তুমিই আমার মা.... - অধ্যায় ৬

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-69905-post-6027647.html#pid6027647

🕰️ Posted on September 5, 2025 by ✍️ Xojuram (Profile)

🏷️ Tags:
📖 2365 words / 11 min read

Parent
পর্বঃ ০০৬ রাত প্রায় সাড়ে দশটা। সারা দিন কাজের শেষে বাড়ি ফেরার পর অর্জুন খাওয়াদাওয়া সেরে ঘরে ঢুকলো। আলো নিভু নিভু, খাটের একপাশে সুমিতা গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে। তার ভেতরে এক অদ্ভুত শূন্যতা। দু’দিন আগেই যে ভয়ানক ঘটনা ঘটেছিল, এখনও তার শরীর–মন কাঁপে ভেবে। অর্নব না থাকলে আজ সে বেঁচে থাকতো কিনা কে জানে! কিন্তু এই মানুষটা, যাকে স্বামী বলে ডাকতে হয়, সে কিছুই বুঝলো না, কিছুই জানলো না। অথচ তারই তো পাশে থাকার কথা ছিল। স্বামী ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে সুমিতার কাঁধে হাত রাখলো। —“শোনো… অনেকদিন হলো… তোমাকে কাছে পাই না।” গলার স্বরটা মোলায়েম হলেও তাতে দমবন্ধ করা দাবির ছায়া ছিল। সুমিতা চমকে উঠলো। শুধু চোখ বন্ধ করেই থাকলো। মাথার ভেতর গুমোট জমে আছে—অভিমান, রাগ আর অপমান। যেদিন ওই লোকটা তাকে আক্রমণ করেছিল, অর্নব ছাড়া কেউ তার পাশে ছিল না। এই মানুষটা নয়। অর্জুন তার গায়ে হাত দিতেই সুমিতা উঠে বসে নিজেকে আরও গুটিয়ে নেয়। স্বামীর উপর প্রচন্ড অভিমানে ঠোঁট উলটে বসে থাকে অন্যদিকে ফিরে। —ফিসফিস করে কি সব বললো সুমিতা। অর্জুন যেন মনের কথা বুঝতে পারলো। সে নিজ থেকেই উত্তর দিলো। —“ কেন? আমি তো তোমার স্বামী।” কণ্ঠে হালকা ক্ষোভ। —“তুমি স্বামী বটে, কিন্তু আমার সুরক্ষা দিতে পারলে না।” মুখ ভারী করে সুমিতা বললো। অর্জুন প্রথমে কিছুই বুঝলো না। চোখ কুঁচকে তাকালো, যেন অচেনা কোনো কথা শুনলো। —“তুমি কি বলতে চাইছো?” সুমিতা হঠাৎ কেঁপে উঠে বলল। —“কিছুই না। ঘুমাও।” কথা শেষ সুমিতা শুয়ে পড়লো, এরপর চাদর টেনে নিলো। অর্জুন অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ, তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো। ঘরটা নিঃশব্দ হয়ে গেলো, কেবল বাতাসের হালকা শব্দ। সুমিতা চোখ বন্ধ করলেও ঘুম আসলো না। বুকের ভেতর বারবার ধকধক করে উঠছে—যেদিন অর্নব তাকে বাঁচিয়েছিল, সেই দৃশ্য। ছেলেটা মাত্র * বছরের, অথচ তার বুকের সাহস কত! সেই রাতটা কেটে গেলো ভারী অন্ধকারে। --- পরদিন ভোরে অর্নব মায়ের পাশে এসে দাঁড়ালো। কলেজে যাবার জন্য জামা পরে নিয়েছে, ব্যাগও গুছানো। মুখে মিষ্টি হাসি। —“মা, আজকে কলেজে নতুন