আগুণের পরশমণি;কামদেব - অধ্যায় ১৬

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-61473-post-5622508.html#pid5622508

🕰️ Posted on June 7, 2024 by ✍️ kumdev (Profile)

🏷️ Tags:
📖 1307 words / 6 min read

Parent
ষোড়শ পরিচ্ছেদ সকালবেলা চা করে দিতে গেলে নিশীথ হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপ নিতে নিতে বলল,তুমি রান্না ঘরে ঢুকেছো তোমার না শরীর খারাপ। কাল ঘেষতে দেয়নি তাই রাগ হয়েছে ইলিনা মনে মনে হাসে।বলল,কি করব বলো আমার তো পাচটা কাজের লোক নেই। কাজের লোকের কথা বলতে নিশীথ আর কথা বাড়ায় না। কে যেন ডাকছে।ইলিনা দ্রুত গিয়ে দরজা খুলে একটি লোককে ভিতরে এনে বাসালো।ইলিনা লোকটির সামনে বসে হাত বাড়িয়ে দিতে লোকটী সিরিঞ্জ ফুটিয়ে রক্ত নিতে থাকে।নিশীথ বুঝতে পেরে বলল,এই হয়েছে কায়দা গেলেই একগাদা টেস্টের ফরমাস। লোকটি বলল,কি বলছেন স্যার ড.মিত্র কিন্তু খালি খালি টেস্ট করতে দেন না। আপনি আপনার কাজ করুন তো,আমাকে ডাক্তার চেনাচ্ছে। রক্ত নেওয়া হয়ে গেলে লোকটি জিজ্ঞেস করে,ম্যাম রিপোর্ট কি বাড়িতে দিয়ে যেতে হবে? দরকার নেই আমাকে তো ডাক্তার দেখাতে যেতেই হবে। লোকটা চলে যেতে নিশীথ বলল,সেই পাচিকেই দেখাতে হবে? দেখানো তো হয়ে গেছে।এবার খালি রিপোর্টগুলো দেখিয়ে আসব।   নিশীথ স্নানে চলে গেল ওকে অফিসে বেরোতে হবে।ভাত চাপিয়ে দিয়েছে হল কিনা দেখতে রান্না ঘরে গেল ইলিনা।দুটো চড়াই রান্না ঘরের জানালায় কিচির কিচির করতে করতে এসে বসল।এরা কি ঝগড়া করছে নাকি প্রেমালাপ? নাকি খেতে চাইছে বোঝার উপায় নেই। ইলিনা ভাবে এদের স্থায়ী কোনো স্বামি বা স্ত্রী হয়না।একসময় দুজনে ঠোটে ঠোটে ঘষাঘষি করে ফুরুৎ করে উড়ে গেল।  নিশীথ খেতে বসেছে। আজ একটু তাড়াতাড়ি ফিরো।ইলিনা বলল। কেন আজ আবার কি হল? ওবেলা ডাক্তারের কাছে যাব।  একাই তো গেছিলে আজ আবার আমাকে কেন? তুমি রাগ করেছো? তোমার শরীর খারাপ আমাকে বলবে না?কি হয়েছে তোমার? সারা শরীর বিষ ব্যথা বমি-বমি ভাব। নিশীথ খাওয়া শেষ করে উঠে পড়ল।বমি-বমি ভাব কিছু হল নাতো?যাইহোক টেষ্টে নিশ্চয়ই ধরা পড়বে।এইবার বুঝতে পারে কেন ইউরিন টেষ্ট করতে দিয়েছে পাচি ডাক্তার। মালা মুখার্জী বিষণ্ণমুখে ঘরের চারদিকে চোখ বোলাতে থাকেন।এই সব ছেড়ে তিনি আজ চলে যাবেন।রনোকে খুব মিস করবেন।ছেলেটা দোকানে বসে বসে লাইফটা হেইল করে দিল।খ্যাল-খ্যাল করে হাসে না বটে কিন্তু ওর মনে নেই কোনো দুঃখবোধ।এখন দোকানে একা মনে হয়।বেশবাস ঠিক করে বেরিয়ে পড়লেন। আরণ্যক একা বসে আছে একটু পরেই দোকান বন্ধ করে খেতে যাবে।মালা মুখার্জীকে দেখে বুঝতে পারে তার কাছেই আসছে।আরণ্যক বিরক্ত হল না।খারাপ লাগে আজকের পর আর তাকে দেখতে পাবেনা। গাড়ী ঠিক হয়েছে?মালা মুখার্জী এসে জিজ্ঞেস করেন। তুমি রেডি হয়ে থাকবে ঠিক সাতটায় আমি গাড়ী নিয়ে পৌছে যাব। মালা মুখার্জী ব্যাগ খুলে টাকা বের করেন। টাকা কিসের? গাড়ী ভাড়া দিতে হবে না? সে ড্রাইভারকে তুমি দিয়ে দিও। ছেলেটা বদলালো না মালা মনে মনে ভাবেন। আচ্ছা প্লেনের টিকিট বাড়ীতে না তোমার কাছে? আমার কাছে এই ব্যাগেই আছে,কেন? আমি প্লেনের টিকিট কোনোদিন দেখিনি একবার দেখাবে? ইচ্ছে করছে কোলে তুলে চুমু খেতে।প্লেনের টিকিট অনেকেই দেখেনি কিন্তু এভাবে কেউ বলতে পারে?টিকিট বের করে মালা বললেন,তোমার কাছে রাখো আর দেখো। আরণ্যক টিকিটটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে।এমন কিছু বৈশিষ্ট্য নজরে পড়ল না।টিকিটটা ফিরিয়ে দিয়ে বলল,তোমার টিকিট তুমিই রাখো। মালা বাসার দিকে ফিরতে থাকেন।এ ছেলেকে বাকানো সহজ কর্ম নয়।কোন মেয়ের ভাগ্যে আছে কে জানে।  ইলিনা সাতটা বাজতেই শাড়ি-টাড়ি পরে রেডি হয়ে বসে আছে নিশীথের পাত্তা নেই।ঘনঘন ঘড়ি দেখে কাটা এখন আটটা ছুই-ছুই।নিশীথ কি ইচ্ছে করে দেরী করছে?আবার মনে হল এক্সিকিউটিভ র‍্যাঙ্কের এই হচ্ছে মুষ্কিল কখন যে কি দায়িত্ব এসে পড়ে।মনে মনে স্থির করে নিশীথ আসুক না-আসুক ন-টা বাজলেই বেরিয়ে পড়বে ইলিনা।পিঠের নিচে বালিশ দিয়ে চোখ বুজে ভাবতে থাকে। নীচে গাড়ী নিয়ে পৌছাতে মালা নেমে এলেন।আরণ্যক ড্রাইভারের পাশে সামনে বসেছিল।মালা বললেন,নেমে উপরে গিয়ে দেখে এসো তো দরজা ঠিক-ঠিক বন্ধ করেছি কিনা? আরণ্যক নেমে উপরে উঠে গেল।কিছুক্ষণ পর নেমে আসতে মালা ওর হাতে তালা চাবি দিয়ে বললেন,এবার সদর দরজায় তালা লাগিয়ে দাও।তালা লাগিয়ে আসতে মালা ওর হাত চেপে ধরে টেনে পিছন নিজের পাশে বসালেন।গাড়ী চলতে শুরু করে।আরণ্যকের একটা হাত মালার দু-হাতে ধরা।আর তো দেখা হবে না সেজন্য আরণ্যক কিছু বলেনা।আড়চোখে দেখল বয়স হলেও মিসেস মুখার্জীকে বেশ দেখতে লাগছে। গাড়ী বড় রাস্তায় পড়ে গতিবেগ বাড়ায়। হাতটা গালে চেপে মালা বললেন,আমি তোমাকে খুব মিস করবো। আরণ্যক জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে। তোমার স্মৃতিতে আমি একজন কামকাতর মহিলা হিসেবে আমি জানি। এসব পুরানো কথা কেন বলছেন আরণ্যক চুপ থাকে। তুমি ঈশ্বর মানো? শুনেছি দেখিনি তাকে। মালা হাসলেন এমন উত্তরই আশা করেছিলেন। আরণ্যক বলল,বিবেকানন্দের একটা কথা,বহুরূপে সম্মুখে তোমার ছাড়ি কোথা সেবিছো ঈশ্বর জীবে প্রেম করে যেজন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর। আমি ঈশ্বরের সঙ্গে একাত্ম হতে চেয়েছিলাম।