তুমিই আমার মা.... - অধ্যায় ৭

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-69905-post-6035067.html#pid6035067

🕰️ Posted on September 14, 2025 by ✍️ Xojuram (Profile)

🏷️ Tags:
📖 2178 words / 10 min read

Parent
পর্বঃ ০০৭ অর্নবের বয়স এখন ২০ বছর। বয়সটা এমনই, যখন মন বারবার বিক্ষিপ্ত হয়—আবেগ, আকর্ষণ আর স্বপ্ন সব মিশে গিয়ে একধরনের অস্থিরতা তৈরি করে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রিয়ার সাথে ফোনে কথোপকথন অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল। রাতে পড়াশোনার নাম করে অর্নব ফোনে রিয়ার সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলত।  রিয়া হাসিমুখে সব শেয়ার করলেও অর্নবের মনে হতো—এই মেয়েটাই হয়তো তার জন্য ঠিক। মাঝে মাঝে ফোনের ওপাশে রিয়ার গলা নরম হয়ে এলে অর্নবের বুক কেঁপে উঠত। মনে হতো, সে-ও হয়তো তাকে একটু হলেও আপন মনে করে। এই অনুভূতির ভেতরে ভেসেই একদিন অর্নব ঠিক করল—সে আর দেরি করবে না। নিজের মনটাকে খুলে বলবে রিয়াকে। —------ রাতটা অর্নবের জন্য যেন অনন্ত দীর্ঘ হয়ে উঠেছিল। সারাদিন ধরে তার মনে একই চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিল—রিয়ার জন্য অদ্ভুত এক টান, এক ধরনের অস্থিরতা। বয়স কেবল কুড়ি হলেও মনে হচ্ছিল বুকের ভেতর আগুন জ্বলছে। বইয়ের পাতায় চোখ রাখলেও অক্ষরগুলো কেবল গলে যাচ্ছিল, মনের ভেতর বারবার রিয়ার মুখটা ভেসে উঠছিল। কিছুদিন আগেও রিয়া তার কাছে শুধু একজন সিনিয়র দিদির মতই ছিল। কিন্তু এখন? এখন সে আর শুধু সিনিয়র নয়, বরং এমন একজন, যার হাসি, যার কথাবার্তা, যার উপস্থিতি তাকে দিন-রাত কুরে কুরে খাচ্ছে। সন্ধ্যার পর অর্নব ঠিক করলো—আজ আর দ্বিধা করবে না। সরাসরি রিয়ার কাছে যাবে। বুকের সব কথা উগড়ে দেবে। সে জানে না রিয়া কী ভাববে, রাজি হবে কি না, কিন্তু এই চেপে রাখা আর সহ্য হচ্ছে না। অর্নব সেদিন বিকেলের দিকেই একটু গম্ভীর মনে ঘর থেকে বের হয়েছিল। রিয়ার সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল। কয়েক সপ্তাহ ধরে মনে মনে ভেবেছে, আজই হয়তো সব বলে দেবে—তার অনুভূতি, তার ভালো লাগা।  রিয়া তিন বছরের সিনিয়র হলেও, অর্নবের কাছে সে এক আশ্রয়। আর বয়সের ব্যবধানের কথা অর্নব কখনো গুরুত্ব দেয়নি। সে শুধু অনুভব করেছে, রিয়ার হাসির মাঝে তার জন্য এক অদ্ভুত টান আছে। একটু কাঁপা কাঁপা মন নিয়ে অর্নব রিয়ার বাসার গলির সামনে এসে দাঁড়াল। দরজাটা অর্ধেক খোলা ছিল।  ভেতরে আলো জ্বলছিল। তার বুক ধড়ফড় করছিল—‘আজ হয়তো নতুন কিছু শুরু হবে।’ সে নিঃশব্দে পা বাড়াল, যেন একটুখানি সাহস জোগাড় করার চেষ্টা করছে। কিন্তু কয়েক কদম যেতেই কান দিয়ে হঠাৎ এক অচেনা শব্দ এলো—দম বন্ধ হয়ে আসা নিশ্বাস, বিছানার কঁকানো শব্দ, আর কারও চাপা হাসি। অর্নব থমকে দাঁড়াল। মনে হলো বুকটা হঠাৎ কে যেন পিষে ধরেছে। সে নিঃশব্দে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়াল। ভেতরের দৃশ্য দেখে তার শরীরের রক্ত হিম হয়ে গেল। একটা ছেলে সোফায় বসে আছে সম্পুর্ণ নগ্ন হয়ে আর রিয়া ঠিক তার উপরে বসে সম্পুর্ন নগ্ন হয়ে লাফাচ্ছে আর কামশিতকার দিচ্ছে। রিয়ার স্তন ছেলেটার মুখের সামনে ঝুলছে। কিছুক্ষণ পর ছেলে রিয়াকে কোলে করে রিয়ার রুমের দিকে নিয়ে যায়। অর্নব তাদের পিছু পিছু যায়। ছেলেটা রিয়ার খাটে শুয়ে পড়ে আর রিয়াকে তার লিঙ্গের উপর বসিয়ে নিচ থেকে রামচোদন দিতে থাকে, এতে রিয়া দিশেহারা হয়ে আহ আহ উহহহহহ আহহহহ করতে থাকে। অর্নবের চোখের সামনে সবকিছু অন্ধকার হয়ে গেল। যেন পৃথিবী হঠাৎ অন্য চেহারা নিল। কানে শব্দ ঢুকছিল না, শুধু বুকের ভেতর তীব্র ধকধকানি হচ্ছিল। তার হাত-পা কাঁপতে লাগল। কতক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল অর্নব, সে নিজেও জানে না। শুধু ভেতরে ভেতরে চিৎকার করে উঠতে চাইছিল—“না, না এটা হতে পারে না!” কিন্তু গলা শুকিয়ে গিয়েছিল, শব্দ বের হলো না। তার চোখে জল চলে এলো। ঠোঁট কাঁপল। সে বুঝতে পারছিল, হৃদয়ের গভীরে কেমন এক বিশ্বাসঘাতকতা ছুরি চালিয়ে দিয়েছে। রিয়ার প্রতি যে অনুভূতি, যে স্বপ্ন ছিল, তা এক মুহূর্তে ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। সে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না। দৌড়ে বেরিয়ে সেখান থেকে। অন্ধকার হয়ে আসা সন্ধ্যার ভেতর ছুটতে ছুটতে শুধু মনে হচ্ছিল—“সব শেষ… সব শেষ হয়ে গেল।” তার বুক ভারী হয়ে উঠেছিল, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। চোখ ভিজে আসছিল বারবার। এতদিন যে মেয়েকে মনে মনে নিজের করে ভেবেছে, আজ তাকেই অন্য কারও সঙ্গে এভাবে দেখে ফেলল। অর্নব হঠাৎ একটা জায়গায় থামল। ছোট একটা গলি হয়ে একটা দোকানে গেলো। টলমল চোখে তাকাল কাঁচের শোকেসে সাজানো বোতলগুলোর দিকে। মদের বোতল, গাঢ় বাদামি রঙের। সে জানত এগুলো ভালো কিছু নয়। কখনো ছুঁয়েও দেখেনি। কিন্তু আজ যেন বুকের যন্ত্রণা কমানোর একমাত্র উপায় এটিই। সে ভেতরে ঢুকে হঠাৎ বলল, “একটা বোতল দিন।” কণ্ঠটা কাঁপছিল। দোকানদার একটু অবাক হলেও কিছু বলল না। অর্নব টাকা দিয়ে বোতল নিয়ে বেরিয়ে এল। রাস্তার ধারে একটা নির্জন জায়গায় গিয়ে বসে পড়ল। বোতলের ঢাকনা খুলতেই কড়া গন্ধ নাকে লাগল। মুখ কুঁচকে গেল, তবু বোতল ঠোঁটে নিল। প্রথম চুমুকেই গলায় আগুনের মতো লাগল। কাশি বের হলো, চোখ দিয়ে জল এলো। তবু থামল না। সে বোতল থেকে গলগল করে খেতে লাগল। প্রতিটা ঢোঁক গলায় নামার সঙ্গে সঙ্গে মনে হচ্ছিল বুকের ভেতরের আগুনটা একটু কমছে। আসলে আগুন কমছিল না, বরং মাথার