অঘটনঘটন পটিয়সী (নতুন আপডেট ৩৬) - অধ্যায় ৫০
আপডেট ১৮
ক
সারপ্রাইজিং দুইটা কলের পর মাহফুজ গত একদিন ধরে চিন্তা করছে কি করা যায়। মাহফুজ বুঝতে পারছে নুসাইবা আর আরশাদ সাহেব ওর সম্পর্কে বিভিন্ন ভাবে খোজখবর নেওয়ার চেষ্টা করছে। এটা কী ভাল না খারাপ ইংগিত এটা নিয়ে পুরোপুরো নিশ্চিত হতে পারছে না। মাহফুজের মনে হচ্ছে একদিকে সিনথিয়ার বিয়ের পটেনশিয়াল পাত্র হিসেবে হয়ত ওর ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে খোজ নিচ্ছে। আবার অন্যদিকে কোন পাত্রের ট্যাক্স ফাইলের তথ্য কোন বিয়ের সময় খোজা হয় সেটা মাহফুজের জানা ছিল না। এতদিন রাজনীতি করে অন্তত এইটুকু বুদ্ধি হয়েছে যে মানুষকে আটকানোর জন্য বরং ট্যাক্স ফাইল বেশি গূরুত্বপূর্ণ। মাহফুজ ট্যাক্স ফাইল করে গত চার বছর ধরে। ওর এক ট্যাক্স ল’ইয়ার বন্ধু এই কাজটা করে দেয়। সামান্য কিছু টাকা মাত্র চার্জ করে ওকে ট্যাক্স ফাইল করে দেবার জন্য। মাহফুজ আজকে সকাল সকাল বন্ধুর অফিসে চলে এসেছে। মাহফুজ বন্ধু কে ঘটনা খুলে বলল, মানে যতটুকু খুলে বলা যায়। ওর বন্ধু সিনথিয়া কে চিনে, ওর সাথেই দেখেছে অনেকখানে। এখন সিনথিয়ার উচ্চপদস্থ আত্মীয় স্বজন ওর ট্যাক্সের কাগজ খুজে ওর সম্পর্কে কি কি জানতে পারে সেটা জানতে চাইল মাহফুজ।
মাহফুজের প্রশ্নের উত্তরে ওর বন্ধু উত্তর দিল ট্যাক্স ফাইল ঘেটে অনেক কিছু জানা যায় যার ফাইল তার সম্পর্কে। আবার কিছুই জানা যায় না। মাহফুজ বলল হেয়ালি না করে ব্যাখ্যা করে বল। বন্ধু বলল, শোন, ট্যাক্স ফাইলে প্রত্যেক ব্যক্তি তার বৈধ আয় ব্যায়ের সব হিসাব শো করে সাধারণত। তার মানে কয়েক বছরের ট্যাক্স ফাইল ঘাটলে একজন ব্যক্তির মোটামুটি বৈধ সব ইনকাম সোর্স আর খরচের সোর্স সহজে আইন্ডেটিফাই করা সম্ভব অতিরিক্ত কোন পরিশ্রম না করেই। এই তথ্য কাজে লাগিয়ে ঐ ব্যক্তির জীবন যাত্রা কে ফলো করতে পারলে জানা সম্ভব তার অবৈধ ইনকাম আছে কিনা। থাকলে সেটা কীভাবে বের করা যাবে এইসব। আর এই ফাইল ঘেটে আসলে তেমন কিছু জানা সম্ভব না একজন ব্যক্তি সম্পর্কে। আমি ট্যাক্স লইয়ার। আমি দেখেছি মানুষজন কিভাবে সুন্দর করে ট্যাক্সের ফাইলে মিথ্যা বলে। তাই সেই ফাইল ঘেটে মানুষ কে যাচাই করা বই পড়ে এভারেস্টের চূড়ায় উঠার স্বাদ নেবার মত ব্যাপার। কারণ ট্যাক্স ফাইলের মিথ্যা ধরতে গেলে তোকে আর রিসোর্স ব্যয় করতে হবে। তোর ব্যাংক একাউন্ট, জমির দলির এইসবের খোজ বের করতে হবে এবং সেটা দিয়ে ট্যাক্স রিটার্নের ফাক ফোকর বের করতে হবে। এ ধরণের কাজ করতে পারে সরকারি দূর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ বা কোন গোয়েন্দা সংস্থা। তুই বেশ বড় যুব নেতা কিন্তু এখনো এমন বড় কোন নেতা না যে তোর পিছনে রাষ্টীয় সংস্থা গুলো লাগবে। তাই নিশ্চিন্তে থাক।
