অঘটনঘটন পটিয়সী (নতুন আপডেট ৩৬) - অধ্যায় ৭৫

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-52771-post-5314316.html#pid5314316

🕰️ Posted on August 3, 2023 by ✍️ কাদের (Profile)

🏷️ Tags:
📖 1216 words / 6 min read

Parent
আপডেট ২২ পাহাড় থেকে আমরা যখন একটা পাথর ফেলে দেই সেটা তখন আর আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। আমরা আশা করতে পারি চলার পথে এটি নির্দিষ্ট টার্গেট কে পিষে দিয়ে যাবে তবে এর বাইরে কিছু ঘটবে কিনা সেটা আমরা আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। বাতাসের গতিপথ, পথে থাকা প্রতিবন্ধক, অসমান ভূমি অনেক কিছু যেগুলো শুরুতে আমাদের হিসাবের বাইরে ছিল সেটা হয়ত শেষ পর্যন্ত সেই পাথরের গতি পথের নিয়ন্ত্রক হয়ে দাঁড়ায়। এই সূত্রটা মাহফুজ ভুলে গিয়েছিল। আর তাই আরশাদের ঘটনা টা শুরু করলেও এর পরিণতি কই দাঁড়াবে সেটা মাহফুজের হিসাবে ছিল না। ক মোখলেস পেপারটা সামনে রাখার পর থেকে আরশাদ এক রকম বাকশূণ্য হয়ে বসে থাকলেন কয়েক মিনিট। মোখলেস আরশাদের অবস্থা দেখে কোন কথা না বলে চুপচাপ অফিস থেকে বের হয়ে গেল। আরশাদ টের পেলেন ঘামছেন উনি অফিসের এসির ভিতর বসেও। প্রতিদিন অফিসে ঢোকার দশ মিনিট পর অফিস স্টাফ সকালের ফাইল গুলো নিয়ে আসে সাইন করানোর জন্য। আরশাদ সাহেব সেই ফাইল গুলো আধা ঘন্টার ভিতর ক্লিয়ার করে দেন। আজকে কেউ আসছে না রুমের ভিতর যদিও আধা ঘন্টা হয়ে গেছে অফিসে ঢোকার। আরশাদ সাহেব টের পেলেন অফিসের সবাই খবরটা দেখেছে। তাই তার মন মেজাজ কি সেটা না জেনে ভিতরে ঢুকতে ভয় পাচ্ছে। আরশাদ সাহেব নিজের অনুভূতি কি সেটা ঠিক নিজেই বুঝে উঠতে পারছেন না। এক রকম শূণ্য শূণ্য লাগছে মাথার ভিতর আর বুকের ভিতর অস্থিরতা। এমনকি ভিতরের খবরটাও ভাল করে পড়েন নি শিরনাম ছাড়া। এক রকম হতভম্ভ হয়ে বসে আছেন। ঘড়ির দিকে তাকালেন। সাড়ে এগারটা বাজে। প্রায় এক ঘন্টা হয় অফিসে এসেছেন কিন্তু টের পান নি সময় কোথায় দিয়ে চলে গেছে। টেবিলে সামনে রাখা পানির গ্লাসটার দিকে তাকালেন, কখন যে পুরো গ্লাস শূণ্য করে ফেলেছেন সেই খেয়াল নেই। আরশাদ সাহেব বুঝতে পারছেন এই রিপোর্টটা একটা ঝড় তুলতে পারে। প্রায় সাত আট বছর ধরে এক অফিসে কোন বদলি ছাড়া টিকে থাকা কঠিন। তার উপর লাস্ট প্রমোশনের পর ঢাকায় থাকা তার সব ব্যাচমেটকে যে যখন ঢাকার বাইরে পাঠানো হল তখন তিনি একমাত্র ঢাকায় টিকে গিয়েছিলেন। এতে অনেকের চক্ষুশূল হয়েছিলেন। তার উপর বেশ কয়েক বছর ধরে ঢাকা কর অঞ্চল-৭ এর মত লুক্রেটিভ পোস্টিং ধরে রাখার কারণে অনেকেই যে মনে মনে তার উপর হিংসা পুষে রেখেছে সেটা তিনি জানেন। এখন এইসব লুকানো হিংসা, রাগ কিভাবে বের হয়ে আসে সেটা ব্যাপার। আরশাদ যত শান্ত ভাবে সব ভেবে সামাল দেওয়ার কথা ভাবছেন ততই চিন্তা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। খেয়াল করে দেখলেন হাত কাপছে। বেশি উত্তেজনার সময় সাধারণত তার হাত কাপে। আরশাদ বুঝতে পারছেন এই পত্রিকার রিপোর্ট তার ভিতরে একটা ভিত নাড়িয়ে