সুন্দরবনে মা ও ছেলের জীবনের গল্প - অধ্যায় ২৮
মা- দেখেই নাতিন কে কোলে নিয়ে দিদিভাই দিদার কথা মনে পড়ল এতদিনে। দেখ বাবা তোর ভাগ্নি কেমন বড় হয়ে গেছে।
দিদি- বলল না মানে মা চাষ ছিল তো তাই আসার সময় পাইনাই এই চাষ শেষ করেছে সময় পেলাম তাই চলে এলাম। তোমরা চাষ করেছ।
মা- হ্যা তোর ভাই যা পারে ওকে নিয়ে করেছি।
জামাইবাবু- এ ভাই সব জমি চাষ হয়ে গেছে তোর তো আর পড়াশুনা হলনা।
আমি- না কি করে করব টাকা পাবো কই তাইত মাকে নিয়ে যা পারি তাই করি।
মা- এস ঘরে এস বলে ভাগ্নিকে নিয়ে ঘরে গেল।
আমি দিদি জামাইবাবু সবাই ঘরে গেলাম।
মা- বলল আমার তো দুইদিন খুব জ্বর গেছে সব তোর ভাই করেছে, সে অনেকজ্বর হয়েছিলো।
দিদি- এখন সুস্থ আছ তো মা খেতে পারবে।
মা- হ্যা তোর বাবা চলে জাবার পরে কালকে একটু মাংস এনেছিল তাই খেয়েছি, তিঞ্চারদিন মাছ ধরতেও যেতে পারেনা।
দিদি- মা আমি রান্না করে নিয়ে এসেছি সবাই মিলে খাবো। তুমি স্নান করেছ।
মা- না জমিতে গেছিলাম তো এইত যাবো স্নান করতে। বাবা তুই বস আমি স্নান করে আসি।
আমি- না ওরা বসুক আমরা স্নান করে আসি চলো একসাথে স্নান করতে যাই। দিদি যা তুই জামাইবাবু ভাগ্নিকে নিয়ে ঘরে বস আসছি আমরা বলে আমি আর মা পুকুরে স্নান করতে গেলাম।
মা- আজেক আর সাবান দেওয়া হল না যাই ওরা যখন আসছে গিয়ে স্নান করে দেখি মেয়ে মা এবং ভাইয়ের জন্য কি নিয়ে এসেছে। চলো ডুব দাও সময় নষ্ট করে লাভ নেই ওরা যদি না যায় তো কি হবে।
আমি- ঠিক তাই মা ওরা আসার আর সময় পেলনা চলো বলে দুজনে স্নান করতে করতে কথা বলতে লাগলাম।
মা- বলল কি ভাবছ কি করবে ভবিষ্যতে, যদি পেটে বাচ্চা এসে যায় তো কি করব ফেলতে গেলেও অনেক খরচা।
আমি- তুমি পাগল হয়েছে কেন ফেল্বো চলো যাবো আমরা, আমাদের ভবিষ্যৎ কেন নষ্ট করব। না মা সে আমি তোমাকে কোনদিন করতে দেব না। আমি যে তোমাকে নিয়েই বাকি জীবন থাকতে চাই সে আমাদের ছেলে হোক বাঃ মেয়ে হোক কোন অসবিধা নেই।
মা- যা মনের একটা বোঝা হালকা হলো চলো এবার ঘরে যাই। আর কোন কথা নেই ওরা না যাওয়া পর্যন্ত।
আমি-আ চ্ছা ঠিক আছে মা তবে ওই কথা আর কোনদিন বলবে না। মনে থাকে যেন।
মা- হুম ওঠ এখন বলে মা আগেই উঠে কাপড় পাল্টে নিয়ে আমাকে বলল আসো আর দেখতে হবেনা কি রকম ভাবে দেখে হাতে তো পাবে তাইনা, দেখার কি আছে।
আমি- উম বলনা মা দেখতে যে কি ভালো লাগে দেখবে বলে একটু উঠে দেখালাম আমার কলা কেমন সোজা হয়ে আছে।
মা- ফাঁকা হোক ঠান্ডা করে দেবো এখন আসো তুমি।
আমি- হুম বলে উঠে পরে প্যান্ট ছেরে মায়ের সাথে বাড়ির দিকে গেলাম।
মা- দাও বারান্দায় দিতে হবে বাইরে দিয়ে আসি রোদ আছে বলে আমার প্যান্ট আর ওনার শাড়ি সব নিয়ে তারে দিয়ে চলে এল ঘরে। তারপর ভাগ্নিকে কোলে নিয়ে দিদিভাই আমারা গরীব তো কারেন্ট নেই তোমার কষ্ট হচ্ছে তাইনা। বলে হাত পাখা নিয়ে নাতিন কে হাওয়া করতে লাগল।
দিদি- মা এস তবে আমরা সবাই খেয়ে নেই মাংস রান্না করে নিয়ে এসেছি। বলে নিজেই থালা বাসন নিয়ে বসে পড়ল। তারপর সবাই মিলে খেলাম।
আমি- দিদি খুব সুন্দর রান্না করেছিস, তাইনা মা।
দিদি- আসলে আমাদের খেতের মুরগী বুঝলি ভাই তুই ও তো একবারের জন্য গেলি না। ভেবেছিলাম যাবি।
আমি- দেখ দিদি মায়ের এত মন খারাপ মাকে ছেরে আমি কোথাও জাইনা জমিতে ছাড়া তাও মা সাথে যায় কেন বুঝিস না।
দিদি- বাবাকে এমনভাবে হারাতে হবে ভাবি নাই ভাই, ভেবেছিলাম তুই পড়াশুনা করে একটা চাকরি পাবি মা বাবা ভালো থাকবে, সেই তুই বাবার মতন চাষি আর জেলে হয়ে গেলি তাইনা, তা কামাই কিছু করতে পারিস তো।
