বাংলা গল্প- লালপট্টি - অধ্যায় ১৪

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-70110-post-6031977.html#pid6031977

🕰️ Posted on September 10, 2025 by ✍️ rajusen25 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 3521 words / 16 min read

Parent
লালপট্টি গ্রাম থেকে ফেরার পর থেকেই টুকুনের মনে এক অদ্ভুত অশান্তি জেগেছে। কলেজের নোটবইগুলো টেবিলে স্তূপ হয়ে পড়ে আছে—ধুলো জমে যাওয়া পাতার কোণে কোণে অর্ধেক লেখা সমীকরণগুলো যেন তার অসমাপ্ত ইচ্ছার মতোই আটকে আছে। পড়াশোনার চাপ বাড়লেও, মন যে যায় না সেখানে! যখনি সে চোখ বুজে—ক্লাসের ফাঁকে, টিফিনের বিরতিতে, রাতের নিস্তব্ধতায়—অমনি কানে ভেসে আসে আমিনা খালার সেই কর্কশ কণ্ঠস্বর: "এই রকম বাঁড়া, বিশাল পাছা, মোটা গুদ... হস্তিনীর মতো শরীরওয়ালা দশাসই মাগীরা নিতে পারবে" আর সঙ্গে সঙ্গেই কল্পনায় ভেসে ওঠে তৌফিক মিয়ার মুখ—নখের ডগায় জমে থাকা ময়লা, বগলের আঠালো দুর্গন্ধ, আর সেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টি, যেন পচা তেলে ভেজা কাঁচা পেঁয়াজের মতো জ্বালা! মিসেস মুনমুন সেন—কলেজের সেই পরিপক্ব অধ্যাপিকা, যার সাদা শাড়ির আঁচলে বুদ্ধির ছাপ, চশমার পিছনে লুকানো তীক্ষ্ণ দৃষ্টি। টুকুন যখন তার মায়ের কথা ভাবে, গলা শুকিয়ে আসে। কল্পনায় দেখে: তার মা ঘরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে, সাদা শাড়ির আঁচল একটু খসে পড়েছে, হাতকাটা ব্লাউসের ফাঁকে ফাঁকে উজ্জ্বল চামড়ায় রোদের আলো ঝিলিক দিচ্ছে। আর তার সামনে—বাটকুল, পাঁচ ফুট এক ইঞ্চির তৌফিক মিয়া, তার নোংরা হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে মায়ের দীর্ঘাঙ্গী শরীরের দিকে... "আমারে একদিন তোমার আম্মার কাছে নিয়ে চলো..." তৌফিকের এই কথাটাও যেন মাথায় গেঁথে গেছে! ঘরের বাইরে সব স্বাভাবিক। রান্নাঘর থেকে ভেসে আসছে ডালের ঘ্রাণ, পাশের বাসার ছেলে ফোনে চেঁচাচ্ছে, রাস্তায় হকারের আওয়াজ: "ইলিশ মাছ... সামনে আসছে ইলিশ মাছ!" কিন্তু টুকুনের কানে এসব কিছু ঢুকছে না। তার কানে বাজছে শুধু আমিনা খালার সেই কথার প্রতিধ্বনি, আর তৌফিক মিয়ার নিঃশ্বাসের শব্দ—ভেজা মাটির গর্ত থেকে উগরে দেওয়া কোনো প্রাণীর মতো গন্ধময়, ভারী... শনিবারের ভোরের রোদ্দুর ফটিকের মতো টুকুনের ঘরের জানালায় এসে পড়েছে। পাশের আম গাছের ডালে পাখিরা কলরব শুরু করেছে—যেন অদৃশ্য সেতারে কেউ তার টানছে। কিন্তু টুকুনের চোখে ঘুম নেই। সারারাত সে একই চিন্তায় ডুবে ছিল—আমিনা খালার কথা, তৌফিক মিয়ার মুখ, আর মায়ের দীর্ঘ ছায়া। রান্নাঘর থেকে ভেসে আসছে ডিমভাজার গন্ধ—মাখনের মিষ্টি সুবাসে মিশেছে একটু লঙ্কার ঝাল। মিসেস সেন সাদা হাতকাটা ব্লাউসে, চুল আধখোঁপায় বাঁধা, ব্যস্ত হাতে প্যানে ডিম উল্টাচ্ছেন। কব্জির সোনার চুড়ি আলোয় ঝিলিক দিচ্ছে। "টুকুন, এতক্ষণ কোথায় ছিলে? ডিম ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে,"—মায়ের গলা কর্তৃত্বপূর্ণ, তবু স্নেহমাখা। টুকুন চেয়ারে বসতেই নজর পড়ে মায়ের হাতের দিকে—সেই লম্বা আঙুলগুলো, যেগুলো কলেজের বোর্ডে সমীকরণ লিখতে পারে, সেগুলোই এখন স্প্যাটুলা ধরে আছে। হঠাৎ কল্পনায় ভেসে ওঠে সেই হাত তৌফিক মিয়ার কালো আঙুলের স্পর্শে কাঁপছে! "মা, আজকে বিকেলে কি বাইরে যাওয়া হবে?"