি। আমি বাড়িতে ফিরলাম কাকলি দরকা খুলে দিতেই কমলি কোকোলির বুকে ঝাঁপিয়ে পরে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো কাকলি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করল - কিরে কাঁদছিস কেন কি হয়েছে ? কমলি কোনো মোতে কান্না থামিয়ে বলল - বাবুজি আমাকে তাড়িয়ে দেবার ব্যবস্থা করে এলো আমি তোমাদের ছেড়ে কি করে থাকবো ? কাকলি আমার দিকে তাকাতে ওকে সবটা খুলে বললাম। সব শুনে কাকলি বলল - দেখ মেয়েদের জীবনে শশুর বাড়ি যেতেই হয় আর সেই ব্যবস্থায় করে এসেছে তোর বাবুজি। ওর পিছনে ঝুমা দাঁড়িয়ে ছিল ওকে ডেকে জিজ্ঞেস করল - তোর নাম কি রে ? ঝুমা নাম বলতে বলল আজ থেকে তুইও এ বাড়িতেই থাকবি। ঝুমা শুনে বলল - কিন্তু আমার জামা কাপড় তো আনিনি কি করে থাকবো ? কাকলি মজা করে বলল - ল্যাংটো হয়েই থাকবি। ঝুমা লজ্জ্যা পেয়ে মাথা নিচু করে নিলো। কাকলি বলল - তোকে চীন করতে হবে না কালকেই তোর জামা কাপড় চলে আসবে। গুড্ডু ঘরের ভিতরে পড়ছিলো এবার বেরিয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে চুমু দিয়ে জিজ্ঞেস করল - তুমি কোথায় গেছিলে বাবা ? সব বললাম শুনে বলল - কমলি দিদির বিয়ে খুব মজা হবে আর ঝুমাতো আমার বয়েসি ও আমার আর এক বোন হবে। ঝুমা গুড্ডুর কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে বলল - আমরা খুব ভালো বন্ধু হবো। গুড্ডু ওকে জড়িয়ে ধরলো। বিট্টু শুনে জিজ্ঞেস করল - তাহলে আমার কোনো জায়াগা নেই ? গুড্ডু বলল - কেন তুইও তো ঝুমার বন্ধু হোবি তুই আর আমি কি আলাদা। বিট্টু এগিয়ে গিয়ে ঝুমাকে জড়িয়ে ধরে আদর করে দিলো। সাথে গুড্ডুকেও।