দিয়েছে। কাপা কাপা হাতে পেপার টা নিয়ে পড়তে শুরু করলেন। শিরনাম ঢাকা কর অঞ্চল-৭, দূর্নীতির স্বর্গরাজ্য। বেশ সুলিখিত রিপোর্ট। প্রতিটা সরকারি অফিসের নিচের দিকে কিছু কমন দূর্নীতি হয়। টাকার বিনিময়ে পিয়ন বা অফিস স্টাফরা খবর বের করে দেওয়া, ফাইলের সিরিয়াল এগিয়ে দেওয়া এমন কিছু কাজ করে। বাংলাদেশে এমন কোন অফিস নেই যেখানে এই ধরনের কাজ গুলো হয় না। রিপোর্টের শুরুটা এভাবে। বেশ ভাল ভাবে রিপোর্টার তুলে ধরেছে কিভাবে কোন কাজে আসলে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকা লাগে কিন্তু কিছু চা-পানি খাওয়ার জন্য বখশিশ দিলে সেই কাজ কিভাবে নিমিষে মিনিটের ভিতর হয়ে যায়। আরশাদ একটু হাফ ছাড়েন। রিপোর্টের প্রায় অনেকটুকুই শেষ। এখনো পর্যন্ত তার ব্যাপারে কোন কথা আসে নি। হ্যা, এই অফিসের প্রধান হিসেবে এইগুলা তার দেখার কথা কিন্তু তৃতীয়, চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের দূর্নীতির জন্য তার কিছু হবে না এটা উনি বুঝেন। বড় জোর হেড অফিস থেকে ঝাড়ি শোনা লাগবে অথবা একটা লিখিত দাপ্তরিক আদেশ আসবে যাতে এইসব দূর্নীতির ব্যাপারে কঠোর হন। সবে মাত্র দম ফেলেছেন তখন খেয়াল করলেন রিপোর্টের পরের অংশ শুরু হয়েছে তাকে নিয়ে। এই প্যারার শুরুটা রিপোর্টার বেশ ভাল ভাবে করেছে। “শুধু নিচে নয় বরং মাথাতেও ধরেছে পচন”। তিনি কিভাবে অদক্ষ হাতে এই অফিস সামলাচ্ছেন আর যেই কারণে এখানে কর্মচারীরা এত দূর্নীতি করতে পারছে তার ফিরিস্তি। আরশাদ সাহেব অবাক হলেন। এমন কোন সরকারী অফিস নেই যেখানে এইসব দূর্নীতি নেই। এই সব ব্যাপারে বেশি কড়াকড়ি করলে তৃতীয় আর চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী ইউনিয়ন অফিস অচল করে দিবে। এটা সবাই জানে। এই রিপোর্টার জানার কথা। তার পরেও এমন ভাবে  লিখেছে যেন উনি অফিসের বড়কর্তা হিসেবে একদম অচল। তার অদক্ষতাই এর প্রধান কারণ। সাংবাদিকদের উপর ক্ষেপে থাকেন। এরা কলম হাতে পেয়ে যা তা লিখে, ইচ্ছামত। পড়তে পড়তে এর পরের অংশে এসে চমকে উঠলেন। সাংবাদিক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জুনিয়র স্টাফের বরাতে জানাচ্ছে, আরশাদ সাহেব নিজে এইসব দূর্নীতিগ্রস্ত কর্মচারী এবং অফিসারদের সামলে রাখেন না কারণ তিনিও এদের দলে। নিজের দূর্নীতি আড়াল করতে তিনি বাকিদের ব্যাপারে কোন কথা উঠান না। একদম মিথ্যা কথা। রাগ বাড়ছে আরশাদ সাহেবের। নিশ্চয় কেউ রিপোর্ট করিয়েছে। এর পরের প্যারা পড়তে গিয়ে রীতিমত বিষম খেলেন। সেখানে বলা তার পিছনে আছে বাংলাদেশ রাজস্ব বোর্ডের একজন মেম্বার এবং বাংলাদেশ সরকারের একজন উচ্চপদস্থ আমলা। যাদের দাপটে উনি এত কিছুর পরেও এই অফিসে এত বছর টিকে আছেন। আরশাদ সাহেব বিষম খেলেন কারণ এই তথ্যটা ঠিক। তার মূল খুটির জোর বাংলাদেশ রাজস্ববোর্ডের একজন মেম্বার। এটি সরকারের সচিব পদমর্যাদার একটি পোস্ট। এছাড়া আরেকজন উচ্চ পদস্থ আমলা তাকে ব্যাকিং দেন, যিনি সরকারের প্রিয়পাত্র। যদিও পত্রিকায় তাদের নামধাম আসে নি কিন্তু রিপোর্টের ধরণ দেখে আরশাদ বুঝে গেছেন রিপোর্টার ব্যাপারটা জানে। কে দিল রিপোর্টার কে এই খবর? তার কোন ব্যাচমেট বা কলিগ যে তার উপর ইর্ষান্বিত? হবে সম্ভবত। তার সার্ভিসে লোকেরা সবাই জানে তার পিছনে এই দুই জন যতদিন আছে ততদিন তাকে সরাসরি কিছু করা কঠিন। তবে পত্রিকা এভাবে সরাসরি তাকে এই দুইজনের সাথে লিংক করায় একটু বিব্রত আর ভয় পেয়ে গেলেন আরশাদ। পত্রিকার রিপোর্ট যদি তার দুই ওয়েল  উইশার কে সংকিত করে তাহলে হয়ত তারা কিছুটা পিছু হটবেন। সরাসরি এই মূহুর্তে হেল্প করতে পারবেন না। অন্তত এই রিপোর্ট প্রকাশ হবার পর তার ভাল ব্যাকিং দরকার এই পোস্টিং টিকিয়ে রাখতে। রিপোর্টের শেষ লাইন পড়ে কাশি উঠে গেল আরশাদের। কাশতে কাশতে আবার পড়লেন। এটা একটা সিরিজ হতে যাচ্ছে। তিন পর্বের। নেক্সট পর্ব আসবে দুই দিন পর। আর সেই পর্বে নাকি আলোচনা করা হবে আরশাদ সাহেবের দূর্নীতির ফিরিস্তি। এতক্ষণ পর্যন্ত মাথায় এই যত বুদ্ধি এসেছিল এই রিপোর্টের ব্যাড ইম্প্যাক্ট থেকে বাচার সব যেন এই এক লাইনে তছনছ হয়ে গেল। আগামী দুই দিন পর এই রিপোর্টে কি আসবে সেটা ভাবতে থাকলেন আরশাদ। উনি নিয়মের বাইরে গিয়ে কাজ করেন এবং তার জন্য কিছু সুযোগ সুবিধা নেন কিন্তু এটাকে দূর্নীতি বলতে নারাজ তিনি। অন্য অনেক অফিসারের অত সবার কাছ থেকে সুযোগ নেন না তিনি এবং সবাই কে সুযোগ দেন না। উনি রাঘব বোয়াল ছাড়া কার সাথে খেলেন না। আবার সব রাঘব বোয়ালের সাথেও খেলেন না। খুব ধীরে সুস্থে বেছে বেছে তিনি ক্লায়েন্ট নেন। এমন ভাবে কাজ গুলো করেন যাতে কেউ না জানে। তাই এই পত্রিকা আগামী রিপোর্টে কি বলবে সেটা নিয়ে তার টেনশন হতে থাকে। একবার মনে হয় হয়ত পত্রিকার রিপোর্টার জেনে গেছে তার ভিতরের গোমড়। আবার মনে হয় কীভাবে সম্ভব। এমনকি তার অফিসের পিয়ন, স্টাফ এরা পর্যন্ত জানে না। সাধারণত কোন অফিসার ঘুষ খেলে সবার প্রথমে জানে এরা। কোন ভাবেই হিসাব মিলাতে পারেছেন না আরশাদ। একবার মনে হয় যেভাবে অফিসের পিয়নদের ঘুষ খাওয়ার দায় তার উপর চাপিয়েছে সেরকম আজগুবি কিছু লিখবে। সেটা লিখলে ভাল তাহলে পুরো রিপোর্টের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বাদ সিনিয়র অফিসারদের বুঝ দেওয়া যাবে। আবার যদি সত্যি সত্যি পত্রিকাটা তার সব গোমড় ফাস করে দেয় তাহলে কি হবে ভাবতেই তার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায়। সারাজীবন নিজের একটা সৎ ইমেজ গড়ে তুলেছেন। আজকের এই রিপোর্ট সেটায় একটা ধাক্কা। তবে সেটাও সামাল দেওয়া সম্ভব। তবে পরের রিপোর্টে যদি সত্যি সত্যি তার ভিতরের ডিলিংস নিয়ে কিছু লেখে তাহলে একদম তার এতদিনের সাজানো ইমেজ ভেংগে পড়বে। এরপর অফিসে যে জেরার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে তা তো আছেই। একদম চাকরির উপর গিয়ে পড়বে সব। আরশাদ আবার ঘড়ির দিকে তাকালেন। দেড়টা বাজে। সময় আবার কোথা দিয়ে দৌড়ে বের হয়ে গেল টের পান নি। এই একটা রিপোর্ট তার সব হিসাব নিকেশ উলট পালট করে দিয়েছে। চারদিকে অন্ধকার দেখতে থাকেন আরশাদ সাহেব।
Parent