ভেতর ঝাপসা একটা ঘোর নামছিল। রাস্তার আলো ঝাপসা হয়ে গেল। গাছপালা, রিকশার ঘণ্টা, দূরের গাড়ির হর্ন—সব মিলেমিশে যেন ঘূর্ণির মতো ঘুরছিল তার চারপাশে। অর্নব টলতে টলতে উঠে দাঁড়াল। বোতলটা অর্ধেক খালি হয়ে গেছে। বুকটা ভারী হলেও মনে হচ্ছিল ভেতরের কষ্ট ঝাপসা হয়ে আসছে। চোখে জল, ঠোঁটে কাঁপা কাঁপা হাসি। সে টলতে টলতে বাড়ির পথে রওনা দিল। রাস্তার লোকজন অবাক হয়ে তাকাচ্ছিল, কেউ হয়তো হাসছিল। কিন্তু অর্নব কিছুই শুনছিল না। সে নিজের ঘোরেই হেঁটে চলেছিল। বাড়ির কাছে আসতেই ভেতর থেকে এক অদ্ভুত শব্দ পেল—মহিলার হাহাকার, কান্নার শব্দ। তার পা হঠাৎ থমকে গেল। বুকের ধকধক আবার বেড়ে গেল। সে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকল। ভেতরে এক ভয়াবহ দৃশ্য। সুমিতা মেঝেতে বসে, ফোন কানে ধরে হাউমাউ করে কাঁদছে। তার চোখ লাল, চুল এলোমেলো, গলা ভাঙা। বারবার চিৎকার করছে— “না, না! এটা হতে পারে না… আমার স্বামী… আমার স্বামীকে বাঁচান!” অর্নব দরজায় দাঁড়িয়ে স্তব্ধ হয়ে গেল। হাতে আধখালি বোতল ঝুলে আছে, মুখে অজানা তিক্ততা। তার মাতাল চোখেও স্পষ্ট বোঝা গেল—বাড়িতে একটা ঝড় বয়ে গেছে। সে কাঁপা কণ্ঠে বলল, “মা… কী হয়েছে?” সুমিতা ফোন ফেলে দিয়ে তার দিকে তাকাল। ভিজে চোখে চিৎকার করে উঠল, “তোর বাবা… তোর বাবার এক্সিডেন্ট হয়েছে, অর্ণব! গাড়িটা উল্টে গিয়ে আগুন ধরে গেছে… ওরা বলছে, অবস্থা ভয়াবহ… আমি শেষ হয়ে গেলাম, অর্ণব!” অর্নবের মাথা ঘুরে গেল। হাতে ধরা বোতলটা মাটিতে পড়ে গেল, কাঁচ ভেঙে টুকরো হয়ে গেল। মদের গন্ধ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। তার বুক কেঁপে উঠল। যেন সারা দুনিয়া আবারও তার পায়ের নিচ থেকে সরে গেল। অর্নবের চোখে তখনো ঘোর। একদিকে রিয়ার বিশ্বাসঘাতকতা, অন্যদিকে বাবার ভয়াবহ দুর্ঘটনার খবর—সব মিলে সে এক মুহূর্তে ভেঙে পড়ল। শরীর যেন আর তাকে মানছিল না। তবু মায়ের হাত ধরে দাঁড় করাল। “চল মা… হাসপাতালে যেতে হবে।” সুমিতা কাঁপছিল। তার চুল এলোমেলো, চোখে অঝোর জল, ঠোঁট শুকনো। যেন এক রাতেই বয়স বেড়ে গেছে দশ বছর। ছেলেকে জড়িয়ে ধরে ফিসফিস করে বলল, “আমি পারব না অর্ণব… আমি পারব না দেখতে…” অর্নব গলা শক্ত করে বলল, “আমাদের যেতেই হবে, মা।” দু’জনেই টলতে টলতে বেরিয়ে পড়ল। রাস্তায় তখন গভীর রাত, বাতিগুলো ফিকে আলো ফেলছে। ট্যাক্সি ধরে হাসপাতালের দিকে রওনা হলো তারা। গাড়ির ভেতরে কোনো শব্দ ছিল না, শুধু সুমিতার কাঁপা কাঁপা কান্না আর নিঃশ্বাস শোনা যাচ্ছিল। অর্নব জানালার বাইরে তাকিয়ে ছিল। তার চোখে তখনো ঝাপসা জল, গলায় জমে থাকা মদের তীব্র গন্ধ। মাথার ভেতরে রিয়ার দৃশ্যটা ঘুরছিল—সে অন্যের বুকে লেপ্টে আছে, হাসছে। আর তার পাশে বসে মা কাঁদছে—‘তোর বাবার অবস্থা ভয়াবহ।’ সবকিছু মিলে অর্নবের মনে হচ্ছিল, পৃথিবী যেন তাকে একসাথে সব যন্ত্রণা উপহার দিচ্ছে। হাসপাতালে পৌঁছে দৃশ্যটা আরও বিভৎস হলো। করিডোর ভরপুর মানুষ, অ্যাম্বুলেন্সের শব্দ, সাদা পোশাকের নার্স এদিক-সেদিক ছুটছে। চারদিকে ওষুধ আর পোড়া গন্ধ মিশে এক অদ্ভুত আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে। তারা রিসেপশনে ছুটে গেল। সুমিতা হাউমাউ করে বলল, “দুর্ঘটনায় এসেছেন… উনি আমার স্বামী।” নার্স কাগজপত্র দেখে চোখ নামিয়ে বলল, “দুঃখিত ম্যাডাম… উনি আইসিইউতে আছেন, অবস্থা খুবই ক্রিটিক্যাল। শরীরের বেশিরভাগ অংশ পুড়ে গেছে। আমরা চেষ্টা করছি…” সুমিতা চিৎকার করে উঠল, “না! আমার স্বামী বাঁচবে… আমি জানি ও বাঁচবে!” অর্নব মাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।  তার নিজের শরীরও কাঁপছিল, কিন্তু সে জানত এখন তাকে ভেঙে পড়া যাবে না। তারা যখন আইসিইউর কাচের জানালার সামনে দাঁড়াল, দৃশ্যটা অর্নবের মাথায় গজারির মতো আঘাত করল। ভেতরে শুয়ে আছে তার বাবা—চেনাই যাচ্ছে না। মুখ বিকৃত, শরীরের চামড়া কালো হয়ে গেছে, কোথাও কোথাও সাদা ব্যান্ডেজে মোড়া। শ্বাস নেওয়ার জন্য মেশিন লাগানো, বুক ওঠানামা করছে যান্ত্রিকভাবে। অর্নবের মনে হলো, এ কি তার সেই হাসিখুশি বাবা? যে সকালে বের হওয়ার আগে হেসে বলেছিল, “ রাতে একসাথে খেতে বসব।” আজ সে মানুষটিকে দেখে মনে হচ্ছে—শুধু একটা ভাঙা দেহ, যার ভেতরে কোনো প্রাণ নেই। অর্নবের চোখ ভিজে গেল, বুক কেঁপে উঠল। কান্না আটকানোর চেষ্টা করল না। সুমিতা বারবার ফিসফিস করে বলছিল, “আমি ওকে ছাড়া বাঁচব না… আমি ওকে ছাড়া বাঁচতে পারব না…” সুমিতা তার স্বামীকে ভালোবাসার নুন্যতম সূযোগ দেয়নি। আজকে এই অপরাধবোধ তাকে কুরে কুরে খাচ্ছে। যে মানুষটা কোনো অপরাধ করেইনি তাকে নিজের কাছে আসতে দেয়নি গত ১৪ বছর। তবুও স্বামী নামক মানুষটা কোনো অভিযোগ দেয়নি। অর্নব তার মায়ের মুখের দিকে তাকাল। মনে হলো, এই মুহূর্তে তিনিই পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় মানুষ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে গেল। ডাক্তাররা ভেতরে ছুটোছুটি করছে, কিন্তু আশার আলো খুবই ক্ষীণ। রাত গভীর হলো, করিডোরে মানুষ কমতে লাগল। শুধু অর্নব আর সুমিতা বসে রইল ঠান্ডা বেঞ্চে। অর্নবের মাথা তখনো ঘুরছিল। রিয়ার ছবি, বাবার দেহ, মায়ের কান্না—সব একসাথে মিশে গেছে। মনে হচ্ছিল সে একটা দুঃস্বপ্নের ভেতরে আটকে আছে, যেখান থেকে বেরোনো সম্ভব নয়। হঠাৎ ভোরের দিকে এক ডাক্তার বেরিয়ে এলেন। গম্ভীর মুখে বললেন, “উনাকে আমরা আর বাঁচাতে পারিনি। শরীরের ভেতরকার ক্ষতি মেরামত করার মতো অবস্থায় ছিল না। দুঃখিত…” সুমিতা চিৎকার করে উঠল, “না!!! না, এটা মিথ্যে! আমার স্বামী বাঁচবে! আমার স্বামী বাঁচবে!!!” সে ডাক্তারদের দিকে ছুটে