বাংলা গল্প- লালপট্টি - অধ্যায় ৫

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-70110-post-6019255.html#pid6019255

🕰️ Posted on August 28, 2025 by ✍️ rajusen25 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 3319 words / 15 min read

Parent
দেখতে দেখতে একটা মাস গেল। টুকুনের এই উদ্যোগ—একটু একটু করে গড়ে তোলা ভালোবাসার সাঁকো—সত্যিই মনে দাগ কাটে! ইসমাইল চাচা আর আমিনা খালার জন্য তার এই মমতা, এই যত্ন—এ যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক জীবন্ত নিদর্শন। টুকুনের নিয়মিত যাতায়াত, প্রয়োজনমতো জিনিসপত্র পৌঁছে দেওয়া, আর বিশেষ করে সেই মোবাইল ফোনটা কিনে দেওয়া আর নতুন ভ্যানরিকশাটা এনে দেয়া—এসব ছোট ছোট পদক্ষেপ ইসমাইল চাচাদের জীবনটাকে বদলে দিয়েছে, যেন মরা নদীতে জোয়ারের জল এসে লেগেছে। ইসমাইল চাচা এখন হাসি-হাসি মুখে মাছের ব্যবসা সামলায়। হাতে নতুন মোবাইল, পাশে চকচকে ভ্যানরিকশা—এখন তার চলনে বলনে একটা নতুন জোর। লালপট্টির গ্রামে তার কদর বেড়েছে, সম্মান বেড়েছে। লালপট্টি মুচি, মেথর, জেলে আর নাপিতের গ্রাম—সবাই এখন ইসমাইল চাচাকে একটু অন্য চোখে দেখে। গ্রামের অঘোষিত মোড়ল হয়ে উঠেছে ইসমাইল চাচা। আর তাদের সেই জীর্ণ মাটির ঘর? সেটা এখন নতুন করে গড়া—দুটো মাটির ঘর দাঁড়িয়ে আছে গাঁটছড়া বেঁধে, পাশে আলাদা রান্নাঘর, যার চালে এখনও মাটির গন্ধ মাখা। একটা গরু কিনেছে, সেই গরুটাও গাভিন।  টুকুনের প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষা শেষ হতে না হতেই জীবন যেন নতুন গতিতে ছুটতে শুরু করল। বই-খাতার স্তূপ, রাত জেগে মুখস্থ করা, ক্লাস টেস্টের চাপ—এসবের মধ্যেও সে ইসমাইল চাচা আর আমিনা খালাকে ভুলে যায়নি। মোবাইলে তাদের নামটা দেখলেই তার মনে পড়ে যেত সেই মাটির ঘরের গন্ধ, আমিনা খালার হাতে বানানো মিষ্টি লবঙ্গ চায়ের স্বাদ, আর ইসমাইল চাচার গলায় ভেসে আসা পুরনো ভাটিয়ালি গানের সুর। একদিন বিকেলের রোদ যখন কমলা রঙে মেলে দিচ্ছে আকাশ, টুকুনের ফোনটা বেজে উঠল। স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করছে অপরিচিত নম্বর। কানে স্পিকার চেপে ধরতেই ভেসে এলো এক পরিচিত কণ্ঠ—নরম, মিষ্টি, কিন্তু আজকের স্বরে একটু অন্যরকম কম্পন। "টুকুন বাবু... আমি আমিনা বলছি..." ওই কণ্ঠের আড়ালে লুকিয়ে আছে আনন্দের এক অদ্ভুত তরঙ্গ। টুকুনের বুকে হঠাৎ করেই ধক করে উঠল। "আলহামদুলিল্লাহ..."—আমিনা খালার গলায় এবার ভেসে এলো এক গভীর আবেগ, লজ্জা আর আনন্দের মিশেল—"আমি পোয়াতী হয়েছি বাবু... তোমার বীর্যে..." ফোনের ওপাশ থেকে ভেসে আসা সেই কথাগুলো যেন হঠাৎ করেই বাতাসকে স্থির করে দিল। টুকুনের গালে রক্ত হুড়মুড় করে উঠল। গলাটা শুকিয়ে এল। ওই মুহূর্তে সে দেখতে পেল—আমিনা খালার লাল পাড়ের শাড়ি, তার হাতের মেহেন্দির ফোটা, চোখের কোণে জমে থাকা এক ফোঁটা জল, আর মুখে লুকিয়ে রাখা সেই নির্মল হাসি, যেন শরতের কাশফুলের মতো নরম, কিন্তু তাতে লেগে আছে এক গভীর আবেগের রেশ। বাইরে তখন সন্ধ্যা নামছে। টুকুনের মনে পড়ে গেল—সেই প্রথম দিন, যখন সে ইসমাইল চাচাদের বাড়িতে গিয়েছিল। সেই মাটির ঘর, উনুনের ধোঁয়া, আমিনা খালার হাতের করা চা... আর আজ? আজ সেই সম্পর্ক এক নতুন অধ্যায়ে পা রাখল। তার গলা দিয়ে শব্দ বেরোতে চায় না। কিন্তু হৃদয়টা তখন পরিপূর্ণ—এক অনির্বচনীয় ভালোবাসায়, দায়িত্ববোধে, আর এক অদ্ভুত গর্বে। "খালা..."