বাংলা গল্প- লালপট্টি - অধ্যায় ৩২

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-70110-post-6052284.html#pid6052284

🕰️ Posted on October 7, 2025 by ✍️ rajusen25 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 3762 words / 17 min read

Parent
নিজের বিছানায় আমিশা ছটফট করছিল। ঘুম আসছিল না একেবারেই। চারপাশের নিস্তব্ধতা যেন আরও গাঢ় করে তুলছিল তার অন্তরের অশান্তি। টেবিলে জ্বলতে থাকা বাতির নরম হলুদ আলোয় ঘরের দেয়ালে তার ছায়া দোল খাচ্ছিল, মনে হচ্ছিল যেন কোনো অদেখা নাট্যমঞ্চ। জানালার ফাঁক দিয়ে ভেসে আসছিল রাতের জুঁই ফুলের মাদকতা, কিন্তু আমিশার নাসারন্ধ্র যেন শুঁকছিল শুধুই টুকুনের শরীর থেকে আসা সাবানের সেই হালকা, উগ্র নয়, মিষ্টি গন্ধ। টুকুন! নামটা ভাবতেই তার বুকের ভেতরটা ধুকধুক করে উঠল। কলকাতার নামকরা কলেজে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে সেই। তার কথাবার্তায়, আচরণে এত শিক্ষা, এত ভদ্রতার পরিমার্জন! মেধা আর উদারতার কী অপূর্ব সমন্বয়! আর তার চেহারাটা! সিনেমার নায়কের মতো—লম্বা ছয় ফুট দেহ, ঝকঝকে ফরসা রঙ, চওড়া বুক আর খেলোয়াড়ের মতো গড়ন। উফফ! একদম নিখুঁত! তার গাঢ় বাদামি চোখ দুটো—তীক্ষ্ণ কিন্তু কোমল। আর সেগুলো যখন আমিশার দিকে তাকিয়েছিল, ওমা! মনে মনে আমিশা ফিসফিস করে বলল, 'এই প্রথম দেখাতেই তো আমি ডুবে গেলাম!' ওদিকে টুকুনের অবস্থাও কম যাচ্ছিল না। রাতের অন্ধকারে বিছানায় শুয়ে সে ভাবছিল আমিশার কথা। কলেজের প্রায় সব মেয়েই তো তার পিছনে ঘোরে, কিন্তু কখনোই কারও প্রতি এভাবে মন পড়েনি। অনেক বান্ধবী হয়েছে, অনেকের সাথেই শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে, কিন্তু আমিশা যেন একদম আলাদা। স্বর্গের কোনো পরী! ওর মুখখানা ঠিক যেন 'দঙ্গল' সিনেমার জাইরা ওয়াসিমের মতো—কত মিষ্টি, কত শান্ত! আর চোখ দুটো যেন কত কথা বলে! গায়ের রং যেন দুধে-আলতার মতো উজ্জ্বল। আজ সন্ধ্যায় সুতির সালোয়ার-কামিজে যেভাবে হেঁটেছিল, উফফ...! ভেবে ভেবে টুকুন একটা বালিশ জড়িয়ে ধরে। ওর বড় বড় গাঢ় বাদামি চোখ, কানের ছোট্ট ইয়াররিং, নাকের নথ, হাসলে গালে যে টোল পড়ে—সবই যেন টুকুনের চোখের সামনে ভাসছে। আমিশার কথা ভেবেই টুকুনের বুকটা ধুকধুক করছে। সে ভাবছে, কাল সকালে কীভাবে আমিশাকে নিয়ে ঘুরবে, কী কথা বলবে। আর আমিশাও ভাবছে, টুকুনের বাইকের পিছনে বসে কলকাতার রাস্তায় ঘুরবে কী আনন্দেই! রাত যত গভীর হয়, তাদের দুজনেরই মন তত বেশি অস্থির হয়ে ওঠে। শেষরাতের পাখির ডাক শুনে তারা বুঝতে পারে, রাত প্রায় শেষ হয়ে এলো, কিন্তু তাদের চোখে এখনও ঘুম আসেনি। আজ শুক্রবার। ভোরের কাঁচা সোনালি রোদ যেন টুকুনের বুকে জ্বালা ধরিয়ে দিয়েছে। সকাল সকাল চান সেরে ফ্রেশ হয়ে সে ব্রেকফাস্ট করে নিল। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল এখনও সময় আছে, কিন্তু মনটা যেন ছটফট করছে। দশটায় তাকে পৌঁছতে হবে খিদিরপুরে, ফিরদৌস হাকিম সাহেবের বাড়িতে। মনে মনে ভাবল, আমিশা নিশ্চয়ই তার জন্য অপেক্ষা করছে। আজ টুকুন একটু বেশি করেই পোশাকের দিকে নজর দিচ্ছে। কাপড়ের আলমারি খুলে একের পর এক পোশাক ট্রাই করে শেষমেশ বেছে নিল একটি সাদা গোল কলারের টি-শার্ট আর একটি ডেনিমের জিন্স। গায়ে হালকা করে বডি স্প্রে মাখল, আয়নায় নিজেকে একবার ভালো করে দেখে নিল। চুলগুলো ঠিকঠাক সেট করল, যেন একদম পারফেক্ট লাগছে। ওদিকে আমিশা তো ভোর থেকেই ব্যাস্ত। তার ঘরের বিছানায় ছড়িয়ে আছে নানা রঙের পোশাক। একেকটি পোশাক পরছে, আয়নায় দেখছে, আবার পরিবর্তন করছে। শেষপর্যন্ত বেছে