বন্ধুর কথায় মাহফুজ পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হতে পারল না। জিজ্ঞেস করল যদি কার পক্ষে এইসব দূর্নীতি দমন কমিশন বা পুলিশের সাহায্য ছাড়া ব্যাংকের হিসাব বের করা সম্ভব হয় তাহলে কি ট্যাক্স ফাইলের মাঝে ঘাপলা বের করতে পারবে? বন্ধু উত্তর দিল, হ্যা তাহলে সম্ভব। মাহফুজের মনে হল এই একটা জায়গায় নুসাইবা আর আরশাদ ডেডলি কম্বিনেশন। আরশাদ ওর ট্যাক্স ফাইল ঘাটলে আর যদি নুসাইবা বাংলাদেশ ব্যাংকের থ্রুতে ওর ব্যাংক হিসাব চেক করে তাহলে কি হতে পারে? প্রায় ত্রিশ লাখ টাকা ট্যাক্স ফাইলে শো না করে ব্যাংকে রাখা আছে বড়জোর এই হিসাব বের করতে পারবে। মাহফুজ ট্যাক্স একদম শত পার্সেন্ট দেয় এটা ঠিক না তবে যে টাকা টা দেয় না সেটার জন্য এই ল’ইয়ার বন্ধুর সাহায্যে ফাক ফোকর বের করে সেটা আইনত বৈধ করে রাখে। খালি এই ত্রিশ লক্ষ টাকা কনটেনজেনসি ফান্ড হিসেবে রাখা। যখন তখন দরকার হতে পারে ওর ব্যবসায় ক্যাশ টাকার। তাই এই টাকা এভেইলেভল রাখার জন্য একটা ব্যাংকে রাখা কোন খানে ইনভেস্টমেন্ট না করে। আর ইনভেস্টমেন্ট ছাড়া খালি পড়ে থাকা টাকা করের হিসাবে বড় ঝামেলার। তাই এটাকে আর শো করা হয়নি ট্যাক্স ফাইলে। ওর বন্ধু বলল এইটা নিয়ে বেশি চিন্তা না করতে কারণ খুব বেশি বড় কোন ক্ষমতাশালী ওর পিছনে না লাগলে এটা নিয়ে ভাবার কিছু নেই। আরশাদ সাহেব ক্ষমতাশালী তবে খালি উনার দপ্তর কাজে লাগিয়ে এই কাজ উনি করতে পারবেন না। আর তিন চারটা দপ্তর কে কাজে লাগাতে হবে। আর কে না জানে, সরকারী অফিসে সমন্বয়হীনতা বড় জিনিস। সবচেয়ে বড় কথা এটার পিছনে যত সময় আর শ্রম ব্যয় করতে হবে আরশাদ সাহেব সে সময় আর শ্রম ব্যয় করবেন কিনা সেটাই আসল ব্যাপার।
বন্ধুর অফিস থেকে বের হয়ে বাইকে চড়ে নিজের কাজে যেতে যেতে মাহফুজ নিজের ইনকাম সোর্স গুলো নিয়ে ভাবে। ওর সমসাময়িক ছাত্র বা যুব নেতাদের থেকে অর্থনৈতিক ভাবে মাহফুজ অনেক গোছানো। সাধারণত ফিন্যান্সিয়ালি স্টেবল ওর বয়েসী নেতাদের বেশির ভাগের হয় বড়লোক ফ্যামিলের ছেলে অথবা চাদাবাজির সাথে জড়িত। মাহফুজ এর কোনটাতেই নেই। ওর বাবার ছোট একটা ব্যবসা আছে। মধ্যবিত্ত ফ্যামিলি। রাজনীতির সাথে জড়িত লোকজন ব্যবসায় নামলে রাজনৈতিক কানেকশন কে ইউজ করে টাকা কামাই করে। ওর বাবা সেই জায়গায় ব্যর্থ। বলা যায় আগের আমলের আদর্শিক রাজনীতি করা লোক। দল কে ভালবাসে তাই দলের সাথে আছে। মাহফুজ এইসব দেখে