খেলা শেখাবে। তুমি এলে দেখতে পারবে?” সুমিতা ছেলের মুখে হাত বুলিয়ে দিলো। অদ্ভুত এক টান অনুভব করে। —“আমি যাবো না সোনা, কাজ আছে। তবে তুমি খেলো, মজা করো।” অর্নব কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো, তারপর হঠাৎ গম্ভীর গলায় বললো, —“মা, তুমি কাল রাতে কেঁদেছিলে কেন?” প্রশ্নটা শুনে সুমিতা থমকে গেলো। ছোট্ট ছেলেটা সব খেয়াল করে! হ্যা কালকে অর্জুন ঘুমিয়ে গেলে সুমিতা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছিলো। কেন সে জানে না, শুধু কেদে নিজেকে হালকা করছিলো। —“না রে সোনা, কাঁদিনি তো।” —“মিথ্যে বলছো। আমি শুনেছি।” কথা শেষ করে অর্নব চলে গেলো, কিন্তু সুমিতা যেন ভেতরে ভেতরে ভেঙে পড়লো। শিশুটি সত্যিই তার ছায়ার মতো হয়ে যাচ্ছে। --- সময় পেরিয়ে যায়। বছর ঘুরে যায় একের পর এক। অর্নব এখন দশ বছরের কিশোর। কলেজে বেশ ভালো ফল করছে। শরীরটাও লম্বা হয়েছে, চোখে-মুখে বুদ্ধির ছাপ। সুমিতা লক্ষ্য করে, ছেলে যত বড় হচ্ছে, ততই তার সঙ্গে কথাবার্তা গভীর হচ্ছে। একদিন দুপুরে কলেজ থেকে ফিরে অর্নব বললো, —“মা, আমাদের ক্লাসে আজকে স্যার বললো, বাবা-মা নাকি সন্তানকে সবসময় রক্ষা করে। তুমি কি আমাকে সবসময় রক্ষা করবে?” সুমিতা মুচকি হাসলো, চোখ ভিজে উঠলো। —“আমি তোকে মরেও রক্ষা করবো।” —“তাহলে আমি কেন তোমাকে রক্ষা করেছিলাম সেদিন?” এই প্রশ্নে সুমিতা বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো। চোখের ভেতর জল চিকচিক করছে। বুকের ভেতর এক অদ্ভুত কষ্ট, আবার গর্বও মিশে আছে। —“তুই আমার ছেলেই না শুধু, তুই আমার ভরসা।” সুমিতা ছেলেকে বুকের মধ্যে টেনে নিলো। অর্নব অবাক হলো। তার ছোট্ট মনে তখনো এসব শব্দের গভীরতা ধরা পড়ে না। তবে সে শুধু মায়ের আঁচলের গন্ধটুকু টেনে নিলো বুকভরে। --- সুমিতার স্বামী ধীরে ধীরে দূরে সরে যেতে লাগলো। সংসারের দায়-দায়িত্ব করছে বটে, কিন্তু সম্পর্কের উষ্ণতা ফিকে হয়ে গেছে। রাতে আর সুমিতাকে জোর করতে আসে না, তবে অভিমানী নীরবতা তৈরি হয়েছে। সুমিতা তাতে খুব একটা কষ্ট পায় না। বরং অর্নবের সঙ্গে প্রতিদিনের কথোপকথন, হাসি-খুশি আর একসাথে কাটানো সময়েই সে শান্তি খুঁজে নেয়। সেই রাতে, বিছানায় শুয়ে সুমিতা জানলার বাইরে তাকিয়ে ছিল। আকাশ ভরা তারা। তার মনে হলো, স্বামী হয়তো চিরকালই এভাবে দূরে চলে যাবে, কিন্তু অর্নব প্রতিদিন তার আরও কাছে আসছে। মা–ছেলের সম্পর্কের ভেতরে জমতে শুরু করেছে এক অদ্ভুত টান। যেখানে আছে নিখাদ মমতা, এই মমতার অদ্ভুত এক গভীরতা আছে। তার