জীবনে হাতছানি অনেক পেলেও মালা মুখার্জীকে কেউ বিচলিত করতে পারেনি।সেদিনের জন্য আমার মনে কোনো পাপবোধ নেই।আজ না বুঝলেও একদিন তুমি বুঝবে সেদিন মালা মুখার্জীর জন্য অনুশোচনা হবে।জানিনা সেদিন । আমি থাকব কিনা? এসব কথা বলবে নাতো ভাল লাগেনা।   বিমান বন্দরে গাড়ী ঢুকতে মালা বললেন,আচ্ছা রনো আমি যদি তোমায় কিছু টাকা দিই তুমি নেবে? না।দৃঢ গলায় বলল আরণ্যক। ট্রলি ব্যাগ নিয়ে আরণ্যক গাড়ী থেকে নেমে এগোতে থাকে।পিছন থেকে এসে মালা ব্যাগটি নিয়ে বললেন,তুমি আর কত করবে এবার আমার বোঝা আমাকেই বইতে দাও।গেট পেরিয়ে মালা ঢুকে পিছন ফিরে হাত নাড়তে থাকেন।আরণ্যকের চোখ ঝাপসা হয়ে এল।চোখের আড়ালে চলে গেলে আরণ্যক ফিরে এসে গাড়ীতে উঠে বসল।একী মোবাইলটা ফেলে গেছেন।আরণ্যক হাসল বুঝতে পারে এটা মালার কৌশল।মোবাইলটা পকেটে পুরে নিল। লোকজন নেই ফাকা চেম্বার ড.মিত্র বেরোবার তোড়জোড় করছেন।হুড়মুড়িয়ে ঢুকল ইলিনা। একী আপনি?কটা বাজে দেখেছেন?ড.মিত্র বললেন। তাহলে কি আমি চলে যাব? রিপোর্ট এনেছেন?ভিতরে চলুন। ড.মিত্র নিজের জায়গায় বসে রিপোর্টে চোখ বোলাতে বোলাতে বললেন,ওষুধগুলো নিয়মিত খাচ্ছেন তো? হ্যা ম্যাম। চুলকানিটা কমেছে? ইলিনার খেয়াল হয় আরে তাইতো আজ সারাসিন তো চুলকায়নি।বলল,ম্যাম আর চুলকানি নেই। গুডলাক বেশী স্প্রেড করতে পারেনি।এতে বন্ধ্যাত্ব পর্যন্ত হয়ে যেতে পারত।ওষুধগুলো চালিয়ে যান। আর কোনো ঝুকি নেই বলছেন? ড.মিত্র চোখ তুলে বললেন,বলেছিলাম আপনার হাজব্যাণ্ডকে একবার দেখব উনি আসেন নি? অফিসের কাজে আটকে গেছে--। এত রাতে অফিস? মানে উনি এক্সিকিউটিভ র‍্যাঙ্কে আছেন--। কোন অফিস বলুন তো? আজ্ঞে এল আই সি। এল আই সি কি নাম আপনার হাজব্যাণ্ডের? নিশীথ বর্মন। হু-উ-ম। আপনি চেনেন? একই নাম কতজনের থাকতে পারে। হি ইজ এ্যা গ্রেট চিটার।গলা শুনে সবাই ঘুরে তাকায়। অধ্যাপক বসু কখন ঢুকে পড়েছেন কেউ খেয়াল করেনি। ড.মিত্র বললেন,কি হচ্ছে কি মনু?ওর হাজব্যাণ্ডের কথা হচ্ছে। স্যরি ম্যাডাম আই ডিড নট আণ্ডারস্ট্যাণ্ড। ড.মিত্র উঠে সুখকে চেয়ারে বসিয়ে বলল, উনি আমার স্বামী অধ্যাপক সুখদা রঞ্জন বসু।আপনি ওর কথায় কিছু মনে করবেন না।তুমি এখানে কেন এসেছো? ম্যাডাম আপনি পেশেণ্ট দেখছেন এদিকে বাড়ীতে একটা পেশেণ্ট খাবি খাচ্ছে সে খেয়াল আছে? ইলিনা অস্বস্তি হয় তার জন্য ম্যাডামের দেরী হয়ে গেল বলল,আমি জানতাম না বাড়ীতে আপনার পেশেণ্ট আছে। ড.মিত্র হেসে বললেন,দূরারোগ্য ব্যাধি পেশেণ্ট আপনার সামনে বসে আছেন।