—টুকুন শেষমেশ কথা বলল, গলায় একটু কাঁপুনি—"আমি... আমি আজই আসছি।" সেদিন সন্ধ্যা নামার আগেই টুকুন পৌঁছে গেল ইসমাইল চাচাদের বাড়িতে। তার হাতে ভরে আনা নানা রকমের খাবারের প্যাকেট, গায়ে জড়ানো একটা মিষ্টি গন্ধ – ফ্রেশ স্যান্ডেলস, গরম গরম রসমালাই, আর আমিনা খালার প্রিয় নারকেলের সন্দেশ। পেছনের ভ্যানে ঠেসে দেওয়া আছে নতুন গরম কাপড়, শিশুর জিনিসপত্র, আর একটা বড় প্যাকেটে মায়ের জন্য পুষ্টিকর খাবার। ইসমাইল চাচার বাড়ির সামনে পা দিতেই দরজা থেকে খোলা হৃদয়ে বেরিয়ে এলো দু'জনে – ইসমাইল চাচার চোখে-মুখে এক অদ্ভুত উজ্জ্বলতা, আর আমিনা খালার হাসিতে যেন ফুটে উঠেছে সারা জীবনের সমস্ত সুখ। "খুব ভালো খবর চাচা," – টুকুনের গলা একটু ভারী হয়ে এল, "তুমি আব্বা হতে চলেছো... আর খালা আম্মা!" ইসমাইল চাচার চোখ দিয়ে টপ টপ করে জল পড়তে লাগল। তার শক্ত হাত দুটো কাঁপছিল। "মাশাআল্লাহ! মাশাআল্লাহ!" – তিনি কেঁদে ফেললেন, গলার স্বর ভেঙে গেল, "আল্লাহ আমাকে সন্তান দেখার সৌভাগ্য দিলেন! এই বুড়ো বয়সে... এই নেয়ামত!" টুকুনকে তিনি জড়িয়ে ধরলেন শক্ত করে, যেন জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়াটাকে আঁকড়ে ধরছেন। আমিনা খালা পাশে দাঁড়িয়ে মৃদু হাসছিলেন, তার হাতটা স্বাভাবিকভাবেই নিজের পেটের ওপর গিয়েছিল, সেখানে যে নতুন জীবন লুকিয়ে আছে, তার জন্য এক গভীর মায়ায় ভরা স্পর্শ। বাইরে তখন সন্ধ্যার শেষ আলো মিলিয়ে যাচ্ছে। পাশের আমগাছের ডালে বসা একটা পাখি ডাকছে মৃদু স্বরে। বাড়ির ভেতর থেকে ভেসে আসছে উনুনের গরম ভাতের সুগন্ধ। ইসমাইল চাচা টুকুনের হাত ধরে বললেন, "আজকে তোমাকে ছাড়া যাবে না বাবু... আজকে আমাদের সাথে খেতে হবে। আমিনা তোমার জন্য বিশেষ মোরগ পোলাও রান্না করেছে!" টুকুনের চোখেও জল এসে গেল। সে বুঝতে পারছিল, এই আনন্দ শুধু একটা শিশু জন্মানোর খবর নয় – এ তো একটা পরিবারের গভীর বন্ধন, যে বন্ধন রক্তের নয়, কিন্তু হৃদয়ের। ঠিক সেই মুহূর্তে বাড়ির আঙিনায় হাজির হলেন গ্রামের আরো দু'জন প্রবীণ ব্যক্তি - জামালুদ্দিন ও তৌফিক। আমিনা খালা তৎক্ষণাৎ শাড়ির আঁচল দিয়ে মাথা ঢেকে নিলেন, মৃদু হেসে ভেতরের রান্নাঘরের দিকে চলে গেলেন। ইসমাইল চাচা সগৌরবে এগিয়ে গেলেন তাদের স্বাগত জানাতে। "জামালুদ্দিন ভাই, তৌফিক ভাই, এ আমাদের টুকুন," ইসমাইল চাচা গর্বে বুক ফুলিয়ে বললেন, টুকুনের দিকে হাত বাড়িয়ে, "এমন নেক ছেলে আজকাল খুঁজে পাওয়া ভার! আমাদের মতো গরিবের দুঃখ-কষ্ট যার হৃদয়ে জায়গা পায়!" টুকুন লক্ষ করল দুজন পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষ - গায়ের রং কৃষ্ণবর্ণ, শ্যামল শরীর, ছোটখাটো গড়ন। তাদের পরনে সাধারণ মোটা সুতির লুঙ্গি, গায়ে হালকা রঙের গেঞ্জি। গ্রামের এই মানুষগুলোর চেহারায় যেন মাটির স্পর্শ লেগে আছে - বছরের পর বছর রোদ-ঝড়-বৃষ্টিতে