আমি- হ্যা ঐযে মাছ ধরি পিন ধরি বিক্রি করি যা পাই আমার আর মায়ের চলে যায়, এই কয়দিন ভালই পেয়েছিলাম, তাই মাকে শাড়ি কিনে দিয়েছি।
দিদি- আমাদের তো বুঝিস জমিজমা বেশী সময় পায়না একদম আজকে তো বলে কয়ে নিয়ে এলাম থাকতে পারবোনা চলে যেতে হবে। বিকেলে। তোরা কবে যাবি তাই বল মাকে নিয়ে তুই যাবি।
জামাইবাবু- হ্যা ভাই আমাদের ওখানে গেলে মায়ের মনটা ভালো লাগবে। মাকে নিয়ে একটু ফাঁকা হলে চলে এস আমাদের ওখানে। মা মামনীর সাথে থাকলে মায়ের ভালো লাগবে, এত বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেল তুমি তো বাড়ি ছিলেনা। অদিকের কি করেছ , সব কিছু নিয়ে এসেছ নাকি আর জাওনি।
আমি- না গেলাম কই তবে যাবো এইত ধান ফেলা হয়ে গেছে কয়দিন কাজ করে টাকা পয়সা তেমন নেই তো তারপর যাবো ওখানে কিছু টাকাও বাকি আছে দিয়ে সব নিয়ে চলে আসবো। একবার বাবা গেছিল আমার সাথে আর কেউ তো যায়নি।
জামাইবাবু- তাই কর ভাই মাকে একা রেখে থাকবেনা। সকালে গেলে বিকেলে চলে আসবে কেমন। মা ভাইকে নিয়ে যাবেন তো।
মা- দেখি এতদিন ছেলে কিছু তো ভালো মতন বোঝেই না সব শিকিয়ে নিতে হচ্ছে আমার, ওর বাবাঃ তো চাইত না ছেলে এইসব কাজ করুক, কিন্তু বাধ্য হয়ে ওকে করতে হচ্ছে পারেনা ভালো করে তবে আমি সব শিখিয়ে দিয়েছে এবার পারবে।
জামাইবাবু- কিরে ভাই সব ঠিক মতন পারছিস তো, দেখিস মাকে কষ্ট দিস না এখন বাবা নেই কিন্তু।
দিদি- পারবে কেন পারবেনা আমার ভাই বোকা নাকি মাকে নিয়ে থাকতে পারবে। হ্যা ভাই বাবা নেই তুই ছাড়া দেখবে কে মাকে, অল্প বয়সে বিধবা হয়ে গেছে মা। তুই ছাড়া কে দেখবে মাকে।
মা- না না আমার ছেলে আমার খেয়াল রাখে এই দুই দিনের জ্বরে আমার যা সেবা করেছে আমি ঘুমিয়ে থাকলেও আমার ছেলে একটু ঘুমায়নি সব আমি টের পেয়েছি, আমাকে নিয়ে তোদের ভাবতে হবেনা, আমার ছেলে আছে। এই বাবা আর দেবো দিদি রান্না করে এনেছে।
আমি- না মা আর লাগবেনা, তুমি জমাইবাবুকে দাও, এই মা তুমি আর খাবে।
দিদি- না না এমনিতে পেট ভালোনা মেয়ের আর দিতে হবেনা যা থাকবে বিকেলে তোমরা খাবে, আমাদের হয়ে গেছে।
এবার আমরা উঠে পরি বলে সবাই উঠে পড়লাম।
মা- এই তুই যা আমি সব ধুয়ে আসছি।
আমি- দেখ দিদি মা জ্বর থেকে উঠেছে আমাকে করতে দেয়না ওনার শরীর দুর্বল তবুও কেমন করে।
দিদি- না ভাই যা আমি মায়ের সাথে ধুয়ে আসছি তুই যা জামাইবাবুকে আর ভাগ্নিকে নিয়ে বস।
আমি- আসো মা বলে ভাগ্নিকে কোলে নিয়ে গেলাম আমার ঘরে, এখনও বিছানা পাতা, দেখেই ভাবলাম ইস দেখ কেমন মাল পরে আছে বলে বিছানার চাদর তুলে আরেকটা ছিল পেতে ভাগ্নিকে নিয়ে বসলাম। পরে জামাইবাবু এল।
জামাইবাবু- ভাই দেশলাই আছে দাও তো একটু সিগারেট খেয়ে আসি।
আমি- আছে বলে বের করে দিলাম, আর বললাম দিদি রেগে যায়না।
জামাইবাবু- আরে ভাই বলনা কি বলব শালাবাবু তুমি সিগারেট খেলে কাছেই যেতে দেয়না কি করব একটু না খেলে হয় তুমি বলো, না আমি রাস্তায় যাই বলে চলে গেল দেশলাই নিয়ে।
দিদি- চলে এসে গেল কইরে।
আমি- গেছে একটু বাইরে।
দিদি- আমি জানি সিগারেট খেতে গেছে পারলাম না জানিস ফেরাতে কি যে করি। শ্বশুর বাড়ি এসেও খেতে হবে ওনার আসুক হবে ওর। এত বারন করি কে কার কথা শোনে, এই তোর আবার নেই তো নেশা।
আমি- না না ওসব আমি খাইনা আর টাকা পাবো কোথায় একটার দাম ৬ টাকা কম নাকি।