অঘটনঘটন পটিয়সী (নতুন আপডেট ৩৬) - অধ্যায় ৬৩
ঘ
জেবার সাথে কথা হবার পর থেকেই মাহফুজ দুই দিন ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। সামনে কয়েকটা টেন্ডার আছে, সেগুলোর কাজ নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে হচ্ছে কিছু। তবে এর মধ্যে মাহফুজ জেবা কে দেওয়া কথা রাখবার চেষ্টা করেছে। নিউ মার্কেট থানার ওদের দলের সভাপতির সাথে দেখা করেছে। মাহফুজ কে একদম ছোটবেলা থেকে চিনে। ওর বাবার বন্ধু মানুষ। কিছুক্ষণ কথাবার্তা হবার পর মাহফুজ ওর উদ্দ্যেশ ব্যাখ্যা করল। ওর পরিচিত একজনের ছেলের গভমেন্ট ল্যাবরেটরি কলেজে ভর্তির ব্যবস্থা করে দিতে হবে। ভদ্রলোক বললেন এখন তো ভর্তির সিজন না, পরের বছর আসতে তাহলে চেষ্টা করে দেখবেন। তবে মাহফুজ হাল ছাড়ল না, বলল চাচা এইটা একটু করে দিতে হবে। আমি আপনার ভরসায় আছি। ছেলের বাবা-মা আমার পরিচিত। ছেলের ভর্তির ব্যাপারে খুব মন খারাপ। উনারা তেমন কাউকে চিনে না যে তার সাহায্য নিবে। আমাকে বলছে তখন আমার আপনার কথা মাথায় আসছে। আমি জানি কেউ পারলে একমাত্র আপনি পারবেন। এইভাবে কিছুক্ষণ অনুরোধ করার পর একটু মন গলল ভদ্রলোকের। মাহফুজের সামনেই কলেজের হেডমাস্টার কে ফোন দিল। হেডমাস্টারের সাথে কথায় কথায় উনি বললেন আগামী পরশু উনার কাছে একটা ভর্তির রিকোয়েস্ট নিয়ে উনার এক ভাতিজা যাবে এই রিকোয়েস্ট টা একটু অনার করতে হবে। মাহফুজ শুনে বুঝল ঐদিকে হেডমাস্টার কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে। এইবার সভাপতি বলল, হেডমাস্টার স্যার এই বছর আমি তো একটাও ভর্তির রিকোয়েস্ট পাঠাই নাই। এই একটা পাঠাচ্ছি একটু অনার করেন। আপনার সব দরকারে তো আমি কাজে আসি। বড় বড় মন্ত্রী এমপিরা তো আর এসে আপনার কলেজের ছোটখাট সমস্যা সমাধান করে দেয় না। গত মাসে কলেজের সামনে রিক্সা স্ট্যান্ড সরানো নিয়ে যে ঝামেলা হল সেটা কে সামলিয়েছে বলেন? এইসব শুনে সম্ভবত হেডমাস্টার তদবির মেনে নিলেন। ফোন রেখে মাহফুজ কে বললেন, তোমার কাজ হয়ে গেছে। আগামী পরশু ঐ প্যারেন্টস কে নিয়ে সকাল সকাল কলেজে দেখা করবা। আমার রেফারেন্স দিবা। এরপর কি হয় আমাকে জানাবা। মাহফুজ অনেক ধন্যবাদ দিয়ে বের হয়ে আসল।
মাহফুজ যখন জেবার ছেলের জন্য তদবিরে ব্যস্ত নুসাইবা তখন ওর পরের প্ল্যান নিয়ে কাজে ব্যস্ত। নুসাইবা ওর এক কাজিনের প্রেম ভেংগেছিল খুব সুক্ষ উপায়ে। সেই প্রেমে নুসাইবাদের ফ্যামিলির কেউ রাজি ছিল না। কিন্তু যত বাধা দেওয়া হচ্ছিল সেই বাধায় যেন আর উপচে পড়ছিল প্রেমের জোয়ার। তখন সবার হয়ে নুসাইবা এমন এক চাল দিয়েছিল যাতে কিস্তিমাত। নুসাইবার মতে এক প্রেম ভাংগার উপায় হল আরেক প্রেম। যারা