নিল জারা ব্র্যান্ডের একটি হালকা সবুজ শর্ট স্লিভ টি-শার্ট আর একটি কালো থ্রি-কোয়ার্টার জিন্স। সঙ্গে ম্যাচ করল একটি জুতো। আমিশা সাধারণত বেশি সাজগোজ পছন্দ করে না, কিন্তু আজ, আজ তো স্পেশাল। টুকুনের সঙ্গে বেরোবে বলে সে চোখে একটু মাশকারা দিয়েছে, আর হালকা গোলাপি লিপস্টিক লাগিয়েছে। আয়নায় নিজের প্রতিচ্ছবি দেখে সে নিজেই নিজেকে বলল, 'উফফ, কি সুন্দর লাগছে!' – আর না ফেরার হাসি হেসে ফেলল। তারপর সে বারান্দায় এসে দাঁড়াল, টুকুনের আগমনের প্রতীক্ষায়। মনটা দ্রুত স্পন্দিত হচ্ছে, হাতের তালু একটু ঘামছে। দূর থেকে বাইকের হর্নের আওয়াজ শুনেই তার বুকটা ধক করে উঠল। হয়তো টুকুনই আসছে! ঠিক সকাল দশটায় টুকুন যখন বাইক নিয়ে হাজির হল, আমিশা তখন বারান্দায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিল। সকালের সোনালি রোদে তার সবুজ টিশার্টটি আরও উজ্জ্বল দেখাচ্ছিল, আর কালো জিন্সের সঙ্গে মিলিয়ে সে যেন এক জীবন্ত বসন্তের মত লাগছিল। দারোয়ান গেট খুলে দিতেই টুকুন বাইকে বসেই হেলমেট খুলে বলল, "তুমি তো একদম রেডি হয়ে আছ!" আমিশা লজ্জিত হেসে বলল, "হ্যাঁ, অনেকক্ষণ থেকে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।" -বলে টুকুনের বাইকের কাছে গেলো। টুকুন আমিশাকে একটি সাদা হেলমেট দিতে গিয়ে বলল, "পড়তে পারবে? নাকি আমি পড়িয়ে দেব?" আমিশার গাল একটু লাল হয়ে উঠল। সে হেলমেটটি নিয়ে বলল, "না না, আমি পারব।" কিন্তু হেলমেটটি পরতে গিয়ে তার চুল আটকে গেল। টুকুন তখন এগিয়ে এসে সাহায্য করল, আর সেই মুহূর্তে তাদের হাত একে অপরের স্পর্শ করল। সেই স্পর্শে দুজনেরই গায়ে এক শিহরণ বয়ে গেল। আমিশা হেলমেট পরে নিয়ে বলল, "থাঙ্কস।" টুকুন হাসল, "কিছু না, এখন বসো। সাবধান করে দিচ্ছি, বাইকটা একটু স্পিডে যায়।" আমিশা টুকুনের পিছনে বসে বলল, "ভয় পাবো না, তোমার হাতে আছে।" বাইক স্টার্ট করতেই আমিশা টুকুনের কোমর জড়িয়ে ধরল। সেই স্পর্শে টুকুনের মনটা দ্রুত স্পন্দিত হতে লাগল। তারা রওনা দিল কলকাতা শহর ঘুরে দেখার অভিযানে, যেখানে প্রতিটি মোড়ে অপেক্ষা করছে নতুন কিছু আবিষ্কারের সুযোগ। প্রথমে তারা গেল ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের বিশাল প্রাঙ্গণে পা রাখতেই আমিশার দুই চোখ বিস্ময়ে প্রসারিত হয়ে গেল। ধবধবে সাদা মার্বেলের এই রাজপ্রাসাদের ওপর সকালের সোনালি আলো পড়ে এক অবর্ণনীয় জ্যোতি ছড়িয়ে পড়েছিল। চারিদিকের ঘাসের গালিচায় তখনও জমে থাকা শিশিরের ফোটা মাণিকের মতো ঝলকাচ্ছিল। "ওয়াও...!" আমিশা নিঃশ্বাস আটকে এসে বলল, "আমি এতবার কলকাতায় এসেছি, কিন্তু এই অপরূপ সৌন্দর্য কখনও চোখে পড়েনি!" তার কণ্ঠস্বরে মিশে ছিল অবিশ্বাস আর বিস্ময়ের অনুভূতি। টুকুন গর্বিত স্বরে গাইডের মতো করে বলতে শুরু করল, "এই ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল তৈরি হয়েছিল ১৯২১ সালে, মহারানি ভিক্টোরিয়ার স্মৃতির উদ্দেশ্যে। দেখো এই মার্বেল পাথরগুলো..." সে আমিশাকে আরও কাছে নিয়ে গেল, "এগুলো আনা হয়েছিল রাজস্থান থেকে দূরদূরান্ত থেকে।" আমিশা মার্বেলের গায়ে হাত বুলিয়ে অনুভব করল শীতল মসৃণতা। "কী চকচকে!" সে মুগ্ধ চোখে বলল। টুকুন কথা চালিয়ে গেল, "এই উদ্যানে আছে প্রায় আড়াই হাজারেরও বেশি বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। আর ভিতরে আছে এক বিরাট সংগ্রহশালা, যেখানে ইতিহাসের নানা নিদর্শন সংরক্ষিত আছে।" সে আমিশাকে নিয়ে গেল পুকুরের ধারে, যেখানে ধবধবে সাদা রাজহাঁসেরা জলের উপর অত্যন্ত মাধুর্যের সঙ্গে ভেসে বেড়াচ্ছিল। "ওয়ান্ডারফুল, তুমি সবকিছু এত