অনেক কিছু শিখেছে। আজকালকার রাজনীতিতে খালি সময়, শ্রম আর লয়ালটি দিলে হয় না সাথে লাগে টাকা। ওর বাবার সম সাময়িক সময়ে রাজনীতি শুরু করা লোকজন এখন বেশ উপরে উঠে গেছে সেই জায়গায় ওর বাবা এখনো একটা ওয়ার্ডের সেক্রেটারি। মাহফুজ দেখেছে প্রতিবার কমিটি তৈরি হবার সময় টাকার খেলা হয়, এছাড়া দলের কর্মীদের নিয়ে নিজস্ব একটা বলয় তৈরি করতে গেলে যে খরচ করার দরকার সেই খরচের টাকা ওর বাবার নেই। একে তো দলের পরিচয় ব্যবহার করে ব্যবসা বা চাদাবাজি কোনটাতেই ওর বাবা নেই তাই দলের ভিতরের রাজনীতিতে উপরে উঠার বড় শক্তি টাকাও ওর বাবার নেই। মাহফুজ দেখেছে ওর বাবা কে ওয়ার্ডের ভিতর থেকে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা কি রকম পছন্দ করে, সম্মান দেয় কিন্তু দিন শেষে সেই সম্মান আর ভাল পদ দেয় না। পদ দেয় লবিং আর টাকার জোর সাথে কত বড় বলয় মেইনটেইন করতে পার সেটার উপর। মাহফুজ তাই ব্যবসায় ঢুকেছে। ওর বাবার কাছ থেকে পাচ লাখ টাকা নিয়েছিল সেটাই ওর মূলধন ছিল। সেখান থেকে সব শুরু। তবে সিনথিয়ার এতে অবদান ছিল।
মাহফুজ তখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে দলের সভাপতি কিন্তু ঠিক এর পরের ধাপে ছাত্র রাজনীতি থেকে যুব রাজনীতিতে ঢুকার উপায় খুজে পাচ্ছিল না। হয়ত ছোটখাট কিছু পদ পাবে কিন্তু ভাল পদ পেতে গেলে লাগবে টাকা সাথে দল কে দেখানো যে ওর আন্ডারে অনেক ছেলেমেয়ে আছে। সেই জন্যেও চাই টাকা। সিনথিয়ার সাথে এইসব হতাশা নিয়ে কথা বলার সময় সিনথিয়া বলেছিল তুমি ব্যবসা শুরু কর না কেন। সেখান থেকে শুরু। প্রথম কাজটা নিয়েছিল নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোটখাট একটা টেন্ডারে। এরপর আস্তে আস্তে নানা সরকারি অফিসে আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মূলত ও ব্যবসা করছে। ওর মূল কাজ যেসব টেন্ডারের মাধ্যমে সরকারি অফিস বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন রকম স্টেশনারি জিনিস থেকে শুরু করে অফিস সাপ্লাইয়ের জিনিস কিনে সেগুলো বাগানো। এইজন্য রাজনৈতিক কানেকশন কাজে লাগানো, টুপাইস জায়গামত সাপ্লাই দেওয়া সব অলিগলি চিনে গেছে মাহফুজ। তবে বাবার একটা আদর্শ মাহফুজ কড়া ভাবে মাথায় রেখেছে। কোন চাদাবাজি না। এই টেন্ডারের ব্যবসা করতে করতে মাহফুজ ওর দ্বিতীয় ব্যবসায় জড়িয়েছে। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট। ওর কলেজ লাইফের দুই বন্ধুর একটা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি আছে। কাস্টমার ফার্স্ট নামে। ওদের ব্যবসার কনসেপ্ট টা ভাল, সার্ভিস ভাল। তবে ওরা ঠিকমত কাজ বাগিয়ে উঠতে পারছিল না। সেখানে ওরা দুইজনে প্রস্তাব নিয়ে আসে মাহফুজের কাছে পার্টনার হওয়ার। দশ পার্সেন্ট ক্যাপিটাল পার্টনার আর বাকি দশ পার্সেন্ট ওয়ার্কিং পার্টনার। অর্থাৎ মাহফুজের শেয়ার হবে ২০% এবং বাকি দুই জনের ৪০% করে আশি পার্সেন্ট মোট ১০০ পার্সেন্ট। মাহফুজ পাচ লাখ টাকা দিয়ে ১০% ক্যাপিটাল শেয়ার কিনে নিল। আর বাকি দশ পার্সেন্ট ওয়ার্কিং শেয়ারের মূল কাজ হিসেবে সরকারি অফিসে দৌড়াদৌডি করে কাজ যোগাড় করা। অনেক সময় কোন অনুষ্ঠান আয়োজন করতে গেলে কোন অফিসের হয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা নানা ঝামেলা করে এইসব সামলানো হল মাহফুজের কাজ। তবে মেইন ডে টু ডে ফাংশন দেখে ওর দুই বন্ধু। এটাও ওর ভাল লাভের উৎস। মাহফুজ ভেবে দেখে ওর দুই ব্যবসায় কিছু ফাকিঝুকি থাকে, সরকার কে ট্যাক্স কম দেওয়ার জন্য কিছু ভুয়া কাগজ পত্র থাকে। এর বাইরে ওর ব্যবসায় অবৈধ কিছু নেই। তাই আরশাদ সাহেব তার পিছনে লাগলে একটু ভোগান্তি হয়ত হবে তবে এর বেশি কিছু করতে পারবে না। আর মাহফুজ জানে কিভাবে এইসব সামলাতে হয়। অনেক সময় প্রতিপক্ষ বুঝার আগে তাকে পিছন থেকে হামলা করতে হয় যাতে সে এমন ব্যস্ত হয়ে পড়ে যে তার দিকে মনযোগ দেবার সময় না পায়। মাহফুজ সোলায়মান শেখ কে ফোন দেয়। একটা ফেস টু ফেস মিটিং করা দরকার।
খ
সকাল সকাল আরশাদের কাছ থেকে ফোন পেয়ে অবাক হয়ে গেল মাহফুজ। ফোন নাম্বার সেভ করা ছিল তাই বুঝতে পারছে কে করেছে। কয়েকবার রিং হয়ে ফোন কেটে গেল। মাহফুজ বুঝতে পারছে না ফোন ধরবে কিনা। একটু পর একটা মেসেজ আসল। দিস ইজ আরশাদ, সিনথিয়া’স ফুফা। প্লিজ কল মি হোয়েন ইউ আর ফ্রি। মাহফুজ ভেবে পায় না ঠিক কি কারণে কল করতে পারে লোকটা। ওর ট্যাক্স ফাইল চেক করছে শোনার পর থেকেই আরশাদ সম্পর্কে অনেক সচেতন হয়ে গেছে মাহফুজ। এই লোক কে দেখতে যতটা সহজ সরল মনে হয় অত সহজ সরল না এটা মাহফুজ এখন নিশ্চিত। আজকে অবশ্য সন্ধ্যার সময় সোলায়মান শেখের সাথে দেখা করার কথা। সোলায়মান শেখ বলেছে বেশ কিছু খবর আছে। কি খবর জিজ্ঞেস করতেই বলল, ফোন বলবে না এইসব কথা। সামনা সামনি হওয়াই ভাল। আর যেন বাকি টাকা সাথে রাখে। মাহফুজ সেটা টাকা তোলার জন্য সকাল সকাল ব্যাংকে এসেছিল। এর মধ্যেই ফোন। টাকা তোলা শেষে মাহফুজ রিং ব্যাক করল আরশাদ সাহেব কে।
হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম। আমি মাহফুজ বলছিলাম। সিনথিয়ার বন্ধু।
হ্যা, হ্যালো। মাহফুজ কেমন আছ? (গলায় আন্তরিকতার সুর)
জ্বি, ভাল আছি। আপনি কেমন আছেন স্যার? ম্যাডাম?