—টুকুন জিজ্ঞেস করে, মুখে ভাতের গ্রাস নিয়ে। "না বাবা, আজ তো আমার কপি চেক করা বাকি,"—মিসেস সেন চশমার ফ্রেম ঠিক করতে করতে বললেন। ঠোঁটে লেগে আছে ডিমের হলুদ অংশ—টুকুনের চোখ আটকে যায় সেখানে। হঠাৎ ফোন বেজে উঠল। কলেজের সহকর্মীর ফোন। কথা বলতে বলতে মিসেস সেন বারান্দায় চলে গেলেন। টুকুনের চোখ তখন মায়ের খালি প্লেটের দিকে—সেখানে এক ফোঁটা ডিমের কুসুম লেগে আছে। মনে পড়ে যায় তৌফিক মিয়ার কথা—"আমারে একদিন তোমার আম্মার কাছে নিয়ে চলো..." ফোন রেখে মিসেস সেন ফিরে এলেন, মুখে বিরক্তি। ঠোঁটের কোণে টেনশনের রেখা, যেন পেন্সিলের হালকা দাগ। চশমা রাখার সময় ধাতব ফ্রেম কাঁচে ঠিন ঠিন শব্দ করল। "উউফ..., ছুটির দিনও কাজ!!"—গলায় ক্লান্তি আর রাগ। আঙুল দিয়ে খোঁপা ঠিক করতে গিয়ে প্লাটিনামের আংটি ঢিলে হয়ে ঘুরল, "তোর কলেজ কেমন চলছে?" "কলেজ?... হ্যাঁ মা, ভালোই চলছে,"—টুকুন একটু জোর দিয়ে বলল। আঙুলগুলো টেবিল ক্লথে আঁচড় কাটতে লাগল। "কিন্তু চাপ বেড়েছে... আগামী সপ্তাহে ব্যাকলগ ক্লিয়ার করবো..." মিসেস সেনের ঠোঁটে হালকা হাসি। চশমার ফ্রেম স্পর্শ করতে গিয়ে হাত কাঁপল—যেন অদৃশ্য তারে টোকা লাগল। "গুড... দ্যাটস লাইক মাই বয়..."—গলা ভারী হয়ে এল, যেন গিলে ফেলছে কিছু। হঠাৎ চোখ সংকুচিত হলো, রোদে চোখ ঠেররানোর মতো। "ওহ, তোর ইসমাইল চাচা আর আমিনা খালাকে বলিস, ক্ষীর-সন্দেশগুলো দারুণ ছিল..."—জিভ ঠোঁটে ঘুরল, যেন মিষ্টি-লবণ স্বাদ মনে পড়ছে। "তারা ভালো আছে তো?"—মিসেস সেন উৎসাহিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, "আর তুই যে লোকটাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলি... সে কেমন আছে রে?" "হ্যাঁ মা... তারা ভালো, আমিনা খালার তো চার মাস হলো..."—টুকুনের কণ্ঠে কাঁপুনি লুকোনো। "ওহ, তৌফিক মিয়ার কথা বলছো... সে এখন ভালো, তোমার খুব গুনগান করে... বলে তোমার আম্মার জন্য প্রাণে বাঁচলাম..." মিসেস সেনের চোখের পুতুল প্রসারিত হলো। "সে... সে আমার গুনগান করে?"—কণ্ঠে বিস্ময় মিশ্রিত কৌতূহল। রিং আঙুলে ঘুরল, যেন উত্তরের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। টুকুনের চোখ চকচক করে উঠল। সে আরও কাছে সরে এসে বলল, "হ্যাঁ মা! ওই যে দিন হাসপাতালে ভর্তি করালাম, তোমার ফোন করার পরই তো ডাক্তাররা একদম সিরিয়াসলি নিলে ওকে... নাহলে ওই গরিব লোকটার চিকিৎসাই হতো না!" মিসেস সেনের কপালের ভাঁজগুলো একটু কমে এল। তার হাতের রিংটা আঙুলে আবার ঘুরল, যেন এই কথাগুলো শুনে সে নিজেকে সামলে নিচ্ছে। টুকুন উত্তেজিত হয়ে এগিয়ে বলল, "মা, তুমি তো জানো না—ওই তৌফিক মিয়া আমাকে দেখলেই বলে, 'তোমার আম্মা আল্লার ফেরেশতা... ওনার মতো মানুষ পৃথিবীতে কম আছে!'" টুকুনের কণ্ঠে এবার এক ধরনের আবেগ ফুটে উঠল, "আর প্রতিবারই বলে—'তোমার আম্মারে এই গরিব মেথরের সালাম দিও... ওনার দোয়ায় আমার প্রাণ বেঁচেছে!'" মিসেস সেনের ঠোঁটের কোণে এক অদ্ভুত মিষ্টি টান পড়ল। তার আঙুলগুলো নিজে থেকেই সোনার চুড়িটা ঠিক করতে গেল, যেন এই কথাগুলো শুনে শরীরে এক ধরনের হালকা শিহরণ খেলে গেল। "ভালো কথাতো..." - তার কণ্ঠস্বর এখন মাখন-নরম, "তুইও খুব ভালো কাজ করেছিস... গরিব লোকেদের সাহায্য কজন করে বল এখনকার দিনে!!" "মা, তুমিও তো..." - টুকুন একটু থেমে গেল, "তোমার ফোন না করলে তো ওর চিকিৎসাই হতো না..." মিসেস সেনের চোখের পুতুলগুলো একটু প্রসারিত হলো। তার আঙুলের ডগায় সোনার চুড়ির ঠাণ্ডা স্পর্শে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল। "লালপট্টি গ্রামটা আসলে..." - টুকুনের কথাগুলো যেন তাকে অচেনা এক জগতে নিয়ে গেল, "মহমেডান অতিগরীব জেলে, মুচি, মেথর