অন্তর্বর্তী শূন্যতা - অধ্যায় ১৯
আয়ুষী – প্রচন্ড জোরে খিদে পাচ্ছে। খিদের চোটে মাথাটা পর্যন্ত ধরে আছে। সেটাও কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। ও বুঝতে পারছে না, এই মূহুর্তে ওর ঠিক কি করা উচিত। সন্ধ্যে থেকে তিন্নিকে বার বার ট্রাই করে যাচ্ছে তার ফোনে। কিন্তু বারবার সুইচড অফ আসছে। শেষ পর্যন্ত হাল ছেড়ে দিয়েছিল ও। কিন্তু শেষবার আরো একটা ট্রাই করে দেখলে হতো না? ফোনটা হাতে নিয়েও সেটাকে রেখে দিতে বাধ্য হল ও। ভুলেই গিয়েছিল চার্জ শেষ হয়ে গিয়ে ওর নিজের ফোনটাই সুইচড অফ হয়ে গিয়েছে। বিছানা থেকে উঠে গিয়ে ফোনটাকে চার্জে বসাল। তারপর আবার ফিরে এসে বসল বিছানায়। খিদেটা এবার সত্যিসত্যিই মাত্রাছাড়া মনে হচ্ছে। না খেলেই নয়। অনিচ্ছা সত্তেও বিছানা থেকে আরো একবার উঠে গিয়ে রুমের বাইরে গেল। ডাইনিং টেবিলে ওর খাবার ঢাকা আছে অন্যান্য দিনের মতই। চুপচাপ গিয়ে বসল। তারপর একটার পর একটা ঢাকা খুলে খাবার খেতে শুরু করল। খেতে ইচ্ছে করছে না যদিও, তবুও জোর করে খাচ্ছে। খাবারগুলো যেন ওর গলার মধ্যে দলা পাকিয়ে যাচ্ছে। কষ্ট করে গিলতে হচ্ছে খাবারগুলোকে। তবুও ও কিন্তু খাওয়া থামাল না। খেতে খেতে ওর মনে পড়ে যাচ্ছিল এক একটা ঘটনা।
গঙ্গার ঘাটের সেদিনের সেই ঘটনার পরে কেটে গেছে বেশ কিছুটা সময়। ওরা দুজনেই একই কলেজে ভর্তি হয়েছে। সেদিনের সেই ঘটনা নিয়ে ওর কেউ কোনো কথা বলেনি। তিন্নির মত ছটফটে একটা মেয়েও এই ঘটনাটাকে যেন বেমালুম ভুলে গিয়েছিল। সেদিনের পর থেকে ওর কিন্তু আর ঘনিষ্ঠ হয়নি। বা বলা ভাল ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ পায়নি। এই ভাবেই টুকটুক করে কেটে যাচ্ছিল ওদের দিনগুলো। পড়াশোনা, কলেজ, টিউশনি, গান, প্রোগাম, খুনসুটি, আনন্দ সব কিছুই চলছিল পূর্ণগতিতে। সেইদিনটার কথা ওর আজও পরিষ্কার মনে আছে। দিনটা ছিল দোলের দিন। ও ছোটোবেলা থেকেই দোল খেলতে যেত তিন্নিদের বাড়িতেই। ছোটোবেলায় কেবল ওরা দুজনেই খেলত। পরে অন্যান্য বন্ধুরাও জড়ো হত এক এক করে। এখন ওদের ব্যান্ডের অন্য বন্ধুরাও যোগ দেয় ওদের সাথে। সারাদিন রঙ খেলা, চুটিয়ে আনন্দ, এর ওর পিছনে লাগা, খাওয়া, আড্ডা, ঘুম সবই হয়। সেবারেও দোলের দিন সকাল সকাল ও তিন্নিদের বাড়ি পৌঁছে গিয়েছি। তারপর এক এক করে অন্যান্য বন্ধুরাও হাজির হল তিন্নিদের বাড়িতে। শুরু হল রঙ খেলা। এরকম আনন্দ আর উচ্ছাস এর আগে কোনো দিন হয়নি। সব কিছুই ঠিক মত চলছিল। বাধ সাধল একটা জায়গায়। তিন্নির দাদা তমাল ওদের সবার জন্য