অমৃতের সন্ধানে - অধ্যায় ৫৮

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-33626-post-2969936.html#pid2969936

🕰️ Posted on February 20, 2021 by ✍️ Rajdip123 (Profile)

🏷️ Tags:
📖 586 words / 3 min read

Parent
ভালোই স্পীডে চলছে হাওড়াগামী কালকা মেল। ছোট ছোট স্টেশান গুলো একের পর এক পার হয়ে যাচ্ছে। ভোর হয়ে আসছে। চারিদিক সাদা কুয়াশার আস্তরণে ঢাকা পড়ে আছে। নিজের মোবাইল টা বের করে তাকায় একবার। রিমির একটা ছোট্ট এসএমএস ভেসে ওঠে, “ তুমি কি ট্রেনে”? ইন্দ্র একটা ছোট্ট করে উত্তর পাঠায়, “হ্যাঁ, তুমি কোথায়? সব ঠিক আছে তো”?  “হ্যাঁ, সব কিছু ঠিক আছে, খুব ঠাণ্ডা”, উত্তর টা আসতেই কিছুটা নিশ্চিন্ত হয় ইন্দ্র। একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে, চোখ টা একটু বন্ধ করে ইন্দ্র। কতক্ষন ঘুমিয়েছিল বুঝতে পারেনি। একটু কোলাহলের শব্দে চোখ টা খুলে যায় ইন্দ্রর। ট্রেন আসানসোল স্টেশানে দাঁড়িয়ে আছে। হকার দের আওয়াজ কানে আসে, এই চা…… চা চাই, চা…… আওয়াজ টা ইন্দ্রের জানালার সামনে আসতেই, একজন কে ডেকে এক কাপ চা নেয় ইন্দ্র। ট্রেনের পরের স্টপেজ দুর্গাপুর। গরম ধুমায়িত চায়ের ভাঁড় হাতে নিয়ে পয়সা মিটিয়ে আবার কাঁচ টা নামিয়ে দেয় ইন্দ্র। কয়েক চুমুক চা খেতেই ঘুমের ভাব টা কিছুটা হলেও প্রশমিত হয় ইন্দ্রের। ট্রেন আবার চলতে শুরু করে। মাঝে রানিগঞ্জ, ওন্দাল হয়ে দুর্গাপুর। বেশিক্ষন সময় লাগবে না আর। ওন্দাল পেরোতেই নিজের সিট ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় ইন্দ্র। এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ায় ট্রেনের দরজার সামনে। ট্রেন দুর্গাপুর স্টেশানে ঢুকছে। দরজায় ইন্দ্র দাঁড়িয়ে থাকে। তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রিমিকে খুঁজে চলেছে। এখানেও যাত্রীর সংখ্যা খুব কম। কিন্তু কোথায় রিমি? কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছে না কেন সে? মনের মধ্যে একটা তীব্র উৎকণ্ঠা বাসা বাঁধতে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই। ট্রেন থেকে নেমে প্লাটফর্মে এসে দাঁড়ায় ইন্দ্র। ওই তো রিমি। পড়নে একটা নীল টাইট জিন্স, পায়ে একটা সাদা স্নিকার, ওপরে একটা কালো রঙের কোর্টের মতন পড়েছে। মাথায় একটা উলের টুপি, ঠোঁটে একটা  মেরুন রঙের লিপস্টিক, কপালে একটা ছোট্ট টিপ। দারুন লাগছে দেখতে রিমিকে । রিমি হন্তদন্ত হয়ে তার পাশের কম্পারটমেনটে উঠছে। সেও দেখতে পেয়েছে ইন্দ্র কে। দেখেই একটু মুচকি হেসে হাত নাড়িয়ে উঠে পড়ে ট্রেনে। হেসে ফেলে ইন্দ্র। মনে মনেই বলে ওঠে, বাহহ…… বেশ স্মার্ট আছে তো। একজন হকার কে ডেকে আরও দুকাপ চা নিয়ে ট্রেনে উঠে পড়তেই ট্রেন চলতে শুরু করে। মনে মনে নিজেকে সাহস দেয় ইন্দ্র, যাক…… এতক্ষন অব্দি সবকিছু ঠিক ঠাক প্ল্যান মতন হচ্ছে। ধীরে ধীরে নিজের ট্রেনের মাঝের প্যাসেজ দিয়ে রিমির কম্পারটমেনটে প্রবেশ করে ইন্দ্র। হাতের ধুমায়িত চায়ের ভাঁড়। রিমির দিকে তাকাতেই দেখে পাশের এক ভদ্রমহিলার সাথে হেসে হেসে গল্প জুড়ে দিয়েছে। ইন্দ্র কে দেখতে পেয়েই, গলা উঁচু করে চিৎকার করে ডাকে, “এই যে ……… এইদিকে, এইদিকে”। ইন্দ্র এগিয়ে আসতেই যে ভদ্রমহিলার সাথে রিমি কথা বলছিল, তিনি আড়চোখে ইন্দ্রর দিকে আপাদমস্তক দেখে একটু হেসে নিজের সীটে বসে পড়েন। ইন্দ্র কিন্তু বুঝতে পারে, ভদ্রমহিলার চূড়ান্ত কৌতূহল তাদের দুজনকে নিয়ে।  রিমির পাশের সিট খালি থাকায়, ইন্দ্র সেখানে বসে পড়ে, রিমির হাতে গরম চায়ের ভাঁড় তুলে দেয়। দুজনে চায়ের ভাঁড়ে চুমুক দিয়েই পরস্পরের দিকে অবাক হয়ে তাকায়। রিমি নিজের মাথাটা একটু কাত করে ইন্দ্রের কাঁধে রাখে, আরেক হাত দিয়ে ইন্দ্রর হাত টা চেপে ধরে ফিসফিস করে বলে, “এই……… একটা কথা বলি তোমাকে?.........অবশেষে আমরা আবার এক হলাম গো। তুমি যখন আমাকে ছেড়ে গেছিলে, মনে হয়েছিল আমার পৃথিবীটা বোধহয় শেষ হয়ে গেল। কত রাত না ঘুমিয়ে তোমার জন্য কেঁদেছি জানো ইন্দ্র। এখন আর তোমাকে ছাড়া নিজেকে ভাবতে পারিনা। অস্থির অস্থির লাগে, ভীষণ একা মনে হয় নিজেকে। কষ্ট হয় ইন্দ্র আমার, আমরা কি এমন করেই চিরদিন দূরে দূরে থাকবো, এই শুনছো তুমি” বলে ইন্দ্রর থুতনি টা ধরে নিজের নরম গালের সাথে একবার স্পর্শ করিয়ে নেয়। সামনে বসা ভদ্রমহিলা এবার আর আড়চোখে না সোজা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ দুজনের দিকে। ইন্দ্র আর রিমি দুজনেই ব্যাপার টা লক্ষ্য করে, নিজেদের অজান্তেই হেসে ফেলে। ট্রেন তখন ডানকুনি ক্রস করছে তীব্র গতিতে। ইন্দ্র উঠে দাঁড়িয়ে রিমিকে বলে, “ তুমি একটু কাকিমার সাথে কথা বল, আমি এখনই আসছি আমার ব্যাগ টা নিয়ে। কিছুক্ষনের মধ্যেই ট্রেন হাওড়া  ঢুকবে”, বলে উঠে নিজের কম্পারটমেনটের দিকে এগিয়ে যায়।
Parent