অনঙ্গর অণু পানু (a collection of micro-stories) _ অনঙ্গদেব রসতীর্থ - অধ্যায় ১৭৮

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-31814-post-4870580.html#pid4870580

🕰️ Posted on July 9, 2022 by ✍️ anangadevrasatirtha (Profile)

🏷️ Tags:
📖 838 words / 4 min read

Parent
কান্না শহরের এক কোণে, ময়লা এই আকাশটার ঠিক নীচে, আমার বাস। একা-একা। কথাটা কাব্য করে না বললেও, এই রকম দাঁড়ায় যে, আমার মামা শহরতলীর যে গেস্টহাউসটায় ম্যানেজারি করে, মামার বদান্যতায়, তারই অব্যবহৃত চিলেকোঠাটায়, আর পাঁচটা বাতিল আসবাবের সঙ্গে, আমিও স্থান পেয়েছি। এখানে থাকার জন্য টাকাপয়সা কিছু দিতে হয় না আমাকে। মামা একটু ছিটিয়ালগোছের মানুষ হলেও, বিদেশবাসী এই গেস্টহাউস-মালিকের সঙ্গে মামার ভালোই খাতির আছে। তাই আমার মতো ভ্যাগবন্ডের শেষ পর্যন্ত একটা মাথা গোঁজার যায়গা মিলেই গেল… থাকাটুকু ফ্রি; তবে খাওয়াটা নয়। আমি বাইরেই খেয়ে আসি। রাস্তার ধারের ভাত-ডাল-মাছের সস্তা হোটেলে। এই আদ্দামড়া বয়সে, কপাল ফুটিফাটা করে এসে, সব ব্যাপারে মামার কাছে হাত পাততে, ভারি লজ্জা করে আমার। চিলেকোঠা থেকে একটা লোহার ঘোরানো সিঁড়ি বেয়ে ছাদে নামতে হয়। ছাদের এককোণে, জলের বড়ো ট্যাঙ্কিটার পাশে, এক-চিলতে বাথরুম। ওটাই আমি প্রয়োজনে ব্যবহার করি। আমার হাতে আপাতত তেমন কোনও কাজকর্ম নেই। মামার হয়েই এদিকে-ওদিকে দু-একটা ফাই-ফরমাশ খেটে দিই। তাতে মামাই স্নেহ করে মাস গেলে কয়েকটা টাকা হাত-খরচ মতো দেয় আমাকে।  কাজ নেই, তাই সকালে ঘুম থেকে ওঠবারও তাড়া নেই আমার। তাই আমি বেশ বেলা করেই, ঘোরানো সিঁড়িটা বেয়ে, ছাদে নেমে আসছিলাম।  এমন সময় দেখতে পেলাম, ছাদের কোণে, ট্যাঙ্কির সামনের অংশটায়, উবু হয়ে বসে, ফুলুড়ি কাপড় কাচছে। ফুলুড়ির ভরন্ত দেহটা, সকালের রোদে, চকচক করছে ঘামে। হাঁটু পর্যন্ত কাপড় তুলে, স্বাভাবিক নির্লোম পা দুটোর নধর মেয়েলী ত্বক বের করে বসে আছে মেয়েটা। কাচার তালে-তালে, ওর গুরুভার বুকটা, বুকের খাঁজে আটকে থাকা কম-দামি লকেটটা, একটা রিদিমিক্ নেশা ধরানো ছন্দে লাফাচ্ছে। দৃশ্যটা দেখে, আমার মাথাটা, কেমন যেন টাল খেয়ে গেল। আর ঠিক সেই মুহূর্তেই ফুলুড়ি আমার দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে, একটা অশ্লীল হাসিতে, নিজের পুরুষ্টু ঠোঁট দুটো ভরিয়ে তুলল। মামার কাছেই শুনেছি, ফুলুড়িরও কেউ কোথাও নেই। ওর বর ওকে ছেড়ে চলে গেছে। ওর পেটের বাচ্চাটা, পেটেই মরে গিয়েছিল; তারপর থেকে ও নাকি মা হওয়ার ক্ষমতাটাও হারিয়ে ফেলেছে। ফুলুড়ির অবস্থাটাও কী অনেকটা আমারই মতো? পৃথিবীর সব বঞ্চিত মানুষেরই এমন একা, আর নীরব একটা নিঃসঙ্গতায় মুড়ে থাকে?  দার্শনিক কথাগুলো ভাবতে-ভাবতে, ফুলুড়ির দিক থেকে জোর করে চোখটাকে সরিয়ে, বাথরুমের মধ্যে ঢুকে পড়লাম।  ময়লা কোমডের উপর শরীরের ভারটা ছেড়ে দিতে-দিতে, আবার প্রতিদিনের মতো ভাবতে শুরু করলাম, একদিন কী ছিল না আমার!  নিজের ঘর ছিল, সংসার ছিল, ভালো চাকরি ছিল এবং অফিস আওয়ারের পর, ঘনিষ্ঠ কোলিগটির সঙ্গে রীতিমতো ছ'মাস ধরে আঠালো প্রেম করে, তারপর সেই সুন্দরীটিকেই বিয়ে করেছিলাম আমি। বিয়ের পরে-পরেই আমার জীবনের একমাত্র অবলম্বন, আমার মা চলে গেলেন। তখন নতুন বউকে ঘিরেই, আমার বনস্পতির মতো জীবন, শিকড় বিন্যস্ত করবার চেষ্টা করল। কিন্তু প্রেমিকা, বউ হওয়ার পরই, হঠাৎ নরম গুটিপোকা থেকে, বিষধর কীটে রূপান্তরিত হয়ে গেল। কোনও মানুষ যে এতো নিখুঁতভাবে বিষাক্ত হয়ে উঠতে পারে, ভীষণ ভালো থেকে, রাতারাতি প্রবল শয়তান হয়ে উঠতে পারে, সে আমি আমার বউকে দেখেই জীবনে প্রথম প্রত্যক্ষ করলাম। আমার বউ খুব ধীরে-ধীরে আমাকে দংশন ও বিষ-প্রয়োগ শুরু করল। কেমিকাল কোনও বিষ নয়, মানসিক অশান্তির অবয়বহীন বিষ।  