ভালো করে জান!" আমিশা বলল, তার চোখে-মুখে ফুটে উঠেছিল অকৃত্রিম প্রশংসা। টুকুন হাসিমুখে বলল, "আমি এখানে প্রায়ই আসি পড়াশোনা করতে। এই নিস্তব্ধ পরিবেশে মনোযোগ দিয়ে পড়তে খুব ভালো লাগে।" তারা একসাথে উদ্যানের পথ ধরে হাঁটতে লাগল। আমিশা ফোয়ারার মাঝে উঁচু হয়ে উঠছে এমন জলধারার খেলা দেখে উচ্ছ্বসিত হয়ে বলল, "দেখো কী অদ্ভুত সুন্দর!" তার চুলের ওপর জলকণা পড়তেই টুকুন তড়িঘড়ি করে নিজের রুমাল বের করে দিল। "নাও," সে বলল, "মুখটা মুছে নাও।" এই ছোট্ট যত্নে আমিশার হৃদয় ভরে উঠল। সে অনুভব করল, এই যুবকটি শুধু বাহ্যিকভাবে সুন্দর নয়, তার হৃদয়টাও সমান সুন্দর। তারপর তারা পৌঁছাল প্রিন্সেপ ঘাটে। হুগলি নদীর স্বাধীন বাতাসে আমিশার চুল উড়ছিল পালতোলা নৌকার মতো। টুকুন নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, "তুমি কি গান শোনো?" আমিশা উত্তেজিত হয়ে বলল, "হ্যাঁ! বিশেষ করে এ.আর. রহমানের গান! তাঁর সুরে যেন আত্মা জাগে!" টুকুন হাসল, "আমিও! আমার প্রিয় গান 'O Humdum Suniyo Re'... সেই গানটা শুনলে মনে হয় জীবনটা যেন এক রোমাঞ্চকর যাত্রা।" নদীর জলে সন্ধ্যার আলো পড়ে সোনালি হয়ে উঠছিল। আমিশা বলল, "গানটা আমারও খুব প্রিয়! তুমি কি গান গাও?" টুকুন একটু লজ্জিত হয়ে বলল, "হ্যাঁ, একটু-আধটু গাই। কলেজের cultural program-এ অংশ নিই।" আমিশার চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল, "ওহ! একদিন শোনাবে নাকি?" নদীতে একটি নৌকা ভেসে যাচ্ছিল, মাঝির গলা ছেড়ে গান ভেসে আসছিল। টুকুন বলল, "দেখো, গান শুধু কানে নয়, জীবনেও বাজে।" ঘন্টাখানেক হুগলি নদীর ধারে এক ছোট্ট চায়ের দোকানে বসে তারা গল্প করছিল। নদীর বাতাসে চায়ের কাপ থেকে ভেসে আসা গরম ভাপ মিশে যাচ্ছিল স্নিগ্ধ হাওয়ায়। আমিশা চায়ের শেষ চুমুক নিয়ে বলল, "তোমার কলেজ দেখাবে না?" টুকুন হাসল, "আজ তো কলেজ বন্ধ। শুধু বাইরে থেকে দেখাতে পারব।" তারপর একটু ভেবে বলল, "কলেজ নাহয় আরেকদিন দেখাবো। চলো বরং লাঞ্চ করি পার্ক স্ট্রিটে। সেখানে বিরিয়ানির জন্য নামকরা কয়েকটা রেস্তোরাঁ আছে।" আমিশার চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল, "সত্যি? আমি তো বিরিয়ানি খুবই পছন্দ করি! দার্জিলিংয়ে তো ভালো বিরিয়ানি একদমই পাওয়া যায় না। সেখানে তো মোমো, নুডলস খেয়েই দিন কাটাতে হয়!" টুকুন উৎসাহিত হয়ে বলল, "তাহলে ঠিক আছে, আমি একটা বিশেষ রেস্তোরাঁ চিনি। সেখানের বিরিয়ানি খেলে তুমি মুগ্ধ হয়ে যাবে!" দুজনে উঠে দাঁড়াল। আমিশা শেষবারের মতো হুগলি নদীর দিকে তাকাল। সোনালি রোদে নদীর জল যেন ঝলমল করছিল। টুকুনের বাইকে চড়ে আমিশা এবার আরও স্বাচ্ছন্দ্যে তার কোমর জড়িয়ে ধরল। টুকুন বলল, "চলো, সেই রেস্তোরাঁয় নিয়ে যাচ্ছি যেখানের বিরিয়ানির সুগন্ধ রাস্তা থেকেই পাওয়া যায়!" বাইক স্টার্ট করতেই টুকুন অনুভব করল আমিশার নরম স্পর্শ। আমিশার মনে হচ্ছিল, টুকুনের সাথে কলকাতা শহর আবিষ্কার করা যেন এক স্বপ্নের মতো অভিজ্ঞতা। টুকুন আমিশাকে পার্ক স্ট্রিটের একটি বিখ্যাত বিরিয়ানি রেস্তোরাঁয় নিয়ে এল। রেস্তোরাঁটি ছিল অত্যন্ত নামকরা এবং পরিবেশ ছিল খুবই শান্ত ও সাজানো-গোছানো। দরজা দিয়ে ঢুকতেই একজন ওয়েটার তাদের অভিবাদন জানাল। রেস্তোরাঁর ভিতরের অংশটি ছিল চোখ জুড়ানো। দেয়ালে টাঙানো ছিল পুরনো কলকাতার সাদাকালো ছবি, ফ্যান থেকে আসছিল হালকা হাওয়া। টেবিলগুলো ছিল সাদা টেবিলক্লথে ঢাকা, প্রতিটি টেবিলের মাঝখানে ছিল একটি করে গোলাপ ফুলের পট। ওয়েটার তাদের একটি কোণের টেবিলে নিয়ে গেল, যেখান থেকে পার্ক স্ট্রিটের ব্যস্ত রাস্তার দৃশ্য