আর নাপিতদের বাস।" টুকুন এবার গলা খাঁকারি দিয়ে বলল, "হ্যাঁ মা... সমাজের তলানিতে পড়ে থাকা মানুষগুলো। গরিবি, অশিক্ষা আর অস্বাস্থ্য - এদের চিরসঙ্গী।" তার কণ্ঠে এবার এক ধরনের গাম্ভীর্য ফুটে উঠল, "ওরা আমাদের মতো সুযোগ পায়নি কখনো..." মিসেস সেনের চোখের কোণে জমে থাকা রেখাগুলো এবার গভীর হলো। তার ঠোঁটের কোণে সেই মিষ্টি টান এখনও আছে, কিন্তু তাতে মিশেছে এক ধরনের দায়িত্ববোধ। "তা তো সত্যি..." - তিনি বললেন, আঙুল দিয়ে টেবিলের কাপড়ের উপর অদৃশ্য কোনো জিনিস আঁকতে আঁকতে, "এই মানুষগুলোই তো আসলে সবচেয়ে বেশি সাহায্য পাওয়ার যোগ্য..." টুকুন এবার সাহস করে একধাপ এগিয়ে বলল, "মা... তৌফিক মিয়া আসলে ওই সমাজেরই একজন। সারাজীবন পায়খানা পরিষ্কার করে, তবু মুখে কোনো অভিযোগ নেই।" তার চোখে এক অদ্ভুত দীপ্তি, "সে বলেছিল - 'আমি গরীব, কিন্তু আল্লাহর রহমতে হালাল রুজি খাই'..." মিসেস সেনের চোখের কোণে হঠাৎ এক ফোঁটা জল জমে উঠল। তিনি তাড়াতাড়ি হাতের পিঠ দিয়ে মুছে ফেললেন, যেন কেউ দেখে ফেলবে না। "সত্যিই... সত্যিই দুঃখের কথা..." - তার গলার স্বর এবার একটু ভাঙা ভাঙা, "আমরা যারা সুযোগ পেয়েছি, আমাদেরই তো এদের পাশে দাঁড়ানো উচিত..." মিসেস সেনের চোখের জল মুছে ফেলার পর ঘরে একটু নিস্তব্ধতা নেমে এল। টুকুনের মনে হচ্ছিল, মায়ের কণ্ঠে যে করুণা ফুটে উঠেছে, তা যেন কোনো গভীরতর আবেগের ইঙ্গিত দিচ্ছে। সে নিজের পকেটে রাখা ডিসচার্জ লেটারটার দিকে তাকাল—যেটা সে নিজেই কম্পিউটারে এডিট করে বানিয়েছে। টুকুনের কল্পনায় ভেসে উঠল সেই এডিট করা ডকুমেন্টের কথাগুলো— "তৌফিক মিয়া, বয়স ৫৫ বছর, গড়ন চিকন, উচ্চতা ৫ ফুট ১ ইঞ্চি, ওজন ৫০ কেজি। কোমর ৩০ ইঞ্চি, পেটে তেমন চর্বি নেই। বয়সের তুলনায় শরীর বেশ ফিট। কুচকুচে কালো গায়ের রং। পেশী শক্ত রাখতে একটু ব্যায়াম দরকার, ভিটামিন ডি-র জন্য রোদ পোহানো এবং ডিম-মাছ খাওয়া বাড়াতে হবে। শরীর ঠান্ডা রাখতে কাঁচা পেঁয়াজ-রসুন বেশি খেতে হবে, পেট ঠিক রাখতে গাঁদাল বা গন্ধ ভাদালী পাতা খাবেন। Circumcision করা আছে, তাই বয়স জনিত কারণে লিঙ্গ শীর্ষ অস্বাভাবিক মোটা, আর অন্ডকোষ একটু বেশী বড়, কিন্তু চিন্তার কিছু নেই। নিয়মিত পায়খানা-প্রস্রাবের জায়গা এবং নাভি পরিষ্কার রাখতে হবে। লিভার বড় হওয়ায় ভাজাপোড়া, মাংস এবং মদ একদম নিষিদ্ধ।" টুকুনের মনে হচ্ছিল, মা যদি এই ডিসচার্জ লেটারটা পড়েন, কী হবে? তার ধবধবে ফর্সা মুখে কি লজ্জার রং ফুটে উঠবে? নাকি সেই করুণ দৃষ্টি, যা সে গরীবদের দেখালেও, তৌফিক মিয়ার শারীরিক বর্ণনা পড়ার পর একটু অন্যরকম হবে? "মা... তৌফিক মিয়ার ডিসচার্জ লেটারটা দেখবে?"—টুকুন সাহস করে বলল, হাতে কাগজটা ধরে। মিসেস সেন চোখ তুলে তাকালেন, তারপর হাত বাড়িয়ে কাগজটা নিলেন। চশমাটা ঠিক করে পড়তে শুরু করলেন। প্রথমে তার মুখে কোনো ভাব ফুটল না, কিন্তু ধীরে ধীরে তার ভ্রু কুঁচকে গেল। মিসেস সেন কাগজটা নামিয়ে রাখলেন। তার চোখের দৃষ্টি এবার একটু দূরবর্তী, যেন তিনি কোনো অদৃশ্য দৃশ্য দেখছেন। "তা... শরীরের অবস্থা তো ভালোই আছে..."