পোড়া। টুকুনের মনে পড়ল ইসমাইল চাচার কথা - এই লালপট্টি গ্রামে মূলত মুচি, মেথর, নাপিত আর জেলেদের বাস। এরা সবাই সমাজের প্রান্তিক মানুষ, যাদের জীবন সংগ্রামে কেটে যায়। ইসমাইল চাচা আর আমিনা খালা যেন এই গ্রামেরই আলাদা - তাদের চেহারায়, কথাবার্তায় এক ভিন্ন মর্যাদা। গ্রামবাসীরা টুকুনের দিকে বিস্ময়-মিশ্রিত শ্রদ্ধায় তাকাল। জামালুদ্দিন তার কালো হাত দুটি উত্তোলন করে বললেন, "মাশাআল্লাহ! আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুক বাবা। ইসমাইলের বাড়িতে আজ সত্যিই বরকত নেমেছে!" তৌফিক তার কপালের ঘাম মুছতে মুছতে যোগ দিলেন, "এমন সন্তান লাভ করলে তো বাপ-মা ধন্য!" তাদের কণ্ঠে ছিল এক গভীর কৃতজ্ঞতা, চোখে জ্বলছিল আনন্দের। তৌফিকের কথায় আলোচনার স্বাভাবিক গতি যেন হঠাৎ থমকে গেল। তার কপালে এখনও জমে আছে শ্রমের ঘাম, রোদে পোড়া গালের চামড়ায় ভাঁজ পড়েছে এক অদ্ভুত উল্লাসে। "ইসমাইল ভাই, এত বড় খুশির দিনে চলো না চারজনে একসাথে দারু খাই," বলেই সে চোখ টিপে দিল, যেন গ্রামের সেকালের স্মৃতিচারণ করছে। বাতাসে ভেসে বেড়াল এক ধরনের টানটান উত্তেজনা। ইসমাইল চাচার মুখে ফুটে উঠল এক ধরনের সংকোচ - ঠোঁটের কোণায় সামান্য কাঁপুনি, ভ্রু কুঁচকে যাওয়া। তার ধবধবে সাদা পাঞ্জাবির হাতা থেকে বেরিয়ে থাকা হাতের আঙুলগুলো নিজে থেকেই যেন অনিচ্ছায় নড়ে উঠল। "আরে তৌফিক ভাই," ইসমাইল চাচা নরম কিন্তু দৃঢ় গলায় বললেন, "টুকুন বাবু তো আমাদের শহুরে অতিথি, তার সামনে এ সব..." - কথা শেষ না করেই তিনি টুকুনের দিকে এক অনিশ্চিত দৃষ্টিতে তাকালেন। "আরে নিশ্চয়ই পার্টি করতে হবে!" টুকুন উচ্ছ্বাসে বলে উঠল, "আমি তো পুরোপুরি রাজি!" তৌফিকের মুখে ফুটে উঠল এক জয়োল্লাসিত হাসি। সে জামালুদ্দিনের কাঁধে হাত রেখে বলল, "দেখছিস তো দাদা? আজকালকার ছেলেরা আর আমাদের মতো সংকীর্ণমনা নয়!" "বাহ বাবা!" জামালুদ্দিন হেসে উঠলেন, "তুমি তো আমাদের সত্যিই চমকে দিলে! শহুরে শিক্ষাই আলাদা!" রান্নাঘর থেকে উঁকি দিচ্ছিলেন আমিনা খালা। তার হাতে তখনও রয়ে গেছে মোরগ পোলাও মাখার চামচ। "কি হচ্ছে ওখানে?" তার কণ্ঠে মিশ্রিত ছিল কৌতূহল ও সামান্য উদ্বেগ। "শুনছিস আমিনা?" ইসমাইল চাচা গলা একটু উঁচু করে ডাক দিলেন, গলায় লুকানো উৎসাহ, "আজ আমাদের টুকুন বাবু পার্টি করতে চায়!" রান্নাঘর থেকে ভেসে এল আমিনা খালার মিষ্টি হাসির ধ্বনি, যেন পাতায় পাতায় লুকিয়ে থাকা শিউলি ফুলের সুবাস ছড়িয়ে পড়ল। "তা হলে তো খুব ভালো কথা!" তার কণ্ঠে মিশে ছিল মাতৃসুলভ স্নেহ আর এক গোপন উৎফুল্লতা, "কিন্তু আমি তো ইতিমধ্যেই মোরগ পোলাও রান্না করে ফেলেছি। আর হ্যাঁ—" একটু থেমে বললেন, কণ্ঠে চাপা উচ্ছ্বাস, "টুকুন বাবুকে বলে দাও আজ রাতটা এখানেই থেকে যেতে। এত রাতে আবার কোলকাতা ফিরবে কী করে!" তার কথার আড়ালে লুকিয়ে ছিল এক ধরনের মায়া—যেন টুকুনকে নিজের সন্তানের মতোই আগলে রাখতে চান। রান্নাঘর থেকে ভেসে আসা মসলার ঘ্রাণ যেন আরও গাঢ় হয়ে উঠল, আমিনা খালার এই আগ্রহে। ইসমাইল চাচা টুকুনের দিকে তাকালেন, চোখে-মুখে এক ধরনের আনন্দের আভা। "শুনলে তো বাবু? আজ তুমি আমাদেরই অতিথি। আমিনা তো