প্রেম করছে তাদের সামনে এমন কোন ছেলে বা মেয়ে হাজির কর যে আর বেশি আকর্ষণীয়, যার আকর্ষণ তারা ফেলতে পারবে না। এরপর যখন হালকা হালকা কেমিস্ট্রি কাজ করবে তখন প্রেমিক প্রেমিকার মনে সন্দেহ জাগিয়ে দাও একে অন্য কে নিয়ে। আস্তে আস্তে নতুন কেমিস্ট্রি আর মনে জাগা নতুন সন্দেহ মিলে পুরাতন প্রেম ভেংগে দিবে। কার আর এখানে নতুন কিছু করতে হবে না। যা হবার নিজেই হবে। কার আর এখানে জোর করে কিছু করতে হবে না। সাপ মরবে তবে লাঠি ভাংগবে না। নুসাইবা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাজ করতে গিয়ে নানা ব্যাংক ভিজিট করতে হয় অফিসিয়াল কারণে। সেখানে এক মেয়ের সাথে পরিচয় হয়েছে, সাবরিনার বয়সী। দারুণ সুন্দরী, স্মার্ট, সেক্সি। আফসানা। মাঝে মাঝেই কথা হয়। একদিন কথায় কথায় নুসাইবা বলেছিল আমি খুব ভাল তেহারি রান্না করি। সেটা শুনে আফসানা বলেছিল আপা একদিন আপনার বাসায় যেতে হবে সেই তেহারি খেতে। এখন নুসাইবা সেই তেহারিকেই টোপ হিসেবে ব্যবহার করবে বলে ভাবছে। মাহফুজকেও দাওয়াত দিবে সেই তেহারি খাবার জন্য। নুসাইবা দেখেছে সম বয়সী ছেলে মেয়েরা সুন্দরি মেয়ে বা হ্যান্ডসাম ছেলে থাকলে সেখানে ফ্ল্যার্টিং এর সুযোগ ছাড়তে পারে না যদিও তাদের প্রেম থাকে। নুসাইবা এই অনুমানের উপর ভিত্তি করেই এই চালটা চালছে। নুসাইবা মনে মনে আশা করছে আফসানা আর মাহফুজের মধ্যে একটা কেমিস্ট্রি জমে উঠবে। সেই আশা নিয়েই মাহফুজের ফোন নাম্বারে ডায়াল করল নুসাইবা।
নুসাইবার ফোন পেয়ে অবাক হয়ে গেল মাহফুজ। কি কারণে ফোন করেছে এই ভদ্রমহিলা। আপাতত উনার সাথে কোন কথা বলার ইচ্ছা নেই মাহফুজের। কারণ মাহফুজ জানে ভিতরের রাগ এখনো টগবগ করছে, এই মূহুর্তে উনি যদি আবার কিছু উলটা পালটা বলে বসে তাহলে মাহফুজের পক্ষে মুখ আটকে রাখা সম্ভব হবে না। সেই ক্ষেত্রে যে ঝামেলা হবে সেটা ওর নুসাইবা আর আরশাদ কে রাজি করানোর সম্ভাবনা একদম বন্ধ করে দিবে। তাই ফোনটা বেজে বেজে বন্ধ হয়ে যেতে দিল। এর দুই মিনিট পর আবার ফোন এল নুসাইবার। মাহফুজ এবারো সতর্ক। ফোন ধরবে কি ধরবে না। দোমনা করতে করতে মাহফুজ ফোনটা রিসিভ করে ফেলল। ফোন ধরে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে নুসাইবার আন্তরিক গলা। কি ব্যাপার মাহফুজ কোন খোজ খবর নেই কয়েকদিন। মাহফুজ উত্তর দেয় না, একটু ব্যস্ত ছিলাম। নুসাইবা বলে আমার উপর রাগ করে আছ নাকি? মাহফুজ কি উত্তর দিবে খুজে পায় না। নুসাইবা বলে আরে তুমি সিনথিয়ার বন্ধু। আমি সিনথিয়ার ফুফু মানে তোমারো ফুফু। আমাকে এখন থেকে ফুফু ডাকবে বুঝলে। আর ফুফুরা একটু বকাঝকা করলে কি মন খারাপ করে থাকতে হয়। নুসাইবার গলা খুব আন্তরিক, সেখানে কোন ক্ষোভ বা অন্য কোন উদ্দ্যেশের সন্ধান পেল না মাহফুজ। তাই আর বেশি কনফিউজড। আর যেভাবে কর্তৃত্বের সাথে নুসাইবা কথা বলছে যেন মাহফুজের অনেকদিনের পরিচিত। মাহফুজ তাই কিছু বলার সুযোগ পেল না। নুসাইবা বলে চলছে, শোন ঐদিন আমার মাথা একটু গরম ছিল তাই তোমাকে কিছু কথা বলে ফেলেছি কিছু মনে কর না। নুসাইবার আচমকা ফোন আর এরকম আন্তরিক ব্যবহারে একদম কনফিউজড হয়ে থাকা মাহফুজ বলে, জ্বী, না, না। আমি রাগ করে নেই। ব্যস্ততার কারণে আপনাদের কে আর ফোন দিতে পারি নি। এটা যখন মাহফুজ বলছে তখন মাহফুজ নিজেই বিশ্বাস করতে পারছে না যে সে এটা বলছে। নুসাইবা যেন একটা যাদু করে ফেলেছে মাহফুজ কে। নুসাইবা তখন তুমি সিনথিয়ার বন্ধু এই জন্য তো তোমার সাথে একটু অভিভাবক সুলভ কথা বলেছি। যদিও আমার ঐভাবে বলা উচিত হয় নি। তোমরা এখন অনেক বড়। মাহফুজ অবাক হয় এমন ভাবে নুসাইবা কথা বলছে যেন অনেকদিনের পরিচয় মাহফুজের সাথে আর যেন অনেক ছোটকাল থেকে চিনে ওকে। নুসাইবা ওকে বলে, শোন আসলে যে কারণে তোমকে ফোন দিয়েছি। আগামী শুক্রবার দুপুরে তোমার আমার বাসায় দাওয়াত। মাহফুজ কিছু বুঝে উঠার আগেই টের পেল, সে ফোনে উত্তর দিয়েছে হ্যা, অবশ্যই আগামী শুক্রবার চলে আসব। নুসাইবা বলে, ওকে তখন দেখা হবে। তোমার আংকেল আর আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করব। নুসাইবা ফোন রাখার পর মাহফুজ ভাবতে থাকে কি হল। সিনথিয়া মাঝে মাঝে বলে ওর ফুফু যাদের সাথে ভাল তাদের সাথে সব চাইতে চার্মিং। তখন ওনার চার্ম অগ্রাহ্য করা যায় না। জেবার বলা আরেকটা কথা মনে পড়ে, নুসাইবা আপা এত আন্তরিক ভাবে কথা বলে না। তখন অনেক সময় পুরাতন দেওয়া বকা গুলো আর মাথায় থাকে না। মাহফুজ বুঝে ও নুসাইবার ট্রিকে পড়ে গেছে। এখন বাসায় দাওয়াত দিয়ে, খাবার খাইয়ে ঐদিনের অপমানটা মুছে ফেলবে। এত মাহফুজের খুব একটা সমস্যা নাই। এইভাবে বাসায় দাওয়াত দেওয়া মানে মাহফুজ কে কিছুটা হলেও মেনে নেওয়া। তাই এই অপমানের বদলে যদি কিছুটা সামনে এগুনো যায় লক্ষ্যের দিকে তাতে তার সমস্যা নেই। তবে ওর মেজাজ খারাপ হয় এটা ভেবে আর বাকি সবার মত ও নুসাইবার ট্রাপে পড়েছে। নুসাইবা সবাই কে বকঝকা দিয়ে, খারাপ ব্যবহার করে পরে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে ভুলিয়ে দেয়। ওর সাথেও সেইম জিনিস করল। আর রাজনীতিতে এত অভিজ্ঞ মাহফুজ এইসব জানা স্বত্তেও কিছু বলার আগে ট্রাপে পরে নুসাইবার দেখানো পথে চলল। মেজাজটা খারাপ হল আর। মাহফুজ এতদিন গর্ব ভরে ভেবে এসেছে সবাইকে কথার যাদুতে ভুলানো ওর বৈশিষ্ট্য, আজকে নুসাইবার যাদুতে তাই কাবু হয়ে মাহফুজের মেজাজ খারাপ হয়। দিস ওম্যান ইজ সামথিং, সামথিং ডিফরেন্ট।