ট্যাবু ১ - নিজেরে হারায়ে খুঁজি - নতুন পর্ব ছয় - পেইজ পনেরো - অধ্যায় ১২

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-48651-post-5456678.html#pid5456678

🕰️ Posted on December 28, 2023 by ✍️ nandanadasnandana (Profile)

🏷️ Tags:
📖 3714 words / 17 min read

Parent
                                                                পর্ব ছয় আগের পর্বের কিছু অংশ..................... আমি দেখছিলাম ইভান কে। সেই ছেলেটা আমার। ওকে আমি বাচ্চাদের মতন ট্রিট করি বলে মুখ ভার করে থাকত। আর এখন? সত্যি কেমন বড় হয়ে গেল ছেলেটা। এই দুমাসে মৃত্যুর সাথে যুঝতে যুঝতে যেন কঠিন হয়ে গেছে ছেলেটা। হলুদ চুল লম্বা হয়ে ঝাঁকড়া হয়ে আছে মাথায়। গালে হলুদ দাড়ি বেরিয়েছে অল্প অল্প। লম্বা হয়েছে বেশ। আর এই দুইমাসে দৌড়াদৌড়ি করতে করতে গায়ে হাতে পায়ের সেই নমনীয়তা আর নেই।  ও বলে চলেছে লিও কে বিজ্ঞের মতন, -       বুঝলে লিও, তোমাকে বলে রাখি। মা তুমিও শোন, ওরা সাধারণত, সাত দিনে একবার শরীরের খোলস ছাড়ে। সেটা হয় শুক্রবার এ সাত আট ঘন্টা। কাজেই বৃহস্পতিবারে আমাদের সব থেকে বেশী সাবধানে থাকতে হবে। ওই দিনে ওদের শরীরের উপরে কোটিং টা সব থেকে বেশী শক্ত থাকে। আর সব থেকে নরম থাকে শুক্রবার সন্ধ্যের পর থেকে। যাই হোক ওদের হাত আর পা থেকে আমাদের কে বাঁচতে হবে সব সময়ে। আমি হাঁ করে ওর দিকে তাকিয়ে শুনছিলাম ওর কথা। দেখছিলাম ওকে। ও আমার দিকে তাকিয়ে হাসল। আমিও হেসে সরিয়ে নিলাম চোখ টা। মায়ের নজর সবার আগে লাগে। দেখলাম ও লিও কে কিছু বোঝাচ্ছে। আমি অন্য দিকে ফিরে কাচার কাপড় চোপর নিয়ে ব্ল্যাকের দিকে এগিয়ে গেলাম। কিছু সময় আছে এখনো। কাপড় গুলো কেচে মেলে দেব। কালকে সকালে তুলে নেব। মন টা কেমন একটা ভয়ের থেকে মুক্তির আভাসে আনন্দিত। মনে হলো মরন ভয় টা কেটে গেছে কিছু টা হলেও। একটা সময়ে সবাই শেল্টারের ভিতরে ছিল আমি একলা কাপড় ধুচ্ছিলাম বাইরে ব্ল্যাকের জলে। কিন্তু মরণ ভয় পাই নি। জানিনা সেটা ইভানের উপরে আমার ভরসা বেড়ে যাবার কারণে নাকি আমাদের সাড়া বাড়ি জুড়ে ঘন্টা গুলো কে টাঙ্গিয়ে দেবার জন্য। যে কিছু হলে ইভান ছুটে আসবে। শুনতে পেলাম ও লিও কে বলছে, -       একদিকে ব্ল্যাক আছে। আমাদের বাকী তিন দিক ঘিরতে হবে। আমি এখন সামনের দিক টাই ঘিরলাম। কারণ শেরিংহাম দের দিকে ওদের বাড়ি আছে। কংক্রীটের বাড়ি। ওরা ভেঙ্গে আসতে পারবে না। আর আমাদের বাম দিকে আছে কলা গাছের বন। ওরা হয়ত কোনদিন ট্রাই নিয়েছিল ওদিকেও। কিন্তু কলাগাছ এ থাকা জলের জন্য ওদিক দিয়ে আর আসে না। মূলত আমাদের এই দিক টা আরো এমন ঘন্টা এনে গার্ড দিতে হবে তাহলে বাড়িতে আমরা অন্য সময়েও এক শেল্টার থেকে অন্য শেল্টার এ যাতায়াত করতে পারব বুঝলে লিও?  যাই হোক রেডিয়ো থেকে শুক্রবারের জন্য কোন এনাউন্স হলো না। মনের মধ্যে একটা কিন্তু রয়ে গেল আমার। মা বোঝালো, হয়ত লোক নেই ট্রেন চালানোর জন্য। কিন্তু আমার মন মানছে না। আমার অর্ধেক পরিবার সেখানে পরে আছে। রাত্রে ইভান ছিল আমাদের কাছে আমার কোলে মাথা রেখে। ওকে আমার ভয়ের কথা বলতেই ও উঠে বসল। বলল, -       মা তুমি রেডিয়ো শুনো না আর। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে। ও মনে হয় বুঝল আমার কথা, বলল, -       না মানে, তোমাকে বলিনি তুমি চিন্তা করবে ফালতু তাই। -       কি হয়েছে? কি বলিস নি তুই আমাকে? -       বলছি, আমি ভোর বেলায় বেরোই, তাই দু একজনের সাথে দেখা হয়। সেদিনে ওরাও ট্রেন ধরতে পারে নি। আমাদের ই মতন ওরা বেঁচে গেছে আর ফিরেও এসেছে। আমার কেমন একটা বুকচাপ মনে হলো নিজের। কি বলতে চাইছে ইভান? আমি ওকে উঠিয়ে দিলাম কোল থেকে বললাম, -       কি হয়েছে আমাকে বলতো তুই ঠিক করে। ও আমতা আমতা করে বলল, -       না মানে, আমাদের চিন্তার কিছু নেই। সেদিনে এখান থেকে ছেড়ে যাওয়া দুই নম্বর ট্রেন টা কে ম্যানকুশ রা আট্যাক করেছিল। কিন্তু তুমি তো বলেছিলে বাবা মালিয়া আর কীট ওরা তিন নম্বর ট্রেনে ছিল। আমার তাতেও ভয় গেল না। বললাম, -       হ্যাঁ ওরা তিন নম্বর ট্রেনে ছিল। আগের দুটো ট্রেনে মারাত্মক ভিড় ছিল। কিন্তু তোকে কে বলল যে দুই নম্বর ট্রেনে এট্যাক হয়েছিল? ও কি ভাবে জানল সেটা। -       তুমি চিনবে না ছেলেটা কে। আমাদের থেকে দুই ক্লাস সিনিয়র ছিল। ও আর ওর দিদি কোনরকমে বেঁচে গিয়ে, আমাদের আগে যেটা ফুড সাপ্লাই অফিস ছিল, সেখানে একটা বেসমেন্ট এ আশ্রয় নিয়েছে। সেদিনে পল সবাই কে তুলতে গিয়ে নিজে উঠতে পারে নি তিন নম্বর ট্রেন এ আর ওর দিদির পা ভেঙ্গে গেছিল তাই সেও চড়তে পারে নি। ও বলল রেডিয়ো তে বলেছে নাকি এই ঘটনা সেই রাতে আর পরের দিনের রাতে। -       কই আমরা শুনিনি তো? -       কি করে শুনব? সেই রাতে আমরা জলায় ছিলাম দাঁড়িয়ে। আর পরের রাতে রেডিয়োতে ব্যাটারি ছিল না। দুই নম্বর ট্রেন এট্যাকড হয়েছে বলে আমি তোমাকে বলিনি। কারণ সেই ট্রেনে বাবা মালিয়া কীট ছিল ও না আর তুমিও ফালতু চিন্তা করবে সেই জন্য। -       কিন্তু তিন নম্বর ট্রেন তো অই অকুস্থল পার হয়েই যাবে। সামনের ট্রেন টা না গেলে পিছনের ট্রেন পৌছবে কেমন করে? -       পৌঁছেছে মা, রেডীয়ো তে বলেছে সেটা। সেই শেষ রেডিয়ো তে কিছু বলেছে, তার পর থেকে আর কিছু বলে নি। জানিনা এই কাহিনী কোন মা পড়লে তার মনের অবস্থা কেমন হবে? আমি জানিনা কি ভাবে আমি আমার বাকি পরিবারের সাথে আবার এক হব? আমরা কি আর কোনদিন এক হতে পারব না? খেপে খেপে দীর্ঘশ্বাস নেমে আসে আমার। দেখাই না কাউকে আমার এই উদ্বেগ। নিজেরা বেঁচে থাকলে আমি সবাই কে আবার এক জায়গায় করবই এই আমার পণ। জানিনা ঈশ্বর আমাদের ই কেন বাঁচিয়ে রাখলেন? দিন যায় পেরিয়ে। ব্যাথা, কষ্ট সব কমে আসে সময়ের সাথে। আমাদের ও আসতে আসতে সেই হারিয়ে ফেলার কষ্ট কমে আসছিল সময়ের সাথেই। ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকার চাপ ই এমন মারাত্মক যে, চাপ না কমলে নিজের মনে মনে সেই কষ্ট পেয়ে, আমার জীবনে তাদের গুরুত্ব কে মনে করাই যায় না। আমাদের ও তাই হচ্ছিল। আর যতই মরণের আতঙ্ক বাড়ছিল আমরা একে অপরের আরো কাছা কাছি চলে আসছিলাম। রোজ ই রেডিয়ো অন করে রাখি আমি। যদি কিছু বলে। যদি কিছু শুনতে পাই। কিন্তু হয়ে গেল গত পনের দিন কোন খবর নেই। এদিকে মৃত্যুর মাঝে চলতে থাকে আমাদের জীবন। একদিন মাঝে লিও আর ইভান মিলে আরো কিছু এমন লোহার পিলার আর ঘন্টা এনে বেঁধে ফেলল। আমি যত দূর জানি তাতে এতে এমন নয় ওরা এখানে আসতে পারবে না, কিন্তু আমরা আকস্মিক আক্রমণ এড়িয়ে যেতে পারব। সেটার পরিচয় আমরা পেয়েও গেলাম এক দুই দিনের মধ্যেই। এদিকে ট্রেনের আশা আর নেই আমরা জেনে গেছি। আমরা সবাই মিলেই প্ল্যান করছিলাম, এমন এক শুক্রবারে আমরা ভর বেলায় হাঁটতে শুরু করলে পঁচিশ কিমি দূরে আটলানায় আমরা পৌঁছে যাব যে ভাবে হোক। আমার মা ও রাজী হয়েই গেছে। আমাদের কাছে কোন ক্যালেন্ডার ও নেই, যে আমরা ডেট আর দেখতে পারছি। তবে এটা বুঝতে পারছি যে আমাদের সামনে এখন শীত আসছে। ভোর বেলায় স্নানের সময়ে আমি বুঝতে পারছি, ব্ল্যাকের জল আর সেই রকম উষ্ণ অভ্যর্থনা করে না। কাজেই শীতের আগে আমাদের পৌঁছে যেতেই হবে আটলানায়। না হলে এদিকে খাবার দাবারের সমস্যা একটা বিশাল সমস্যায় পরিনত হবে। আমরা হয় ম্যানকুশ দের হাতে নিহত হব না হলে না খেতে পেয়ে মারা পরব। ইভান আটলানায় পৌঁছনর সব রকম চেষ্টাই করছে। শুধু লিও কে দেখি কেমন একটা গা ছাড়া ভাব। লিও মধ্যে মধ্যেই আমার দিকে বিশ্রী ভাবে তাকিয়ে থাকে। আর আমার সাথে চোখে চোখ পরে গেলে একটা ইঙ্গিতপূর্ণ হাসি দেয়। ঘেন্না লাগে আমার। আসলে ক্যারোল থাকার সময়ে কেউ কোনদিনেই আমাকে এই নজরে দেখেনি। শক্তিশালী পুরুষের নারী বা বউ হওয়ার এই সুবিধা ইকারা তে। তার দিকে কেউ তাকায় না। আর আমিও কোন পুরুষ কে সেই চোখে দেখেছি বলে আমার মনে পরে না। তাই লিওর তাকানো তে কেমন একটা গা ঘিন ঘিন করে আমার। ক্যারোলের কথা খুব মনে পরে তখন। ও থাকলে কারর সাহস ও হতো না আমার শরীরের দিকে নজর দেবার। আর ইভান হয়ত ব্যাপার গুলো বোঝে না। আর আমি ইভানের থেকে আশাও করতে পারি না যে ও এই নিয়ে লিও কে কিছু বলবে। আমার মা বুঝতে পারে। কিন্তু পরিস্থিতি এমন যে এই সময়ে এই সব ব্যাপারে কিছু আগ বাড়িয়ে বলতে যাওয়া ঠিক নয়। এই পুরো ইকারা তে আমরা ছাড়া আর একটা পরিবার আছে মাত্র। এই সময়ে মানুষের থেকে আপন আর তো কিছু নেই। তাই আমিও কিছু বলি না। কিন্তু বুঝিয়ে দি আমি অপছন্দ করছি। কারণ আজ নয়তো কাল আমি ক্যারোলের কাছে আবার যাব। আমি ক্যারোলের ছাড়া আর তো কারোর নই। কিন্তু লিওর ওই নজর মাঝে মাঝেই আমাকে একটু হলেও নড়িয়ে দেয়।লোকটা বিশাল দেহী।পুরুষালী। ইকারা মেয়েরা এমন পুরুষ পছন্দই করে। কিন্তু ক্যারোল ছাড়া অন্য পুরুষের নজরে কতখানি বিষ থাকে আমি জানতাম না। এখন সেটা বুঝতে পারি। আমার মতন মাঝারী শরীরের নারীর দেহ কারোর মনে কামের সঞ্চার করবে এ আমি ভাবিনি। আসলে মানুষ যেটা জানে না সেটা জানেই না। আমার মতন ইকারা মেয়েরা যারা সারাজীবন সংসার করেই যায় তাদের কাছে এই রকম অন্য পুরুষের চাউনি বিশেষ সহ্য করতে হয় না। কিন্তু আজকে সেই চাউনি প্রতি মুহুর্তে পেয়ে আমার শরীরে কেমন একটা অদ্ভুত শিহরণ জাগে সেটা বলে বোঝাতে পারব না আমি। আমার ভিতরে একটা অদ্ভুত অস্থিরতা তৈরি হয়। শরীরে একটা চুলকুনি জাগে। বুকের বোঁটা খাড়া হয়ে যায় সাথে সাথেই। এই জন্য নয় যে লিও র সাথে শুয়ে পরতে চাই।