দেখা যাচ্ছিল। টুকুন আমিশাকে টেবিলের পাশ দিয়ে চেয়ার টেনে বসতে সাহায্য করল। আমিশার চোখে ছিল বিস্ময়, সে এত সুন্দর রেস্তোরাঁ আর তার ওপর টুকুনের সাথে সময় কাটাতে যেন আরও ভালো লাগছে। ওয়েটার মেনু নিয়ে এগিয়ে এল। টুকুন আমিশাকে বলল, "এখানের মাটন বিরিয়ানি খুবই বিখ্যাত। চেষ্টা করে দেখবে?" আমিশাও একমত হলো। রেস্তোরাঁটির পরিবেশ ছিল অত্যন্ত রোমান্টিক। পাশ থেকে ভেসে আসছিল মৃদু গানের সুর। টুকুন আর আমিশা অর্ডার দিল মাটন বিরিয়ানি, চিকেন চাপ আর দুটি সোডা। ওয়েটার অর্ডার নিয়ে চলে গেল। টুকুন আমিশার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, "তাহলে কেমন লাগছে রেস্তোরাঁটা? ভালো লাগছে তো?" আমিশা চারিদিকে তাকিয়ে বলল, "ফ্যান্টাস্টিক!" তার চোখে ছিল উচ্ছ্বাস, জলের গ্লাসে এক চুমুক দিয়ে বলল, "বিরিয়ানির গন্ধে আরও খিদেটা বেড়ে গেলো মনে হয়।" - বলে হাসলো। টুকুন হাসল, "আমি জানতাম তোমার ভালো লাগবে। এই রেস্তোরাঁটা আমার প্রিয়।" - মনে মনে ভাবল, 'আমিশা এখন একদম স্বাভাবিক কথা বলছে, মনেই হবে না যে আজই তাদের প্রথম লাঞ্চ করা একসাথে'। ওদিকে আমিশাও ভাবছিল, 'টুকুনের সাথে কথা বলতে এত স্বাভাবিক লাগছে, যেন বছরজুড়েই চিনি।' সে টুকুনের দিকে তাকিয়ে বলল, "তুমি প্রায়ই এখানে আসো?" টুকুন মাথা নাড়ল, "হ্যাঁ, যখনই বিশেষ কোনো উপলক্ষ্য হয়, তখন এখানে চলে আসি। লাস্ট টাইম বাবা, মায়ের সাথে এসেছিলাম।" আমিশা টুকুনের মুখের দিকে তাকিয়ে "ওঃ, তোমার বাবা মায়ের ব্যাপারে বললে নাতো!! কি করেন ওনারা?" টুকুন হাসিমুখে বলল, "ওহ, আমার বাবা-মা?" - তারপর গর্বের সাথে বলল, "আমার বাবা ডঃ সুনির্মল সেন, কলকাতা হার্ট স্পেশালিস আর মা মুনমুন সেন, কলেজের প্রোফেসর, ইংরেজি সাহিত্য পড়ান।" আমিশা চোখ বড় করে, "ওহ! তাই নাকি! তাহলে তুমি তো ডাক্তার-শিক্ষক পরিবারের!" সে মুগ্ধ হয়ে বলল, "নিশ্চয়ই তোমার বাবা-মা খুব busy থাকেন?" টুকুন হাসল, "হ্যাঁ, তারা দুজনেই খুব ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু আমার জন্য সময় বের করেন মাঝে মাঝে।" সে একটু গর্বে, "আমাকে খুবই ভালোবাসে" আমিশা একটু জিজ্ঞাসু সুরে বলল, "আ... আর তোমার গার্লফ্রেন্ড...?" - যেন জানতে চাইল আছে কিনা। টুকুন একটু লজ্জিত হাসি হেসে বলল, "গার্লফ্রেন্ড? না, এখন তো কেউ নেই। কলেজে পড়াশোনা আর ভবিষ্যতের পরিকল্পনা নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকি।" আমিশার মুখে একটু হালকা হাসি ফুটে উঠল, যদিও সে চেষ্টা করছিল সেটা লুকাতে। সে জলের গ্লাসে আরেক চুমুক নিয়ে বলল, "ও, বুঝেছি।" টুকুন আমিশার দিকে তাকিয়ে বলল, "আর তুমি? তোমার... বয়ফ্রেন্ড আছে নাকি দার্জিলিংয়ে?" আমিশা তাড়াতাড়ি বলল, "না না! দার্জিলিংয়ে তো সেরকম কেউ নেই। সেখানের পরিবেশ একটু অন্যরকম।" তার কণ্ঠস্বরে একটু হালকা নড়চড় ভাব ছিল। এই কথোপকথনের মধ্যে দুজনেরই মনে হচ্ছিল যেন তারা একে অপরের সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিছু জানতে পারছে। রেস্তোরাঁর আলোয় আমিশার চোখ আরও উজ্জ্বল দেখাচ্ছিল, আর টুকুনের হাসিতে ছিল এক অদ্ভুত আত্মবিশ্বাস। ততক্ষণে ওয়েটার বেশ সাজিয়ে-গুছিয়ে তাদের অর্ডার করা খাবার নিয়ে এলো। একটি বড় রূপালী ট্রেতে সাজানো ছিল সুগন্ধি মাটন বিরিয়ানি, সোনালি রঙের চিকেন চাপ, আর দুটি ঠান্ডা সোডা। বিরিয়ানির প্লেটটি যখন টেবিলে রাখা হলো, ভাপ উঠতে লাগল উপরে। আমিশা বলল, "উফ! কি গন্ধ! দেখেই জিভে জল চলে আসছে।" টুকুন বলল, "দেখো, এই বিরিয়ানির বিশেষত্ব হলো এতে ব্যবহৃত হয় প্রাচীন হায়দ্রাবাদি রেসিপি।" সে আমিশার