রাজি না তোমাকে যেতে দিতে!" টুকুনের ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠল এক গভীর, আত্মতৃপ্তির হাসি। তার চোখে যেন ঝিলিক দিল এক নতুন উপলব্ধি—এই মাটির দেওয়ালে ঘেরা ছোট্ট আঙিনাটাই আজ তার জন্য সবচেয়ে নিরাপদ ঠিকানা। দূরের কলকাতা শহরের উঁচু অট্টালিকাগুলোর, গাড়ির হর্নের শব্দ সব যেন ম্লান হয়ে গেল এই গ্রাম্য নিস্তব্ধতার কাছে। "ঠিকই তো বলেছ চাচা!" টুকুন উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলল, "আমি এখনই বাড়িতে ফোন করে বলে দিচ্ছি যে কাল সকালে ফিরব। কি বলো!" তার কথার মধ্যে লুকিয়ে ছিল এক ধরনের মুক্তির আনন্দ, যেন সে বহুদিন পর নিজেরই কোনো গোপন ইচ্ছাকে জয় করেছে। হাতের মুঠোয় ধরা মোবাইল ফোনটা থেকে বাবা-মায়ের সাথে কথা বলার জন্য নম্বর ডায়াল করতে গিয়ে টুকুনের আঙুলগুলো একটু কাঁপছিল—না ভয়ের কাঁপুনি, বরং এক অদ্ভুত উত্তেজনায়। ইসমাইল চাচার চোখ চকচক করে উঠল। "বেশ তো বাবা! আজ রাত তো আমাদেরই!" বলেই তিনি আমিনা খালার দিকে তাকালেন, যেন নীরবেই জানান দিচ্ছেন এই আনন্দের খবরটা। রান্নাঘর থেকে ভেসে আসা মোরগ পোলাওয়ের সুগন্ধ যেন আরও ঘন হয়ে উঠল। আমিনা খালা দরজার ফাঁক থেকে উঁকি দিয়ে বললেন, "টুকুন, ফোন সেরে এসো দিকি! এই দেখো, তোমার জন্য আলাদা করে সিমুই রাখলাম!" টুকুন ফোনে বলল, "মা, আমি আজ ইসমাইল চাচাদের বাড়িতেই থাকব... হ্যাঁ মা, খুব ভালোই আছি... কাল সকালে..." টুকুন ফোন রেখেই যখন মুখ তুলল, তখন জামালুদ্দিনের উৎসাহভরা কণ্ঠ ভেসে এল, "চলো ভাই, তাহলে এখনই দারুর ব্যবস্থা করি!" তৌফিক কপাল কুঁচকে একটু বিরক্তি মিশ্রিত কৌতুক নিয়ে বলল, "অরে বাপ রে! টুকুন সাহেব কি আমাদের মতো গাঁইটে দেশি মদ খাবে? তার তো লন্ডন-কোলকাতার অভ্যাস!" ইসমাইল চাচার মুখের হাসি মুহূর্তেই মিলিয়ে গেল। "এইসব মদের গল্প পরে হবে," তিনি কঠিন সুরে বললেন, "টুকুন বাবু আমাদের ঘরের মেহমান। ওঁর সামনে এই সস্তা হাড়িয়া-মদ নিয়ে বাজে কথা বলতে নেই।" বলেই তিনি জামালুদ্দিনের দিকে তাকালেন, "চলো ভাই, শহরের ওই ইম্পোর্ট শপ থেকে ভালো কিছু আনি।" তৌফিক মাথা নিচু করে বলল, "কিন্তু দাদা, শহর তো তিন কিলোমিটার দূর। রাত নামার আগে ফেরা মুশকিল..." ঠিক তখনই টুকুন তার ব্যাগ থেকে চকচকে নীল বাক্স বের করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিল। "দেখুন না চাচারা!" সে উচ্ছ্বাসে বলল, "এই তো জনি ওয়াকার ডাবল ব্ল্যাক! স্কটল্যান্ডের খাঁটি মদ। আজকের এই শুভদিনের জন্যই যেন এনেছিলাম!" জামালুদ্দিন বিস্ময়ে বোতলটা হাতে নিয়ে বললেন, "সুবহানাল্লাহ... এ তো দেখছি খুব দামি জিনিস!" তার চোখে-মুখে অভাবনীয় বিস্ময় ফুটে উঠল। তৌফিক বোতলটি হাতে নিয়ে আনন্দে লাফিয়ে উঠল, "ইনশাআল্লাহ! আজ তো আমাদের ভাগ্য ফিরল!" তার চোখে-মুখে শিশুর মতো উচ্ছ্বাস, যেন জীবনে প্রথমবার কোনো মহামূল্য ধন পেয়েছে। ইসমাইল চাচা গম্ভীরভাবে মাথা নেড়ে বললেন, "চলো, ওই বটতলায় জায়গা করে নেই। মাদুর পেতে, হারিকেন জ্বালিয়ে, পুকুরপাড়ের ঠাণ্ডা হাওয়ায় বসব।" হঠাৎ টুকুনের দিকে ফিরে মৃদু হেসে যোগ করলেন, "টুকুন বাবু, আমিনা তোমার জন্য স্পেশাল