ক্যারোল বাদে আমার যে কোন পুরুষেই একটা ঘেন্না আছে। সেটা আমার মানসিক ব্যাপার। তাই কাম জাগলে আমার ক্যারোলের জন্য মন খারাপ করে। সাড়া জীবন প্রায় প্রত্যেক দিন আমরা মিলিত হতাম। আমি তো ভুলেই থাকতে চাই ক্যারোলের সাথে আমার প্রতি রাতের উজার হবার কথা। কিন্তু লিওর নজর আমাকে সেটা ভুলতে দিচ্ছে না। প্রতি রাতেই শুয়ে পড়ার আগে ক্যারোলের সাথে আমার শারীরিক সম্পর্ক রোমন্থন আর লিওর নজর এই দুইয়ে মিলে আমি ভিজেই যাই বিশ্রী ভাবে। সেদিন ও শুক্রবার ছিল। ঠিক ছিল ক্যারোল আর লিও বের হবে কিছু মুরগী জোগাড় করে আনবে। কারণ আজকের দিনে ওরা সাত আট ঘন্টা বেরোয় না। ভোর বেলায় আমি স্নান করছি। এতো ভোরে না তো ইভান ওঠে না মা ওঠে। আর লিও ও ওঠে দেরী তেই। গত একমাসের নিয়মে আমি সকালে স্নান করি। এখন ভয় টা আর লাগে না। কারণ এই সময়ে গত একমাসে আমি কোনদিন ও ম্যানকুশ দের দেখিনি। কাজেই আমি বিনা ভয়ে স্নান করি এই সময়ে। আজকে স্নান করে উঠতে যাব আর সহসা দু তিনটে ভারী লোহায় লোহায় ঠেকে যে আওয়াজ হয় সেই আওয়াজ পেতেই পিছনে ঘুরে দেখি সব থেকে বাইরের লোহার পিলার দুটো মাটিতে পরতেই ঠং ঠাং করে আওয়াজ হলো বেশ আর সাথে সাথেই দুটো পিলারের মাথার থাকা ঘন্টা দুটো মাটিতে পরতেই বেজে উঠল বেশ জোরে। সাথে সাথেই আশ পাশ থেকে পোকা কিলবিলিনির আওয়াজ টা হতে শুরু করল মারাত্মক ভাবে। ততক্ষণে আমি দেখে নিয়েছি একটা না অনেক গুলো ম্যানকুশ হয়ত বা ঢুকতে যাচ্ছিল, কিন্তু লোহার পিলারের ঝনঝনানি আর ঘন্টা ধ্বনী তে কেমন একটা কুঁকড়ে গেল ওরা। এগোতেই আর পারছে না। বিশ্রী সেই পোকা কিলবিল আওয়াজ টা করতে করতে অবশ হয়ে মাটিতে প্রায় শুয়ে পরল সবাই। আমিও মনে হয় খেই হারিয়ে ফেলেছিলাম। কারণ বুঝতে দেরী করে ফেলেছিলাম, এই টুকু সময় পাওয়া গেছে, এর মধ্যে আমি শেল্টার এ ঢুকে না পরলে আর বাঁচব না। ঘন্টা ধ্বনীর অনুরণন কমে গেলেই ওরা আবার ঠিক হয়ে যাবে। আমি ততক্ষণে ইভান কে জোরে ডাকতে শুরু করেছি। কিন্তু আমি জানি ওদের শেল্টার বন্ধ আছে। ওরা শুনতে পারবে না বলেই মনে হয়। ভয় লেগে গেল আমার। কারণ আমাদের শেল্টারের দরজা টা খোলা আছে আমি বের হবার পরে। কিন্তু আমি প্রানপণে চিৎকার করে চলেছি। সামনে দেখছি যে ওরা এগোতে চেয়েও এগোতে পারছে না। কারণ এগোতে গেলেই কোন না কোন পিলারে ধাক্কা খাচ্ছে আর তাতেই ঘন্টা বেজে উঠছে আর ততই ওই শয়তান গুলো কুঁকড়ে যাচ্ছে। মনে মনে ভাবছি ইভান এর প্ল্যান টা বেশ কাজে লেগেছে। আমি বুঝলাম সময় পেয়ে যাব, তাই কোন রকমে ভিজে কাপড়েই উর্ধশ্বাসে দৌড়ে নিজের শেল্টার এর কাছে আসতেই ঢং করে আওয়াজ পেলাম। ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে দেখলাম ইভান , ওর ওয়াগনের ভিতর থেকে ছোট্ট জানালা নিয়ে গুলতি দিয়ে মারল। আর ওই আওয়াজে শয়তান গুলো আর ও কুঁকড়ে দূরে দূরে সরে গেল। সাথে সাথেই বেড়িয়ে এল লিও আর ইভান দুজনেই, হাতে গুলতি নিয়ে। ব্ল্যাকের ধার থেকে ছোট নুড়ি কুড়িয়ে নিয়ে ওরা গুলতি দিয়ে আঘাত করতে থাকল বার বার ঘন্টা তে। আমি ততক্ষণে পোশাক পরে বাইরে এসে দেখি, লিও আর ইভান একেবারে উঠোনের দাঁড়িয়ে ঘন্টা তে আঘাত করছে