লুকিয়ে নিয়ে এল ভাং-এর সরবত। এই জিনিলটির কথা ও আগেই শুনেছিল। তাই ও প্রথমে খেতে রাজী হয়নি। কিন্তু বন্ধুরা সবাই যখন জোর করল তখন না বলে আর থাকতে পারল না। তার উপরে তিন্নি সরবত ভরা গ্লাসটা প্রায় ওর ঠোঁটের কাছে ধরে বলল, “খা না, একগ্লাসে কিস্যু হবে না। এই দ্যাখ, আমি খাচ্ছি।” বলে তিন্নি নিজের গ্লাসটায় চুমুক দিল। ওর দেখাদেখি এবং বাকীদের জোরাজুরিতে ওকেও গ্লাসের ঠান্ডা সরবতে চুমুক দিতে হল। প্রথম প্রথম খেতে বেশ ভালোই লাগছিল। কিন্তু মুশকিল হল খাওয়ার একটু পর থেকেই। মাথাটা প্রথমে জোরে জোরে ঘুরতে শুরু করল। গাটা প্রচন্ড গোলাতে আরম্ভ করে দিল। মনে হতে লাগল পেটের নাড়িভুঁড়িগুলো সবশুদ্ধ যেন পাক খাচ্ছে। ও আর নিজেকে সামলাতে পারল না। হড় হড় করে বমি করে দিল। পেট থেকে সবটা বেরিয়ে যাওয়ার পরেও শরীরটা কেমন যেন আনচান করতে লাগল। ততক্ষণে ওকে নিয়ে হুলস্থূল পড়ে গেছে। তিন্নি ওর চোখে মুখে ঘাড়ে জল ঢালছে। বাকী বন্ধুরা ওকে সামলাতে ব্যস্ত। অবশেষে তিন্নি একাই ওকে সামলাল। ধরে ধরে নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে ওরই বিছানায় শুইয়ে দিল। তিন্নি যখন চলে আসছে ও তখন খপ করে ওর হাতটা ধরে জড়ানো গলায় বলেছিল, “আমায় একা ছেড়ে যাস না, তিন্নি।” তিন্নিও পাল্টা ওর হাতটা শক্ত করে ধরে বলেছিল, “আমি এখানেই আছি। তোর কাছে। আমি কোত্থাও যাচ্ছি না।” তিন্নির কথাটা শুনে ও পরম শান্তিতে চোখ বুজেছিল।
চোখ যখন খুলল, তখন বেলা গড়িয়ে দুপুর। মাথাটা ভারী হয়ে আছে এখনও। প্রথমে বুঝতে পারেনি, ও এখন ঠিক কোথায়। বিছানার উপরে বসে কপালের দুপাশে রগটাকে দু আঙুলে করে শক্ত করে ধরল। মাথাটা একবার টনটন করে উঠল। ঘরের চারপাশে চোখ বুলিয়ে বুঝতে পারল না, এটা কোথায়। ঠিক তখনই ওর পিছন থেকে দরজা খোলার শব্দ হল আর তারপরেই শোনা গেল, “তাহলে ঘুম ভাঙ্গল মহারাণীর?” তিন্নির গলা শুনতে পেয়ে ও পিছন ফিরে তাকাল। সত্যি করেই তিন্নি ঘরে ঢুকছে। হাতে একটা চাপা দেওয়া বড় বাটির মত কিছু একটা। সেটাকে টেবিলের উপরে রেখে ওর পাশে এসে বসল তিন্নি। তারপর মুচকি হেসে ওকে বলল, “উফ্ খেল দেখালি বটে, একটা। পেন্নাম করি তোকে। আর যদি কখনও তোর সাথে দোল খেলি। হাড়ে হাড়ে শিক্ষা হল একটা।” দোলের কথা বলতেই এক এক করে সব কথাই মনে পড়ে গেল ওর। লজ্জাও লাগল একটু। ওর জন্য বন্ধুদের, বিশেষ করে তিন্নির দোলের আনন্দটা মাটি হয়ে গেছে, এটা ভেবেই ওর মনে লজ্জা হল একটু হলেও। কিন্তু এতে ওর তো কিছু করার নেই। খসখসে গলায় বলল, “কটা বাজে রে এখন?”