—বলতে বলতে তার ঠোঁটের কোণে এক অদ্ভুত টান পড়ল। মিসেস সেনের ঠোঁটের কোণে সেই অদ্ভুত টান আরও গভীর হলো। তার আঙুলগুলো কাগজের কোণে চাপ দিতে দিতে একটু কাঁপছে, যেন কেউ অদৃশ্য কোনো উত্তেজনায় আক্রান্ত। "ডাক্তারের লেখা অক্ষরে অক্ষরে পালন করছে, জানো তৌফিক মিয়া?" - টুকুনের রসিকতায় তার চোখের কোণে এক ঝলক উজ্জ্বলতা খেলে গেল। "এখন নাকি এতো রোদে রোদে ঘোরে ভিটামিন ডি পাওয়ার জন্য..." - টুকুনের কথায় মিসেস সেনের মনে ভেসে উঠল এক অদ্ভুত ছবি: তৌফিক মিয়ার কুচকুচে কালো শরীরে রোদের তাপে চামড়া আরও গাঢ় কালো হয়ে উঠেছে, ঘামে ভেজা বুকে সূর্যের আলো পড়ে ঝিলিক দিচ্ছে। "আর গাঁদাল পাতা খেয়ে..." - টুকুনের এই কথায় মিসেস সেনের নাকে যেন ভেসে এল সেই তীব্র গন্ধ। কল্পনায় দেখতে পেলেন কীভাবে তৌফিক মিয়ার শরীরে গাঁদাল পাতার গন্ধ মিশে আছে, তার নিঃশ্বাসে পেঁয়াজ-রসুনের তীব্র ঘ্রাণ। মিসেস সেনের চোখ আবারও সেই ডিসচার্জ লেটারের দিকে গেল। বিশেষ করে "Circumcision করা আছে" এবং "লিঙ্গ শীর্ষ অস্বাভাবিক মোটা" লাইন দুটোর দিকে। তার গলার স্বর একটু ভারী হয়ে এল: "তা...তা তো ভালো যে ডাক্তারের পরামর্শ মানছে..." কিন্তু টুকুন লক্ষ করল, মায়ের গলার নিচের সেই ছোট তিলটা আজ অস্বাভাবিক লাল দেখাচ্ছে। তার নিজেরও গলা শুকিয়ে এল - কল্পনায় ভেসে উঠল তৌফিক মিয়ার সেই "অস্বাভাবিক মোটা" অঙ্গের ছবি। মিসেস সেনের আঙুলের ডগা কাগজের সেই বিশেষ লাইনগুলোতে বারবার ঘুরে আসে, যেন অদৃশ্য কালিতে লেখা শব্দগুলো তার স্নায়ুতে স্পর্শ করছে। "আসলে বয়স হয়েছে লোকটার...তার ওপর অশিক্ষিত.." - তার কণ্ঠে এক ধরনের করুণা মেশানো কৌতূহল, "তাই হয়তো একটু বেশি করে ডাক্তারের কথা মেনে চলতে চাইছে.." টুকুন লক্ষ করল মায়ের ঠোঁটের কোণে হালকা একটা টান - সেই মুচকি হাসি যেন লুকিয়ে রাখতে চাইছে গভীরতর কিছু আবেগ। "কিন্তু ভালো কথা যে লোকটার সুগার, প্রেসার নেই ৫৫ বছর বয়সেও" - মিসেস সেনের এই মন্তব্যে যেন লুকিয়ে ছিল এক ধরনের অবাক বিস্ময়, যেন সে ভাবছে এই নোংরা মেথরের শরীর এতটা সক্ষম কীভাবে! মিসেস সেন অজান্তেই নিজের দিকে তাকালেন, তারপর আবার ডিসচার্জ পেপারে চোখ বুলালেন। তার কল্পনায় ভেসে উঠল তৌফিক মিয়ার সেই ৩০ ইঞ্চির কোমর - ছোট কিন্তু শক্ত, দিনরাত পরিশ্রমে গড়া। একটুও চর্বি নেই, শুধু পেশী আর হাড়। "মা, তৌফিক মিয়ার শরীর কিন্তু আসলেই ফিট," - টুকুন জোর দিয়ে বলল, বিশেষভাবে 'ফিট' শব্দটিতে জোর দিয়ে, "আর সুগার, প্রেসার হবে কি করে, বাটকুল, রোগা-পটকা ১৪/১৫ বছরের ছেলের মতো শরীর.." - সে ইচ্ছাকৃতভাবে বাক্যটি অসমাপ্ত রেখে দিল, যেন মায়ের কল্পনাকে আরও উসকে দেয়। "মা, তৌফিক মিয়ার শরীরের ক্ষমতা দেখলে তুমিই অবাক হবে!" - টুকুনের কণ্ঠে এবার খেলতে লাগল এক ধরনের রহস্যময় উচ্ছ্বাস, "সারাদিন পায়খানা পরিষ্কার করে, ভারী বালতি টেনে নিয়ে ঘোরে - কোনো ক্লান্তিই ধরে না! আমিতো ওকাব হয়ে যাই, 'কি করে ওই রোগা পাতলা বাটকুল লোকটার এতো শক্তি..'" - প্রতিটি শব্দ যেন মিসেস সেনের মনে তৌফিক মিয়ার সেই পেশীবহুল দেহের ছবি আরও স্পষ্ট করে তুলছিল। মিসেস সেনের চোখের মণি একটু প্রসারিত হলো - যেন অন্ধকার ঘরে হঠাৎ আলোর ঝলকানি। ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা সেই মুচকি হাসি এবার আরও স্পষ্ট, আরও অর্থবহ। "তা...তা তো ভালো...খাটা-খাটনি করে বলেই সুস্থ আছে..." - তার গলার স্বর এবার একটু ভারী, যেন গভীর থেকে উঠে আসা কোনো অনুভূতি চেপে রাখতে সংগ্রাম করছে। চশমার ফ্রেমে আঙুল বুলিয়ে তিনি যেন নিজেরই প্রতিক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছেন। "ওর পরিবারে কেউ নেই...?"—মিসেস সেনের কণ্ঠে এবার এক ধরনের করুণা, কিন্তু তার চেয়েও গভীর কিছু—যেন কৌতূহলের আড়ালে লুকিয়ে আছে অন্য ইচ্ছা। টুকুনের ঠোঁটের কোণে এক রহস্যময় হাসি ফুটে উঠল, যেন সে কোনো গোপন মজার কথা শোনাচ্ছে। "স্ত্রী আছে—জমিলা বেগম। কিন্তু..."