সুন্দরবনে মা ও ছেলের জীবনের গল্প - অধ্যায় ৬
আমি- মা ইচ্ছে করলেই কি সব পারা যায় বাবা বাবাই হয় আর আমি ছেলে কি করে সব পারবো বাবার মতন আমার কি অভিজ্ঞতা আছে। তবে তুমি শিখিয়ে দিলেই আমি পারবো।
মা- এইত আমি তো আছি বাবা ভাবনা কিসের আমরা মা ছেলেই থাকবো আর কাউকে দরকার নেই কি বলো তুমি। আমি তোমাকে চাষবাস সব শিখিয়ে দেবো, তাছাড়া তোমার কিছু জানতে চাইলে আমাকে বলবে আমি সব শিখিয়ে নেবো।
আমি- মনে মনে ভাবলাম মা কেমন কথা বলছে আর কিছু সময় আগে থেকেই বলছে তারমানে মা আমার সোনা দেখার পর থেকে কেমন কথা বলছে আমি কি ঠিক ভাবছি না মা এমনি বলছে। কি জানি দেখি তবে তো আরেকটু ঝালিয়ে নিতে হবে। আমি ওমা চল এবার আবার শুরু করি।
মা- আরেকটু সোনা এখনও হাত ঝিম ঝিম করছে তোমাদের মতন কি আমরা পারি। আমার বয়স হয়েছে না।
আমি- মা কি যে বল, আমি যেখানে থাকতাম একটা মেয়ে তার এখনও বিয়ে হয়নি ওই দাদু বলছিল ওর বয়স ৩৬ বছর আর তোমার কত মা।
মা- আমার ওই কত হবে ৩৭/৩৮হবে।
আমি- তবে তুমি বল তুমি বলছ তোমার বয়স হয়ে গেছে।
মা- হেঁসে দিয়ে শহরের কথা বাদ দাও তুমি আমরা গ্রামে আমার বিয়ে হয়েছে ১৭ বছর বয়সে আর ওর এখন ৩৬ এখনও বিয়ে হয়নি ওদের সাথে আমাদের তুলনা করলে হবে। আমার মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে নাতিন হয়ে গেছে আর ওর বিয়েই হয়নি।
আমি- দেখ মা আমি ওই মেয়েকে দেখেছি তোমার থেকে বয়স বেশী হবে মনে হয়।
মা- কি যে বল তুমি তোমার কথা আগা মাথা কিছু বোঝা যায়না। দেখতে কেমন ওই মেয়ে, কি বিয়ে করবে নাকি ওকে।
আমি- ধুর কি বলে মায়ের বয়সী মেয়ে তাকে বিয়ে করব আমি। তোমার আর ওর বয়স তো প্রায় একই তাইনা।
মা- ঐযে ওই পারার কালু বইয়ে করেছে তেমন একজন টাকা ওয়ালা ঘরের মেয়ে, বয়সে অনেক বড়, কি হয়েছে ওদের বাচ্চাও হয়েছে।
আমি- না বিয়ে করে তোমাকে আমি কষ্ট দিতে পারবোনা শুধু তুমি আর আমি থাকবো আর কাউকে দরকার নেই।
মা- আমার পাগল ছেলে কি বলে বয়স হলে বিয়ে করতে হবেনা। আমি নাতি পুতির মুখ দেখবোনা।
আমি- কেন সে তো দেখা হয়ে গেছে দিদির মেয়ে আছে না।
মা- না না মেয়ে সে তো মায়ের খোঁজ নেয়না ওদের কথা বল্বেনা আমাকে, এতবড় একটা দুরঘটান গেল কই ওদের কোন খবর আছে এসে যে চলে গেল আর কোন খবর নিল। আমার ছেলে ভালো বলে আমি বেঁচে আছি ওদের দরকার নেই আর আমার। আমার তুমি থাকলেই হল।