বুক ভরে উঠলো। ঠোঁটের কোণে ফিসফিস করে বললো— “অর্নব… তুইই আমার আলো।” —----------------------- রাত তখন নীরব। চারদিকে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক। সুমিতা ঘরে একা বসে আছে। স্বামী অনেকটা সময় হলো বাইরে গেছে, ফিরলেও তার সাথে কথা কম। সংসার চলছে, কিন্তু সেই ভালোবাসা, সেই সঙ্গ নেই অনেকদিন ধরেই। মনে হয়, দু’জন পাশাপাশি থেকেও যেন আলাদা জগতে বাস করছে। বুকের মধ্যে অদ্ভুত এক শূন্যতা জমেছে। অর্নব এখন আর ছোট্ট বাচ্চা নেই। এ বছর নবম শ্রেণিতে উঠেছে। দেখতে অনেকটা লম্বা হয়েছে, চোখে কেমন একটা গভীর ভাব ফুটে উঠেছে। সুমিতা ওকে পড়াশোনার টেবিলে বসে থাকতে দেখে মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যায়। মনে পড়ে যায়, একসময় বুকের কাছে মুখ গুঁজে ঘুমিয়ে যেত ছেলেটা। এখন সে লম্বা হয়ে মায়ের কান সমান। কলেজ থেকে হঠাৎ করেই দরজা খুলে অর্নব ঢুকল। ব্যাগটা রেখে সোজা ঘরে গেল। মুখটা কেমন গম্ভীর। সুমিতা ছেলেকে এমন কখনোই দেখিনি, অর্নবকে এমনভাবে চুপচাপ ঘরে যেতে দেখে সেও অর্নবের ঘরে গেলো। —“কি হলো রে সোনা, মুখটা এমন কেমন করে আছিস কেন?” —সুমিতা প্রশ্ন করল। অর্নব গুমরে বলল, —“কিছু না মা।” —“না, কিছু তো হয়েছে। ক্লাসে কিছু বলেছে নাকি কেউ?” অর্নব চোখ নামিয়ে রাখল। কিছু বলতে চাইছে না। কিন্তু সুমিতার চোখ এড়িয়ে সে পারে না। মা এগিয়ে গিয়ে হাত রাখল ছেলের মাথায়। তখন যেন বাঁধ ভেঙে গেল। —“ওই ঋত্বিক আবার বাজে কথা বলছিল মা। বলে আমি নাকি মেয়েদের সাথে কথা বলতে পারি না, কাপুরুষ আমি। পুরো ক্লাসের সামনে হাসাহাসির পাত্র বানালো আমাকে।” সুমিতার ভ্রু কুঁচকে গেল। —“ঋত্বিক আবার! ওর তো সেই ছোটোবেলা থেকেই খারাপ নাম শুনি। তুই কিছু বলিসনি?” —“আমি চুপ ছিলাম মা। লড়তে গেলেও তো পারি না। ওর শক্তি বেশি।” সুমিতা চুপ করে রইল। বুকের ভেতর আগুন জ্বলল, কিন্তু ছেলেকে সেটা দেখাল না। কেবল কাছে টেনে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। —“চিন্তা করিস না। তোর মা আছে। তুই যেরকম আছিস, সেটাই আমার কাছে গর্বের।” অর্নব মায়ের দিকে তাকাল। চোখে জল টলমল করছে। —“তুমি ছাড়া আমার কেউ নেই মা। তুমি থাকলেই আমি বেঁচে থাকি।” কথাটা শুনে সুমিতার বুকটা কেমন হালকা হয়ে গেল। এক অদ্ভুত গর্ব ভরে গেল বুকের মধ্যে। যত শূন্যতা জমেছে, সেই জায়গাটা অর্নব অদ্ভুতভাবে পূর্ণ করে দিচ্ছে। কিছুক্ষণ পর সুমিতা খেয়াল করল, অর্নব হেসে উঠেছে। একটু আগে যে ছেলেটা কান্নায় ভেঙে পড়েছিল, এখন সে