—একটু থেমে সে মায়ের চোখে চোখ রেখে বলল, "সে একদম তৌফিক মিয়ার বিপরীত, বিশাল মোটা... ওজন নাকি ১১০ কেজি!" মিসেস সেনের ঠোঁটের কোণে হালকা একটা টান পড়ল। তার আঙুলগুলো নিজে থেকেই নিজের কোমরের বাঁকে ঘুরে বেড়াল, যেন অজান্তেই মেপে নিচ্ছেন নিজের শরীরের মাপ। "আমার থেকেও মোটা...আমার তো.." - তার এই অসমাপ্ত বাক্যে লুকিয়ে ছিল এক অদ্ভুত আত্মতুষ্টি। টুকুনের চোখে চকচকে ভাব ফুটে উঠল। "হ্যাঁ মা, তৌফিক মিয়ার মতো রোগা-পটকা মানুষ, আর স্ত্রী একেবারে উল্টো!" - সে ইচ্ছেকৃতভাবে জোর দিয়ে বলল, "জমিলা বেগম তো এত মোটা যে হাঁটতেই পারেন না ঠিকঠাক। তুমি তো লম্বা বলে বোঝা যায় না..." মিসেস সেনের ঠোঁটের কোণে আঁকা সেই সন্তুষ্টির রেখাটি ধীরে ধীরে গভীর হতে লাগল, যেন কেউ জলের উপর আঙুল বুলিয়ে তরঙ্গ টেনে দিচ্ছে। তার সুদীর্ঘ গলার রেখা বরাবর আঙুলের ডগাগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঘুরে বেড়াল—একটা নারীত্বপূর্ণ অঙ্গভঙ্গি, যেন এই প্রশংসার মিষ্টতা আরও কয়েক মুহূর্ত মুখে রেখে চেখে দেখতে চাইছে। "তুমি তো লম্বা বলে বোঝাই যায় না..."—টুকুনের এই কথাগুলো তার কানে যেন ফুলের মধুর মতো গড়িয়ে পড়ল। মিসেস সেনের চোখের কোণে এক ঝিলিক খেলে গেল—একটা গোপন তৃপ্তি, যেটা শুধু একজন সুন্দরী নারীই বুঝতে পারে যখন তার শারীরিক গঠনের প্রশংসা করা হয়। "মা, তবে তৌফিক মিয়া আসলেই খুব ভাল মানুষ,"—টুকুন এবার আস্তে আস্তে বলল, শব্দগুলোকে যেন পান করিয়ে পান করিয়ে। "গরীব, কিন্তু মনটা আকাশের মতো বিশাল। বলে—'তোমার আম্মা আল্লার ফেরেশতা'..." মিসেস সেনের চোখের তারা একটু বড় হয়ে এল। তার ঠোঁট কাঁপল সামান্য—এই তুলনায় যেন এক অদ্ভুত মিশ্রণ লুকিয়ে আছে: একদিকে ধর্মীয় পবিত্রতা, অন্যদিকে নারীত্বের গোপন উত্তেজনা। "আল্লার... ফেরেশতা?"—তিনি ধীরে ধীরে বললেন, শব্দগুলোকে মুখে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে স্বাদ নিতে নিতে, যেন এই উপমার গভীরতা মাপছেন। মিসেস সেনের মুখে হঠাৎ কর্তৃত্বের ছায়া নেমে এল। "উঠ এখন, তোর গল্প পরে শুনবো, আমার কপি চেক করা বাকি"—বলেই তিনি চশমাটা ঠিক করে নিলেন, ঠোঁটের কোণে সেই অর্ধ-উন্মোচিত আবেগকে যেন জোর করে গুটিয়ে নিচ্ছেন। টুকুন আর জোর দেয় না। সে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায়, মনে মনে হিসাব কষে—"দুই-একদিন দেখি মায়ের রিঅ্যাকশন কী হয়..." "হ্যাঁ মা, আমিও যাই, একটু বন্ধুদের সাথে আড্ডা মেরে আসি"—বলে সে প্লেটটা সিঙ্কে রেখে দেয়। দুজনে একসাথে ব্রেকফাস্টের টেবিল থেকে উঠে দাঁড়াল। মিসেস সেনের হাতের মুঠোয় এখনও চাপা আছে সেই ডিসচার্জ লেটার—কাগজের কোণে তার আঙুলের চাপে সামান্য ভাঁজ পড়েছে। টুকুনের চোখ আটকে যায় সেখানে। কিন্তু ইচ্ছে করেই টুকুন ডিসচার্জ লেটার ফেরত চায় না। মিসেস সেন বইয়ের স্ট্যাক ঠিক করতে করতে বললেন, "বেশি দেরি করিস না।" টুকুন দরজার দিকে হাঁটতে হাঁটতে পিছন ফিরে দেখে—মা ডাইনিং টেবিলেই দাঁড়িয়ে আছেন, কাগজটা আবার খুলে পড়ছেন। সকালের রোদে তার চোখের দৃষ্টি যেন আরও গভীর হয়ে উঠেছে... গেটের বাইরে পা রাখতেই টুকুনের ফোন বেজে উঠল। স্ক্রিনে নাম—রাহুল। সে হাসি চেপে রিসিভ বাটনে টিপ দেয়..."বল রাহুল.." ফোনের ওপার থেকে ভেসে এল রাহুলের দ্রুত, উত্তেজিত গলা—যেন কেউ দম ফেলার ফুরসত না দিয়ে কথাগুলো উগরে দিচ্ছে। ‘টুকুন, ব্যাপার শুনেছিস? কাল রাতেই আমাদের ল্যাবের সাতটা কম্পিউটার গায়েব! পুরো কলেজ তোলপাড়! পুলিশ পর্যন্ত চলে এসেছে!’ টুকুনের কপালে ভাঁজ পড়লো গভীর খাদের মতো। ‘বলিস কি... অমর কাকাতো রাতের শিফটে থাকে না? ওই দারোয়ান কাকা ছিল না...?’—তার কণ্ঠে বিস্ময় আর উদ্বেগের মিশেল। রাহুলের নিঃশ্বাস যেন দৌড়ের পরে ঘোড়ার মতো হাঁপাচ্ছে। ‘আরে, ওই দারোয়ানকেই তো সন্দেহ করছে সবাই! ম্যানেজমেন্টের লোকেরা তাকে জব্দও করে ফেলেছে! তুই এখনই চলে আয়!’ ফোন কাটতেই টুকুন পিছন ফিরে তাকালো। দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে তার মা, মিসেস মুনমুন সেন। সকালের নরম রোদে তার সাদা শাড়ির আঁচল হালকা হাওয়ায় দুলছে, চোখের দৃষ্টি গম্ভীর—যেন নিঃশব্দে জিজ্ঞাসা করছে, ‘কী হয়েছে বাবা?’ ‘মা, কলেজে জরুরি কিছু হয়েছে। ফিরতে দেরি হতে পারে...’—টুকুন তড়িঘড়ি হেলমেট মাথায় ঠিক করতে করতে বললো। মায়ের ঠোঁটের কোণে খেলে গেল এক অদ্ভুত টান। ‘কী হয়েছে?’—গলা নামিয়ে প্রশ্ন করলেন তিনি। ‘কম্পিউটার চুরি গেছে... পুলিশ এসেছে...’—বাইকের ইগনিশনে চাবি ঘোরানোর শব্দের সাথে টুকুনের উত্তেজিত স্বর মিশে গেল। মায়ের চোখে ভেসে উঠলো এক ঝলক উদ্বেগ, কিন্তু মুখে অটুট শান্তভাব। ‘সাবধানে যাস!’—ডা. সুনির্মল সেন আর মিসেস মুনমুন সেনের ছেলের উপর অগাধ বিশ্বাস। তারা জানেন, তাদের টুকুন কখনোই অন্যায়ের পথে পা বাড়াবে না। বাইক স্টার্ট দিতেই টুকুন দেখলো মায়ের চোখে সেই বিশ্বাসের দৃষ্টি—ঠিক যেন আলোর ঝলকানি। রাস্তার ধুলো উড়িয়ে কলেজের গেটে পৌঁছাতেই চোখে পড়লো অদ্ভুত দৃশ্য—পুলিশের জিপ, জমে থাকা ভিড়, উত্তেজিত কণ্ঠস্বরের কোলাহল। রাহুল তড়িঘড়ি এগিয়ে এসে বললো, ‘টুকুন, দেখ! সাতটা ডেল কম্পিউটার উধাও! অমর দারোয়ানকে তো রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে!’ টুকুন আর রাহুল ঘটনাস্থলের দিকে এগোতে লাগলো। ‘অমর চক্রবর্তী?’—টুকুনের গলায় অবিশ্বাস, ‘ও তো এত বছর ধরে এখানে কাজ করছে! কখনো তো কোনো অভিযোগ ওঠেনি!’ রাহুল কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললো, ‘কিন্তু সিসি টিভিতে দেখা গেছে, রাত এগারোটায় ওই শেষবার ল্যাবে ঢুকেছিল! ম্যানেজমেন্ট তো ওকেই দোষ দিচ্ছে!’ ভিড় ঠেলে এগোতে এগোতে টুকুন দেখলো—অমর দারোয়ানের মুখে কালশিটে দাগ, জামায় রক্তের দাগ। পুলিশ আর ম্যানেজমেন্টের লোকজন মিলে প্রায় নিশ্চিত—দারোয়ানই চোর। হঠাৎ টুকুনের কণ্ঠ ভিড়ের মধ্যে স্পষ্ট শোনা গেল, ‘সিসি টিভি ফুটেজ একবার দেখতে পারি?’ কলেজের এই স্টুডেন্ট লিডার, সুদর্শন বক্তা টুকুনের আবেদন উপেক্ষা করা সহজ নয়। এক পুলিশ অফিসার বিরক্ত হয়ে বললেন, ‘আরে ছেলে, ফুটেজ তো আমরা দেখেই ধরেছি! সময় নষ্ট করিস না!’ কিন্তু টুকুন পিছু হটলো না। তার কণ্ঠে দৃঢ়তা, ‘স্যার, এটা আমাদের কলেজ। দারোয়ান কাকা তো এখন কথা বলতে পারছে না। একবার দেখলে ক্ষতি কী?’ প্রিন্সিপ্যালের হস্তক্ষেপে সবাই সিসি টিভি রুমে জমা হলো। মনিটরে কালো-সাদা ফুটেজ চালু হতেই টুকুন সজাগ হয়ে গেল। মনিটরের পিক্সেলেটেড ছবিতে সবাই একসাথে তাকিয়ে রইল। হঠাৎ টুকুনের চোখে ধরা পড়লো ক্যামেরার কোণায় এক অস্পষ্ট ছায়া— ‘স্টপ!’—টুকুনের গলা ফেটে চিৎকার ওঠে, ‘ওই কোণায় দেখুন! ঠিক ওই জায়গায়!’ সিসি টিভির গ্রিন-টিন্টেড স্ক্রিনে ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠলো— ১১:০৮:৪৫ মিনিট—তিনজন লোক ল্যাবের পেছনের দরজা দিয়ে ঢুকছে, তিনজনই মাঝারি গঠনের, লুঙ্গি আর কালো ফতুয়া পড়া, হাতে ভারী কিছু বহন করছে। ১১:০৯:৩০ মিনিট—অমর দারোয়ান ল্যাবের দরজায় ঢুকতেই একটা ক্যামেরা বন্ধ হয়ে গেল। টুকুন দ্বিতীয় ক্যামেরা চালু করতে বললো। দ্বিতীয় ক্যামেরায়— ১১:০৯:৫৫ মিনিট—পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, তিনজন লোক দারোয়ান অমর কাকাকে মেরে অজ্ঞান করে দিলো, তারপর সব চুরি করছে। টুকুনের রাগে গলা কাঁপছে, ‘দেখলেন তো? অমর কাকা সম্পূর্ণ নির্দোষ! উনি তো চোরদের ঠেকাতেই গিয়েছিলেন!’—তার আঙুল রাগে কাঁপছে, ‘আর আপনারা? বিনা প্রমাণে একজন সৎ লোককে অপরাধী সাজালেন? দ্বিতীয় ক্যামেরা চেক না করেই...’ প্রিন্সিপ্যাল সাহেবের চশমার পিছনে চোখ দুটো ছোট হয়ে এলো, ‘আমরা... আমরা তো...’ সিনিয়র অফিসার হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠলেন, ‘ফ্রেম ফ্রিজ করে দেখাও! সরি আমরা আসলে... সেকেন্ড ক্যামেরা...! এই অমর বাবুকে ছেড়ে দে... চেয়ারে বসাও!’" সিসি টিভির স্ক্রিনে যখন চোরদের ছবি স্পষ্ট হয়ে উঠলো, পুরো রুমে একসাথে হাততালি পড়ে গেল টুকুনের জন্য। কলেজের প্রিন্সিপ্যাল সাহেব টুকুনের কাঁধে হাত রেখে বললেন, ‘বাহ! এতক্ষণে সত্যি সামনে এল!’ অধ্যাপকদের দল থেকে কেউ কেউ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রয়েছেন, কেউবা চাপা গলায় বলছেন, ‘এত বুদ্ধি এই ছেলার!’ রাহুল টুকুনের পিঠে এক চাপড় মারতেই হাসতে হাসতে বলল, ‘আরে সালা, তুই না হলে তো এই বেচারা অমর কাকার ভাগ্যে জেল হতো!’ পুলিশের সিনিয়র অফিসার নোটবুকে জরুরি নোট নিচ্ছিলেন, মুখে ভারী কড়া সুর—‘আমরা এখনই এই ফুটেজের রেফারেন্স নিয়ে কাজ শুরু করবো। এই চোরদের দ্রুত খুঁজে বার করা হবে, আপনারা নিশ্চিন্ত থাকুন।’ বলেই তিনি দ্রুত জিপে উঠে পড়লেন, পিছন থেকে শোনা গেল সাইরেনের কর্কশ আওয়াজ। অমর দারোয়ানকে তখন চেয়ারে বসিয়ে জল খাওয়ানো হচ্ছে। মুখে রুমাল চেপে ধরা রক্তপাত, কিন্তু চোখে স্বস্তির দীপ্তি। সে টুকুনের দিকে তাকিয়ে কৃতজ্ঞতায় মাথা নাড়ল—‘বাবু, তুমি না হলে আমি...’ কথা শেষ করতে পারল না। টুকুন হাসি চেপে বলল, ‘কিছু মনে করবেন না কাকা, আপনি তো আমাদেরই মানুষ।’ হঠাৎ কলেজের এক সিনিয়র স্টাফ মেম্বার এগিয়ে এসে টুকুনের দুই কাঁধে হাত রেখে বললেন, "টুকুন, তুমি আজ সত্যিই আমাদের চোখ খুলে দিয়েছ! এই বয়সে এমন বিচক্ষণতা..." - তাঁর গলায় অভিভূতির টান। রাহুল টুকুনের কানে ফিসফিস করে বলল, "সালা, আজকের পর তুই কলেজে লেজেন্ড হয়ে গেলি!" টুকুন চোখ টিপে উত্তর দিল, "চোর ধরা তো আমাদেরই দায়িত্ব ছিল রে! অমর কাকা তো নিজের জীবন দিয়েই প্রমাণ করে দিয়েছেন!" এদিকে প্রিন্সিপাল সাহেব এবং ম্যানেজমেন্টের সদস্যরা লজ্জিত মুখে অমর চক্রবর্তীর কাছে এগিয়ে এলেন। প্রিন্সিপাল গলায় কাঁটা অনুশোচনা নিয়ে বললেন, "অমরবাবু, আমাদের ভুল হয়ে গেছে... টুকুন না এলে হয়তো..." - কথা শেষ করতে পারলেন না। ম্যানেজমেন্টের প্রতিনিধি তড়িঘড়ি এগিয়ে বললেন, "আপনার উপর সন্দেহ করা আমাদের মারাত্মক ভুল হয়েছে। ম্যানেজমেন্টের তরফ থেকে আমরা আপনাকে ৫০,০০০ টাকা ক্ষতিপূরণ দেব, আর আপনার সমস্ত চিকিৎসার দায়িত্ব আমরা নেব।" কিন্তু অমর চক্রবর্তী হাত জোড় করে বললেন, "না মহাশয়, আমার টাকা চাই না! আমি শুধু আমার দায়িত্ব পালন করেছি!" তাঁর রুক্ষ কণ্ঠে আত্মসম্মানের জ্বালা, "টুকুন বাবুর বিশ্বাস না থাকলে আজ আমি হয়তো জেলে থাকতাম!" টুকুনের দিকে কৃতজ্ঞ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন, "আমি গরিব মানুষ, কিন্তু আমার কাজের মর্যাদা