তুমি সিনথিয়ার বন্ধু। আমাদের স্যার ম্যাডাম বলো না। খারাপ দেখায়। আংকেল আন্টি বলো।
জ্বি, আংকেল (আরশাদের আন্তরিকতায় একটু অবাক মাহফুজ)
ঐদিনের প্রোগ্রামটা ভাল হয়েছিল। তোমাকে থ্যাংক্স। এতগুলো ইয়াং মাইন্ডসের সাথে আমাদের ইন্টারেক্ট করার সুযোগ করে দেবার জন্য।
থ্যাংক্স তো আমার দেবার কথা আংকেল। আপনি আর আন্টি কষ্ট করে এসে আমাদের ভার্সিটির ছেলে মেয়েদের উৎসাহ দিয়ে গেলেন। সিনথিয়া এই অনুষ্ঠানের কথা শুনে বলেছিল আপনারা এটার জন্য পারফেক্ট হবেন।
সিনথিয়ার সাথে তোমার নিয়মিত কথা হয়? (মাহফুজ টের পায় তথ্য অনুসন্ধান চলছে ছদ্মবেশে, তাই সতর্ক হয়)
অত বেশি না, মাঝে মধ্যে একটু কথা হয়। বিদেশে পড়তে গিয়ে ও একটু লোনলি থাকে তো। তাই ফ্রেন্ড হিসেবে মাঝে মধ্যে একটু ফোন দেয়।
আচ্ছা, আচ্ছা। কত দিনের বন্ধু তোমরা।
জ্বি, চার বছরের মত (সতর্ক উত্তর দেয় মাহফুজ)
তোমরা তো এক ভার্সিটিতে পড় নি তাহলে ফ্রেন্ডশিপ হল কিভবে?
আমাদের কিছু কমন ফ্রেন্ড আছে সেই সূত্রে বন্ধুত্ব।
কিছু মনে করছ না তো এত প্রশ্ন করছি দেখে।
না না, আপনি মুরব্বী মানুষ। সিনথিয়ার ফুফা, প্রশ্ন করতেই পারেন।
হাহা, তুমি ভাল ছেলে। আজকালকার অনেকে একটু প্রশ্ন করলেই বিরক্ত হয়। ভাবে প্রাইভেসির উপর হস্তক্ষেপ হচ্ছে।
না না, আপনারা ভাল এর জন্য তো প্রশ্ন করেন (মাহফুজ একটু তেল দেওয়ার চেষ্টা করে)
হ্যা, সেটাই অনেকে বুঝে উঠতে পারে না।
জ্বি, জ্বি
আচ্ছা শোন, তোমাকে একটা দরকারে ফোন দিয়েছি। আগে সেই কথাটা সেরে নেই।
জ্বি, আংকেল বলেন।
তোমার একটা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি আছে না?