একেবারে অন্য মানুষ। —“কি হয়েছে আবার?” —সুমিতা জিজ্ঞেস করল। অর্নব মজা করে বলল, —“মা, রিয়া দিদি বলে তুমি নাকি দেখতে একেবারে সিনেমার নায়িকার মতো।” সুমিতা অবাক হয়ে তাকাল। —“কি! ও এসব বলেছে?” —“হ্যাঁ মা। বলেছে তুই নাকি পুরো কলেজের মায়েদের থেকে আলাদা। অনেক স্টাইল আছে। আমি তখন হেসে ফেলেছিলাম।” সুমিতা হেসে মাথা নাড়ল। —“তোরা ছেলেপেলেরা এসব নিয়ে এত কথা বলিস কেন রে?” অর্নব গম্ভীর হয়ে গেল হঠাৎ। —“মা, রিয়া দিদি ভালো মেয়ে জানো। আমায় অনেক সাহস দেয়। কিন্তু আমি জানি, আমার সত্যিকারের ভরসা তুমি।” সুমিতা একটু চুপ করে রইল। এই বয়সে ছেলেটা এমন পরিণত কথা বলে কিভাবে! বুকের ভেতর আবেগে কেঁপে উঠল। —------------------- অর্জুন অনেক রাত করে বাড়ি ফিরল। খাওয়ার সময় গম্ভীর মুখে বসে রইল। কথা বলতে গেলে শুধু মাথা নেড়ে উত্তর দিল। সুমিতা অনুভব করল—তাদের মধ্যে যে দেয়াল দাঁড়িয়ে গেছে, সেটা আর ভাঙা সম্ভব না। রাত গভীর হলে স্বামী পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল। কিছুটা কাছে টানতে চাইলেও সুমিতার মন যেন সাড়া দিল না। মনে মনে শুধু একটা কথা ঘুরতে লাগল—“যখন আমাকে সবচেয়ে বেশি দরকার ছিল, তখন তুমি কোথায় ছিলে?” সকালে অর্নব কলেজের জন্য তৈরি হচ্ছিল। ব্যাগ গোছাতে গোছাতে বলল, —“মা, আজ যদি আবার ঋত্বিক কিছু বলে, আমি ওর সামনে দাঁড়িয়ে যাব, মারামারি করবো।” সুমিতা কাছে এসে ছেলের শার্টের বোতাম লাগিয়ে দিল। —“লড়তে গেলে মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হয় রে, সোনা। দেহের শক্তিতে না, বরং বুদ্ধি দিয়ে শত্রুকে হারাতে হয়। আমি জানি তুই পারবি। শুধু মনে রাখিস—তোর সাথে তোর মা আছে। তুই একা নস।” অর্নব মায়ের চোখের দিকে তাকাল। সেখানে যে মমতা, যে ভরসা, সেটা তার সমস্ত ভয়কে গলে জল করে দিল। কলেজে গিয়ে সত্যিই ঋত্বিক আবার উসকানি দিল। কিন্তু আজ অর্নব থামল না। শান্ত গলায় বলল, —“তুই যত খুশি হাসা, আমি যেমন আছি, তাতেই খুশি। তোকে প্রমাণ করার কিছু নেই।” ঋত্বিক থমকে গেল। আশেপাশের বন্ধুরা আর হাসল না। রিয়া পাশে দাঁড়িয়ে গোপনে হাততালি দিল। অর্নব টের পেল—মায়ের কথাই তাকে শক্তি দিয়েছে। বাড়ি ফিরে সে দৌড়ে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরল। —“মা, আমি পেরেছি। আজকে আমি ওকে জবাব দিয়েছি।” সুমিতা অবাক হয়ে বলল, —“দেখলি তো! তুই পারিস।” অর্নব মায়ের বুকের ভেতর মুখ লুকিয়ে বলল, —“তুমি থাকলেই আমি সব পারব মা।” সুমিতা ছেলেকে আঁকড়ে ধরল। বুকের ভেতর