প্লেটে একটু বিরিয়ানি তুলে দিল। আমিশা প্রথম কামড় দিয়েই চোখ বন্ধ করে বলল, "উউউফ! দারুন করেছে বিরিয়ানিটা।" টুকুন খুশি হয়ে বলল, "আমি জানতাম তোমার পছন্দ হবে।" সে নিজেও একটু খেয়ে বলল, "আর এই চিকেন চাপটা তো একদম পারফেক্ট হয়েছে।" ওয়েটার আরও কিছু সালাদ এবং চাটনি এনে দিল। আমিশা বলল, "তুমি কি জানো, দার্জিলিংয়ে আমরা কখনও এত সুস্বাদু মুঘলাই খাবার পাইনি। সেখানে তো mostly momos আর thukpa-ই প্রধান।" টুকুন হাসল, "তাহলে তোমাকে আরও কয়েকটা ভালো জায়গা দেখাতে হবে। কলকাতায় তো অসংখ্য ভালো খাবারের জায়গা আছে।" খেতে খেতে তাদের কথোপকথন আরও গভীর হতে লাগল। আমিশা বলল, "আমি আসলে ছোট থেকেই কলকাতার বাইরেই ছিলাম, বোর্ডিং কলেজে পড়াশোনা করতে। তবে কলকাতার বিরিয়ানির জবাব নেই!" টুকুন উৎসাহিত হয়ে বলল, "একদম ঠিক বলেছো! কলকাতার বিরিয়ানি সত্যিই আলাদা।" সে আমিশার প্লেটে আরেকটা চিকেন চাপের টুকরো দিয়ে বলল, "আর এই চিকেন চাপটাও তো কম যায় না!" আমিশা মুখে এক কামড় দিয়ে বলল, "সত্যি! এত রসালো চিকেন, উউউউফ দারুন দারুন।" তারপর একটু গম্ভীর হয়ে বলল, "আসলে দার্জিলিং তো একদমই আলাদা।" টুকুন কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করল, "কেমন আলাদা?" আমিশা বলল, "ওখানে সবকিছু এত শান্ত, একদম প্রকৃতির কোলে। আর এখানে... এত লোকজন, এত গতি!" সে জানালা দিয়ে বাইরের ব্যস্ত রাস্তার দিকে তাকিয়ে বলল, "দার্জিলিং একদম নিরিবিলি আর অনেক সুন্দর, তবে শহরের মতো এতো চাকচিক্য নেই!!" টুকুন হাসতে হাসতে বলল, "তুমি ঠিকই বলেছ! দার্জিলিং আর কলকাতার মধ্যে তো আকাশ-পাতাল তফাৎ।" সে একটু থেমে বলল, "কিন্তু tell me, প্রকৃতির নিস্তব্ধতা নাকি শহরের জাঁকজমক—তোমার কোনটা বেশি পছন্দ?" আমিশা একটু ভেবে বলল, "সত্যি বলতে, দুটোই। দার্জিলিংয়ে যখন কাঞ্চনজঙ্ঘা সূর্যোদয় দেখি, মনে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর জায়গা সেখানেই। আবার কলকাতার এই ব্যস্ত রাস্তা, মানুষের ভিড়, দোকানপাট—এসবের মধ্যেও এক অদ্ভুত energy আছে।" টুকুন মৃদু হেসে বলল, "মানে তুমি বলতে চাইছো, তুমি আসলে দুই world-এরই মানুষ?" আমিশা খুশি হয়ে মাথা নাড়ল, "হ্যাঁ! ঠিক সেই কথাই বলতে চেয়েছি আমি।" ঠিক তখনই ওয়েটার এসে বলল, "ম্যাডাম, খাবার কেমন ছিল?" আমিশা উচ্ছ্বসিত হয়ে উত্তর দিল, "খাবারটা একদম অসাধারণ হয়েছে! বিরিয়ানিটা খুবই সুস্বাদু, আর চিকেন চাপ তো কথা ছাড়াই দারুণ!" ওয়েটার খুশি হয়ে বলল, "আপনাদের পছন্দ হয়েছে জেনে খুব ভালো লাগল ম্যাডাম।" সে টুকুনের দিকে তাকিয়ে বলল, "স্যার, আর কিছু দরকার?" টুকুন হাসিমুখে আমিশার দিকে তাকিয়ে বলল, "আমিশা, তুমি ফিরনি খাবে? আমার তো খুব প্রিয় এই ফিরনি!" আমিশার চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। "ফিরনি? wow মম মাঝে মাঝে বানাতো আমি বাড়ি এলে!!" টুকুন ওয়েটারকে ইশারা করতেই সে বলল, "স্যার, আজকে আমাদের বিশেষ মালাই ফিরনি আছে। একদম বাড়িতে বানানো মতন।" টুকুন আমিশার দিকে তাকিয়ে বলল, "শুনলে তো? আজকে তো ট্রাই করতেই হবে!" আমিশা উৎসুক হয়ে বলল, "হ্যাঁ, অবশ্যই!" ওয়েটার দ্রুত ফিরনি নিয়ে এলো। লাল পোঁড়া মাটির বাটিতে সাজানো ফিরনির ওপর ছিল কয়েকটি পেস্তা বাদাম আর জাফরানের সূতা। আমিশা প্রথম চামচটা মুখে দিতেই তার চোখ বন্ধ হয়ে গেল। "ওহ! এটা তো out of the world! এত soft, এত মিষ্টি!" টুকুন খুশি হয়ে বলল, "আমি জানতাম তোমার পছন্দ হবে। এই ফিরনির স্বাদই আলাদা।" - আরও যোগ করে "কলকাতার খাবার is best !!" আমিশা "হুমম, জানি, আমি খুব মিস করি এইখানকার খাবার!" - একটু