জ্বি আংকেল। তবে ঠিক ঐটা আমার না। আমি এটার পার্টনার। আর দুই জন বন্ধু আছে আমার সাথে এই কোম্পানির পার্টনার হিসেবে (মাহফুজ সতর্ক হয়ে তথ্য দিচ্ছে, জানে একটা মিথ্যা বললে বা ভুল বললে পরে সেটা ওর উপর দিয়ে চাপানো হতে পারে)
আচ্ছা, গুড গুড। এই বয়সেই ব্যবসা দাড় করিয়ে ফেলেছে।
নাহ আংকেল তেম কিছু না, চেষ্টা করছি আরকি।
আচ্ছা, মেইন কথা হল। আমি একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করছি সেটার দ্বায়িত্ব আমি কাউকে দিতে চাই। ঐদিন তুমি তোমার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির কথা বলেছিলে আজকে সেটার কথা মনে আসল। ভাবলাম তোমার সাথে কথা বলে দেখি। (মাহফুজ এবার আর সতর্ক। পরিচিত কার অনুষ্ঠান আয়োজন করা অনেক ঝামেলার। অন্তত ওর দুই বন্ধু যেসব গল্প বলেছে তাতে মাহফুজ নিশ্চিত)
আচ্ছা আংকেল বলেন
তোমার কোম্পানি কি এই অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পারবে?
আংকেল আমি তো একা না কোম্পনিতে তাই ঠিক এখনি কথা দিতে পারছি না। তবে আপনি যদি একটু আর ডিটেইলস দিতেন। আপনাদের কি অনুষ্ঠান, কতজন আসবে, বাজেট কত, কিভাবে অনুষ্ঠান করতে চান। এইসব তাহলে আমরা একটা প্রপোজাল আপনাকে দিতে পারব অনুষ্ঠানের এবং মোট খরচের। (পুরো প্রফেশনাল থাকার চেষ্টা করে মাহফুজ)
থ্যাংক্স মাহফুজ
আরেকটা প্রশ্ন আংকেল, অনুষ্ঠানটা কবে হবে?
১৪ তারিখ (মাহফুজ মনে মনে হিসাব করে)
আংকেল মাত্রতো আর ১৫ দিন আছে তাহলে, এত তাড়াতাড়ি কিভাবে করব
একটা সমস্যায় পড়লাম বলেই তো তোমাকে ফোন দিলাম। তুমি করিতকর্মা ছেলে তুমি পারবে। আমাদের ডিপার্টমেন্টের এলমনাই এসোশিয়েশনের আমি এখন সেক্রেটারি। এনুয়াল পিকনিক আমার দ্বায়িত্বে। আগে যাদের সাথে কথা বলছিলাম এরা অনেক অদক্ষ। তাই এই সময়ে এসে সব বাদ দিতে হল। সবার কাছ থেকে চাদাও আদায় করা হয়ে গেছে। ঝামেলায় পড়ে গেছি তাই তোমাকে ফোন দিলাম।
মাহফুজ বুঝে এটা একটা ফাদ। এত অল্প সময়ে একটা অনুষ্ঠান আয়োজন করতে গেলে সফল না হবার সম্ভাবনা বেশি। সেক্ষেত্রে সব দোষ মাহফুজের উপর দিয়ে যাবে। আবার অনুষ্ঠান আয়োজন করতে না চাইলে সিনথিয়ার ফুফা ফুফু কে সারাজীবনের জন্য ক্ষেপিয়ে দেওয়া হবে। কোন দিকে যাবার রাস্তা নেই। মাহফুজ মনে মনে ভাবে ডর কি আগে জিত হ্যায়। কয়েক সেকেন্ড হিসাব করে বলে ঠিকাছে আংকেল। আপনাদের সব ডিটেইলস আমি একটা ইমেইল দিচ্ছি সেখানে পাঠিয়ে দিন। আমি দেখি কি করতে পারি। আমার পার্টনাররা রাজি হলে আপনার প্রোগ্রাম আমরা করব। আরশাদ বলে তোমাকে এই দ্বায়িত্বটা নিতেই হবে। নাহলে এত গুলো লোকের সামনে আমার মুখ রক্ষা হয় না। মাহফুজ বলে, ওকে আংকেল দেখি কি করতে পারি।
(বাকী অংশ পরের পৃষ্ঠায়)