- “দেড়টা বাজতে যাচ্ছে।” তিন্নি উত্তর দিল।
- “তোর চান হয়ে গেছে?” জিজ্ঞাসা করল।
- “কখন। তোর ওরকম হওয়ার পরেই বাবা জানতে পেরে ছুটে এল। তারপর দাদাকে কি বকুনিটাই না দিল। তে দেখে বাকীরাও সব সুড় সুড় করে কেটে পড়ল। আমি আর কি করি, চান সেরে খেয়ে নিলাম।” একটানা বক বক করে থামল তিন্নি। তারপর অল্প একটু নিঃশ্বাস নিয়ে আবার বলতে শুরু করল, “মা তোর জন্য একটু স্টু করে দিয়েছে। পাঁউরুটি দিয়ে খেয়ে নে। তার আগে চান করে নে।”
- “ভাল লাগছে না।” বলে আরো একবার বিছানায় গা এলিয়ে দিল ও।
- “ভাল লাগছে না মানে? চানটা করে নে, দেখবি ফ্রেশ লাগবে। গায়ে আবীর লেগে রয়েছে। চান করে নে। তারপর স্টু টা খেয়ে নে।” তিন্নি একটানে বলল।
- “তোর কাছে সিগারেট হবে?” বালিশে মাথা রেখে জানালার বাইরে চোখ রেখে বলল ও।
- “কি?!” তিন্নি এমন চোখ গোল গোল করে ওর দিকে তাকাল যেন ও সিগারেট নয়, বিষ চাইছে।
- “সিগারেট। আছে?” শান্ত কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করল ও।
- “না নেই। তুই এখন ওঠ তো। চানটা করে নে। স্টু টা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।” তিন্নি অযথাই তাড়া লাগাল।
- “নীচে থেকে তোর বাবার প্যাকেট থেকে একটা নিয়ে আয়। দেশলাইটা আনতে ভুলিস না যেন।” তিন্নির দিকে পাশ ফিরে আলস্য জড়ানো গলায় বলল ও।
- “এঃ কেমন রাণীর মত অর্ডার করছে দেখো। আমি পারবেো না। বাবা জানতে পারলে চাবকে আমার পিঠের ছাল তুলে দেবে।” তিন্নি গাল ফুলিয়ে বলল।
- “দেরী করিস না। তাড়াতাড়ি যা।” এবার ও পাল্টা তাড়া লাগাল।
তিন্নি গজগজ করতে লাগল। কিন্তু ঠিক উঠে নিচে চলে গেল। ও জানত তিন্নির ওর কোনো কথাই ফেলতে পারে না। একটু পরেই আবার ফিরে এল ও। ঘরে ঢুকেই আগে দরজাটা বন্ধ করে দিল। তারপর ওর দিকে সিগারেট আর দেশলাইয়ের প্যাকেটটা ছুঁড়ে দিয়ে বলল, “তাড়াতাড়ি এসব করে চান টা করগে যা। তোর পায়ে পড়ি।” ও কিন্তু তাড়া দেখাল না। বরং উল্টে ধীরে সুস্থে বিছানায় উঠে বসে সিগারেটটা ধরাল। তারপর একরাশ ধোঁয়া ছেড়ে তিন্নির দিকে তাকিয়ে বলল, “টানবি?” তিন্নি মুখ ঘুরিয়ে বলল, “আমি তো আর তোর মত খেপে যাইনি।” ও উত্তরে কিছু বলল না। নীরবে সিগারেটটা টানতে লাগল। তারপর একসময় সেটাকে শেষ করে জানালা দিয়ে বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দিল। তিন্নি এবারে বলল, “হয়েছে? এবার দয়া করে চানটা করে নে।” ও এবারও কোনো উত্তর দিল না। কেবল ওর দিকে তাকিয়ে রইল। তিন্নি অস্থির হয়ে বলল, “কি?!” উত্তরে ও তিন্নির একটা হাত ধরে নিজের দিকে টানল। তিন্নির পাতলা শরীরটা অনায়াসে ওর উপরে এসে পড়ল। আর কোনো ভণিতা না করেই, সরাসরি নিজের ঠোঁটদুটোকে মিশিয়ে দিল তিন্নির নরম ঠোঁটদুটোর সাথে। তিন্নি যে খুব একটা বাধা দিল, সেটা অবশ্য বলা যায় না। বরং দুটো শরীর অনায়াসে একে অন্যের সাথে মিশে গেল।