উদাস হয়ে "Sunday ফিরে যেতে হবে দার্জিলিংয়ে!! কাল বাদে পরশু!!!" টুকুনের মুখে একটু হতাশা ফুটে উঠল। "হুমম, তোমার নানু বলছিলেন..।" আমিশা একটু ভারী হৃদয় নিয়ে বলল, "আমার এক্সাম না থাকলে, আরও কিছুদিন থাকতে পারতাম।" টুকুন একটু থেমে বলল, "তাহলে নেক্সট টাইম একটু বেশি সময় নিয়ে এসো" - বলে প্রেম ভরা দৃষ্টিতে তাকালো আমিশার দিকে। আমিশার চোখ একটু সজল হয়ে উঠল। সে টুকুনের দৃষ্টির মধ্যে সত্যিকারের আবেগ খুঁজে পেল। বলল, "প্রমিজ, তুমিও তখন সময় দেবে?" টুকুন হাসল, "কী silly question! তোমার জন্য তো সব সময়ই আছে।" আমিশা চোখে এক চতুর হাসি দিলো। সেই হাসিতেই ছিল না বলা সব কথা, যা টুকুনও বুঝতে পেরেছিলো। সে আমিশার চোখের সেই হাসির উত্তর দিল নিজের চোখের ভাষাতেই। কিছুক্ষণ নিস্তব্ধতার পর আমিশা বলল, "কাল রাতে নানুর থেকে গল্প শুনছিলাম, ওই অপহরণের ঘটনাটা..." - টুকুনের চোখে চোখ রেখে বলল, "নানু তো তোমার ওপর একদম ফিদা!" টুকুন একটু লজ্জা পেয়ে হাসল, "আরে না, ওতে আমার এমন কোনো কৃতিত্ব নেই। আমি তো শুধু কর্তব্য করেছি।" আমিশা জেদ ধরে বলল, "না, তুমি বড়ই কম করে বলছ। নানু বলছিলেন, তুমি কীভাবে পুলিশকে সাহায্য করেছ, কীভাবে clue ধরে ধরে সবার আগে সমাধান করেছ।" টুকুন আমিশার দিকে ফিরে তাকিয়ে বলল, "আসলে আমাদের কলেজের চুরির কিনারা করতেই তোমার নানুর কেসটা সল্ভ হয়েছিল।" আমিশার চোখে শ্রদ্ধা ঝলক দিয়ে উঠল, "তোমার মতো মানুষ আজকাল খুব কম দেখা যায়।" সে একটু থেমে বলল, "নানু বলেছিলেন, তুমি পুলিশকে clue ধরে না দিলে পুলিশ কখনোই অপহরণের কেস সল্ভ করতে পারতো না।" টুকুন হালকা হেসে বলল, "ছাড়ো এসব পুরোনো কথা।" আরও গভীরভাবে আমিশার চোখে তাকিয়ে বলল, "তোমার বাবা-মায়ের ব্যাপারে বলো!" - একটু সোজা হয়ে বসে বলল, "তোমার নানু বলেছে যদিও তোমার মায়ের কথা..." আমিশার মুখে এক মুহূর্ত ছায়া পড়ল। সে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, "আমার মম... একাই আমাকে বড় করেছে। আমি যখন ছোট ছিলাম তখন আব্বু মমকে তালাক দিয়ে দুবাই গিয়ে আবার নিকাহ করেছে।" তার কণ্ঠস্বর একটু কেঁপে উঠল, "তিন-চার বছর আগে আরেক জনকে নিকাহ করল মম, সেও ঐরকম লোক বেরোল, সে-ও তিন-চারটা বিয়ে করতে চায় যেমন সব মহমেডান লোকেরা চায়, তাই মম ওকে তালাক দিয়েছে।" - একটু নিস্তব্ধ থেকে বলল, "মম খুব strong মহিলা, তাই তো মম প্রেগনেন্ট অবস্থায় ও তালাক দিতে পেরেছে!" টুকুন গম্ভীর হয়ে শুনল। সে আমিশার হাতটি নিজের হাতে নিল। "তোমার মা সত্যিই খুব সাহসী। গর্ভবতী অবস্থায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া সত্যিই কঠিন।" আমিশার চোখে জল জমল, "হ্যাঁ, I am really proud of my mom. তাই তো আমাকে একদম আলাদা culture এ বড় করার জন্য ছোট থেকেই বোর্ডিং কলেজে পড়িয়েছে!" - মুখ বাঁকা করে "মম বলে 'মহমেডানদের মধ্যে মেয়েদের কোনো ইজ্জত নেই!!'" টুকুন আমিশার হাতটি আরও শক্ত করে ধরল। "তোমার মায়ের এই অভিজ্ঞতা খুবই painful। কিন্তু কিছু শিক্ষিত পরিবার একরকম না। আমার অনেক '. বন্ধু আছে যাদের পরিবারে মেয়েদের খুবই সম্মান দেওয়া হয়। তবে এটা আলাদা কথা যে চারটি বিয়ে করার জন্য অনেক মহমেডান পুরুষই obsessed থাকে।" আমিশা একটু কঠিন সুরে বলল, "এটাই তো সমস্যা! মেয়েদের object হিসেবে দেখা হয়। আমার মমের life-টা destroy হয়ে গেছে এই mentality-এর কারণে।" - তারপর একটু গর্বের সুরে বলল, "তবে মম একদমই পাত্তা দেয়না এগুলোকে, বলে 'আমার যেভাবে খুশি সেভাবে life lead করবো।', তাই আমাকেও সেই ভাবেই বড় করেছে, পুরো freedom দিয়েছে