সিমুই তৈরি করেছে। খেয়ে নিও আগে।" টুকুন হালকা হেসে উত্তর দিল, "নিশ্চয়ই চাচা, এখনই যাচ্ছি।" বলেই সে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়াল, যেখানে আমিনার হাতের তৈরি গরম গরম সিমুইয়ের সুবাস বাতাসে মিশছে। এদিকে ইসমাইল, তৌফিক ও জামালুদ্দিন পুকুরপাড়ের দিকে এগিয়ে গেল। তৌফিক আনন্দে গুনগুন করে উঠল, "আজকের রাত তো মনে হবে ঈদের চাঁদ!" জামালুদ্দিন মাটির প্রদীপ জ্বালানোর জন্য কেরোসিন নিয়ে ব্যস্ত, আর ইসমাইল চাচা সযত্নে মাদুর বিছিয়ে চলেছেন। টুকুন রান্নাঘরে ঢোকার সাথে সাথেই আমিনা আবেগে আপ্লুত হয়ে উঠল। তার চোখে জমে থাকা অশ্রু মোমবাতির আলোয় ঝিলিক দিল। "বাবু..." - তার কণ্ঠে ছিল এক গভীর কৃতজ্ঞতার সুর, "একদিনেই তুমি আমার সমস্ত অপূর্ণতা পূরণ করে দিয়েছ..." তার হাত কাঁপতে কাঁপতে নিজের পেটের উপর রাখল, যেখানে এখন নতুন একটি জীবন ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে। টুকুন নিঃশব্দে এগিয়ে গেল। আমিনার চোখের জল মুছিয়ে দিতে গিয়ে তার নিজের হাতও কেঁপে উঠল। "খালা..." - সে মৃদু স্বরে বলল, "তুমি তো জানো, এটা আমাদের সবারই আশীর্বাদ..." আমিনা টুকুনের হাত নিজের গালে চেপে ধরল, তার আঙুলগুলোতে লেগে থাকা মসলার গন্ধ মিশে গেল টুকুনের ত্বকের স্পর্শে। "তুমি আমাদের জীবনে আল্লাহর পাঠানো নেয়ামত বাবু..." - তার কণ্ঠস্বর ভেজা হলুদ আলুর ঝোলের মতো গাঢ় ও মিষ্টি। রান্নাঘরের মিটমিট কর্তি হারিকেনের আলোয় তাদের মিলিত ছায়া দেয়ালে লেপ্টে থাকা নকশিকাঁথার মতো জটিল হয়ে উঠল। সযত্ন হাতে আমিনা সদ্য তোলা সিমুইগুলো টুকুনের থালায় সাজালো। টুকুন খেতে খেতে বলল, "খালা, এই সিমুইয়ের স্বাদ তো কলকাতার পাঁচতারা হোটেলের খাবারকেও হার মানায়!" আমিনার মুখে ফুটে উঠল সেই গভীর, অন্তরঙ্গ হাসি - যেটা শুধুমাত্র মাতৃত্বের স্বাদ পেয়েছে এমন নারীর মুখেই দেখা যায়। ইসমাইল চাচা ঠিক সেই মুহূর্তে দরজার চৌকাঠে হাজির, তার হাতের বাঁশের ট্রেতে সাজানো রয়েছে জাফরান মেশানো মোরগ পোলাও, পাশে কাঁচের জগে ঠাণ্ডা বেলের শরবত আর মুড়ি-চানাচুরের প্যাকেট। "টুকুন বাবু," তিনি গলার স্বরে নামিয়ে আনলেন, "এসব খেয়ে নিও ধীরেসুস্থে। আমরা পুকুরপাড়ে বসে আছি।" তার চোখের কোণে জমে থাকা জলই বলে দিচ্ছিল - এই মধ্যবয়সী জেলের অন্তরে কত গভীর কৃতজ্ঞতা লুকিয়ে আছে। টুকুনের দেওয়া সেই এক রাতের উপহারই তো তাদের সংসারে এনেছে নতুন প্রাণের স্পন্দন। ইসমাইল চাচার পদশব্দ দূরে মিলিয়ে যেতেই আমিনা টুকুনের থালায় আরেকটু গরম সিমুই তুলে দিল। তার হাত সামান্য কাঁপছিল, মুখে লজ্জার আভা। "বাবু," সে মৃদু স্বরে বলল, "আজ তুমি একটু কম মদ খেও, আমারে আবার সেইদিনের মতো তোমার আকাট বাঁড়ার বীর্যের স্বাদ পাইতে হবে..." তার কথার শেষাংশ হারিয়ে গেল রান্নাঘরের উনুনের খসখস শব্দে। টুকুন আমিনার চোখে সেই অপেক্ষার দীপ্তি দেখে নিজের গলায় হাত বুলিয়ে নিল। সে জানত, এই মধ্যবয়সী নারীর শরীরে এখন জেগে উঠেছে জংলী নেশা। "খালা," সে হাসতে হাসতে বলল, "তোমার জন্য তো আমার সবটুকুই রাখা আছে।" আমিনা চকিতে চারিদিকে নজর বুলিয়ে নিল, তারপর টুকুনের কানের এত কাছে এগিয়ে এল যে তার উষ্ণ নিঃশ্বাস টুকুনের গালে লাগল। "ইসমাইল চাচা তো একটু মদ পেলেই..." - তার ফিসফিস করা গলায় মিশে ছিল লাজুকতা আর কামনার এক অদ্ভুত মিশ্রণ, "...