সারাদিন খেয়াল থাকে না বাসায় ফিরলে ওনার মোমোকে না দেখলে খাবি খায়। আপনাদের দেখে আমার মন ভরে গেল।ইলিনা বলল। আপনি তো সুন্দর বাংলা বলেন।অধ্যাপক বললেন। বাংলা জল হাওয়ায় বড় হয়েছি বাংলা বলতে পারব না?আচ্ছা প্রফেসার বোস আপনি কি বলছিলেন গ্রেট চিটার-- বাদ দিন একই নাম তো কতজনের থাকে তাই না? ঠিক আছে আপনি ঐ লোকটার কথাই বলুন আমার শুনতে ইচ্ছে করছে। ড.মিত্র বললেন মনু তোমরা কথা বল আমি গোছগাছ করে নি। লোকটার কথা শুনবেন?একেবারে শুরু থেকে বলি।একদিন কলেজে আচমকা একজন স্টাফ রুমে ঢুকে লেকচার শুরু করল কিভাবে ভবিষ্যৎ নিরাপদ করা যায়।পরে জানলাম উনি এল আই সির পলিসি করাতে চান। উনি কি এল আই সির অফিসার? না না এলআইসির অফিসারদের খেমেদেয়ে কাজ নেই ঘুরে ঘুরে পলিসি করবে।এ একজন টাউট। আপনি পলিসি করলেন? আমাদের কেউ কেউ করেছে।আমি বর্তমান নিয়ে ব্যস্ত ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবার সময় নেই।জানেন লোকটার খালপাড়ায় নিত্য যাতায়াত।খালপাড়া জানেন তো? নাম শুনেছি। ব্রথেল।এত সাহস লোকটা আমার বাড়ীতে এসে উপস্থিত--। ড.মিত্র বললেন,তুমি পলিসি করবে না বলে দাও তাই বলে ঐভাবে তেড়ে যাওয়া ঠিক হয়নি ইলিনার শরীরের মধ্যে কাপুনি শুরু হয়।সে মোবাইলে ছবি বের করে বলল,দেখুন তো প্রফেসার এই লোকটি কিনা?   প্রফেসর ঝুকে ছবিটা দেখে মুখটা কালো হয়ে গেল।ইলিনার দিকে না তাকিয়ে বললেন,আপনাদের কি লাভ ম্যরেজ? না আমার মাম্মী পছন্দ করে বিয়ে দিয়েছেন। একবার খোজ খবর করবেন না?যাক গে যা হবার হয়ে গেছে।আমি নারী শক্তিতে বিশ্বাস করি।মোমো না থাকলে কোথায় ভেসে যেতাম।মোমোর সামনে বলে বলছি না,মোমোর জন্য আমি একটা সুশৃঙ্খল জীবনে ফিরে আসতে পেরেছি।আমার বিশ্বাস আপনিও পারবেন লোকটাকে সৎ পথে ফিরিয়ে আনতে। অনেক ধন্যবাদ প্রফেসর বসু আজ আমি আসি। ড.মিত্র বললেন,ওষুধের কোর্সটা কমপ্লিট করবেন। মাতালের মত টলতে টলতে বেরিয়ে গেল ইলিনা।কোনদিকে যাবে টিক করতে পারেনা।হাতে ধরা রিপোর্টগুলো দুমড়ে মুচড়ে দলা পাকিয়ে ছুড়ে ফেলে দিল।হাওয়ায় উড়তে উড়তে চলেছে।হঠাৎ খেয়াল হয় ওতে তার নাম লেখা আছে।দলাটা ধরার জন্য পিছনে ছুটতে থাকে।কানে একটা গানের সুর ভেসে আসতে থমকে দাঁড়ায়। আগুনের পরশমণি ছোয়াও প্রাণে  এ জীবন পুণ্য করো  গানের অর্থ না বুঝলেও সুরটা যেন তার শরীর মনে এক অভূতপূর্ব অনুভুতি সৃষ্টি করে।ইউটিউবে থেকে গানটি লোড করে শুনতে থাকে।মনের সমস্ত গ্লানি যেন আগুনের স্পর্শে ছাই হয়ে মিলিয়ে যেতে থাকে।  নতুন করে বাচার প্রেরণা ফিরে পেল ইলিনা ব্রাউন। 
Parent