খাওয়া শেষ করে হাত মুখ ধুয়ে আবার নিজের ঘরে ফিরে এল। মনটা এখনও শান্ত না হলেও, খাওয়া হতেই শরীরটা কিন্তু অনেকটাই শান্ত হয়ে গেছে। চার্জ থেকে ফোনটা খুলে নিয়ে আরো একবার তিন্নির নাম্বারটা ডায়াল করল। কিন্তু না। এখনও সেটা সুইচড্ অফই বলে যাচ্ছে। এমনও হতে পারে, ওর নাম্বারটা ব্লক করে দিয়েছে। সম্ভাবনা অনেক। কিন্তু বাস্তব কোনটা সেটা ও এই মূহুর্তে বুঝতে পারল না। মনটা আগের মতই খারাপ রইল। অনেক রাত হয়েছে। এবার একটু বিশ্রাম নেওয়া উচিত। শরীরটা খুবই ক্লান্ত লাগছে। ফোনটাকে রেখে দিতে গিয়েও পারল না। কিছু একটা মনে করে সোজা অ্যাপটায় লগইন করল। রাত্রি আড়াইটে পেরিয়ে গেছে। এইসময় কারোর সাথে গল্প করার মানসিকতা ওর নেই। কেবলই একবার কৌতুহলবশত অ্যাপটায় ঢুকল। আর ঠিক তখনই হঠাৎ করে একটা মেসেজ ওর অ্যাপে ঢুকল। কিছুটা অনিচ্ছা আর বাকীটা বিরক্তি নিয়েই চ্যাটটা খুলল ও। দেখল কিউপিড ওকে একটা মেসেজ পাঠিয়েছে। খুলে দেখল লেখা রয়েছে, “এত রাতেও ঘুমাও নি?” অতি সাধারণ একটা প্রশ্ন। কিন্তু ওর মনে হল এই কিউপিড কি ওকে স্টক করছে? হতেও পারে। এই ওঁচাটে ছেলেগুলোর আর কাজই বা কি আছে। এত রাতেও শান্তি নেই। মেয়ে দেখলেই গায়ে পড়ে কথা বলতে ছাড়ে না। এখন ওর উত্তর দেওয়ার একদমই ইচ্ছা ছিল না। তা সত্তেও ও লিখল, “আমি না ঘুমালে কার কি?” কথাটা কেন লিখল ও নিজেও জানে না। তিন্নির সঙ্গে আজকের এই ঘটনাটা ঘটার কারণে কি ও একটু বেশীই ইমোশনাল হয়ে পড়েছে? এই কথাটাই ও চিন্তা করছিল। কিন্তু আরো একটা মেসেজ এসে ওর চিন্তার জালটাকে শতচ্ছিন্ন করে দিল। আনমনা হয়েই ও দেখল লেখা রয়েছে, “কারোর কিছুই না হতে পারে। কিন্তু তোমার নিজের তো অনেক কিছুই।” আজ দেখছি সবাই ওকে জ্ঞান দিতে উঠে পড়ে লেগেছে। সবাই কি ওকে এতটাই অ্যাভয়েলেবল ভেবে নিয়েছে? মাথাটা চট করেই গরম হয়ে গেল। এর উত্তর না দিতে পারলে শান্তি পাবে না ও। কড়া করে উত্তরটা লিখে পাঠাল, “তুমি নিজেও তো এখনও ঘুমাওনি, আবার আমাকে জ্ঞান দিচ্ছো?” ও ভেবেছিল এতেই কাজ হবে। কিন্তু না। হল না। ছেলেটা আবারও একটা মেসেজ পাঠিয়েছে। “জ্ঞান দিচ্ছি না, তোমার ভালো চাই, তাই