বারংবার। ঘেমে গেছে দুজনেই। কিন্তু দুজনেই বেশ মজা পেয়েছে। আর ও মজার ব্যাপার ওরাও ওই আওয়াজ সহ্য করতে না পেরে কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রায় খালি করে ফেলল জায়গা টা। আমি ভাবছিলাম, ইশ, এতো মানুষ মারা যাবার আগে কেন বুঝতে পারে নি কেউ যে এমন ভাবেও এদের কে জব্দ করা যায়। দেখলাম ইভান আর অপেক্ষা করল না। ওরা চলে যেতেই লোহার পিলার গুলো কে আবার পুঁতে ফেলল লিও কে সাথে নিয়ে। ঘন্টা গুলো কে আবার পিলার মাথায় আটকে দিল। আমার দিকে তাকিয়ে বলল, -       বুঝলে মা, এই রকম আরো পিলার এনে আরো দূর অব্দি পুঁতে দিয়ে আসব। আমি হেসে বললাম, -       কি হবে আবার পুঁতে? এই তো ভালই কাজ হলো। আমি আসলে ওর দিকেই তাকিয়ে ছিলাম। হয়তো কেউ ই বুঝবে না, একটা মায়ের ভিতরে কতখানি গর্ব প্রকট হয়ে সামনে চলে আসে, যখন তার ছেলে নিজের পরিবারের জন্য এতো টা ভাবে, তাও আবার এই বয়ঃসন্ধির দোর গোঁড়ায়। আমার কথায় পাত্তা দিল না ও। আমার দিকে তাকিয়ে বলল, -       কত ভাল হবে বলত, যদি আমরা সারাদিনেই এই ওয়াগনে বন্দী না থাকি। বাড়ির মতই থাকি আর ওরা আসলে দূর থেকে আমরা বুঝতেও পেরে যাব ওরা আসছে। ততক্ষণে আমরা শেল্টার এ ঢুকে পরতে পারব? লিও হাসছিল ইভানের কথা শুনে। কিন্তু আমার হাসি পাচ্ছে না। আমি তাকিয়ে আছি ওর দিকেই। বার বার আমি চমকে যাচ্ছি ইভানের প্রতিটা কাজ কর্মে। চমকে যাচ্ছি বলা ভুল, আমি বারংবার ইম্প্রেসড হচ্ছি। আর ততই মনে হচ্ছে সামনে যে হলুদ চুলের ছেলেটা দাঁড়িয়ে, ও এখন আর আমার ছেলে নয় শুধু ও আমাদের সবার রক্ষাকর্তা। বুঝে গেছি, আমি বাধা দিলে ও আর শুনবে না। গত কয়েকদিনের লড়াই ওকে মানসিক ভাবে অনেক মজবুত করে দিয়েছে। ইকারা পুরুষত্ব ওর মধ্যে বড্ড অল্প বয়সেই বাসা বাঁধল যেন। দিন যায়। ম্যানকুশ রা হয়ত বুঝে গেছিল আমাদের থেকে ওদের কোন বিপদ নেই আর। মানব জাতি কে প্রায় ধ্বংস করে ওরাই রাজত্ব করছে আমার ইকারা তে। আক্রমণ কমে গেল অনেক টা। এমন নয় যে আমাদের উপরে দয়া বশত আক্রমণ করছে না ওরা। আসলে ওরা এগতে পারছে না আর। কারণ আমরাও বের হওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলাম প্রায়। মানুষ জন না থাকার কারণে গত দুই তিন মাস আমাদের খাবার দাবারের অসুবিধা কিছু হয় নি। ব্ল্যাকের মাছ ছিল প্রভুত। লিও আর ইভান মিলে মাছ ধরত। আর মাঝে মাঝেই লিও আর ইভান বের হয়ে যেত হাতে ঘন্টা নিয়ে, অজস্র খোলা দোকান থেকে যেটা প্রয়োজন সেটা আনত। আমাদের সামনে মারা যাবার জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া কোন গতি ছিল না। বা সামনে ছিল বেঁচে থাকার তীব্র আকিঞ্চন। জীবনের সরলতা চলে গেছিল। যতই প্রাণের ভয় বাড়ছিল ততই আমার ইভানের উপরে নির্ভরতা ও বাড়ছিল। সেই নির্ভরতা বেড়ে গেল যেদিন অনেক দিন পরে রেডিও তে ঘোষণা করল একটা খারাপ খবর। রেডিয়ো বন্ধ হয়ে গেছিল বলতে গেলে। কিন্তু তাও শুক্রবারে আমরা শুনতাম রেডিও। আমি জানতান সেদিনে ম্যানকুশ রা বের হবে না আর। আর ইভান আর লিও মিলে পুরো বাড়ি টা আমাদের লোহার পিলার আর ঘন্টা দিয়ে সুরক্ষিত করে ফেলেছিল একেবারে। আমরা শুক্রবার উঠোনে