আমাকে!!" টুকুন বলল, "বাহ! একদম ঠিক কাজ করেছেন। তাহলে তো তোমার মা তোমার মা কম, বন্ধু বেশি!" আমিশার মুখে হাসি ফুটে উঠল, "হ্যাঁ, একদম! মম আমার best friend। আমরা সব কথা share করি।" তারপর একটু গম্ভীর হয়ে বলল, "মম বলে, 'মেয়ে মানুষ মানেই weak না। আমরা নিজেরা strong হলে কোনো society-ই আমাদের down রাখতে পারবে না।'" টুকুন বলল, "তোমার মা সত্যিই একজন ভালো এবং স্পষ্টবাদী মহিলা।" - তারপর একটু কৌতূহলী সুরে বলল, "তোমার মা প্রেগনেন্ট ছিলো দ্বিতীয় ডিভোর্সের সময়...?" আমিশা বলল, "হাঁ, আমার ভাই আছে তো 'রেহান', মাত্র দেড়বছর বয়স... এখনো দুধ খায়..." - বলে একটু লজ্জার হাসি দিল! টুকুন হাসল, "ওহ! তাহলে তুমি একদম বড় বোন! রেহানকে খুব ভালোবাসো নিশ্চয়?" আমিশার চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল, "হ্যাঁ, খুব! মম আমার মতোই ওকেও বড় করতে চায়, ভালো culture  এ!!" টুকুন "খুব ভালো, তোমার মা সত্যিই strong মানুষ!!" আমিশা খুশি হয়ে বলল, "Thanks! মম শুনলে খুব proud feel করতো।" সে একটু থেমে নিয়ে ফিসফিস করে বলল, "তোমাকে একটা secret বলবো..?" টুকুন একটু নড়ে চড়ে বসলো আর চোখ উজ্জ্বল করলো, আমিশা "Last year কি হয়েছে জানো, দার্জিলিংয়ের hostel এ আমার এক room-mate Weed নিয়ে এসেছিলো.." - টুকুন একটু ভ্রু কুঁচকালো দেখে আমিশা বললো "আরে গাঁজা গো!!" - তারপর আবার শুরু করলো "তো, আমি আর আমার ফ্রেন্ড রুমে খেয়েছিলাম Weed, তাই কেউ হয়তো কমপ্লেইন করেদিয়েছিলো প্রিন্সিপালের কাছে!!" টুকুন চিন্তিত হয়ে বলল, "কি!!! তুমি গাঁজা খেয়েছিলে? এটা তো খুব risky!" আমিশা দ্রুত বলল, "না, শুনে নাও আগে! আমরা শুধু একবার ট্রাই করেছিলাম, curiosity-তে। কিন্তু তারপরেই principal আমাদের ধরে ফেললেন।" টুকুন গম্ভীর হয়ে বলল, "তারপর কি হলো? তোমার কোনো punishment হলো?" আমিশা হাসতে হাসতে বলল, "হাঁ, Guardian কল করেছিল!!" টুকুন "ওরে বাবা !!" আমিশা "মম দেখা করেছিলো প্রিন্সিপালের সাথে, একটু বকাও খেলো আমার জন্য!!" টুকুন "তারপর, তুমিও বকা খেলে নিশ্চই!!!" আমিশা "আমি তো ভয়ে ছিলাম খুব, মম কি বলে!!" একটু চতুর হাসি দিয়ে বলল, "কিন্তু..." টুকুন "কিন্তু কি?" - টুকুনের যেন তর সইছে না। আমিশা "মম আমাকে বলেছিল 'experiment করা খারাপ না, ইনশাল্লাহ, কিন্তু তোর এই experiment এর জন্য আমাকে বকা খেতে হলো', এই কথা শুনে আমার মুখ কালো হয়ে গেছিলো দেখে মম বললো 'আমি হোটেলে থাকবো আজ, প্রিন্সিপালের পারমিশন নিয়েছি, তুই আমার সাথে আজ হোটেলে থাকতে পারিস'" টুকুন "তারপর.. তারপর.." আমিশা "আমার মুখ আরও কালো হয়ে গেলো, এটা ভেবে যে হোটেলে সারাক্ষণ হয়তো মম আমাকে বকবে!! কিন্তু..." টুকুন "কিন্তু..." - বলে ভ্রু কোঁচকালো। আমিশা "কিন্তু মম বললো 'যা, তোর কোনো দরকারি জিনিস লাগলে নিয়ে আয় রুম থেকে..', আমি যখন মনমরা হয়ে যেতে লাগলাম তখন মম হেসে বললো 'আর শোন্, তোর কাছে যদি Weed থাকে নিয়ে আসিস...আমিও ট্রাই করবো'" টুকুন "তাই, wow" - চেয়ারে নড়ে চড়ে বসে "তোমার মা তো খুব friendly!!" আমিশা "হুমম..একদম" - মুখে শান্তির ছাপ এনে "উফফ সেই রাতে আমি আর মম খুব মজা করেছি!!!" টুকুন হাসতে হাসতে বলল, "তোমার মা সত্যিই অসাধারণ! এমন ওপেন-মাইন্ডেড মা আজকাল খুব কম দেখা যায়।" আমিশা গর্বিত হয়ে বলল, "হ্যাঁ, মম বলেছিলেন, 'জীবনে সবকিছু একবার করে হলেও ট্রাই করতে হবে, কিন্তু সীমা জানতে হবে।' সেই রাতে আমরা রুমে পিজ্জা অর্ডার করেছিলাম, মুভি দেখেছিলাম, আর গল্প করেছিলাম সারারাত।" টুকুন মুগ্ধ হয়ে বলল, "এটা তো একদম বেস্ট ফ্রেন্ডদের মতো সম্পর্ক!" আমিশা চোখ টিপে বলল, "পরের দিন মম আমাকে বলেছিলেন, 'এবার থেকে কোনো কিছু ট্রাই করার আগে আমার সাথে কথা বলবি, আমি সাহায্য করবো।' সেই দিন থেকেই আমরা আরও ক্লোজ হয়ে গেলাম।" টুকুন আর আমিশার গল্প বেশ ভালোই চলছিলো ঠিক তখন ওয়েটার এসে টেবিলে বিল দিয়ে বললো "স্যার..