বললাম।” পড়েই গোটা গা জ্বলে গেল! ভালো চাই! সবাই ওর ভালো চায়। কিন্তু একজন ছাড়া। মাথাটা আবারও টিপটিপ করে ব্যথা হতে শুরু করেছে। রগদুটোকে আরো একবার শক্ত করে টিপে ধরেও শান্তি পেল না। তাড়াতাড়ি টাইপ করল, “তুমি আমাকে চেনো?” প্রায় সাথেসাথেই উত্তর এল, “না। তা চিনিনা।” ঝড়ের গতিতে টাইপ করল, “তাহলে আমার সম্পর্কে ভাবতে তোমাকে কে বলেছে? আমার সম্পর্কে কাউকে কিচ্ছু ভাবতে হবে না। I am strong enough to fight alone.” নিজের মনের বিষবাষ্পটাকে মেসেজে লিখতে পেরে ভালো লাগল একটু হলেও। কিন্তু কপাল এতটাও ভালো নয় ওর। এ ছেলে পিছু ছাড়ার নয়। এতকিছু লেখার পড়েও হার মানেনি। উল্টে লিখে পাঠিয়েছে, “তুমি কি কিছু বিষয়ে ডিস্টার্বড?” লেখাটা পড়ে এক মূহুর্তের জন্য হলেও থমকাল ও। সে কি করে বুঝতে পারল ও ডিস্টার্বড? “কেন বলোতো?” সামান্য হলেও ভণিতা করে ও লিখল। উল্টো দিক থেকে জবাব এল, “না। তোমার কথা থেকে এমনটাই মনে হচ্ছে।” ও আর পারল না। শরীর আর মন দুটোই একইসাথে জবাব দিয়ে দিল। শ্রান্ত আঙুলে ও লিখল, “হ্যাঁ। আমি একটু ডিস্টার্বড। But You don’t need to bother about this at all.” ছেলেটা লিখে পাঠাল, “দেখো, তুমি আমাকে চেনোনা। আমিও তোমাকে চিনিনা। তবুও যদি তুমি আমাকে তোমার বন্ধু বলে মনে করো, তাহলে খুলে বলতে পারো।” লেখাটা পড়ে এক মূহুর্তের জন্য মনটা এলোমেলো হয়ে গেল। আজ পর্যন্ত কোনো ছেলেকেই ও বিশ্বাস করেনি। বন্ধুত্বও করেনি মন থেকে। তিন্নিকেই ও নিজের একমাত্র বন্ধু বলে মেনে এসেছে এতদিন। ভালবেসে এসেছে মন থেকেই। জানে না এটা ভালো, নাকি খারাপ। পাপ, নাকি পূণ্য? কিন্তু এই ছেলেটার সঙ্গে কথা বলে মনে হচ্ছে একে বিশ্বাস করা গেলেও যেতে পারে। ইচ্ছে করছে এর কাছে সব কিছু খুলে বলতে। কিন্তু বাধ সাধছে ওর মন। ওর শরীর। ওর চিন্তা। আর পারল না। হাল ছেড়ে দিল ও। ক্লান্ত আঙু্লে টাইপ করল ও, “আজ থাক। অন্য একদিন বলবো। সব খুলে বলবো তোমায়। তবে আজ নয়। খুব ক্লান্ত লাগছে। বাই।” প্রায় সাথে সাথেই উত্তর এল, “বাই। গুড নাইট।” উত্তরটাকে ইগনোর করে আয়ুষী বেরিয়ে এল অ্যাপটা থেকে। ফোনটাকে সুইচড অফ করে অনাদরে ছুঁড়ে ফেলে দিল বিছানার একপাশে। তারপর ক্লান্ত শরীরটাকে এলিয়ে দিল বিছানার উপরে। শারীরিক আর মানসিক ক্লান্তি চোখদুটো বুজে এল নিজে থেকেই। অবশেষে আরো একটা অভিশপ্ত, ক্লান্তিকর আর একঘেয়ে দিনের পরিসমাপ্তী ঘটল এভাবেই। নীরবে। নিশ্চুপে। অনাদরে। অপমানে। অভিমানে।
~ অত্র তৃতীয়োৎধ্যায়ঃ সমাপ্তঃ ~