বসে ব্ল্যাক থেকে ধরা মাছ পুড়িয়ে নুন মাখিয়ে খেতাম। হই হই করে স্নান করতাম সবাই মিলে। আমাদের হয়ে গেলে ইভান নামত জলে। আমাদের গার্ড দিত। আর রেডিও টা আমি চালিয়ে রাখতাম উঠোনে। শুনতাম কেউ কিছু বলছে নাকি। কিন্তু সেদিনে একটি মেয়ে প্রায় মাস দেড়েক বাদে রেডিওতে এলো। ইকারা তথা পুরো ট্রিভিয়া তেই লোক সংখ্যা প্রায় শেষের দিকে বললেই চলে। যা মানুষ জন ছিল সেটা ছিল আটলানা রিফিউজি ক্যাম্প এ আর আমাদের মতন এদিক ওদিক ছড়িয়ে। রেডিও তে বলল, আটলানার রিফিউজি ক্যাম্প এর উপরেও হামলা হয়েছে গত তিন চার দিন ধরে। আর প্রায় আশি শতাংশ মানুষ ই নিখোঁজ না হলে মারা গেছে। খবর টা শুনছিলাম তখন যখন আমি ওদের খাবার বানাচ্ছিলাম। জানিনা আমার মনে তেমন আর কোন প্রভাব ফেলল না। কেমন যেন মনে হচ্ছিল আমি মনে হয় স্বপ্ন দেখছি। বড়ো নিশ্চিন্তে ছিলাম আমি। যে আজ নয়ত কাল আমি পুরো পরিবারের সাথে আবার এক হবো। আবার মনে হলো এটা নিশ্চই কেউ মজা করছে। আমাকে ক্যারোল বলেছিল যে ওখানে ক্যাম্প বানানো হয়েছিল একটা পাহাড়ের গায়ে গর্ত কেটে সেখানে কোন ভয় থাকতে পারে না ম্যানকুশ দের। কিন্তু আমার রক্ত হীম করে দিয়ে মৃত দের উদ্দ্যেশে বলা কথা গুলো আমাকে একেবারে শেষ করে দিল। কিছু না হলেও শ পাঁচেক নাম বলছিল মেয়েটী এক এক করে। আর আমার বুকের ধুকপুকুনি বাড়ছিল অসম্ভব রকম ভাবে। ইভান দাঁড়িয়েছিল দূরে আমার থেকে। ও আসতে আসতে সরে এল আমার দিকে। হয়ত আমার মতন ইভানের ও সব থেকে কাছের মানুষের নির্ভরতা দরকার ছিল। ইকারা তে অনেক ইকারা পরিবার ছিল। মানে তাদের পদবীও ইকারা ছিল। একটা বিশাল নামের লিস্টের প্রথম দিকেই ইকারা রা ছিল। এক এক করে তারপরে, ইনারা দের নাম বলল ওরা। তারপরে শেরিংহাম দের নাম বলল। হয়ত আমরা দুজনাই একটু বেশী আসা করে ফেলেছিলাম। ক্যারোল ব্রুনোর নাম টা বলতেই মনে হয়েছিল আমার পায়ের তলার মাটি সরে গেল সেই সময়েই। ইভানের বলিষ্ঠ দেহ টা জড়িয়ে ধরার আগেই আমার হাঁটু কাঁপতে শুরু করেছিল। ইভান আমাকে ধরে নিল। আমার মা শেল্টার এর দরজায় দাঁড়িয়ে পরল এক চোখ জল নিয়ে। আমার কানে আর কিছুই আসছে না যেন। আমার জীবনের সর্বস্ব নিভে গেল এক পলকেই একেবারে। মনের মধ্যে আশা ছিল, কীট আর মালিয়া কে নিয়ে। কিন্তু নিখোঁজের তালিকায় ওদের নাম বলতেই আমি কেঁদে উঠলাম সর্বস্ব ভুলে গিয়ে। ইভান আমাকে জড়িয়ে ধরল সজোরে। এমন নয় যে আমার মনে বিশাল আশা ছিল , ক্যারোল, কীট আর মালিয়া খুব ভালো আছে ওখানে রিফিউজি ক্যাম্প এ। বা ওরা আদৌ আছে। কিন্তু মনের আশা মরে মরেও মরে না। তাই যেহেতু কোন খবর নেই তাই সবাই সুস্থ আর ভাল আছে এই আশাতেই আমার দিন কাটছিল। কিন্তু মন বলছিল, এতো বড় ইকারা তে একটা মানুষ ও বেঁচে নেই সেখানে সবাই ওখানে ভালো রয়েছে এটা ভাবলেও বুক আঁতকে উঠছিল আমার। তাই এই খবরটা আমি এড়িয়ে চলছিলাম যত টা সম্ভব। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না কোন ভাবেই। নিজের পায়ে আর কোন জোর ছিল না। যে মানুষ টার সাথে আমি কাটিয়েছি গত উনিশ বছর, সেই মানুষ টা আজকে আর নেই সেটা মনে করতেই মনে হচ্ছিল, এটা হয়ত আমি কোন স্বপ্ন দেখছি, কোন ভয়ঙ্কর স্বপ্ন, যেটা কোন ভাবেই শেষ হচ্ছে না। কোন ভাবেই সকাল হচ্ছে না, যে পিন্টো ঘুম থেকে উঠে আমার মুখে ছোট ছোট হাত দিয়ে বার বার মেরে আমার ঘুম ভাঙ্গিয়ে দেবে। চোখ খুলে আর চোখ বুজে সেই এক ই স্বপ্ন দেখে চলেছি আমি। জানিনা এই দুস্বপ্নের শেষ কবে।     এই পর্যন্ত পড়ে পড়া থামাল কিয়ারা। মনের মধ্যে কেমন একটা অদ্ভুত নিস্তব্ধতা। বুকের মাঝে একটা বিশাল পাথর যেন চেপে বসে আছে কিয়ারার। বার বার মনে হচ্ছে ওর, এগুলো কি সত্যি? নাকি সেই তিনশো বছর পুরোন সময়ের কোন এক মারাত্মক কল্পনাপ্রবণ এক মহিলার কল্পনার বহিঃপ্রকাশ এই ডায়রি সদৃশ বই খানা? নিজের ই অজান্তে ডায়রির পাতার কোন টা মুড়িয়ে ডায়রি টা বন্ধ করল কিয়ারা। বাইরে তাকাল ও। অন্ধকার ঘোর করে এসেছে। ব্ল্যাক এর জলে যেন কেউ কালো কালি গুলে দিয়েছে। অন্ধকারে ব্ল্যাক এর জল কে এতো ভয়ঙ্কর কোনদিন ও লাগে নি কিয়ারার। ডায়রি টাকে আলমারি তে সাবধানে রেখে বাইরে বের হয়ে এল কিয়ারা। কেমন একটা ঘোরের মধ্যে আছে কিয়ারা। চারদিকে আলো ঝলমল করছে বিশাল বাড়িতে কিন্তু মনে হচ্ছে একটা অন্ধকার চেপে বসে আছে চারিদিকে। গত কয়েক ঘন্টা মৃত্যুর যে বর্ণনা ও পড়ল তাতেই মন টা খুব ভয়ভীত। কিয়ারা ভেবেই চলেছে, এগুলো কি সত্যি? সত্যি ই যদি সবাই মারা গিয়ে থাকবে তবে এতো মানুষ আবার ইকারায় এলো কোথা থেকে। হতেই পারে অন্য জায়গা থেকে এসে এখানে বসবাস শুরু করেছিল সবাই আমার, কিন্তু তাঁরা ইকারা তো হবে না। সবাই টাইটেল ব্রুনো কি করে হবে? তার মানে তো একটাই যে, কিয়ারা রা ব্রুনো দের বংশধর। এর অর্থ হলো ডায়রি তে লেখা যে ব্রুনো দের গল্প চলছে, সেই ব্রুনো রাই আবার এখানে নতুন করে বসতি গড়ে তুলেছিল ম্যানকুশ পর্ব সমাপ্ত হয়ে যাবার পরে। নাকি কিয়ারা রা আলাদা ব্রুনো দের বংশধর। ততক্ষণে ও চলে এসেছে নীচে। দেখল রিলিয়া কোন কাজ করছে। কিয়ারা রিলিয়া কে জিজ্ঞাসা করবে এই ম্যানকুশ দের নিয়ে আজকেই। রিলিয়া সহজে কিছু বলতে চায় না। তাই একটু নাটক তো করতেই হবে কিয়ারা কে সেটা কিয়ারা জানে। কিয়ারা নাটক টা শুরু করে দিল এখন থেকেই। রিলিয়া কে সাড়া না দিয়েই গিয়ে বসল সোফা তে। রিলিয়া কিয়ারা কে একবার দেখে হেসে নিজের কাজে মন দিল। সারাদিন মেয়েটা ডায়রি টা পড়ছে। গোগ্রাসে গিলছে। কি যে লেখা আছে সেটা রিলিয়া জানে না। কারণ পড়াশোনা বিশেষ শেখেনি সে। কিন্তু এমন দামাল মেয়েটি যে একেবারে শান্ত হয়ে আছে সেটা নিয়ে তাতে বেশ মুগ্ধ রিলিয়া। কাজ করতে করতেই জিজ্ঞাসা করল, -       কি ব্যাপার ডার্লিং মুখ খানা গোমড়া কেন? সাড়া দিল না কিয়ারা। সেটা ইচ্ছে করেই, যাতে করে মম্মা একটু বেশী কেয়ার করে কিয়ারা কে। রিলিয়ার কাছে অবশ্য কিয়ারার এই হেন মুড পরিবর্তন টা বেশ স্বাভাবিক। তাছাড়া কিয়ারা বড় হচ্ছে, কাজেই মেয়েলী হরমোন জনিত মুড স্যুইং বেশ স্বাভাবিক। রিলিয়া ঘাঁটাল না বেশী কিয়ারা কে। কিচেন এ গিয়ে যে স্যুপ টা বানিয়েছিল সেটা সামনে রেখে দিল কিয়ারার। কিয়ারা প্যাঁচার মতন মুখ খানা করে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল। রিলিয়া প্রমাদ গুনল। বেশ ভয়ে ভয়েই