গেল, হাত-পা ছুড়ে কাঁদতে লাগল। নার্সেরা এগিয়ে এসে তাকে ধরে রাখল। অর্নব এক জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিল পাথরের মতো। তার ভেতরে কোনো শব্দ ছিল না। শুধু বুকের গভীরে এক ভয়াবহ শূন্যতা জন্ম নিচ্ছিল। সে ধীরে ধীরে বাবার দেহের কাছে গেল। সাদা কাপড়ে ঢাকা, মাথার কাছে ব্যান্ডেজ। চোখের কোণে শুকনো কালো দাগ। অর্নব কাঁপা কণ্ঠে ফিসফিস করে বলল, “বাবা… আমি তো তোমাকে কিছুই বলতে পারিনি… তোমাকে কিছুই বোঝাতে পারিনি। তোমাকে একবারও বলতে পারিনি যে, তোমাকে আমি কতটা ভালোবাসি।” তার চোখ ভিজে গেল। কিন্তু কান্নার বদলে বুকের ভেতরে জমে উঠল এক অদ্ভুত ঘৃণা—নিজের প্রতি, পৃথিবীর প্রতি। রিয়ার জন্য বুক ভেঙে গিয়েছিল, আর এখন বাবার মৃত্যু তাকে সম্পূর্ণ ভেঙে দিল। হাসপাতালের বাইরে তখন ভোর হয়ে এসেছে। পাখির ডাক শোনা যাচ্ছে, আকাশ হালকা নীল। অথচ অর্নবের জীবনে যেন সূর্য আর উঠল না। মা বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন, অজ্ঞান হয়ে পড়ছিলেন। অর্নব তাকে ধরে রাখছিল, জল দিচ্ছিল। মনে হচ্ছিল এখন থেকে তাকেই মায়ের ভরসা হতে হবে। কিন্তু তার নিজের বুকেই তো এক শূন্যতা। মদ, কান্না, রক্ত আর মৃত্যুর গন্ধ মিশে তার মাথা ভারী হয়ে উঠল। সে মনে মনে বলল, “আমি আর আগের অর্নব নই… আমার ভেতর কিছু একটা ভেঙে গেছে।” —--------- হাসপাতালের সেই ভোরটা যেন অর্নবের জীবনের সবচেয়ে দীর্ঘ সকাল হয়ে উঠল। সাদা কাপড়ে মোড়ানো নিথর দেহটা অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দেওয়া হলো। সুমিতা তখনও কাঁদতে কাঁদতে স্বামীর নাম ধরে ডাকছিল, “ওঠো… আরেকবার চোখ খোলো… আমাকে একা ফেলে যেও না…একবার মাফ চাওয়ার তো সুযোগ দাও।” অর্নব মায়ের কাঁধ শক্ত করে ধরে রেখেছিল। ভিতরে সে নিজেই ভেঙে পড়ছিল, কিন্তু মাকে যদি ছেড়ে দেয়, তিনি একেবারে শেষ হয়ে যাবেন—এটাই তার ভয় হচ্ছিল। সন্ধ্যার ঠিক আগে বাবাকে নিয়ে শ্মশানের দিকে চলল। চারপাশের সঙ্গে তার আর কোনো সম্পর্ক নেই। শ্মশান ঘাটে পৌঁছে এক শীতল গন্ধ ভেসে এলো। ধোঁয়ার কুণ্ডলী, আগুনের তাপ, গঙ্গার জলে ভাসতে থাকা ফুল আর ছাই—সব মিলিয়ে পরিবেশ ভারী। সাদা কাপড়ে মোড়া দেহ নামানো হলো বাঁশের চাটাই থেকে। সুমিতা ভেঙে পড়ে কাঁদছিল। “ও… তুমি তো বলেছিলে কাল রাতের খাবারটা একসাথে খাব… এখন এই আগুনে চলে যাচ্ছ কেন?” অর্নব তাকিয়ে ছিল স্তব্ধ চোখে। মনে হচ্ছিল, বাবার মৃত্যুতে তার ভেতরের কান্না শুকিয়ে গেছে। পুরোহিত এগিয়ে এসে বলল, “ছেলে আগুন দেবে। এটাই নিয়ম।” অর্নবের হাতে শোলার কাঠি আর আগুন তুলে দেওয়া হলো। তার হাত কাঁপছিল, চোখে ধোঁয়া ঢুকছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাবার দেহের পাশে গিয়ে আগুন ধরিয়ে দিল। এক মুহূর্তে শিখা লেলিহান হয়ে