তারপর তুমি জানোই তো বাবু, আমাদের সেই মাটির ঘরের কথা..." তার শাড়ির আঁচল টুকুনের কব্জিতে আলতোভাবে লেগে থাকল, যেন স্পর্শের মাধ্যমেই সে সব কথা বলে দিল। রান্নাঘরের উনুন থেকে ভেসে আসা ধোঁয়ায় মিশে গেল আমিনার শরীর থেকে উঠে আসা ইলাইচি আর নারকেল তেলের সুগন্ধ - এক অদ্ভুত মায়াময় আবহ তৈরি করল। টুকুনের গলায় হাতটা একটু শক্ত করে চেপে ধরল আমিনা, "আমি তো অপেক্ষায় থাকুম বাবু... তোমার সেই গাঁতোন... সেই বাঙালি শক্তির জন্য..." বলেই সে তড়িঘড়ি সরে গেল, যেন নিজেরই সাহসে অবাক হয়ে গেল। টুকুনের হাত কাঁপছিল সামান্য যখন সে এক চামচ সিমুই তুলে নিল। আমিনার চোখের দিকে তাকিয়ে সে ধীরে ধীরে নিজের ঠোঁটের কাছে নিয়ে গেল, যেন স্বাদ নিচ্ছে। তারপর হঠাৎই আমিনার দিকে ঝুঁকে পড়ল, তাদের ঠোঁটের মধ্যে সেই মিষ্টি সিমুইয়ের পায়েস স্বাদ বণ্টন করল এক নরম চুম্বনের মাধ্যমে। টুকুনের ঠোঁটের কোণে খেলা করল এক গোপন হাসি। সে আমিনার কানের কাছে এত কাছাকাছি এল যে তার নিঃশ্বাসের উষ্ণতা লেগে থাকল আমিনার গালে। "খালা..." তার কণ্ঠে ছিল মধুর গম্ভীরতা, "আজ রাতে তোমাকে এমন কিছু খাওয়াবো... যার স্বাদ তুমি সারাজীবন মনে রাখবে..." আমিনার চোখের কোণ ভিজে উঠল অজানা এক আবেগে। তার আঙুলগুলো টুকুনের কব্জিতে শিকলের মতো জড়িয়ে গেল। "বাবু..." তার গলা দিয়ে বেরুল এক গভীর দীর্ঘশ্বাস, "তোমার দেওয়া প্রতিটি সুখ আমি গ্রহণ করবো..." হঠাৎই দূর থেকে ইসমাইল চাচার হাসির শব্দ ভেসে এল। আমিনা তড়িঘড়ি সরে গেল, শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বলল, "এখন যাও বাবু... পুকুরপাড়ে সবাই অপেক্ষা করছে..." তার কণ্ঠে ছিল একইসাথে আকাঙ্ক্ষা ও ভয়ের মিশেল। টুকুন উঠে দাঁড়াল। যাওয়ার আগে আমিনার হাতের উপর এক চুমু রাখল, ঠিক যেন কোন প্রতিশ্রুতি সীলমোহর করল। "তোমার জন্য অপেক্ষা করবো খালা..." বলেই সে ধীর পায়ে বেরিয়ে গেল, পিছনে ফেলে গেল এক গুঞ্জনময় নিস্তব্ধতা। পুকুরপাড়ের বটতলায় চারজনের আড্ডা জমে উঠেছে। জ্যোৎস্না-ভেজা রাতে হারিকেনের মিটমিট আলোয় টুকুন মেপে মেপে ডাবল ব্ল্যাকের পেগ খাচ্ছে, আর ইসমাইল চাচারা - যারা সারা জীবন শুধু হাড়িয়ার কড়া স্বাদ জেনেছে - স্কচের মসৃণ গন্ধেই যেন হার মানছে। "এই মদ তো মাইয়ার জিভের মতো নরম!" তৌফিক গলাটা একটু উঁচু করেই বলল, তার চোখ দুটো লাল হয়ে আসছে। ইসমাইল চাচা মাটির গ্লাসে শেষ বিন্দুটা পর্যন্ত উজাড় করে বললেন, "আল্লাহর কসম! এত মিষ্টি জিনিস আগে কখনো খাইনি!" তার কথাগুলো একটু আটকে আটকে আসছে। জামালুদ্দিন তো ইতিমধ্যেই মাটির উপর হেলান দিয়ে গুনগুন করে গান শুরু করে দিয়েছে - "নেশা কি বোঝে সোঝে না..." টুকুন সুযোগ বুঝে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল, "চাচারা, এই লালপট্টি গ্রামের ইতিহাসটা কি? শুনতে ইচ্ছে করছে।" পুকুরপাড়ের অন্ধকারে হারিকেনের মিটমিট আলোয় ইসমাইল চাচার চোখ দুটো ট্যারা হয়ে গেল, ঠিক যেন রাতের বাগানের পেঁচার চোখ। "অ্যাঁ... বাবু..." - তার গলার স্বর ভেসে এল ধোঁয়াটে মদের গ্লাস থেকে উঠে আসা বুদবুদের মতো, "...