জিজ্ঞাসা করল, -       আবার কি হলো সোনা? কিয়ারার সংক্ষিপ্ততম উত্তর ভেসে এল, -       কিছু না -       কিছু না মানে? তাহলে খাবে না কেন? -       ব্যস ইচ্ছে নেই। -       তুমি না এখানে এলেই এমন দুষ্টুমি শুরু কর। প্লিস খেয়ে নাও। -       নাহ খিদে নেই। রিলিয়া মনে হয় কিছু ভাবল একবার। পরক্ষনেই জিজ্ঞাসা করল, -       কিছু কি লাগবে? যেন কিছু একটা পেয়ে গেল কিয়ারা। হুড়ুম করে উঠে সোজা রিলিয়ার গলা জড়িয়ে ধরে বলল, -       হ্যাঁ লাগবেই তো !! রিলিয়া আড়চোখে কিয়ারা কে একবার দেখে নিয়ে হেসে বলল, -       বেশ সব টা স্যুপ খেয়ে নাও আগে। কিন্তু কি লাগবে সেটা তো আগে বল। -       কিছু ইনফর্মেশন লাগবে? রিলিয়া কিছু একটা ভেবে নিল। নিশ্চই মেয়ে ডায়রি থেকে কিছু জেনেছে আর সেটা জানবে ওর থেকে। ও হেসে বলল, -       বেশ , আমি যদি জানি তবেই বলতে পারব ,না হলে নয় কিন্তু।  এই বলে দিলাম। -       কিন্তু তুমি আমাকে কথা দাও যদি জান তবে অবশ্যই বলবে? না হলে আমিও খাব না। -       আচ্ছা আচ্ছা কথা দিলাম। খেয়ে নাও আগে। তড়িৎ গতিতে খেয়ে নিতেই রিলিয়া অবাক হয়ে গেল। যে মেয়েকে খাওয়াতে কালঘাম ছুটে যায় সেই মেয়ে চোখের পলক না ফেলতেই খাওয়া দাওয়া শেষ করে নিল এটা হজম হলো না রিলিয়ার। কিয়ারার দিকে তাকিয়ে রইল অবাক হয়ে। নিশ্চই জিজ্ঞাস্য কিছু আছে যেটা কিয়ারা কে সুস্থির হয়ে বসতে দিচ্ছে না। খাওয়া শেষ করেই ছুটে এসে রিলিয়ার কোলে বসে পড়ল কিয়ারা। হাসি মুখে বলল, -       মম্মা বলবে যা জিজ্ঞাসা করব? রিলিয়া একটু থেমে গিয়ে বলল, -       বেশ জিজ্ঞাসা কর, কি জিজ্ঞাসা করবে। খানিক চিন্তা করে কিয়ারা বলল, -       আচ্ছা মম্মা, আমাদের এই ইকারা শহরে কি এমন কিছু হয়েছিল যেখানে কেউ আর বেঁচে ছিল না? -       অ্যাঁ? -       না মানে আমি কিছু বই থেকে জানলাম এখানে এমন কিছু হয়েছিল, যেখানে শুধু ইকারা নয়, পুরো আটলান্টিস থেকে সবাই মারা গেছিল? -       কই তেমন তো শুনি নি কোনদিন ডার্লিং। -       হুম। আচ্ছা, ইকারা তে সবাই ব্রুনো কেন? আর কেউ নেই কেন? -       মানে? -       মানে আমরা সবাই ব্রুনো। কিন্তু আটলান্টিস এ এমন টাইটেল এর অনেকে আছে। রিলিয়া ভেবে পেল না এর উত্তর কি দেবে। খানিক খেই হারিয়ে ফেলল ও। সত্যি বলতে জীবনে ও শোনে নি এমন কথা, যে ইকারা তে সবাই মারা গেছিল। বলে উঠলো -       উফফ ডার্লিং জানিনা তুমি কি বই পড়েছ। এমন কোন ঘটনা ঘটে নি। -       হুম অভিজ্ঞের মতন হুম করে কিয়ারা চুপ করে গেল। বুঝে গেল এই সব কথা অনেক দিন চাপা পরে ছিল ওই ওয়াগন এ। ওর মনের ইচ্ছে ছিল জিজ্ঞাসা করবে মম্মা কে যে বই টা ও পড়ছে সেটার ব্যাপারে। কিন্তু চুপ করে গেল। জিজ্ঞাসা করতে সাহস পেল না। ও কিছু না বলে উঠে গেল নিজের ঘরে। দরজা বন্ধ করে আলমারি থেকে বই টা বের করে পড়তে বসে পড়ল আবার। লিরার কাহিনী পড়তে পড়তে মন টা ভারাক্রান্ত, কিন্তু সবার মারা যাবার পরেও ব্রুনো দের এই জায়গায় বেড়ে ওঠা আর নিজেদের বংশ বিস্তার করা টা কিয়ারার কাছে খুব ই আশ্চর্য্যের ব্যাপার। একটা বড় শ্বাস নিয়ে, ও তাকাল বই এর দিকে আবার। 
Parent