দিয়েছি!" টুকুনের চোখে জল এসে গেল। সে অমর কাকার দিকে তাকিয়ে বলল, "সত্যি অমর কাকা, আপনি আজ প্রমাণ করে দিলেন - অভাবে থেকেও সৎ থাকা যায়!" তারপর বুদ্ধিদীপ্ত ভঙ্গিতে প্রিন্সিপাল ও ম্যানেজমেন্ট কমিটির দিকে ফিরে বলল, "স্যার, অমর কাকা ঠিকই বলেছেন। আমি ছাত্রদের পক্ষ থেকে প্রস্তাব রাখছি - ক্ষতিপূরণের বদলে কলেজ যেন তাঁর চিকিৎসার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নেয়। আর..." - টুকুন জোরালো স্বরে বলতে লাগল, "অমর কাকাকে প্রমোশন দিয়ে সিনিয়র সিকিউরিটি সুপারভাইজার বানানো হোক! তাঁর অধীনে অন্তত আরও দু'জন গার্ড নিযুক্ত করা হোক। এই চুরির ঘটনা আবার ঘটতে পারে। ম্যানেজমেন্টের এখনই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।" প্রিন্সিপাল মুহূর্তের জন্য চিন্তা করে বললেন, "টুকুনের প্রস্তাব খুব যুক্তিসঙ্গত। আমরা আজই এক জরুরি মিটিং ডাকছি। অমরবাবু, আপনি শুধু আমাদের সম্পত্তিই রক্ষা করেননি, আমাদের বিবেকও জাগিয়ে দিয়েছেন!" ম্যানেজমেন্টের লোকটি তড়িঘড়ি নোট নিতে শুরু করলেন, "হ্যাঁ হ্যাঁ, আমরা আজই সিকিউরিটি সিস্টেম আপগ্রেডের প্রস্তাব পাশ করব। অমরদাকে প্রমোশন দেওয়া হবে, নতুন স্টাফ নিয়োগ করা হবে..." পিছন থেকে রাহুল আবার টুকুনের কানে ফিসফিস করল, "বাঃ! তুই তো এখন স্টুডেন্ট-ম্যানেজমেন্ট মিডিয়েটর হয়ে গেলি রে!" টুকুন শুধু হাসল, কিন্তু তার চোখে ছিল অমর কাকার জন্য গর্ব। কলেজের সব কাজ শেষ করে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে দিতে রাত ৯ টা হয়ে এলো টুকুনের। ক্যাম্পাসের বাইরে বটগাছের নিচে দাঁড়িয়ে রাহুল, অরুণ আর অন্যান্য বন্ধুরা গল্প করছিল—কীভাবে আজকের ঘটনা কলেজের ইতিহাসে জায়গা করে নেবে। রাস্তার আলোগুলো ঝিলিক দিচ্ছিল, আর দূর থেকে ভেসে আসছিল রিকশাওয়ালাদের হৈ-হৈ শব্দ। টুকুনের মনে এক অদ্ভুত শান্তি ভর করেছিল—গরিব কিন্তু সৎ দারোয়ান অমর কাকাকে অন্যায়ের হাত থেকে বাঁচাতে পেরে। সে হেসে বলল, "আজকে আসলেই ভালো লাগছে রে... অমর কাকার চোখে যে কৃতজ্ঞতা ছিল, সেটা কোনো টাকার দাম না!" রাহুল ঠাট্টা করে বলল, "তুই তো এখন কলেজের নায়ক! কাল থেকে তোর ফ্যান ফলোয়ার বাড়বে!" সকলে হেসে উঠল। টুকুন মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, "নায়ক না ভাই, শুধু একজন সাধারণ ছাত্র... যে নিজের দায়িত্বটা বুঝেছে!" বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত প্রায় ১০টা বেজে গেল। গেটে ঢুকতেই দেখল, মা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছেন। "এত রাত করে ফেললি কেন রে?"—মায়ের গলায় চিন্তা, কিন্তু রাগ নেই। "মা, আজকে একটু বড় ঘটনা হয়ে গেছে..."—বলেই টুকুন জুতা খুলে ভেতরে ঢুকল। রাতের খাবারের টেবিলে বসে টুকুন পুরো ঘটনা বলতে লাগল—কীভাবে সিসি টিভি ফুটেজ ঘেঁটে সে অমর কাকার নির্দোষতা প্রমাণ করল, কীভাবে ম্যানেজমেন্ট ক্ষমা চাইল, আর কীভাবে সে নিজে প্রস্তাব দিল যে অমর কাকাকে প্রমোশন দেওয়া হোক। মিসেস সেন একটু ভাব নিয়ে বললেন, "তুই ভালো কাজ করেছিস বাবা। গরিব মানুষদের পাশে দাঁড়ানোই আসল মানুষ হওয়া।" - মা স্নেহভরে টুকুনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। "তোর বাবা শুনলে, খুব গর্ব করবে তোর উপর।" টুকুন চোখ নামিয়ে নিঃশব্দে হাসল। জানালার বাইরে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক আর রাতের শান্তি—সব মিলিয়ে আজকের দিনটা সত্যিই বিশেষ হয়ে রইল তার জীবনে। - চলবে
Parent