তখন রাতের ঘুম, দিনের খিদে, জীবনে বেঁচে থাকার মানে, সব আস্তে-আস্তে খসে যেতে শুরু করল আমার ভীতর থেকে। আমি তখন মদের বোতলের দিকেই নিজেকে একটু-একটু করে এগিয়ে দিলাম।  বউয়ের নাগপাশ থেকে বাঁচতে, বোতলের কাছাকাছি আসতেই, গেলাসের অবয়বে সহমর্মী মানুষও জুটে গেল দু-একজন। মাতাল অবস্থায়, আমি তাদের নিজের বন্ধু বলে ভুল করলাম। তারা পরম হিতার্থীর মতো, আমাকে আরও কড়া নেশার খোরাক, আরও বেশি করে যন্ত্রণা-কাতর স্নায়ুকে অবশ রাখবার সুলুক সন্ধান দিতে লাগল।  এমনকি এই বন্যার স্রোতের মতো বিপর্যস্ত অবস্থায়, আমার ভালো চাকরিটাও হাত ফসকে ভেসে যাওয়ার পর, ওই অস্বচ্ছ মদের গ্লাসের মতো বন্ধুরাই আমাকে, ঋণের মতো মোহময় পাঁককুণ্ডে একটু-একটু করে পুঁতে ফেলল। তারপর যখন প্রায় অপ্রকৃতিস্থ অবস্থায়, বউয়ের পাঠানো শমনধারী উকিলের কাঁধেই কোনওমতে ভর দিয়ে, আমি আদালতের মধ্যে এসে দাঁড়ালাম, তখন দেখলাম, আমার বউ খুব সুন্দর করে দাবার ঘুঁটি সাজিয়ে-টাজিয়ে, বসে রয়েছে ভরা কোর্টরুমে। ভাড়া করা উকিলটির এঁটো হাসির সঙ্গে ডুয়েট মিশিয়ে, আমার বউ কোর্টের ওই দাবার দানে, জলের মতো প্রমাণ করে দিল, আমি কতোটা লম্পট ও নেশাগ্রস্থ। আমার লালা থেকে, রক্তের নমুনা থেকে, এমনকি ময়লা পকেটটা থেকে পর্যন্ত তখন নিষিদ্ধ ড্রাগের নমুনা, খুব সহজেই ওরা আবিষ্কার করে ফেলল। তারপর আমার বউ যে দুটি লোকের দিকে আঙুল তুলে, দাপটের সঙ্গে বলল, আমি নাকি তাকে বারবার, দিনের-পর-দিন নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাধ্য করেছি, এই লোক দুটোর সঙ্গে টাকার বিনিময়ে বেডরুমে যেতে, সেই লোক দুটোকে দেখেও, নতুন করে অবাক হয়ে গেলাম আমি।  আরে! এরা যে আমার অস্বচ্ছ মদের গেলাসের ওপারে, নিজে থেকেই এসে, হাসি-মুখে জড়ো হয়ে গিয়েছিল একদিন… ওরা কিন্তু ভরা কোর্টরুমে নির্দ্বিধায় স্বীকার করে নিল, আমার নেশার অর্থ জোগাতেই, ওরা টাকার বিনিময়ে, আমার পারমিশনে এবং অত্যুৎসাহেই, আমার স্ত্রী-সম্ভোগে লিপ্ত হয়েছিল।  পরে জেনেছিলাম, এই লোক দুটো পেশাদার মিথ্যেবাদী; আমার বউয়ের নিকটতম ওই উকিলই, কোর্টের জাজমেন্টে হওয়ায় সাজায়, ওদের সামান্য দিনের জেল ও জরিমানার অর্থ জুগিয়েছিল। শয়তানির সহজতর সঙ্গদে, ওই উকিলবাবুটিই ছিল আমার পূর্বতন প্রেমিকা ও প্রাক্তন বউয়ের তখনকার নবতম প্রেমিক। তাই কোর্টের মল্লভূমে, আমার গা থেকে একটা-একটা করে সম্মানের কাপড়-চোপড় খুলে নিতে, ওই উকিলটা, দুঃশাসনের অল্টার-ইগো হয়ে, সর্ব শক্তি দিয়ে নেমে পড়েছিল।  কৌর্টে আমি কিছুই প্রায় বলতে পারিনি। আমি তখনও নেশার মধ্যেই, অর্ধেক বুঁদ হয়েছিলাম।  ফলে আমার চাকরি, আমার বাড়িঘর, আমার সঞ্চয়রাশি, এবং অর্জিত সুখ ও সম্মান, সবই আইনের সিরিঞ্জ সুকৌশলে ঢুকিয়ে, আমার শরীর থেকে চোঁ-চোঁ করে টেনে নিয়েছিল, আমার বউ ও তার উকিল-প্রেমিক। তারপর ছিবড়ে হয়ে থাকা আমার নেশাগ্রস্থ শরীরটাকে, নর্দমার পাশ থেকে কবে, কার কাছ থেকে খোঁজ পেয়ে, আমার এই সহৃদয় মামা যে এখানে কুড়িয়ে এনেছিল, তা আজ আর আমার খেয়াল নেই। (ক্রমশ)
Parent