উঠল। আগুন যেন বাবাকে গিলে ফেলছিল। অর্নবের বুক কেঁপে উঠল। সে ভেতরে চিৎকার করতে করতে, কান্না করতে করতে বলল— “না! আমার বাবা এভাবে চলে যেতে পারে না! আমি এখনো বাবার হাত ধরে হাঁটতে চাই… বাবার কাছে গল্প শুনতে চাই… বাবার পাশে বসে পড়তে চাই…” কান্না আর চোখের জল গড়িয়ে পড়ল, ধোঁয়ার সঙ্গে মিশে গেল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে আগুন জ্বলল। সুমিতা মাঝেমধ্যেই অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছিলেন, আবার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন। অর্নব তাকে ধরে রেখেছিল, জল খাইয়ে দিচ্ছিল। কিন্তু নিজে যেন আর মানুষ থাকল না—মনে হচ্ছিল সে একটা শূন্য খোলস। শেষে ছাই আর ভস্ম হাতে তুলে নদীতে ভাসানো হলো। পুরোহিত মন্ত্র পড়ছিলেন। অর্নব জলের দিকে তাকিয়ে রইল—কিছু ভেসে যাচ্ছে, কিছু ডুবে যাচ্ছে। যেন তার শৈশব, তার পরিবার, তার নির্ভরতা সবকিছু স্রোতে ভেসে গেল। বাসায় ফেরার পর পরিবেশটা আরও বিষণ্ণ হয়ে উঠল। লোকজন সমবেদনা জানাতে আসছিল, কেউ শুকনো কথা বলছিল—“সময় সব ঠিক করে দেবে”, “ভগবানের ইচ্ছা”—ইত্যাদি। অর্নব এসব শুনতে চাইছিল না। তার মনে হচ্ছিল, এরা সবাই ফাঁকা কথা বলছে। সময় কিছুই ঠিক করবে না। তার ভেতরে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, সেটা আর কোনোদিন পূরণ হবে না। রাত নামল। বাড়ির ভেতর নিস্তব্ধতা। কেবল মায়ের চাপা কান্না শোনা যাচ্ছিল। অর্নব নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ল, কিন্তু চোখে ঘুম এল না। তার মাথায় একের পর এক দৃশ্য ঘুরছিল— রিয়ার সঙ্গে সেই রাতের ঘটনা, বাবার পোড়া দেহ, মায়ের অসহায় চিৎকার। মনে হচ্ছিল, সব কিছুর প্রতি একটা অদ্ভুত ঘৃণা জন্ম নিচ্ছে। রিয়ার জন্য প্রতারণা, মায়ের জন্য অসহায়তা—সবকিছু মিলিয়ে তার বিশ্বাস ভেঙে পড়ছিল। সকালে উঠে দেখল মা বারান্দায় বসে আছেন।  তার চোখ লাল, গালে অশ্রুর দাগ। চুল এলোমেলো, গায়ের শাড়ি ভাঁজহীন। মনে হচ্ছিল, রাতভর কাঁদতে কাঁদতে ভেঙে পড়েছেন। অর্নবকে দেখে সুমিতা তার দিকে তাকালো। চোখে অসহায়তা, তবু একটা ভরসার রেখা ফুটে উঠল।  সে ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললো, “তুই-ই এখন আমার সব… তুই ছাড়া আমি কিছুই না…আপন কেও নেয়।” অর্নবের বুক কেঁপে উঠল। তার ভেতরে প্রতিজ্ঞা জন্ম নিল—এবার থেকে মাকে সে একা হতে দেবে না। তবে রাত নামলেই বাবার আগুনে পোড়া দেহ চোখে ভেসে উঠত। ধোঁয়া, ছাই আর চিৎকারে ভরে যেত ঘর। অর্নব বিছানায় শুয়ে চুপচাপ কান্না করত। সে জানত, এখনো অনেক পথ বাকি। বাবার মৃত্যু শুধু শুরু—এখন থেকে তাকে আরও অনেক দুঃস্বপ্নের ভেতর দিয়ে হাঁটতে হবে। ওদিকে সুমিতাও নিজের রুমে নিজের রঙ্গিন পোশাক ছেড়ে সাদা পোশাক পরেছে। চলবে…………
Parent