জমে থাকা সমস্ত কষ্ট, শূন্যতা, অভিমান মিলিয়ে গেল এই একটি মুহূর্তে। জীবনে যদি কাউকে ভরসা করা যায়, তবে সে শুধু এই ছেলে—অর্নব। সন্ধ্যার পর বারান্দায় বসে সুমিতা আকাশের দিকে তাকাল। দূরে তারা জ্বলছে। মনে মনে ভাবল—যা কিছুই আসুক সামনে, যত ঝড়ই আসুক, এই ছেলে তাকে আগলে রাখবে। তার স্বামী যদি পাশে না-ই থাকে, তবু তার জীবন শূন্য নয়। কারণ, তার বুকের ভিতরেই এক পৃথিবীর সমান ভরসা—অর্নব। —---------- রাতের আঁধার নেমে এসেছে। সারা দিনের ক্লান্তি শেষে সুমিতা অর্নবকে খাওয়াদাওয়ায় দিয়ে নিজের ঘরে ফিরেছে। ঘরে ঢুকতেই দেখল স্বামী বসে আছে বিছানার একপাশে। চোখে ক্লান্তির রেখা থাকলেও অদ্ভুত এক উষ্ণ দৃষ্টি ভাসছে তার চোখে। সুমিতা বুঝে গেল—আজ স্বামী তার কাছে রোমাঞ্চ চাইছে। একসময় সে নিজেই এগিয়ে যেত, দাম্পত্যের স্বাভাবিক টানেই কাছে আসত। কিন্তু আজ তার ভেতরটা ভার হয়ে আছে। কয়েকবছর আগের ঘটনার পর থেকে মন খুলে আর কিছু করতে পারছে না। ওই ভয়াবহ দিনে যখন এক লোক তার ইজ্জত লুটে নিতে চাইছিল, তখন তার স্বামী পাশে ছিল না। দূরে ছিল, ব্যস্ত ছিল নিজের জগতে। অথচ * বছরের অর্নবই তাকে বাঁচিয়েছে। সেই ঘটনার পর থেকে স্বামীর প্রতি মনে অদ্ভুত এক আক্ষেপ জমে আছে। সে আক্ষেপ দাম্পত্যের ঘনিষ্ঠ মুহূর্তকেও ছাপিয়ে যায়। স্বামী এগিয়ে এসে ধীরে ধীরে তার কাঁধে হাত রাখল। গলায় উষ্ণ শ্বাস ফেলল, “সুমি, অনেকদিন হলো আমাদের... আমি ভেবেছিলাম আজ একটু কাছে আসব।” সুমিতা চোখ নামিয়ে ফেলল। ঠোঁট নড়ল, কিন্তু শব্দ বের হলো না। সে চেয়েছিল আজকের রাতটা শুধু নীরবতায় ভরে যাক। তবুও মনে মনে ভাবল—স্বামী তো খারাপ কিছু করছে না, স্বাভাবিক অধিকারই চাইছে। কিন্তু ভেতরে ভেতরে ক্ষত বয়ে চলা সুমিতা নিজের ভাঙাচোরা মনের কথা কাউকে বলতে পারল না। স্বামী তার মুখের দ্বিধা বুঝতে পারলেও হাল ছাড়ল না। কানে ফিসফিস করে বলল, “তুমি তো আমার নিজের... কেন এভাবে দূরে সরছ?” সুমিতা চোখ বন্ধ করে ফেলল। বুকের ভেতর জমে থাকা কথাগুলো গলা টিপে ধরল। অবশেষে খুব আস্তে বলল, “তুমি তখন কোথায় ছিলে? যেদিন আমার সব শেষ হয়ে যাচ্ছিল... যেদিন আমি একা হয়ে যাচ্ছিলাম...” স্বামী স্তব্ধ হয়ে গেল। এই সে বুঝল, স্ত্রীর অভিমান কতটা গভীর। সে আস্তে আস্তে হাত সরিয়ে নিল, মৃদু স্বরে বলল, “সুমি, আমি জানতামই না... বিশ্বাস করো, আমি যদি জানতাম তবে মরতেও রাজি ছিলাম তোমাকে বাচাতে গিয়ে।” কথাগুলো সুমিতার কানে ঢুকল, কিন্তু তার মন গলল না। সে জানে, স্বামী হয়তো সত্যিই জানত না, কিন্তু