আমাদের পূর্বপুরুষরা..." কথাটা শেষ হবার আগেই তৌফিক ঝাঁপিয়ে পড়ল মাঝখানে, তার গায়ে লাগা মদের গন্ধ মিশে গেল রাতের ভেজা হাওয়ায়। "ইতিহাস ক্যানে বাবু!" তৌফিকের গলার আওয়াজ যেন পুকুরে পড়া পাথরের মতো আচমকা চিৎকার করে উঠল, "আজকের রাত তো মজার গল্পের!" বলেই সে ইসমাইল চাচার কাঁধে হাত রাখল, তার নখগুলো চামড়ায় গেঁথে গেল। ফিসফিস করে কিছু বলতে লাগল, হঠাৎই হাসি ফেটে পড়ল তার গলা থেকে - হু হু করে হাসি, যেন শিয়াল ডাকছে দূরে। জামালুদ্দিনের মুখ বিকৃত হয়ে উঠল, তার শুকনো ঠোঁট কাঁপতে কাঁপতে খুলে গেল: "অরে তৌফিক! তুই না বেহেনচোদ! তোর আপ্পাকে বিয়ে করলি ক্যান রে? ওই কুলটা মাগী তো গাঁয়ের অর্ধেক লাউডাকে দিয়া..." - কথা শেষ হবার আগেই তৌফিক এক ঢোক মদ গিলে ফেলল, গলায় নামার সময় শব্দ হল গ্লগ্ল। পুকুরপাড়ের আঁধারে হারিকেনের আলোয় তৌফিকের চোখ দুটো জ্বলজ্বল করছে, ঠিক যেন মদের গ্লাসে ভাসতে থাকা বরফের টুকরো। "কি করব ভাই..." - তার গলার স্বর ভাঙছে, যেন ভেজা মাটির দেয়ালে পড়া বৃষ্টির ফোঁটা। "আমার আব্বু ওই মাগীকে ঠাপাইয়া পেট কইরা দিছে... বাধ্য হইয়া নিকাহ করলাম..." হঠাৎ তার গলা থেকে বিস্ফোরিত হলো এক পাগলাটে হাসি - "হেহেহেহে!" - যেন কাঁচের উপর নখের আঁচড়ের শব্দ। "আব্বুর ফ্যাদায় আমার আপ্পার পেটে যে বাচ্চা হলো... সে-ই আমার ছেলে... আর আমার ভাই!" তৌফিক আরেক ঢোক মদ গিলে যোগ করল, তার ঠোঁটে জমে থাকা মদের ফোঁটা ঝরে পড়ল শার্টে: "আমার আপা... মানে আমার বোন... মানে আমার বেগন... ওই মাগীটা তাগড়া মাল, ভাই! সারাদিন লোকের পায়খানা পরিষ্কার করে, গোবর-পানি মেখে আসার পরও... রাতে আমারে ছাড়ে না... না চুদিয়ে!" ইসমাইল চাচার পেট কাঁপতে লাগল হাসিতে, তার দাঁতের ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে তামাকের দাগ: "তোমার যা ল্যাওড়া তৌফিক ভাই! ওই রকম মোটা মহিষের মতো মাগী ছাড়া তোর মতো গাধাকে কে নিবে রে!" তার হাসি গমগম করে ছড়িয়ে পড়ল পুকুরপাড়ে, যেন বর্ষার মেঘের গর্জন। জামালুদ্দিনের মাটির গ্লাসে আঙুলের ডগা ঠকঠক করে উঠল। "ঠিক বলছিস ইসমাইল ভাই!" সে গলা খাঁকারি দিয়ে বলল, "ওই মাগীর থানকুনি দেখলে তো আমারও..." কথাটা অসমাপ্ত রেখেই সে গ্লাসে ঢালল মদের এক ঢাল, যেন কথাগুলোকে ডুবিয়ে দিতে চাইছে। টুকুন এবার জামালুদ্দিনের দিকে মদের বোতল বাড়িয়ে বলল, "চাচা, আপনি তো এক পেগও নিলেন না! এত ভাল মদ ফেলে রাখবেন নাকি?" তৌফিক হঠাৎ হো হো করে হেসে উঠল, "ওই মুচির নেশা তো আগেই হয়ে গেছে! জামালুদ্দিন দা, সত্যি কথা বলো তো - আজকে কটা জুতা সারালে?" জামালুদ্দিন রাগে মুখ লাল করে বলল, "আরে শালা, তুই আবার শুরু করলি? সারা দিনে পনেরোটা জুতা সারাই করেছি, তোর আম্মুর ভোঁদা সেলাই করে দেবোরে হারামি!" ইসমাইল চাচা মদে চুমুক দিতে দিতে বললেন, "ওরে তৌফিক, তুই তো নিজের বেগমের গল্প করছিস, জামালুদ্দিনের চাচির কথা উঠায় কেন?" তৌফিক জোরে হেসে বলল, "ইসমাইল চাচা, আপনি তো জানেন না! আমাদের জামালুদ্দিন দা রাতে চামড়া ঠুকতে ঠুকতে এত অভিজ্ঞ হয়ে গেছে যে..." জামালুদ্দিন রাগে গজগজ করে উঠল, "আরে বন্ধ কর শালা! টুকুন বাবু সামনে বসে আছে, শালা মেথর তো মেথর রয়ে গেলি!!" টুকুন হাসতে হাসতে বলল, "না না চাচা, আপনাদের গ্রামের গল্পই তো শুনতে চাইছি। জামালুদ্দিন চাচা, আপনি তো এ গ্রামের প্রবীণ মানুষ, কিছু পুরনো গল্প বলেন না?" জামালুদ্দিন রাগ কমিয়ে বলল, "গল্প বলব বাবু, কিন্তু এ শালারা তো সব বিকৃত করে দেবে!" তৌফিক আবার মজা পেয়ে বলল, "দেখলেন টুকুন বাবু? আমাদের মুচি মশাই রাগলে কি সুন্দর দেখায়!" ইসমাইল চাচা হেসে বললেন, "আরে থামো তৌফিক! জামালুদ্দিন ভাই ...ঝগড়া কইরেন না, এই গ্রামে আর গল্প কি কম আছে!!! সব মুচি, মেথর, নাপিত আর জেলেদের বাস লালপট্টিতে..." তৌফিক মদের গ্লাসে শেষ ঢোকটা গিলে ফেলল, গলায় শব্দ হল "গ্লুক!"। তারপর হেলে দুলে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, "আরে বাবা... আমি তো মুইতা আসি..." - কথা শেষ না করেই তার পা টলমল করতে লাগল, যেন ঝড়ের মধ্যে দুলছে বাঁশের লাঠি। টুকুন তৎক্ষণাৎ লাফিয়ে উঠে তৌফিকের কাঁধে হাত রাখল। "চলুন তৌফিক চাচা, আমিও সাথে যাচ্ছি," সে বলল চাপা হাসি দিয়ে, "আমারও তো একটু পেচ্ছাব সারতে হবে!" ইসমাইল চাচা মৃদু হেসে বললেন, "ওরে বাবা, শহুরে ছেলেটা আমাদের গ্রাম্য ভাষা শিখে নিচ্ছে দেখি!" জামালুদ্দিন মুখ বিকৃত করে বলল, "যাও যাও, তৌফিকের হাত ধরে নিয়ে যাও। নাহলে আমাদের পুকুরে মুতে না দেয়!" টুকুন তৌফিককে ধরে রাস্তায় নিয়ে গেল। চারপাশে জোনাকির আলো, দূরে শুনতে পাওয়া যাচ্ছে ব্যাঙের ডাক। তৌফিক হঠাৎ থেমে বলল, "টুকুন বাবু... তুমি ভালো ছেলে... কিন্তু একটা কথা বলি..." টুকুন কৌতূহলী হয়ে বলল, "কি চাচা?" হঠাৎ তৌফিকের চোখ-মুখে এক অদ্ভুত বিকৃত ভাব ফুটে উঠল। তার শুষ্ক ঠোঁট দুটো বেঁকিয়ে সে গম্ভীর সুরে বলল, "আমাদের গ্রামে এসে তুমি... উহ্য... সব শালা নোংরা মহমেডান..!" কথাগুলো বলেই সে হো হো করে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। টুকুন অবাক হয়ে দেখল, তৌফিক একেবারে নির্লজ্জভাবে তার লুঙ্গি উঠিয়ে ফেলছে। গ্রাম্য লোকটির ছোটখাটো চেহারার বিপরীতে তার পুরুষাঙ্গটি বেশ বড় আর মোটা দেখাচ্ছিল - নেতানো অবস্থায় প্রায় পাঁচ ইঞ্চি লম্বা, যার মাথাটি মাশরুমের ছাতার মতো গোলাকার ও স্ফীত। তৌফিক পেচ্ছাব সেরে টলতে টলতে ফিরে এলো, পা যেন আর ঠিকমতো মাটি ছুঁতেই চায় না। টুকুন তাকিয়ে দেখল—জামালুদ্দিন আর ইসমাইল চাচার চোখ ঘোলাটে, মদের বোতল প্রায় শেষ। টুকুন: "মদ তো ফুরিয়ে গেল চাচারা, আর রাতও গভীর হয়েছে।" তৌফিক (হেসে হেসে জামালুদ্দিনের কাঁধে ভর দিয়ে): "আরে বাবা, আজ তো যথেষ্ট হয়েছে... চলো বাড়ি যাই!" জামালুদ্দিন (মাথা দুলিয়ে): "হ্যাঁ রে... নাহলে বউ গালাগাল দেবে..." দুজনে একে অপরের উপর ভর দিয়ে ধীরে ধীরে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল। টুকুন ইসমাইল চাচার দিকে তাকালো—সে এখন পুরোপুরি আউট, চোখ বুজে গম্ভীরভাবে বসে আছে, মাঝে মাঝে মাথা হেলে পড়ছে। টুকুন তার কাঁধে হাত দিয়ে বলল, "চলুন চাচা, ঘরে যাই। -চলবে
Parent