আপনার বিল!" টুকুন বিলটা নিয়ে দেখল, আর আমিশার দিকে তাকিয়ে হাসল, "বেশ ভালোই lunch হলো, বলো!!" আমিশা ওয়েটারের দিকে তাকিয়ে বললো "খুব Testy ছিলো খাবার গুলো!!" টুকুন বিলের টাকা আর কিছু এক্সট্রা টিপস দিলো। ওয়েটার ধন্যবাদ জানিয়ে বিল নিয়ে চলে গেল। আমিশা বলল, "সত্যিই খুব সুস্বাদু খাবার ছিল। এই Restaurant এর কথা আমি মম-কেও বলব।" টুকুন উঠে দাঁড়িয়ে বলল, "চলো, তাহলে এখন ওঠা যাক।" আমিশা "হুমম" - বলে উঠতে যাবে তখন ওই রেস্তোরাঁর অন্য প্রান্ত থেকে কারো কথা কাটাকাটির শোরগোল শোনা গেলো। টুকুন আর আমিশা দুজনেই কি হচ্ছে কৌতূহলবশত দেখতে গেল। দেখতে পেল, এক মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোক, হয়তো কাস্টমার, জোর গলায় একজন ওয়েটারকে ধমক দিচ্ছেন। "এটা কি ব্যবহার! তোমাদের A Class Restaurant এ" - পাশে দাঁড়ানো এক বয়স্ক লোককে দেখিয়ে "এই রকম নোংরা লোককে দিয়ে খাবার serve করাচ্ছেন, তাও মুটে মুজুরের মতো নোংরা লুঙ্গি গেঞ্জি পড়া লোককে দিয়ে..ছি।" ওয়েটারটি লজ্জায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। পাশে দাঁড়ানো বয়স্ক লোকটি, যিনি সম্ভবত রেস্তোরাঁর ক্লিনিং স্টাফ, awkwardly তার ময়লা লুঙ্গিটি ঠিক করতে লাগলেন। ওয়েটার কাস্টমার এর উদ্দেশে "সরি স্যার, আপনি বসুন। আমি দেখছি!!" - বলে বয়স্ক লোকটির দিকে ঘুরে উঁচু গলায় "চাচা, তোমাকে কে বলেছে খাবার সার্ভ করতে...?" - আরও রেগে "তোমার কাজ কি জানো না!!" বয়স্ক লোকটি কাচুমাচু গলায় "মাফ করবেন বাবু, খানা ঠান্ডা হয়ে যাবে তাই আমি...অউর সব লগ দুসরা কাম করছিলো বলে হামি লিয়ে এলাম" ওয়েটার আরও গলা ফাটিয়ে "চুপ করুন, দেখছেন না কাস্টমার রেগে গেছেন!!, তাও তুমি কথা বলে যাচ্চো!!" এই দৃশ্য দেখে টুকুন আরও এগিয়ে গেল। সে ওয়েটারকে বলল, "এভাবে একজন বয়স্ক মানুষকে অপমান করা উচিত নয়। তিনি তো সাহায্য করতে চেয়েছিলেন।" টুকুনের সাপোর্ট পেয়ে ওয়েটার হাসি মুখে মধ্যবয়স্ক কাস্টমার কে বলল, "স্যার, আপনি চিন্তা করবেন না, আমি খাবার চেঞ্জ করে দিচ্ছি!!" মধ্যবয়স্ক কাস্টমার বললেন "ঠিক আছে... ঠিক আছে..." বয়স্ক লোকটির দিকে তাকিয়ে "আপনাদের মত বড় Restaurant এই রকম নোংরা লোক থাকলে কিন্তু কেউ আসবে না !!" টুকুন এই কথা শুনে প্রায় রেগে গিয়ে বয়স্ক লোকটির কাঁধে হাত দিয়ে মধ্যবয়স্ক কাস্টমারকে বললো "স্যার, আপনি সুটেড-বুটেড ভদ্র লোক হয়ে, একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে এরকম কথা বলছেন!!!" - বয়স্ক লোকটির দিকে তাকিয়ে "ওনার বেশ ভুষার জন্য বিচার করছেন!! একজন বয়স্ক লোককে কীভাবে এটা বলতে পারলেন!!" মধ্যবয়স্ক কাস্টমার একটু হকচকিয়ে গেলেন। হয়তো তার কাছে কোনো জবাব নেই। তখন বয়স্ক লোকটি চোখ মুছতে মুছতে বললেন, "জানে দিজিয়ে বাবু, হামি চলে যাচ্ছি।" টুকুনও আর কথা বাড়ালো না, পরিবেশ শান্ত হলো। ওয়েটার তড়িঘড়ি ওই কাস্টমারের খাবার গুলো চেঞ্জ করার জন্য অন্য ওয়েটারকে বললো। টুকুন আর আমিশাও বেরিয়ে যেতে লাগলো। Restaurant থেকে বেরোনোর সময় ওয়েটারটি দৌড়ে এসে টুকুনকে বললো "Thank you স্যার, আপনি মাঝখানে এলেন বলে বড় ঝামেলার থেকে বেঁচে গেলাম।" - টুকুন মুচকি হাসি দিয়ে আমিশাকে নিয়ে বেরিয়ে গেল। - চলবে
Parent