তখনকার মুহূর্তে তার পাশে যে ছিল, সে তার ছোট্ট ছেলে অর্নব। সেই ছেলেটিই নিজের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে মাকে আগলে রেখেছিল। এই সত্যকে সুমিতা কোনোভাবেই ভুলতে পারছে না। রাতের সেই অন্ধকারে স্বামী অবশেষে পাশে শুয়ে পড়ল। দুজনের শরীর পাশাপাশি হলেও দুজনের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়ে রইল। সুমিতা নিঃশব্দে চেয়ে রইল অর্নবের ঘরের দিকে। মনে মনে ভাবল—একদিন এই বেদনা সে কাউকে বলতে পারবে? নাকি সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হবে? সকালে ঘুম ভাঙতেই সুমিতা নতুন সিদ্ধান্ত নিল। সে আস্তে আস্তে সব স্বাভাবিক করতে থাকবে। অর্জুনকে আর এভাবে একা করে রাখবেনা, তার অধিকার তাকে দেবে। —-------- দিন বাড়তে থাকল এভাবেই, একদিন বিকেলে রিয়া তাদের বাসায় এল। অর্নবের পড়াশোনার খোঁজ নিতে এসেছিল। রিয়া সবসময়ই অর্নবকে আপন ছোট ভাইয়ের মতো ভালোবাসত। সে এসে অর্নবের খাতা দেখে, বানান ঠিক করে দিল, অঙ্ক শেখাল। অর্নব উচ্ছ্বাস ভরে বলল, “রিয়া দি, তুমি না থাকলে আমি অনেক কিছুই শিখতে পারতাম না।” সুমিতা একপাশ থেকে সব দেখছিল। রিয়ার উপস্থিতি তার ঘরের অন্ধকারে আলো এনে দিল। মেয়েটির আন্তরিকতা তাকে অবাক করে। মনে হলো—যেন ঈশ্বর কাউকে পাঠিয়ে দিয়েছে তাদের পাশে থাকার জন্য। রিয়া সেদিন কথায় কথায় সুমিতার মনোভাবও আঁচ করতে পারল। চা খেতে খেতে বলল, “আন্টি, আপনি কেমন আছেন? চোখে ক্লান্তি দেখছি।” সুমিতা এক চিলতে হাসি দিল, “আমি ভালো আছি রে... শুধু মাঝে মাঝে ভেতরটা ভার হয়ে আসে।” রিয়া আস্তে করে তার হাত ধরল, “আপনি একা নন। অর্নব আছে, আমিও আছি। আপনি চাইলে সব বলতে পারেন।” সেই মুহূর্তে সুমিতার চোখে জল চলে এলো। অনেকদিন পর কেউ তাকে বোঝার চেষ্টা করল। রিয়ার কথাগুলো তার বুকের ভেতর জমে থাকা কষ্টকে হালকা করে দিল। এভাবেই এক নতুন সম্পর্কের সূচনা হলো—বন্ধুত্ব, মমতা আর ভরসার সম্পর্ক। রিয়ার উপস্থিতি শুধু অর্নবের পড়াশোনার জন্যই নয়, সুমিতার ভেতরের ভাঙা অংশকেও জোড়া লাগাতে শুরু করল। রাত গভীর হলো। সুমিতা অর্নবএর রুমে এসে মনে মনে বলল—“তুইই আমার আসল ভরসা অর্নব। একদিন তুই বড় হয়ে সব বুঝবি, হয়তো তখন আমার এই কষ্টের ভাগও নেবি।” —--------------------- মহিলা ২- তুমি কি তাদেরকে খুজে পেয়েছো। মহিলা ১- আমাকে যে খুজে পেতেই হবে তাদেরকে। এতিদিন ঈশ্বর আমাকে বাচিয়ে রেখেছে হয়তো এই সত্যটা জানানোর জন্যই। আমি ভারতবর্ষে প্রতিটা অলিগলি খুজবো , তাদেরকে সত্যটা