আমি- ভাবলাম মা হঠাত আমাকে তুমি বলল কারন কি এর আগে কোনদিন বলেনি। তবে মা তুমি আমাকে ওই কি যেন ওর নাম মনে নেইওর মা এসেছিল ওর মতন কোন সময় ভাব্বে না আমি আমার মায়ের কাছেই থাকবো। মাকে ছেরে যাবনা। তুমি আমাকে সব বুঝিয়ে বলবে তাহলেই হবে এইযে আজকে বলেছ এসেছি এমন সব বলবে মা আমাকে।
মা- সোনা আমিও চাই তুমি আমার কাছে থাকো সব সময় তোমার বাবা যে নেই কাকে নিয়ে থাকবো আমি তুমি ছাড়া। এস এবার বাকিটা কাজ শেষ করে নেই নাও ধর গামাছা ঠিক করে নাও ভালো করে। ঐ দিদি এসেছিলো তুমি ঠিক মতন বসতে পারোনি।
আমি- না মা ঠিক আছে কিছু হবেনা ধর তুমি বলে আবার জল সিচতে শুরু করলাম। আর ভাবতে বললাম মা আবার গামছার কথা বলল। সারাদিনে একবার বলল না আর এই শেষ সময় বলল। দেখি মা তোমাকে আরেকবার দেখাব। বলে জোরে জোরে জল সিচতে শুরু করলাম। কিছু সময় টান্তেই জল একদম কমে এল ভালো করে জাল এসেও পারছেনা।
মা- দাড়াও জল আসুক হয়ে তো গেছে তাই না।
আমি তবে মা তুমি একটা গামলা নিয়ে এস আমি ফাকে মাছ ধরে নেই বলে বেড়িয়ে গেলাম জমির ভেতরে।
মা- চলে গেল গামলা আনতে।
আমি- ভেতরে দিয়ে হাত দিয়ে যেখানে একটু ডোবা সেখানে হাত দিয়ে হাতাতে মাছ পেলাম ল্যাঠা মাছ। খুব লাফায় দুটো দুই হাতে ধরলাম রাখা যাচ্ছেনা তাকাতে দেখি মা গামলা নিয়ে আসছে। আমি আরো দেখে একবারে আরো ধরার চেষ্টা করলাম কিন্তু হাত থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছে। তাই আবার ধরে গামছার এক দিকে মুখ বেঁধে নিয়ে গামছার ভেতরে রাখলাম। এক হাতে ধরে ধরে বেশ বড় বড় ল্যাঠা পেলাম। মা আসতে আসতে ৫/৬ টা ধরে গামছায় ভরে নিলাম।
মা- আমার কাছে আসতেই আমি গামছা তুলে বললাম নাও। মা অমনি হাত দিয়ে একটা একটা করে ধরে গামলায় রাখতে গেল। সেখান থেকেও লাফ দেয় খুব ধ্রত মাছ তো। মা ধরে নিতে নিতে বলল বাঃ বেশ বড় বড় মাছ তো। বৃষ্টিতে সব ডুবে গেছিল তো তাই এসেছে। বলে আবার নিতে লাগল। একটা একটা করে নিতে নিতে শেষে আবার হাত দিল আর আছে নাকি বলে সোজা আমার লাঠাটা ধরে ফেলল।শোল মাছের মতন দাড়িয়ে ছিল আমার ল্যঠাটা।
আমি- লজ্জায় সরে গেলাম ইস বলে কি করছে বলে আসলে সেই দুপুর থেকে না সকাল থেকেই আমার ল্যাঠা দাড়িয়ে আছে। এখন বুঝতে পারলাম আমার মায়ের আমার ল্যাঠা ভালো লেগেছে।
মা- খুব লজ্জা পেল। আর বলল সত্যি আমি বুঝতে পারি নাই আর নেই ঠিক আছে আরো কিছু ধরবে নাকি।
আমি- বললাম চলো মা জল জমে গেছে দেখ বের করে দিয়ে জমি একটু সমান করে দেবো। কালকে এসে আঁচরা দিয়ে ধান বুনে দেবো।