জানাবোই। মহিলা ২- মা, তুমি কিন্তু আসল ঘটনা বলোনি এখনও। মহিলা ১- “ সেদিন হাসপাতালে অনেক অনেক রোগীর ভিড় ছিলো। সবকিছু যেন এলোমেলো হয়ে গেছিলো। আমরা যারা নার্স ছিলাম সবাই খুব ব্যাস্ত ছিলাম। হঠাৎ চারজন রোগী আসে হাঁসপাতালে। তারা দুইটা কাপল ছিলো। একে অপরের গাড়ির সাথে একিক্সেন্ট করেছিলো তারা। স্বামীদ্বয় খুব একটা গুরুতর আঘাত পায়নি। কিন্তু অবস্থা খুব করুণ ছিলো মেয়ে দুইটার, দুইজনই মেয়েই প্রেগনেন্ট ছিলো আনুমানিক ৯ মাসের। অতিরিক্ত রোগী থাকায় তাদেরকে একসাথে এক আই সি ইউতেই অপারেশন করতে নিয়ে যাওয়া হয়। দুইজনেরই লাল টুকটুকে দুইজন ছেলে হয় তবে একটা বাচ্চা অনেকটাই অসুস্থ হয়। আমাকে দায়ীত্ব দেওয়া হয়া বাচ্চা চিহ্নিত করণের। আমার জন্য খুব সহজ ছিলো বাচ্চাদের চিহ্নিত করা। যে বাচ্চা ছেলেটা সুস্থ ছিলো তার মাথার পিছনে একদম ঘাড় বরাবর দুই শিরার মাঝে একটা বড় তিল ছিলো লাল রঙের ছেলেটার মায়ের নাম ছিলো সুমিতা, আর বাকি যে বাচ্চাটা অসুস্থ ছিলো তার মায়ের নাম ছিলো শর্মিষ্ঠা। দুই বাচ্চার পায়ে সঠিক ট্যাগ লাগিয়ে দিই এবং তাদেরকে স্পেশাল চেম্বারে নিয়ে যাওয়া হয় যেহেতু তারা তাদের জন্ম ডেটের আগেই পৃথিবীতে এসেছে। ঠিক ৭ দিন পর অসুস্থ বাচ্চাটা মারা যায়। আমরা তাদেরকে মৃত্যুর খবর দেয়নি কারণ তারা সবাই প্রচন্ড অসুস্থ। কিন্তু আসল ঘটনা ঘটে ১ মাস পর। আমি মাঝে কিছুদিনের ছুটিতে থাকায় কি হয়েছে কিছুই জানতে পারিনি। কিন্তু একমাস পর হাঁসপাতালে ফিরে এসে জানতে পারি সুমিতার ছেলে মারা গেছে, যেটা ছিলো সম্পুর্ন ভুল কারণ সেই ছেলেটা সুস্থ ছিলো। যেটা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভুল।” মহিলা ২- তার মানে তুমি বলতে চাচ্ছো বাচ্চা অদলবদল হয়ে গেছে। আর মারা গেছিলো শর্মিষ্ঠা নামের মেয়েটার ছেলে? মহিলা ১- হ্যা রে মা, আমি ওদের অনেক বোঝাই কিন্তু ওরা আমাকে কথা বলার সুযোগ দেয়না। বলে যে তারা রিলিজ নিয়ে চলে গেছে আর এমন ভুল হাঁসপাতাল কর্তৃপক্ষ করেছে এটা লোকজন জানলে ওদের রেপুটেশন শেষ হয়ে যাবে। এরপর হাসপাতাল থেকে আমাকে বের করে দেয়। —-------------------------------------------------------- সুমিতার টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে দিয়ে দেখে ছেলেটা অন্যদিকে ফিরে ঘুমিয়ে আছে গুটিশুটি মেরে। লাইটের হালকা আলোই অর্নবের ঘাড়ে একটা তিল ভীষন জ্বলজ্বল করছে। এই স্নিগ্ধতা ভরা ঘুম দেখে সুমিতা ছেলেটা জ্বালাতন করেনা। ল্যাম্প নিভিয়ে দিয়ে সে তার ঘরে চলে যায়। ক্রমশ
Parent